যেমন ধরা যাক সপ্তর্ষিমণ্ডল । সাতটি উজ্জ্বল তারা দিয়ে তৈরি বিরাট এক জিজ্ঞাসা চিহ্নের মতো এর চেহারা । আমাদের দেশে কল্পনা করা হয়েছে যেন সাত ঋষি ধ্যানে বসে আছেন । এটিকেই আবার ভালুক হিসেবে কল্পনা করা হয়েছে বিভিন্ন দেশে । যেমন পুরানো রেড ইণ্ডিয়ান উপকথায় বলা হয়েছে, শিকারীরা তাড়া করে আসছে সেই ভালুককে আর সে পালাচ্ছে । শীতের শুরুতে যখন মেপল গাছের পাতা ঝরে পড়ার আগে রাঙা হয়ে যায়, তখন রেড ইণ্ডিয়ান-রা মনে করতো সেই ভালুক শিকারীদের আঘাতে মরে যাচ্ছে আর তার রক্তে লাল হয়ে যাচ্ছে বনের পর বন । তারপরে আর তাকে আকাশে দেখা যায় না, সে নিহত হয়েছে । কিন্তু আবার বসন্তের নীলকান্ত আকাশে ফিরে আসে সে, নতুন জীবন নিয়ে । জীবনের ধারা এইভাবে চিরপ্রবহমান থাকে, মৃত্যু তাকে বিনষ্ট করতে পারে না । সুন্দর গল্প ।
এই ভালুক হিসেবে কল্পনা করেই গ্রীকদের আরেকটি গল্প আছে, কিন্তু সে গল্প খুব সাংঘাতিক ।
![]() | |
কালপুরুষ | |
![]() | |
হর্সহেড নেবুলা | |
জ্যোতির্বিজ্ঞানকে
(Astronomy) বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো বিজ্ঞান, The Oldest Science । সেই বহু পুরনো যুগ থেকে মানুষ আকাশ দেখছে আর লক্ষ করেছে জ্যোতিষ্কগুলির উদয়, অস্ত, উজ্জ্বলতা খুব নিয়ম মেনে চলে । কালক্রমে ওদের সম্পর্কে আরো আরো জেনেছে ।আজকের এই আধুনিক যুগে মানুষ তারাদের শক্তি-উত্পাদনের রহস্য পর্যন্ত জানতে পেরেছে । এই প্রজ্জ্বলন্ত সূর্যের কেন্দ্রে কি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অনর্গল শক্তি উত্পাদিত হয়ে চলেছে তা আজ জানেন বিজ্ঞানীরা । তবু কিন্তু এখনো অনেক কিছু জানার বাকি রয়ে গেছে । বিশেষ করে তারাদের বিবর্তন তো খুবই আকর্ষণীয় একটি বিষয় আজ । কিভাবে তারাদের জন্ম, কিভাবে তাদের শৈশবের
protostar অবস্থা পেরিয়ে, দীর্ঘদিনের তারুণ্য পেরিয়ে, বার্ধক্যে পৌঁছনো, তারপরে নানারকম পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গিয়ে তাদের মৃত্যু । পুরো ব্যাপারটাই খুব আকর্ষণীয় । তারাদের শক্তি উত্পাদিত হয় কেন্দ্রকীয় সংযোজন বা nulear fusion এর মাধ্যমে । অর্থাৎ হাল্কা হাইড্রোজেন কেন্দ্রক প্রচণ্ড তাপে ও চাপে জুড়ে গিয়ে তৈরি হয় হিলিয়াম কেন্দ্রক আর যেহেতু হিলিয়াম কেন্দ্রকের ভর ওই দুটি হাইড্রোজেন কেন্দ্রকের মিলিতে ভরের চেয়ে সামান্য কম, সেইটুকু উবে যাওযা ভর দেয় প্রচণ্ড শক্তি । এই শক্তির মান আইনস্টাইনের বিখ্যাত সমীকরণ E=mc^2 থেকে পাওযা যায়, এখানে m হলো ওই উবে যাওযা সামান্য ভর আর c হলো আলোর গতিবেগ, যার মান অতি মারাত্মক, প্রতি সেকেণ্ডে ১,৮৬,০০০ মাইল বা প্রায় তিন লক্ষ কিলোমিটার । c -এর এই মারাত্মক মানের জন্যই অতি সামান্য ভর বিনষ্ট হলেই বিপুল পরিমাণ শক্তি পাওযা যায় । আমাদের সূর্যের কেন্দ্রে এই প্রক্রিয়াতেই শক্তি উত্পাদিত হয়ে চলেছে আর সেই আলো ও তাপ মহাকাশ বেয়ে পৃথিবীতে আশীর্বাদের মতো ঝরে পড়ে পৃথিবীর সমস্ত জীবকে বাঁচিয়ে রেখেছে ।কিন্তু প্রক্রিয়াটি সহজে ঘটানো যায় না । হাইড্রোজেনের কেন্দ্রকেরা পরস্পরকে বিকর্ষণ করে, সেই বিকর্ষণ কাটিয়ে এদের কাছেই আনা সহজ নয়, জুড়ে দেওযা তো দূরের কথা । কিন্তু নক্ষত্রকেন্দ্রে থাকে প্রচণ্ড তাপ আর চাপের পরিবেশ, সেখানে যেন অনেকটা ঠেলায় পড়েই এরা কাছাকাছি আসতে আর জুড়ে যেতে বাধ্য হয় । আসলে ওই কোটি ডিগ্রী উষ্ণতার পরিবেশে হাইড্রোজেন পরমাণুগুলির ছোটাছুটি ভয়ানক বেড়ে যায়, তখন তারা তাদের কুলম্বীয় বিকর্ষণ বল কাটিয়ে জুড়ে যায় পরস্পরের সঙ্গে । আর তাতেই উত্পাদিত হয় বিরাট পরিমাণ শক্তি ।
মহাকাশে ত্রক্রমঘনীভূত হাইড্রোজেনের মেঘ থেকে তৈরি হয় তারা । যখনি ওই জমাট বাঁধতে থাকা গ্যাসপুঞ্জের কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় চাপ ও উষ্ণতা এসে যায় তখনই কেন্দ্রকীয় সংযোজন শুরু হয় আর তারা হিসেবে জ্বলতে আরম্ভ করে সেই গ্যাসপুঞ্জ । এইভাবেই একদিন আমাদের সূর্যেরও জন্ম হয়েছিল । যতদিন এই শক্তি উত্পাদন চলতে থাকে ততদিন তারাটি থাকে সুস্থিত । কিভাবে ? তারার বিপুল ভর তাকে সংকুচিত করে চুপসে দিতে চায় আর তারার ভিতরে তৈরি হওযা শক্তি ভিতর থেকে বাইরের দিকে চাপ দেয় । এই ভিতরের চাপ আর বাইরের চাপ যতদিন সমান থাকে ততদিন তারার তেমন শংকা কিছু নেই । সে নিশ্চিন্তে আলো ও তাপ ছড়িয়ে দিতে পারে । কিন্তু সংকট দেখা দেয় যখন তারার হাইড্রোজেন ভাণ্ডার ফুরিয়ে আসতে থাকে । এবারে ভিতরের চাপ কমে যায় কিন্তু বাইরে থেকে ভিতরে চাপ সমানই থাকে, এই অবস্থায় পড়ে তারার মহাসংকট দেখা দেয় । অবশেষে একসময় কেন্দ্রের সমস্ত হাইড্রোজেন হিলিয়ামে পরিণত হয়ে যাবার পরে কেন্দ্রের
![]() | |
![]() | |
লাল-দানব (উপরে) ও শ্বেত-বামন (নীচের ছবির প্রায় মাঝখানে) | |
এই লাল-দানব অবস্থা থেকে নক্ষত্ররা পৌঁছায় শ্বেত-বামন বা
(white dwarf) অবস্থায় । উপরের বিরাট খোলস ছেড়ে ফেলে তখন সে খুব ছোটো কিন্তু উজ্জ্বল সাদা । এই অবস্থায় আর তার মধ্যে কোনো শক্তি উত্পাদন চলছে না । ইলেকট্রনেরা সব পরমাণুর তাঁবে না থেকে মুক্ত হয়ে ঘুরে বেড়াছে এর মধ্যে । এই অবস্থায় একে মহাকর্ষীয় চাপে চুপসে যাওযা থেকে রক্ষা করে পাউলির অপবর্জন নীতি ( exclusion principle ) । এই নীতি অনুযায়ী একাধিক ইলেক্ট্রনের একই গতিবেগ আর অবস্থান হতে পারে না । ![]() | |
সুব্রহ্মনিয়ম চন্দ্রশেখর | |
আসলে বেশি ভরের তারাদের জীবন ইতিহাস একটু অন্যরকমের । এরা খুব অমিতব্যয়ী, প্রথম থেকেই অনেক বেশি বেশি হাইড্রোজেন জুড়ে গিয়ে খুব তাড়াতাড়িই কেন্দ্রের সমস্ত হাইড্রোজেন হিলিয়ামে পরিণত হয়ে যায় । তারপরে আবার সেই হিলিয়ামেরা জুড়তে থাকে আর তৈরি করতে থাকে অপেক্ষাকৃত ভারি মৌলগুলিকে । লিথিয়াম, কার্বন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, সিলিকন ইত্যাদি । কিন্তু যেই না লোহা তৈরি হয় অমনি সংযোজন থেমে যায়, কারণ লোহার কেন্দ্রক জুড়ে আরো ভারি মৌল তৈরি করার মতো তাপ ও চাপ নক্ষত্রকেন্দ্রে সম্ভব নয় । এই অবস্থায় সেই বিরাট তারা এক মহাবিস্ফোরণে ভেঙে পড়ে । একে বলে সুপার-নোভা
(super nova) । সুপারনোভা বিস্ফোরণের পরে যে কেন্দ্রীয় অংশটি পড়ে থাকে তার ঘনত্ব হয় প্রচণ্ড, এটার মধ্যে প্রচণ্ড চাপে সব ইলেকট্রনেরা ঢুকে পড়েছে পরমাণু কেন্দ্রে, প্রোটনদের সঙ্গে মিলে গিয়ে হয়ে গেছে নিউট্রন । এখানে শুধুই নিউট্রন এখন, একে বলা হয় নিউট্রন তারা, একে মহাকর্ষীয় চাপে চুপসে যাওযা থেকে রক্ষা করে সেই একই exclusion principle তবে এক্ষেত্রে এটা নিউট্রনেদের উপর প্রযোজ্য । কিন্তু এখানেও সেই একই সীমা, গতিবেগের পার্থক্য আলোর গতি, c -এর চেয়ে বেশি হতে পারে না । তাই যদি বিস্ফোরণ পরবর্তী ভর অনেক বেশি হয়, তাহলে সেই তারা ত্রক্রমাগত মহাকর্ষীয় চাপে ঘন হতে হতে শেষে এমন অবস্থায় পৌঁছবে যে সেই প্রচণ্ড ঘনত্বের জন্য সেখান থেকে কোনো কিছুই ছুটে বেরোতে পারবে না, এমনকি অমন যে তীব্র গতিসম্পন্ন আলো সেও ওই মহাকর্ষীয় জালে আটকা পড়ে যাবে, আলো আসতে পারে না বলে আমরা আর তারাটিকে দেখতে পাবো না, এর নাম black hole । মহাকাশে কালো গর্ত যেখানে পড়লে কোনো কিছুই আর ফিরে আসে না ।এই ব্ল্যাক হোল একটি অতি আকর্ষণীয় গবেষণার ক্ষেত্র । বিজ্ঞানীরা বলেন যে মহাকর্ষের প্রচণ্ড চাপে সংকুচিত হয়ে তারাটি নাকি বিন্দুতে পরিণত হয় । একে আর এমনকি সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদ
(general relativity) দিয়েও ব্যাখা করা যায় না । সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদ অনুযায়ী ব্ল্যাক হোল-এর চারিপাশে স্থান-কাল (space time) খুব কুঁচকে যায়, কিন্তু একেবারে কেন্দ্রে যেখানে ধারণা অনুযায়ী তার বক্রতা (space time curvature) একেবারে অসীম হয়ে যায়, সেখানে আর পদার্থবিদ্যার কোনো জানা তত্ত্বই খাটে না । একে বিজ্ঞানীরা বলেন singularity অর্থাৎ এমন একটি বিন্দু যেখানে সব তত্ত্বই ভেঙে পড়ে, কারণ অসীম সংখ্যা নিয়ে কাজ করার কৌশল আমাদের জানা নেই ।এই
singularity -কে ঘিরে একটি সীমিত অংশ রয়েছে, যাকে বলে event horizon বা ঘটনা-দিগন্ত । এই ঘটনা-দিগন্ত হলো আলো দিয়ে তৈরি একটি গোলক, এই আলো চিরকাল ঘুরে চলেছে বৃত্তপথে । ঠিক ব্ল্যাক হোল-এ পরিণত হবার আগে যে আলো ছুটে বেরোতে চেয়েছিল সেই আলো, কিন্তু বেরোতে পারেনি, মহাকর্ষীয় টানে বাধা পড়ে ঘুরে চলেছে ।এই বিষয়টি সত্যি খুব উত্তেজনায় ভরা । বহু খ্যাতনামা বিজ্ঞানী বর্তমানে এই বিষয়টিতে কাজ করে চলেছেন আর প্রতিদিনই এই নিয়ে নতুন নতুন কিছু না কিছু বেরোচ্ছে । আমি খুব বেশি জানি না আর বিষয়টি অতি জটিল তাই আর বেশি কথায় যাচ্ছি না এই ব্যপারে । অধ্যাপক স্টিফেন হকিং এই বিষয়ে গবেষণা করছেন । তাঁর
A Brief History of Time -বইটি হয়তো অনেকেই পড়ে থাকবেন ।তাই আবার ফিরে যাই শুরুতে, শুরুতে বলেছিলাম নক্ষত্র তৈরি হয় জমাট হাইড্রোজেনের পুঞ্জ থেকে । কিন্তু এই হাইড্রোজেন এলো কোথা থেকে ?
বিজ্ঞানীরা বলেন মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছিল এক মহাবিস্ফোরণে, যার নাম
Big Bang । এই মহাবিস্ফোরণ-তত্ত্ব অনুযায়ী, এই মহাবিশ্বের সমস্ত কিছুই নাকি সৃষ্টি হয়েছে সেই আদি বিস্ফোরণটি থেকে । তবে প্রথমে ছিল বস্তুকণা আর রশ্মিকণারা একেবারে মিলেমিশে তালগোল পাকিয়ে । বিখ্যাত বিজ্ঞানী Weinberg -এর ভাষায় an undifferentiated soup of matter and radiation । সেই স্যুপ কিন্তু ছিল প্রচণ্ড তপ্ত । আমাদের ধারণাতেও আসবে না কত বেশি ছিল সেই তাপ, বিজ্ঞানীরা হিসেব কষে-টষে বলেন বহু বিলিয়ন ডিগ্রী ছিল সেই উত্তাপ । সেই প্রচণ্ড উত্তাপের পরিবেশে সব বস্তুকণারাও ছিল একেবারে তাদের মৌলিক অবস্থায়, কোযার্ক আর লেপ্টন হিসেবে । আর রশ্মিকণারা তো সবাই ফোটন । ত্রক্রমে উত্তাপ কমে আসতে থাকলো আর এদের মধ্যে মিলমিশ ভেঙে যেতে থাকলো । সেই স্যুপ থেকে একসময় এরা আলাদা হলো, তখন বস্তুকণাদের আর ফোটনদের আলাদা করে বোঝা যেতে লাগলো । তারপরে উত্তাপ যখন আরো কমতে থাকলো তখন এই মৌলকণাগুলি পরস্পরের সঙ্গে জুড়ে গিয়ে তৈরি করতে লাগলো প্রোটন, নিউট্রন - ইত্যাদি সব বড়ো কণা । তখনো খুব গরম, তখনো নিস্তড়িৎ পরমাণু তৈরি হওযার অবস্থা আসেনি । বিজ্ঞানীরা বলেন প্রথম তিন মিনিটের মধ্যেই প্রোটন আর নিউট্রনের অনুপাত ঠিক হয়ে গেছিল । এখন এই প্রোটন তো হলো সাধারণ হাইড্রোজেনের কেন্দ্রক, ভারি হাইড্রোজেন অর্থাৎ ডিউটেরিয়াম আর ট্রিটিয়ামের নিউক্লিয়াসে অবশ্য নিউট্রনও থাকে প্রোটনের সঙ্গে । যাইহোক ওই তপ্ত পরিবেশে প্রথম তিন মিনিটের মধ্যে শুধু হাইড্রোজেন আর হিলিয়ামই তৈরি হতে পেরেছিল, প্রায় তিন-চতুর্থাংশ হাইড্রোজেন আর এক চতুর্থাংশ মাত্র হিলিয়াম । কিন্তু তখন ওরা সবাই শুধু কেন্দ্রক, ইলেকট্রনেরা তখনো ঘুরতে আরম্ভ করেনি কেন্দ্রকের চারপাশে । অনেক কাল পরে, যখন সেই আদি বিস্ফোরণের তাপ অনেক কমে এসেছে তখনই কেবল তৈরি হতে পারলো নিস্তড়িৎ পরমাণু ।তারপরে সেই হাইড্রোজেন-হিলিয়ামের মেঘ জমাট বেঁধে তৈরি হলো শত শত কোটি ছায়াপথ বা গ্যালাক্সি । সেইসব গ্যালাক্সির মধ্যে তৈরি হলো শত শত কোটি তারা ।
![]() | |
আকাশগঙ্গা | |
বিজ্ঞানীরা বলেন যে আজ থেকে ১৫০০ কোটি বছর আগে ঘটেছিল সেই মহাবিস্ফোরণ । তারপর থেকে এই মহাবিশ্ব কেবলই ছড়িয়ে পড়ছে, গ্যালাক্সিরা পরস্পরের থেকে দূরে চলে যাচ্ছে বিপুল বেগে । মহাবিশ্ব কেবলই আয়তনে বড়ো হয়ে চলেছে ।
কিন্তু কিসের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে ? কি ছিল সেই মহাবিস্ফোরণের আগে ? কি থেকে ঘটেছিল মহাবিস্ফোরণ ? সেইসব প্রশ্নের উত্তর জানে না বর্তমান বিজ্ঞান । মহাবিশ্বের বাইরে কি আছে তা বলা অর্থহীন, মহাবিশ্ব সৃষ্টির আগে কি ছিল তা বলা অর্থহীন, কি থেকেই বা সংঘটিত হয়েছিল সৃষ্টি তাও ঠিকমতো জানে না আজকের বিজ্ঞান । তবে বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করে চলেছেন, নতুন নতুন আলোচনা হচ্ছে, সঙ্গে চলছে অত্যুত্কৃষ্ট দূরবীণের সহায়তায় অতি দূরবর্তী গ্যালাক্সিদের, কোয়াসারদের, পালসারদের পর্যবেক্ষণ । এই মহাবিশ্ব এক অতি আশ্চর্য জায়গা ।
কিন্তু তার চেয়েও আশ্চর্য হলো মানুষ নিজেই । এই বিরাট মহাবিশ্বে সে তো ধুলিকণার তুল্যও নয় ! তবু কিন্তু তার মন উঁকি মেরে দেখে আসতে পারে একেবারে সৃষ্টিমুহূর্তটিকেও । প্রশ্ন করতে পারে কি ছিল তার আগে ? অথবা কি হবে এই অবিরাম প্রসারণশীল মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ নক্ষত্র চুল্লিতে যেখানে একদিন কেন্দ্রক সংযোজন প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি হয়েছিল নানা মৌল - লিথিয়াম, কার্বন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন ইত্যাদি । আমরা সবাই সেই মৌলগুলি দিয়েই তৈরি । এক হিসেবে আমরা সবাই নক্ষত্রদের সন্তান-সন্ততি ।
এই আশ্চর্য মহাবিশ্বে জন্ম নিয়েছে মানবপ্রাণ, বিকশিত হয়েছে মানবমন - আজ সেই মন প্রশ্ন করছে - কোথা থেকে এই মহাবিশ্ব, কিভাবে এই মহাবিশ্ব, কেন এই মহাবিশ্ব - এর থেকে বেশি আশ্চর্য আর কি হতে পারে ?