• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৩৩ | এপ্রিল ২০০৪ | কবিতা
    Share
  • তিনটি কবিতা : সুকুমার চৌধুরী

    রুমা

    এবং অনেকদিন পর দ্যাখা হ'ল রুমা নাম্নী বালিকার সাথে
    মেরুন রঙের শাড়ি, ঘন নীল কার্ডিগান, রক্তিম স্লিপার
    শেষবিকেলের রোদে ডালিমফুলের মত
                   মনে হ'ল ওই মুখ
    তার উধাও চুলের ঝিলে খেলছিল দিনান্তের বিদায়ী আবির
    আদিগন্ত ভুরুর সন্ধিতে ওই মৃদু টিপ
                   ছঁংউয়ে দিতে ইচ্ছে হ'ল কতদিন পর

    অথচ সহস্র আলোকবর্ষ কেটে গেল ওই মুখ দেখে
    অনেক স্বপ্নজ দ্বীপে ঘুরে ঘুরে শেষ হ'ল অন্ধ পর্যটন
    তবুও অঞ্জলিভরে তুলে নিলে ওই শিল্পকলা
    নিজেকে ভিখিরি ব'লে মনে হয়, মনে হয় যেন দৃষ্টিহীন
    যেন কিছুই দেখিনি আমি ওই রূপ এমন অপার
                   এমনই অগম্য ওই শিল্পমুখ, এমন গভীর

    যেন সমুদ্রপাথার ওই নীল চোখে ভেসে গেছে আমার মনীষা


    রুমার জন্য, আবার

    ভুলে যাওয়া আপাতসুন্দর তুমি একবার লিখেছিলে
    লিখেছিলে আপাতসুন্দর ওই নীল অনুভূতি
    একটু একটু ক'রে
    সুন্দরতর ক'রে তুলবে আমাদের স্বতন্ত্র জীবন
    তোমার মৌল চিঠিতে ছিল কিছু ভুলবর্ণ কালি
    আমার তেমন কোন কালি নেই
    নিজেই তো অগুন্তি ভুলে ভরা
    শুধু কাঠভাষা, পেনসিলের লিড
    সত্যিকে নাকি মিথ্যে করি মিথ্যেকে সত্যি বলতে প্রায়ই
    আসলে রবার দিয়ে ঘষে ঘষে তুমি খুব ছোটবেলা থেকেই
    শিখে ফেলেছ বাস্তবায়নের আপাতলঘুতা
    হয়তো তাই আজ এতদিন পর খুব নি:সঙ্কোচে লিখতে পারছি
    সব ভুলে যাচ্ছি ইদানীং
    তোমার গাঁ গেরাম, ইস্কুল আর প্রিয় শাদা বাড়ি
    যার নিচে দিয়ে হেঁটে গেলে হয়তো এখনো কেঁপে উঠবে বুক
    আমার মনে পড়ছে না আশ্চর্য সুন্দর ছিলে তুমি
    খুব দ্বিধাহীন আর
    একদিন জবুথবু মেরুনরঙা শাড়ি পরে হাসতে হাসতে
    এসে দাঁড়িয়েছিলে আমার সামনে
    আমি নির্নিমেষে চেয়েছিলম তোমার কপালের
    ভাঙ্গাচোরা টিপটির দিকে
    আমার মনে পড়ছে না তোমার প্রেমিকদের চকচকে মুখ
    সাইকেলের ক্রিং ক্রিং শব্দ আর
    সেই সব উজ্জ্বল দিনগুলির কথা
    মনে পড়ছে না তোমার অমল বুকের নিভৃততম তিলটির কথাও
    সেই দুর্যোগের রাতে যাকে ঢেকে ফেলেছিল
    সাপের ফণার মত রাশি রাশি চুল
    মনে পড়ছে না রোজ দুপুর তিনটেয় তুমি উঠে আসতে
    শাদা বাড়ির ঝুলবারান্দায়
    আর আমি খুব ধীরে ধীরে হেঁটে যেতাম রাজাগড়ের দিকে
    রাস্তা যেন কখনো না ফুরোয়


    ইন্ধন

    একটু হিঙের গন্ধ ছিল ব'লে
    ভালো লেগে গেছে ওই মোহন কচুরি ।

    গব্ধ উজিয়ে মর্মে যেতে যেতে
    তার নি:সরণ বুঝি । হাহাকার শুনি ।
    লিবিডোর হাড়মালা বাজে ।
    স্বজনতোষণে মাতে স্বপ্নগুলি ।

    স্তনের মুঠির থেকে
    দ্বিধাময় সন্ধিগুলি থেকে
    উঠে আসে লবণাক্ত ঘাস ।
    বিস্মরণের আগে খঁংউজি গন্ধ,
    হিঙের মোহন জাদু, লোভ, আয়োজন




  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments