• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৮৯ | জানুয়ারি ২০২৩ | গ্রন্থ-সমালোচনা
    Share
  • গ্রন্থ-সমালোচনা : ভবভূতি ভট্টাচার্য

    || কলের শহর, প্রাণের শহর, গতির শহর—কলকাতা ||


    কলের শহর কলকাতা--সিদ্ধার্থ ঘোষ;আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা; প্রথম প্রকাশ ১৯৯১, দ্বিতীয় মুদ্রণ ২০১৩; ISBN 81-7066-953-7

    গত সাত-আট বছরের মধ্যে এই বইখানি বার চার-পাঁচেক পড়েছি। আর, বিভিন্ন রেফারেন্সে কত কত বার যে এর নানান অধ্যায়ে ফিরে ফিরে এসেছি—-ইয়ত্তা নেই তার।

    তবে, এতোদিনেও গ্র.স. লিখিনি কেন এই প্রিয়গ্রন্থের?

    এ’বইয়ের ‘সমালোচনা’ করি, এমন মুন্সিয়ানা নেই। কিন্তু যেহেতু ‘পরবাস’-এর এই কলামে ‘গ্রন্থ-সমালোচনা’ ছাড়াও ‘গ্রন্থ-পরিচিতি’-ও বেরোয়, তাই এদ্দিনে বুকে বল বেঁধে লিখতে কলম ধরেছি।

    আর, হবে না-ই বা কেন? প্রবাদপ্রতি সিদ্ধার্থ ঘোষ মহাশয় কি যে সে এলেমের মানুষ ছিলেন? ওঁর এই ডোমেইনে ঐ এক অনীশ দেব মহাশয় ছাড়া আর তুলনীয়জন তো কৈ আর খুঁজে পাইনে। এবং সেই ডোমেইনটাই বা কত বিস্তৃত!—— বাংলায় সায়েন্স-ফিকশন লেখা, পপুলার সায়েন্স লেখা, অনুবাদ থেকে আরম্ভ করে গবেষণাগ্রন্থ, সুকুমার রায় চর্চা——যেখানেই স্পর্শ করেছেন সোনা ফলিয়েছেন সিদ্ধার্থ। বহুধাগতিসম্পন্ন প্রতিভাধর লেখক ছিলেন সিদ্ধার্থ, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নিয়েছিলেন যাদবপুর থেকে, মেক্যানিকাল এঞ্জিনিয়রিঙে।

    ***

    বরঞ্চ এই কলকাতা-বিলাস সিদ্ধার্থের একটা কম চর্চিত এলাকা।

    রাধারমণ-রাধাপ্রসাদ থেকে পি টি নায়ার দেবাশিস বসু——দিকপাল কলিকাতা-বিশেষজ্ঞদের তালিকাটা তো কম নয়, তবু সিদ্ধার্থ এই যে কলোনিয়াল কলকাতার টেকনোলজি চর্চার দিকটা বেছে নিয়েছেন—-এটি বড় ইউনিক!

    যেমন ধরুন না অষ্টাদশ শতকের শেষ দিকে খিদিরপুরে বসানো কর্নেল ওয়াটসনের হাওয়াকলের কথা। উইণ্ডমিল! ওলন্দাজী ঢঙে হাওয়া থেকে শক্তি উৎপন্ন করতে একশত চৌদ্দ ফুট উঁচু দুটি কল বসান ওয়াটসন সাহেব, সমগ্র দক্ষিণ এশিয়াতে এর আগে এমন কোনো হাওয়াচাক্কি বসেনি। সে দিক দিয়েও কলকেতা শহর ফার্স্ট। রামমোহনের ষাট বছর আগে প্রথম শিক্ষিত ভারতীয় হিসেবে বিলাত-যাওয়া নদীয়াতনয় মীর্জা শেখ এহতেসামুদ্দীনের ভ্রমণকাহিনীতে এই কলদুটির উল্লেখ আছে।

    কিংবা, তাঁর প্রতিষ্ঠিত এগ্রি-হর্টিকালচারাল সোসাইটির অধিবেশনে উইলিয়ম কেরী সাহেব টিটাগড়ের কামার গোলকচন্দ্রের নিজ ডিজাইনে গড়া স্টিম ইঞ্জিনটি প্রদর্শনের অনুমতি দেন, যেটি দিয়ে অতি সহজে জলসেচের কাজ হতে পারলো। গোলকচন্দ্রকে তাই ভারতের প্রথম ইঞ্জিনিয়র বলতে হবে।

    ভারতের প্রথম বৈদ্যুতিক টেলিগ্রাফেরও জন্ম এই শহর কলকেতার বুকে।

    আইরিশ পলিম্যাথ ও’শনেশি সাহেবের হাত ধরে টরে-টক্কা মেশিন প্রথম এলো ভারতবর্ষে, ডান হাত তাঁর হিন্দু কালেজী শিবচন্দ্র নন্দী , যিনি ছিলেন তাঁর মাতুল রাধানাথ শিকদারের মতোই এক প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তি। এ’তথ্য জানা। যেটা জানা ছিল না, সিদ্ধার্থের এই বই পড়ে জেনেছি, তা হলো এই টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা নিয়ে শ্রীরামপুরের অধিবাসী জনৈক কালিদাস মৈত্র মহাশয় ১৮৫৫তে বাংলাভাষায় এক পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ লেখেন। তার আগের বছর বাষ্পীয় কল ও রেলওয়ে নিয়েও উনি বাংলায় আরেক যুগান্তকারী গ্রন্থ লিখেছিলেন যে দুটি ডিজিটাইজড ফর্মে আজ পাওয়া যায় আর্কাইভ ডট অর্গে।

    প্রথম ভারতীয় এরোনট? সে-ও বাঙালী, এবং এই শহর কলিকাতায়। প্রথম ব্যোমযাত্রী রামচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় যখন বেলুনে চড়ে উড়লেন, বিংশ শতাব্দী পড়তে তখনও বারো বছর দেরি। মধ্য কলিকাতার নারকেলডাঙার এক গ্যাস ফ্যাক্টরিতে তৈরি হয়েছিল এই বেলুনের রসদ। শীঘ্রই কালীঘাটের পটুয়াগণ বেলুন-উড়ানের ছবি এঁকে ফেলতে শুরু করলেন, যার মাধ্যমে সেটা বাঙালীর অনেক নিকট বিষয় হয়ে পড়ল।

    না, এর চাইতে বেশি আর এখানেই বলে দেবো না। সাতাশটি অধ্যায় ধরে জলের কল, গ্যাসের আলো, পাঙ্খা-পুলিং থেকে লেখার কল ও বিশ্বকর্মা মিস্ত্রিমজদুরদের কথা বিধৃত হয়ে রয়েছে এই বইয়ে। সত্যিকারের ‘আনপুটডাউনেবল’ বই কাকে বলে, এ’ বই না হাতে তুলে নিলে বোঝা যাবে না সেটা।

    আর , ঢাইশ’ পৃষ্ঠাব্যাপী এই কেতাবের পাতায় পাতায় কত কত যে ছবি—-তা সে শীল্ডজয়ের বছরে হাওয়াগাড়ির বিজ্ঞাপন হৌক্‌ বা এইচ্‌ বোসের ফোনগ্রাফ বা জগদীশ ঘটকের জলচর সাইকেল —-সেগুলি দেখতে দেখতেই একটা বেলা কাটিয়ে দেওয় যায়।

    তা-ও তো বইটির অনবদ্য ‘পরিশিষ্ট’-টির কথা বলিনি এখনও।

    পনেরটি পৃষ্ঠা জুড়ে ‘দ্বারকানাথের দুটি চিঠি’, ‘দীননাথ সেনের শিল্প-বিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব’, ‘সৈয়দ মীর মহসীনের জরিপ-যন্ত্র’ ‘উপেন্দ্রকিশোর রায়ের হাফ টোন রিসার্চ’-এর মতো অপার ঐতিহাসিক মূল্য সম্বলিত চিঠি/রিপোর্ট ইত্যাদি অরিজিন্যালে দেওয়া রয়েছে। অতুলনীয়! হাতে গোনা কিছু বইয়ে মাত্র এই মানের ‘পরিশিষ্ট’ পড়েছি । কুর্নিশ, সিদ্ধার্থবাবুকে।

    ***

    শেষে একটা কম-জানা ঘটনা লিখে কলম গুটিয়ে নেব।

    জগতবিখ্যাত ‘ডিস্কওয়ার্ল্ড’ ফ্যান্টাসি সিরিজের স্রষ্টা বৃটিশ লেখক টেরি প্রাচেট সাহেবের সঙ্গে সুইডেনের এক সম্মেলনে সিদ্ধার্থের দেখা হয়েছিল। দু’জনেই ঠিক এক-ই বয়সী। হিন্দুপুরাণ থেকে সিদ্ধার্থ তাঁকে শুনিয়েছিলেন ‘দিগ-গজ’-এর কথা—-প্রকাণ্ড এক কূর্মের পৃষ্ঠে অবস্থানকারী সেই অষ্টহস্তী—- থালার মতো চ্যাপ্টা পৃথিবীটাকে যারা ধারণ করে আছে পিঠের উপরে। আমরা জানি, ‘ডিস্কওয়ার্ল্ড’ সিরিজেও ঠিক এমনই কাছিমের পিঠে চার-হাতির ফ্যান্টাসি গল্প শুনিয়েছেন প্রাচেট, যদিও হিন্দুপুরাণের প্রভাবের কথা উনি কোথাও স্বীকার করে নিয়েছেন কি? জানি না।

    তবে, যুগন্ধর লেখক সিদ্ধার্থ ঘোষের ‘কলের শহর কলকাতা’ বইখানিকে আমরা মাথায় করে রাখবো, এটা জানি।


    || নৃমুণ্ডমালিনী, বা শহিদবেদি, বা পদাধিকারে বড়ো ছবি


    আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু—আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়; অনুষ্টুপ প্রকাশনী, কলকাতা; প্রথম প্রকাশঃ জানুয়ারি ২০২২



    আজ এই একবিংশ শতাব্দীর দুই দশক কাটিয়ে এসে যখন ওটিটি বা হোআ বা ফেবু-র মতো বৈদ্যুতিন মাধ্যম চিরাচরিত সিনেমাহল বা পোষ্টকার্ড বা চণ্ডীমণ্ডপের স্থান নিয়ে নিয়েছে, সেখানে নেটে ভাইরাল হয়ে ওঠা একটা লেখা একটি বই-কে নির্মাণ করে ফেলবে—-সেটাই তো বড় কথা। ভাগ্যিস এ’বই বেরিয়েছিল, নৈলে হোআ/ফেবু-তে রাজ করা ঐ ঐ বিপুল-প্রচারী লেখাগুলো হারিয়ে যেত যে! ভবিষ্যতের পাঠক বা গবেষক তাহলে কী করে রাঢ়ের মঠাধীশ গোঁসাইবাবার কথা জানতে পারতো, বা সাধক কবিরাম , বা মফস্বলের ভাইদের কথা?

    হেঁয়ালি না করে ডটে আসি।

    গত বছর সন ২০২১-এর মাঝামাঝি কোভিড অতিমারীর দ্বিতীয় প্রবাহ সারা বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গে ভারতেও যে কী বিপুল প্রাণহানি ঘটিয়েছিল—-এতো শীঘ্র তো তা বিস্মৃত হবার কথা নয় । এই সময়েই বর্তমান লেখক , যিনি পঃবঙ্গের উচ্চতম রাজকর্মচারীও বটেন, দু’এক দিনের ব্যবধানে তাঁর প্রিয় ভ্রাতা ও ভগিনেয়কে হারান ঐ করাল জ্বরে। তার কয়েকদিনের মধ্যে কোটি কোটি বঙ্গভাষী নেটিজেন এক জ্যৈষ্ঠ-প্রাতেঃ তাঁদের হ্যান্ডহেল্ড ডিভাইজে ‘আমরা, মফস্বলের ভাইরা’ নামে এক স্মৃতিচারণা পড়ে আঁখিপল্লব ভিজিয়ে ফেলল। স্মরণকালের মধ্যে কোনো একটা বাংলা লেখা এতোটা ভাইরাল হয়নি। আজকের মার্কেটিং গুরুরা নেটে লেখাটির ‘outreach gauge’ করলে স্তম্ভিত হয়ে যেতেন নিশ্চয়ই।

    বর্তমান বইটির বীজ সেখানেই প্রোথিত ছিল।

    ভাগ্যিস!

    ***

    মৃত্যু, অকালমৃত্যু, শোক ও ব্যক্তিগত শোক——এই এই বিষয় নিয়ে প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ থেকে আধুনিক কবিতায়-গানে কম চর্চা তো হয়নি। কঠোপনিষদে দেখি, ‘অমর’ হবার উদ্দেশ্যে যমরাজের সামনে জাগতিক সকল কামনা-বাসনাকে নস্যাৎ করে দিয়ে চলে এসেছিলেন নচিকেতা; আবার আমাদের কবিই না গেয়ে গেছেন, ‘মরণ রে, তুঁহুঁ মম শ্যামসমান’!

    ***

    আলাপনের পূর্বোক্ত স্মৃতিচারণাটি ভাইরাল হবার দু’মাসের মধ্যে এক বাংলা পোর্টালে ‘মৃত্যু ও শোক’ নিয়ে কথোপকথন করেন প্রেসিডেন্সির দুই দাপুটে প্রাক্তনী——পদার্থবিদ্‌-টার্নড-ইতিহাসবেত্তা শ্রদ্ধেয় শ্রীদীপেশ চক্রবর্তী মহাশয় সুদূর মার্কিন দেশে বসে ভার্চুয়ালি মেলেন কলকাতার আলাপনের সঙ্গে। সুদীর্ঘ এই অনুষ্ঠানটিও নেটে প্রবল ভাইরাল হলো, যেটির হার্ডকপি ‘অনুষ্টুপ’ এখন ছাপিয়েছে এই বইতে। রবীন্দ্রনাথের কন্যাবিয়োগ থেকে সূত্র ধরে ভ্রাতৃবিয়োগের পরেও এই মুখ্যসচিবের অবিশ্রান্ত কাজ করে যাওয়া ——এমনকি ইন্দিরাহত্যার পরের শিখনিধন রাষ্ট্রীয় শোকের সামূহিক বহিঃপ্রকাশ ছিল কি না —-এমন এমন সব স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে অনায়াস আলোচনা চলেছে এখানে। ভবিষ্যতের কোনো গবেষককে বারবার ফিরে আসতে হবে এই ঐতিহাসিক কথোপকথনটির কাছে। তাই এর পুস্তকাকারে প্রকাশ জরুরি ছিল।

    ***

    আর হ্যাঁ, এখানেই ‘মোর্নিং এণ্ড মেলাঙ্কোলিয়া’ বলে একটা ছবি [পৃ. ৫৭] দেখে স্তব্ধ হয়ে যেতে হয়। না, না, ফ্রয়েড সাহেবের সেই দীর্ঘ প্রবন্ধটির কথা বলছি না, এটির তুলিকার বাংলার প্রিয় শিল্পী শুভাপ্রসন্ন, যিনি এই বইটির তৃতীয় কিন্তু লাস্ট-বাট-নট-দ্য-লিস্ট স্থপতি। আলাপন-দীপেশের ভাইরাল লেখা/সাক্ষাৎকার তো আমরা আগেই দেখে/শুনে ছিলাম, কিন্তু সে সেগুলির চিত্রিত রূপ কী করে দেখতে পেতাম শুভা-বাবু অসামান্য ছবিগুলি না এঁকে দিলে? যেমন, ঐ দেখুন না তরবারি হাতে শোকার্ত রাবণ [পৃ ৩০-৩১ ] , বা রুদালী নারীদল [পৃ ৬৪-৬৫ ], বা, ইঁটের শহিদবেদি [পৃ ৬৯ ] । ৯৭ পৃষ্ঠার অনবদ্য ঐ এলোকেশী কালী-মায়ের ছবির ক্যাপশন তো ‘খ্যাপাকালী’ হওয়া উচিত ছিল, ‘নৃমুণ্ডমালিনী’ কেন হলো ভাবতে ভাবতে ৮৫ পৃষ্ঠার ‘বন্দে মাতরম্‌’ ছবি দেখে স্তব্ধ হয়ে গেলাম—-যেন অবনীন্দ্রনাথের চতুর্ভূজা ‘ভারতমাতা’ ছবি দেখছি! কাঁটা দেয় গায়ে।

    এ’ছবির পরে আর কিছু লেখা চলে না।

    কিন্তু বইটির শেষপ্রান্তের ঐ দীর্ঘ ‘অন্ত্য টীকা’ নিয়ে কিছু না বললে অন্যায় করা হবে। পাঁচ বছর আগে ছেষট্টি সংখ্যায় এই লেখকেরই ‘আমলার মন’ বইটির কথা বলতে গিয়েও তার পুঙ্খানুপুঙ্খ পাদটীকা দেখে মোহিত হয়েছিলাম, এখানেও হচ্ছি। [https://www.parabaas.com/article.php?id=3673 ]

    কত যত্ন করে করা!


    || বিস্মৃত লেখকের অনন্য জলযাত্রা ||


    বন্দরে বন্দরে--শচীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়; ‘সাহিত্যবিহার’ প্রকাশনা, কলকাতা; প্রথম প্রকাশ অগাস্ট ১৯৮৬, অষ্টম সংস্করণ জানুয়ারি ২০১৯; ISBN 978-81-931372-3-9

    গল্প-উপন্যাস-কবিতা-নাটক মিলিয়ে অশীতিপর এই লেখকের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ছিল আশির কাছাকাছি! দক্ষিণী মন্দিরের দেবদাসীপ্রথার উপরে আধারিত ওঁর ‘জনপদবধূ’ উপন্যাসটি নাটকরূপে কলকাতার স্টার থিয়েটারে রমরম করে অভিনীত হয়েছে দীর্ঘকাল। অন্তত আর-তিনটি ভারতীয় ভাষায়—-হিন্দি, উর্দু ও মালয়ালমে—- অনূদিত হয়েছে ওঁর উপন্যাস। ‘নীলকণ্ঠ’ অতীন বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া (কিয়দংশে গৌরকিশোর) জাহাজে চাকরি করবার বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আর কোনো বাঙালী লেখকের নাম মনে আসছে না এই মুহূর্তে । ‘প্রবাসী আনন্দবাজার’ এই শচীন্দ্রনাথকে ‘বাংলাসাহিত্যে দিকবদলের রূপকার’ বলে বর্ণনা করেছিল। আলোচ্য এই ‘বন্দরে বন্দরে’ বইটিরই ১৯৮৬ থেকে ২০১৯-র মধ্যে আটটি সংস্করণ বেরিয়েছে। আর হ্যাঁ, এই জাহাজী ভাগ্নী-জামাইটিকে লিখতে, আরও লিখতে ও লিখে চলতে বারংবার উৎসাহ দিয়ে গেছেন স্বয়ং বিভূতিভূষণ , তরুণ শচীন্দ্রনাথ (১৯২০-‘৯৯) ঘাটশিলার কাছে তামার কারখানায় চাকুরি নিয়ে গেলে যাঁর সাথে ‘পথের পাঁচালী’-কারের প্রথম পরিচয়!

    দক্ষিণপূর্ব এশিয়া তথা পলিনেশিয় দ্বীপপুঞ্জে প্রজন্মের-পর-প্রজন্ম বসবাসকারী ভারতীয়-বংশোদ্ভূতদের এতো এতো নিকট থেকে দেখে আর কোনো বাঙালী লেখক লিখেছেন বলে আমাদের তো জানা নেই। এঁরা স্বদেশ ভারতবর্ষকে চোখে দেখেননি কোনোদিন! পরবাস-এর চুরাশি সংখ্যায় ভেরা হিণ্ডেনব্রান্ডের বইটির রিভিউতে যদিও এই প্রসঙ্গটি কিছুটা ছুঁয়ে গিয়েছিলাম বটে [https://www.parabaas.com/article.php?id=8]

    দুঃখের কথা আজ এই ফেবু-হোআ-র জমানায় ভুলে গেছি আমরা কথাশিল্পী শচীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়কে, শেষজীবনে যিনি ছিলেন প. ব. সরকারী তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের এক অধিকর্তা।

    কলেজ স্ট্রিটে বহু ঢুঁড়ে তরশু এ’বইটি হাতে পেলুম।

    ***

    এ’ তো গেল এক অক্ষম মুখবন্ধ, যেটার কোনো দরকার ছিল না।

    তার চেয়ে চলুন শচীন্দ্রনাথের সঙ্গে আমরা জাহাজে ভেসে পড়ি—‘সিংহপুর’ (সিঙ্গাপুর) থেকে ফিজি থেকে সামোয়া থেকে তাহিতি——সুন্দরী পলিনেশিয়া! হ্যাঁ, পার হয়ে যাবেন ‘ইন্টারন্যাশনাল ডেট লাইন’ঃ আরও আরও পুবে গেলে পৌঁছে যাবেন পশ্চিমে, তারিখে পৌঁছে যাবেন এক দিন পিছনে—-সাত থেকে ছয়। সুদূর সুভা বন্দরে দেখা হয়ে যাবে ভারতীয়-বংশোদ্ভূতা বহিনজীর সঙ্গে বা তাহিতিতে ঘাসের ঘাগরা পরা লুইজি সুন্দরীর সঙ্গে । এই এই অঞ্চলে বহু ভারতীয়ের দেখা মেলে স্বদেশ ভারতবর্ষ যাঁদের কাছে এক বিমূর্ত এক অনুভব মাত্র।

    তা বলে কি শুধুই প্রশান্তে প্রশান্তে ঘুরেছেন লেখক? তাহলে নিকোবরের নানকৌড়ি হারবারে গিয়ে কে ‘লেখক’ বলে চিহ্নিত হয়ে যাবেন? আর, আরো পশ্চিমে? আরবদেশের এডেন বন্দরে—-যেটা কিনা ‘বৃটিশ রাজ’-এর অধীনে বম্বের ছোটলাটের খাসতালুক ছিল দীর্ঘকাল—-সেখানেই না সেই ফুলওয়ালীর দেখা পাওয়া—-যার গল্প পড়ে আপনার অবশ্যই ‘The Night Train to Deoli’ মনে পড়ে যাবে। এডেন বন্দর ইংরেজদের খাস তালুক ছিল বলেই না ‘দ্বিতীয় শিবাজী’ বাসুবন্ত ফাড়কে-কে (১৮৪৫-৮৩ খৃ.) সেখানে চিরনির্বাসনে পাঠাতে পেরেছিল ইংরেজ, সিপাহী-বিদ্রোহের পরে সারা মহারাষ্ট্র ও দাক্ষিণাত্য ঘুরে ঘুরে যিনি স্বাধীনতা-সংগ্রামের আলগা সুতোগুলো জুড়ে জুড়ে পুণে অভ্যত্থান ঘটিয়েছিলেন (১৮৭৯ খৃ.)! এডেনে তাঁর স্মৃতিফলকের সামনে অবনতমস্তক হন তরুণ লেখক শচীন্দ্রনাথ।

    আলেকজান্দ্রিয়ায় ক্যাপ্টেন কেনেডি শুধোন শচীন্দ্রনাথকে , কোনো মেয়েকে দেখে ওঁর বুক উথাল-পাথাল হয়েছিল কিনা। হ্যাঁ, অপরিষ্কার গলির শেষে যার কুঠুরিতে গিয়ে তাঁর কাছে পরিচয়ের ঝাঁপি খুলে বসেছিলেন শচীন্দ্র, ——‘আমি সুদূর ভারতবর্ষ থেকে আসা এক লেখক। আমি তোমার কথা শুনতে চাই। ’

    না, পুরো কাহিনিটা এখানে বলে দেবার অবকাশ নেই, না সেটা দোব। তবে শচীন্দ্রনাথের অনায়াস প্রকাশভঙ্গিমা, সাবলীল ভাষা, তরতরে গতিময় গদ্য—-এ’সব অবশ্যই বিশেষ প্রাপ্তি এই রচনাটি থেকে যার গুণগান না গাইলে অন্যায় হবে।

    *

    ১৯৮৮তে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘বঙ্কিম পুরষ্কার’ পায় শচীন্দ্রনাথের এই ‘বন্দরে বন্দরে’ বইটি , যাকে ‘উপন্যাস’ বলতে আপত্তি রাখলাম। অসাধারণ এই লিখনটিকে স্মৃতিকথা বা ভ্রমণকাহিনি হিসেবেই চিহ্নিত করা উচিত, কারণ উপন্যাসের কোনো লক্ষণই নেই এখানেঃ না এখানে কল্পনা (বা, বানানো গপ্প) আছে, না আছে কল্পিত চরিত্র। যথাযথ আপন অভিজ্ঞতার কথা বলে গেছেন শচীন্দ্রনাথ আপন সুপটু ভাষায়। এটি সম্পূর্ণতঃই একটি আত্মজীবনীমূলক স্মৃতিকথন, যার ঐতিহাসিক মূল্য তথা সাহিত্যিক মূল্য অসাধারণ!



    আরেকটি বিষয়ঃ

    বাংলাভাষায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দুটি শীর্ষ সাহিত্য-স্বীকৃতি—— ‘রবীন্দ্র পুরষ্কার’ [১৯৫০ খৃ. ] ও ‘বঙ্কিম পুরষ্কার’ [১৯৭৫ খৃ.] দেওয়া হয় যথাক্রমে ‘সর্বোচ্চ সাহিত্যকীর্তি’ ও ‘সর্বোচ্চ কথাসাহিত্য’-র জন্যে। ইতিহাস বা আয়ুর্বেদের বাংলা বই যেহেতু এক প্রকার সাহিত্যকীর্তি-ও বটে, তাই নীহাররঞ্জনের ‘বাঙালীর ইতিহাস’ বা শিবকালী ভট্টাচার্য মশায়ের ‘চিরঞ্জীব বনৌষধি’-র রবীন্দ্র পুরষ্কার পেতে কোনো বাধা নেই । গল্প-কবিতা-উপন্যাস তো অবশ্যই ‘রবীন্দ্র পুরষ্কার’ পায় —-উদা. সতীনাথের ‘জাগরী’ থেকে অলোকরঞ্জনের ‘ঈথার’। কিন্তু প্রফুল্ল রায়/অমিয়ভূষণ থেকে রবিশংকর বলের ‘দোজখনামা’ উপন্যাস হিসেবেই পেয়েছিল ‘বঙ্কিম পুরষ্কার’, এই ধারা মেনে শচীন্দ্রনাথের এই ‘বন্দরে বন্দরে’-কে ‘বঙ্কিম’ দেওয়া হয়েছিল ‘উপন্যাস’ গণ্য করে। যেখানেই জিজ্ঞাসাচিহ্ন।

    ‘পরবাস’-এর ঋদ্ধ পাঠিকা পড়ে বলুন না এই বুড়ো ভব ভশ্চাজ্জি ঠিক না ভুল? ‘বন্দরে বন্দরে’ উপন্যাস না স্মৃতিকথা?

    দশে আট তো পায়ই এই আত্মকথন!


    || পায়ে পায়ে পঁচাত্তর—-ক্রীড়ার আখ্যান ||


    Journey of a Nation: 75 years of Indian Sports--Chandresh Narayanan; Rupa, New Delhi-2; 2022; ISBN 978-93-5520-410-3

    স্বাধীনতার পঁচাত্তরতম বর্ষ পালনে ভারত সরকারের ‘আজাদী কা অমৃত মহোৎসব’ প্রকল্পে কত ধরনের উদযাপনই না চলছে——কত ইতিহাসচারণ, কত কৃতিত্বের খতিয়ান, কত ‘স্বর্ণিম বিজয়বর্ষ’ পালন ইত্যাদি ইত্যাদি! এরই মধ্যে ক্রীড়াক্ষেত্রটি যেন একটু উপেক্ষিতই থেকে যায়, যদিও তেমন তো হওয়ার কথা নয়, কারণ আজকের এক আধুনিক রাষ্ট্রে কৃষি-শিল্প-বাণিজ্য যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ক্রীড়াও ততটাই; কারণ ন্যাশনাল আইডেনটিটির যতটা প্রকাশ খেলার মাঠে ততটা আর কোথায়?

    তিরাশিতে লর্ডসের মাঠে কপিল ও দলবলের ক্রিকেটে বিশ্ববিজয় ভারতীয় খেলাধূলার চরিত্রটাকেই বদলে দিয়েছিল, নৈলে বাষট্টির এশিয়াডে চুনী গোস্বামীর নেতৃত্বে ফুটবলে সোনা লাভ, বা প্রথম এশিয় নারী হিসেবে ঊনষাটে আরতি সাহার ইং চ্যানেল পেরোনো, বা মিলখা সিং হের সেই স্বপ্নের স্পেল, বা পাড়ুকোনের অল-ইংল্যান্ড জয়—- জাতি হিসেবে বারংবার ভারতীয়দের উজ্জীবিত করে এসেছে । এমনকি ১৯৬০-এ’ বড়লোকদের খেলা টেনিসে রমানাথন কৃষ্ণণ উইম্বলডনের সেমিফাইনালে উঠলে আপিসে আপিসে অর্ধদিবস ছুটি হয়ে গিয়েছিল! তাই না মাঠে জয় একটা জাত-কে যে ভাবে প্রাণিত করে তোলে আর কিছু সেভাবে নয়। আর হ্যাঁ, এ’সবই স্বাধীনতা-উত্তর ভারতীয় ক্রীড়াবিদগণের কীর্তি, এবং প্রি-কপিল যুগের! তিরাশির পরে পরেও ক্রিকেটেতর খেলায় ভারতীয়ের মাইল ফলক—- সে রাঠোর-বিন্দ্রার শ্যুটিং বলো, বা ফেরেরা-বিশ্বনাথনের উপর্যুপরি বিশ্বজয়—- বারেবারে মথিত করে তুলেছে আসমুদ্রহিমাচল ভারতবাসীকে।

    এ’সব নিয়েই এই বই, আর হ্যাঁ, ঐ ৭৫-কে ট্যাগলাইন করেই—-স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে।

    আঠাশটি অধ্যায়ে ব্যেপে হকি, টেনিস, ব্যাডমিন্টন থেকে দাবা, শ্যুটিং প্রভৃতি খেলার উল্লেখযোগ্য মাইলফলক ধরে ধরে এগিয়েছেন লেখক, তবে ক্রিকেটের উপরে জোরটা অহেতুক বেশি (আঠাশটার মধ্যে ন’টাই ক্রিকেটী অধ্যায়)। কিন্তু ফুটবলের উপরে একটাও অধ্যায় নেই একটাও না—-এটা এক ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ! কেন, ছাপান্নয় ওলিম্পিকে ফোর্থ, একান্ন-বাষট্টির এশিয়াডে সোনা বা সাফ গেমসের ফুটবলে অত অত সোনাজয় কি ধর্তব্যের মধ্যে আসে না, চন্দ্রেশ-দা? লেখক চন্দ্রেশ নারায়ণন প্রবীণ ক্রীড়াসাংবাদিক ও সনৎ জয়সূর্যের জীবনীকার কিনা!

    চমৎকার লেগেছে ওলিম্পিকে প্রথম ব্যক্তিগত পদকজয়ী ভারতীয় (১৯৫২) কুস্তিগীর কে ডি যাদবের উপরে অধ্যায়টি, যেখানে এই নিরলস ও নিবেদিতপ্রাণ ক্রীড়াসাধকের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেছেন লেখক। যাদবের ইস্কুলের হেডমাস্টার মশাই নিজের বসতবাটি মর্টগেজ করে সাত হাজার টাকা তুলে দিয়েছিলেন ছাত্র যাতে ওলিম্পিকে যেতে পারে। মনে পড়ে গেল প্রবাদপ্রতিম ক্রীড়াপ্রশাসক পঙ্কজ গুপ্ত মশাইও তাঁর কলকাতার বাড়িটি মার্কারি ট্রাভেলসের কাছে বন্ধক রেখে ১৯৫৬-এ ভারতীয় ফুটবলদলের মেলবোর্ন যাবার এয়ার-টিকিট কিনেছিলেন। প্রদীপের সলতে পাকানো এই সব মানুষই না জ্বলজ্বলে ভাস্বর করে রেখেছেন ক্রীড়াক্ষেত্রকে!

    কত কত ছুটকাহানী (anecdote) এ’ কেতাবে!

    আটষট্টির অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ পাওয়া থেকে ভারতীয় হকির অবনতি শুরু। তাই পঁচাত্তরে ওয়ার্ল্ড কাপ খেলতে যাবার সময়ে কেউ ভারতকে তেমন ধর্তব্যের মধ্যেই আনেনি। ভারত ঝোলাচ্ছিলও বটে গোড়ার দিক থেকে, তবে সেমিফাইনালে শেষ দশ মিনিটে নেমে আসলাম শের খান মোড় ঘুরিয়ে দিলেন খেলার, জেতালেন ভারতকে। কোচ বলবীর সিংহ তাই ফাইনালের দিন সকালে আসলামের সঙ্গে মসজিদে চললেন নামাজ পড়তে। তাই দেখে প্রতিদ্বন্দী পাকিস্তান টিম গেল ভড়কে——‘সর্দার যখন প্রথম নামাজ পড়ছে, আল্লাহ্‌তায়লা তাহলে তো ওর কথাই মানবেন!’ হলোও তাই। ধ্যানচাঁদ-তনয় কলকাতানিবাসী অশোককুমারের গোলে পাকিস্তানকে হারিয়ে কাপ জিতলো ভারত।

    বা,

    অল ইংল্যান্ড ব্যাডমিন্টনে ফাইনাল খেলতে যাবার দিন অব্যবস্থার মধ্যে একটা গাড়ি জোগাড় করতে পারেননি প্রকাশ পাড়ুকোনে। কিট-কাঁধে একে ওকে জিজ্ঞেস করে করে টিউব রেল ধরে ঘেমেনেয়ে কোর্টে পৌঁছলেন। তারপর তো গড়া হলো ইতিহাস। প্রথম ভারতীয় হিসেবে ট্রফি জিতলেন।

    বা,

    তিরাশির ড্রেসিংরুমে সেই গাভাসকার-কপিল মনোমালিন্য ও অভিমান করে সুনীলের বসে যেতে চাওয়া। কিন্তু ভাগ্যিস মার্শালের বলে বেঙ্গসরকরের কয়েকটি দাঁত খুলে এলো, তাই দলের কথা ভেবে মান ভুলে ব্যাট হাতে নেমে পড়লেন সানি।

    ***

    চব্বিশ ও ছাব্বিশতম অধ্যায় দুটি রেখেছেন হালের অলিম্পিক বিজয়ীদের উপরে। বিজেন্দর-গগন-মেরি কম বা নীরজ চোপড়ার উপরে পড়তে পাওয়া বেশ আনন্দের। সবচেয়ে সুখপাঠ্য অধ্যায় সাতাশতমটি, যেখানে মিলখা সিং-পি টি ঊষা-দীপা কর্মকারদের মতো এক চুলের জন্য পদক মিস্‌ করিয়েদের কথা শোনানো হয়েছে। এ’অধ্যায়টি বড়ই মানবিক। খেলা কি শুধুই বিজেতাদের নিয়ে? পরাজিতগণ আছেন বলেই না বিজেতাদের এতো দাম! এখানে গলফার অনির্বাণ লাহিড়ীর কথা রয়েছে কিন্তু কলকাতার বাঙালী শ্যুটার জয়দীপ কর্মকারের নামোল্লেখ নেই দেখে দুখী হলাম। এক চুলের ব্যবধানে লণ্ডন অলিম্পিকে (২০১২) চতুর্থ হন জয়দীপ।

    পুং ক্রিকেটের উপরে অত অত চ্যাপ্টার আর মহিলা-ক্রিকেটের উপরে একটাও নেই?

    প্রবাদপ্রতিম সাঁতারু মিহির সেন বা, শাটলার নান্দু নাটেকরকে যেখানে ভুলে থাকা হয়েছে সেখানে সনিয়া মীর্জাকে নিয়ে অত আদিখ্যেতা করাটা মেনে নেওয়া গেল না। তাঁর হে ডে তেও সনিয়ার র‍্যাংকিং বিশ্বে প্রথম বিশ-পঁচিশে থাকত না।

  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments