তখন শহরে ছিল একটাই সাপের মত লম্বা রাস্তা -
আঁধি উঠলে সেটাও থাকত না, আমাদের বাস ঘ্যাঁচ করে দাঁড়িয়ে যেত যমুনার চিকচিকে জল থেকে কয়েক হাত দূরে।
বাস থেকে মাটিতে নামলে আর উঠতে পারব না জানতাম সবাই
কিন্তু সে সব নিষেধ উপেক্ষা করে হুড়মুড়িয়ে নেমে পড়ত ধুলোর দুহিতারা
জলে পা ভেজাবার লোভ সামলাতে না পেরে।
এগিয়ে যাওয়ার আগে আমরা শেষবারের মত "বিদায়", বলতে গিয়ে দেখতাম
বালিতে তাদের পায়ের ছাপগুলো দৌড়োচ্ছে আমাদের সঙ্গে
আর তারা নদীর নীচে ব্রীজের শিকল ধরে ঢেউয়ের মধ্যে
ডুব দিতে গিয়ে বিষম খেতে খেতে এক কোমর জলে দাঁড়িয়ে পড়ছে।
বাস চলতে শুরু করত -
আরাবল্লীর পাশ দিয়ে এঁকে বেঁকে যাওয়া রাস্তাটায়
আঁধির কুড়িয়ে আনা উন্মত্ত ওড়নাগুলো বাবলার ডাল থেকে সরিয়ে
আমাদের হৃদয় চলে যেত রিজের দুর্গম গভীর কাঁটাগাছের অরণ্যের ভিতর
যেখানে ঠান্ডা পুকুরের নীচে গত বছর থেকে শুয়েছিল একটা পরী।
তার খোলা চোখ দুটো তখন আমাদের নিষ্পলক দেখতে দেখতে সূর্যের সঙ্গে পিছলে নামছে টিলার পিছনে
হিন্দুরাও হাসপাতালের দিকে... পরিত্যক্ত হনুমানের মন্দিরে ঢুং ঢাং কেন?
অস্বস্তির সঙ্গে বাজতে শুরু করেছে রাজস্থানী মহিলার হাতের ঘন্টা।
সন্ধ্যে হল। হরপ্পার প্রাচীন ধংসাবশেষের গলি অতিক্রম করে
আমরা বাড়িতে ঢুকবার সময় বারবার ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে নিয়েছি কেউ পিছু নিয়েছে কিনা -
হঠাৎ দরজা খুলে মা আর মামিমা একসঙ্গে চেঁচিয়ে উঠল - এই তোদের সঙ্গে ওরা কারা!
তখন পিছন দিকে না তাকিয়েও জানতাম গলির অন্ধকার দেয়ালের পাশে দাঁড়িয়ে আমাদের দেখছে ধুলোর প্রতিমারা
যারা তাদের পথে ছেড়ে না আসার জন্য অনেকবার সেধেছিল।