• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৩৫ | মে ২০০৫ | কবিতা
    Share
  • :

    নদী আর গাছের কথা

    জয়ন্ত ঘোষাল

    প্রতিদিন স্রোতস্বিনীর পাশে দাঁড়িয়ে বলি - `বহো'
    প্রতিদিন ফলবান গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে বলি - `আরও প্রাণ দাও'
    একদিন মাটির সুষমা মাখতে মাখতে বলি - `ঊর্বরতা বাড়ুক'

    এভাবেই প্রতিদিন তোমার বুকের উষ্ণতায়, মিশে যেতে যেতে
    সেই সব নদী, গাছ মাটির স্পর্শ পায় ।
    কম্পমান ঠোঁটের ওপর বহমান নদীকে রাখি তখন
    বিস্ময়কর বাঁকের মুখে রাখি গাছের ছায়া ।



    প্লাবিত কিছু

    মিহির বন্দ্যোপাধ্যায়

    ১.

    স্বপ্নের পাড় ভেঙে এই নিরুদ্দেশে... প্লাবনে ভেসে গেছে গৃহস্থালি
    জন্মদিন; ভেসে গেছে ঋতুসংহিতা
    আজ শ্মশান ছাড়িয়ে উঠে এসেছে জল । একদা মুখাগ্নি হতো এখানেও
    পিতার দহন শেষে পুত্রের অভিষেক হতো
    এই পোড়া কাঠের স্বদেশে আজ খুঁজে ফিরছি পরিচয়, পিতৃচিহ্ন


    ২.

    প্লাবনে ভেসে যাচ্ছে কাটাহাত; যেরকম পৃথিবীর নারী
               চুড়ি পড়ে কনুইয়ের নীচে
    কচুরিপানার ফাঁকে ভেসে যাচ্ছে এইসব হত্যাজনিত কিছু
    প্লাবিত জলের অতলে ধারালো আঘাত থাকে
    অপরাহ্নে ভাতঘুম অথবা আহির-ভৈরব প্রকৃত মুখোশমাত্র
               জলের দৃশ্যতল
    আয়নার বিপরীতে যেমন নিপাট বীমার এজেন্ট, দৃশ্যত হয়ে ওঠা
               ফল হওয়া ফুল হওয়া মশলাদার জড়িবুটি

    তবু এই হত্যাজনিত কিছু কচুরিপানার ফাঁকে দেখে নিজেকে সরিয়ে রাখি
               আলোর সিম্ফোনি থেকে



    জনকজননী

    জনজিৎ চক্রবর্তী

    যব তিল ক্ষার মৃত্যুর থেকে
    উঠে আসে চাঁদ লবনজারিত
    উঠে আসে আরো অনাহত ধ্বনি
    কোটি অগণন বুদ্বুদরাশি
    বুদ্বুদ আর বিশ্বের সীমা
    সে দেশে দাঁড়িয়ে আমি একা একা
    ছড় টেনে মৃদু বেহালা বাজাই
    অঙ্কুর ফেটে এক বটগাছ নীরবতা ওঠে
            নির্জনে নামা তার ঝুরি ধরে
            শিশু দোল খায়
    একদা কি ছোট তুচ্ছ ছিল সে
    ভাসানো বা ফেলা আচানক ভ্রুণ
    ফুলের গহন আলো চুরি করে
    এখন ডাগর শিশু দোল খায়
    আমাকেও দেখে এ কাঁধে বেহালা
    বলে `আর গান শোনাবে না তুমি?'
    যব তিল ক্ষার মৃত্যুর থেকে
    লবনজারিত চাঁদ খসে পড়ে
    অনাহত ধ্বনি ঢেউ ধেয়ে আসে
    যে নারী আমার সাথে সাথে থাকে
    কেবল জড়ায়
    বলে নেমে যাও আমার ভিতরে
    যাও কুয়ো খোঁড় জল তুলে আনো
    আমাদের বড় তিয়াস লেগেছে
    আমিই পারিনা প্রতিবন্ধীর
    খননে যে আজো ভয় ভয় করে
    এই দুজনের মাঝখানে সাদা
    নো ম্যানস ল্যান্ড এইটুকু জমি
    নাসিংহোম ডাস্টবিন ও. টি
    ও. টি ঘর আলো ফরসেপ তুলো
    এইটুকু জমি এত ধরে আছে
    এক বটগাছ নীরবতা নীচে
    দাঁড়াই দুজনে হত্যা ও হত
    ওর মা বলে
    ওর মা বলে
    "ওরে পড়ে যাবি নেমে আয় সোনা"
    সেই বদমাশ দোল খাওয়া ছেড়ে
    নেমে এসে চাঁদ লবনজারিত
    সব অনাহত ধ্বনির আড়ালে
    নেমে এসে ঐ মৃত্যু আড়ালে
    সব অনাহত ধ্বনির আড়ালে
    লুকিয়ে কেবল টুকি দিয়ে যায়
    আমি তার বাবা
    আমি শুধু ওর জননীর পাশে
    ছড় টেনে টেনে বেহালা বাজাই ।


    মাপা সময়

    ইন্দ্রাণী ঘোষাল

    বেচে দেওয়া মাপা সময়
    একটুখানি কথার ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া
    চলবে নাকি ! বিড়ির গন্ধ - চায়ের ধোঁয়া
    ফিরে আবার মেসিনে চোখ
    মেশিনে আজ লেখাজোখা
    `ফেদার টাচে' দ্রুত থেকে দ্রুততর
    পিঁপড়ের লাইন -
    আঁকাবাঁকা সুযোগ কোথায় ?
    মাপের মধ্যে হাজার শব্দ
    সাজিয়ে নিয়ে সামনে পিছন - এটাই জীবন
    তবু নাকি জীবন সহজ
    ভবিষ্যতের অন্ধকারকে হারিয়ে চলা
    প্রতিদিনে
    প্রতিক্ষণে কালকের ভয় ।
    হেরে-যাওয়ার শব্দজব্দ
    ফাঁকতালেতে মাপের জীবন
    ছাড়িয়ে পাওয়া
    খুচরো পয়সা বেহিসাবি
    বেহিসাবি দু-একটা দিন, দু-একটা ক্ষণ
    লোভীর মতো সবকে নিয়েও
    মন ভরে না
    গালের টোলে হিসেব ছাড়া হাসির বন্যা
    বান ডেকে যায় মাপা সময় ।



    (পরবাস, এপ্রিল, ২০০৫)

  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments