হরেন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী তাঁর ‘THE COOCH BEHAR STATE AND ITS LAND REVENUE SETTLEMENTS’ গ্রন্থে জানিয়েছেন, ১৮১৯ সালের আগে ইউরোপীয় চিকিৎসা পদ্ধতির প্রচলন কোচবিহারে হয়নি। ১৮৪১ সালের মার্চ মাসে মহারাজা শিবেন্দ্র নারায়ণ তাঁর এবং রাজদরবারের জন্য একজন চিকিৎসকের আবেদন করেছিলেন ভারত সরকারের কাছে। সেসময় কোচবিহারে ডাক্তাররা আসতে চাইতেন না দূরত্ব, চাকরিজনিত নিরাপত্তা, বেতন ইত্যাদি কারণে। কিছুদিন পর কাজে যোগ দিলেন মেডিক্যাল কলেজের উজ্জ্বল ছাত্র শ্যামাচরণ সরকার। ১৯৪২ সালে মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে তিনি নিযুক্ত হলেন। ১৮৪৬ সালে মহারাজা আবার একজন ইউরোপীয় ডাক্তারের জন্য আবেদন করলেন, যিনি তাঁর সঙ্গে থাকবেন বেনারসে। ভারত সরকারের থেকে প্রেরিত হলেন ডাক্তার র্যা লফ মুর। বেতন ৩৫০ টাকা। মহারাজা শিবেন্দ্র নারায়ণ বেনারসে যখন মারা যান, তখন তিনি সেখানেই ছিলেন। হরেন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী জানাচ্ছেন— “Babu Syama Charan Sarkar continued to be the resident physician in Cooch Behar, till his lamentable end by suicide in October 1863. Babu Bhagavati Charan Mukherji was appointed Sub Assistant Surgeon in May 1864, and was succeeded by Babu Bireswas Palit in November 1868.” (HARENDRA NARAYAN CHAUDHURI (COMPILED BY), ‘THE COOCH BEHAR STATE AND ITS LAND REVENUE SETTLEMENTS’, PRINTED AT THE COOCH BEHAR STATE PRESS, COOCH BEHAR, 1903, PAGE- 341)
১৮৪২ সাল থেকে কোচবিহারে চিকিৎসকের উপস্থিতি থাকলেও কোনো চিকিৎসালয় গড়ে ওঠেনি। তার জন্য অপেক্ষা করতে হয় দু-দশকেরও বেশি সময়। ১৮৬৫ সালে দেশীয় ডাক্তার বাবু হরিচরণ সেনের দায়িত্বে কোচবিহার গড়ে ওঠে প্রথম ডিসপেনসারি। ১৮৬৯-৭০ সালে চিকিৎসাব্যবস্থার ক্ষেত্রে আমরা দেখি একজন সাব-অ্যাসিস্টেন্ট সার্জেন, দুজন দেশীয় ডাক্তার ও চারজন কম্পাউন্ডারকে। সেইসময় কোচবিহার সদরে আরো পুলিশ, মিলিটারি ও জেল হাসপাতাল ছিল বলে জানতে পারছি আমরা। হাসপাতাল সহায়ক পরিচালনা করতেন দাতব্য চিকিৎসালয়টি, যাকে সাহায্য করতেন একজন দেশীয় চিকিৎসক। ১৮৭৩ সালে সিভিল সার্জেন পদ তৈরি করা হয় এবং যোগ দেন টমাস ব্রিস্কো।
কোচবিহার সদরের বাইরে প্রথম চিকিৎসালয় গড়ে ওঠে দিনহাটায়। ১৮৭৩ সালের ১৩ জুন বহিঃবিভাগ চালু হয়। ১৮৭৪-৭৫ সালে রোগীরা সেখানে ভর্তি হতে থাকেন। খুব তাড়াতাড়ি আমরা অন্যান্য অঞ্চলেও ডিসপেন্সারি গড়ে উঠতে দেখি। হরেন্দ্রনারায়ণ চৌধুরীর দেওয়া সাক্ষ্য অনুযায়ী, ৯ আগস্ট ১৮৭৪ সালে মেখলিগঞ্জে, একইবছর ২৮ সেপ্টেম্বর মাথাভাঙায় চিকিৎসালয় গড়ে ওঠে। ১৮৮৫ সালে ১ জুন হলদিবাড়িতে সাহায্যপ্রাপ্ত ডিস্পেন্সারির পথ চলা শুরু হয়। ফুলবাড়ির ডিসপেন্সারি অনুমোদিত হয়েছিল ১৮৮৮-৮৯ আর্থিক বর্ষে কিন্তু চিকিৎসা শুরু হয় ১৮৯৮ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে। কলেরা, বসন্ত প্রভৃতি মহামারি জাতীয় রোগ ছাড়া প্রাথমিকভাবে কম মানুষই চিকিৎসাকেন্দ্রে আসতেন। জ্বর, প্লীহা, বাত, চর্মরোগ, গলগণ্ড প্রভৃতি রোগে মানুষেরা ভুগতেন। রোগীদের পরিসংখ্যান নিয়ে মূল্যবান আলোচনা করেছেন হরেন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী। ১৮৯৯-১৯০০ সালে সমস্ত রোগ মিলে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল – ২১২২২ জন। এরমধ্যে জ্বর, প্লীহা, বাত বা শ্লেষ্মা, চর্মরোগ, গলগণ্ডে আক্রান্তের সংখ্যা যথাক্রমে—৪৭২৬, ৭৯২, ৬০৫, ১৮০৫, ৬০৮। (দ্র. ‘রাজ্য কোচবিহারের রাজকাহিনী’, হরেন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী, অনুবাদক- ড. নৃপেন্দ্রনাথ পাল, অণিমা প্রকাশনী, ডিসেম্বর ২০১৪, পৃ: ১৮৮) ১৮৯৭-৯৮ সাল নাগাদ বাংলাদেশে ১, ৬০, ৩৩০ জন পিছু একটি করে ডিস্পেনসারি ছিল। সেখানে কোচবিহারে ছিল ৯৬, ৪৭৮ জন পিছু একটি।
আমরা ১৯১৯-২০ সালে কোচবিহারে কলেরা রোগ সংক্রান্ত কিছু তথ্য উদ্ধার করছি।
পুলিশ স্টেশন ও আউটপোস্ট | আক্রান্ত | মৃত | সুস্থ |
তুফানগঞ্জ পু: স্টে | ৫৩ | ৪১ | ১২ |
কোতোয়ালি ,, | ২০১ | ১৪৪ | ৫৭ |
দিনহাটা ,, | ২৯ | ১৯ | ১০ |
মাথাভাঙা ,, | ২২৪ | ১৬১ | ৬৩ |
শীতলখুচি আউটপোস্ট | ৩৭ | ২১ | ১৬ |
মেখলিগঞ্জ পুলিশ স্টেশন | ৫৩ | ৩৮ | ১৫ |
হলদিবাড়ি ,, | ৩০১ | ২৪৫ | ৫৬ |
সর্বমোট | ৮৯৮ | ৬৬৯ | ২২৯ |
১৯১৯-২০ সালের প্রশাসনিক বিবরণে কলেরা রোগে আক্রান্ত সন্দেহজনক রোগীর কথা পুলিশকে দেখতে বলা হয়েছে। এবং মেডিক্যাল অফিসার দ্রুত ব্যবস্থাগ্রহণ করবে, যাতে মহামারির প্রাদুর্ভাব না ঘটে। ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসাকেন্দ্রে কুইনাইন দেবার ব্যবস্থা ছিল। ফৌজদারি আহিলকারের অফিস থেকে কুইনাইন বিতরণে আশানুরূপ উন্নতি না হওয়ায় সিভিল সার্জেন পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, ম্যালেরিয়ার প্রতিরোধে হাটে হাটে স্বাস্থ্যকর্মীদের সহায়তায় কুইনাইন দেওয়া যেতে পারে। জেলের বন্দীদের দিকে রাজপ্রশাসনের সতর্ক দৃষ্টি ও সাপ্তাহিক কুইনাইন বিলি করে ম্যালেরিয়াকে অনেকটাই সামলানো গিয়েছিল। এই রিপোর্টেই লেখা হচ্ছে—“The remarkably low number of small-pox cases inspite of epidemic in some parts of Bengal especially in Calcutta, was due to the introduction in January last of special measures for the prevention of the disease with an expenditure of Rs. 2500. The Principal measures were :--
(1) appointment of temporary Medical Officers for the Quarantine of passengers coming up to Cooch Behar through stations Dinhata, Cooch Behar, Changrabandha and Haldibari,
(2) appointment of special constables to help the Medical Officers for the purpose.
(3) the building of temporary huts for the segregation of suspected cases close to each of the stations mentioned above, and
(4) introduction of thorough vaccinationand re-vaccination, especially in Dinhata and Sudder Sub-divisions, and disinfection and segregation of cases as promptly as possible on the notification of an out-break in any locality before the desease could spread in an epidemic form.” (P. 35-36)
প্রসঙ্গত, ১৮৯৮-৯৯ সালের বিবরণে পাই, কলকাতায় প্লেগের প্রাদুর্ভাব হলে গীতালদহ ও হলদিবাড়িতে কোচবিহার রাজ্যে আগত যাত্রীদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা হয়েছিল। এই জন্য চারজন কনস্টেবল ও একজন ডাক্তার নিযুক্ত হয়েছিলেন রাজসরকার থেকে। কলকাতা থেকে আগত কোনও যাত্রীকেই আটক করা বা বিচ্ছিন্ন করা হত না। তবে তাদের আগমন সংবাদ যেত ফৌজদারি আহিলকারের কাছে। এইবছরই রেলযাত্রার সময় একজন নেটিভ ডাক্তারকে নিযুক্ত করা হয়েছিল যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য।
কলেরায় গ্রামের পর গ্রাম জনশূন্য হয়ে যেত। বন্যার পর পর কলেরার প্রভাব বেশি হত। ১৮৮৭-৮৮ সালের অ্যাডমিনিস্ট্রেশন রিপোর্টে সিভিল সার্জেন Dr. J. L. Hendly প্রদত্ত ‘SPECIAL CHOLERA REPORT’ উদ্ধৃত হয়েছে। মহামারির ইতিহাস, রোগীর পরিসংখ্যান ও চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্বন্ধে বিশদ তথ্য মেলে এই প্রতিবেদন থেকে। মহামারি প্রতিরোধে অতিরিক্ত নেটিভ ডাক্তার ও কম্পাউণ্ডার নিযুক্ত করা হয়েছিল সেসময়। শুধু তাই নয় প্রচুর পরিমাণে ওষুধ তুলে দেওয়া হয়েছিল পুলিশের হাতে। এখনকার মতোই কেউ আক্রান্ত হলে চৌকিদারেরা দ্রুত জানাতেন এবং স্বাস্থ্যদপ্তরের কর্মচারীরা সেই গ্রামে পৌঁছে যেতেন। জলের থেকে যেহেতু কলেরা ছড়ায়, তাই পানীয় জলের সুব্যবস্থার ওপর বিশেষ লক্ষ্য ছিল। জরুরি পরিস্থিতিতে নর্টনের টিউব ওয়েল মজুত থাকত। পুলিশ ও মিলিটারিদের জন্য কোচবিহারে ছিল আলাদা দুটি হাসপাতাল। জেলের বন্দিদের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হত মহামারির সময়। জেলের ভেতর ও বাইরের দেওয়ালে কীটনাশক ছড়ানো হত। ভ্রাম্যমান চিকিৎসাকেন্দ্রের উল্লেখ পাই রিপোর্ট থেকে। আর আশ্চর্য হই এটা ভেবে যে, এতটা সময়ের ব্যবধানেও কিছু কিছু বিষয়ের কী আশ্চর্য মিল!
এখন যেমন নতুন নতুন জায়গায় করোনা হাসপাতাল গড়ে উঠেছে, তেমনি ১৮৯৩ সালে মহামারি আকারে ম্যালেরিয়া দেখা দিলে টাকাগাছে অস্থায়ি চিকিৎসাকেন্দ্র গড়ে তোলা হয়। জনসচেতনার জন্য স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ক বাংলা পুস্তিকা বিতরণের সংবাদ পাওয়া যায় বিশ শতকের প্রথম দশকেই। গ্রামের পণ্ডিতেরা ছাত্রদের এই বিষয়ে পাঠ দিতেন। রায় দীননাথ সান্যাল বাহাদুরের ‘সরল স্বাস্থ্যপাঠ’ পাঠ্য ছিল। ১৮৯৭ সালে চিকিৎসক দুর্গাদাস গুপ্তের সম্পাদনায় ‘স্যানিটেশন’ বিষয়ে ইংরেজি পত্রিকা প্রকাশের তথ্য জানিয়েছেন ঐতিহাসিক স্বপনকুমার রায়।
মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণ ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে আসামে শিকার করতে গিয়ে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। আর ১৮৮৪ সালে মহারাজা, মহারানি ও রাজরাজেন্দ্রনারায়ণ একইসঙ্গে টাইফয়েডের কবলে পড়েন। এবং সুস্থ হয়ে ওঠেন। কিন্তু ১৮৯০ সালে কলেরায় আক্রান্ত হয়ে বেনারসে মারা গিয়েছিলেন নৃপেন্দ্রনারায়ণের পিতামহী মহারানি কামেশ্বরী দেবী। বুঝতেই পারছি হাজার সতর্কতা সত্ত্বেও রোগের থেকে রেহাই পেত না রাজপরিবারের সদস্যরাও।
কোনও অনুষ্ঠান থেকে ব্যাপকহারে রোগের সংক্রমণ তখনও ঘটেছে। ১৯২৭ সাল নাগাদ বারুণী মেলা থেকে দিনহাটা ও অন্যান্য মহকুমায় কলেরা ছড়িয়ে পড়েছিল। আক্রান্ত ৫১১ জনের মধ্যে ৩৩২ জন মারা যায়। সেবছর ৫২৭টি বাড়ি ও ৪৫২টি কূপকে স্যানিটাইজ করা হয়েছিল। ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে প্রতি বছর হাজার হাজার কুইনাইন ট্যাবলেট বিনামূল্যে বিতরণ করা হত। এবং অবশ্যই ছিল টিকাকরণ কর্মসূচি। মানুষকে বুঝিয়ে ভ্যাকসিন দেবার কাজও কম কঠিন ছিল না। ১৯৩৪-৩৫ সালের অ্যাডমিনিস্ট্রেশন রিপোর্টে পাই ভ্যাকসিন সুপারিনটেনডেন্ট ডাক্তার জসিমউদ্দিন আহমেদ, বীরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, রাধাচরণ কর্মকার এবং কম্পাউন্ডার চন্দ্রমোহন রায়, জগদীশ্বর চক্রবর্তীর কথা। কোচবিহার টাউন কমিটির পক্ষ থেকে আলাদাভাবে ভ্যাক্সিনেটর নিযুক্ত হন। সফলভাবে ভ্যাকসিন প্রয়োগের মাধ্যমে মহামারি অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত হয়েছিল। ধারাবাহিক প্রশাসনিক প্রতিবেদনগুলি দেখলেই তার সমর্থন মেলে।
১৯৪৭ সালের ৪ঠা মে মহারাজা জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণের চেষ্টায় যক্ষ্মা হাসপাতাল স্থাপিত হয়েছিল। মূল শহর থেকে দূরে সংক্রামক রোগের জন্য চিকিৎসাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার ঘটনাকে বর্তমান পরিস্থিতিতে নিশ্চয়ই নতুনভাবে দেখা যেতে পারে। দুর্গাপুজোতে মহামারির প্রকোপের সংবাদ পাই ‘পরিচারিকা নব পর্যায়’ পত্রিকার ‘সাময়িকপ্রসঙ্গ’ বিভাগে—“এবারে মহামায়ার আগমন হইয়াছিল মহামারী লইয়া। আশ্বিনের শেষে ওলাউঠা দেখা দিয়াছিল সহরে ও মফঃস্বলে। সরকারের অক্লান্ত চেষ্টা সত্ত্বেও তাহার প্রকোপ অগ্রহায়ণের প্রথমেও প্রশমিত হয় নাই। সহরে থামিলেও মফঃস্বলে আজও তাহার জের চলিতেছে। মৃত্যুআতঙ্কে অধিবাসীবর্গ এরূপ হইয়াছিল যে পূজার উৎসব-আনন্দে কেহই যোগ দেন নাই। অনেকেই সহর পরিত্যাগ করিয়া অন্যত্র গমন করিয়াছিলেন,--যাঁহারা ছিলেন তাঁহাদের আলোচনার বিষয়ই হইয়াছিল ‘আজ আবার কার কিব (?) হইল!’ কোচবিহারে সহরে ‘দেবী বাড়ী’তে দেবীপূজা উপলক্ষে প্রতি বৎসর মেলা হয়—এবার তাহা হইতে পারে নাই, তোর্ষা নদীতে ‘ভাসান’ হয়, নদীর দু’ধারে কলেরা—কাজেই প্রতিমা বিসর্জ্জন হইয়াছিল একটি বৃহৎ সরোবরে। জ্বরেও লোকে কম ভুগে নাই, জ্বরে প্রাণহানী হইয়াছে কম কিন্তু কাহিল করিয়াছে রোগীকে খুব,-- এবারকার জ্বরের দৌর্ব্বল্যই প্রধান লক্ষণ।” ( ৮ম বর্ষ, ১ম সংখ্যা ; অগ্রহায়ণ ১৩৩০, পৃ: ৭০) জনমানসে রোগ সম্পর্কে সচেতনতার অভাব বরাবরই ছিল। একই সংখ্যায় পাচ্ছি—“শীত পড়িয়াছে,--এখনও কন্কনে নয়, -- সহরের স্বাস্থ্য ক্রমেই ভাল হইতেছে কোচবিহারে যে বৎসর শীত বেশী পড়ে, স্বাস্থ্যও সে বৎসর ভাল হয়।
গো-মড়ক এবারে সর্ব্বত্র। সর্ব্বদিকে হাহাকার! ধনেপ্রাণে মরিয়াও যে আমাদের চেতনা জাগ্রত করিতে সমর্থ হইবে কি দেবতা ! মুখে হাহাকার কিন্তু অন্তরে যে ঘোর নিদ্রা-অলস ভাব রহিয়াছে তাহা(?)। কোথায় দুঃখ নিবারণের চেষ্টা? ওলাউঠায় প্রাণ যায় ! আতঙ্ক অস্থির ! কিন্তু স্বাস্থ্যের নিয়ম পালনে যত্নবান কম ব্যক্তিই ! রোগ যে এরূপ সংক্রামক ব্যাপ্ত হয়, আমাদের অসাবধানতা, অজ্ঞতা ও দারিদ্র্যই তাহার মুখ্য কারণ। লোক বুঝাইলেও বুঝিতে চায় না—যিনি বুঝেন তিনিও জ্ঞান অনুযায়ী আচরণ করেন না। প্রাণ দিবেন তথাপি আলস্য ত্যাগ করিবার হাঙ্গামা পোহাইবেন না! আমরা জানি এই মহামারীতেও জল ফুটাইয়া পান করেন নাই অনেকেই। খাদ্যাদি রীতিমত ঢাকিয়া মক্ষিকা প্রভৃতি হইতে রক্ষা করেন নাই প্রায় পনের আনা অধিবাসী। রোগ হইলেও সাধারণের মধ্যে গোপন করিতে চেষ্টা পাইয়াছে প্রায় অর্দ্ধেক লোক,--এ অবস্থায় রোগের প্রসার হইবেই ত ! চিকিৎসা বিভাগ মহামারীর সময়ে বহু পরিশ্রমে রোগপ্রশমনের প্রয়াসী হইয়াছিলেন—বহু উপদেশ অস্থানে অযাচিতভাবে দান করিয়াছিলেন। অকর্ষিত হৃদয়ে কি ফল ফলে ! মহামারী হউক আর নাই হউক—সংক্রামক রোগের মূল—তাহার ব্যাপ্তির কারণ—তাহার হস্ত হইতে পরিত্রাণের উপায় অধিবাসীদিগের হৃদয়ে অঙ্কিত করিয়া দিতে না পারিলে সামগ্রিক ফল লাভের আশা কম !
পাড়ায় পাড়ায় হইয়াছে কালীপূজা—নিজের প্রাণের আতঙ্কে ছাগের প্রাণ লইয়া প্রসাদ পাইয়া ধন্য হইবার আশা থাকিলেও কয়েকটি রোগের কারণ হইয়াছিল রাত্রিজাগরণ ও পাঁঠাপ্রসাদ, উৎসবে আতঙ্ক দূর হয় সত্য কিন্তু সেই সঙ্গে শরীরের উপর অত্যাচার হয় যদি মা কালী কি রক্ষা করেন—তাঁহারই নীতি যে অনাচারী অত্যাচারকে পরিত্রাণ নাই!” (পূর্বোক্ত) ‘পরিচারিকা নব পর্য্যায়’ থেকে আরেকটি বিবরণ উল্লেখ করলে মহামারির চালচিত্র স্পষ্ট হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস—“তুফানগঞ্জ ও সদরমহকুমার স্থানে স্থানে আজও কলেরা চলিতেছে। সরকার হইতে রোগ নিবারণের জন্য কম চেষ্টা হইতেছে না—তথাপি একস্থানে না একস্থানে কলেরা লাগিয়াই আছে। এই সংক্রামক ব্যাধিতে বহু লোক অকালে প্রাণ হারাইল। অধিবাসীবর্গ আতঙ্কে দিশাহারা হইয়াছে কিন্তু রোগপ্রতিকারের চেষ্টা তাহাদের কমই। সাধারণের মধ্যে অনেকেই ওলাউঠাকে অপদেবতার কোপদৃষ্টি মনে করিয়া রোগী ছাড়িয়া পলাইতেও দ্বিধাবোধ করে না। অনেক স্থলে মৃত ব্যক্তি ঐ অবস্থাতেই পড়িয়া থাকে, সরকারী লোককে তাহাদের সৎকারের ব্যবস্থা করিতে হয়। পান ভোজনাদি সম্বন্ধেও অনেকেই সাবধান নয়। দেখা গিয়াছে একটি বাড়ীর অধিকাংশ ব্যক্তি এককালে ওলাউঠায় আক্রান্ত হইয়াছিল। ইহাদের মধ্যে কয়েকটির মৃত্যু ঘটিলে পরিবারের অন্যান্য ব্যক্তিরা অন্যত্র পলায়ন করিয়া প্রাণরক্ষার চেষ্টা করে। ইহাদের কয়েকজন সহরের নিকট এক বাড়ীতে আশ্রয় লইয়া ছিল। তথায় ইহাদের একজন ওলাউঠায় আক্রান্ত হইলে অবস্থা বুঝিতে পারিয়া সঙ্গীরা পলায়ন করে। অবশেষে সেই রোগীকে সরকারী হাসপাতালে লওয়া হয়। তথায় তাহার মৃত্যু হইয়াছে। এইরূপে ক্রমে ক্রমে রোগবীজ গ্রামে গ্রামে সংক্রামিত হইয়াছে। অধিবাসীবর্গের মনের এই আতঙ্ক ও কুসংস্কার দূর করিতে না পারিলে কেবল চিকিৎসার দ্বারা রোগ সংক্রমণ নিবারণের আশা কম। অনুসন্ধানে জানা গিয়াছে উক্ত বাসস্থানের নিকটবর্ত্তী একটি পঙ্কিল ডোবার জল ব্যবহারের ফলেই এককালে এতগুলি লোক ওলাউঠায় আক্রান্ত হইয়াছিল। গ্রামের অধিবাসীবর্গ প্রাণ ভরে আতঙ্কিত হইলেও ঐ ডোবার জল যে, রোগের কারণ তাহা বোধহয় বিশ্বাস করেন নাই। কেন না সরকার পক্ষ হইতে ডোবার জল ব্যবহারের বিপদ সকলকে বুঝাইয়া দিয়া বারবার নিষেধ করা হইলেও গ্রামের অধিবাসীবর্গ সুযোগ পাইলেই সেই জলই ব্যবহার করিয়াছে। ওলাউঠার কারণ, কিরূপে এই দুরন্ত ব্যাধি সংক্রামিত হয় তাহার বিবরণ, কি কি উপায় অবলম্বন করিলে এ ব্যাধিকে দূরে রাখা যায় তাহা নিরক্ষর অধিবাসীবর্গকে বুঝাইবার চেষ্টা করিলে—তাহাদের মনে তাহা গাঁথিয়া দিতে পারিলে তবে যদি এ রোগের প্রীতিকর হয়। এ দেশে ওলাউঠার প্রাদুর্ভাব পূর্ব্বে বড় ছিল না ইহার প্রকৃতি সহিত এদেশের কৃষকগণ কমই পরিচিত। তাহারা ইহাকে ‘দেও’ বলিয়াই জানে ও দেওয়ের প্রসন্নতা লাভের জন্য ওঝার সাহায্যে পূজা দিয়াই আত্মরক্ষা করিতে চায়। এ বিশ্বাসটী তাহাদের মন হইতে দূর করিতেই হইবে। কলেরার রোগীকে বিশেষ ভাবে দেখিয়া ঔষধের ব্যবস্থা প্রয়োজন, এ রোগে রোগীর অবস্থার পরিবর্তনও অল্প সময়ে ঘটে। গ্রামে গ্রামে ঘুরিয়া সরকারী ডাক্তারগণের পক্ষে রোগীর নিকটে সর্ব্বদা থাকিয়া এরূপ ভাবে ব্যবস্থা করা সম্ভবপর নয়। আমাদের মনে হয় সরকার হইতে ধারক-ঔষধ স্থানীয় পঞ্চায়েতের নিকট রাখিলে সুফল ফলিতে পারে। পেটের অসুখে বা ওলাউঠা আক্রান্ত হইবা মাত্রই যদি ক্যাম্ফার বা ক্লোরোডাইনের ব্যবস্থা হয় তাহা হইলে অনেক লোক রক্ষা পাইবে। রোগের মুখে একটা ঔষধের ব্যবস্থা হইলে পরে রোগ সঙ্কটাপন্ন হইবার পূর্ব্বেই সরকারী ডাক্তার গিয়া উপযুক্ত ব্যবস্থা করিতে পারেন।” (৮ম বর্ষ ৬ষ্ঠ সংখ্যা ; বৈশাখ ১৩৩১, পৃ: ৩৯১-৩৯২)
মহামারিতে কৃষক পরিবারগুলির আক্রান্ত হবার প্রসঙ্গ ও সেই সূত্রে ফসল উৎপাদন কমে যাবার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে উঠে এসেছে ‘The Annual Administration Report of the Cooch Behar State for the year 1887-88’-এ। শুধু তাই নয়, লেখা হচ্ছে—“We continued to watch how far emigration of ryots from the State to the Duars went on during the year. The number of families that left the State was less than 200 ; on the other hand there were some new settlers in the State… The flights mostly take place from the northern portions of Pergunnahs Cooch Behar and Mathabhanga. It is note-worthy that very few people go away from Tufangunj, in which the sub-infeudation system is not in full force.” (page : 7)
রাজন্যশাসিত কোচবিহারে স্বাস্থ্যবিভাগে যারা কর্মরত ছিলেন, তাঁদের সম্বন্ধে কিছু তথ্য পাচ্ছি ‘The Cooch Behar Desk Gazetter FOR THE YEAR 1935.’ থেকে—
Name | Designation | Date of Birth | Date of appointment |
Sjt Dineshananda Chakravarti, L.M.S | Civil Surgeon | 19-10-1877 | 25-9-1907 |
,, Jaladhar Mittra, L.M.S | Assistant Surgeon | Sept. 1887 | 15-1-1916 |
,, Monmatha Nath Guha | Sub-Assistant Surgeon | April 1881 | 1-11-1904 |
Moulvi Mobarakuddin Ahmed | ,, | Jany. 1888 | 20-9-1911 |
Sjt. Basanta Kumar Roy | ,, | June 1881 | 1-10-1921 |
,, Upendra Sankar Sarbadhyakshya | ,, | 1898 | 10-1-1923 |
,, Pramatha Kumar Neogy | ,, | 3-3-1884 | 1-1-1925 |
,, Radha Charan Karmaker | ,, | 5-7-1900 | 12-7-1925 |
,, Dhirendra Kumar Chakravarti | ,, | Decr.1903 | 1-8-1927 |
,, Probodh Chandra Ghosh | ,, | 25-1-1904 | 1-10-1927 |
,, Bejoy Kumar Mitra | ,, | 1899 | 1-10-1927 |
,, Birendra Nath Bhattacharjee | ,, | 1-3-1903 | 17-10-1927 |
Moulvi Sayadar Rahaman | ,, | July 1892 | 15-9-1931 |
Srijukta Provabati Das | Midwife, Sudder | ... | 30-12-1932 |
,, Sarat Kumari Devi | Nurse, Sudder | ... | 17-10-1927 |
,, Taru Bala Chatterjee | ,, | ... | 13-5-1934 |
,, Parul Rani Ghatak | ,, | ... | 19-10-1934 |
,, Malancha Dasi | Female Dresser | ... | 1-5-1934 |
Sjt. GatiNath Bose | Male, Nurse | 1879 | 27-7-1900 |
MoulviKhoshMamud | Head Compounder | 1886 | 1-12-1905 |
Sjt. SatishChandra Mitra | Compounder | Oct. 1886 | 11-5-1906 |
,, Aswini Kumar Dey | ,, | May, 1890 | 28-7-1908 |
,, Hem Ch. Bhattacharji | ,, | 1894 | 15-4-1921 |
,, Mon Mohan Seal | ,, | 1891 | 15-7-1914 |
,, Chandra Mohan Roy | ,, | 1-8-1893 | 29-7-1917 |
,, Mohim Chandra Das | ,, | Octr. 1889 | 1-1-1915 |
,, Nabin Chandra Sarkar | ,, | 17-7-1901 | 1-3-1921 |
,, JagadiswarChakravarti | ,, | 10-12-1902 | 1-3-1923 |
,, JogendranandaChakravarti | ,, | 1902 | 1-7-1924 |
,, Jatindra K. Chakravarti | ,, | 1901 | 1-10-1931 |
,, Umesh Chandra Das | ,, | 1901 | 16-8-1924 |
,, NagendraNathDey | ,, | 1902 | 8-4-1927 |
,, Aswini Kumar Chakravarti | ,, | 12-5-1908 | 2-7-1932 |
,, JasodaLal Roy | ,, | 2-9-1907 | 5-8-1932 |
,, Madhab Chandra Dey | ,, | April, 1895 | 17-9-1916 |
Office. | |||
,, Birendra Mohan Bose | Head Clerk | 5-5-1897 | 1-11-1918 |
,, DevendraNath Karjee | 2ndClerk | 1-3-1904 | 16-3-1927 |
MoulviJasimuddin Ahmed | Vaccination Supdt. | 1-3-1904 | 16-3-1927 |
‘কোচবিহার দর্পণ’ পত্রিকায় চিকিৎসা সংক্রান্ত বিভিন্ন সংবাদ থেকে কয়েকটি উদ্ধৃত করছি—
কুচবিহার দরবার রাজ্যময় চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতির জন্য সর্ব্ববিধ ব্যবস্থা অবলম্বন করিতেছেন। চিকিৎসা বিভাগের কার্য্যকারিতা বাড়াইবার জন্য সম্প্রতি এই বিভাগের পুনর্গঠন করা হইয়াছে। চারি জন নূতন এসিষ্টান্ট্ সার্জন নিযুক্ত করা হইয়াছে। ঔষধ এবং যন্ত্রপাতি ক্রয়ের বরাদ্দ উদারভাবে বর্দ্ধিত করা হইয়াছে।(৮ম বর্ষ ৪র্থ সংখ্যা, শ্রাবণ ১৩৫২)গ্রামাঞ্চলে সরকারী সাহায্যপ্রাপ্ত ডিস্পেন্সারী সমূহের অবস্থার বহুল উন্নতিসাধন করা হইতেছে। সহর ও গ্রামাঞ্চলে ম্যালেরিয়া, বসন্ত ও কলেরা রোগের প্রাদুর্ভাব নিবারণ কল্পে রাজ্যময় নানাবিধ রোগনিবারণ ব্যবস্থা অবলম্বিত হইয়াছে। এইজন্য বর্ত্তমান বৎসরের বাজেটে প্রায় দুই লক্ষ টাকা ব্যয় মঞ্জুর করা হইয়াছে।
সম্প্রতি সংবাদ পাওয়া গিয়াছে যে মেজর বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় এম্-বি, ডি-পি-এইচ ডি-টি-এম্ কুচবিহার রাজ্যের হেল্থ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত কর্ম্মচারীরূপেও কার্য্য করিবেন। মেজর মুখোপাধ্যায় শীঘ্রই তাঁহার পদে যোগদান করিবেন।
কুচবিহার রাজ্যে ম্যালেরিয়া নিবারণের জন্য কুচবিহার রাজ্যের হেল্থ অফিসারের অধীনে কয়েকজন কর্ম্মচারী নিযুক্ত করিয়াছেন। ইহাদের সহায়তায় রাজ্য হইতে ম্যালেরিয়া দূর করার চেষ্টা হইতেছে। এই কর্ম্মচারীগণের মধ্যে একজন সাব- এসিস্ট্যান্ট সার্জ্জন, একজন ল্যাবরেটরী এসিষ্ট্যান্ট, একজন মশককীট সংগ্রাহক, একজন কেরানী প্রভৃতি আছেন। বর্ত্তমান বৎসরের বাজেটে এই জন্য কুড়ি হাজার টাকা মঞ্জুর করা হইয়াছে।(৮ম বর্ষ ৭ম সংখ্যা, কার্ত্তিক ১৩৫২)
কুচবিহার হইতে কুষ্ঠরোগ দূরীকরণের নিমিত্ত কুচবিহার দরবার এই রোগ নিবারণের একটি পরিকল্পনা মঞ্জুর করিয়াছেন। এই পরিকল্পনা অনুসারে এখনই কার্য্য আরম্ভ করিবার জন্য দরবার বর্ত্তমান কুষ্ঠাশ্রমে একটি কুষ্ঠচিকিৎসালয় খুলিতেছেন এবং রাজ্যের কুষ্ঠাক্রান্ত ব্যক্তিদিগের সংখ্যানির্ণয়ের ব্যবস্থা করিতেছেন। এই ব্যাধির বিস্তার আয়ত্তাধীনে রাখার নিমিত্ত রাজ্যে একটি কুষ্ঠ-উপনিবেশ স্থাপন করা দরবারের অভিপ্রায়।(৯ম বর্ষ ৯ম সংখ্যা, পৌষ ১৩৫৩)
সম্রাটের যক্ষ্মা নিবারণী তহবিল—এই তহবিলে অর্থসংগ্রহ করে বিগত ৭ই আগষ্ট রাজধানীর ল্যান্সডাউন হলে প্রসিদ্ধ হাস্যরসিক শ্রীযুক্ত রমণীমোহন ঘোষাল মহাশয়ের অভিনয়ের আয়োজন হয়। দর্শক সংখ্যা অত্যধিক হইয়াছিল। টিকেট কিনিয়াও অনেককে বাহির হইতে ফিরিতে হইয়াছিল। অভিনয় ভালই হইয়াছিল।(১ম বর্ষ ৯ম সংখ্যা, ২রা ভাদ্র ১৩৪৫)
কাটাও ব্যাধি—মাথাভাঙ্গার হাকিমের রিপোর্টে প্রকাশ মাথাভাঙ্গা মহকুমার উত্তরাংশে কাটাও নামে এক অভিনব ব্যাধির প্রাদুর্ভাব হইয়াছে। রোগের লক্ষণ হইতে মনে হয়—বাঙ্গলার ঝিন্ঝিনি আর এ কাটাও এক রকম ব্যাধি। ডাক্তারী পরীক্ষায় জানা গিয়াছে—ইহা বায়ু প্রকোপ স্নায়বিক বিকার,-- ভয়ই ইহার মূল কারণ! কোন কারণে দুর্ব্বল নরনারী অসুস্থ বোধ করিলে ভয়ে কাটাওর কথা মনে আসিবা মাত্রই কাটাও পাইয়া বসে,--জল ঢালিয়া ঠাণ্ডা করিলে ইহাতে উপকার হয়! সকলকে বুঝাইয়া দেওয়া আবশ্যক—কাটাও কোন ব্যাধি নয়,--ভয়ে মনের অসুখ—সাহস রাখিলে কাটাও ত্রিসীমানায় আসিতে পারিবে না।(১ম বর্ষ ৭ম সংখ্যা, ২রা শ্রাবণ ১৩৪৫)
এবার শীতের প্রারম্ভের সঙ্গে সঙ্গে খারিজা বালাডাঙ্গা, ভুতকুড়া, গতামারী, পঞ্চাধ্বজী, দাসিয়ারছড়া, রুইয়ারকুঠী প্রভৃতি গ্রামে কলেরার প্রাদুর্ভাব হইয়াছিল ও তাহাতে বহুলোক মৃত্যুমুখে পতিত হইয়াছে। সদর হইতে নবনির্ম্মিত ভ্রাম্যমান চিকিৎসাগার (Travelling Dispensary) একজন ডাক্তারসহ দিনহাটা মহকুমার চিকিৎসার জন্য প্রেরিত হয়। এক্ষণে এ মহকুমার একটিও কলেরাক্রান্ত ব্যক্তি নাই। ব্যাধি দেখা দিবামাত্র রোগ প্রতিকার ও রোগ বিস্তৃতি নিবারণের সুবন্দোবস্ত হইলে প্রাণহানির সম্ভাবনা কম।শ্রীহরেন্দ্রনাথ রায়
(১ম বর্ষ ১৭শ সংখ্যা, ১লা পৌষ ১৩৪৫)
কুচবিহারে কলেরা ও বসন্ত রোগের চিকিৎসার জন্য পৃথক কোন হাসপাতালের বন্দোবস্ত ছিল না। কুচবিহার দরবার এইরূপ একটি হাসপাতালের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করিয়া বর্ত্তমান বৎসরের বাজেটে ঐ জন্য অর্থ মঞ্জুর করেন। কুচবিহার সহর হইতে প্রায় তিন মাইল দূরে রাজারহাট নামক স্থানে হাসপাতাল নির্ম্মাণের স্থান নির্ব্বাচিত হয়। গত ১১ই জানুয়ারী বৈকাল ৫ টার সময় মহারাজা ভূপ বাহাদুর স্বয়ং এই হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। রাজ্যের বহু সরকারী কর্ম্মচারী ও বেসরকারী ব্যক্তি এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। জনস্বাস্থ্য ও শিক্ষাবিভাগের মন্ত্রী মহাশয় মহারাজাকে অভ্যর্থনা করিয়া সংক্রামক হাসপাতালের উপকারিতা সম্বন্ধে একটি বক্তৃতা দেন এবং মহারাজা বাহাদুর তাহার উত্তর দেন। বর্ত্তমান আর্থিক বৎসরের মধ্যেই হাসপাতাল নির্ম্মিত হইবে ; ইহার জন্য একলক্ষ তিপান্ন হাজার টাকা ব্যয় বরাদ্দ করা হইয়াছে।(৮ম বর্ষ ১০ সংখ্যা, মাঘ ১৩৫২)
কৃতজ্ঞতা স্বীকার : ড. নৃপেন্দ্রনাথ পাল