• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | Jibanananda Das | Poem
    Share
  • A day eight years ago : Jibanananda Das
    translated from Bengali to English by Nandini Gupta








    We hear,
    He has been taken to the autopsy room.
    Last night when the waxing moon
    Sunk into the darkness of the Falgun night
    He chose death.

    Beside him lay his bride, and his child,
    There was love, there was hope
    In the full moon’s light. Yet
    What apparition did he glimpse?
    Why did he wake?
    Or, had he not slept, a million years?
    He sleeps, now, in the morgue.
    This the sleep, he desired?
    He sleeps now,
    Like a rat during a plague,
    Mouth frothing with blood,
    Neck bent, crouched in a dark corner.
    Never to wake again.

    “Never to wake again.
    Never to bear again
    The unceasing relentless burden of
    The torment of knowing."
    As though, a stillness like a camel’s neck,
    Spoke these words through his window,
    In that strange darkness,
    After the moon had set.

    Yet the owl keeps vigil
    The putrid grizzled toad
    Pleads for two extra minutes,
    At the hint of another dawn,
    Loving the promise of warmth.

    I sense the unforgiving hostility of a mosquito net
    Amid the boundless elusion of the milling darkness;
    The mosquito sustains in its cloister, in love with life’s flow.
    From its sanguinary putrid perch the fly darts into the sun,
    In what abundance have I seen the caper
    Of winged insects in golden sunshine!

    The sky a mate, and some diffused life
    Appear to have captured their minds.
    The intense trembling of the dragonfly
    In a mischievous child’s clasp
    Fights death.
    When the moon had set and darkness reigned,
    With a coil of rope you went
    To the ashwathha tree alone.
    Knowing well
    That the life of a dragonfly or a robin
    Would never be a man’s.
    And so in the morgue
    He lies splayed on a table.

    The branch of the ashwathha ---Did it not protest?
    Did not the fireflies throng around the golden flowers, soaking in their calm?
    Did not the decrepit blind owl
    Say, “Has the flood waters swept away that old biddy, moon?
    Marvellous!
    Lets catch a mouse or two.”
    Did not the owl bring these tumultuous tidings?

    The taste of life – the scent of ripening barley on an autumn afternoon
    You found intolerable.
    Did you find solace       in the morgue?
    In the stultifying morgue---
    With lips bloodied like a lacerated rat.

    Listen,
    To this story of a dead man:
    Not laid to waste for want of a woman’s love.
    His wedded bliss left nothing to desire.
    Rising above the times, his beloved brought him
    Rapture, and the mind’s pleasure.
    The agony in winter of the down-at-heel
    Has never set his life shivering;
    And so he lies in the morgue
    Splayed on a table.

    I know, even so, I know:
    Not wealth, not feats, not comfort
    But some other endangered wonder
    Plays inside our blood
    Tires us, wearies us.
    In the autopsy room
    There is no weariness.
    So in the morgue he lies
    Splayed on a table.

    And still, every night I see:
    The decrepit blind owl perches on the ashwattha tree,
    Winks, and says, “Has the flood waters swept away that old biddy, moon?
    Marvellous!
    Let’s catch a mouse or two.”
    O my primal foremother! You marvel even now?
    I too shall grow old, like you,
    Let the flood waters sweep away that old biddy moon
                                             across the Kalidaho
    The two of us will stay on to empty out life’s colossal store.

    Published in Parabaas: April 14, 2022



    আট বছর আগের একদিন
    জীবনানন্দ দাশ


    শোনা গেল লাসকাটা ঘরে
    নিয়ে গেছে তারে;
    কাল রাতে—ফাল্গুনের রাতের আঁধারে
    যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ
    মরিবার হ'লো তার সাধ;

    বধূ শুয়েছিলো পাশে—শিশুটিও ছিলো;
    প্রেম ছিলো, আশা ছিলো—জ্যোৎস্নায়—তবু সে দেখিল
    কোন্‌ ভূত? ঘুম কেন ভেঙে গেল তার?
    অথবা হয়নি ঘুম বহুকাল—লাসকাটা ঘরে শুয়ে ঘুমায় এবার।
    এই ঘুম চেয়েছিলো বুঝি!
    রক্তফেনামাখা মুখে মড়কের ইঁদুরের মতো ঘাড় গুঁজি
    আঁধার ঘুঁজির বুকে ঘুমায় এবার;
    কোনোদিন জাগিবে না আর।

    'কোনোদিন জাগিবে না আর
    জানিবার গাঢ় বেদনার
    অবিরাম—অবিরাম ভার
    সহিবে না আর—'
    এই কথা বলেছিলো তারে
    চাঁদ ডুবে চ'লে গেলে—অদ্ভুত আঁধারে
    যেন তার জানালার ধারে
    উটের গ্রীবার মতো কোনো এক নিস্তব্ধতা এসে।

    তবুও তো পেঁচা জাগে;
    গলিত স্থবির ব্যাং আরো দুই মুহূর্তের ভিক্ষা মাগে
    আরেকটি প্রভাতের ইশারায়—অনুমেয় উষ্ণ অনুরাগে।

    টের পাই যূথচারী আঁধারের গাঢ় নিরুদ্দেশে
    চারিদিকে মশারির ক্ষমাহীন বিরুদ্ধতা,
    মশা তার অন্ধকার সঙ্ঘারামে জেগে থাকে জীবনের স্রোত ভালোবেসে।

    রক্ত ক্লেদ বসা থেকে রৌদ্রে ফের উড়ে যায় মাছি;
    সোনালি রোদের ঢেউয়ে উড়ন্ত কীটের খেলা কতো দেখিয়াছি। ঘনিষ্ঠ আকাশ যেন—যেন
    কোন্‌ বিকীর্ণ জীবন
    অধিকার ক'রে আছে ইহাদের মন;
    দুরন্ত শিশুর হাতে ফড়িঙের ঘন শিহরণ
    মরণের সাথে লড়িয়াছে;
    চাঁদ ডুবে গেলে পর প্রধান আঁধারে তুমি অশ্বত্থের কাছে
    এক গাছা দড়ি হাতে গিয়েছিলে তবু একা-একা;
    যে-জীবন ফড়িঙের, দোয়েলের—মানুষের সাথে তার হয়নাকো দেখা
    এই জেনে।

    অশ্বত্থের শাখা করেনি কি প্রতিবাদ? জোনাকির ভিড় এসে সোনালি ফুলের স্নিগ্ধ ঝাঁকে
    করেনি কি মাখামাখি?
    থুরথুরে অন্ধ পেঁচা এসে
    বলেনি কি; 'বুড়ি চাঁদ গেছে বুঝি বেনোজলে ভেসে?
    চমৎকার!
    ধরা যাক দু-একটা ইঁদুর এবার!'
    জানায়নি পেঁচা এসে এ তুমুল গাঢ় সমাচার?

    জীবনের এই স্বাদ—সুপক্ব যবের ঘ্রাণ হেমন্তের বিকেলের—
    তোমার অসহ্য বোধ হ'লো;
    মর্গে কি হৃদয় জুড়োলো
    মর্গে—গুমোটে
    থ্যাঁতা ইঁদুরের মতো রক্তমাখা ঠোঁটে।

    শোনো
    তবু এ মৃতের গল্প; কোনো
    নারীর প্রণয়ে ব্যর্থ হয় নাই;
    বিবাহিত জীবনের সাধ
    কোথাও রাখেনি কোনো খাদ,
    সময়ের উদ্বর্তনে উঠে এসে বধূ
    মধু—আর মননের মধু
    দিয়েছে জানিতে;
    হাড়হাভাতের গ্লানি বেদনার শীতে
    এ-জীবন কোনোদিন কেঁপে ওঠে নাই;
    তাই
    লাসকাটা ঘরে
    চিৎ হ'য়ে শুয়ে আছে টেবিলের 'পরে।

    জানি—তবু জানি
    নারীর হৃদয়—প্রেম—শিশু—গৃহ—নয় সবখানি;
    অর্থ নয়, কীর্তি নয়, সচ্ছলতা নয়—
    আরো এক বিপন্ন বিস্ময়
    আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে
    খেলা করে;
    আমাদের ক্লান্ত করে,
    ক্লান্ত—ক্লান্ত করে;
    লাসকাটা ঘরে
    সেই ক্লান্তি নাই;
    তাই
    লাসকাটা ঘরে
    চিৎ হ'য়ে শুয়ে আছে টেবিলের 'পরে।

    তবু রোজ রাতে আমি চেয়ে দেখি, আহা,
    থুরথুরে অন্ধ পেঁচা অশ্বত্থের ডালে ব'সে এসে
    চোখ পাল্‌টায়ে কয়; 'বুড়ি চাঁদ গেছে বুঝি বেনোজলে ভেসে?
    চমৎকার!
    ধরা যাক দু-একটা ইঁদুর এবার—'
    হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
    আমিও তোমার মতো বুড়ো হবো—বুড়ি চাঁদটারে আমি ক'রে দেবো কালীদহে বেনোজলে পার;
    আমরা দু'জনে মিলে শূন্য ক'রে চলে যাবো জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার।


    অলংকরণ (Artwork) : Ananya Das
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments