• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৩৬ | অক্টোবর ২০০৫ | কবিতা
    Share
  • দিকে দিকে বৃষ্টি হোক আজ : দীপশিখা পোদ্দার

    সন্ধ্যা এসেছে জড়িয়ে ধরেছে বোবা মেয়েটির শাড়ি
    ও সন্ধ্যা ছাড়, ছেড়ে দে, বানে ভেসে আসা মেয়ে - ঘরবাড়ি
    বাঁচেনি কিছুই, ওর রোগা রোগা শপশপে গায়ে
    নিরালা রাতের লুটোপুটি রং ছেনি হাতুড়ির ঘায়ে
    ফুটিয়ে দিয়েছে কারা ! ছবি নেই । লেখাজোখা না
    বুক থেকে মুখ থেকে, শরীরের রাস্তা থেকে আলো আনা
    একসময়ে ওর পক্ষে কী ক'রে সম্ভব !
    আঁধারে আঁধারে ওর পাখি সব করে রব ...
    তবুও সম্ভব যদি করে চির মুখরিত গান
    যদি সুর খুঁজে পায় ... আঁধার আলোয় করে স্নান
    সেই সংগীতে শাড়ি ছেড়ে, বাড়ি ছেড়ে সন্ধ্যা তুই খুলে দিবি বল -
                           সঠিক দুয়ার ?

    রোগা মেয়েটিকে বালিশ বিছানা দিবি -
                টুপটাপ বৃষ্টিও মধুর শোওয়ার...
    !------------- ॥ তথ্য চিত্র ॥


    ফুল ফুল জামাটি সরিয়ে
    দিয়েছিলে প্রথম নড়িয়ে
    গাছটির সদ্য ফোটা কঁংউড়ি

    বসেছিলে মা-র খুব কাছে
    কেউ কিছু বুঝে ফ্যালে পাছে
    আমি তো মাসীর মেয়ে  --  বুড়ি ।

    ক'দিন থাকবে এ বাড়িতে
    শোওয়া হবে এক মশারিতে
    মা বলেছে  --  তোরা ভাইবোন ।

    কুঁডি থেকে ফুল হল কবে !
    যে রাতে প্রথম অনুভবে
    চাঁদ ভাসে মেঘের মতন ...

    আঠারো বছর পরে গাছে
    সে ফুল তেমনই ফুটে আছে
    বাতাসেও সেদিনের দোলা ...

    স্বামী কাজে চলে গেলে পরে
    কথা হয় শিকড়ে শিকড়ে
    আছে ফুল  --  নেই ফুল তোলা ...




    ॥ ঝিমঝিম দুপুরে ॥


    গন্ধ পরেছি খুব । একশাড়ি ঝলমলে ফুল পরেছি দুপুরবেলায় ।
    ষ্টেশনে ঢোকার মুখে একপাশে দাঁড়িয়ে রয়েছি ঠায় ।
    শুঁকছে । শুঁকছে ওরা । শুঁকে শুঁকে চলে যাচ্ছে । দামে পোশালো না ।
    আর কত কম করলে পোশাবে বলতো বাপ ?
    প্রকাশ্য দিবালোক এখনো তো ঠিক করে দেয়নি কোনো
                আঁধারের নির্ধারিত রেট !

    রেট ঠিক করা ছিল না বলেই
    এক গ্রাম-লোক সাক্ষী করা রাত চলে গেল বৃথা ...
    আরও কিছু চেয়েছিল ! সেইরাত আরও আরও চায় ...

    বাবু গো  --  ও বাবুরা
    একটা জীবন দিচ্ছি তোমাদের
    একটা গোটা সমাজ দিয়ে দিচ্ছি -- যেখানে
    আমি আর কোনদিন গিয়ে দাঁড়াবো না ।
    দরাদরি কোরো না আর
    দু'দুটো কচিমুখ জানলায় তাকিয়ে আছে ...
    অন্ধকার ঘর ..
    আমি ফিরে লন্ঠন জ্বালালে ওরা পড়তে বসবে ।



    ॥ আলো ॥


    যোনির ভিতর ধর্মকর্ম
    যোনির ভিতর বাড়ি
    যোনির ভিতর সম্পর্ক
    উত্তরাধিকারী ...

    ইহুদি পার্সি হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ইসলাম
    সব ধর্মের কাম
    নারীকে ছুঁয়েছে রাতের কালোয়
    প্রাচীরে প্রাচীরে বলেছে আলোয়
    নারী নরকের দ্বার ...

    তবু
    পৃথিবীর সব আলোপথ সব ছায়াপথ থেকে দূরে
    জননী দিয়েছে যোনিপথ মেলে ধর্মের কুলে কুলে
    সেই ধর্মে মন্দির-মঠ
    কোরান-আবেস্তা-গীতা-ত্রিপিটক তোমার আমার বাড়ি
    নারীর জন্য কামকাঞ্চন উত্তরাধিকারী ...

    আলোকবর্ষ পার হয়ে এসে দাঁড়িয়েছি
    দ্যাখো, দাঁড়িয়ে রয়েছি একা ...
    আমি শরত্‌-আকাশে মেঘের মতো
    অনিকেত এক নারী ।
    ঘর নেই । কোনও চর নেই বলে দু:খ করি না
    দু'কুল ছাপানো স্বপ্নে মাতাল শরীর দিয়েছি খুলে -
    এক ভুল থেকে ভেসে যাই আমি
    মনের মতন অন্য আর এক ভুলে ...

    আমি ধর্মের সাথে সঙ্গম করি
    নিছক কামুক পুরুষের মতো স্রেফ করি সহবাস
    ধর্মকে আমি চুষে ফেলে দিই
    রৌদ্রের গায়ে লিখে রাখি ভেজা শরীরের ইতিহাস ...

    শতবর্ষের ধুলো উড়ে যায় ...
    দ্যাখো, মেয়েটির চোখ স্বপ্নে কাজল-কালো
    সনাতন মেঘ ছিঁড়ে ফেলেছে ও
    যোনিপথে ওর ঝর্ণার মতো আলো ... -------------



    (পরবাস-৩৬, অক্টোবর, ২০০৫)

  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments