কালের নিয়মে দীনুর বয়স হল। ধীরে ধীরে সে চুরি করা ছেড়ে দিল। এখন সে সংসারে ও কিছুটা ধর্ম-কর্মে মন দিয়েছে। পুজোআচ্চা করে, নাতি নাতনীদের নিয়ে থাকে। তবে মাঝে মাঝে দূর দূর থেকে অল্পবয়স্ক চোরেরা তার কাছে এসে কিছু শিখতে চায়। তাদের সে ফেরায় না। এতে তার নিজের বিদ্যেতেও কিছুটা শাণ দেওয়া হয়৷
এই দীনুর বাড়িতে একদিন গভীর রাতে দরজায় জোরে কড়া নড়ে উঠল। দীনু চমকে উঠে বসল। বাইরে থেকে কেউ গম্ভীর গলায় বলল, দরজা খোল, আমরা রাজবাড়ি থেকে আসছি।
দীনু অবাক হলেও ভয় পেল না। উঠে দরজা খুলল। বাইরে মুশকো চেহারার দুই পেয়াদা দাঁড়িয়ে। তাদের একজন বলল, তোমার নাম দীনু? চলো, রাজবাড়িতে তোমার ডাক পড়েছে।
দীনু বুঝল এদের সঙ্গে বেশি কথা বলে লাভ নেই। সে তৈরী হয়ে নিল। বাড়ির ভিতরে একবার খবর দিয়ে সে বাইরে এসে দরজা টেনে দিয়ে বলল, চলো, কোথায় যেতে হবে।
দীনুর বাড়ি শহরের এক প্রান্তে। নির্জন রাজপথ ধরে দুই পেয়াদার সঙ্গে অনেকক্ষণ হেঁটে তারা রাজপ্রাসাদে এসে পৌঁছল। ঘুমন্ত পুরী, প্রবেশদ্বারে দুই প্রহরী বর্শা হাতে দাঁড়িয়ে। পেয়াদাদের দেখে পথ ছেড়ে দিল। রাজবাড়ির ভিতরের শোভা দেখে দীনু মুগ্ধ, থামে ও দেওয়ালে সুন্দর পাথরের কাজ করা, কুলুঙ্গীতে ঘিয়ের প্রদীপ জ্বলছে। বাতাসে চন্দনের গন্ধ। এ-পথ ও-পথ ঘুরে তারা সুসজ্জিত এক কক্ষে পৌঁছল৷ সেখানেও প্রবেশদ্বারে বর্শা হাতে এক প্রহরী দাঁড়িয়ে, পেয়াদাদের সঙ্গে কথা বলে ভিতরে ঢুকতে দিল। ভিতরে তাকিয়ায় হেলান দিয়ে পক্ককেশ এক বৃদ্ধ বসে। পেয়াদারা তাঁকে হাতজোড় করে প্রণাম করে দীনুকে সামনে এগিয়ে দিল। বৃদ্ধ ইঙ্গিতে দীনুকে বসতে বলে পেয়াদাদের হাত নেড়ে আসতে বললেন। দীনু অনুমান করল ইনি হয়ত মহামন্ত্রী হবেন। এঁর সামনে বসা উচিত হবে না মনে করে সে হাতজোড় করে দাঁড়িয়েই রইল।
একটু পরে মহামন্ত্রী বললেন, তুমি দীনু চোর? চুরিবিদ্যায় খুব হাতযশ?
দীনু সবিনয়ে বলল, আজ্ঞে চুরি করা অনেকদিন ছেড়ে দিয়েছি।
মহামন্ত্রী খানিকক্ষণ তাকে তাকিয়ে দেখলেন। তারপর বললেন, রাজ্যের মঙ্গলের জন্য তোমাকে একটা কাজ করতে হবে। সফল হলে ভাল ইনাম পাবে।
দীনু চুপ করে শুনছিল। মন্ত্রীমশাই বললেন, তুমি বোধহয় শুনেছ আমাদের মহারাজের সংগ্রহে একটি দুর্লভ ও অমূল্য নীলা আছে।
শুনেছে দীনু। সে ঘাড় নাড়ল।
মন্ত্রীমশাই বললেন, কিছুদিন আগে এই নীলাটি চুরি হয়ে যায়৷ আমাদের গুপ্তচর ও সৈন্যরা সারা রাজ্য জুড়ে খোঁজখবর ও তল্লাসি চালিয়েও রত্নটির খোঁজ পায়নি।
কয়েকদিন আগে আমাদের ভিনরাজ্যের এক গুপ্তচর খবর আনে রত্নটি রয়েছে আমাদের পাশের রাজ্য পার্বতীনগরে এক শ্রেষ্ঠীর প্রাসাদে। শ্রেষ্ঠীর নাম চক্রধর, তিনি খুবই ধনী ও প্রভাবশালী। রাজ্যের রাজাও তাঁকে সমীহ করে চলেন। আমাদের অনুমান তিনি কোন তস্করকে নিযুক্ত করে রত্নটি সংগ্রহ করেছেন।
আমরা রাতের অন্ধকারে গোপনে ছোট একটি সৈন্যদল পাঠিয়ে শ্রেষ্ঠীর বাড়িতে হানা দিয়ে রত্নটি উদ্ধার করার কথা ভেবেছিলাম। কিন্তু আমাদের গুপ্তচরের খবর অনুযায়ী শ্রেষ্ঠীর বাড়ি অত্যন্ত সুরক্ষিত, তাই এইভাবে কর্মসিদ্ধি হবে না। দ্বিতীয় উপায় হল কেউ যদি শ্রেষ্ঠীর বাড়ি থেকে রত্নটি ফের চুরি করে আনতে পারে। আমাদের গুপ্তচর তাকে সবরকম সাহায্য করবে।
মন্ত্রীমশাই দীনুর দিকে তাকালেন। তাকে কেন ডাকা হয়েছে এখন পরিষ্কার। দীনু হাতজোড় করে বলল, আমি চুরি করা অনেকদিন ছেড়ে দিয়েছি হুজুর।
মন্ত্রীর ভ্রূ কুঞ্চিত হল। তিনি গম্ভীর গলায় বললেন, রাজার ইচ্ছাই আদেশ, দীনু। তাছাড়া কাজটা করতে পারলে তুমি এত টাকা ইনাম পাবে তোমার কয়েক পুরুষ বসে বসে খেতে পারবে৷
দীনুর মন বিদ্রোহ করে উঠল, কিন্তু সে বুঝল আপত্তি করে লাভ নেই। অগত্যা সে বিরসমুখে বলল, বলুন, আমাকে কি করতে হবে।
মন্ত্রীমশাই তালি বাজালেন। প্রহরীরা ছুটে এল। মন্ত্রীমশাই বললেন, এদের সঙ্গে যাও। এরা তোমাকে আমাদের গুপ্তচর বাহিনীর প্রধানের কাছে নিয়ে যাবেন। তিনি তোমাকে সব বুঝিয়ে দেবেন ও প্রয়োজনীয় সাহায্য করবেন। আর হ্যাঁ, পালিয়ে যাবার চেষ্টা কোর না তা হলে তোমার পরিবারকে শাস্তি পেতে হবে।
কয়েকদিন পরের কথা। পার্বতীনগরে এসে দীনু গুপ্তচর রসময়ের বাড়িতে উঠেছে। রসময়ের কাছ থেকে সে শ্রেষ্ঠীর বাড়ির নকশা ও অন্যান্য তথ্য পেয়েছে। নিজেও একবার রাতের অন্ধকারে রেকি করে এসেছে। দুর্গের মত বাড়িটিকে ঘিরে রয়েছে পরপর দুটি প্রাচীর, দুই প্রাচীরেরই চারিদিক ঘিরে সশস্ত্র প্রহরীরা পাহারা দেয়। রসময় বলেছে এই প্রাচীর দুটি পেরলেও মূল প্রাসাদ ও দ্বিতীয় প্রাচীরের মাঝে রয়েছে একটি প্রশস্ত পরিখা তাতে নাকি হিংস্র কুমীর ছাড়া আছে। রাত্রিবেলা এই পরিখার উপর থেকে সাঁকো তুলে নেওয়া হয়। সব মিলিয়ে মূল প্রাসাদে পৌঁছন প্রায় অসম্ভব। প্রাসাদের মধ্যে আরও কি সুরক্ষা বা পাহারা আছে সে খবর রসময় যোগাড় করতে পারেনি।
এর কয়েকদিন পরের কথা। গভীর রাত্রে দীনু তার সাজ-সরঞ্জাম নিয়ে প্রাসাদে এসে পৌঁছল। আগের দিন রেকি করার সময় সে দেখে গেছে প্রথম প্রাচীর থেকে কিছুটা দূরে ঝাঁকড়া এক অশ্বথ গাছের একটা ডাল প্রাচীরের দিকে কিছুটা ঝুঁকে রয়েছে। দূরত্বটা ঠিক লাফ দিয়ে যাবার মত নয়, তবে চোর হিসাবে দীনুকে অনেক বিদ্যাই আয়ত্ত্ব করতে হয়েছে, তার বিশ্বাস সে পারবে।
দীনু গাছে চড়ে দেখল নীচ দিয়ে প্রহরী ঘন ঘন টহল দিয়ে যাচ্ছে। সে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে থাকল। প্রায় ঘন্টা খানেক পরে দূর থেকে অন্য এক প্রহরীর ডাক শুনে প্রহরীটি একটু অন্যদিকে যেতেই সে গুরুর নাম নিয়ে লাফ মারল। কোনরকমে প্রাচীরের কিনারায় পৌঁছে সে হ্যাঁচড়প্যাঁচড় করে দেয়ালটা আঁকড়ে ধরল। তারপর ডিগবাজি খেয়ে শরীরটা প্রাচীরের উল্টোদিকে নিয়ে ঝুলে রইল। এই মুহূর্তে নীচে কেউ নেই। সে এদিক-ওদিক দেখে নীচে একটা ঝোপ লক্ষ্য করে ঝাঁপ দিল। ঝপ করে শব্দ হ'ল। একটু পরে মশাল হাতে দুই প্রহরী ছুটে এল। সে প্রাণপণে ঝোপে শরীর মিশিয়ে দিয়ে পড়ে রইল। প্রহরীরা দুদিকে দেখতে দেখতে গেল৷ সে আরও কিছুক্ষণ পড়ে রইল। তারপর সন্তর্পণে উঠে চারিদিক দেখল। সে যেমন ভেবেছিল, দ্বিতীয় প্রাচীরে প্রহরীর সংখ্যা তুলনায় কম। একজন এদিকে টহল দিচ্ছে বটে তবে কিছুক্ষণ পর পর। সে তার ঝোলা থেকে লোহার আঁকশি লাগান একটা লম্বা দড়ি বার করে অপেক্ষা করতে লাগল। প্রহরীটি আর একবার ঘুরে চলে যেতেই সে প্রাচীরের মাথা লক্ষ্য করে দড়ি ছুঁড়ল। প্রথমবার হল না তবে দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় আঁকশিটা দেয়ালে গেঁথে বসল। টেনেটুনে দেখে সে দড়ি বেয়ে উঠতে লাগল। উপরে পৌঁছে আঁকশি ও দড়ি খুলে ঝোলায় পুরল তারপর এদিক-ওদিক দেখে আবার ঝাঁপ দিয়ে নীচে নামল। সামনে পরিখার কালো জল। কুমীরগুলো নিশ্চয়ই ঘাপটি মেরে রয়েছে।
সে ঝোলা থেকে কয়েকটুকরো বড় মাংসখণ্ড বার করল। করে যতটা দূরে পারে জলে ছুঁড়ে দিল। জলের মধ্যে হুটোপুটির শব্দ শোনা গেল। কুমীরগুলো ছুটে যাচ্ছে। এই সুযোগ। সে ঝোলাটা পিঠে পেঁচিয়ে নিয়ে জলে ঝাঁপ দিল। সাঁতরাতে সাঁতরাতে সে টের পেল কুমীরগুলো টের পেয়ে ছুটে আসছে। কোনরকমে উপরে উঠে সে দেখল কুমীরগুলো পৌঁছে গেছে, আর একটু হলেই তাকে ধরে ফেলেছিল। সে শ্বাস ফেলল।
সামনে বিশাল প্রাসাদ। চাঁদের আলোয় চারিদিক পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। সিংহদ্বার বন্ধ, সামনে বর্শা হাতে দুই প্রহরী। সে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে থাকল। একটু পরে এক টুকরো মেঘ এসে চাঁদকে ঢাকল, চারিদিক কিছুটা অন্ধকার হল। সে চট করে দৌড়ে প্রাসাদের পিছনে চলে গেল। ভাগ্য ভাল, এদিকে কাউকে দেখা যাচ্ছে না। সে প্রাসাদের ছায়ায় গা মিশিয়ে সন্তর্পণে হাঁটতে লাগল। কিছুটা এসে উপরে তাকিয়ে দেখল প্রাসাদের দোতলায় একটি অলিন্দ দেখা যাচ্ছে। সে ঠাকুরের নাম নিয়ে আবার তার দড়ি ও আঁকশি ছুঁড়ল। উপরে পৌঁছেও গেল। দরজা ভিতর থেকে বন্ধ কিন্তু খোলা তার কাছে সমস্যা নয়। ভিতরে ঢুকে দেখল দুদিকে সারি সারি বন্ধ দরজা, বাইরে প্রদীপ জ্বলছে।
সে অনুমান করেছিল শ্রেষ্ঠী নীলাটি নিজের শোবার ঘরেই রাখবেন। একটি ঘর সে দেখল অন্য ঘরগুলির তুলনায় কিছুটা বড়, সুন্দর কারুকাজ করা দরজা। সে দরজাটি খুলল। ভিতরে বিশাল পালঙ্কে বিছানায় একজন শুয়ে আছেন। আলো-অন্ধকারের মধ্যে তাকে ভাল করে দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু ঘরের এক কোনায় খোলা জানলা দিয়ে চাঁদের আলো এসে পড়েছে। সেখানে বিশাল একটি সিন্দুক। সাবধানে এগিয়ে গিয়ে তার যন্ত্রপাতি বার করে কিছুক্ষণ চেষ্টা করে সে সিন্দুকটি খুলে ফেলল। ভিতরে অন্যান্য জিনিসের সঙ্গে রাখা রয়েছে একটি সোনার কৌটো। সে কৌটোটি খুলল। ভিতরে এই আবছা আলোতেও নীলাভ একটি রত্ন জ্বলজ্বল করছে৷
এইসময় তার পিছন থেকে গম্ভীর গলায় কে যেন বলে উঠল, "দাঁড়াও।"
সে চকিতে ঘুরে দাঁড়িয়ে দেখল, এক বৃদ্ধ তার সামনে দাঁড়িয়ে। বৃদ্ধ পক্ককেশ কিন্তু ঋজু ও বলিষ্ঠ চেহারা। সে বুঝল ইনিই চক্রধর শ্রেষ্ঠী। সে দ্রুত আঘাত করার জন্য হাত উঠাল কিন্তু তার আগেই বৃদ্ধ বিদ্যুৎবেগে তার হাত চেপে ধরেছেন। সে বুঝতে পারল বৃদ্ধ এই বয়েসেও যথেষ্ট শক্তি ধরেন। বৃদ্ধের বলিষ্ঠ মুঠির মধ্যে তার হাত অবশ হয়ে আসছে।
বৃদ্ধ তার হাত ছেড়ে দিয়ে বললেন, উত্তেজিত হয়ো না, তোমাকে আঘাত করা আমার উদ্দেশ্য নয়। তোমার নাম দীনু?
সে অবাক হয়ে বৃদ্ধের দিকে তাকিয়ে রইল। বৃদ্ধ মৃদু হেসে বললেন, তুমি যে আসবে সে খবর আমি নিজস্ব গুপ্তচরদের মাধ্যমে পেয়েছিলাম। আমি ইচ্ছে করলে তোমাকে আটকাতে পারতাম কিন্তু আমি তোমার ক্ষমতা দেখতে চেয়েছিলাম। বলতে বাধা নেই তুমি সাধারণ তস্কর নও। আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই। সব কথা শোনার পরও যদি রত্নটি নিতে চাও আমি তোমাকে বাধা দেব না৷
আজ থেকে অনেক বছর আগে, আমি তখন যুবক, তোমাদের বর্তমান রাজার পিতা আমাদের রাজ্য আক্রমণ করেছিলেন। যুদ্ধে আমাদের পরাজয় হয়েছিল। কিন্তু তোমাদের রাজা রাজধর্ম পালন করেছিলেন, আমরা বশ্যতা স্বীকার করার পর উনি করদানের প্রতিশ্রুতি নিয়ে আমাদের রাজাকে সিংহাসন ফিরিয়ে দিয়ে ফিরে গেছিলেন, রাজ্যের সাধারণ মানুষের কোন ক্ষতি করেননি।
তোমাদের বর্তমান রাজা তখন রাজপুত্র। যুদ্ধে জয়লাভের পর তিনি পিতার অজ্ঞাতে একদল সৈন্য নিয়ে নগরীতে ঢুকে লুঠপাট চালান। তখনই তিনি আমাদের প্রাসাদেও হামলা করে এই নীলা ও আরও বহুমূল্য রত্ন ও সোনাদানা ইত্যাদি লুঠ করে নিয়ে যান।
এই নীলা আমাদের বংশের সৌভাগ্যের প্রতীক ছিল। এটি লুন্ঠিত হবার পর আমাদের পরিবারের ভাগ্যাকাশে দুর্ভাগ্যের কালো মেঘ ঘনিয়ে আসে। এই ঘটনার অল্পদিন পরই আমার পিতৃদেব সামান্য রোগভোগের পর পরলোকগমন করেন। আমার জ্যেষ্ঠভ্রাতা বাণিজ্যসূত্রে বিদেশে গিয়েছিলেন, তিনি আর ফেরেন না।
বৃদ্ধ কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। তারপর ধীরকন্ঠে বললেন, সেই থেকে নানারকম বাধাবিঘ্ন সামলে আমি আমাদের পারিবারিক ব্যবসা চালিয়ে নিয়ে এসেছি। নীলাটির অভাব সর্বদাই অনুভব করেছি। কিন্তু এখন আমি বৃদ্ধ হয়েছি। এই পৃথিবী থেকে বিদায় নেবার আগে আমি আমার উত্তরপুরুষের জন্য নীলাটিকে ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিলাম। অনেক চেষ্টা করে সে কাজে সফল হয়েছি। এখন বিচারের ভার তোমার হাতে।
দীনু অনেকক্ষণ চুপ করে রইল। এই বৃদ্ধের কথা তার হৃদয় স্পর্শ করেছে। তা ছাড়া তাদের মহারাজের হীন প্রবৃত্তির কথা জানতে পেরে সে ক্ষুব্ধ হয়েছে। কিন্তু নীলাটি না নিয়ে সে রাজ্যে ফিরবে কি করে?
বৃদ্ধ তার দ্বিধা বুঝতে পেরে বললেন, তোমার পরিবারকে আমি লোক পাঠিয়ে গোপনে এ রাজ্যে আনিয়ে নিচ্ছি। তোমার পুত্রদের নিজের ব্যবসায় নিয়োগ করব। তুমি থাকবে পরামর্শদাতা হিসাবে। তোমার মত কুশলী লোককে আমাদের প্রয়োজন।
সে বলল, আমাকে একটু ভেবে দেখার সময় দিন।
বৃদ্ধ হেসে বললেন, তুমি আমার অতিথি হয়ে যতদিন খুশি থাকো। ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নাও।
ভেবেচিন্তে শেষপর্যন্ত সে শ্রেষ্ঠীর প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়। শ্রেষ্ঠী কয়েকদিনের মধ্যেই তার পরিবারকে এই রাজ্যে আনিয়ে নেন। তার দুই পুত্র এখন শ্রেষ্ঠীর ব্যবসায় নিযুক্ত হয়েছে। তারা খুশি। দীনু নিজেও দিব্যি আছে। শ্রেষ্ঠী চক্রধর এখন তার বন্ধু হয়ে গেছেন। সে প্রতিদিন সন্ধ্যা বেলা শ্রেষ্ঠীর প্রাসাদে চলে আসে। দুই বৃদ্ধে সুখ-দুঃখের কথা হয়।
অবন্তীপুরের রাজামশাই অবশ্য সব জানতে পেরে অগ্নিশর্মা হয়ে আছেন। শ্রেষ্ঠীকে শিক্ষা দেবার জন্য প্রায়ই পার্বতীনগরের সঙ্গে যুদ্ধের হুমকি দিচ্ছেন। তবে সে অন্য গল্প।