কোনও এক স্বঘোষিত প্রগতিশীল এবং পরীক্ষামূলক সাহিত্য আন্দোলনের মুখপত্র বাংলা পত্রিকার কবিতা আহ্বান পাতায় লেখা পাঠানোর পূর্বশর্ত দেখেছিলাম, সেই পত্রিকায় ছন্দে লেখা কবিতা পাঠানো বারণ। আমি মধ্যমেধার মানুষ। আমার ধারণা ছন্দছাড়া কবিতা কেন গদ্য লেখাও যায় না। যে কোনও সার্থক লেখার একটা নির্দিষ্ট চলার ছন্দ থাকেই। না-হলে সে লেখা গতিময়তা পায় না। সম্ভবত পত্রিকাটি বাংলার বহুল প্রচলিত তিন কবিতা ছন্দের কথা বলতে চেয়েছিল, যাদের নাম স্বরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত ও অক্ষরবৃত্ত। প্রবোধচন্দ্র সেন এই তিন ছন্দের নাম দিয়েছিলেন, যথাক্রমে দলবৃত্ত, কলাবৃত্ত ও মিশ্রকলাবৃত্ত। অক্ষরবৃত্তের আদি রূপটি দেখা যায় পয়ার ছন্দে। স্বরবৃত্তকে অনেক বলেন ছেলে-ভুলনো বা ঘুম-পাড়ানি ছড়ার ছন্দ। আর তরুণতম বাংলা ছন্দ মাত্রাবৃত্তের চলা শুরু স্বয়ং কবিগুরুর হাত ধরে। রবিঠাকুরই ছন্দটির পিতা এবং পালক। রবীন্দ্র-পরবর্তী চেনাজানা অনেক কবিই এই ছন্দে কবিতা লিখেছেন এবং এখনও লিখছেন। যতদূর জানি রবিঠাকুর সন্তানসম এই ছন্দ নিয়ে কোনও বেনিয়ম পছন্দ করতেন না। এবং পরবর্তী কবিরাও সেই ধারা বজায় রেখেছেন। সেই বদ্ধমূল ধারণায় হঠাতই ধাক্কা লাগল, যে কারণে এই লেখার অবতারণা। কিন্তু মূল বিষয়ে ঢোকার আগে কিছু প্রাথমিক তথ্য ও প্রস্তাবনা জরুরি।
বৃত্ত ছন্দ মানে ঘুরে ফিরে একই যায়গায় ফিরে আসা। বাংলা কবিতার এই তিনটি বৃত্ত ছন্দের চলন-বলন সম্পূর্ণ আলাদা। সুধীজন লঘুতা মার্জনা করলে বলা যায়, অক্ষর বৃত্ত হস্তিনী হলে, মাত্রাবৃত্ত পদ্মিনী। স্বরবৃত্ত শঙ্খিনী না চিত্রিণী বলতে পারব না, তবে কিনা বারংবার দেখলে হুরী, পরী, অপ্সরাকেও রান্নাঘরের মানদা মাসীর মত লাগে। বৃত্ত ছন্দের এই এক বিড়ম্বনা। ঘুরে ফিরে একই তাল। অনেকটা ট্র্যাক কাটা পুরোন দিনের লং-প্লেয়িং রেকর্ডের মত ঘ্যানোর-ঘ্যানোর। তাই বিরক্ত হয়ে অনেক আধুনিক কবিই একে অচ্ছুৎ করেছেন। আবার অনেকে চেয়েছেন বৃত্ত ছন্দর মধ্যে থেকেই তার শৃঙ্খল ভাঙতে।
ছোটবেলায় “সরল কর” দেখেই কে যেন ব্র্যাকেট-ট্র্যাকেট ভাঙছিল। অঙ্কের স্যার তেড়ে উঠলেন, “আরে করো কী, করো কী? এ কি কয়লা? দেখেই ভাঙতে শুরু ক’রে দিলে?” ছন্দর ব্যাপারটাও অনেকটা সেই সিঁড়িভাঙা অঙ্কের মত। “ভাঙারও নিজস্ব এক ছন্দ আছে, রীতি প্রথা আছে।” যে সে নয়, বলে গেছেন খোদ শক্তি চট্টোপাধ্যায়।
“কে জানে কেমন করে ছন্দের বারান্দা ভাঙা হবে?(ভাঙা গড়ার চেয়েও মূল্যবান, যেতে পারি কিন্তু কেন যাব)
মিস্তিরি মজুত, কাছে শাবল গাঁইতি সবই আছে।
লোকবল আছে, আছে ভাঙ্গনের নিশ্চিত নির্দেশ,
ভাঙার ক্ষমতা আছে, প্রয়োজনও আছে।”
শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের লেখা অধিকাংশ কবিতাই বৃত্ত ছন্দে। কিন্তু পড়তে একটুও ক্লান্তি আসে না। কেন না তিনি জানেন, “অপরূপভাবে ভাঙা, গড়ার চেয়েও মূল্যবান/ কখনো–সখনো।” প্রশ্নটা হল ছন্দের নিগড়ে থেকেও তার স্বাভাবিক চলন, পৌনঃপুনিকতা থেকে কিভাবে নিষ্কৃতি মিলবে? একটা সহজ উপায় হল ছন্দ যেখানে যতি চায় সেখানে না থামা। শক্তির বিখ্যাত “অবনী বাড়ি আছ” মূলত পাঁচের চালের মাত্রাবৃত্ত।
দুয়ার এঁটে/ ঘুমিয়ে আছে/ পাড়া (৫/ ৫/ ২)কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও তিন নম্বর লাইনটা ওই ভাবে পড়া যায় না। পড়তে হবে “অবনী/ বাড়ি আছো?” (৩/ ৪)। অর্থাৎ কিনা পাঁচের চাল বদলে গেল। কান একঘেঁয়েমি থেকে ছুটি পেল।
কেবল শুনি/ রাতের কড়া/ নাড়া (৫/ ৫/ ২)
“অবনী বাড়ি/ আছো?” (৫/ ২)
স্বরবৃত্ত ছন্দকে অনেকেই বলেন বাংলা ছড়ার ছন্দ। ছড়া শুনলে ঘুম পায়। সম্ভবত সেই ছন্দেই লেখা শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ‘চাবি’ কবিতাটি। ‘সম্ভবত’ শব্দটি কেন ব্যবহার করলাম পরে বলছি। স্বরবৃত্তে সাধারণত চার মাত্রার পর্বের ব্যবহার হয়। ছন্দ-অনভিজ্ঞদের সুবিধার্থে জানিয়ে রাখি কবিতার একটি লাইনে স্বল্প যতি (‘/’ চিহ্ন) দিয়ে আলাদা করা অংশগুলি এক একটি পর্ব। লাইনের মধ্যে সমমাত্রার পর্ব থাকলেও, লাইনের শেষে থাকে কম মাত্রার ভাঙা পর্ব, যাতে পরের লাইনে যাওয়ার আগে শ্বাস নেওয়ার সময় পাওয়া যায়। শক্তি চট্টোপাধ্যায় কিন্তু তিন ও পাঁচ মাত্রার পর্বের মিশেল দিলেন অবলীলায়। প্রথম প্যারাগ্রাফেই ধাঁ করে একখানা পাঁচ মাত্রা ‘এখনো পড়ে’ লিখে দিলেন। বলে রাখা ভাল, দ্বিতীয় লাইনে ‘হারিয়ে যাওয়া’ পদটিতে দুটি যৌগিক স্বর ‘ইয়ে’ এবং ‘ওয়া’। বাংলা স্বরবর্ণে ওই (ঐ) আছে, ওউ(ঔ) আছে কিন্তু উপরে লিখিত যৌগিক স্বরদুটি নেই। স্বরবৃত্তে প্রতিটি যৌগিক স্বরকে এক মাত্রার বেশি মর্যাদা দেওয়া অনুচিত। তাই স্বরবৃত্তে “হারিয়ে যাওয়া” চার মাত্রাই পড়া কর্তব্য।
“আমার কাছে/ এখনো পড়ে/ আছে (৪/ ৫/ ২)শেষ প্যারাগ্রাফে দুটি তিন মাত্রার পর্ব — ‘অবান্তর’ ও ‘তোমার মুখ’ এবং একটি পাঁচ মাত্রার পর্ব — ‘লিখিও, উহা’।
তোমার প্রিয়/ হারিয়ে যাওয়া/ চাবি (৪/ ৪/ ২)
কেমন করে/ তোরঙ্গ আজ/ খোলো?” (৪/ ৪/ ২)
“অবান্তর/ স্মৃতির ভিতর/ আছে (৩/ ৪/ ২)তথাকথিত ঘুম-পাড়ানি ছড়ার ছন্দে লেখা ‘চাবি’ কবিতা পড়ে আমার অন্তত ঘুম উড়ে যায়। কবিতাটির ছন্দ নিয়ে পরবাস পত্রিকায় একটি দীর্ঘ লেখা লিখেছিলাম। আমার ধারণা ‘চাবি’ কবিতার প্রতিটি পর্বের উচ্চারণের সময়-প্রসার সমান ও নির্দিষ্ট। অর্থাৎ কিনা পাঁচটি মুক্ত স্বর দিয়ে তৈরি একটি পর্ব উচ্চারণ করতে যে সময় লাগে, চারটি রুদ্ধ এবং মুক্ত স্বরের সমন্বয়ে গঠিত একটি পর্ব উচ্চারণ করতেও সেই একই সময় লাগে। এমনকি তিনটি রুদ্ধ স্বর দিয়ে গড়া পর্বের সময়-প্রসারও তার সমান। এই রীতির উৎস সংস্কৃত ছন্দ। ছেলেভুলনো ছড়ার ছন্দ বলে যাঁরা এই ছন্দকে অবজ্ঞা করেন তাঁরা বাতুল মাত্র। স্বরবৃত্ত ছন্দের এই বিশেষ রূপটিকে আমি বাংলার চতুর্থ ছন্দ ‘তালবৃত্ত’ নাম দিয়েছিলাম, কারণ এই ছন্দের সঙ্গে গানের চলনের মিল পেয়েছিলাম।
তোমার মুখ/ অশ্রু ঝলো/মলো (৩/ ৪/ ২)
লিখিও, উহা/ ফিরত চাহ/ কিনা ?” (৫/ ৪/ ২)
সে যাক, ধান ভানতে শিবের গীত অনেক হল। আসল কথায় আসি। আমার সীমিত জ্ঞানে জানা ছিল যে রবীন্দ্রনাথের নিজের হাতে গড়া মাত্রাবৃত্ত ছন্দটি কোনও অসৈরন বরদাস্ত করে না। সেই কারণে অনেকে অনেক বদ যুক্তি সাজালেও ‘চাবি’ কবিতাটি যে পাঁচের চালের মাত্রাবৃত্তে লেখা এই কথা মানতে আমি নারাজ। মাত্রাবৃত্তের চাল ‘মনোহরণ চপলচরণ’ স্বরবৃত্তর থেকে আলাদা। তার গতি-প্রকৃতি কিঞ্চিৎ শ্লথ, সে যৌবনমদে মত্তা নগরীর নটী বাসবদত্তার মত সন্ত্রস্ত পায়ে অভিসারগামিনী। যা হোক অসৈরনর কথা বলার আগে খোদ সৃষ্টিকর্তার লেখা কিছু মাত্রাবৃত্তের উদাহরণ দেখা যাক।
“বিপদে মোরে রক্ষা করো (৫/ ৫)উদ্ধৃত গীতাঞ্জলির কবিতাটি প্রখ্যাত শিল্পীদের কন্ঠে গান হিসেবেই বেশি শুনেছি। তাই কোনোদিন তার ছন্দ বিচার করতে বসিনি। দেখলাম কবিতাটি জোড়-বিজোড় পর্বের সমন্বয়ে নিজস্ব গতিতে চলে। অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে রেখে দেখলে বোঝা যায় ওস্তাদি অন্য জায়গায়। কোথাও ভাঙা পর্ব ৪ মাত্রার কোথাও ২ মাত্রার। মানে ছন্দের নিয়মকে মান্য করেও নিজস্ব স্বাধীনতা উদযাপন। অথবা ধরুন, সেই বহু-আলোচিত সোনার তরী কবিতা... অনন্য জোড়-বিজোড়ের খেলা, কিন্তু কোথাও বিন্দুমাত্র বিচ্যুতি নেই।
এ নহে মোর প্রার্থনা, (৫/ ৪)
বিপদে আমি না যেন করি ভয়। (৫/ ৫/ ২)
দুঃখতাপে ব্যথিত চিতে (৫/ ৫)
নাই বা দিলে সান্ত্বনা, (৫/৪)
দুঃখে যেন করিতে পারি জয়।” (৫/ ৫/ ২)
“গগনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা। (৮/ ৫)আচমকাই হোঁচট খেলাম একটা বহু পরিচিত কবিতার পাঠে। হোঁচটটা অবশ্য শ্রুতিতে লাগল না, লাগল চোখে। এখন প্রশ্ন হল মানুষ কি চোখ দিয়ে কবিতা পড়ে? সে আলোচনা আপাতত মুলতুবি থাক। না-হলে মূল প্রসঙ্গে আসতে দেরি হয়ে যাবে। রবি ঠাকুরের ‘অভিসার’ কবিতাটি পড়ছিলাম, কত তম বার বলা মুশকিল... যদিও কন্ঠস্থ, পড়তে পড়তে চোখ আটকাল একটা শব্দে। আগে সেই সন্দেহ-সংকুল অংশটির উদ্ধৃতি দিই।
কূলে একা বসে আছি, নাহি ভরসা (৮/ ৫)
রাশি রাশি ভারা ভারা (৪/ ৪)
ধান কাটা হল সারা, (৪/ ৪)
ভরা নদী ক্ষুরধারা (৪/ ৪)
খরপরশা। (৫)
কাটিতে কাটিতে ধান এল বরষা।” (৮/ ৫)
“কাহার নূপুরশিঞ্জিত পদ (৬/ ৬)নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী মশাই ‘কবিতার ক্লাসে’ যে ভাবে পড়তে শিখিয়েছেন সেভাবে পড়লে ‘রূঢ়’ শব্দটি মাত্রাবৃত্তে দু’-মাত্রার বেশি মর্যাদা পায় না। তাহলে ‘রূঢ় দীপের’ পর্ব-মর্যাদা হল ৫। হওয়া উচিত ছিল ৬। কীভাবে সম্ভব হল। ছন্দ নিয়ে এই রকম ছেলেখেলা কবিগুরুর স্বভাব-বিরুদ্ধ। আবার পড়লাম। দেখলাম, কান মেনে নিচ্ছে, কারণ ‘রূঢ়’ শব্দটাকে পড়ছি ‘রু-উ-ঢ়’। কিন্তু সে তো আবৃত্তির স্বাধীনতা। ছন্দের পিতা সাদায় কালোয় এই কাজ কেন করলেন? তিনি কি ইচ্ছে করেই ছন্দ ভাঙলেন? ভাবলেন অনেক তো ছন্দে লিখেছি বাপু, এবার একটু অন্যরকম লিখি? মনটা খুঁতখুঁত করছিল। এক কবি বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলুম। সে বলল, ব্যতিক্রম - আর্ষ-প্রয়োগ, কবিগুরু বলে কি মানুষ নন? এক ছান্দসিক বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলুম। সে আমার মতই আশ্চর্য হল। বলল, তাই তো! আগে নজর করিনি। “রূঢ় প্রদীপের আলোক লাগিল” লিখলেও বিন্দুমাত্র ছন্দভঙ্গ হত না।
সহসা বাজিল বক্ষে (৬/ ৩)
সন্ন্যাসীবর চমকি জাগিল, (৬/ ৬)
স্বপ্নজড়িমা পলকে ভাগিল, (৬/ ৬)
রূঢ় দীপের আলোক লাগিল (৫(?)/ ৬)
ক্ষমাসুন্দর চক্ষে।” (৬/ ৩)
সেও ভেবে-চিন্তে বলল, ব্যতিক্রমই। ফোনটা রেখে “রূঢ় প্রদীপের” শব্দ দুটো বার বার উচ্চারণ করলাম, ‘রূঢ়” শব্দটা যেন চট করে ফুরিয়ে যাচ্ছে। মনে হল পড়ছি ‘রুঢ়’। কারণ ‘প্র’ উচ্চারনের জন্য সময় বাঁচাচ্ছি। এই হল দেখে পড়ার বিপদ। যেহেতু জানি আমায় পরে এক মাত্রা বেশি উচ্চারণ করতে হবে তাই ‘রূঢ়’ শব্দটাকে পড়ছি ‘রুঢ়’। আরও একটা অসুবিধে হচ্ছে এবং সেটা গুরুতর। ‘রু-উ-ঢ়’ পড়লে যতটা রূঢ়তা প্রকাশ পেত তার ভগ্নাংশও ‘রুঢ়’ উচ্চারণে আসছে না। অর্থাৎ কিনা কবিগুরু লিখেছেন ‘রূঢ়’ এবং পড়তে বলছেন ‘রু-উ-ঢ়’। না-হলে কর্কশ আলো সন্ন্যাসী উপগুপ্তর ক্ষমাসুন্দর চক্ষে আঘাত করতে পারত না। আহা কী বৈপরীত্য! রূঢ় আলো আর ক্ষমাসুন্দর চোখ, যেন অন্ধকার রাত্রির ক্যানভাসে দুটি পরস্পর-বিরোধী উজ্জ্বল গাঢ় রঙের পোঁচ। কবিগুরু, সত্যিই তুমি গুরুদেব লোক। ভাগ্যিস “রূঢ় প্রদীপের” লেখনি!
ভাল করে চিন্তা করে দেখলাম, এই প্রয়োগে বিশেষ অসঙ্গতি নেই। কারণ আমরা লিখি এক আর পড়ি আর এক। শুনি অন্য কিছু। “নগরীর দীপ নিবেছে পবনে,/ দুয়ার রুদ্ধ পৌর ভবনে” পড়ার সময় নিজের অজান্তেই ‘পৌর’ শব্দটাকে পড়ছি ‘পো-উ-র’। প আর র-ইয়ের মাঝখানে একটা ঔ-কার ঢুকে যাচ্ছে। যেখানেই যৌগিক স্বর সেখানেই ঝামেলা। সেভাবে দেখলে ‘রূঢ়’ শব্দের র-এর সঙ্গে লেগে থাকা ঊ-কারও দুটি হ্রস্ব-উর সমন্বয়। আমরা ইদানীং বাংলায় ই-ঈ, উ-ঊ-র পার্থক্য ভুলতে বসেছি। তার প্রবক্তাও রবি ঠাকুরই। বস্তুত তিনি শব্দের উচ্চারণ-সম্মত বানান লেখার পক্ষপাতী ছিলেন। রবীন্দ্রনাথের প্রস্তাব অনুসারে গঠিত ‘কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বানান-সংস্কার-সমিতি’ ১৯৩৬-সালে ‘বাংলা বানানের নিয়ম' নামে প্রথম নির্দেশিকা প্রকাশ করে৷ তাঁরই ইচ্ছানুসারে তদ্ভব অনেক শব্দে মূলানুগ ঈ-কার ঊ-কার বর্জিত হয়েছে। তবে ‘অভিসার’ লেখার সময় তৎসম শব্দের ব্যবহারে তিনি লঘু-গুরু জ্ঞান হারাননি।
কবিতা পড়তে গেলে বোধহয় চোখ আর কান দুটো ইন্দ্রিয় যথেষ্ট নয়। তার কিছু বেশিই দরকার। কখনও কখনও পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের কত্তামশাই মগজটিরও যথাসাধ্য ব্যবহার করা দরকার। হৃদয়ের কথা আর আলাদা করে বললাম না। কারণ তার অবস্থানটা ঠিক কোথায় সে ব্যাপারে সুনিশ্চিত নই। অবশ্য মগজের যথাসাধ্য ব্যায়াম করেও সিদ্ধান্ত নিতে পারলাম না এই ধরণের প্রয়োগকে ছন্দ ভাঙা বলব না ছন্দ গড়া।