মেজোদাদুর হাতে চায়ের কাপ সামান্য কেঁপে গেল - তান্ত্রিকেরা শুনেছি মড়ার খুলিতে চা খায় । জলদস্যুরা কিসে খেত জান কেউ ? কফি কথাটা কি কফিন থেকে এসেছে ?
- কফিটা একটু জটিল । কফি গাছের আদি নিবাস হচ্ছে আবিসিনিয়ার কাফা ব'লে একটা জায়গা । কিন্তু কফি শব্দটা পর্তুগিজ
বছীংং থেকে এসেছে না তুর্কী ংঊছীংং থেকে এসেছে বলা শক্ত । বংশপরিচয় জানা নেই এরকম শব্দের সংখ্যাও অজস্র । যেমন আচার - অংকস্যার জিভ দিয়ে ঠোঁট চাটলেন - অনেকেই বলেন এটা পর্তুগিজ শব্দ ছবচ্ছশ থেকে আমদানি । কিন্তু আদি পর্তুগিজ ভাষায় সেরকম কোন শব্দ নেই । সেক্ষেত্রে তারা হয়তো অন্য কোন ভাষা থেকে এটা আমদানি করেছে । আবার কারো কারো মতে ল্যাটিন ভাষার ছবংঞছশঠছ শব্দ থেকে আচার এসেছে । তেমনি আবার বয়াম শব্দটা পর্তুগিজ ঢধএছধ থেকে এসেছে । কিন্তু পর্তুগিজরা এটা কোথায় পেল জানা নেই । বারান্দা কথাটাও তো -- অজ্ঞাতকুলশীলদের কথা বাদ দাও মোহন - মেজোদাদু বিরক্ত - যা জানা আছে তাই নাহয় বললে ।
- অলরাইট । চাবি শব্দটা এল পর্তুগিজ
বচ্ছটং থেকে । চাবি এসে বাংলা প্রাচীন শব্দ কঁংউজিকে সরিয়ে দিল । তেমনি ঝরোখার বদলে এল জানলা - যার মূলে হ'ল পর্তুগিজ এছত্রংত্ছ । আবার পর্তুগিজ ভছস্ংত্ছ থেকে আমাদের গামলা । বাংলায় আগে নাকি গামলার জায়গায় তামারি বা তাগারি ব্যবহার হ'ত । যেমন পর্তুগিজ থেকে বোতাম আসার আগে ঘুণ্ডি শব্দটা চালু ছিল । কপি শব্দটাও তো পর্তুগিজ বধণ্ণটং থেকে ।মেজোদাদু বিড়বিড় করলেন - বোঝো । কাম্বুরিয়ার কপিক্ষেত -
গ্যাঞ্জাম সব খাতায় টুকে রাখছিল । অংকস্যার সস্নেহে বললেন - পরীক্ষার খাতায় আবার গামলার জায়গায় তাগারি লিখে আসিস না । গাংলুদের পত্রিকায় বরং চলতে পারে ।
কিন্তু গাংলুর সেদিকে কান নেই । হাসিমুখে বাগানের গাছপালা ছাড়িয়ে দিগন্তের দিকে তাকিয়ে আছে । লুচি জুড়িয়ে জল হয়ে গেছে খেয়াল নেই । অংকস্যার আর সহ্য করতে না পেরে বললেন - 'নির্বেদ' পত্রিকায় লেখা বেরিয়েছে ব'লে খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দিবি ?
গাংলু তাড়াতাড়ি হাসি থামিয়ে মুখে একটা লজ্জা-লজ্জা গাম্ভীর্য ঝুলিয়ে দিল । গ্যাঞ্জাম এমন হাঁপ ছাড়ল যেন এর চেয়ে অনেক খারাপ খবর আশঙ্কা করছিল ।
- কী লিখেছে গাংলু ? -মেজোদাদু কৌতূহলী ।
- কবিতা - চোখ বুজে বলল গ্যাঞ্জাম ।
এইসময় বাগানের গেট ঠেলে সত্যসাধন ঢুকলেন । সঙ্গে একজন রোগা নিরীহ চেহারার লোক । সত্যসাধন বললেন - মিস্টার গদাধর । তারপর গলা নামিয়ে বললেন - গোয়েন্দা । বিশেষ তদন্তের কাজে এসেছেন । রাস্তায় আলাপ হ'ল ।
অন্দর থেকে অতিথিদের জন্য চা জলখাবার এল । মিস্টার গদাধর আতসকাঁচ দিয়ে প্রত্যেকটা লুচি খঁংউটিয়ে খঁংউটিয়ে দেখলেন । পকেট থেকে একটা ছোট নোটবুক বের ক'রে কীসব নোট করলেন । গাংলু গ্যাঞ্জাম চোখ গোল গোল ক'রে তাকিয়ে আছে । সত্যসাধন কিছুক্ষণ সমঝদারের মত মাথা নাড়লেন । তারপর চায়ে গলা ভিজিয়ে জিজ্ঞেস করলেন - কী কথা হচ্ছিল ?
- কাম্বুরিয়া - সরাসরি বললেন মেজোদাদু । শোনামাত্র মিস্টার গদাধর চমকে উঠে স্থির হয়ে গেলেন ।
অংকস্যার তাড়াতাড়ি কথা ঘোরালেন - কবিতা, কবিতা -
ফল হ'ল উল্টো । মিস্টার গদাধর চেয়ারে ব'সে ব'সেই বেমালুম মূর্ছা গেলেন । গ্যাঞ্জাম গরম চায়ের ঝাপটা দেবে কিনা ভেবে ওঠার আগেই কংকাবতী হড়হড় ক'রে জগসুদ্ধ জল গদাধরের মাথায় উপুড় ক'রে দিলেন । সত্যসাধন "মাদার টিনচার কুইনাইন নাকসভমিকা থার্টি" ব'লে চেঁচাতে লাগলেন । মেজোদাদু টেটভ্যাকের সিরিঞ্জ নিয়ে আস্তিন গোটাচ্ছেন ।
মিনিট পনেরো তুলকালাম চলার পর মিস্টার গদাধর সুস্থ হয়ে বসলেন । সত্যসাধন বললেন - খুব ধকল যাচ্ছে বুঝি ?
কংকাবতী নরম গলায় জিজ্ঞেস করলেন - বাড়ি যাবেন ?
গদাধর আবার আঁতকে উঠে চেয়ার থেকে পড়ে যেতে যেতে কোনক্রমে সামলে নিলেন । মেজোদাদু হাল ছেড়ে দিয়ে বললেন - ত্রক্রনিক ডিজিজ । কিংবা অজ্ঞান হ'তে ভালবাসে । নেশা । আমার ছোটমামা একসময় দিনে তিনবার ক'রে হার্টফেল করতেন । লেগে থাকলে হয় ।
মিস্টার গদাধর Øঁংউপিয়ে উঠে বললেন - কাম্বুরিয়ার কবিসম্মেলনে গেলে আপনিও হার্টØংএল করতেন ।
এবার চমকানোর পালা অন্যদের । মেজোদাদু কটমট ক'রে তাকাতে গিয়ে হাঁ হয়ে বললেন - খামোখা কবিসম্মেলনে যাব কেন ? কবির আকাল নাকি ?
গাংলু লাফিয়ে উঠে বলল - কবিসম্মেলন ? কে কে এসেছিলেন ? আখতারদা ?
- কে আসেননি আবার ? চেনা জানা অচেনা অজানা কেউ বাদ নেই । পিলপিল ক'রে নতুন নতুন কবি বেরিয়ে আসছে । আখতার তো দেখলাম ডজনদুয়েক । কোনটা চাই ?
- ব্যাপার কী মশাই ? - সত্যসাধন উদ্বিগ্ন - কবিদের ভিড় এত বেড়ে গেছে নাকি ? সরকার কিছু করছে না ?
- ভিড় বাড়ালে তো বাড়বেই । সরকার তো কাম্বুরিয়া । পরিষ্কার বলল আপাতত: তিন টাইপের কবি তেড়ে ম্যানুফ্যাকচার করা হচ্ছে, পরে আরো বাড়বে ।
- তিন টাইপ মানে ?
- বাবরি চুল, মাতাল আর বিদগ্ধ । বলল কবিতার ফর্মূলা তো আছেই, এখন কোম্পানি বড় হচ্ছে, প্রোডাকশন বাড়াতে বেশি লোক লাগবেই । তাই কবি তৈরীর ফর্মূলাও বের করা হয়ে গেছে । গুদাম থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে বাজারে ছাড়া হবে ।
সবাই কিংকর্তব্যবিমূঢ় । অংকস্যার গ্যাঞ্জামের কানে কানে বললেন - মালয় ভাষায়
ভধরুধত্রভ ব'লে একটা শব্দ আছে । সেটাই পর্তুগিজদের মারফত এদেশে এসে গুদাম হয়ে গেছে । তা থেকে আবার ইংরেজি ভধরুধগত্র ।মেজোদাদু ধমকে বললেন - কী ফিসফিস করছ ?
অংকস্যার ঘাবড়ে গিয়ে ঘাড়টাড় চুলকে কোনমতে একটা উত্তর দাঁড় করালেন - তিনটে প্রশ্ন । কাম্বুরিয়ার কিসের কোম্পানি ? কবি বানাতে খরচা কেমন ? গাংলু বিদগ্ধ না বাবরি চুল ?
মেজোদাদু গম্ভীরভাবে বললেন - তিনটের মধ্যে দুটোই রাবিশ । একমাত্র কোম্পানিটা ভেবে দেখার ।
সবাই গভীর চিন্তায় নিমগ্ন হলেন । কংকাবতী চাপা গলায় গদাধরকে জিজ্ঞেস করলেন - কোম্পানির ব্যাপারটা কিছু জানেন ?
গদাধর উত্তেজনায় মুখ লাল ক'রে কী একটা জবাব দিতে যাচ্ছিলেন, কিন্তু তার আগেই চম্পট তীরবেগে বাগানে ঢুকে এল - হালদারবাড়ির পাগল ছোট ছেলে সকাল থেকে বেপাত্তা । এদিকে এসেছে নাকি ?
সঙ্গে সঙ্গে মিস্টার গদাধর হাওয়া । লিকলিকে পায়ে চম্পটের তিনগুণ বেগে সোজা বাগানের বাইরে । সত্যসাধন চেঁচিয়ে ডাকলেন - ব্যাপার কী ? ও গদাধরবাবু ? খঁংউজতে চললেন নাকি ?
- ষড়যন্ত্র, গভীর ষড়যন্ত্র - বলতে বলতে সম্পূর্ণ অদৃশ্য হলেন গদাধর ।
পাশাপাশি | উপরনিচ |
(১) চার আকার স্তর কদর করবে পথের পাঁক (৫) দুই দশ বা এক শ' রবি (৯) তার চমক নিত টক ফল (১১) চোখের স্বরহীন ব্যয় (১২) বাবা পরমপিতা (১৪) কাকা পড়ে সন্দেশ (১৬) খসখস করবে না নীলকর (১৭) ঘোড়ায় সেনা সারালি (১৯) পাছে বলি 'হড়্কাব' (২১) খেলো নোঙর ফেলানো আহা, কি বর্ণ বাহার ! (২৩) কত নায়ক যায় না (২৫) লালে উত্তেজিত করো (২৬) লাল মুখে সরালাম আবরণ (২৮) রাগ ক'রো না, নেই কো প্রণয়ীরা (৩০) লেপ নিলে সায় দিলে পাবে টাকা (৩২) নয়তো নিয়ো নিচে (৩৩) লাখো পাই খই খেয়ে মুক্ত কোষ (৩৬) গলায় সঙ্গ (৩৭) পাঁচ তন্ত্র সাধনা কর মা (৩৯) বুড়ো হওয়া গা'র জালা (৪১) গোপনে ল'ড়ে গত (৪২) অধীন বদ বংশ | (১) রাবণের বাবার ঘি দিয়ে এক ফোঁটা (২) পাখির কল্পনা (৩) সাধক কার দিক ? (৪) ছেড়ে দামাল যুবক (৬) নি:স্বরে খুশি সাধ (৭) খারাপ সময়ে বলাবে ওরা (৮) চীনে বলার বইগুলো (১০) এক কাপ খাও, এক সুর গাও, দু'য়ে ভর দাও (১৩) দোকান ক'রে সাপ কেনে (১৫) পলক কি ওপরে তোলে যন্ত্র ? (১৮) লাল রঙে হল (২০) ছেয়ে গেছে ছল পা'য় (২২) মাখো লাখো রঙ, নৌকো ডুবে নাম উন্মুক্ত থাক্ (২৪) বহু বিধি নাম নত না (২৬) দাঙ্গা খুর বাখান (২৭) কালো মালায় একাকার (২৯) আগের দিন কত গলা ? (৩১) শিষ্যের রসে দাগ (৩৪) জালে খই (৩৫) শত কপালে কত নিবি ফুল ? (৩৮) রক্ত গমনার্হ (৪০) অসম সংগ্রাম কাটার নদী |
আগের বারের শব্দজব্দের উত্তর পাঠিয়েছেন কলকাতা থেকে শর্মিলা ব্যানার্জি । তাঁকে আমাদের অভিনন্দন । পুরস্কার রওনা দিচ্ছে । এবারেও প্রথম দুজন সঠিক উত্তরদাতাকে পুরস্কার দেওয়া হবে ।
দয়া করে এবার থেকে ডাকযোগে উত্তর পাঠালেও ই-মেল (যদি থাকে, তো) জানাতে ভুলবেন না ।
(পরবাস, ডিসেম্বর, ২০০৪)