‘এই আলোয় ভরা ঝাঁ-চকচকে ই-দুনিয়া থেকে চলুন আজ এক পলকের জন্য আপনাদের ঘুরিয়ে নিয়ে আসি আমার শৈশবের গ্রাম আর পাঠাশালাটি থেকে।’ লেখক নিজেও জানেন এবং মানেন শৈশবের যে-গ্রামে তিনি পাঠককে নিয়ে যেতে চান, সেই গ্রাম আজ আর সেই মহিমায় নেই। তবু তাঁর বয়ান-চাতুর্যে আমরা আগের (পশ্চিম) মেদিনীপুরের আগরবাঁধ গ্রামের ধুলোমাখা জীবনে পৌঁছে যাই।
আমরা যারা যৌথ পারিবারিক জীবন বা প্রত্যন্ত গ্রাম সমাজে বেড়ে ওঠার সুযোগ পাইনি, তাদের শৈশব জীবন অনেকটাই নিস্তরঙ্গ, একরৈখিক। সেদিক থেকে দেখতে গেলে ‘স্মরচিহ্ন’-এ আমরা খুঁজে পাই যৌথ একান্নবর্তী পরিবার, পশু-পাখি-প্রতিবেশী এবং সমাজবন্ধনে বাঁধা গ্রামীণ জীবনের নানা উত্তেজক স্মৃতি। মানুষ-প্রকৃতি যেখানে গায়ে গা ঠেকিয়ে লগ্ন এবং বাঙ্ময়। লেখক এখান থেকেই আহরণ করেছেন এক ‘সহজ জীবনপাঠ’।
‘অন্যভুবন’ থেকে ‘বাবার কথা’ শীর্ষক ত্রিশটি ছোট ছোট রচনায় মূর্ত হয়ে উঠেছে ‘আদুড় পায়ের ধুলোমাখা শৈশব জীবনের আনন্দ-বিষাদ ঘেরা হীরকদ্যুতি।’
গ্রামজীবন বা আধা শহরে যারা খানিকটা সময়ও কাটিয়েছেন তাঁরা ষাট-সত্তর বছর আগের জীবনপথের কিছু কিছু সাদৃশ্য নিশ্চয় খুঁজে পাবেন কিন্তু লেখকের আশ্চর্য নিপুণ পর্যবেক্ষণ এবং কৌশলী বর্ণনাগুণে তা অসাধারণ তাৎপর্যমণ্ডিত হয়ে উঠেছে। গভীর জীবনবোধ এবং কৌতুকরসে সিক্ত সেই রচনা এক বিরল সাহিত্যের মর্যাদায় উপনীত। লেখক শুধু গ্রামীণ অনুষঙ্গ নয়, প্রায় লুপ্ত হতে বসা, লুপ্ত হয়ে যাওয়া আঞ্চলিক শব্দকে অব্যর্থভাবে গ্রথিত করেছেন তাঁর এই আখ্যানে।
বৃহৎ যৌথ পরিবারে অসংখ্য ছেলেমেয়েরা সেই সময়ে অভিভাবকদের শ্যেনচক্ষুর আড়ালেই বেড়ে উঠতেন। আজকের নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির সবেধন শিশুর সেই স্বাধীনতা নেই। লেখকও সেইভাবে গাছে চড়া, অবাধে সাঁতার কাটার মতো জীবনপাঠ নিয়েছেন, নিজে নিজেই। আর সেইসূত্রেই বাড়ির ‘বাগাল’ বা গোরু চরানোর জন্যে নিয়োজিত রাখাল বালক ‘বদনা’-র সঙ্গে গড়ে ওঠে সখ্য। শুধু তাই নয়, ‘বদনা’-র ‘কালীকাড়া’ নামক মোষের সঙ্গেও সেই সখ্য আকর্ষণীয় রূপ পায়। বদনা এবং কালীকাড়া চুটিতে আসক্ত এবং সিদ্ধ। কিন্তু সেই চুটিতে টান দিতে গিয়ে লেখকের অবস্থা কাহিল। ফলে বদনার বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, ‘ঠাকুর’ মানে লেখক ক’দিন ইস্কুলে যেয়েই কাহিল মেরে গেছে। আর এই অভিঘাতের সঙ্গেই বদনার নানা উপস্থিত বুদ্ধির পরিচয় পেয়ে লেখকেরও বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, ‘ইস্কুলে যায় না বলেই বদনার এত বুদ্ধি।’
চুটি-আসক্ত কালীকাড়া যখন গ্রামে আসা অফিসারবাবুর সিগারেটের ধোঁয়ার গন্ধ পেয়ে অফিসারবাবুকে ধাওয়া করে, তখন অফিসারবাবু আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে ছুটতে থাকেন। লেখক আসল কারণটি জানে বলে অফিসারবাবুর হাত থেকে সিগারেট চেয়ে নিয়ে কালীকাড়ার মুখে গুঁজে দিতেই ‘নিমেষে শান্ত কালী, তার নাকের ফুটো দিয়ে গলগল করে বেরোচ্ছে সিগারেটের ধোঁয়া।’ অপরূপ এই ঘটনার ফল যা দাঁড়ায়, অভিভাবকদের চোখে বদনার ঠাকুর ধরা পড়ে যায়; ফলে ‘বাগান-গুরুর পাঠশালা’ থেকে উৎখাত হতে হয় তাকে, কারণ ‘বাড়ির গাদাগুচ্ছের অভিভাবকদের মধ্যে কারোর একটা খেয়াল হল, আরে এই ছেল্যাটা তো বেশ ডাগর হয়েছে, ইটাকে ইস্কুলে পাঠানো হোক।’
কেমন সে ইস্কুল? ‘ইস্কুল মানে একটা খড়ের ছাউনি, লম্বা মাটির ঘর আর বারান্দা। ছাত্রদের উচ্চারণে সেই ইস্কুলের তিন পন্ডিত হয়েছেন বড়ো পনশয়***, ভব পনশয় এবং ছোটো পনশয়। তিন জন তিন প্রকৃতির। বইয়ের পড়া তেমন না এগোলেও পড়ুয়া লেখক প্রথমেই সেই পনশয়দের পড়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছিলেন। যুক্ত অক্ষরের পাঠ অবশ্য লেখক শিখেছেন ইস্কুলে নয়, বাড়িতে তাঁর বাবার কাছে। শেখার সেই পদ্ধতি ‘অক্ষরের সঙ্গে অক্ষর জুড়ে যে ধ্বনি সমন্বয় শব্দ তৈরি করে এবং সেই শব্দরা যে আমাদের মুখের ভাষার শব্দের অনুরূপ অর্থের আধার’ সেই শব্দ-নির্মাণের কৌশল তার মধ্যে চারিয়ে দিয়েছিলেন তার বাবা। ঘোরতর গান্ধীবাদী, ছাত্র হিসাবে উজ্জ্বল ম্যাথামেটিসিয়ান শেষ জীবনে মানসিক এবং শারীরিক বিপর্যয়ের মধ্যে কাটানো সেই বাবার কথা স্মরণ করলেই আবেগরূদ্ধ হয়ে পড়েন লেখক।
মায়ের প্রসঙ্গ এসেছে ‘উরা’ নামক রচনায়। উরার পরিচয়, সে লেখকদের ধ্বনি মৌজার তিন বিঘা জমির ভাগচাষী শশী লোহারের মেয়ে। যে-শশী, গোস্বামী পরিবারের অনুগত সেবক ছিল সেই একদিন সেই জমির পাট্টা বাগিয়ে মালিক হয়ে ওঠে। শশী লোহারের মেয়ে ঊর্মিলা লেখকের প্রায়ান্ধ, অসহায় মায়ের একমাত্র অবলম্বন হয়ে দাঁড়ায়। লেখক চাকুরিসূত্রে বাইরে, একমাত্র দাদার আর্থিক অবস্থা দারিদ্র্য ঘেঁষা, যৌথ পরিবারও ততদিনে ভেঙেছে, এই অবস্থায় লেখকের মায়ের জীবনের শেষ তিন বছর কেটেছিল উরির বা উরার-র তত্ত্বাবধানে।
লেখক নিজে মায়ের পাশে না থাকতে পারায় কিছু আর্থিক চুক্তিতে উরাকে নিয়োজিত করেছিলেন মায়ের দেখাশোনার জন্য। কিন্তু উরা প্রকৃতপক্ষে আত্মীয়ের অধিক হয়ে সেবা করেছিলেন সেই মায়ের। লেখকের ভাষায়, ‘বার্ধক্য ও অন্ধত্বের অসহায়তায় নিজের রক্তের কাউকে পাশে পাননি তিনি, পেয়েছিলেন উরাকে। তাকেই আঁকড়ে ধরেছিলেন, ছেলেকে বলেছেন — ‘উরা আমার খুব কইরছে বাবা, উ না থাইকলে রাস্তায় কোনোদিন মর্যে পড়্যে থাকতাম। উয়ার জন্য পরের বার একটা ভাল শাড়ি আইনবে।’
লেখক মায়ের কথা রেখেছেন, কিন্তু নিজে মায়ের সেবার দায়িত্ব পালন করতে না পারার অপরাধ ও বেদনাবোধ তাঁকে কুরে কুরে খেয়েছে।
লেখক আর্থিক দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে সেই অপরাধবোধকে সহজেই ডিঙিয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু লেখক এখানে এই আত্মজীবনীমূলক লেখায় নিজের দুর্বলতা ও অপরাধবোধের অর্গল খুলে দিয়েছেন, লেখকের ভাষায় — ‘শেষ সময়ে কোনও ঠাকুরের নাম নয়, কেবলই উরার নাম জপতেন মা। কম বয়সের সাহিত্যপাঠ জাত-বেজাতের ভেদরেখা আমার মন থেকে মুছে দিয়েছিল। মধ্য বয়সে উরা মুছে দিল আপন-পর ভেদ। উরাকে প্রণাম।’ এই স্বীকারোক্তি ‘স্মরচিহ্ন’-কে মহিমান্বিত করেছে। কারণ পাশ্চাত্যে আত্মজীবনীমূলক রচনায় যেমন লেখককে অনর্গল হতে দেখা যায় প্রাচ্যে তার প্রচলন ছিল না। সম্প্রতি অবশ্য লেখকরা এখানেও অনর্গল হতে শুরু করেছেন। ‘স্মরচিহ্ন’-এ তার খানিকটা নিদর্শন দেখা গেল।
‘কালীকাড়া’-র মতোই বাল্যে লেখকের নিত্যসঙ্গী ছিল ‘কেলো’ নামক একটি সারমেয়। ঝিরঝির বৃষ্টির মধ্যে গর্ত থেকে বেরিয়ে আসা কাঁকড়া ধরবার জন্য প্রভুর সঙ্গ নিয়েছিল কেলো। কিন্তু একটি গোখরো সাপের অতর্কিত ছোবলে কেলো মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। লেখকের বর্ণনায় তা অদ্ভুত এক বেদনা-সঞ্চারী অনুভূতি বয়ে আনে — ‘আমি দেখলাম তার বোজা চোখে আটকে থাকা পিচুটি প্লাবিত করে ফোঁটায় ফোঁটায় গড়িয়ে পড়ছে জল আর তার শরীর থেকে থেকেই থির থির করে কেঁপে কেঁপে উঠছে। আর ওঠেনি কেলো।’ মৃত্যুর এই অতর্কিত ছোবল পাঠককে অভিভূত ও শিহরিত করে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’-র মতোই এখনে প্রকৃতির এক রুদ্ররূপ ফুটে উঠতে দেখা যায়।
শুধু তো প্রকৃতি নয়, ভুষিমালের দোকানদারি, মলেদার, আখশাল, হাজামতখানা, গ্রামের গোপনকথার ভাণ্ডারী হিমু মুদি, চিত্তাকর্ষক দুই চরিত্র বুড়ো এবং মথুর,** শচীনন্দন ও তার ঘোড়ার সহমরণ, মৎস্য-প্রজননকারী হাতুড়ে ডাক্তার ভদর, নিরক্ষর অথচ তুখোড় তাস-খেলুড়ে লুড়কা এবং ওনা চরিত্রের মাধ্যমে ছ-সাত দশক আগের গ্রামীণ জীবনের যে-ছবি অর্দ্ধেন্দু তুলে ধরেছেন, তার খানিকটা আমাদের পরিচিত, অনেকটাই অপরিচিত। যেগুলি পরিচিত ছবি, তাও কুশলী বর্ণনায় অপরূপ হয়ে ধরা দেয়।
লেখকের বর্ণনায় পঞ্চাশের দশকের গ্রামীণ জীবনের ‘মেয়েমহল’-এর এক সুন্দর ছবি উঠে এসেছে — মেয়েমহলের প্রথম ভাগ উঠোনসহ রান্নাঘর, দ্বিতীয় ভাগ, ঢেঁকিশাল যদি হয়, তার একটি ঝলমলে তৃতীয়ভাগও আছে। … গ্রীষ্মের দুপুরগুলিই সাধারণত ছিল তাদের চিত্তবিনোদনের তৃতীয় ভাগ।’ সেই ‘ঝলমলে’ তৃতীয় ভাগে হঠাৎ একদিন তিন-চার বছর বয়সী লেখক দেখেন তাঁর মায়ের গা থেকে সব অলঙ্কার খুলে নিয়ে অন্যরকম সাজ দেওয়া হচ্ছে। কৌতূহলী ছোটভাইটিকে তার-সেজদি জানান - মা আঁতুড়ঘরে যাবে, একটা কচি ভাই আসবে। খবরটি জেনে, ‘কেন যেন খুব খারাপ লেগেছিল আমার।’ শিশুমনের আশ্চর্য অনুভূতি আমাদেরও বিদ্ধ করে।
যে বৃহৎ পরিবারে লেখক অর্দ্ধেন্দু বড় হয়েছেন সেখানে ছোটো ছেলের সংখ্যাই ছিল নয়টি। এতেই অনুমান করা যায় পরিবারটির সর্বমোট লোকসংখ্যা কেমন ছিল। সেই পরিবারের এক অত্যাশ্চর্য চরিত্র লেখকের ‘ছা’** মানে জ্যাঠাইমা। ‘ছোটোখাটো’ রোগাপাতলা মানুষটি, গায়ের রঙ চাপা, পাতলা ঠোঁট, পরনে থান, কথা খুব কম বলেন, হাসি দেখা যায় কদাচিৎ। নীরবে বাড়ির এতগুলো ছেলেপুলের খাওয়াদাওয়া, দেখভাল করেন….’ শুধু তাই নয় ‘তিনরকমের ভাত’-ই রান্না করতে হয় তাঁকে বিভিন্ন জনের আব্দারে। অল্পবয়সে বিধবা হওয়া ‘ছা’ চরিত্রটি পাঠক হিসেবে আমাকে এতটাই আবিষ্ট করেছে যে, দীর্ঘ উদ্ধৃতি তুলে ধরা আবশ্যক বলে বিবেচনা করছি। লেখকের কথায় — ‘তাৎক্ষণিক বিচারে বহু ভুল ঠেকে যায়, চিন্তার স্বগম থেকে পরংগমে পৌঁছতে কালের ব্যবধান লাগে। আজ এতখানি দূরত্ব হেঁটে পরিষ্কার বুঝতে পারি সেই জাতির সাধারণ চেহারার দুর্ভাগ্য-পীড়িত শীর্ণ মহিলাটির চরিত্রের মহিমা। এক বিশাল একান্নবর্তী পরিবারের ছোটো-বড় সব সদস্যদের বায়নাক্কা সামলে যে-তৃপ্তি তিনি পেতেন সেটুকুই ছিল তার পরম পাথেয়।’ শাশুড়ি এবং পুত্রবধূর ব্যক্তিত্বের ছায়ায় কাটানো সেই ম্লান জীবন যেন সেকালের একান্নবর্তী পরিবারের প্রাণবিন্দু-স্বরূপ।
বামুন, তেলি এবং খয়রা-বাগদি অধ্যুষিত গ্রামে ‘কলুর ব্যাটা মনু, বাম্ভনকন্যাকে কুপ্রস্তাব’ দেওয়ার অপরাধে অপরাধী, তার কোমরে গোরু-বাঁধার দড়ি দিয়ে বেঁধে হাজির করা হয় বিচারসভায়। আর সেই অমানুষিক ছবি দেখে কিশোর লেখকের ‘সহজ-সরল-আনন্দময় জীবনে’ ঢুকে পড়ে নিষ্ঠুর, অচেনা’ এক জগৎ — তার বোধের মধ্যে শুরু হয় এক ভাঙচুর। আমাদের ‘বাই-সাইকেল থিফ’ চলচ্চিত্রের কথা মনে করিয়ে দেয়।
এইরকম অসংখ্য সমাজচিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন অর্দ্ধেন্দু। সেখানে আশ্চর্য কৌতুকময় বর্ণনার সঙ্গেই হারিয়ে যেতে বসা আঞ্চলিক শব্দভাণ্ডার উজাড় করে দিয়েছেন লেখক। এরকম দু’-একটি নিদর্শন তুলে ধরা যাক—
ক) এমন ফলও (কমলালেবু) তাইলে আছে যেটা পয়সা দিয়ে কিনতে লাগে!
[সহজ জীবনপাঠ]
খ) ধূমপান তরুণদের চুম্বকের মতোই টানত। ধূমপান ছিল তাই শিল্প-সাহিত্য-সঙ্গীত-বিপ্লবের আবশ্যিক অনুপান। তরুণীরা ধূমপানে আগ্রহী না হলেও ধূমপায়ী তরুণে বিশেষভাবে আগ্রহী ছিলেন। তাই ধূমপান অধিকাংশ কিশোরের অনুশীলন-সূচির অন্তর্গত হত।
[কলের গান ও ধূমপান]
গ) খালি পায়ে ঈষৎ খুঁড়িয়ে হাঁটত চিতু (নাপিত) — সবাই বলত ‘কুল-আঁটি’ আছে চিতুর পায়ে।
[হাজামতখানা]
ঘ) আমি তো চিরকালের গেঁয়ো, হাঁ করে ভাবতে থাকি, এরই মধ্যে নখ ছাড়াও আরও কী কী সব গছিয়ে গেল মেয়েদের যে হাজামতখানায় তাদের এত ভিড়!
[হাজামতখানা]
ঙ) ইন্দিরাজির রাজত্বকালে তিনি ‘গরিবি হঠাও’ অভিযান শুরু করেছিলেন; সেটা শেষ করলেন বর্তমান রাজাধিরাজ মোদীজি। কাজেই দেশে আর গরিব থাকার কোনও উপায়ই রইল না।
[শচীনন্দের ঘোড়া]
চ) যিনি ছিলেন অন্তরে একান্ত, তাঁকে এখন অনেকান্ত প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার চেষ্টা হচ্ছে। রামের রাজনীতিকরণ ও দুর্বৃত্তায়ন সম্পূর্ণ হওয়ার পর বাঙালির মধ্যেও রামভক্তির প্রাবল্য দেখা যাচ্ছে।
[ঠাকুরবাড়ির বকুলগাছটি]
ছ) ইঁদুরের সঙ্গে আমার বিউটিশিয়ান-ক্লায়েন্ট সম্পর্ক। ... বেশ কয়েকবার সামান্য খাদ্যের বিনিময়ে ইঁদুর আমার পেডিকিওর সম্পন্ন করে দিয়ে গেছে।
[ইঁদুর-সংসর্গের কথামালা]
এমনতর অসংখ্য দৃষ্টান্ত তুলে ধরা যেতে পারে। বলা হল না ‘খোকন’ এবং ‘একের মধ্যে তিন’ শিরোনামের আশ্চর্য বয়ানের কথা।
জীবন সম্পর্কে নির্মোহ এবং কৌতুকময় তির্যক দৃষ্টি অর্দ্ধেন্দুশেখরের আত্মকথাকে এক আশ্চর্য স্ফূর্তি দান করেছে। এমন একটি স্মৃতিকথা যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি ঈর্ষণীয়ও বটে।
একপর্ণিকা প্রকাশনীর ‘স্মরচিহ্ন’ নামক এই স্মৃতিকথা বাংলা সাহিত্যের ভাণ্ডারে এক বর্ণময় সংযোজন বলে গণ্য হওয়ার দাবি রাখে।