• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৩৬ | অক্টোবর ২০০৫ | রম্যরচনা
    Share
  • কথার কথা : সোডা জল



    গাংলু গ্যাঞ্জামের পরীক্ষা এসে গেছে । অংকস্যার ঢুকেই বললেন, আজ গপ্পো না ।

    মেজোদাদু বললেন, না না একদম না । তবে যাওয়ার আগে একটু বসে যেও, ওদিকে আবার লুচি ভাজা হচ্ছে । সাথে মোহনভোগ । নো পান ইন্টেন্ডেড ।

    -- না, না পানের ব্যাপারে আমি নেই, বলেই অংকস্যার পড়ার ঘরের দিকে পা বাড়ালেন ।

    ঘন্টাদুয়েক রাইডার আর ত্রিকোণমিতি নিয়ে ধস্তানোর ঠিক পরেই মোহনভোগের গন্ধটা বেশ চাগড়ে উঠল । অংকস্যার আড়ামোড়া ভাঙলেন, একটু এবার ব্রেক নিলে হয় না ?

    গাংলু বলল, লুচিও তো হয়ে গেছে মনে হয় । গ্যাঞ্জাম অ্যাড্‌ করল, অতএব .... ।

    বাইরের ঘরে আসর জমে গেছে ততক্ষণে । কুশিলব সবাই হাজির, কংকাবতী চায়ে চুমুকও লাগিয়েছেন দুয়েকটা । সত্যসাধন এক মনে ফোলা লুচি ফাটাচ্ছেন ।

    মেজোদাদু কাগজটা ভাঁজ করে বললেন, বাঘেদের নিয়ে লেটেস্ট কেলেংকারিটা শুনেছ ? সভাস্থ কেউ শোনেননি মনে হল । অতএব নিজের ধরতাই দাদুই ধরলেন ।

    -- কোন একটা অভয়ারণ্যে আসল বাঘেদের সংখ্যার তুলনায় দু গুণ বেশি দেখিয়ে সরকারের টাকা নয় ছয় হচ্ছে ।

    -- কে করছে নয় ছয় ? সত্যসাধনের লুচি পোরা মুখের প্রশ্ন ।

    -- অ্যাঁ, বললেন মেজোদাদু । ভেবেছিলেন বোধহয় উত্তরটা অবভিয়াস ।

    -- না, মানে বলছি, নয় ছয় চক্করে কে আছে, বাঘেরাও কি ?

    -- হয়ত কুমীরদের কাছে কন্সালটেন্সি নিয়েছে, সেই শেয়ালছানার সংখ্যা নিয়ে কারচুপির কি একটা খ্যাতি আছে না কুমীরদের । কংকাবতীর মতামত সবাইকে ধন্দে ফেলে ; এই অ্যাস্পেক্টটা তো ভাবা হয়নি ।

    -- একেই কি বলে রীডিং বিটউইন দ্য লাইন্স ? গ্যাঞ্জামের শত চেষ্টাতেও প্রশ্নটা তেমন নিরীহ শোনালো না ।

    অংকস্যার গপ্গপিয়ে লুচি-মোহনভোগের আস্কিং-রেট'টা বাগে এনেছেন ততক্ষণে । বল্লেন, বাঘের কথা বাদ দাও । ওরা ওরকমই । ভুজুং-ভাজুং দিয়ে একবার এন্ডেন্জার্ড্‌ লেবেলটা লাগিয়ে নিয়েই, ব্যাস্‌ আর কি ? রামরাজ্য ।

    -- বাঘ যেন কার বাহন ? কংকাবতীর অল্রেডি গুলিয়ে যেতে শুরু করেছে ।

    -- আ:, বাঘ ব্যাপারটাকেই বাদ দিতে বলছি । অংকস্যার খিঁচিয়ে উঠতে গিয়ে সামলে নিলেন । ডিসেন্সিস অফ্‌ ডিবেটিং নিয়ে অনেক কপচেছেন এক সময় । এন্ডেন্জার্ড ভাষা নিয়ে কি'রকম ভাবনা চিন্তা হচ্ছে, খবর রাখ কি ?

    সত্যসাধন লুফে নিলেন যেন কিউটা । এবার কি ভাষারও অভয়ারণ্য হবে না কি ? হে : হে : হে : ।

    অংকস্যার এসব উস্কানি গায়ে না মেখে বলে চললেন, ফাউন্ডেশন ফর এন্ডেনজার্ড্‌ ল্যাঙ্গুয়েজেস, চালু হয়েছে দশ বছর হয়ে গেল । এদের লক্ষ্য বিলোপমুখী ভাষাদের বাঁচানোর চেষ্টা, বা অন্ততপক্ষে ডকুমেন্ট করে রাখা । নিকোলাস অস্লার, পন্ডিত লোক, এমআইটি না কোথা থেকে পাশ, এটার মেন হোতা ।

    -- প্রয়াসটা সাধু, সাবধানে বললেন সত্যসাধন ।

    মেজোদাদু ততক্ষণে চনমনে । বা: ব্যাপারটাতো বেশ নতুন রকম ।

    -- শুধু নতুন নয় । ভীষণ দরকারি । ভাষা হারিয়ে যাওয়া মানে, শিল্প, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, একটা পুরো সভ্যতা লোপ পেয়ে যাওয়া । একটা জাতিকে খতম করার উপায়ই তো হল তাদের ভাষা দুর্বল করে দেওয়া । অংকস্যার রীতিমত উত্তেজিত । গাংলু গ্যাঞ্জাম হাঁফ ছেড়ে নিল, আজ আর পরীক্ষার পড়া হচ্ছে না, এটুকু শিওর ।

    অংক্স্যার বলে চলেন । কংকাবতী একবার মুখ খুলেও বন্ধ করে নিলেন ।

    -- এই অস্লার সাহেব একটা বই লিখেছেন, এম্পায়ারস্‌ অফ্‌ দ্য ওয়ার্ড, এ ল্যাঙ্গুয়েজ হিস্টরি অফ্‌ দ্য ওয়ার্ল্ড । সাম্রাজ্য আর ভাষার বিস্তার কেমন করে একে অপরকে চালিয়ে চলে, তারই আলোচনা । প্রতেক বাঘা ভাষাই নিজের তরিকায় বেড়ে ওঠে ... ।

    কংকাবতী এবার চান্স পেয়েছেন, বাঘের প্রসঙ্গ বাদ শুনলাম ।

    অংকস্যার এবার খিঁচিয়েই ফেললেন, উফ্‌, বাঘা একটা ফিগার অফ্‌ স্পিচ্‌ । আই মীন মেজর ভাষা ।

    বিপদ বুঝে মেজোদাদু বলে উঠলেন, বাদ দাও ওসব । তা কি টেকনিকে ভাষা স্প্রেড করে ?

    অংস্যার খেই হারিয়েছিলেন । খঁংউজে পেতে বললেন, ইয়োরোপে ল্যাটিনের প্রসার আর উত্তর অ্যামেরিকাতে ইংরাজির প্রকোপ কিন্তু একভাবে হয়নি । রোমানরা রাজ্যজয়ের পরে সেখানেই কলোনি গেড়ে থেকে যেতে শুরু করত, স্থানীয় জনগণকে আস্তে আস্তে টেনে নিত নিজেদের ভিতর । কিন্তু ইংরাজরা উত্তর অ্যামেরিকার আদিম বাসিন্দাদের একেবারে একঘরে করে দিয়েছিল, তারপর নিজেদের ভাষাভাষীদের আনিয়ে দেশটা ভরে ফেলল । কিন্তু এই একই ইংরেজি ভারতে ছড়ালো অন্যভাবে, চাকরি ইত্যাদি অর্থনৈতিক সুবিধার জন্য নেটিভরা একরকম বাধ্য হল ইংরেজি শিখতে ।

    -- শুনেছি নাকি বঙ্কিমচন্দ্রকেও এক সাহেবের কাছে ভাষার পরীক্ষা দিতে হয়েছিল, চাকরির উন্নতির জন্য । সত্যসাধন হিস্টরিতে বেশ দড়, চিরকালই ।

    -- যেটা শোনোনি সেটা হল, সাহেব পরীক্ষা নিয়েছিলেন বঙ্কিমের বাংলা ..... । মেজোদাদুর অ্যানেকডোটের ভান্ডার অশেষ ।

    -- বাংলা ভাষার তেমন ডেঞ্জার নেই না, লুপ্ত হবার ? গত কালকেই বাড়ির গেটে বাংলা নেমপ্লেট লাগিয়েছেন কংকাবতী, রঙ এখনও শুকোয়নি । টাকাটা গচ্চা গেল না তো ?

    গ্যাঞ্জাম বলে উঠল,
    -- এই তো সেদিন বিশ্ব বঙ্গ সম্মেলন হল মার্কিন দেশে, আখতারদা....
    -- নেমন্তন্ন পায়নি তো ? গাংলুর ফুট রেডিই ছিল, শুধু কাটবার অপেক্ষা ।
    -- পেয়েও যায়নি, ও তো সিরিয়াস কবি, এসব....

    অংকস্যার মুখ্য বিষয়টা ধরে নিলেন, সে-ভাবে হয়ত নেই, জনসংখ্যার দিক দিয়ে তো বাঙালি ষষ্ঠ বৃহৎ । কিন্তু,

    -- কিন্তু কি ? কংকাবতী সন্দিগ্ধ, বুড়ো আঙুলের লেগে যাওয়া নেমপ্লেটের পেন্টটা একবার আড়চোখে দেখে নিলেন । উঠবে বলে মনে হয় না ।

    -- মানে, শুধু তো সংখ্যার জোরে হয় না । একটা ভাষার স্বাস্থ্য নির্ভর করে সেটার অনুগামীরা কতটা সচেতন, সে-ভাষা কতটা ব্যবহৃত হচ্ছে তাদের প্রতিদিনের জীবনে, নিজেদের উচ্চাশার পথে সেই ভাষার কি কোনো ভূমিকা আছে ?

    -- কবিতা লেখাও তো ভাষাকে এক্সারসাইজ করানো, তাই না ? মেজোদাদু শুধালেন হাসি হাসি মুখে । মন্তব্যের উদ্দেশ্য যে, সে রীতিমত বিধেয় কিছু পেল না খঁংউজে, বলার ।

    -- কবিতার ব্যাপারটা অন্য । অংকস্যার চিন্তিত মুখে বললেন । তেমন ভাষাও আছে হয়ত, যাতে শুধু কবিতাই লেখা হয়, কথা কয় না কেউ ।

    -- আছে কি ? গাংলু গ্যাঞ্জামের সমস্বরে জিজ্ঞাসা ।

    -- ভানুসিংহের পদাবলীর ভাষায় কেউ কথা বলত কি ?

    প্রশ্নটা সম্ভবত: রেটরিকাল । সবাই চুপ করে রইলেন । দিদিমা বললেন, আরেকটু হালুয়া দি ?








    পাশাপাশি
    উপরনিচ
    (১) পাখি-ঠাসা চাঁদ / ছাগলের স্বাদ (৪) বাঘ সুজন / দিস নয়ন / গো ভক্ষণ (৮) তিন কোণ (৯) রা কাড়ে কুরু(-বংশে) কার / অমানুষ বন্ধু আমার (১১) কারা দেয় আরক (১২) মসলার মানে শাল (১৩) বজায় মহিলা-বাজ / না'হলে পাহাড়-রাজ (১৪) ঝমঝমিয়ে ত্রয়ি আকার-মধ্যে (১৬) পাঁকের জবা বকে নিল বুকে (১৭) মনের জটে নটের অভাব / মধ্যিখানে এই আসবাব (১৮) এই এখানে / এই সেখানে / লেখায় পচন নেই যেখানে (১৯) তবে শিকল / খেলবে বল (২০) বেড়ালের নীড় / সাগরের তীর (২১) কোমরে বেশ ফাটবে বোম / বুনো ঘাড়ের বুনো লোম (২২) নি:স্বর কোলা ব্যাঙ - এ বাদল / অত হয় অতএব হয় কোল (২৩) রাবণের ভাই-এর বউ-এর সমাদরে খেদ (২৪) বিকালের স্বরহীন ধ্বনি (২৬) অসংযত বেলায় আরাম দিস (২৮) খাবার আনাই / আনিয়ে পচাই / বগলে যা চাই (২৯) অত নয় নয় / চির তরে রয় (৩০) পাখার বিকৃত মাথা (৩১) আগামী হয় (৩২) আনন্দ দেওয়া গান / সুতীর গণক যান (৩৩) তের নদীর স্রোত দেয় / সব-দলে নীর নেয় (১) খাবার দিতে যা / সমান আকার খা (২) সাদা বসতিতে দুই বিবি (৩) কাঠির ঝিনুক কিনি / গেলেন ননদিনী (৪) সময়ের নিয়মে চল (৫) ঘাড় ভেঙে কার মজা (কথ্য) (৬) কাবু হয়ে ঘা দিয়ে দিল (৭) ব্যস্ততায় দিক / হারায় - তা ঠিক / দয়া মানবিক (১০) পুলকিত নাপিত বংশ (১২) জমাস যত লোক / সহাবস্থান হোক (১৩) গাছের হজমি মনে দিল (১৫) মাঝে নামে মেলা ফ্যাসাদ (১৬) কাঁপার পর বেকার শোকায় রুটি (১৮) দশ মাচায় / পড়েছে দায় / চোখ সেবায় / কাঁচ (১৯) শিবের রঙ এক শ' (২০) বেসুরো অবদানে এ কার বহির্গত প্রাণ (২১) কলের জায়গার নাম (২২) চোখের আড়ালে / স্বর স'রে তালে / যে অত খাওয়ালে / দেখ (২৩) সমান ফারাকে তরসা মন (২৪) কত প্রকারের বিকারে করাত (২৫) একশ' বরে দেব পাত্রের জামা (২৭) থালার সকালে নদীতে লহরী (২৮) পরমা পার (৩০) খানার তলা (৩১) দহনে দহনে গহ্বর



    (এবারের শব্দজব্দ তৈরি করেছেন অংশুমান গুহ)

    প্রথম দুজন সঠিক উত্তরদাতাকে পুরস্কার দেওয়া হবে ।

    দয়া করে এবার থেকে ডাকযোগে উত্তর পাঠালেও ই-মেল (যদি থাকে, তো) জানাতে ভুলবেন না ।



    আগের বারের ত্রক্রসওয়ার্ডের উত্তর এখানে





    (পরবাস, অক্টোবর, ২০০৫)

  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments
  • কীভাবে লেখা পাঠাবেন তা জানতে এখানে ক্লিক করুন | "পরবাস"-এ প্রকাশিত রচনার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট রচনাকারের/রচনাকারদের। "পরবাস"-এ বেরোনো কোনো লেখার মধ্যে দিয়ে যে মত প্রকাশ করা হয়েছে তা লেখকের/লেখকদের নিজস্ব। তজ্জনিত কোন ক্ষয়ক্ষতির জন্য "পরবাস"-এর প্রকাশক ও সম্পাদকরা দায়ী নন। | Email: parabaas@parabaas.com | Sign up for Parabaas updates | © 1997-2024 Parabaas Inc. All rights reserved. | About Us