• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৮৬ | এপ্রিল ২০২২ | ভ্রমণকাহিনি, প্রকৃতি, বাকিসব
    Share
  • চাঁদের হ্রদে দু জনে : রাহুল মজুমদার


    তাবো গুম্‌বা


    ১০ সেপ্টেম্বর, সকাল ৯ টা

    আজ কাজা ছাড়ার পালা। উদ্দেশ্য তাবো।

    সকাল ৯.১৮

    একঝলক কাজা গুমবা দর্শন।

    সকাল ৯.৩৮

    কাজা ছাড়ার পর কুড়ি মিনিটে শেগো। আরও এগো।

    সকাল ৯.৪৭

    অত্তরগু। এখান থেকে খানিক এগিয়ে স্পিতিকে টপকে ওপারে পথ গিয়েছে মুদ পানে। আমরা অবশ্য আরও মিনিট দুয়েকের পথ উজিয়ে লিংতি থেকে বাঁদিকের চড়াই পথে চড়ব ধাংকার গুমবায়।

    সকাল ১০.৩৮

    আঁকন বাঁকন পথে চড়তে চড়তেই এসে পড়লাম প্রাচীন ধাংকার গুমবার আঙিনায়। কাছেই গড়ে উঠেছে নতুন গুমবা। ঝকঝকে, কিন্তু পুরোনোর গরিমা তাতে অনুপস্থিত। এখান থেকে শতধাবিভক্ত স্পিতি নদীর বিস্তৃত উপত্যকা যেন ছবি।

    সকাল ১০.৫৮

    অনিচ্ছা সত্ত্বেও নেমে আসতে হলো তাবোর পথে। সামনে শিচলিং চেকপোস্ট।

    সকাল ১১.২৫

    ওহ, এসে পড়েছি অকরুণ প্রকৃতির মাঝে পোহ-তে।

    সকাল ১১.৪০

    পথের দু ধারে আবার গাছপালারা জড়ো হতেই বুঝেছিলাম তাবো এলো বলে। গাড়ি এখন 'হোটেল ট্রোজান'-এর সামনে দাঁড়িয়ে। পাশেই হোটেলের নতুন অংশ তৈরি হচ্ছে; আমরা ২০২ নম্বর ঘরের দখল নিলাম।

    বেলা দুটো

    খেয়েদেয়ে গড়িয়ে নেবার সময় লেপ টানতে হলো। কথা আছে তিনটের সময় হাজার বছরের প্রাচীন গুমবা দেখতে যাব। দিবস হর্ন দেবার আগে থোড়া আরাম তো করতেই পারি।

    বেলা ৩.১৫

    আমরা গাড়িতে বসতেই গাড়ি নড়ল।

    বেলা ৩.২০

    বড় রাস্তা থেকে ডানদিকে ঘুরে তোরণ পেরিয়ে একটু এগোতেই ৯৯৬ সালে মাটি কাঠের তৈরি গুমবা। মূল দ্বার পেরোতেই পিছিয়ে গেলাম হাজার বছর। মাটির চত্বরে দর্শকদের সুবিধার্থে তৈরি হয়েছে পাথরের টাইলসের পথ। গোটা এলাকাতেই প্রাচীনত্বের ছাপ স্পষ্ট। মাটির বাড়িগুলোতে নিচু দরজা। মূল গুমবার ভিতরে অবিশ্বাস্য মাটির রঙীন মূর্তি, ফ্রেসকো আজও অমলিন! সেখানে খালি পায়ে ঢুকতে হয়। গিন্নীর খালিপায়ে চলতে অসুবিধা হয়। ওকে জুতো খুলতে দেখে এগিয়ে এলেন গুমবার নজরদারির দায়িত্বে থাকা দিদি। বললেন, 'তুমি জুতো পরেই যাও, আমি পরিষ্কার করে দেব।'

    পরান ভরে অত্যাশ্চর্য অবিশ্বাস্য শিল্পকর্মের সাক্ষী হলাম। চারদিকের দেয়ালের ফ্রেস্কো কোথাও কোথাও ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বাকিটা যেকোনও মানুষকে স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

    বিকেল ৫.২০

    আকণ্ঠ সমৃদ্ধ হয়ে দুজনে ফিরে এলাম হোটেলে।

    ১১ সেপ্টেম্বর, সকাল ৬ টা


    তাবো গুম্‌বা

    আরেকবার তাবো গুমবা দর্শনে এলাম। সকালের আলোয় তার শান্ত রূপ মন কেড়ে নিল আবারও। সকালের ঠান্ডা মেখে ফিরে এলাম।

    সকাল ৯.৫৫

    ছাড়লাম তাবো।

    সকাল ১০.১০

    এমন তড়িঘড়ি পেরিয়ে এলাম যে, বুঝতেই পারলাম না ইনি তরি, না লরি!

    সকাল ১০.৩০

    চাঙ্গো।

    সকাল ১০.৩৩

    হুড়মুড় করে এসে পড়ল হুরলিং। এখান থেকে বামপন্থী হয়ে আমরা মমি দেখতে যাব। সত্যি, মিশর বা মিউজিয়াম না গিয়েও মমি দেখা যায় — এই স্পিতিতেই। তবে, এই মমি, বৌদ্ধ মমি।

    সকাল ১০.৩৯

    বাঁয়ে ঘুরতেই নির্জনতা জড়িয়ে ধরল। দুদিকের পাহারাদার পাহাড়ের মাঝ দিয়ে বয়ে চলেছে গিউ নদী।

    সকাল ১০.৪৭

    পথের দু ধারে গিউ-র বাড়িঘরের দেখা মিলল বাঁদিকে টিলার মাথায় সুদৃশ্য গিউ গুমবা।

    সকাল ১১.০১

    গ্রাম পেরিয়ে বাঁদিকে বাঁক নিয়েই গাড়িকে থমকাতে হলো — সামনে গাছ ফেলে রাস্তা আটকানো। একটু এগিয়ে পাথরের প্রপাত নেমে পথ উধাও। গিউ গুমবা বুঝি অদেখাই রয়ে গেল।

    সকাল ১১.০৮

    গিন্নীকে পাশের চায়ের দোকানে বসিয়ে পয়দলই চললাম গিউ গুমবা অভিযানে। প্রস্তর-প্রপাতের কাছে গিয়ে দেখলাম, একটা এলোমেলো হালকা পায়ে চলা রেখা। সেটাতে পা রাখতেই পাথরের নানা আকারের টুকরোরা ভয়ানক আপত্তি জানাতে লাগল, ফেলে দেবার চেষ্টায় লেগে পড়ল।

    সকাল ১১.১২

    যাঃ! 'পথরেখা' যে উধাও!! অদূরে অধরা গুমবা। হতাশ হয়ে ফেরার পথ ধরলাম। নেমে আসার মুখে চোখে পড়ল, রাস্তা ধরে আরেকটু এগোলে আরেকটা পথরেখা দেখা যাচ্ছে। সেটা ধরে নড়বড়িয়ে এসে হাজির হলাম গুমবার পিছনে। ছেঁচড়ে শেষটুকু নেমে এলাম গুমবা চত্বরে। মূল গুমবার পাশে একটা ছোট ঘর। তার দেয়ালে মমির বিজ্ঞপ্তি। দরজা ঠেলে ঢুকতেই ৬৫০ বছরের প্রাচীন লামার মমি 'স্বাগত' জানালেন। একরকম আকস্মিক ভাবেই আবিষ্কৃত হয়েছেন লামাজী। তাঁকে সশ্রদ্ধ প্রণাম জানিয়ে খামচে খুমচে নড়বড়িয়ে ফিরে এলাম 'তেনজিং' ভাব নিয়ে।


    গিউ গুম্‌বায় সাঙ্গা তেনজিং-এর মমি

    দুপুর ১২.৪০

    সুমদো।

    দুপুর ১টা

    চ্যাঙ্গো।

    বেলা ২.২০

    পথ ধরে ছুটতে ছুটতে দিবস আমাদের নিয়ে পৌঁছে গেল নাকো — লেক ভিউ হোটেলে। (আশ্চর্যের ব্যাপার, দশ বছর আগে এই হোটেলেই উঠেছিলাম!)


    নাকো, লেকভিউ হোটেলের বারান্দা থেকে


    অলংকরণ (Artwork) : রাহুল মজুমদার
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments