• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৮৫ | জানুয়ারি ২০২২ | গল্প
    Share
  • ভাই : কৌশিক ভট্টাচার্য



    বাড়ি ফেরার পর থেকে মা কেঁদেই চলেছে, কেঁদেই চলেছে।

    তুলি টের পাচ্ছে সব। তুলি ঘরে ঢুকলেই মা অমন চমকে উঠছে কেন? শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখের ঘাম মোছার ভান-ই বা করছে কেন?

    ***

    এ'রকম হবার কথা ছিলো না।

    হাসপাতালে যাবার আগেও মা হাসতে হাসতে তুলিকে বলেছে, "তোর জন্য ভাই আনতে যাচ্ছি।"

    হেসেছে বাবাও। তুলির চুলে বিলি কাটতে কাটতে মায়ের দিকে চেয়ে বলেছে, "ভাগ্যিস ল্যাব অ্যাসিস্টান্ট তোমায় বলে দিলো, নইলে তো তুলিকে বলতে পারতে না ভাই না বোন!"

    খুব মজা লাগছিলো তুলির। ভাই আসছে ওর। সুমনা-র মতন।

    কোথায় গেল সেই ভাই? মা কি হারিয়ে ফেলেছে ভাইকে?

    ***

    ভাই কেমন হবে সেটা ঠিক করে ফেলেছে তুলি। মোটাসোটা, গাবদু-গুবদু। ছোট্ট ভুঁড়ি থাকবে একটা। কোঁকড়ানো চুল হবে। আর হ্যাঁ, চোখের রং হবে নীল।

    কেন চোখের রং নীল হবে তুলি জানে না। আশেপাশের সক্কলের চোখের রং তো কালো। তবু ওর ভাইয়ের চোখের রং নীল-ই হবে, কালো নয়।

    ভাইকে খুব আদর করবে তুলি। ওকে কোলে নিয়ে ঘুরবে, সাজাবে। আর হ্যাঁ, ওর চুল বেঁধে কপালে টিপ পরিয়ে দেবে একটা। কারুর কথা শুনবে না। ওর ভাই শুধু ওর একার। সুমনার ভাই যেমন শুধু সুমনার।

    ড্রয়িং খাতাটা টেনে নেয় তুলি। ভাইয়ের ছবি আঁকবে একটা এখন, তারপর আসল ভাই এলে সবাইকে চমকে দেবে ছবি দেখিয়ে।

    ***

    নাঃ!

    ছবিটা মনের মতন হচ্ছে না কিছুতেই। কখনো মাথাটা বড় হয়ে যাচ্ছে, কখনো বা ভুঁড়িটা নাদা হয়ে যাচ্ছে হাতির মতন।

    ইস! কেন যে তুলি ঈপ্সিতার মতন ছবি আঁকতে পারে না!

    ছবিটা বরং পরে শেষ করা যাবে। ঘুম পাচ্ছে খুব।

    ড্রয়িং খাতায় মাথা রেখে শুয়ে পড়ে তুলি।

    ***

    ছোট্ট মিষ্টি একটা ভুঁড়ি আর একজোড়া নীল চোখ এখন তুলির দিকে তাকিয়ে।

    -- মিঁয়াও!

    চোখ জোড়ার মালিক তুলিকে বলছে কোলে নিতে! কি আবদার!

    ভাই কি বেড়ালছানা হয়ে গেছে? মা কি ভাইকে তাই চিনতে পারছে না?

    মা না পারুক, তুলি পেরেছে। ভাইকে কোলে নিয়ে এখন অনেকক্ষণ চটকাবে তুলি।

    কিন্তু কিছুই করতে পারলো না তুলি। ওর চোখের সামনে ওর ভাইকে মুখে তুলে ছিনিয়ে নিয়ে গেল রেমো, এ'পাড়ার কুখ্যাত গুণ্ডা হুলো।

    ***

    ধড়মড় করে উঠে বসলো তুলি।

    ভয় করছে -- এত ভয় যে বমি বমি পাচ্ছে।

    মা-কে খুব, খুব দরকার এখন, দরকার মায়ের কোলে মুখ গুঁজে মায়ের চুলের গন্ধ নেওয়া।

    ***

    শোবার ঘরে কার গলা? মামুর? কখন এল মামু?

    আবার কাঁদছে মা। আর মা-কে জড়িয়ে ধরে মামু বলছে, "কাঁদিস না, দিদি, কাঁদিস না। বল এছাড়া আর কি করার ছিলো আমাদের?"

    মামুর পাশে বাবা। শাড়ির খুঁট দিয়ে চোখের জল মুছতে মুছতে বাবার দিকে তাকালো মা:

    -- তুলিকে বলেছ?



    অলংকরণ (Artwork) : অলংকরণঃ রাহুল মজুমদার
  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)