• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৩৪ | ডিসেম্বর ২০০৪ | প্রবন্ধ
    Share
  • বলব কি আর কলের ফিকির ! : নন্দন দত্ত

    [১]

    প্লামি সেদিন স্কুল থেকে ফিরেই বলল,
    -- ছোটকা, ছোটকা, জান তো, আমি না মাউস ক্লিক ক্লিক করেছি !

    ছোটকা ওরফে অয়ন হাতের বইটা বন্ধ করেছিল প্লামির পা শুনেই । এই সময়টা রোজ প্লামি আসে, সারাদিনের নানা রাজ্যজয়ের খবর নিয়ে । শুধু মন দিয়ে শুনলেই চলে না, অয়নকে তারিফও করতে হয় প্লামির বীরত্বের । আর সময় সময় খানিক অবিশ্বাস মিশিয়ে দিয়ে প্লামির কৃতিত্ব আরো গরিয়ান করলে তো কথাই নেই । সাধারণ হঁংউ, হাঁ, তাই নাকি'তে কুলোয়ে না, গভীর অনুযোগ নিয়ে প্লামি তবে বলে উঠবে, তুমি তো শুনছই না । তাই এই সময় শোনায় মন দিতেই হয় ।

    ক'দিন থেকেই প্লামি খুব এক্সাইটেড, ওদের স্কুলে কম্পিউটার ক্লাস চালু হচ্ছে । এটা যে একদম বড় হয়ে যাওয়ার বিলক্ষ্মণ লক্ষন, সে নিয়ে প্লামির কোনো সন্দেহই নেই । তিন দিনে অন্তত শ'খানেক বার শুনিয়ে গেছে প্লামি অয়নকে, এবার তোমার মত আমিও কম্পিউটার চালাব । তবে মাউস ব্যাপারটা বোধহয় কল্পনার বাইরে ছিল, আজ হাতেনাতে মুষিক চালনায় তার আর উত্সাহ ধরে না ।

    আজকাল প্রায় সব স্কুলেই কম্পিউটার শেখানো চালু হয়ে গেছে, অনেক জায়গায় নীচু ক্লাস থেকেই । ভাবতে অবাক লাগে অয়নের; প্রজন্ম কি দ্রুত এগিয়ে চলে । অয়ন বোধহয় কম্পিউটার শব্দটিই প্রথম শোনে ক্লাস টেন নাগাদ, রোবট, টাইম মেশিন ইত্যাদি কল্পলোকীয় কুয়াশায় মিশে ছিল তখন কম্পিউটারও । আর আজ এই সেদিনের প্লামিও মাউস হাতে ওস্তাদ । অবশ্য ছোটকা আর তার মধ্যে ফাঁকটা যে বড়, বা আদৌ কোনো ফাঁক আছে, এটাই মানতে চায় না প্লামি । তার মতে বয়সের তফাত্টা নেহাতই নেই, ছোটকা তার কাছাকাছিই । অয়নেরও আপত্তি নেই এতে ।

    প্লামির এখন প্রশ্নবোধক বয়স । কি, কেন, কোথায়, কবে'র ভরা কোটালে ভেসে যেতে হয় চারপাশের সব্বাইকে । স্কুল থেকে ফিরে এই আস্কিং রেট'টা চড়া থাকে । বাড়ির আর সবার কাছে প্লামির প্রশ্নমালার উত্তর আর তা দেওয়ার ধৈর্য হয়ত সর্বদা একসাথে থাকে না, কিন্তু অয়ন যথাসাধ্য চেষ্টা করে, প্লামির তাই ছোটকা বেজায় প্রিয় ।

    তবে প্লামির প্রশ্ন প্রায়ই তুখোড়, অয়নকে নাকাল হতে হয় । একদিন এসে বলল, -- আজকে আমাদের ফ্র্যাকশান শিখিয়েছে, ভালগার ফ্র্যাকশান বলে কেন ? ভালগার কি ? ভালগারের যথাসম্ভব সরল ব্যাখ্যা দিয়ে অয়ন ভাবতে লাগল, সত্যি তো, সাধারণ (বধস্স্ধত্র) ফ্র্যাকশানের তেমন কোনো বেয়াদবি তো চোখে পড়ে না, তাহলে অমন নাম কেন ? স্কুলের টিচাররা এ সব প্রশ্নের কি উত্তর দেন কে জানে । অয়নদের অঙ্ক পড়াতেন একবার ধরিত্রীদি, ক্লাসে ঢুকেই বলতেন, প্রশ্ন করলেই জিরো পাবে ।

    প্লামি আজকে বেশ তৈরি হয়েই এসেছে । স্কুল থেকে ফিরেই পাঁচটা লুচি খেয়েছে এই সংবাদ দিতে দিতেই খাটে উঠে বাবু হয়ে বসল । তারপর বলল,
    -- কম্পিউটার কে তৈরি করেছে বলত ? বলতে পারবে ?
    -- কে বল্ত, অ্যালান ট্যুরিং কি ?
    -- ধ্যত্‌, তুমি কিচ্ছু জান না । অ্যালান-ট্যালান না, ক্যাবেজ ।
    -- আই ! ক্যাবেজ ! তোদের এই শিখিয়েছে স্কুলে ?
    -- হি: হি: হি: ক্যাবেজ না ব্যাবেজ, হি: হি: ।
    -- দুষ্টু ছেলে !
    -- সরি সরি ! মজা করছিলাম, একটা গল্প বল না ছোটকা, প্লিজ, প্লিজ, প্লিজ ।
    -- গল্প, গল্প, আচ্ছা শোন্‌, একটা খেলা খেলি ।
    -- কি খেলা ?
    -- দাঁড়া, তোদের ঐ স্কুলের অঙ্ক খাতা আছে না, চৌকো চৌকো ঘর আঁকা ?
    -- এরিথমেটিক কপি ?
    -- হঁযা, হঁযা ওটাই, যা নিয়ে আয় একটা পাতা । শোন্‌ পাতা ছিঁড়িস না, পুরো খাতাটাই আন্‌, মাঝখান থেকে পাতা খুলে নেব । আর পেন্সিল আর রাবার আনিস ।

    নতুন খেলার নেশায় প্লামি ছুটল খাতা আনতে । খুবই উত্সাহ, একেবারে নতুন খেলা হলে ক্লাসে দেখানো যাবে, বন্ধুরাও হাঁ হয়ে যাবে । অয়ন একটা তাকিয়া টেনে বসল, খেলার নিয়মগুলো ঝালিয়ে নিল মনে মনে ।


    [২]

    -- গুণ করতে পারিস তো, বল্ত
    ৪২৩১ দ্‌ ৭৭ = কত ?
    -- এটা তো মাল্টিপ্লাই, তুমি তো খেলা বললে, এটা তো খেলা নয় ....।
    প্লামির এই চক্করটা ভালই চেনা । অয়নের কোনো খেলাই শুধু খেলা থাকে না । ধাপে ধাপে নানা ভাবগম্ভীর আলোচনায় পৌঁছয়ে । হয় জ্যোতির্বিজ্ঞান, নয় জিওগ্রাফি, নয় নিছকই রসায়ন । একবার তো ডিমের খোলের ডায়নামিক্স বোঝাতে গিয়ে আস্ত আণ্ডা চৌচির । খোদ ছোটকার তত্বাবধানে এমন ভাঙাচোরায় প্লামি খুবই আমোদ পেয়েছিল ; বাড়ির আরো বড়রা অয়নকে বলেছিলেন, কি হচ্ছেটা কি । তবে অয়নের জানা ছিল এমন হবার কথা নয়, রোমান সাম্রাজ্যে দালানের আর্চ তৈরি হত এক বিশেষ কায়দায়, অনন্তকাল পড়ত না ; ডিমের বেসিক প্রিন্সিপালটাও সেটা বলেই বইতে পড়েছিল, তাও যে কেন ....। যাইহোক আজকের বিষয়ে এসব রিস্ক নেই, খেলা শুধুই কাগজে কলমে ।
    -- দাঁড়া না, খেলা তো সবে শুরু হচ্ছে, মাল্টিপ্লিকেশন থেকে । করে বল না কত হল । প্লামি কাগজ টেনে একমনে গুণ করতে থাকে । এসব খেলায় তার উত্সাহও কম নয় । একটু পরেই বলে,
    -- এটা তো একদম ইজি, কে না পারে,
    ৩২৫৭৮৭
    -- কি করে করলি ? দেখা তো ।
    প্লামির খাতা টেনে নিয়ে অয়নের চোখে পড়ে পরিচিত আঁক ।



    -- বা: ভেরি গুড, একদম রাইট হয়েছে ।
    প্লামি বেশ ভারিক্কি তাচ্ছিল্য ফুটিয়ে বলল,
    -- এটা তো ক্লাস ওয়ানের বাচ্চাও পারবে ।
    ওর কথায় মনে হল, ওয়ানের অতীত অনেকই দূরে ।
    -- আচ্ছা, তোর ক্যালকুলেশনটা এইরকম করে লিখলে হয় না ।
    অয়ন প্লামি খাতার চৌকো ছক ভরে ফেলে দেখায় ।



    প্লামি খানিক বিজ্ঞের মত তাকিয়ে বলে,
    -- হঁযা হয়, কিন্তু.. কিন্তু, অ্যাড করার সময় ভুল হয়ে যেতে পারে তো ।
    -- ঠিক বলেছিস, ভুল হয়ে যেতে পারে । ভুল হবে কেন, কারণ আমরা যোগ করতে শিখি, আমাদের শেখানো হয় ঐ রকম করে, যেমন তুই করেছিস । কিন্তু এই খেলাটার একটা নিয়ম হল, তোর অঙ্ক খাতার শুধু একটা লাইনই ব্যবহার করা যাবে । একটা লাইনে যত চৌকো ঘর আছে সেগুলো ধরে ডান দিকে বা বাঁ দিকে যাওয়া যাবে, কিন্তু ওপরে বা নীচের লাইনে যাওয়া যাবে না । একেকটা চৌকো ঘরে পৌঁছে সেখানে কিছু লেখাও যায়, আবার কিছু লেখা থাকলে মুছেও ফেলা যায় । এবার দেখি এই নিয়ম ধরে চললে গুণটা কেমন করে করব, একেকবার দুটো করে ঘরের দিকে তাকিয়ে আমরা ঠিক করব কি লেখা যায় ।



    -- প্রথমে আমরা
    আর 'এর দিকে তাকাচ্ছি । এ দুটোকে মাল্টিপ্লাই করে পাওয়া যায়, সেটা লিখলাম একদম ডানদিকের ঘরে ।



    -- এবার
    আর গুণ করব । এই রকম করে সবকটা গুণ করে নিয়ে যোগ করতে হবে; লিখে নিলাম,



    -- এখন যোগ করতে হবে, আবার সেই দুটো করে ঘর দেখে, একদম ডান পাশের ঘরে রেজাল্টটা লিখব । প্রথমে
    আর অ্যাড করে লিখলাম,



    -- তারপর
    আর 'কে অ্যাড করে পাব । মজাটা হল, আগেও কিন্তু আমরা আর দুটো একসঙ্গে দেখেছিলাম । তবে তখন গুণ করছিলাম, তাই রেজাল্ট এসেছিল ; আর এবার যোগ করে পেলাম । কি রে, নিয়মটা বুঝলি ?
    প্লামি এতক্ষণ নির্ণিমেষে গিলছিল অয়নের কথা আর এই সব চৌখুপি আলপনা । আরেকটু চেয়ে থেকে বলল,
    -- আমরা পাতার ধারে এসে গেছি তো, আর তো ডানদিকে যাওয়ার জায়গা নেই । এর থেকে বড় মাল্টিপ্লিকেশন হলে তো পাশাপাশি আর লেখাই যাবে না ।

    অকাট্য প্রশ্ন, অয়ন জানত এটা আসছে । তবে এত শীগ্গিরই বুঝতে পারেনি । কোনো ব্যাপারের অবাস্তবতা ছোটরা চট করেই ধরে ফেলে । তবে মাঝে মাঝে অবাস্তবটাকে ইচ্ছা করেই ধরতে হয়, সেটা কায়দা করে পাস করিয়ে নিতে হবে প্লামিকে দিয়ে ।
    -- ঠিক বলেছিস, পাতাটা চওড়ায় ফুরিয়ে যাবে । সেরকম হলে আরো বড় পাতা নেওয়া যেতে পারে । বা হয়ত চৌকো ঘরের একটা লম্বা ফিতে তৈরি করলে হয়, যেটা চলতেই থাকবে ।

    এটা একটা নতুন কনসেপ্ট, চৌকো ঘরের ফিতে । নতুনত্বে প্লামির আরো প্রশ্ন চাপা পড়ল আপাতত ।

    ইত্যবধির নিয়মটা যে ভালই বুঝে গেছে তা প্রমাণ করতে দুয়েকটা বাঘা মাল্টিপ্লিকেশন চওড়া-চওড়ি চট করে কষে ফেলল প্লামি । একটা ভুল হয়েছিল, তবে সেটা সিলি মিস্টেক, নিজেই বলে দিল সে ।


    [৩]

    এবার খেলার সেকেণ্ড রাউণ্ড । অয়ন বলল,
    -- প্লামি, তাহলে দেখা যাচ্ছে, আমাদের নিয়মটা এমনি মাল্টিপ্লিকেশনের মতই, খালি লেখার কায়দাটা অন্য । ধাপে ধাপে ঠিকঠাক খোপে গুণফল, যোগফল লিখে গেলেই উত্তরে পৌঁছে যাওয়া যাবে । এই ধরণের যে কোনো ক্যালকুলেশনেরই গোড়াতেই দুটো নিয়ম,
    ১. কষবার প্রত্যেক ধাপে অল্প কিছু চিহ্ন'র দিকে মন দেওয়া হয় (আমরা দুটো করে ঘর একসাথে দেখছিলাম) ।
    ২. প্রত্যেক ধাপে কি করা হবে তা ঠিক হয় চিহ্নগুলো দেখে এবং কি করছি সেটা মনে রেখে । (
    আর প্রথমবার আমরা গুণ করেছিলাম, আর পরের বার যোগ করলাম, কারণ ধাপ দুটো অন্য ছিল ।) এই কি করছি সেটা মনে রাখার চিন্তাটাকে নাম দেওয়া যেতে পারে স্টেট (যঞছঞং)
    -- স্টেট মানে তো সলিড, লিক্যুইড, গ্যাস; সায়েন্স বইতে লেখা আছে । প্লামি সজাগ হয়ে শুনছে বোঝা গেল ।
    -- সলিড, লিক্যুইড, গ্যাস'ওতো তিনটে অবস্থা, তাই তো তাদের স্টেট বলা হয় । এটাও তেমনই একটা মগজের অবস্থা, অঙ্ক কষবার সময়ের ।

    প্লামি বলল,
    -- ও: ।

    তবে দুটো নিয়ম প্লামির বেশ ভালই হজম হয়েছে মনে হল । বোঝা গেল তার পরের প্রশ্ন থেকে,
    -- চিহ্ন মানে কি নাম্বার,
    ১, ৭ এগুলো তো নাম্বার, চিহ্ন বলছ কেন ?
    -- হঁযা, এখানে চিহ্ন মানে নাম্বার গুলোই, তবে...যাইহোক ।

    চিহ্নের আরো গুহ্য অর্থে এখানে যাওয়ার দরকার নেই মনে হল অয়নের, তাই বলতে গিয়ে সামনে নিল ।
    --এখানে আমরা দুটো করে খোপের নাম্বার এক সাথে নিয়ে দেখছিলাম যোগ করা উচিত না গুণ করা উচিত । কিন্তু যদি দুটো করে খোপ এক সঙ্গে দেখতে কারোর শক্ত লাগে....,
    --- বাচ্চারা হয়ত নাও পারতে পারে,

    প্লামি ঝটতি ফুট কাটে । বড় হওয়ার সুবাদে ও কি কি পারে, সেসবের নিপুণ হিসেব প্লামির করাই আছে ।
    -- ঠিক আছে, বাচ্চাদের জন্যই না হয় আরেকটু সহজ করা যাক নিয়মটা । আমরা একেকবার শুধু একটা করে খোপই দেখব । পরের দরকারি খোপটা দেখতে গেলে ফিতের উপর ডানদিকে বা বাঁদিকে কয়েক ঘর সরে আসলেই চলবে । তাহলে আমাদের অঙ্ক কষার নতুন নিয়ম গুলো সাজিয়ে নেওয়া যাক ।
    ১. ক্যালকুলেশন করা হবে একটা চৌকো খোপ কাটা ফিতের উপর । একটা খোপে মাত্র একটা করে নম্বর লেখা হবে ।
    ২. প্রত্যেক ধাপে, শুধু একটা খোপের নম্বরেই লক্ষ রাখা হবে ।
    ৩. একটা ধাপ থেকে পরের ধাপে যেতে গেলে কি করতে হবে
    (ত্রংন্ঞ ছবঞঠধত্র), তা নির্ভর করবে সেই খোপে লেখা নম্বর এবং তখনকার স্টেট'এর উপর ।
    ৪. এই
    ত্রংন্ঞ ছবঞঠধত্র টা হবে যে খোপ লক্ষ করা হচ্ছে সেখানে কিছু লিখে এক ঘর ডানদিকে বা বাঁদিকে সরে আসা । একটা খোপ থেকে অন্য খোপে পৌঁছতে গেলে এক ঘর করে করে সরে আসতে হবে, বাঁদিকে বা ডান দিকে ।

    কি রে, শক্ত লাগছে কি ?
    -- না: না:, একদমই না ।

    শক্ত লাগাটা তেমন পৌরুষেয় হবে না মনে করে প্লামি মাথা ঝাঁকালো সজোরে ।


    [৪]

    -- আচ্ছা,এই নিয়ম গুলো যদি একটা মেশিন কে শিখিয়ে দেওয়া যায় ?
    -- মেশিন, মানে যন্ত্র ? কি'রকম যন্ত্র ? কি'করে বানাবে মেশিন ?
    -- ধর কেউ একটা বানাবে, হয়ত গুপী-গাইন-বাঘা-বাইন সিনেমার সেই বরফি, কিন্তু বানানোটা পরের কথা । আগে দেখা যাক মেশিনটাকে বোঝাতে গেলে কি কি লাগবে আর মেশিনের কাছ থেকে আমরা কি কি চাই । মেশিনটা শুধুই এই চৌকো ঘরের ফিতের উপর চলতে পারে, হয় ডানদিকে নয় বাঁদিকে ...।
    -- ট্র্যাম যেমন লাইন ধরে চলে, সেই রকম ?
    অয়ন একটু চমকে ওঠে, এই মিলটা ওর মাথাতেই আসেনি । প্লামি রোজ স্কুলে যায় ট্র্যামে করে, অয়নও যেত । আজকাল প্রায়ই শোনা যায় ট্র্যাম উঠে যাবে কলকাতা থেকে, পৃথিবীর অন্যত্র কিন্তু এমন সবুজ যানের খুবই কদর ।
    -- হঁযা, ট্র্যাম যেমন লাইন ধরেই চলতে পারে, তেমনি এই মেশিনটার দৌড়ও শুধুই ফিতের এদিক থেকে ওদিক । মেশিনটা একেকটা ঘরের উপর দাঁড়াবে একটু খানি, পড়বে সেই চৌকোয় কি লেখা আছে, কিছু একটা লিখবে তারপর হয় ডানদিকে নয় বাঁদিকে এক ঘর সরবে । এই দাঁড়ানো, দেখা, লেখা আবার সরে যাওয়া এই সব গুলো ঠিক করবে মেশিনটা তখন কি অবস্থায় আছে । এই অবস্থা গুলোর একটু আগেই কি নাম দিয়েছিলাম ?
    -- অবস্থা...., সলিড, লিক্যুইড.. স্টেট, স্টেট বলেছিলে তো ।
    -- ঠিক বলেছিস !

    প্লামির মাথাটা খানিক সাদরে ঝাঁকিয়ে দিয়ে বলে ওঠে অয়ন ।

    -- তার মানে মেশিনটা কখন কি করবে তা ঠিক করে বলা যাবে সব কটা স্টেট জানতে পারলেই ।
    -- মানে ?

    প্লামি এবার খানিক সন্দিহান । স্টেট ব্যাপারটা সলিড, লিক্যুইড ছাড়িয়ে একটু বেশি জটিল হয়ে যাচ্ছে ।
    -- মানে..., মানে..., আচ্ছা, তুই স্কুল থেকে ফিরে কি কি করিস ?
    -- খেলি, লুচি খাই, তোমার কাছে গল্প শুনি, টিভিতে কার্টুন দেখি, হোমওয়ার্ক করি ।
    -- গুড্‌ । কোনটার পরে কোনটা করিস সেটা সাজালে এ'রকম দাঁড়াবে কি ?
    ১. প্লামি স্কুল থেকে ফিরে লুচি খায় ।
    ()ংই
    ২. প্লামি খেলতে যায় ।
    (জ)
    ৩. প্লামি ছোটকার কাছে গল্প শোনে ।
    (ঙ)
    ৪. প্লামি টিভিতে কার্টুন দেখে ।
    (ঈ)
    ৫. প্লামি হোম-ওয়ার্ক করে ।
    (শ্‌)
    -- হঁযা, কিন্তু হোমওয়ার্ক বেশি থাকলে তোমার কাছেই শধু গল্প শুনি, কার্টুন দেখি না । তারপরে পড়তে বসে যাই ।
    -- তাহলে এরকম বলা যায় কি, প্লামি স্কুল থেকে ফিরে এসে লুচি খাবে । লুচি খেয়ে প্লামি খেলতে যাবে । খেলে এসে প্লামি ছোটকার কাছে গল্প শুনবে । তারপর যদি হোমওয়ার্ক কম থাকে তা হলে কার্টুন দেখে পড়তে বসবে । আর যদি হোমওয়ার্ক বেশি থাকে তা হলে গল্প শুনেই পড়তে বসবে । সাজিয়ে লিখলে,
    ংই তারপর তারপর 'র পর আর 'র পর শ্‌ যদি হোমওয়ার্ক কম থাকে । আর 'র পর শ্‌ যদি হোমওয়ার্ক বেশি থাকে । ছবিতে আঁকলে,



    প্লামি একমনে নিরীক্ষণ করে খানিক বিজ্ঞের মত মাথা নাড়ল । বলল,
    --
    ,ংই জ, ঙ, ঈ লিখলে কেন ?
    --
    ,ংই জ, ঙ গুলো হচ্ছে তোর স্কুল থেকে ফেরার পরে কয়েকটা অবস্থা । অবস্থা মানে কি বলেছিলাম ?
    -- কি বলেছিলে....?
    -- সলিড, লিক্যুইড আর ......।
    -- স্টেট ! স্টেট বলেছিলে, অবস্থা মানে ।
    -- ভেরি গুড্‌ । ঠিক বলেছিস, স্টেট । তার মানে স্কুল থেকে ফিরে তুই কি করবি এবং কেন করবি তা এই কয়েকটা স্টেটকে ঠিক মত সাজিয়ে নিয়েই বলে দেওয়া যাবে । এবার আমরা ফিরে যাই সেই মেশিনে, চৌকো ফিতের উপর ঘোরাঘুরি কখন কি করে করবে তা বলে দেওয়া যাবে ওর স্টেটগুলো ঠিক করে নিলেই ।
    -- ধর মেশিনটা কোনো একটা স্টেট'এ ছিল যার নাম
    । আর তার পরের স্টেটটা হবে ন । এই এবং 'টা যা কিছু হতে পারে, তোর ,ংই জ, ঙ. ঈ ইত্যাদির মতই কোনো অবস্থা । তুই ংই থেকে 'তে যেতে কি কি করিস ? লুচি খেয়ে, হাত মুখ ধুয়ে, জুতো মোজা পরে খেলতে যাস । কিন্তু মেশিনটাতো শুধুই চৌকো ফিতে বেয়ে ডাইনে আর বাঁয়ে সরতে পারে এক ঘর করে । ধর মেশিনটার থেকে 'এ যাওয়ার নিয়মটা হল এমন । মেশিনটা ও স্টেট'এ থেকে ফিতের একটা খোপে যদি দেখতে পায়, তাহলে 'র জায়গায় লিখে ডানদিকে এক ঘর সরে যাবে আর তখন তার স্টেট হয়ে যাবে
    --
    আর মানে কি এখানে ?
    --
    ছ, ঢ এগুলো এখানে চিহ্ন, এর জায়গায় অন্য যা কিছুই হতে পারত, যেমন 'র জায়গায় ৩ আর 'র জায়গায় ৫ বা ছ=৫, ঢ=৭ । ছ আর ঢ যাই হোক না কেন, মেশিনটা ঐ নিয়মেই চলবে । নিয়মটা ছোট করে লেখা যায়,
    ও ছ : ঢ =
    যদি মেশিনটা ছ'কে ঢ লিখে ডানদিকে না গিয়ে বাঁ দিকে এক ঘর সরে, তাহলে নিয়মটা লেখা যায় এই ভাবে,
    ও ছ : ঢ = ন
    আর যদি
    'কে লিখে মেশিনটা ডানদিকে বা বাঁদিকে কোনোদিকেই না নড়ে, তাহলে লেখা হবে
    ও ছ : ঢ * ন
    এই নিয়মগুলো ছোট করে যে সব ফর্মূলা লিখলাম, এগুলো দিয়েই কিন্তু মেশিনটার চাল চলন সব বাত্লে দেওয়া যাবে । বা অন্যভাবে ভাবলে চৌকো খোপের ফিতের উপর মেশিটা কি লিখবে, কি করে চলবে আর কোন স্টেট'এ থাকবে তা পুরোপুরি ঠিক করে দেবে এই ফর্মূলা গুলোই । মানে....
    -- কিন্তু, আমি তো সব দিন খেলতে যাই না, বৃষ্টি পড়লে তো খেলাই হয় না ।
    ,ংই জ, ঙ, ঈ 'র মধ্যে তেমন তো কোথাও লেখা নেই । মেশিনটারও সেরকম হলে, যদি ফর্মূলা না মানে ?
    -- তুই তো বুদ্ধিমান, তাই বৃষ্টি পড়লে খেলতে যাস না । কিন্তু মেশিনটার এত বুদ্ধিই নেই । ফর্মূলার বাইরে ও এক পাও চলতে পারে না ।
    -- তাহলে মেশিনটা কি করতে পারে, একদম বোকা তো, কি মেশিন এটা ?

    প্লামি আবার ফিরে গেছে সেই আদিম প্রশ্নে, কি মেশিন এটা । মেশিনের নির্বুদ্ধিতায় খানিক বিরক্তও । শুধুই ফর্মূলা-মাপা পথে হাঁটি হাঁটি পা পা'য় তেমন কাজের কাজ হবে কিনা ওর সন্দেহ । চলো নিয়ম মতে'র নিরর্থ তো তাসের দেশের গোলাম-টোলাম'দের কারবার ।

    অয়ন বুঝল এবার ব্যাগ থেকে বিড়াল বার করার সময় এসেছে । প্লামির মন টানতে আর বায়বীয় ব্যাপার শাণাবে না ।
    -- অ্যালান ট্যুরিং বলে একজন ইংরেজ এই ধরণের মেশিনের কথা ভেবেছিলেন । আজকে আমরা যাকে কম্পিউটার বলি, তা তৈরি করতে এই চিন্তা-ভাবনা ভীষণ কাজে লেগেছিল, কম্পিউটারের একদম গোড়ার ধাপ অনেকটা এই মেশিনই ।


    [৫]

    প্লামির কান খাড়া এবার, চোখ বড় বড় । সেই মাউস ক্লিকের কম্পিউটার আর ছোটকার এই আঁকিবুকির খেলার মাঝে যে এমন যোগ, ও ভাবতেই পারেনি ।

    সব কিরকম গুলিয়ে গেল,
    -- তার মানে ঐ অ্যালানই বানিয়েছিল কম্পিউটার ?
    -- না ট্যুরিং বানান নি, এটা একটা প্রথমদিকের প্ল্যান বলতে পারিস । আসলে কম্পিউটার মানে তো যে কম্পিউট করে, কম্পিউট'এর সহজ মানে ক্যালকুলেট করা বা যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগ'এর অঙ্ক কষা । সেই একদম বেসিক অঙ্ক-কষার ধাপগুলো ট্যুরিং নিয়ম করে বেঁধে দিয়েছিলেন মেশিনটার জন্য ।
    -- কিন্তু কম্পিউটার তো শুধুই অঙ্ক করে না, আমরা তো স্কুলে কম্পিউটারে ছবি দেখি, মিউজিকও তো হয় । এগুলো তো অঙ্ক নয় ....।

    প্লামি এক লাফে চলে গেছে ট্যুরিং'এর প্রাথমিক গণনছক থেকে একেবারে আজকের সর্বগুণসম্পন্ন কম্পিউটারে । এ প্রশ্ন স্বাভাবিক এবং শক্ত । অয়নকে একটু ঢোক গিলতে হল । বলল,
    -- হঁযা, কম্পিউটার সবই পারে, কিন্তু এই সব কাজ গুলোর একদম ভিতরে আছে, ক্যালকুলেশন আর ডিসিশন ; যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগ আর কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা । বড় কাজ ছোট ছোট কাজে ভেঙে নেওয়া হয়, ছোট ছোট কাজ মেশিনকে করতে শেখানো হয় সহজ কিছু নিয়ম ধরে ধরে ।

    প্লামির চোখে মুখে রূপকথার ছায়া । শুনতে মনে হচ্ছে ভালই লাগছে, তবে ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না । বোকা মেশিনের দৌড় আরেকটু না দেখালে সমীহ আসবে না মনে হচ্ছে । তার আগে ওর উত্সাহ খানিক বাজিয়ে নেওয়া দরকার ।
    -- তোর কার্টুন শুরু হচ্ছে না টিভিতে ? দেখবি না ?
    -- ওটা আবার দেখায় রাত নটার সময়, তখন দেখে নেব । তারপরে কি হল, ঐ ফর্মূলাগুলো দিয়ে কি করা যায়, বল না ?
    বোঝা না-বোঝার বাইরেও একটা তেষ্টা থাকে ছোটদের, প্লামিতে তা টৈটম্বুর । অয়ন খুশি হয়ে বলল,
    -- তাহলে শোন, ইভন্‌
    (ংটংত্র) আর অড্‌ (ধরুরু) নাম্বার কি জানিস তো ?
    -- ইভন্‌ আর অড্‌ তো সোজা । ওয়ান তো অড্‌ আর টু হচ্ছে ইভন্‌ ।
    -- শুধু কি ওয়ান আর টু ? ফোর, সিক্স, এইট, টেন, টুয়েল্ভ এগুলো কি ?

    প্লামি একটু ভেবে নিয়ে বলল,
    -- ইভন্‌ ।
    -- আর থ্রি, ফাইভ, সেভেন, নাইন, এইসব ?
    -- অড্‌ ।
    -- ভেরি গুড্‌ । তাহলে দেখা যাচ্ছে, কোনো সংখ্যা যদি দুই দিয়ে পুরোপুরি ডিভাইড করা যায়, কোনো রিমেইণ্ডার না থাকে, তাহলে সেটা ইভন্‌; আর যদি রিমেইণ্ডার থেকে যায়, পুরোপুরি ভাগ না হয়, তাহলে সেটা অড্‌ ।

    প্লামিকে হজম করতে একটু সময় দিল অয়ন, বলল,
    -- কি রে ঠিক বললাম ?
    -- হঁযা, তারপর ?

    প্লামির ক্ষিদে বেশ চন্চনে মনে হল ।
    --
    ২৩৪২৭ ইভন্‌ না অড্‌ ? দুই দিয়ে পুরো ভাগ হয় না এক রিমেইণ্ডার থাকে, তাই অড্‌ আর ৫৬৮৭৪, দুই দিয়ে ভাগ হয়ে জিরো রিমেইণ্ডার থাকে, তাই ইভন্‌ । আসলে ইভন্‌ না অড্‌ বলার আরো সহজ উপায় আছে, একদম ডানদিকের ডিজিটটার দিকে তাকালেই হল, সেটা যদি ইভন্‌ হয় তাহলে পুরো সংখ্যাটাই ইভন্‌ আর সেটা অড্‌ হলে পুরোটাই ইভন্‌ । যেমন, ৭ অড্‌ তাই ২৩৪২৭ 'ও অড্‌ ; আর ৫৬৮৭৪ ইভন্‌ কারণ ৪ ইভন্‌ । এবার আমরা মেশিনটাকে শেখাব কি করে ইভন্‌ আর অড্‌ বের করতে হয় ।
    -- কি করে, কি করে শেখাবে মেশিনটাকে, ছবি এঁকে ?

    প্লামিকেই এমনিতে শিখতে হয় নানা কিছু । এবারে অন্য কাউকে শেখানো হবে জেনে খুবই উত্সাহী সে, হোক না সেটা মেশিন ।
    -- মেশিনটাকে আমরা যেমন ইচ্ছা শেখাতে পারি, ওর চলবার ফর্মূলা গুলো ঠিক করে দিলেই হবে । যে সংখ্যাটা ইভন্‌ না অড্‌ বার করতে হবে সেটা লিখে দেওয়া হবে ফিতের চৌকো ঘরগুলোর উপর; মেশিনটা বাঁ দিকে থেকে পড়তে পড়তে একঘর করে ডানদিকে সরে আসবে । সব কটা ডিজিট পড়া হয়ে গেলে থেমে যাবে । আর তখন বলতে পারবে পুরো সংখ্যাটা ইভন্‌ ছিল না অড্‌ ছিল । ধরা যাক, আমরা জানতে চাই
    ৯৪৩৮৩ ইভন্‌ না অড্‌ । ফিতের খোপগুলোর উপর ৯৪৩৮৩ এই ভাবে লিখে নিলাম,



    --আমাদের ফিতেটা তো যত ইচ্ছা লম্বা ভাবা যায়, তাই ডানদিকে ওটা চলতেই থাকছে । ডানদিকে এক ঘর করে সরতে সরতে সবকটা ডিজিট ফুরিয়ে ফেলে তারপরেও যদি মেশিনটা আরো ডানদিকে সরতে চায় তাহলে একটা খালি ঘর পাবে, সেই খালি ঘরটাতে লেখা হবে [] ।

    -- আমাদের মেশিনটা স্টেট ক্ষ থেকে শুরু করবে একদম বাঁ দিকের ঘর থেকে । এক ঘর করে করে ডানদিকে সরে এসে যখন থামবে তখন সবকটা ঘর খালি হয়ে গিয়ে শুধু একটা বাকি থাকবে । যদি পুরো সংখ্যাটা ইভন্‌ হয় তাহলে এই শেষ ঘরটায় মেশিন লিখবে
    ০, আর সংখ্যাটা অড্‌ হলে লিখবে । মেশিনটার চারটে স্টেট হতে পারে, ক্ষ, শ্‌, চ আর । যেকোনো স্টেট থেকেই মেশিনটা যদি ইভন্‌ ডিজিট দেখে তাহলে সেটা মুছে দিয়ে (মানে তার উপরে [] লিখে ) ডানদিকে এক ঘর সরে যাবে আর স্টেট শ্‌ 'তে চলে যাবে । আর যদি অড্‌ ডিজিট দেখে তাহলে সেটা মুছে ডানদিকে এক ঘর সরে স্টেট 'তে চলে যাবে । এইভাবে এক ঘর এক ঘর করে পড়তে পড়তে পুরো সংখ্যাটা পড়ে ফেলে একটা খালি ঘরে থামতে হবে । ডিজিট ফুরিয়ে যাওয়ার সময় যদি শ্‌ স্টেট'এ এসে থাকে তাহলে খালি ঘরে লিখে এক ঘর বাঁদিকে সরে মেশিনটা দাঁড়িয়ে পড়বে, তার স্টেট হবে ; আর যদি স্টেট'এ ডিজিট ফুরায় তাহলে লিখে এক ঘর বাঁদিকে সরে মেশিনটা দাঁড়িয়ে পড়বে, তার স্টেট হবে । মেশিনটার পুরো চলার ছকটা লেখা যায় এইরকম ভাবে,



    --আর যদি মেশিনটাকে
    ৯৪৩৮৩ দিয়ে ইভন্‌ না অড্‌ বার করতে বলা হয়, সে কম্প্যুট করবে এই ভাবে,











    -- যেহেতু
    'এ এসে থামল মেশিনটা, তাই বলা যায় সংখ্যাটা অড্‌ । কি রে, বুঝলি ?


    [৬]

    প্লামির মুখ দেখে মনে হল, কিছু তার দেখি আভাস, কিছু পাই অনুমানে, কিছু তার বুঝি না বা । তবে তবুও, কান পেতে রই । বলল,
    -- তাহলে এইটাই প্রথম কম্পিউটার ?
    -- আমরা যে মেশিনটা নিয়ে খেলছিলাম এতক্ষণ, সেটাকে বলা হয় ট্যুরিং মেশিন, ট্যুরিং'ই প্রথম ভাবেন এরকম । অবশ্য ট্যুরিং এদের ট্যুরিং নাম দেনে নি, তোর টিনটিনের বইয়ে জেনেরাল অ্যালক্যাজার যেমন নিজের নামেই রাজধানীর নাম ভেবেছিল । ট্যুরিং এদের বলতেন,
    ছণ্ণঞধস্ছঞঠব স্ছবচ্ঠত্রং বা ছ-স্ছবচ্ঠত্রং । মানুষের মাথার মধ্যে ক্যালকুলেশনের ধাপগুলো কি করে হয় সেটাই সাজাতে গিয়ে এইরকম একটা মেশিনের চিন্তা আসে ট্যুরিং'এর । ট্যুরিং মেশিনের ধারণা পরে কম্পিউটার তৈরির কাজে লেগেছে ।
    -- কে বানিয়েছে কম্পিউটার, ব্যাবেজ বানায়নি ?
    -- কম্পিউটার টাইপের একটা যন্ত্রের ধারণা কয়েক শতাব্দী থেকে, অনেকের অনেক চিন্তা কাজ করেছে এর পিছনে, হাতে কলমে তৈরি হয় গত শতকের মাঝামাঝি । কারো একজনের নাম করা যায়না হয়ত, তবে এখন যাকে কম্পিউটার বলে জানি তা বানাতে ট্যুরিং মেশিনের ছকই অনেকটা ব্যবহার করা হয়েছে ।
    -- কিন্তু বানানো হল কি করে, তুমি তো শুধুই ছবি আঁকলে কাগজে, কিন্তু মাউস, কি-বোর্ড, স্ক্রীন এইসব কি করে হল ?
    আলোচনা এবার চলে যাচ্ছে, বস্তুপিণ্ড সূক্ষ্ম হতে স্থূলেতে / অর্থাৎ কিনা লাগছে ঠেলা পঞ্চভূতের মূলেতে । অয়ন বলল,
    -- অ্যাই তোর কালকে স্কুল আছে না ? স্টেট
    শ্‌ 'তে যেতে হবে তো, পড়তে বসবি না ? কম্পিউটার বানানোর গল্প আরেকদিন হবে.....।
    অগত্যা প্লামি বাঁধা ছকে স্টেট
    থেকে শ্‌ 'তে চলতে চলল । 'টা আজ বাদ পড়ল, কারণ বেশ ভারি হয়ে গিয়েছিল । যাবার আগে অঙ্ক খাতার শেষ পাতে -ংইত্‌-ত্‌-ছ-ত্র ম-ণ্ণ-শ-ঠ-ত্র-ভ বেশ বানান করে লিখে নিল । কাল স্কুলে সৌম্য, অদিতি, সৃজা, দিব্য'দের কাছে বেশ বাহাদুরি নেওয়া যাবে ।
    ক্লাসে প্লামির বিজ্ঞ বলে খ্যাতি আছে ।


    ------

    তথ্যপঞ্জী

    ১. ঙধত্ত্‌ংবঞংরু ঘধশূয : ংঔংবচ্ছত্রঠবছৎ ঝত্রঞংত্ত্ঠভংত্রবং ঢষ্‌ ত্‌ংইত্ছত্র মণ্ণশঠত্রভ (স্যিঞংশরুছস্‌ : ব্ধশঞচ্‌ ণধত্ত্ছত্ররু, ১৯৯২), এবং
    ২. মচ্‌ং লত্রঠটংশযছৎ ঙধস্‌ংঋণ্ণঞংশ : মচ্‌ং ওধছরু ংঈশধস্‌ ত্‌ংঠঢত্রঠজ়্‌ ঞধ মণ্ণশঠত্রভ ঢষ্‌ ংঔছশঞঠত্র ঈছটঠয ( ঘ.ঘ. ব্ধশঞধত্র ছত্ররু ঙধস্‌ংঋছত্রষ্‌, ২০০৩)

    (পরবাস, ডিসেম্বর, ২০০৪)

  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)