• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৮৫ | জানুয়ারি ২০২২ | ভ্রমণকাহিনি, প্রকৃতি, বাকিসব
    Share
  • চাঁদের হ্রদে দু জনে : রাহুল মজুমদার


    কাজা, হোটেল স্পিতির টেরাস থেকে

    ৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, সকাল ১০.৩৫

    চন্দ্রতাল ছেড়ে যেতে মন চাইছিল না, কিন্তু বুড়োবুড়ির আজ কুষ্ঠীতে কাজা গমন লেখা আছে যে-----

    সকাল ১০.৫৬

    চন্দ্রতাল দু জনের মন এতটাই জুড়ে ছিল যে, পাশে পাশে ছুটে চলা চন্দ্রাকে খেয়ালই করেনি। চমক ভাঙল, যখন গাড়ি মূল রাস্তায় পড়ে বাঁয়ে মোচড় মেরে চন্দ্রার সঙ্গ ত্যাগ করল। পথ এখন মোটেই বন্ধু-র মতো নয়, রীতিমত বন্ধুর। দিবস জানাল, লোসার পেরোনো পর্যন্ত এই অনিচ্ছা-নাচন চলবে।

    সকাল ১১.৪০

    চড়চড়িয়ে চড়ছে পথ। চারদিক কেমন থম মেরে রয়েছে।

    ঠিক দুপ্পুরবেলা

    ১৫২০০ ফুট। কুনঝুম পাসে কুনঝুম মাতার মন্দির ঘেঁষে চুপটি করে দাঁড়াল গাড়ি। চার চোর্তেনের কুনঝুম মাতার মন্দিরের অগুনতি রঙীন নিশান ভক্তির মাতনে তুমুল নৃত্যে মেতেছে।

    দুপুর ১২.০৭

    ঠান্ডার দাপটে বেশিক্ষণ ভক্তি বজায় রাখা গেল না। সামনের উতরাইয়ের ডাকে সাড়া দেওয়াটাই উচিত মনে হলো।

    দুপুর ১২.১৭

    টাকচা। ন্যাড়া পাহাড়কে টাক বলে চালানো গেলেও চায়ের চিহ্নও নেই।

    দুপুর ১২.২০

    ঝাঁকুনি চলনের ইতি। লোসার পিচঢালা পথ বিছিয়ে আহ্বান জানাল।

    দুপুর ১.০৫

    হন্সা। হংস চোখে পড়ল না। গোটা দুই ফিঙে দেখা দিয়ে গেল।

    দুপুর ১.২০

    ক্যাটো। ঝটপট কেটে পড়া গেল।

    দুপুর ১.৪২

    প্যাংমো। এবার স্পিতি নদীর সঙ্গী হয়ে চলা।

    দুপুর ১.৪৫

    হল। পেরিয়ে চল।

    দুপুর ১.৫৫

    মোরাং। পথ এখানে বাঁক ঘোরাং।

    বেলা ২টো

    সুমলিং। নদীর ওপারে টংয়ে কী গুমবার ঝাঁকি দর্শন। সামলে সুমলে পেরিয়ে গেলাম।

    বেলা ২.১০

    রংরিক। নদীর ওপার কহিল ছাড়িয়া নিঃশ্বাস, এপারেতে জেনে নাও কাজার আবাস।

    বেলা ২.৩৮

    শেষমেশ স্পিতির আশ্রয়ে---- কাজার সরকারী আবাস। ১১০০০ ফুটে শান্তির আগার।

    ৯ সেপ্টেম্বর, সকাল ৭টা

    ঠান্ডা রুক্ষ প্রকৃতিরও যে এমন সৌন্দর্য হয়, সেটা প্রথম দেখেছিলাম লাদাখে,আবার দেখলাম আজ সকালে। টুরিস্ট লজের টেরাস এখনও সূর্যকিরণের ছোঁয়া পায়নি,তাই ঠান্ডার রাজত্ব কায়েম।

    সকাল ১০টা

    সেজেগুজে তৈরি কী আর কিব্বের দেখার জন্য। দিবসও তৈরি তার রথ নিয়ে।

    সকাল ১০.১৮

    স্পিতি নদীকে নিচে রেখে দৌড়তে দৌড়তে হঠাৎ গাড়ি চড়াই বেয়ে এসে পড়ল কী গ্রামে। বেশ কিছু হোম স্টে গড়ে উঠেছে।

    সকাল ১০.৩৫


    কী গুমবা
    গ্রামকে পিছনে রেখে গুমবা তাক করে বাঁকের পর বাঁক পেরিয়ে গাড়ি এসে দাঁড়াল কী গুমবার গোড়ায় (১৩৫০০ ফুট)। হাজার বছর পুরোনো গুমবা ঘিরে গড়ে উঠেছে আধুনিক গুমবা।

    সকাল ১০.৫৭

    ফিরতি দেখে মন ভরে গেল।

    সকাল ১১.১০

    এবার চলো মন কিব্বের পানে।

    সকাল ১১.২৯

    পেরোলাম চিচাম গ্রাম।

    সকাল ১১.৪০


    কিব্বের
    কিব্বের তাশিগং (১৪২০০ ফুট)। বছরভর মানুষ বাস করে এমন গ্রামের মধ্যে এ নাকি সবচেয়ে উঁচু। এখানেও অনেক হোম স্টে গড়ে উঠছে। লোকজনের হাবভাব, বাড়িঘরের গঠনশৈলীতে স্পষ্ট তিব্বতের ছাপ।

    দুপুর ১২.০৫

    দিবসের গা ম্যাজম্যাজ ভাব। তাই গাড়ি এখন ফিরতি পথে।

    ১২.৪৫

    হোটেলে ফিরেই দিবসকে ঝটপট খেয়ে নিয়ে শুয়ে পড়তে বললাম। বিকেলের বেড়ানো নাহয় না-ই হলো।

    বিকেল ৩.১২

    দিবসের ফোন। ও নাকি এখন চাঙ্গা। আমরা যেন বেরোনোর জন্য তৈরি হয়ে নিই।

    বিকেল ৩.৩৫

    দিবসের স্টিয়ারিং এবার লাংজামুখী।

    বিকেল ৪.২১

    প্রকৃতি এখানে আরও নির্জন। আকাশ মেঘে ঢাকা।নির্মল প্রকৃতিতে দূষণকারী বাহনে চড়ে আমাদের অনুপ্রবেশ করতে দেখেই মনে হয় আকাশ অশ্রু বিসর্জন শুরু করল।

    বিকেল ৪.২৫

    দূর থেকে নজরে এলো লাংজার বিখ্যাত বিশাল বুদ্ধমূর্তি।

    বিকেল ৪.৩০


    লাংজা
    আমাদের দৃঢ়প্রতিজ্ঞ দেখে আকাশ কান্না থামাল আর আমরাও পৌঁছে গেলাম লাংজা (১৪৩০০ ফুট)। ছোট্ট গুমবা আর বিরাট বুদ্ধমূর্তির পটভূমিতে সুউচ্চ তুষারশৃঙ্গমালা।

    বিকেল ৫.২২

    মুগ্ধ হৃদয় নিয়ে ফিরতি পথে।

    বিকেল ৫.৩০

    উপরি পাওনা। একদল বঢ়াল। আনন্দ উপচে পড়ছে।

    সন্ধে ৬.১১

    হোটেলের ঘরে বসে আজকের পাওনার ভাণ্ডার গুনতে বসলাম।

    রাত ৮.২৮

    ডিনারান্তে লেপস্থ হওন।



    অলংকরণ (Artwork) : ছবি : রাহুল মজুমদার
  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)