• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৮৫ | জানুয়ারি ২০২২ | কবিতা
    Share
  • দুটি কবিতা : সুজিত বসু



    মেঘবালিকার সঙ্গে অতীতে


    এখানে আর স্নেহ তো নেই, এখানে নেই মায়া
    আমার কোনো প্রেমিকা নেই, আসে না কেউ কাছে
    মেঘবালিকা কোথায় তুমি, দেখি না কোনো ছায়া
    আমার কিছু লাগে না ভালো, এভাবে কেউ বাঁচে!

    এখানে মায়া মমতা নেই, এখানে নেই প্রীতি
    বর্তমান আমার কাছে রুক্ষ মরুভূমি
    এখানে শুধু হিংসা আছে, ঘটনা পরিস্থিতি
    বিষাদে ভরা, মেঘবালিকা লুকোলে কেন তুমি!

    হয়তো আছে ভবিষ্যতে সোনালি আশা, সুখ
    তীব্র গতি রকেটে চড়ে আলোকবর্ষ পার
    করার পরে ফিরলে দেখা ভবিষ্যতের মুখ
    সম্ভব যে রিলেটিভিটি তত্ত্বে পরিষ্কার

    ফিরলে যদি ধ্বংস দেখি, শ্মশান জুড়ে ছাই
    উষ্ণায়নে, যুদ্ধে যদি হারায় সুখের চাবি
    মেঘবালিকা এখন আমি তাই তো শুধু ভাবি
    চলো না মেঘবালিকা দূর অতীতে ফিরে যাই

    বলবে জানি অতীতে ফেরা শুধুই রূপকথা
    কৃষ্ণবিবর গল্প ছিল, বাস্তবে তা আজ
    আবিষ্কৃত, কিন্তু বাকি অনেক কিছু ঘটা
    ওয়ার্মহোল বা ক্ষুদ্রবিবর একেই নিয়ে কাজ

    বিজ্ঞানীদের আজের দিনে, ভীষণ বেঁকে চুরে
    স্থান ও কাল দুই যেখানে, সেখান দিয়ে গলে
    যেতেই পারি দূর অতীতে, আসতে পারি ঘুরে
    চলো না যাই সবুজ ক্ষেতে পৃথিবী মা-র কোলে

    আবার শুরু করি না হয় চলা সেদিন থেকে
    রুমালচুরি আবার করি, প্রায়যুবতী মুমু
    হতেই পারো আবার তুমি, নতুন করে এঁকে
    জীবনছবি, দিতেই পারো থমকে থামা চুমু

    পদার্থবিদ বলে গেছেন প্রথম অবস্থাই
    ঠিক করে দেয় ভবিষ্যতের সব ঘটনাবলী
    মেঘবালিকা এবার ভুল করার কথা তাই
    ভাবি না, এক সঙ্গে চলো সেদিন থেকে চলি

    এখানে নেই মমতা প্রেম, এখানে নেই স্নেহ
    হিংসা আছে, আতঙ্ক আর ঈর্ষা অশরীরী
    অবিশ্বাসী মানুষ করে কেবল সন্দেহ
    সোনাঝুরির সেই অতীতে চলো এবার ফিরি।


    থেটিসকে অ্যাকিলিস


    জলকন্যা মা আমাকে মোহগ্রস্ত করে রেখে অদ্ভুত এ সীমা
    বৃত্তের আকারে তুমি এঁকেছো, তবুও আজ অতৃপ্তিতে ঘোরে
    অদৃশ্য ছায়ার দল, আমি এ বর্মের দুর্গ দুর্ভেদ্য যদিও
    করেছি তবুও যেন স্বস্তি নেই, আমায় এ অদ্ভুত সমরে
    একচক্ষু সতর্কতা দিয়ে ফেলে চলে গেলে, শোনো কিন্নরী মা
    সারাক্ষণ ভয়ে ভীত মন্থর শামুক আমি, আলোক রশ্মিও
    দুঃসহ তীরের মতো, অজস্র প্যারিস বসে রোদ্দুর বৃষ্টির
    দুর্বিনীত তীর হাতে, কঠিন ধাতব যদি পবিত্র জলের
    স্পর্শের সাহায্যে করো নিজের ছেলেকে, তবে কেন ছদ্মবেশে
    শত্রুকে সুযোগ দিলে! অজেয়তা নষ্ট করে দিলে
    অভিশপ্ত এ বীরের, ঘাসে জমে থাকা কিছু মায়াবী শিশির
    দুর্বল গোড়ালি ভেদ করে আনে পরাজয়, আমাকে নিঃশেষে
    পাথর করেছো যদি, তবে কেন ফেলে রাখো উদার নিখিলে
    প্রাকৃতিক দুর্বলতা, প্রলোভনে নষ্ট কেন করো যে আমার
    রুক্ষতার মোহাবেশ, বহুকাল ধরে আমি সযত্নে বর্মের
    আশ্রয়ে নিমগ্ন আছি সহায় সম্বলহীন, আজ রুদ্ধদ্বার
    উন্মোচনে ভয় হয়, ছায়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে, ছেদহীন রণে
    বড়ো পরিশ্রান্ত আমি, উষ্ণীষ পড়েছে খসে, শরীরে রক্তের
    অবিরল ধারা স্রোত, প্রার্থনার সুর বাজে স্বেচ্ছাচারী মনে
    মুক্তি দিক ধনুর্ধর, অস্তিত্ব ঘুচিয়ে ফিরি তোমার জঠরে।



    অলংকরণ (Artwork) : অলংকরণঃ আন্তর্জাল থেকে
  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)