• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৯০ | এপ্রিল ২০২৩ | ছোটদের পরবাস | নাটক
    Share
  • পদিপিসির বর্মিবাক্স : কাহিনীঃ লীলা মজুমদার , নাট্যরূপঃ চিরন্তন কুন্ডু



    চরিত্রঃ গুপি, নিধিরাম, পাঁচুমামা, পদিপিসি, রমাকান্ত, বেহারারা, ডাকাতরা, নিমাই, গজা, ঠাকুমা, ছোটোকাকা, বাড়ির লোকেরা, ঘনশ্যাম, সেজোদাদু, দিদিমা, খেন্তি

    প্রথম দৃশ্য

    [আপস্টেজ ট্রেনের কামরা হিসেবে ব্যবহৃত হবে। ফ্ল্যাশব্যাকের অংশগুলো ডাউনস্টেজে অভিনীত হবে।]


    [গুপি কামরার দরজায়, নিধিরাম ভেতরে সিটে বসে আছে।]



    গুপি। (প্লাটফর্মে চোখ রেখে) উঃ - পাঁচুমামাটা যে কোথায় গেল! এইসব লটবহর, ওদিকে ট্রেন ছাড়ার সময়ও হয়ে এল। যদি না আসে তো দুগগা বলে চেন ধরে ঝুলে পড়ব। দিব্বি একা চলে যেতাম, মা দিল পাঁচুমামাটাকে আমার ঘাড়ে চাপিয়ে।

    (প্লাটফর্মের দিক থেকে হন্তদন্ত পাঁচুমামার প্রবেশ)

    পাঁচুমামা। (দরজার কাছে এসে) এই নে, সিঙ্গাড়া খা। ওদিকটায় গরম গরম ভাজছিল, আমার চোখ তো জানিস – মাছরাঙা পাখি যেমন জলের তলায় মাছের গতিবিধি নজর করে ফেলে – (ট্রেন ছাড়ার হুইসল) - ওরে বাবা, ট্রেন ছেড়ে দেবে নাকি? আমাকে ধরে তোল –

    (গুপি ধরাধরি করে তোলে। দুজনে গিয়ে সিটে বসে। নিধিরা্মের থেকে একটু দূরে।)

    গুপি। আরেকটু হলেই হয়েছিল। তুমি স্টেশনে বসে সিঙ্গাড়া খেতে আর আমি মামাবাড়িতে গিয়ে তাই রিপোর্ট করতাম। দিদিমার নাকি আবার ক্ষীরের পুলিটুলি কীসব করার কথা।

    পাঁচুমামা। বাজে কথা রাখ। আমার ভরসায় দিদি তোকে ছেড়েছে, তুই এখন আমার আশ্রিত। নে, প্রসাদ খা।

    গুপি। তোমার ভরসা! কলেজের পড়া নিয়ে ল্যাজেগোবরে হয়ে বায়না ধরতে – গুপি, চল পালাই। দিদিকে বল - মামাবাড়ি যাব। মা বলল – রোগা মানুষটাকে চোখে চোখে রাখিস।

    পাঁচু। আহা আবার ওসব অলক্ষুণে কথা কেন? যাত্রাটাই অযাত্রা হয়ে যাবে। একটা শুভকাজে বেরিয়েছি, মনে ভরসা রাখ। (পেটে ব্যথা) উঃ। ছোটবেলায় একবার ভুলে বাদশাহি জোলাপ খেয়ে অবধি শরীরটা আমার একদম গেছে, কিন্তু বুকে আমার সিংহের মতন সাহস। তা নইলে পদিপিসির বর্মিবাক্স খোঁজার ব্যাপারে হাত দেব কেন?

    গুপি। তুমি?

    পাঁচু। একশো বছর পরে পদিপিসির বর্মিবাক্স আমি আবিষ্কার করব। জানিস, তাতে এক-একটা পান্না আছে এক-একটা মোরগের ডিমের মতন, চুনি আছে এক-একটা পায়রার ডিমের মতন, মুক্তো আছে হাঁসের ডিমের মতন! মুঠো মুঠো হিরে আছে, গোছা গোছা মোহর আছে। তার জন্য শত শত লোক মারা গেছে, রক্তগঙ্গা বয়ে গেছে, পাপের উপর পাপ চেপে পর্বত তৈরি হয়েছে – সব আমি একা উদ্ধার করব!

    গুপি। ইঁইঁঃ! তুমি ইঁদুর দেখলে ভয় পাও, গোরু দেখলে তোমার হাঁটু বেঁকে যায়, তুমি কী করে উদ্ধার করবে?

    পাঁচু। আমার মনের ভিতর যে সিংহ গর্জন করছে। তোর যখন অতই অবিশ্বাস, তবে থাক। (ঘুরে বসে)

    গুপি। আহা থাকবে কেন –

    পাঁচু। নাঃ-

    গুপি। (পাঁচুর হাতটা ধরে) ও পাঁচুমামা –

    পাঁচু। (হাত ছাড়িয়ে) ন্নাঃ –

    গুপি। (টিফিনকৌটো তুলে নিয়ে) তবে কি মায়ের দেওয়া মাংসের ঘুগনি আর কাটলেট আমাকে একাই খেতে হবে?

    পাঁচু। (তাড়াতাড়ি ঘুরে) এই না না –

    (দুজনে খায়)

    গুপি। পাঁচুমামা –

    পাঁচু। উঁ –

    গুপি। পদিপিসির বর্মিবাক্সটা কোথায় আছে?

    (পাঁচুমামার খাওয়া প্রায় শেষ। খাওয়া থামিয়ে)

    পাঁচু। দেখ, মামাবাড়ি তো যাচ্ছিস। সেখানকার গোপন সব লোমহর্ষক কাহিনীগুলো তোর জানা দরকার একথা কখনো ভেবে দেখেছিস?

    গুপি। কীরকম, কীরকম?

    পাঁচু। পদিপিসির নাম ইতিহাসে রক্তের অক্ষরে লেখা থাকতে পারত তা জানিস? ঠাকুরদার পদিপিসি অদ্ভুত রাঁধতে পারতেন। একবার ঘাস দিয়ে এইসা চচ্চড়ি রেঁধেছিলেন যে বড়োলাট সাহেব একেবারে থ। বলেছিলেন, এই খেয়েই তোমলোককো দেশকো এইসা দশা। থাকগে সে কথা। দিদির হাতটাও অবশ্য খাসা। আর কাটলেট আছে?

    গুপি। পরে, এখন অনেক পথ বাকি।

    (পাঁচুমামা শেষ টুকরোটা খেয়ে নেয়)

    পাঁচু। আঃ – অদ্ভুত রাঁধুনি। পদিপিসির কথা বলছি। বিধবা মানুষ, গলায় রুদ্রাক্ষের মালা, আর মনে জিলিপির প্যাঁচ। সিংহের মতন তেজও ছিল তাঁর, হাজার হোক, একদিক দিয়ে দেখতে গেলে আমি তো তাঁরই বংশধর। একদিন ওই পদিপিসি গোরুর গাড়ি চড়ে মাঘী পূর্ণিমার রাতে চাদর গায়ে নিমাইখুড়োর বাড়ি চলেছেন। নিমাইখুড়ো অদ্ভুত মানুষ। কপালে চন্দন সিঁদুর দিয়ে চিত্তির করা, কথায় কথায় ভগবানের নাম। জঙ্গলে থাকেন, মেলা সাঙ্গোপাঙ্গ। দানটানও করেন খুব। পদিপিসি তো যাচ্ছেন, বত্রিশবিঘার ঘন শালবনের মধ্যে দিয়ে পথ। জায়গাটার আবার খুব সুনাম নেই।


    [ডাউনস্টেজে বেহারাদের কাঁধে পালকিতে পদিপিসির প্রবেশ। সামনে রমাকান্ত হাতে লণ্ঠন নিয়ে চলেছে।]



    পদিপিসি। ও বাবা রমাকান্ত, বসে বসে তো কোমরে বাত ধরে গেল, আর কদ্দূর?

    রমাকান্ত। এইতো ঠ্যাঙাড়ের বিলের কাছে এসে গেছি, এরপর ফাঁসুড়েজলা, তারপর ঠগীজঙ্গল হয়ে ডাকাতকালীর থান পেরোলেই পৌঁছে যাব।

    পদিপিসি। বলিস কী রে! সে তো রাত ভোর হয়ে যাবে। নিমাইটা কী অজগর জঙ্গলে বাসা বেঁধেছে – আসা তো নয়, বৈতরণী পেরোনো। জঙ্গলে চেলাচামুণ্ডা নিয়ে কী আশ্রম খুলেছে কে জানে। টাকাপয়সা তো অঢেল মনে হয়, সবই নাকি ভগবানের দয়া। তা এত লোক থাকতে ভগবান তোকেই বা দয়া করে কেন রে?

    (ডাকাতদের আক্রমণ ।)

    ডাকাতদল। হারেরেরেরেরে –

    [বেহারারা পালকি নামিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। পদিপিসি আস্তে আস্তে বেরিয়ে দাঁড়ায়।]

    ডাকাত। (পলায়মান বেহারাদের দিকে তাকিয়ে) অ্যাই, পালাচ্ছিস কোথায়? ধর ধর – (কয়েকজন বেহারাদের পেছনে যায়, বাকিরা রমাকান্তকে ধরে মারতে থাকে) দেখি তোর গেঁজেতে কী আছে? এইত্তো - সাড়ে সাত আনা পয়সা – আর ওটা কী? নস্যির ডিবে? দে দে। গামছাটা তো বাহারি – দুৎ কী গন্ধ রে বাবা – সাবান দিস না নাকি? (পদিপিসির দিকে তাকিয়ে) মাঠানের ঐ মাকড়িজোড়া তো বেশ –

    পদিপিসি। নিবি? আয় না –

    ডাকাত। (ঘাবড়ে) না থাক। (বেহারাদের না পেয়ে ডাকাতরা ফিরে আসে) আরগুলো গেল কোথায়?

    পদিপিসি। কোথায় আর যাবে বাছা? তোমাদের হাতে ঠ্যাঙানি খেতে দাঁড়িয়ে থাকবে? যে যার মত ভোঁ দৌড় দিয়েছে। তা সবাইকে তো তাড়িয়ে ছাড়লি, রমাকান্তটাকেও আধমরা করেছিস। এবার তোরাই আমাকে কাঁধে করে নিমাইয়ের বাড়ি পৌঁছে দে।

    ডাকাত। (আঁতকে ওঠে) নিমাই!

    পদিপিসি। হ্যাঁ, নিমাই ছাড়া কোন অলপ্পেয়ে এই ভুশুণ্ডির জঙ্গলে ধুনি জ্বালিয়ে বসবে?

    ডাকাত। দোহাই মা ঠাকরুণ, পায়ে পড়ি, ছেড়ে দাও মা। (পায়ে পড়ে যায়)

    পদিপিসি। ছাড়ব আবার কী? এখনও তো ধরিইনি। আর তোদের ছাড়লে আমাকে কে নিয়ে যাবে শুনি?

    সর্দার। সে কথা নয় মা, সে কথা নয়। কাঁধে করে, মাথায় করে যেখানে বলবে পৌঁছে দেব। কিন্তু তুমি বলো না – সন্তানকে রক্ষা করো।

    পদিপিসি। বেশ বলব না, কিন্তু কী বলব না আর কাকে বলব না সেটা কি বলবি?

    ডাকাত। মা গো, নিমাই সর্দার যদি জানতে পারে তার কুটুমকে ধরা হয়েছিল, ওরে বাবা গো – ছাল ছাড়িয়ে নেবে মা। মা আমার – ছাল ছাড়ালে মানুষের আর রইল কী বলো? রক্ষে করো জননী –

    পদিপিসি। কাকে বলব না আবার বল তো –

    ডাকাত। সর্দারকে মা –

    পদিপিসি। (নরম করে) কোন সর্দার?

    ডাকাত। নিমাই সর্দার মা –

    পদিপিসি। হুঁ। (থেমে) এদিকে আয়, রমাকান্তর নস্যির কৌটো ফিরিয়ে দে, পয়সা ফেরত দে। আমার চাদরটা গিয়ে রিফু করবি। এবার পালকি তোল। আমাকে তোদের সর্দারের গুহায় পৌঁছে দে।

    [ডাকাতরা পালকি বইতে শুরু করে। ডাকাতরা আর পদিপিসি বেরিয়ে যায়।]

    [ডাউনস্টেজে নিমাইখুড়োর আস্তানা। নিমাই টাকা গুণতে গুণতে কৃষ্ণনাম করছে। পদিপিসির প্রবেশ। নিমাই তাড়াতাড়ি টাকাপয়সা সরিয়ে উঠে বসে।]



    নিমাই। আরে দিদি যে, কত ভাগ্যে গরিবের কুঁড়েয় তোমার পায়ের ধুলো পড়ল।

    পদিপিসি। শালবনে আমাকে ডাকাতে ধরেছিল, তাড়াতাড়ি পালকি থেকে নামতে গিয়ে আমার তসরের চাদর খানিকটা ছিঁড়ে গেছে, পায়ের বুড়ো আঙুলে হোঁচট লেগেছে, আর তা ছাড়া মনেও খুব একটা ধাক্কা লেগেছে। এর কী প্রতিশোধ নেব এখনও ঠিক করিনি। এখন রান্না করব, খাব, তারপর পান মুখে দিয়ে শুয়ে শুয়ে ভেবে দেখব।

    নিমাই। রাধে কৃষ্ণ রাধে কৃষ্ণ -

    পদিপিসি। আমার মনের মধ্যে যে সব সন্দেহরা ঝাঁক বেঁধে অন্ধকার বানিয়ে রেখেছে, তারা যাতে মনের মধ্যেই থেকে যায়, বাইরে প্রকাশ পেয়ে তোমার অনিষ্ট না ঘটায়, তার ব্যবস্থা অবিশ্যি তোমার হাতে।

    নিমাই। রাধে কৃষ্ণ রাধে কৃষ্ণ –

    [পদিপিসি রান্নাবান্না শুরু করে]

    নিমাই। যদি ডাকাতের কথা কাউকে না বলো তো তোমায় পঞ্চাশ টাকা দেব। (পদিপিসি রান্নার কাজ করে) একশো টাকা দেব। (পদিপিসি রান্নায় ব্যস্ত) পাঁচশো টাকা দেব। (পদিপিসি একবার কাশে।) হাজার টাকা দেব। পাঁচ হাজার টাকা দেব। আমার লোহার সিন্দুক খুলে দেব, যা খুশি নিও।

    [পদিপিসি উঠে নিমাইয়ের হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়। নিমাই সিন্দুকের সামনে এসে থামে।]

    পদিপিসি। চিচিং ফাঁক!

    [নিমাই সিন্দুক খুলে দেয়]

    পদিপিসি। ওমা! (হাতে করে গয়না বের করে) এ যে আলাদিনের ভাঁড়ার ঘর! (আরো গয়না নেয়, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে) ব্যাটা ঠ্যাঙাড়ে বাটপাড় কী দাঁওটাই না মেরেছিস! (গয়না বের করতে করতে এবার বাক্স বের করে আনে) দেখি তো বাক্সটা –

    নিমাই। আহা ওটা থাক, ওটাতে যে আমার সব প্রাইভেট পেপার আছে।

    পদিপিসি। চোপরাও শালা। নয়তো সব প্রাইভেট ব্যাপার খবরের কাগজে ছেপে দেব।

    [ডাউনস্টেজ অন্ধকার হয়ে আপস্টেজে ট্রেনের কামরার দিকে আলো ফেরে। পদিপিসি আর নিমাইখুড়ো বেরিয়ে যায়।]

    পাঁচুমামা। এই না বলে পদিপিসি সেই বাক্সের হাবিজাবি কাগজপত্র ফেলে দিয়ে, ওইসব ধনরত্ন বর্মিবাক্সে ভরে নিয়ে, আবার রান্নাঘরে গিয়ে জলচৌকিতে বসে কড়াটা উনুনে চাপালেন। সারারাত ঘুমোলেন না, বাক্স আগলে জেগে রইলেন, ভোর না হতেই আবার পালকি চেপে শালবনের মধ্যে দিয়ে বাড়ি ফিরে এলেন।

    গুপি। তারপর?

    নিধিরাম। (ঘেঁষে এসে) তারপর? তারপর?

    পাঁচু। আপনার কী মশাই?

    নিধিরাম। না না – গল্পটা বড়ো লোমহর্ষক কিনা –

    গুপি। (নিধিরামকে দেখে নিয়ে পাঁচুমামাকে) চুপ, চোখ ইজ জ্বলজ্বলিং।

    পাঁচু। এত কষ্ট করে পাওয়া বর্মিবাক্স নিয়ে পদিপিসি সারাদিন পালকি চেপে বাড়িমুখো চলতে লাগলেন। দুপুরে সজনে গাছতলায় পালকি থামিয়ে খিচুড়ি আর শজনে ফুল ভাজা খাওয়া হল, তারপর আবার পালকি চলল। এমনি করে রাত দশটা নাগাদ পদিপিসি বাড়ি পৌঁছলেন।

    [ডাউনস্টেজে পদিপিসি বাড়ি ফিরেছে। সঙ্গে রমাকান্ত। রমাকান্ত মঞ্চে প্রবেশ করে। ]

    রমাকান্ত। কই গো বাবুরা, ঘুমিয়ে পড়লে নাকি? দরজা খোলো, পিসিমা এসেছে।

    [গজা বেরিয়ে আসে। ফুর্তিবাজ।]

    গজা। কই, মা কোথায়?

    রমাকান্ত। ও-ই - পালকি থেকে নামছেন।

    গজা। মা গো আনন্দময়ী - [মনের আনন্দে গাইতে গাইতে সেদিকে বেরিয়ে যায়]

    [পদিপিসির মঞ্চে প্রবেশ, হাতে পানের ডিবে। অন্য দিক দিয়ে বাড়ির ভেতর থেকে ঠাকুমা আর ছোটোকাকার প্রবেশ]

    ঠাকুমা। ওমা, পিসিমা এত রাত্রে ফিরে এলে যে!

    ছোটোকাকা। ওরে জিনিসপত্রগুলো নিয়ে যা –

    (কয়েকজন পালকি থেকে পোঁটলা পুঁটলি নামিয়ে এনে মঞ্চের বাইরে চলে যায়)

    পদিপিসি। আর থাকব কী? ডাকাতের হাতে পড়ে যা নাজেহালটা হলাম –

    ঠাকুমা। সে কী! ডাকাত?

    পদিপিসি। তবে আর কী বলছি? অবলা মেয়েমানুষ পেয়ে সর্বস্ব লুটে নিচ্ছিল, কোনক্রমে পালিয়ে এলাম – ধনেপ্রাণে বেঁচেছি এই ঢের। – এ কী! আমার বর্মিবাক্স কোথায় গেল?

    ছোটোকাকা। হোয়াট ইজ বর্মিবাক্স? সে আবার কী?

    ঠাকুমা। তোমার হাতে ওটা কী?

    পদিপিসি। এ তো পানের ডিবে। বাক্স? বাক্স কোথায় গেল?

    ছোটোকাকা। কই, বাক্সটাক্স তো কিছু নেই।

    পদিপিসি। নেই বললেই হল! এই আমার বগলদাবা করা ছিল আর এই তার হদিশ পাওয়া যাচ্ছে না! একটা আধহাত লম্বা কাঠের বাক্স একেবারে কর্পুরের মতন উড়ে গেল! এ কি মগের মুল্লুক!

    ছোটোকাকা। সিমস টু বি আ কেস অফ হ্যালুসিনেশন।

    রমাকান্ত। হ্যাঁ, পিসিমার হাতে একটা বাক্স ছিল বটে।

    পদিপিসি। ছিল বটে! এদিকে আয়, তুই কোথাও লুকিয়েছিস কিনা দেখি তো –

    রমাকান্ত। সে কী পিসিমা! আমি কোথায় লুকোব?

    পদিপিসি। হাত তোল, দাঁড়া। হুঁঃ। বেঁচে গেলি। এবার পালকিতে দেখ আছে কিনা – শিগগির বাড়িতে খুঁজে দেখ।

    ছোটোকাকা। কিন্তু জিনিসটা কেমন দেখতে?

    পদিপিসি। বলছি তো বর্মিবাক্স। পেলেই দেখতে পাবি কেমন দেখতে। আধহাত লম্বা – বলেছি তো। আর ভেতরে –

    ছোটোকাকা। ভেতরে? ইনসাইড?

    [পদিপিসি উত্তর দেয় না। সবাই খুঁজতে থাকে।]

    [ঠাকুমা, ছোটকাকা ও অন্যরা খুঁজেটুঁজে এসে ঘাড় নাড়ে]

    পদিপিসি। পেলি না? ওরে কী সর্বনাশ হল – তোদের নিমাইখুড়ো আমাকে দেখে খুশি হয়ে ওই বাক্স ভরে কত হিরে-মানিক দিয়েছিল, আর সে তোরা কোথায় হারিয়ে ফেললি। হায় হায় –

    ছোটোকাকা। কী বলছ! হিরে-মানিক? জুয়েলারি? জেমস্টোনস? সার্চ, সার্চ টিম -কুইক -

    [আবার আপস্টেজ। ট্রেনের কামরা]

    পাঁচু। যারা খুঁজে খুঁজে হয়রান হয়ে বসে পড়েছিল, হিরেমোতির খবর শুনে আবার উঠে খুঁজতে শুরু করে দিল। তিনদিন তিনরাত ধরে মামাবাড়িসুদ্ধু কেউ খায়ওনি ঘুমোয়ওনি। বাগান পর্যন্ত খুঁড়ে ফেলেছিল। যাদের মধ্যে বিষম ভালোবাসা ছিল তারাও পরস্পরকে সন্দেহ করতে লেগেছিল।

    গুপি। তারপর?

    নিধিরাম। তারপর?

    পাঁচু। তারপর আর কী হবে? এক সপ্তাহ সব ওলটপালট হয়ে রইল। খাওয়া নেই, শোয়া নেই, কারু মুখে কথাটি নেই। সারা বাড়ি সবাই মিলে তোলপাড় করে ফেলল। কত যে রাশি রাশি ভাঙা শিশি বোতল, তামাকের কৌটো বেরুল তার ঠিক নেই। কত হারানো জিনিস খুঁজে পাওয়া গেল। কিন্তু পদিপিসির বর্মিবাক্স হাওয়ায় উড়ে গেল। এমনভাবে হাওয়া হয়ে গেল যে শেষ অবধি অনেকে বলল বাক্সটাক্স সব পদিপিসির কল্পনা।

    গুপি। কী করে জানছ তাই নয়?

    পাঁচু। রমাকান্ত। সে তো বরাবর বলে এসেছে একটা বাক্স ছিল। এদিকে বাক্সের শোকে পদিপিসি আধখানা হয়ে গেলেন। অত হিরে-জহরত কিনা অমন করে কোলছাড়া হয়ে গেল! শোকটা একটু সামলে পদিপিসি আবার রমাকান্তকে নিয়ে নিমাইখুড়োর খোঁজে গেছলেন যদি কিছু পাওয়া যায়।

    গুপি। গিয়ে?

    পাঁচু। গিয়ে দেখেন বত্রিশ বিঘার শালবনের মাঝখানে নিমাইখুড়োর আড্ডা ভেঙে গেছে, জনমানুষের সাড়া নেই, বুনো বেড়াল আর হুতুমপ্যাঁচার আস্তানা।

    গুপি। ব্যস? শেষ?

    পাঁচু। তারপর কত বছর কেটে গেল। একসময় পদিপিসি স্বর্গে গেলেন। যাবার আগে হঠাৎ ফিক করে হেসে বললেন, ‘এই রে! বাক্সটা কী করেছিলাম অ্যাদ্দিনে মনে পড়েছে।‘ বলেই চোখ বুজলেন। তাই শুনে পদিপিসির শ্রাদ্ধের পর আরেক চোট খোঁজাখুঁজি হয়েছিল, কিন্তু কোনো ফল হয়নি।

    নিধিরাম। তারপর?

    পাঁচু। সেই বাক্স আমি বের করব। কিন্তু আপনার তাতে কী মশাই?

    (একটু পরে)

    নিধিরাম। একশো বছর ধরে যা এত খোঁজা সত্ত্বেও পাওয়া যায়নি, তাকে যে আবিষ্কার করবেন, কোনো পায়ের ছাপ বা আঙুলের ছাপ জাতীয় চিহ্নটিহ্ন কিছু পেয়েছেন?

    পাঁচু। পাইনি, তবে পেতে কতক্ষণ? মনে হয় যে চোখের সামনেই কোথাও আছে, চোখ ব্যবহার করলেই পাওয়া যাবে। লুকিয়ে রাখবার তো সময়ই পাননি। আর মনে পড়ে যখন হাসি পেয়েছিল তখন নিশ্চয় চোরেও নেয়নি। এবার আমি এই মাছরাঙার মত তীক্ষ্ণ নজরের সাহায্যে – কিন্তু পাঁচশো বার বলছি মশাই, আপনার তাতে কী?



    দ্বিতীয় দৃশ্য

    [রেলস্টেশন। রাত্রি।]

    [গুপি ও পাঁচুমামা ট্রেন থেকে নেমেছে।]




    গুপি। এ কোথায় এলাম গো? চারদিক শুনশান – জনমানুষ নেই তো।

    পাঁচু। রাত হয়ে গেছে কিনা –

    গুপি। তুমি যে প্রায়ই বল আমরা এখানকার জমিদার, এরা তোমাদের প্রভুভক্ত প্রজা, এই কি তার নমুনা? আমি তো ভেবেছিলাম আলো জ্বলবে, বাদ্যি বাজবে, মালাচন্দন নিয়ে সব সারি সারি দাঁড়িয়ে থাকবে। তারপর আমরা চতুর্দোলায় চড়ে মামাবাড়ি যাব। গিয়ে গরম গরম –

    পাঁচু। চোপ ইডিয়ট! দেখছিস না চারদিক থেকে অন্ধকারের মত বিপদ ঘনিয়ে আসছে? রক্তলোলুপ নিশাচররা যাদের পিছু নিয়েছে তাদের কি নিজেদের ঝগড়া করা শোভা পায়?

    [ঘনশ্যামের প্রবেশ]

    ঘনশ্যাম। অ পাঁচুদাদা, অ মেজদিমণির খোকা! বলি এয়েচ না আসনি?

    পাঁচু। ঘনশ্যাম এলি! আঃ বাঁচালি!

    ঘনশ্যাম। ঘ্যানঘ্যান ভালো লাগে না পাঁচুদাদা। এদিকে বড়ো গোরু তো আসনপিঁড়ি হয়ে বসে পড়েছেন। কত টানাটানি করলাম, কত ল্যাজ মোচড়ালাম। শেষ অবধি গাড়ির বাঁশ খুলে নিয়ে পেটের নিচে চাড় দিয়ে পর্যন্ত ওঠাতে চেষ্টা করলাম। সে কিন্তু নড়েওনা, ওইরকম বসে বসে ঘাস চাবায়।

    পাঁচু। অ্যাঁ! তবে কী হবে?

    ঘনশ্যাম। হবে আবার কী? এখন চরণ দুটিই সম্বল। চলো আমার সঙ্গে –

    পাঁচু। চল তাহলে। (গুপিকে) রাস্তায় একটা কবরখানা পড়বে, সেখানে সব সিপাহি বিদ্রোহের কবর আছে।

    ঘনশ্যাম। রাত্রিবেলা ভূতের গল্প বললে ভালো হবে না পাঁচুদাদা।

    পাঁচু। ভূত নয় রে, কবরের কথা বলছিলাম।

    ঘনশ্যাম। ভূত নয় মানে? কবর আর ভূত কি আলাদা? এসব আমার পোষাবে না বলে দিলাম। নাও, চলো –

    [এই সময় নিধিরাম তাদের পাশ দিয়ে হেঁটে পেরিয়ে যায়। পাঁচুমামা চমকে গুপিকে জড়িয়ে ধরে।]

    পাঁচু। গুপ্তচর।


    তৃতীয় দৃশ্য


    [মামাবাড়ি।]

    [দিদিমা আর সেজোদাদু বসে আছেন। গুপি, পাঁচু আর ঘনশ্যাম ঢোকে।]


    দিদিমা। আয় আয়। কত বড় হয়ে গেছিস ভাই। পথে কষ্ট হয়নি তো? ঐ যে তোর সেজোদাদামশাই। ঠাকুরপো, এই যে গুপি আর পাঁচু।

    [দুজনে প্রণাম করে।]

    সেজোদাদু। হুঁ। ঘনশ্যাম, জিনিসপত্রগুলো ঘরে তুলে রাখ। [সেজোদাদু আর ঘনশ্যাম বেরিয়ে যায়]

    দিদিমা। রাত হয়ে গেছে, আয় হাত পা ধুয়ে খেয়ে নিবি। তোদের জন্য লুচি বেগুনভাজা, ছোলার ডাল, ফুলকপির ডালনা, চিংড়িমাছের মালাইকারি, রসগোল্লার পায়েস করে রেখেছি। সব খেতে হবে। আয় – খেয়েদেয়ে নে, আজ ঘুমিয়ে পড়। কাল তোকে পদিপিসির গল্প বলব। [বেরিয়ে যায়]

    গুপি। বাক্সটা হাত থেকে রাস্তায় পড়ে-টড়ে যায়নি তো?

    পাঁচু। চোপ। এটা শত্রুর আস্তানা। ওল্ড লেডি নম্বর ওয়ান স্পাই।

    গুপি। কী যে বলো – দিদিমা এত ভালো – ভালো ভালো রান্না করেন –

    পাঁচু। চোপ, আমার খুড়ি আমি চিনি না? শোন – দু-জনে বেশি ভাব দেখালে মতলব ফেঁসে যাবে। বুক থেকে হৃৎপিণ্ড উপড়ে নিলেও বর্মিবাক্সের নাম মুখে আনবি না।



    চতুর্থ দৃশ্য


    [মামাবাড়ির বারান্দা। পরদিন সকাল। মঞ্চের একদিকে এখনকার কথা, অন্যদিকে ফ্ল্যাশব্যাক।]


    [নিধিরাম বাইরে থেকে দূরবীন দিয়ে দেখছে। গুপি হাই তুলতে তুলতে ঢোকে। গুপি নিধিরামকে দেখামাত্র নিধিরাম সরে যায়। সেজোদাদু ঢোকেন]

    সেজোদাদু। এই যে, ঘুম ভাঙল? গরম লাগেনি তো?

    গুপি। এই বারান্দাটায় বেশ হাওয়া আছে।

    সেজোদাদু। এই বারান্দা – হ্যাঁ, বারান্দাটাতে আমার ছোটো কাকা কত কী করিয়েছিলেন! বিলেত থেকে ছোটো কাকা ভীষণ সাহেব হয়ে ফিরলেন। ঘাড়-ছাঁট চুল, কোটপ্যান্ট পরা, হাতে ছড়ি, মুখে চুরুট, কথায় কথায় খারাপ কথা।



    [মঞ্চের অন্যকোণে আলো পড়ে। ফ্ল্যাশব্যাক। ঠাকুমা, ছোটোকাকা]

    ছোটোকাকা। (গলা খাঁকারি দিয়ে) আমি মেম আনব, বিলেতে সব ঠিক করে রেখে এসেছি। অল সেটলড।

    ঠাকুমা। অ্যাঁ।

    ছোটোকাকা। এই দোতলার উপর বেডরুমের সঙ্গে অ্যাটাচড বাথরুম বানাব, লম্বা বারান্ডাটা তো আছেই, তার এক কোণ দিয়ে একটা স্টেয়ারকেস যাবে –

    ঠাকুমা। সে আবার কী?

    ছোটোকাকা। আরে সিঁড়ি সিঁড়ি। একটা ঘোরানো লোহার সিঁড়ি বানাব। সাদা পাগড়ি মাথায় দিয়ে ঐ সিঁড়ি বেয়ে জমাদার ওঠানামা করবে। (অঙ্গভঙ্গি করে দেখায়) “সেলাম সাহেব। গুড মর্নিং মেমসাব, খানা লাগাই?” নইলে লিজা আসবে না বলেছে।

    ঠাকুমা। অমা। সে কী কথা গো! মেমদের যে লাল চুল, কটা চোখ, ফ্যাকশা রং আর মড়াখেকো ফিগার হয়! কী যে বলিস তার ঠিক নেই, মেমরা যে ইয়েটিয়ে পর্যন্ত খায় শুনেছি।

    ছোটোকাকা। ড্যাম ইট। দ্যাটস নান অফ ইয়োর বিজনেস। তোমরা যদি চাও আমি সন্নিসি হই, তাহলে আমার আর কিছুই বলবার নেই। বলো তো নাগা সন্নিসিই হই, মেমেও দরকার নেই, নতুন সুটগুলোতেও দরকার নেই।


    [সেজোদাদু আর গুপির দিকে আলো]

    সেজোদাদু। তাই শুনে ঠাকুমারা আরও চেঁচামেচি শুরু করে দিলেন। কিন্তু ভয়ে ঠাকুরদার কানে কেউ কথাটাই তুললেন না। ছোটো কাকাও সেই সুযোগে মিস্ত্রি লাগিয়ে লোহার ঘোরানো সিঁড়ি তৈরি করে ফেললেন। ওইখানে রেলিং কেটে সিঁড়ি বসানো হয়েছিল। দোতলা থেকে ছাদে ওঠবার কাঠের সিঁড়ি একটা ছিলই, বাঁদর তাড়াবার জন্যে, তারই পাশ দিয়ে নতুন সিঁড়ি হল।


    [অন্য কোণে ছোটকাকার দিকে আলো]

    ছোটকাকা। সিঁড়ি রেডি। বাকি শুধু বাথরুম বানানো আর জমাদারের পাগড়ি কেনা। ওল্ড চ্যাপের কাছ থেকে কীভাবে টাকাটা বের করা যায়? বাথরুম ভাড়া দেব তো আর বলা যাবে না। হাউ অ্যাবাউট সাম বিজনেস আইডিয়া? বুড়ো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জিজ্ঞেস করবে। সে, এক্সপোর্টিং সামথিং? মা, পিসিমাদের দেওয়া বড়ি এক্সপোর্ট করব বললে টাকা দেবে? অর আচার?


    [সেজোদাদু আর গুপির দিকে আলো]

    সেজোদাদু। এদিকে পাড়ার চোররাও সুবিধে পেয়ে রোজ রাত্রে লোহার সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে শুরু করে দিল। শেষটা একদিন ঠাকুরদার ঘুম ভেঙে গেল। গদা হাতে করে বারান্দায় বেরিয়ে এলেন, চোররাও সিঁড়ি দিয়ে ধপধপ নেমে বাগানের মধ্যে দিয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড় দিল। পরদিন সকালে উঠেই মিস্ত্রি ডাকিয়ে ওই সিঁড়ি খুলিয়ে ফেললেন। রাগের চোটে ছাদে ওঠবার কাঠের সিঁড়ি অবধি খুলিয়ে দিলেন।


    [অন্য কোণে ছোটকাকার দিকে আলো]

    ছোটোকাকা। ও মাই গড। হোয়াট আ ডেস্ট্রাকশন।

    (ঠাকুমার প্রবেশ)

    ঠাকুমা। তোমার বাবা পানুর ছোটো মেয়ের সঙ্গে তোমার বিয়ে ঠিক করেছেন। টোপর পরে প্রস্তুত হও।

    ছোটোকাকা। (দীর্ঘশ্বাস) গুডবাই লিজা। [ছোটোকাকা ও ঠাকুমা বেরিয়ে যায়।]

    সেজোদাদু। শেষটা ওই পানুর ফর্সা মোটা গোলচোখো বারো বছরের মেয়ের সঙ্গে ছোটো কাকার বিয়ে হয়ে গেল। এবং বিশ্বাস করবে কিনা জানি না, তারা সারাজীবন পরমসুখে কাটাল। পাঁচুটা তো ওঁরই নাতি। এই রে, ঘনশ্যাম আবার আমার ইশবগুল নিয়ে আসছে। বলিস যে আমি বেরিয়ে গেছি।

    [ঘনশ্যামের প্রবেশ। হাতে ইশবগুলের গেলাস]

    ঘনশ্যাম। ঐ যাঃ, বাবু আবার পালিয়ে গেল। এ এখন কে খাবে? যাই পাঁচুদাদাকে – ও না, সে তো আবার ভুল করে বেশি জোলাপ খেয়ে যাচ্ছে আর আসছে। তুমি খাবে?

    গুপি। দুৎ।

    ঘনশ্যাম। যাই তবে নতুন বাবুটিকেই দিই।

    গুপি। নতুন বাবু?

    ঘনশ্যাম। খুব ভালো লোক গো, কত গল্প করছেন। বখশিস দিচ্ছেন।

    [নিধিরাম মঞ্চের একদিক দিয়ে ঢোকে] এই যে বাবু – [নিধিরাম তাড়াতাড়ি অন্যদিকে বেরিয়ে যায়] ইস্পেশাল ইশবগুল বাবু – [ ঘনশ্যাম বেরিয়ে যায়]

    গুপি। এ কী! পাঁচুমামা কই, পাঁচুমামা –

    [পাঁচুমামা বিধ্বস্ত চেহারায় ঢোকে]

    গুপি। এই যে! কী সাংঘাতিক! চাকর সম্প্রদায়কে হাত করে ফেলেছে।

    পাঁচু। কেন বিরক্ত করছ? যাই, আরেকটু শুই গে। বাবাগো –

    গুপি। চারদিকে যেরকম ষড়যন্ত্র চলেছে এখন আর তোমার আরাম করে শুয়ে শুয়ে পেটে হাত বুলোনো শোভা পায় না। এদিকে শত্রু ঘরে এসে ঢুকেছে সে খবর রাখো কি?

    পাঁচু। শত্রু তো সবাই। সবচেয়ে বড় শত্রু জোলাপ।

    গুপি। এখন তোমার বেশি জোলাপ খাবার সময় হল?

    পাঁচু। ভুল করে খেয়ে ফেলেছি। জানোই তো ছেলেবেলায় আমাকে একবার শিয়ালে কামড়ে দিয়েছিল, সেই থেকে আমার মাত্রাজ্ঞানটা গোলমাল হয়ে গেছে। কিন্তু বুকে আমার –

    গুপি। আরে ধ্যাৎ।


    পঞ্চম দৃশ্য

    [মামাবাড়ি। রাত্রি।]

    [দিদিমা আর গুপি ঢুকে বিছানায় বসে।]




    দিদিমা। চলো শুয়ে পড়বে –

    গুপি। তুমি যে বললে পদিপিসির গল্প বলবে?

    দিদিমা। আচ্ছা। শোন তবে। (পান সাজতে সাজতে) পদিপিসির ইয়া ছাতি ছিল, ইয়া পাঞ্জা ছিল। রোজ সকালে উঠে আধ সের দুধের সঙ্গে এক পোয়া ছোলাভিজে খেতেন। কী তেজ ছিল তাঁর! সত্যি-মিথ্যে জানি না, শুনেছি একটা শামলা গোরু হাম্বা হাম্বা ডেকে ওঁর দুপুরের ঘুমের ব্যাঘাত করেছিল বলে উনি একবার তার দিকে এমন করে তাকালেন যে সে তিনদিন ধরে দুধের বদলে দই দিতে লাগল।

    গুপি। অ্যাঁ!

    দিদিমা। হ্যাঁঃ। তা সেই পদিপিসি একবার শীতকালে পালকি চেপে কাউকে কিছু না বলে রমাকান্ত নামে একটিমাত্র সঙ্গী নিয়ে কোথায় জানি চলে গেলেন। ফিরে এলেন পরদিন দুপুর রাত্রে। এসেই মহা হইচই লাগালেন, কী একটা নাকি বর্মিবাক্স হারিয়েছে। সবাই মিলে নাকি দেড় বছর ধরে ওই বাক্স খুঁজেছিল। কোথায় পাওয়া যাবে! কেউ চোখে দেখেনি সে বাক্স। শেষপর্যন্ত সে পাওয়াই গেল না।

    গুপি। তাতে কী ছিল?

    দিদিমা। কে জানে! মশলা-টশলা হবে। ওই পদিপিসির একটিমাত্র ছেলে ছিল, তার নাম গজা।

    [মঞ্চের এক কোণে গজাকে দেখা যাবে। দিদিমার বর্ণনা অনুযায়ী অঙ্গভঙ্গি করবে।]

    দিনরাত কেবল পান খাচ্ছে আর তামাক টানছে। পড়াশুনো কি কোনোরকম কাজকর্মের নামটি নেই। সারাদিন আদ্দির ঝুলো পাঞ্জাবি পরে পাড়াময় টোটো কোম্পানি। শখের থিয়েটার, এখানে-ওখানে আড্ডা। অথচ কারু কিছু বলবার যো নেই, পদিপিসি তাহলে আর কাউকে আস্ত রাখবেন না।

    গুপি। আমি বড় হয়ে গজা হব।

    [গজা জুয়োর আড্ডায়।]

    দিদিমা। তা হোস। জানিস তো ভালো লোকের কখনো ভালো হয় না। যতসব জগতের বদমায়েশ আছে সবাই সুখে জীবন কাটিয়ে যায়। গজারও তাই হল। যখন আরও বড়ো হল, গাঁজাগুলি খেতে শিখল, জুয়োর আড্ডায় গিয়ে জুটল। মাঝেমাঝে একমাস-দু মাস দেখা নেই। আবার একগাল পান মুখে নিয়ে হাসতে হাসতে ফিরে আসে। পদিপিসি যেখান থেকে যেমন করে পারেন টাকা জোগান। পাজি ছেলেকে পায় কে!

    [গজার পেছনে রমাকান্ত এসে ঢোকে, মাথায় ঝুড়ি। গজা জিনিসপত্র বিলোতে থাকে।]

    হঠাৎ দেখা গেল গজার অবস্থা ফিরেছে। কথায় কথায় বাড়িসুদ্ধু সবাইকে পাঁঠার মাংস খাওয়ায়, ঝুড়ি ঝুড়ি সন্দেশ আনে। একবার সমস্ত চাকরদের গরম বেনিয়ান কিনে দিল। ঘোড়ার গাড়ি কিনল, হিরের আংটি কিনল, বাড়িসুদ্ধু সবাই থরহরি কম্পমান। কে জানে কোথা থেকে এত টাকা পায়!

    [গজা আর রমাকান্ত বেরিয়ে যায়]

    পদিপিসি অবধি চিন্তিত হলেন। অথচ চুরি-ডাকাতি করলে তো এতদিনে পেয়াদা এসে হানা দিত। টাকা ভালো, কিন্তু পায় কোথা? ভাই তুমি শোও, আমি বাতিটা নিভিয়ে আসি।

    [দিদিমা বেরিয়ে যায়]

    গুপি। এই রে – জল নেই – দেখি -

    [গুপি উঠে বেরোয়। দরজা খোলার শব্দ শুনে কোণায় দাঁড়িয়ে পড়ে। নিধিরাম বেরিয়ে আসে। পেছনে সেজোদাদু। নিধিরাম হোঁচট খায়। সেজোদাদু এসে ধরেন। সেজোদাদুর হাত থেকে কাগজ পড়ে যায়]

    নিধিরাম। দুত্তোর। [মঞ্চের অন্যদিক দিয়ে বেরিয়ে যায়]

    [সেজোদাদু ফিরে যে দিক দিয়ে ঢুকেছিল, সেদিকে বেরিয়ে যায়।]

    [দরজা বন্ধের শব্দ। গুপি এসে কাগজটা কুড়িয়ে নেয়। আবার দরজা খোলার শব্দ। গুপি কোণে সরে যায়। সেজোদাদু টর্চ নিয়ে এসে খোঁজাখুঁজি করে আবার নিজের ঘরের দিকে বেরিয়ে যায়।]

    গুপি। [কাগজটা বের করে।] নাঃ, অন্ধকারে কিচ্ছু পড়া যাচ্ছে না। [কাগজ পকেটে ঢুকিয়ে নেয়]

    [গুপি গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে। স্বপ্ন। পদিপিসির প্রবেশ।]

    পদিপিসি। কিরে, বাক্স পেয়েছিস?

    গুপি। কই না তো! নিমেষের মধ্যে বাক্স কোথায় ফেলেছিলে যে এক বছর ধরে খুঁজে খুঁজেও পাওয়া যায়নি, আমি দু-দিনেই খুঁজে দেব! কোথায় রেখেছিলে?

    পদিপিসি। ভালো করে খুঁজে দেখ। পেলে তুই-ই নিস। পাঁচুটা একটা ইডিয়ট, জোলাপের পর্যন্ত ডোজ ঠিক করতে পারে না। বাক্সের মধ্যে লাল চুনির কানের দুল আছে, তোর মাকে দিস। আর দেখ, ওই বুড়ো আর তার স্যাঙাৎটাকে একেবারে কাইন্ড অফ বোকা বানিয়ে দিস। বিশ্বনাথের কৃপায় গজার আমার কোনো অভাব নেই, জুড়িগাড়ি কিনেছে, বাড়ি কিনেছে, গাঁজার ব্যবসা করেছে। আহা বাবা বিশ্বনাথ না দেখলে পাপিষ্ঠদের কী গতি হবে? জয় বাবা।

    [পদিপিসি গদা ঘোরাতে ঘোরাতে বেরিয়ে যায়। ঘরে আস্তে আস্তে সকালের আলো এসে পড়ে। গুপির ঘুম ভাঙে। আড়মোড়া ভাঙতে গিয়ে পদিপিসির গদা ঘোরানোর ভঙ্গি মনে পড়ে। পকেট থেকে কাগজটা বের করে।]

    গুপি। শ্রীযুত বাবু বিপিনবিহারী চৌধুরীর সঙ্গে ২০০ টাকার চুক্তি হইল। স্বাক্ষর – নিধিরাম শর্মা। পুনশ্চ – সব অনুসন্ধানাদি গোপন থাকিবেক।

    [পাঁচুমামার প্রবেশ।]

    পাঁচু। উফ, ওবাবা।

    গুপি। কী হয়েছে পাঁচুমামা? আবার জোলাপ খেয়েছ?

    পাঁচু। খেন্তিপিসি এসেছে।

    গুপি। খেন্তিপিসিটা আবার কে?

    পাঁচু। পদিপিসি দি সেকেন্ড।

    গুপি। ওসব তুচ্ছ ব্যাপার নিয়ে বৃথা সময় নষ্ট কোরো না। স্বয়ং সেজো দাদামশাই এতে ভীষণভাবে জড়িত আছেন, এই দেখো তার প্রমাণ।

    [খেন্তিপিসির প্রবেশ]

    পাঁচু। কী করতে পারো আমার তুমি? এমন কোনো স্ত্রীলোক জন্মায়নি যাকে আমি ভয় পাই। জানো আমার বুকের মধ্যে সিংহ –

    [সেজোদাদুর প্রবেশ]

    সেজোদাদু। আ খেন্তি, তুই আবার এখানে কেন?

    খেন্তি। কেন, তোমার কি তাতে কোনো অসুবিধে হচ্ছে? পুজোর সময় একটা কাঁচকলাও দিলে না। আমার ভজাকে যে কাপড় দিলে সেও অতি খেলো সস্তা রাবিশ। বাপের বাড়ি থেকে কলাটা মুলোটা দূরে থাকুক কচুটারও মুখ দেখি না। তাই বলে বউদির ঘরের কোনায়ও একটু জায়গা হবে না?

    পাঁচু। জায়গা হবে কি না তাতে তো তোমার ভারি বয়ে গেল। এই ভরসকালে আমার ঘরেই বা তোমার কত জায়গা –

    সেজোদাদু। এই পাঁচু হতভাগা, বেরিয়ে আয় বলছি। আমার একটা ইম্পর্ট্যান্ট কাগজ হারিয়েছে, খুঁজে দে বলছি, নইলে ভালো হবে না।

    খেন্তি। বেরো এক্ষুণি। তুই-ই নিশ্চয় আমার সুটকেস থেকে বাড়ির নকশাটা সরিয়েছিস। বেরো বলছি। তোকে আমি সার্চ করবই করব। আমি জানি না তোদের সব চালাকি? পদিপিসির বাক্সর জন্যে তোরাও ছোঁকছোঁক করে বেড়াচ্ছিস। অথচ বাক্সতে আর কারও অধিকার নেই। ওটা স্ত্রীধন, ওটা আমি পাব।

    সেজোদাদু। তুই পাবি মানে! তোর ভজার পেটে যাবে বল! আমি আইন পাস করেছি তা জানিস? কেউ যদি পায় তো আমি পাব। জানিস আমি দুশো টাকা খরচ করে ডিটেকটিভ লাগিয়েছি? ও বাক্স আমি বের করবই।

    [নিধিরামের প্রবেশ]

    নিধিরাম। মনে থাকে যেন তিন ভাগের এক ভাগ আমার। যদি বাক্স পান আমার অদ্ভুত বুদ্ধির সাহায্যেই পাবেন।

    [খেন্তি হিড়হিড় করে পাঁচুকে টেনে এনে তার জামার ভেতর থেকে মোটা কাগজ বের করে]

    খেন্তি। তবে না নকশা নিসনি? ইস, দেখেছ, ব্যাটাচ্ছেলে সংস্কৃতে উনিশ পেয়েছে!

    সেজোদাদু। কই দেখি দেখি!

    নিধিরাম। মানুষ হওয়াই একরকম অসম্ভব।

    পাঁচু। আমার কলেজের পরীক্ষার রিপোর্ট দিয়ে তোমাদের কী দরকার শুনি? বিশেষত খেন্তিপিসির মতন একজন আকাট মুখ্যু স্ত্রীলোকের! এঁ-এঁঃ! নকশা হারিয়েছে! দরকারি কাগজ হারিয়েছে! তাই আমার ওপর হামলা! আর ওই ছোকরার হাতে যে কাগজটা আছে সেটা কী?

    [সেজোদাদু, খেন্তি আর নিধিরাম গুপির দিকে এগোয়]

    গুপি। ও দিদিমা –

    [গুপি দৌড়ে বেরিয়ে যায়। সবাই তাড়া করে।]


    ষষ্ঠ দৃশ্য

    [ ছাদ। ছাদের ওপর গুপি।]




    গুপি। আঃ! আজ মনে হচ্ছে এখানেই কাটাতে হবে। খিদে খিদে পাচ্ছে। ও খিদেতেষ্টা যাই পাক, নিচে সব ওত পেতে রয়েছে। পারলে আমাকেই কাবাব বানাবে। শেষ জীবনটা এবার এখানেই কাটবে মনে হচ্ছে। বাঃ – এ তো স্টেশন অবধি দেখা যায়। কত পায়রা রে বাবা! (ছাদের গম্বুজ দেখতে দেখতে) বাকুম বাকুম বাকুম - খোপে খোপে পায়রার বাসা। বাকুম বাকুম বাকুম বাকুম বাকুম - এ কী! এ দুটো খোপ খালি কেন? গম্বুজের মাঝখানটা দেখি ফোঁপরা, দেয়ালে আবার কী লেখা? ইতি শ্রীগজার – বাব্বাঃ কী হাতের লেখার ছিরি – ইতি শ্রীগজার একমাত্র আশ্রয়। ভেতরে আবার কুলুঙ্গির মত তাক। এখানে এটা – (বাক্স পায়, অবাক হয়ে খুলে দেখে) বাবা – এসব কী? এ কি পুঁথি? কীসব সংস্কৃত মন্ত্র, অন্যদিকে আবার সেই মার্কামারা হাতের লেখা – নির্ঘাত শ্রীগজা। ওরে বাবা, কত গয়না। আগে এই লাল চুনির দুলটা পকেটে পুরি। থ্যাংকিউ পদিদিদা – নাঃ, পদিপিসি।

    [সেজোদাদু, দিদিমা, খেন্তি, পাঁচু, নিধিরাম সবাই আস্তে আস্তে নিচে জড়ো হয়েছে। গুপি বাক্স নিয়ে নেমে আসে। দিদিমার হাতে বাক্স দেয়। ঢাকনা খুলে সেজোদাদুর হাতে পুঁথি দেয়।]

    সেজোদাদু। (পুঁথির কয়েক পাতা উলটে) আরে, এ যে পদিপিসির বোন মণিপিসির বিয়ের আসন থেকে হারিয়ে যাওয়া সেই পুঁথি। এ হারানোর ফলেই তো পুরুতঠাকুর ভুলভাল মন্ত্র পড়িয়েছিলেন, আর বরকনে সারাটা জীবন ঝগড়া করে কাটিয়েছিল। এপিঠে আবার গজা কীসব লিখেছে – উঃ অপাঠ্য – যেমন হাতের লেখা তেমনি বানানের ছিরি – (পড়ে) সোমবার।। সর্বনাশ হইয়াছে।

    [মঞ্চের এক কোণে গজার প্রবেশ। অঙ্গভঙ্গি করে বলতে থাকে। যখন বলে, তখন গজার ওপর আলো পড়ে।]

    গজা। সর্বনাশ হইয়াছে। মাতাঠাকুরানির পালকি উঠানে প্রবেশ করিতেই আগে নামিয়া আমার হাতে বর্মিবাক্স গুঁজিয়া দিয়া সমস্ত ভুলিয়া গিয়াছেন ও অভ্যাসমত বাড়িসুদ্ধু সকলকে তাড়নপীড়ন করিতেছেন।

    সেজোদাদু। মঙ্গলবার। আর পারা যায় না।

    গজা। আর পারা যায় না। বাক্স আমি কিছুতেই কাহাকেও দিব না স্থির করিয়াছি; অথচ ইহারা যেরূপ খোঁজাখুঁজি শুরু করিয়াছে, বাক্স বগলে লইয়া উহাদের সঙ্গে সঙ্গে খোঁজা ছাড়া কোনো উপায় নাই। বগলে কড়া পড়িয়া গিয়াছে।

    সেজোদাদু। শুক্রবার।। সৌভাগ্যবশত –

    গজা। তাড়িওয়ালার বাড়িতে বাক্স লুকাইবার সুবিধা পাইয়াছি। খোঁজাখুঁজি বন্ধ হইলে বাড়ি আনিব।

    সেজোদাদু। সোমবার।।

    গজা। তাড়িওয়ালার সহিত পরামর্শ করিয়া গাঁজার ব্যাবসা শুরু করিয়াছি। বিষম লাভ হইতেছে।

    সেজোদাদু। শনিবার।। জিনিসপত্র বহু কিনিয়াছি, বহু দানও করিয়াছি।

    গজা। ইহারা জিনিস লয় অথচ আমাকে সন্দেহের চক্ষে দেখে তাই মনে করিয়াছি শহরে বাড়ি কিনিব।

         রবিবার।। গম্বুজের ভিতরকার এই নির্জন স্থান আবিষ্কার করিয়াছি। এখানেই আমার এই লিপি ও বাকি গুটিকতক অলংকার রাখিলাম। ইহাদের বিবাহাদি হইলে উপহার দেওয়া যাইবেক। (লেখার ভঙ্গি করে) ইতি শ্রীগজা।

    [গজা বেরিয়ে যায়]

    সেজোদাদু। (পুঁথি বন্ধ করে) তারপরই বোধহয় ঠাকুরদা সিঁড়ি কাটিয়ে দিয়েছিলেন, গজার আর কাউকে গয়না উপহার দেওয়া হয়নি। শেষে তো সে কলকাতাতেই থাকত। তাই পদিপিসি ফিক করে হেসেছিলেন।

    খেন্তি। বাক্সে কী আছে?

    দিদিমা। আমি ভাগ করে দিচ্ছি। খেন্তি, যদিও তুই আমার কাছ থেকে সেবার তিনশো টাকা নিয়ে শোধ দিসনি, তবু এই হারটা তুই নে। ঠাকুরপো, তোমার কথা যত কম বলা যায় ততই ভালো। তুমি এই হিরের আংটি নাও। এটা মেজো ঠাকুরপোর ছেলেকে দেব; এটা পাঁচুর, এটা ন্যাড়ার প্রাপ্য; এটা পুঁটকি পাবে, এটা বুঁচকি; এই বালাজোড়া আমার ভাগ, আমার মেয়েকে দেব। বাকি রইল এই পান্নার আংটি, এটা দাদা তোমার, তুমি খুঁজে না দিলে এদের দ্বারা হত না। এবার চলো দিকিন, কত পুলি বানিয়েছি, হাতমুখ ধুয়ে খাবে চলো। বাক্সটায় আমি মশলা রাখব। [দিদিমা আর গুপি বেরিয়ে যায়]

    খেন্তি। [পাঁচুকে] তোকে দিল সাত নহর আর আমার বেলা এক ছড়া!

    নিধিরাম। [সেজোদাদুকে] স্যার, আমার দুশো টাকা?




    [পর্দা]

    প্রথম অভিনয়ঃ
    পয়মন্তী আবাসন, কলকাতা। দুর্গাষষ্ঠী, ১লা অক্টোবর,২০২২।

    কুশীলব

    গুপি - দ্যুতি কুন্ডু, নিধিরাম - রঙ্গিত ঘোষ, পাঁচুমামা - প্রতীতি মান্না, পদিপিসি - হৃদি কুন্ডু, রমাকান্ত - উন্মিষ বাগ, বেহারা - তারাশা সর্বাধিকারী শীল ও ঐশিকা বাগ, ডাকাতসর্দার ও ঘনশ্যাম - মহুল দত্ত, অন্যান্য ডাকাত - পৃথ্বীশ চ্যাটার্জি ও সুমিত চক্রবর্তী, নিমাইখুড়ো - ময়ূখ মজুমদার, গজা - মুদ্রা দেবনাথ, ঠাকুমা - মোহর দেবনাথ, ছোটকাকা - পৃথ্বীশ গুহঠাকুরতা, মামাবাড়ির কাজের লোক - ঋতজা চৌধুরী ও অরিহান চন্দ্র, দিদিমা - কৃতী সান্যাল, সেজোদাদু - শুভায়ন সেন, খেন্তিপিসি - মেধা চৌধুরী

  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments