• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | Rabindranath Tagore | প্রবন্ধ
    Share
  • রবীন্দ্রনাথের 'সাধনা' ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা : রবিন পাল

    বীন্দ্রনাথের SADHANA প্রকাশিত হয় ১৯১৩ অক্টোবর-এ। প্রকাশক — লণ্ডনের ম্যাকমিলান অ্যাণ্ড কোং। আমেরিকা থেকে তিনি ফিরেছিলেন ১৯১৩ তেই। Quest ছিল তত্ত্বজ্ঞানের পত্রিকা। এর সম্পাদক জি. আর. এস. মীড তাঁদের সমিতির তত্ত্বাবধানে ইংল্যাণ্ডে রবীন্দ্রনাথের বক্তৃতা দেবার ব্যবস্থা করেন। ৮ সপ্তাহে ৮টি প্রবন্ধ ক্যাকস্‌টন হলে পড়েন কবি। এগুলোই পরে 'সাধনা' নামের ইংরেজি বইতে সংকলিত হয়। এই প্রবন্ধ / বক্তৃতাগুলোর পূর্বপাঠ আমেরিকায় পরিবেশিত হয়। আমেরিকাতেই ছাপার প্রস্তাব এসেছিল। কিন্তু কবির ইংলণ্ডীয় হিতৈষীরা অনুমোদন করেন নি।

    এই ৮টি প্রবন্ধের নাম — The Relation of the Individual to the Universe (ব্যষ্টি ও সমষ্টি সম্বন্ধে), Soul Consciousness (আত্মবোধ), The Problem of Evil (পাপবোধ), The Problem of Self (আত্মসমস্যা), Realisation in Love (ভক্তিযোগ), Realisation in Action (কর্মযোগ), The Realisation of Beauty (সৌন্দর্যবোধ), The Realisation of The Infinite (বিশ্ববোধ) [বাংলা নামগুলো শ্রীযুক্ত প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের দেওয়া, কিছু আপত্তি সত্ত্বেও ব্যবহার করলাম।]

    প্রশান্ত পালের সূত্রে জানা যাচ্ছে আদি ব্রাহ্মসমাজে ৮০তম বাৎসরিক উৎসবে রবীন্দ্রনাথ একটি বক্তৃতা দেন যা 'বিশ্ববোধ' নামে 'প্রবাসী'তে (ফাল্গুন ১৩১৬, ১৯০৯ মার্চ) এবং ভিন্ন নামে 'তত্ত্ববোধিনী' পত্রিকায় (চৈত্র ১৩১৬) প্রকাশ পায়। তার আগে শান্তিনিকেতন ১০ম ভাগে ছাপা হয়। এই প্রবন্ধের বড়ো অংশের সংক্ষিপ্ত ভাবানুবাদ 'সাধনা'র প্রথম প্রবন্ধ। আদি ব্রাহ্মসমাজের ৮১ তম উৎসবে পঠিত হয় 'কর্মযোগ' যে প্রবন্ধের মূল বক্তব্য 'সামঞ্জস্য' প্রবন্ধের সুরে মেলানো। এই প্রবন্ধের কিছু অংশ বাদ দিয়ে সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর যে অনুবাদটি করেন, তা হল 'সাধনা'র ষষ্ঠ রচনা। ১০ নভেম্বর ২৫ কার্তিক ইউনিটি ক্লাবে যে প্রবন্ধটি পড়েন তা অনেক বদলে হয়ে যায় 'সাধনা'র শেষ প্রবন্ধ। পরের সপ্তাহে যেটি পড়েন তার পরিবর্তিত রূপ 'সাধনা'র ২য় প্রবন্ধ। প্রশান্ত বাবু জানান আমেরিকার দর্শনের অধ্যাপক জেমস এইচ উড-এর উৎসাহে এই বইয়ের রচনাগুলি পূর্ণতা লাভ করে। সংস্কার কার্যে আর্নস্ট রীজ-এর সাহায্য মিলেছিল। এই বইটি রীজকেই উৎসর্গ করা হয়। হার্ভাডে যে দুটি প্রবন্ধ পাঠ করেন তা হল 'সাধনা'র ৪র্থ এবং ৭ম প্রবন্ধ।

    'সাধনা' বইটির ব্যাপক আগ্রহ সঞ্চারের কারণ কি? প্রভাতকুমারের ব্যাখ্যা — রবীন্দ্রনাথের বহুদিনের স্বপ্ন 'ভারতের ভাবাত্মক আদর্শবাদের প্রচার।' এ বইটির লেখাগুলিকে উপনিষদের ঋষিদের বাণীর ব্যাখ্যা বললে ভুল হবে না, তবে এ ব্যাখ্যান রবীন্দ্রনাথের নিজস্ব। কবির মতে পাশ্চাত্য পণ্ডিতরা ভারতের ধর্ম ও দর্শন শাস্ত্র অধ্যয়ন করেছেন সত্য, তবে সেটা বিজ্ঞানীর কৌতূহলমাত্র। তাঁরা ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্বের দিক থেকে যা আলোচনা করেছেন তা আমাদের সাধনার সামগ্রী। প্রভাতবাবুর কথা ঠিক নয়। কারণ পাশ্চাত্যের সবাইয়ের লেখা বিজ্ঞানমনস্ক নয়। তাতে ভাবাত্মকতা যথেষ্ট। যেমন — রীজ এর লেখা, আণ্ডারহীলের লেখা। রবীন্দ্রনাথ বলছেন (বিশ্ববোধ) বিশ্ববোধের সাধনাই ভারতের সাধনা। নিজেকে পরিবারে, সমাজে, স্বদেশে, বিদেশে প্রসারিত করতে গেলে দরকার আত্মবিলোপ সাধন, যা অতীতে এখানে করা হয়েছিল। আজ দেশে নানা মতের, আচারের পার্থক্য ও সংঘাত দেশকে করেছে দুর্বল। কিন্তু ভারতকে করে তুলতে হবে মহামানবের মিলনতীর্থ।

    'সাধনা' বইতে রবীন্দ্রনাথ আধুনিক সভ্যতার সংকট ও তা নিরসনের পথ নির্দেশ করার চেষ্টা করেন। অস্তিত্ত্বের মান গেছে নেমে। পশ্চিম প্রকৃতিকে দমন করে অহংকৃত। জগতে প্রয়োজন ঐক্যের — ব্যক্তি ও বিশ্ব, ব্যক্তি ও সমাজের। প্রকৃতির সঙ্গে ও মানবের ঐক্য প্রয়োজন কিন্তু পাশ্চাত্য মনে করে প্রকৃতি দমন সাপেক্ষ, অপ্রাণ। বারংবার বলা হয় ঐক্যবিধানের, যা বিজ্ঞানের সত্য, যেমন দ্বান্দ্বিকতা মেনেছে বিজ্ঞান। অস্তিত্বের সমগ্রতার কথা বলেন তিনি। পদে পদে উপনিষদের উদ্ধৃতি দেন, কিন্তু আধুনিক সভ্যতা ও বিজ্ঞানের উপযোগী ব্যাখ্যা আনেন। ইতিহাস চেতনার প্রকাশ সভ্যতা ও আক্রমণ (ভারত, আমেরিকা) ব্যবহৃত। 'সাধনা' বইটি যে বিশ্বের নানাস্থানে সমাদৃত হয় তার কারণ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ঘোর নৈরাশ্যের মধ্যে বারংবার জাগান high hope for the hummanity অশুভত্ব, অপূর্ণতা, জীবন সত্য, সত্য বিষয়ের প্রাচ্য ব্যাখ্যা, আত্মের সমস্যা ও আত্মের অনুসন্ধান বিভ্রান্ত, বিমূঢ় পাশ্চাত্যবাসীর মনে প্রেরণা জাগায়। মাঝে মধ্যে ভারতীয় ধর্ম ছাড়া, বৌদ্ধ, খৃষ্ট ধর্ম প্রসঙ্গ এনে সমন্বয়ধর্মী চেতনা জাগাতে সচেতন হন। আশার আর একটি কথা — জীবন অবিনশ্বর তারুণ্য যা বয়স কে যা আটকাতে চায় তাকে ঘৃণা করে। আর একটি উদ্দীপক কথা — যাবৎ সৃষ্টির পিছনে আনন্দ। মানুষের প্রতি প্রেম ব্যতীত মানুষকে বোঝা অসম্ভব। রবীন্দ্রনাথ বিজ্ঞানের প্রগতিকে অমান্য করেন না, বার্ট্রাণ্ড রাসেল প্রভৃতির উল্লেখ করে আধুনিক জিজ্ঞাসু মনের দরজা খুলতে চেষ্টা করেন প্রাচ্য ধ্রুপদী ঋষি উক্তি সমূহের দ্বারা। সাধনা বইতে তাই যেমন আছে পাশ্চাত্য প্রবণতার সীমাবদ্ধতা নির্দেশ, অশুভ ও অমঙ্গল প্রবণতার সমালোচনা তেমনি আছে উত্তরণের কথা, নব সূত্রপাতের দিকে চলার কথা।

    প্রশান্ত পাল দেখান সুরেন্দ্র দাশগুপ্তকে লেখা একটি দীর্ঘ পত্রে আছে Relisation in Action প্রবন্ধের কথা, যা অংশত বর্জিত হয়েই বইতে আসে। আদি ব্রাহ্মসমাজের ৮০তম উৎসবে যে সামঞ্জস্য ও মিলনের কথা আছে তা পরে 'বিশ্ববোধ' নামে প্রবন্ধ আকারে প্রকাশ পায়, এটিই সাধনার The Relation of the Individual to the Universe প্রবন্ধে চলে আসে কিছু সংক্ষেপে। এই সূত্রে বলার কথা — 'সাধনা'র প্রবন্ধগুলির ভাবনা ভারতে থাকাকালীন দীর্ঘদিনের ভাবনা সংকলন যা আমেরিকায় ও পরে ইংল্যাণ্ডে পরিবেশন করে কবি বিপুল তৃপ্তি পান। দ্বিতীয় কথা — 'সাধনা' বইটিকে পড়া উচিত গীতাঞ্জলি, নৈবেদ্য প্রভৃতির কবিতা এবং তৎকালীন রবীন্দ্র সভ্যতা ও সমাজ ভাবনার সঙ্গে মিলিয়ে। সে সব যে ক্ষণিকের ভাবনা নয়, তা যে সমন্বিত ভাবনা যা লালিত হয়েছে নিঃসংশয়ে তা বোঝা যায়।

    ব্রিটিশ বুধমণ্ডলীর এই বইটি সম্পর্কে অল্প মতামত উল্লেখ করা যাক। একটি পত্রিকা লেখে আত্মচেতনা বিষয়ে কবির চিন্তা যেন আলঙ্কারিক মাধ্যমে ধ্যানরত মনের সহজ প্রবাহ আর তা যথেষ্ট মধুর, বিশেষতঃ তাদের কাছে যারা মসৃণ ও অপ্রতিরোধের চিন্তা পছন্দ করে, তা উদ্দীপক না হলেও সন্তোষজনক। (The Saturday Review, 27/12/1913) অন্যত্র বলা হয়, অশুভের সমস্যা বিষয়ক এ বইয়ের চিন্তায় সাম্প্রতিক নখ দাঁত বার করার প্রতিপক্ষে চিন্তাকে নাড়া দিয়ে যায়। জীবনের সপ্রাণত্ব ও সমগ্রতা আছে এতে। (The Dundee Advertiser, 3/1/1914) রবীন্দ্রনাথ দেখান পূর্বী শাস্ত্রসমূহে Value of self স্বীকৃত, প্রাচ্যচিন্তা সম্পর্কে ভুল ধারণা ভেঙে দেন, যে চিন্তা এমার্সন ও এডওয়ার্ড কেয়ার্ড এর সঙ্গে তুলনীয়। (The Manchester Guardian, 6/1/1914) অশুভের সার অস্থায়ী, সম্পূর্ন মতে অবস্থান অনন্তের দিকে নিয়ে চলে। তাঁর চিন্তায় আছে মহাকবির, মহা ভবিষ্যৎদ্রষ্টার পরিচয়। মুগ্ধতা সৃষ্টিকারী প্রকাশভঙ্গি। (The New Statesman, 17/1/1914) মানুষ ও প্রকৃতির পারস্পরিক শুভত্ব সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ অনন্য ভাবুক হিসেবে উপস্থিত, প্রকৃতি সম্পর্কে এক পক্ষীয় মতামত থেকে পাশ্চাত্যবাসীকে রক্ষা করেন তিনি। (The Friend, 13/2/1914) একজন আলোচক সমালোচনা করে বলেন পশ্চিমের কাছ থেকে পূর্বের কিছু শেখার নেই, একথা সঠিক নয়। বাণিজ্য, প্রশাসন, বিজ্ঞানে পশ্চিমী উৎকর্ষ অনস্বীকার্য। তবে রবীন্দ্রচিন্তা মাহাত্ম্যকে খর্ব করার অভিপ্রায় নেই। (The Spectator, 14/1/1914) আরেকজন বলতে চান 'সাধনা'র বক্তব্য সমূহ যদি শিক্ষক / প্রচারক হিসেবে না হাজির ক'রে আত্ম অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আনতেন, ভালো হত। (The Times Literary Supplement, 14/5/1914)

    'সাধনা' বইটি রবীন্দ্রনাথ উৎসর্গ করেন আর্নস্ট রিজকে। আর্নস্ট রিজ, ১৯১৫ তে Rabindranath Tagore : A Biographical Study নামে রবীন্দ্রনাথের ওপর একটি বই লেখেন। ইংরেজিতে লেখা রবীন্দ্রপ্রসঙ্গের প্রথম বই দুটির একটি এই বইটিকে বলা হয়।

    এই বইটির দশম অধ্যায় — এই 'সাধনা' বইটিকে নিয়ে। ইংরেজি জানা মানুষের কাছে রিজ সাধনার বক্তব্য তুলে ধরতে গিয়ে বলেন — রবীন্দ্রনাথ এই বক্তৃতাসমূহে পূর্বী প্রাচীন প্রজ্ঞার নবব্যাখ্যাতা। এখানে আছে জীবন ও তার উপলব্ধি বিষয়ে কবির ধ্যান - ভাবনা, যা তাঁর অভিজ্ঞতা ভিত্তিক। কবি বলেন বিশ্বের সব কিছুর ঐক্যের কথা। ৪র্থ অধ্যায়ে আসে আত্মের সমস্যা, মানব প্রকৃতির, অহং বোধের, তার প্যারাডক্সের কথা। আলোচকের মতে গীতাঞ্জলি ও গার্ডেনার -এর ভাবনা আর সাধনার ভাবনা সম্পর্কিত। পরে আসে একাধিক উপলব্ধি ও প্রেমের রহস্যের কথা। তারপর — কর্মসঞ্জাত উপলব্ধি প্রসঙ্গ। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত হল — এই বইয়ের উপলব্ধি সন্ন্যাসীর জন্য নয়, বরং সংসারী মানুষের আত্মোন্নয়নের জন্য।

    জাপানে রবীন্দ্রনাথের যে বইটি প্রথম অনূদিত হল তা 'সাধনা', ১৯১৫তে এই অনুবাদ করলেন Miura Kanzo তবে এ অনুবাদ যে যথোপযুক্ত হয়নি একথা বললেন ভারতীয় দর্শনে তৎকালীন প্রসিদ্ধ ব্যক্তি Kimura Taiken। ক্রমে রবীন্দ্রনাথের অন্যান্য বই আগ্রহ সঞ্চার করল অনুবাদের মাধ্যমে। কোরীয়াতে Han yong-un (এক বৌদ্ধ চিন্তাবিদ, সংস্কারক, স্বাধীনতা যোদ্ধা, কবি) 'সাধনা' বইটির কিছুটা অনুবাদ ক'রে ছাপালেন নিজের পত্রিকা yoosim (শুধু মন) তে ১৯১৮তে, ২টি সংখ্যায়, উদ্দেশ্য কোরীয় বুদ্ধচিন্তাকে সংস্কার করা। 'সাধনা'র পরের কিছু অংশ অনুবাদ করা হলেও জাপান কর্তৃপক্ষের চাপে ছাপানো যায় নি। ভিয়েতনামে কবি ও লেখকদের মধ্যে রবীন্দ্র রচনা আনন্দ সঞ্চার করছিল। Nguyen Dang Thuc লিখেছিলেন ভিয়েতনাম সাম্রাজ্যবাদী চীনা সংস্কৃতির কাপড়ে মোড়া থাকলে ও তার মধ্যে ভারতীয় সংস্কৃতির এক অন্তঃশীল ধারা বহমান ছিল যা সাধারণ মানুষের হৃদয়ে সাড়া জাগায়। এই সূত্রে এসেছে 'সাধনা' বইটির কথা। থাইল্যাণ্ডে সমাদৃত অনুবাদের মধ্যে এই বইটির নাম সর্বাগ্রে উল্লিখিত। সিরিয়ান বিশিষ্ট লেখক Dr Badi al-Qasm ১৯২৬ এ রবীন্দ্রনাথের কায়রো পৌঁছানোর কালে বলেছিলেন — রবীন্দ্রনাথ একাধারে কবি, দার্শনিক, প্রফেট, কারণ ভারতীয় সংস্কৃতির কবি শুধু মাত্র সৌন্দর্য স্তবগানে সীমাবদ্ধ থাকেন না। ড. কাসম্‌-এর মতে রবীন্দ্রদর্শনের সারকথা 'সাধনা' বইটিতে বিধৃত, যা বলছে মানব আত্মার মুক্তি সীমার বন্ধন থেকে, উড়ে চলে পূর্ণতার দিকে আর দেবতার বাহুদ্বয়ের কাছে পৌঁছায়। কাসম বলেন রবীন্দ্র দার্শনিক চিন্তা হেগেল, বার্কলে, বার্গস, ডারউইন এর চিন্তার সঙ্গে মেলে। তার মানে অবশ্য এই নয় রবীন্দ্রনাথ এঁদের চিন্তা গ্রহণ করেছেন, এ চিন্তার উৎস তাঁর ব্যক্তিক অভিজ্ঞতা। Abdul Aziz al Zaki শিল্পী ও সুফী ভাবাদর্শের সমতুল্যতা নিয়ে অনেক লিখেছেন যাতে সাধনা ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক লেখার কথা ওঠে। ১৯৬১ তে অর্থাৎ রবীন্দ্র শতবার্ষিকীতে Tahir al-Jabalawi অনুবাদে হাজির করেন — দ্য ক্রেসেন্ট মুন, লাভার্স গিফ্‌ট্‌, সাধনা প্রভৃতি। Al - Jabalawi ৬৫ সংখ্যায় 'সাধনা' বইটির একটি অংশ অনূদিত হয় যা পরে চলে আসে The Inspiring Indian Poet (Muhammad Tahir al - Jabalawi কর্তৃক অনূদিত) বইটিতে। এটি সম্পাদনা করেছিলেন Muhammad Sayyid al-Tahiri, বেরিয়েছিল দামাস্কাস থেকে। রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির সংবাদ যখন মিশরে পৌঁছাল তখন বিভিন্ন সংবাদপত্র আনন্দ প্রকাশ করল। আল্‌ হিলাল পত্রিকার সম্পাদক, ঔপন্যাসিক ও পণ্ডিত Jurji Zaydan রামায়ণ ও ওমর খৈয়াম এর রুবাইয়াৎ অনুবাদক Wadi al - Bustani (বিখ্যাত লেবানিজ কবি ও অনুবাদক) কে অনুরোধ করলেন রবীন্দ্রনাথ বিষয়ে একাধিক প্রবন্ধ লিখতে। আল - বুস্তানী ইংরিজিতে লেখা গীতাঞ্জলি, দি গার্ডেনার, সাধনা পড়ে ফেললেন এবং আরবিক-এ সেগুলো অনুবাদ করতে শুরু করলেন। বৃটিশ প্রশাসনের সদস্য হিসেবে তিনি ১৯১৪তে ভারতে আসেন এবং রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে অতিথি হিসেবে কয়েকদিন কাটান। রবীন্দ্রনাথের উচ্চ তদ্গত অবস্থা এবং ব্যক্তিগত অতিথি চেতনা তাঁকে মুগ্ধ করে। এ বিষয়ে লেখেন আল্‌-হিলাল পত্রিকায়। লেখেন রবীন্দ্রের ইংরেজিতে লেখা সব কটি বই তিনি পড়েছেন এবং মনে হয়েছে — রবীন্দ্রনাথ এক পবিত্র দার্শনিক কবি, ঈশ্বর ও প্রকৃতি প্রেমিক এবং মানব জাতি সম্পর্কে ভালোবাসার অন্ত নেই। Zaki Najil Mahammd এর প্রবন্ধ Tagore's Philosophy of Religion and Mysticism এ আলোচনায় প্রাসঙ্গিক, কারণ এখানে আছে চিরন্তন মানুষ এর কথা, যিনি ঈশ্বর। রবীন্দ্র রচনায় চিরন্তন মানুষ আর মানবতা চিরস্থায়ী সম্পর্কে স্থিত এবং এই নব ধর্ম লিঙ্গ, বর্ণ, জাত, গোষ্ঠীভেদ মানে না। শতবার্ষিকীতে Muhammad Tahir al-Jabalawi Dhikra Tajur নামে একটি সংকলন করেন যাতে মালিনী, ডাকঘর, ফ্রুট গ্যাদারিং, দি গার্ডেনার, লাভার্স গিফট, দি ক্রেশেন্ট মুন, সাধনা ও স্ট্রে বার্ডস এই বই কটির নির্বাচিত অংশের অনুবাদ ও একটি বড়ো ভূমিকা ছিল। জাবালায়ি বলেন রবীন্দ্র মানবতাবাদ বস্তুসর্বস্বতা ও আকাঙ্খাবাদের যুগে গুরুত্বপূর্ণ। ধর্ম ও সাহিত্য বিষয়ে ভারত ছিল বিশ্বের থেকে বিচ্ছিন্ন। কিন্তু সমগ্র বিশ্ব যখন আর্তনাদ করছে রবীন্দ্রনাথ তখন দাঁড়িয়েছিলেন পশ্চিমী অশুভত্বর বিরুদ্ধে এবং সোচ্চার হন ইউরোপীয় সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদ, বিভেদপন্থা, স্বার্থপরতা, সম্পদ সংগ্রহের লোভ প্রভৃতির বিরুদ্ধে বলেন। রবীন্দ্রনাথ বলেন প্রকৃতি সান্নিধ্যে মানুষ উপকৃত হবে, ইউরোপ প্রকৃতিকে ধ্বংস করছে কিন্তু মানুষ ও প্রকৃতি অচ্ছেদ্য। এই বোধে উদ্দীপ্ত হতে হলে দরকার প্রেম ও ভ্রাতৃত্ব। আরব বুদ্ধিজীবীদের রবীন্দ্র রচনা উদ্দীপ্ত করেছিল। তাই 'মাই রেমিনিসেন্সেস' ও 'সাধনা' অনূদিত হল আরবীয়তে অনেকের দ্বারা, বিশেষতঃ Azmi al - Dawairi Afindiর দ্বারা। আল্‌-আক্কাদ-এর 'সাধনা' ভাষ্য রবীন্দ্র রচনার চমৎকার ভাষ্য। অধ্যাপক Ahmad al - Sha'ib তাঁর Principles of Literary Criticism বইতে ক্রিয়েটিভ ইউনিটি, পার্সোনালিটি, সাধনা বিষয়ে বিস্তৃত তুলনামূলক আলোচনা করেন যার থেকে এই পণ্ডিতের মধ্যে রবীন্দ্র অভিঘাত বোঝা যায়।

    রাশিয়াতে রবীন্দ্রনাথের ছয়টি বই (নোবেল কমিটি উল্লিখিত বইগুলি হল — গীতাঞ্জলি, দি গার্ডেনার, লিরিকস্‌ অফ লাভ অ্যাণ্ড লাইফ, দি ক্রেসেন্ট মুন, গ্লিম্পসেস অফ বেঙ্গল লাইফ, সাধনা) ১৯১৩ থেকে ১৯১৫ এর মধ্যে এক বা একাধিকবার অনুবাদ করা হয়, অবশ্য ইংরেজি থেকে। অনেক পরে ২০১১ / ২০১২ তে 'সাধনা' পুনঃপ্রকাশিত হয়, তবে জনপ্রিয় এই সিরিজ বইটির নাম পালটে করা হয় — Esoteric wisdom। ইতিমধ্যে সরাসরি বাংলা থেকে অনুবাদ শুরু হয়ে গেছে। তালিকা থেকে জানা যাচ্ছে ১৯১৪তে V. Pogossky, ২০১১ তে Amrita - Rus, ১৯১৪ তে A. F. Gretman ও V. S. Lempitskaya (ভূমিকা — রবীন্দ্রনাথ ও P. I. Timofeye Vsky) 'সাধনা' অনুবাদ করেন।

    রোমানিয়াতে এই বইটি অনুবাদ করেন N. Crainic ১৯২২-এ, জার্মান থেকে। খুবই শৈল্পিক ছিল এটি। ১৯২২-এ একদল উল্লেখ্য তরুণ গবেষক, যাঁদের মধ্যে ছিলেন Nichifor Crainic এবং Alexandru Basuioceanu, সাধনা এবং ন্যাশনালিজম যত্ন সহকারে অনুবাদ করলেন। এই অনুবাদের ভূমিকা অংশে উদ্দিষ্ট বই দুটি সম্পর্কে গবেষক সুলভ, বিচারী দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়। ব্যক্তিকেন্দ্রিক, বিচারশীল, যান্ত্রিক পশ্চিমী দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তে 'সাধনা' বইটির দার্শনিক চিন্তায় আকৃষ্ট হন Busuisceanu, কিন্তু এরপর ইউরোপীয় সভ্যতার trans-historic spirit এর কথা ভেবে দ্বিধায় পড়েন। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য চিন্তার সংমিশ্রণের সম্ভাবনায় তাঁর বিশ্বাস ছিল না, বরং মনে করতেন এই দুই সংস্কৃতি ও সভ্যতার মিলন অসম্ভব। Crainic অন্যদিকে Tagoreism সম্পর্কিত জনপ্রিয় ধারণা, যা ইংরেজি মারফৎ প্রশংসাকারী ও অনুকারীদের মধ্যে এসেছে তা খন্ডনে তৎপর হলেন। রবীন্দ্রনাথকে 'প্রফেট' বলারও পক্ষপাতী নন তিনি। পাশ্চাত্য অনুভব তাঁকে বরণীয় মনে করলে ও তাঁর ভবিষ্য উচ্চারণে আস্থাশীল ছিলেন না। রোমানিয়ান গবেষকরা মনে করলেন জার্মান ভাষী পৃথিবী রবীন্দ্রের আধিবিদ্যক ও স্পিরিচুয়াল উচ্চারণে মাতোয়ারা ছিলেন তা নয়, বরং বলা চলে এখানে একটা ব্রিটিশ বিরোধী রাজনৈতিক বিবেচনা কাজ করেছে। 'সাধনা' বইটির সবচেয়ে আকর্ষনীয় আলোচনা লেখেন P. Pandrea যিনি অবশ্য Busuioceanu-র মন্তব্যটি সরিয়ে রাখেন। যুগোশ্লাভিয়া ও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে রবীন্দ্রনাথ সুপরিচিত হওয়ার অনেক পর, তাঁর কবিতা ও অন্যান্য রচনার অনুবাদ, পুনর্মুদ্রণের কাজ চলতে থাকার পর নজর পড়ল সাধনা এবং দি রিলিজিয়ান অফ ম্যান বই দুটির ওপর। পোলিশ ভাষায় 'সাধনা' এবং 'Thought Relics' আকর্ষণ সৃষ্টি করেছিল। অনুবাদকেরা জার্মান অনুবাদের ওপর নির্ভর করেন। সাধনা এবং আর দুটি বইয়ের অনুবাদক Jerzy Bandrowski বলেন — কবি নিজেই চেয়েছিলেন জার্মান থেকেই করা হোক। তবে তিনি বুঝতে পারেন, জার্মান অনুবাদ খুঁটিনাটিতে সতর্ক হলেও রাবীন্দ্রিক স্পিরিচুয়াল ও প্রজ্ঞাগত ধরন আর হেলেনা মায়ার ফ্রাঙ্কের মনোভঙ্গি সমসূত্রে গ্রথিত ছিল না। বান্দ্রোস্কী-র অনুবাদ বার হয় ১৯২২ এ।

    হাঙ্গেরীতে সাধনা, দি ইন্সপিরেশন অফ দি সোল এবং ন্যাশনালিজম বিশের দশকেই ওই দেশের ভাষায় অনুবাদ হয়ে যায়, তার মধ্যে 'সাধনা' বইটি ছিল সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং রবীন্দ্রের দার্শনিক ধারণার পরিচয় দিতে গিয়ে প্রায়ই এ বই থেকে উদ্ধৃতি দেওয়া হত। ১৯২৪ এর একটি পত্রিকা প্রবন্ধে জনপ্রিয়তার ব্যাখ্যা করা হয় এভাবে যে রবীন্দ্রনাথ বহন করছেন ব্রাহ্মণ প্রজ্ঞা, যাঁর ধ্যান তৈরি করে এমন এক সংবেদন যা ভাষাতীত। তবে জনমনে আসন পেলেও গির্জার সন্ন্যাসীরা অসন্তুষ্ট। Ja'nos Vuhov বলেন — রবীন্দ্রের মধ্যে আছে বিস্তর আধ্যাত্মিক মহত্ত্ব। Za'borszky তাঁর বইতে (The world view of Rabindranath Tagore, Budapest, 1927) প্রতিনিধিস্থানীয় এই কবির মধ্যে দেখেন প্রেম, আশাবাদ, আধ্যাত্মিক গভীরতা। রবীন্দ্র পৌঁছে গেছেন আধ্যাত্মিকতার শীর্ষবিন্দুতে, বিশ্বদর্শনে সক্ষম ব্রহ্ম মারফৎ, যিনি সন্ধান করেন অনন্তের স্পর্শে মানব ঐক্য। আত্মার গভীরে অবগাহন করতে পারলে রবীন্দ্র সত্তার যথার্থ পরিচয় মেলে। কেউ কেউ অবশ্য তাঁর চিন্তাকে অযৌক্তিক এবং সে কারণে মাঝারি মাপের চিন্তক বলেছেন। প্রসঙ্গতঃ স্মরণীয় রবীন্দ্রের বক্তৃতা — 'সভ্যতা ও অগ্রগতি' (১৯২৬)।

    প্রভাতকুমার তাঁর রবীন্দ্রজীবনী (৩য়)তে উল্লেখ করেছেন রবীন্দ্র কতিপয় বইয়ের মধ্যে 'সাধনা' বইটির কথা। বিশদ বিবরণ মিলবে Rabindranath Tagore and the Bulgarian Connection : Facts and Documents বইটিতে। আমরা জানছি বিশের দশকের মাঝামাঝি এ ভাষায় রবীন্দ্র রচনাদির অনুবাদ হতে থাকে ব্যাপক ভাবে। ১৯২৬ সালে প্রসিদ্ধ লেখক Vasil Stavrev জার্মান থেকে 'সাধনা' অনুবাদ করেন, নামের মধ্যে কিঞ্চিৎ ভিন্নতা — or the Road to Perfection যুক্ত হয়। এই অনুবাদের ভূমিকা লেখেন অধ্যাপক Nikolai Rainov, যিনি অনুবাদ করেছিলেন 'ঘরে বাইরে'। ইনি 'সাধনা' প্রকাশের পূর্বে Vuzrazhdane (নবজাগরণ) পত্রিকায় উক্ত বইটির প্রকৃতি ও সমস্যা বিষয়ে একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ লেখেন। চেকোশ্লোভাকিয়াতে জাভিতেল এর পরবর্তী কালের লেখক Hana Preinbaeltero Va 'সাধনা' বইটির দুটি লেখা The Problem of Evil এবং Realisation in Love অনুবাদ ক'রে প্রকাশ করেন যার ভূমিকায় বলেন রবীন্দ্রনাথ একজন সক্রিয় দার্শনিক তবে দর্শন বা বিজ্ঞান অনুশীলকদের থেকে আলাদা। উপনিষদ, বৌদ্ধচিন্তা ও পারিবারিক আবহ তাঁর মানসের ক্ষেত্রে কার্যকরী হয়েছে। (লেখাটি জাভিতেল সম্পাদিত পত্রিকা Archiv Orientalni 68, No 3, 2000 তে প্রকাশ পায়) ফ্রান্সের প্রসিদ্ধ লেখক আঁদ্রে জিদ ৯ জানুয়ারী, ১৯১৪ তে এক চিঠিতে জানান রবীন্দ্রনাথের 'সাধনা' বক্তৃতামালার কয়েকটি অনুবাদ করে কোনো সাহিত্য পত্রিকায় ছাপাতে চান, বলেন — 'হয়তো পুরো বইটি অনুবাদে প্রবুদ্ধ হতে পারি, কারণ আমার খুবই আগ্রহ জন্মেছে।' তবে সেটি কার্যকরী হয় নি। 'সাধনা'র দুটি ফরাসী অনুবাদের কথা পাচ্ছি — একটি ১৯৪০-এ, অন্যটি ১৯৫৬-এ।

    স্প্যানিশ ভাষায় অনুবাদ হয়েছে সাধনা এবং ওয়ান হাণ্ড্রেড পোয়েম্‌স্‌ অফ কবীর একসঙ্গে ১৯৫৬ তে (অনুবাদক Emilio Gasc'o Contell), ১৯৬৮তে একক ভাবে (অনুবাদক Zenobia Camprubi Aymar ও Enrique Lopez Castello'n, সম্পাদন সহ পুনরায় ১৯৮২, ১৯৮৩, ১৯৮৫ তে। রবীন্দ্রনাথ আর্জেন্তিনায় পৌঁছালে ভিক্তোরিয়া হোটেলে রবীন্দ্রের কাছে ফুলের তোড়া পাঠিয়ে যে দু ছত্র লিখেছিলেন তাতে ছিল প্রয়োজন মুক্ত সৌন্দর্য ও আনন্দের কথা — যা 'সাধনা'য় ব্যক্ত। মেক্সিকোতে রবীন্দ্র পরিগ্রহণ প্রসঙ্গে অবশ্যই Jose' Vasconcelos এর কথা বলতে হবে। তিনি ছিলেন মেক্সিকোর দার্শনিক, লেখক, রাজনীতিবিদ, যিনি মেক্সিকো ও ভারত সংস্কৃতির তুলনামূলক প্রসঙ্গ তোলেন। তিনি ভারতের নানা ধর্ম, দর্শন, উপনিষদ, বৌদ্ধ, জৈন, বেদান্ত, শঙ্কর, রামানুজম, সমসাময়িক ecclecticism, অথর্ববেদ প্রভৃতি নিয়ে যে বইটি লেখেন তা হল Estudios Indostanicos. এই ভাসকোনসেলস্‌ মেক্সিকান সংস্কৃতি, সাহিত্য, দর্শন, মানবতার নবউজ্জীবন প্রকল্পে ছিলেন। তিনি এ ব্যাপারে অনুপ্রেরণা পান দক্ষিণ এশিয়া ও জাপান থেকে। রবীন্দ্র রচনা তাঁকে বিশেষভাবে উদ্দীপিত করে। তিনি ১৯২৯ এর বিপ্লব পরবর্তী অস্থিরতার মধ্যে ভারতীয় নন্দনতত্ত্ব বিষয়ে আগ্রহী হন, নানা সাহিত্যচক্রে রবীন্দ্র রচনার কথা বলতে থাকেন। নানা সামাজিক প্রকল্পের কার্যকারিতায় তিনি রবীন্দ্রনাথ ও মহাত্মা গান্ধীর ধ্যান ধারণা প্রয়োগে সচেষ্ট হন। নির্বাসন থেকে ফেরার পর বিশের দশকের মাঝামাঝি যখন মেক্সিকোর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেক্টর এবং জনশিক্ষা মন্ত্রকের প্রধান হলেন তখন তিনি বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের কাছে বিতরণের জন্য রবীন্দ্রনাথের যে বইগুলি বেছে ছিলেন তা হল — ন্যাশানালিজম, দি ক্রেশেন্ট মুন, পার্সোনালিটি এবং সাধনা। এ ছাড়া বিতরিত হয় টলস্টয় ও প্লেটোর কিছু রচনা।

    'সাধনা' বইটির রচনাগুলি নিছক প্রাচ্যবোধের প্রচার নয়, ধর্ম, ভারতীয় দর্শন প্রকাশের নিদর্শন মাত্র নয়। প্রাচ্য দর্শন ও মূল্যবোধ দিয়ে আধুনিক অস্তিত্ব সংকট নিরসনের, সভ্যতার অশুভকে উত্তীর্ণ হবার ভাবুকতা। হয়তো তাই রবীন্দ্রনাথের এই ইংরেজিতে লেখা বইটি পৃথিবীর নানা দেশে ভাবুক পৃথিবীতে আগ্রহ সঞ্চার করেছিল। ইংল্যাণ্ডে প্রবন্ধ কটি পাঠ করার পর অজিত কুমার চক্রবর্তীকে রবীন্দ্রনাথ একটি পত্রে লেখেন — 'আমার বিশ্বাস হচ্ছে এই লেখাগুলো ইংলণ্ডে কাজে লাগবে।' কতোদূর কাজে লাগানো হয়েছিল তা জানি না। তবে এই বিশ্বাস যে নানা দেশের অনুবাদক ও প্রচারকদের মধ্যে ছিল তা জানা যাচ্ছে। দুঃখের কথা, এ বইটির বাংলা অনুবাদ আজও হয়নি।


    সংযোজন

    Alex Aronson কে রবীন্দ্রনাথ রবীন্দ্র ভবনে সংগৃহীত বইপত্রের তালিকা তৈরির দায়িত্ব দিয়েছিলেন, চল্লিশ দশকের মাঝামাঝি। তার থেকে জানা যায় — 'সাধনা' ইউরোপের একাধিক ভাষায় অনূদিত হয়। যথা —

    সুইডিশ — অনুবাদক Aug, Carr, 1914, রুশ - অনু: V. Pogoskasky, 1914, ইতালীয়ান - অনু: Aug. Carelli, 1915 (ভূমিকা অনুবাদকের), চেক - অনু: F. Balej, Kladne, 1920 (ভূমিকা এঁরই), জার্মান - অনু: Helene Meyer Franck, K. W., 1921, লাটভিয়ান - রচনাসমগ্র ৯ম, পুনঃপ্রকাশিত ১৯৩৯, ফরাসী - অনু: Jean Herbert (দীর্ঘ ভূমিকা, টীকা সংবলিত), ১৯৪০

    তথ্যসূত্র: Rabindranath Through Western Eyes - A. Aronson

  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)