• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৩৫ | মে ২০০৫ | প্রবন্ধ
    Share
  • কেবলই সুর সাধা ... : নন্দন দত্ত

    সেদিন সন্ধ্যায় গান হচ্ছিল । গান হওয়া আর গান করা ঠিক এক ব্যাপার নয় । করতে গেলে পারতে হয় ; সুর, তাল, লয় -- নানা ব্যাকরণ । হওয়া মানে হওয়াই, সেখানে হিসেব নেই । আর রবীন্দ্রনাথের গানের মজা হল, গাইতে না পারলেও গাওয়া যায়, নিজের ও নিজেদের কাছে ।

    একবার শান্তিনিকেতনে মিলিত হয়েছেন এ যুগের কিছু কবি-সাহিত্যিক, তাঁদেরই একজনের বাড়িতে । একদার তরুণ-তুর্কী প্রায় সবাই, রবীন্দ্রনাথের পদ্য তেমন ভাল্লাগেনা, বলেছেন বহুবার ; আর গদ্য, অমন ভাষায় কেউ কখনও কথা বলত কি ? যাইহোক, গল্প হচ্ছে সেদিন এটা সেটা নিয়ে, এমন সময় বিদ্যুত চলে গেল । খানিক্ষণ চুপচাপ সকলে, কে যেন বললেন, গান হোক । একজন ধরলেন, ওই আসনতলের মাটির 'পরে লুটিয়ে রব, তোমার চরণ-ধুলায় ধুলায় ধূসর হব ।

    কোথায় আসন, কার চরণ, মাটি এখানে মেটাফর কিনা, লুটাবই বা কেন, এসব প্রত্যাশিত প্রশ্ন এল না, স্তব্ধ মগ্নতায় গান বয়ে চলল । শঙ্খ ঘোষের বইতেই বোধধয় এমন ঘটনার কথা পড়েছিলাম ।

    আমার গানের মধ্যে সঞ্চিত হয়েছে দিনে দিনে
    সৃষ্টির প্রথম রহস্য, আলোকের প্রকাশ --
    আর সৃষ্টির শেষ রহস্য, ভালোবাসার অমৃত ।

    পত্রপুট কাব্যগ্রন্থের ১৫ নম্বর কবিতা, লেখেন রবীন্দ্রনাথ ১৮ বৈশাখ ১৩৪৩-এ । অসম্ভব স্পর্শী ক'টা লাইন, আর অসম্ভব স্পর্ধিত । প্রদক্ষিণের ত্রক্রান্তিতে পৌঁছে, অন্তত ত্রক্রান্তির কাছাকাছি, হয়ত এমন প্রত্যয়ই স্বাভাবিক । স্বত:স্ফূর্তও নিশ্চয় । নিজের গান তাঁর কাছে ছিল অনন্য ভূমিকায় ।

    গানকে রবীন্দ্রনাথ ব্যবহার করেছেন প্যালেটের মত । নানা রঙ মিশিয়ে নতুন রঙের সন্ধানে, বা হয়ত নিছকই রঙের খেলায় । কথাকে সুরের ঢঙে বেঁধে, আর সুরকে কথার মত করে, নানা আঙ্গিকে, নানা বিভঙ্গে, নিরন্তর ভাঙন । আর সৃজন । ধরা যাক খুব চেনা গান কয়েকটি । তৃণ যে এই ধুলার 'পরে পাতে আঁচলখানি, আঁচল এখানে নির্ভরতার আহ্বান । কিন্তু, আলোছায়ার আঁচলখানি লুটিয়ে পড়ে বনে বনে ? এ লুন্ঠিত আঁচল, লাস্যের । আর, আমি আমার বুকের আঁচল ঘেরিয়া তোমারে পরানু বাস ; আশ্রয়-আকাঙ্খা মিলে এখানে এক শব্দাতীত রসায়ন । যখন হারাই বন্ধ ঘরের তালা-- যখন অন্ধ নয়ন, শ্রবণ কালা । তালা হারিয়ে এত অস্বস্তি ? তালা এখানে চাবির ব্যঞ্জনা নয় কি ? ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে । চাবি ভেঙে কি আর নেওয়া যায় কাউকে ? তালা ভাঙতে হয় । একবার তালা বলে চাবি বোঝাচ্ছেন কবি, আরেকবার চাবি বলে তালা । কিন্তু আবহের গৌরবে বক্তব্য আলোর মত পরিষ্কার । সে আবহ কি ? কথা, সুর, নাকি ফিজিক্সীয় স্পেস-টাইমের মত কথা-সুর, যার মাঝে অস্তিত্বর ফারাক নেই । চাবি আর তালার এই নক্সা কি শুধুই অন্ত্যমিল বজায় রাখার দায়ে, মনে হয় না । মন মোর মেঘের সঙ্গী বা নীলাঞ্জনছায়া, একটি ছত্রের সাথেও তো আরেকটি ছত্রের অন্ত্যমিল নেই, সুর সরিয়ে পড়তে গেলে হোঁচট খেতে হয় ।

    পথের বঁধু দুয়ার ভেঙে পথের পথিক করবে তোরে । পথিক বঁধু পাগল করে পথে বাহির করবে তোরে-- । প্রায় একই শব্দবন্ধ, বারো বছরের ব্যাবধানে লেখা দুটি ভিন্ন গানে ; তফাৎ শুধু দুয়ার ভাঙায় আর পাগল করায় । বাইরের তাড়া আর ভিতরের তাগিদ । কি অশেষ সূক্ষ্মতার বয়ন । বিষয়-বীক্ষা বাদ দিলেও, গানের syntax নিয়ে এই নিরীক্ষা আমাদের কাছে অপার বিস্ময়ের ।

    কোনো কোনো গান কি ক্লিশে হয়ে যায়নি ইতিমধ্যেই আমাদের কাছে ; মণ্ডপে, মহলে, মিছিলে, মিটিঙে গীত হতে হতে হতে ? জীবনানন্দের ভাষায় যেমন আগুন বাতাস জল'ও "স্থূল হাতে ব্যবহৃত হ'য়ে - ব্যবহৃত - ব্যবহৃত - ব্যবহৃত হ'য়ে - / ব্যবহৃত - ব্যবহৃত - / ... / 'ব্যবহৃত - ব্যবহৃত হ'য়ে শূয়ারের মাংস হ'য়ে যায় ?" হয়ত হয়েছে । স্রষ্টার কাছেও সৃষ্টি ফিকে হয়ে আসে ।

    "আমি যেদিন নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ প্রথম লিখেছিলাম, সেদিন ওটা লিখে আনন্দে বিস্মিত হয়েছিলুম, আজ ওটাকে যদি কোনো নির্মলনলিনী দেবীর নামে চালিয়ে দিতে পারতুম কিছুমাত্র দু:খিত হতুম না, এমন কি অনেকখানিই আরাম পাওয়া যেত"
    -- স্বপ্নিল নির্ঝরিনী হয়ত মহানদীর কাছে বাচাল ঠেকে ।

    তবু স্রষ্টারা চলেন, লিখে, গেয়ে, এঁকে, যার যা বিভঙ্গ । গ্রাহাম গ্রীনের সেই উক্তি, সৃষ্টির অদম্য, অদ্ভুত তাড়নাকে ভাষা দেয় --

    ".. sometimes I wonder how all those who do not write, compose or paint can manage to escape the madness, the melancholia, the panic fear which is inherent in the human situation."
    একজন স্রষ্টা কেমন নতুন থাকেন, তার অনেকটাই নির্ভর করে কতখানি বদলের ভিতর দিয়ে তিনি নিজেকে নিয়ে চলেছেন । বাকি আমি রাখব না কিছুই --, ৬১ বছর বয়সের রচনা, বসন্তের গান । একই সুরে, আমার এই রিক্ত ডালি দিব তোমারি পায়ে, চোদ্দো বছর বাদে চিত্রাঙ্গদার অন্তর্ভুক্ত । কেন এই রিমেক ? সুরের ভাণ্ডে টান পড়েছিল ? দুটি গানেই সমর্পণের আমেজ । দুটি গানেই সমর্পণের আমেজ । কিন্তু একদিকে পূর্ণতার দান ; অন্যদিকে ডালি শূন্য, তবুও দেওয়ার পার্বণে কম পড়ে না । বর্ণালির সাত রঙের আনাচে যেমন লুকিয়ে থাকে অযুত অদৃশ্য রঙ -- নানা ভাবের ভিন্ন ভ্যারিয়েশনের সন্ধান হয়ত এই সব গানের ভিতরে । সুর একই রাখা হয়েছে, গবেষণা যাতে আরও গাঢ় হয় । সৃষ্টির নানা এক্সারসাইজ । একই বয়সে লেখা দুটি গান, কাছাকাছি সময়ে, একই সুর । ধরা সে যে দেয় নাই, দেয় নাই ; আর যায় দিন শ্রাবণদিন যায় । প্রথমটিতে পাওয়ার আকুলতা, পিপাসিত জীবনের ক্ষুব্ধ আশা, আসার আহ্বান । আসবেন, তেমন আশাও । সাথে আনবেন দক্ষিণবায়ু পুষ্পবনে । প্রণয়ের গভীরতা, প্রণয়ীর উদ্বেলতা, সাথে খানিক চাপল্য । যায় দিন শ্রাবণ দিন যায়'তে অমোঘ, অশেষ অন্ধকার । মিলনের প্রত্যাশা প্রথমেই চূর্ণিত । নিবিড-.তমিস্র-বিলুপ্ত-আশা, কোনো দিকে আলো নেই । মনের মাইক্রোকজ্মের সাথে বিশ্বের ম্যাক্রোকজ্ম একই সুরে বাজছে, ফিরে খ্যাপা হাওয়া গৃহছাড়া । অতল মসীময়তার মাঝে নিসর্গের নন্দনতা আরো ক্লেশের, ব্যথিতা যামিনী খোঁজে ভাষা --- / বৃষ্টি মুখরিত মর্মরছন্দে, সিক্ত মালতীগন্ধে । রবীন্দ্রনাথের খুব কম গানের ভিতর এটি একটি, যেখানে আঁধার নিরবচ্ছিন্ন । এই দুই গানে কথাগুলি কেনই একই সুরসমষ্টিতে বাঁধা ? পরীক্ষা এখানে কার, সুরের না কথার ? এমন দৃষ্টান্ত আরো অনেক আছে । তবে তারা শুধুই দর্শায় না, বহু নতুন প্রশ্ন জাগায় ।

    স্রষ্টা যত প্রতিষ্ঠিত হন, নিজেকে ভাঙা ততটাই কঠিন হয়ে যায় । নিজের প্রতিষ্ঠার নিরিখে নিজেকে মাপেন বলেই হয়ত । তাছাড়া বাজার হারানোর ভয়ে তো অনেকে তেমন সৃষ্টিই পরিবেশন করে যেতে থাকেন, যা তাঁদের বাজার চেয়ে চলেছে, বছরের পর বছর । ল্যাবরেটরি গল্পটি লেখা হয় আশ্বিন ১৩৪৭'এ, বাইশে শ্রাবণ প্রায় সমাগত । জোড়াসাঁকোর বাড়িতে অসুস্থ রবীন্দ্রনাথ, প্রশান্তচন্দ্র মহালানবিশ দেখা করতে গেছেন জরুরি ডাক পেয়ে । যেতেই কবি তুললেন সদ্য লেখা ল্যাবরেটরি'কথা । প্রশান্তচন্দ্র স্মৃতিচারণে লিখেছেন, রবীন্দ্রনাথ বললেন,

    " 'তোমার তো ভাল লাগবেই । আর সকলে কি বলছে ? একেবারে ছি ছি কাণ্ড তো ? নিন্দায় আর মুখ দেখানো যাবে না । আশি বছরে রবি ঠাকুরের মাথা খারাপ হয়েছে -- সোহিনীর মত এমন একটা মেয়ে সম্বন্ধে এমন করে লিখেছে । সবাই তো এই বলবে, এটা লেখা ওঁর উচিত হয়নি ?' একটু হেসে বললেন, "আমি ইচ্ছা করেই তো লিখেছি । সোহিনী মানুষটা কি রকম, তার মনের জোর, তার লয়্যালটি. এই জল বড় কথা, তার দেহের কাহিনি তো তার কাছে তুচ্ছ । "
    ল্যাবরেটরি না পড়লে রবীন্দ্রনাথ অনেকটাই অজানা থেকে যান । পরিবর্তনের কি অসীম নিরন্তরতার ভিতর দিয়ে নিজেকে নিয়ে চলেছেন, একেবারে শেষ পর্যন্ত, তা আমাদের অবাক করে দেয় । আরো বিস্ময়কর, তিনি তো তখন শুধুই বিশ্বকবি নন, গুরুদেবও বটে । এবং গুরুদেব বলছেন কেবল ভক্তিন্যুব্জ পারিষদবর্গ নন, তাবড় রাষ্ট্রনেতারাও । এই খোলস থেকে বেরোনোর ইচ্ছা আসে সৃষ্টির মূলগত সততা বা
    creative intergrity র প্রতি একান্ত অনুগত হলেই ।

    রবীন্দ্রনাথের ছবি আঁকার একটি প্রেরণা হয়ত এই নিজেকে নতুন করে জানা ও জানানোর তাগিদ থেকেই । যে বয়সে আঁকতে শুরু করলেন, তখনও তাঁর কথা ফুরোয়নি, এবং এমন কথা যা আগে বলা হয়নি, হয়ত বলার মিডিয়ামটাই তৈরি হয়নি । বিচিত্রিতা'র আশীর্বাদ কবিতার শুরুতে বিজ্ঞপ্তি, পঞ্চাশ বছরের কিশোর গুণী নন্দলাল বসুর প্রতি সত্তর বছরের প্রবীণ যুবা রবীন্দ্রনাথের আশীর্ভাষণ । কবিতার শেষ কয় ছত্র,

    তোমারি খেলা খেলিতে আজি উঠেছে কবি মেতে,
    নববালক জন্ম নেবে নূতন আলোকেতে ।
    ভাবনা তার ভাষায় ডোবা --
    মুক্ত চোখে বিশ্বশোভা
    দেখাও তারে, ছুটেছে মন তোমার পথে যেতে ।

    লেখার থেকে রেখার জগতে যেচে যাওয়া সত্তর বছরের প্রবীণ যুবার, প্রকাশের অনন্ত উদ্যমে । নতুন কিছু প্রকাশের । একটি খুবই পরিচিত ছবি রবীন্দ্রনাথের, নাম বোধহয় রক্তিম মরীচিকা, গনগনে আঁচের মধ্যে থেকে উঠে আসছেন উর্দ্ধবাহু নারী -- অমন আশ্লেষ ওঁর অন্য কোনো সৃষ্টিতে পাওয়া যায় না ।

    তবে গানে রবীন্দ্রনাথ সাহসী বহুদিনই । এতটাই যে, অনেক সময় তা তত্কালীন বাঙালি রক্ষণশীলতাকে নাড়া দিয়েছে । অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত কল্লোল যুগ -এ উদ্ধৃতি দিয়েছেন তাঁর বন্ধু গোকুলচন্দ্র নাগ'এর পথিক বইটি থেকে । গোকুলচন্দ্র প্রখ্যাত মনস্বী কালিদাস নাগ'এর ভ্রাতা এবং সুসাহিত্যিক ।

    "মায়া উঠিয়া মুখ ধুইয়া চুল আঁচড়াইতে আঁচড়াইতে গান ধরিল --
    তোমার আনন্দ ঐ এল দ্বারে
    এলো - এলো - এলো গো !
    বুকের আঁচলখানি
    I beg your pardon, miss --
    সুখের আঁচলখানি ধূলায় পেতে
    আঙিনাতে মেল গো --

    না:, আমার মুখটা দেখছি সত্যিই খারাপ হয়ে গেছে । ভাগ্যিস কেউ ছিল না - 'বুকের আঁচল' বলে ফেলেছিলাম !

    .....
    মায়া । .... সেদিন যখন কমলা ঐ গানটা গাইছিল, মিসেস ডি এমন করে তার দিকে তাকালেন যে বেচারির বুকের আঁচল বুকেই রইল, তাকে আর ধূলায় মেলতে হল না । মিসেস ডি বলে দিলেন, বই-এ ওটা ছাপার ভুল কমল, সুখের আঁচল হবে -- ।

    কমলা বলল -- কিন্তু রবিবাবুকে আমি ওটা বুকের আঁচল --- ।

    মিসেস ডি বলিলেন -- তর্ক কোর না, যা বলছি শোন । আর কমলাটাও আচ্ছা বুদ্ধি ! না হয় রবিবাবু গেয়েছিলেন বুকের আঁচল -- কিন্তু এদিকে বুকের আঁচলটা ধূলায় পাততে গেলে যে ব্যাপারটা হবে তার সম্বন্ধে কবির অনভিজ্ঞতাকে কি প্রশ্রয় দেওয়া উচিত ? ..."

    এই আখ্যানের সময়টা আন্দাজ করা যায়, রবীন্দ্রনাথ তখনও রবিবাবু । নীরদচন্দ্র চৌধুরী লিখেছেন, তাঁর মা রবীন্দ্রনাথের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল এবং তাঁর সাহিত্যে অনুরক্ত হয়েও, কিছু গানের ব্যাপারে খানিক অস্বস্তিত হতেন ; কেন যামিনী না যেতে জাগালে না, বলেছিলেন ওটি বাসরঘরের গান, উহ্য ইঙ্গিত ছিল, সবসমক্ষে হয়ত না গাওয়াই শ্রেয় । গানের রবীন্দ্রনাথ শুধু যুগের থেকে এগিয়েই থাকেননি, যুগকেও সাথে নিয়ে চলেছেন ।

    রবীন্দ্রনাথের গানের ভিতর থেকে যদি একটি সূত্র উঠে আসে, তা হল অন্তহীন এক্সপেরিমেন্টেশন । অভিব্যক্তি, বিভঙ্গ, ভাষা, সব কিছু নিয়েই । তাঁর বিভিন্ন ও বহুমুখী সৃষ্টিকল্প এক জায়গায় মেলে না কোথাও, মেলার কথাও নয়, তবু, গানের চলিষ্ণু নিরীক্ষা অন্য ধারাগুলির কাছে ভাবনা ও আঙ্গিকের harbinger হয়ে এসেছে বার বার ।

    এই এক্সপেরিমেন্টেশনই আমাদের এবং আরও বহু উত্তরকালের সম্পদ । কপিরাইটোত্তর রবীন্দ্রনাথকে আমরা কেমন করে রাখলাম, তাঁর হৃত নোবেল উদ্ধার করলাম কিনা, এসব হয়ত গুরুত্বের, তবে এহ বাহ্য । রবীন্দ্রনাথের গান থেকে বাঙালির যা পাওয়ার, তা আরও গভীরে । আধুনিক পৃথিবীর একজন শ্রেষ্ঠ মনীষার বিবর্তন ও বিকীরণের এই দিনলিপি আমাদেরই । এই উত্তরাধিকার আমাদের উদ্বুদ্ধ করুক, উদ্বোধিত করুক, নতুন বীক্ষণে, নতুন সৃষ্টিতে, নতুন করে ভাঙায় ।

    কড়ি ও কোমলের পূর্বাহ্নের রবি লেখেন,

    পৃথিবী জুড়িয়া বেজেছে বিষাণ,
    শুনিতে পেয়েছি ওই --
    সবাই এসেছে লইয়া নিশান,
    কই রে বাঙালি কই ।

    একই কবিতায় তারপর বহু ছত্রের যৌবনিক উচ্ছ্বাসের শেষে আসে আহ্বান, হয়ত নিজের প্রতিই

    বিশ্বের মাঝারে ঠাঁই নাই বলে
    কাঁদিছে বঙ্গভূমি,
    গান গেয়ে কবি জগতের তলে
    স্থান কিনে দাও তুমি ।

    জগতের তলে বাঙালির স্থান কোথায় তা ইতিহাসের বিচার্য । ইতিমধ্যে গান বয়ে চলুক । আজও কেবলই সুর সাধা, আমার কেবল গাইতে চাওয়া ।





    (পরবাস, মে, ২০০৫)

  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments