জালিয়াঁওয়ালা বাগ বললে ছোটবেলাকার ইতিহাস বই এর কয়েকটা লাইন মনে পড়ে। রাওলাট আইনের প্রতিবাদে পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালা বাগে জড়ো হওয়া নিরস্ত, নিরীহ মানুষদের ওপর জেনারেল ডায়ার নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করেন। ১৯১৯ সালের ১৩ই এপ্রিল। মারা যান কয়েকশ মানুষ, আহত কয়েক হাজার। এই ঘটনার প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নাইট উপাধি ত্যাগ করেন। ব্যাস, ওই টুকুই। হয়তো ইতিহাসের ছাত্র-গবেষকরা জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রেক্ষিতে এই 'ম্যাসাকার' এর নানান দিক নিয়ে গভীরে বিশ্লেষণ করেছেন। কিন্তু শর্মিষ্ঠা সংগ্রহ করতে চেয়েছেন সেদিনের হত্যাকান্ডের অভিঘাত যাদের ওপর প্রত্যক্ষভাবে পড়েছিল, তাদের, বলা ভাল, তাদের পরিবারের আবেগ, উৎকন্ঠা, স্মৃতি সত্তাকে। একশ বছর পেরিয়ে তাদের বুকে কেমন করে আজও জেগে আছে জালিয়াঁওয়ালা বাগ, তারই সুলুক সন্ধান করেছেন তিনি। সরকারি নথি বা আর্কাইভ যে আবেগের নাগাল পায় না।
জালিয়াঁওয়ালা বাগ হত্যাকান্ডের সাত বছর পরে জন্মানো বিশ্বনাথ ডাট (ভি এন ডাট) তাঁর চার বছর বয়সে শোনা ঘটনার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। শর্মিষ্ঠা তার সাক্ষী। তিরানব্বই বছর বয়সে পৌঁছেও কিছুমাত্র ফিকে হয়নি তাঁর সে শোক। তাঁর বাবা বিখ্যাত ঊর্দু সাহিত্যিক ব্রহ্মানন্দ ডাট সেদিন বাড়িতে ছিলেন না। "তাই হয়তো মা ভেবেছিলেন বাবা বোধহয় ওখানেই গেছেন, আর ফিরবেন না। তাই মা বুক চাপড়ে কাঁদছিলেন।" ব্রহ্মানন্দের এক বন্ধু, রতন চাঁদ কাপুর সেদিন প্রাণে বেঁচে গেলেও তাঁর পায়ের পাতায় গুলি লাগে। ছোটবেলা থেকে বিশ্বনাথ তাঁকে খুঁড়িয়ে চলতে দেখেছেন। ভি এন ডাট এর স্মৃতিতে জালিয়াঁওয়ালা বাগ বেঁচে আছে রতন চাঁদের খুঁড়িয়ে চলা কিংবা মা'র বিলাপের মধ্যে। প্রসঙ্গত, ১৯৬৯ সালে প্রকাশিত তাঁর বই "জালিয়াঁওয়ালা বাগ" হত্যাকান্ডের এক প্রামান্য দলিল।
রত্তন দেবীকে কজনই বা চেনেন। কজনই না আত্তার কৌরের নাম শুনেছেন। না, ইতিহাসের পাতায় এঁদের ঠাঁই হয়নি। কবি নানক সিং এর ভাষায় 'খুনী বৈশাখী' ১৩ই এপ্রিলে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল ভাগমল ভাটিয়ার শরীর। মৃত স্বামীর দেহ আগলে সারারাত বাগেই বসেছিলেন আত্তার কৌর। সেই সঙ্গে সারা বাগ জুড়ে পড়ে থাকা মুমূর্ষু মানুষদের মুখে রাতভর তিনি জল দেন। আত্তার কৌরের জলদানের কথা হয়তো অমৃতসরের কোনো কোনো মহল্লায় এখনো বয়স্ক মানুষজনের মুখে শোনা যায়। অমৃতসরে মাতা আত্তার কৌর রোড এবং রোডের মুখে বিবর্ণ ও বিজ্ঞাপনক্লিষ্ট সাইনবোর্ড মনে রেখেছে তাঁকে। ভাগমল যখন মারা যান তখন তার কনিষ্ঠ সন্তান সোহনলাল মাতৃগর্ভে। স্বামীহারা, তিন সন্তানের মা আত্তার একবার না, দু দুবার প্রত্যাখান করেছেন সরকার বাহাদুরের দিতে চাওয়া কম্পেনশেসন। আত্তার বিকিয়ে যেতে দেননি স্বামীর আত্মত্যাগকে। অমৃতসরের অলি গলি ঘুরে শর্মিষ্ঠা কুড়িয়ে এনেছেন এসব মনি মানিক। সোহনলালের পারিবারিক সুত্র থেকে হদিশ পেয়েছেন এক পেন্টিং এর। চারিদিকে গুলিবিদ্ধ লাশের মাঝখানে ভাগমলের দেহ আগলে বসে আছেন আত্তার কৌর। সোহনলাল বাবাকে দেখেননি। কিন্তু বাবা-মা'র আত্মত্যাগকে অবয়ব দিয়ে তিনি পারিবারিক স্মৃতিতে তাঁদের জীবন্ত করে রাখতে চেয়েছেন। এ ছবির হয়তো কোনো ঐতিহাসিক মূল্য নেই। জালিয়াঁওয়ালা বাগ সংক্রান্ত কোনো আর্কাইভে ঠাঁই পাবে না এই ফরমায়েশি ছবি। তাতে কি! ভাগমল আর আত্তার বেঁচে থাকবেন স্মৃতি পরম্পরায়। শর্মিষ্ঠার জার্নাল পাঠককে এ ছবি দেখবার সুযোগ করে দিয়েছে। দুর্লভ নিঃসন্দেহে।
জালিয়াঁওয়ালা বাগের চর্চায় মেয়েরা প্রায় অদৃশ্য। অথচ পূরণ দেবীর মতো মানুষদের অবদান তো সামনে আসা দরকার ছিল। ইতিহাস বড় পুরুষতান্ত্রিক। লালা ওয়াসুমাল যখন বাগে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান, তাঁর স্ত্রী, পূরণদেবী তখন সন্তানসম্ভবা। পরে যাতে কলঙ্ক না রটে সেজন্য মৃতদেহ সৎকারের আগে উপস্থিত জনতার সামনে জানিয়ে দেওয়া হয়, পূরণের গর্ভে লালিত হচ্ছে শহিদ লালার সন্তান। এমন শোকের মাঝে পূরণের একান্ত ব্যাক্তিগত নিভৃতি গনবার্তার বিষয় হয়ে ওঠে। সেদিন মেয়েদের অপমান আর অসহায়তা অনুভব করতে পেরেছিলেন বলেই হয়তো জীবনভর পূরণ মেয়েদের পাশে থাকার ব্রত নিয়ে চলেছেন। হৃষীকেশে পরিবার পরিত্যক্তা মেয়েদের জন্যে আশ্রম করা থেকে শুরু করে মেয়েদের স্বাবলম্বী করে তুলতে সেলাই মেশিন দেওয়া, কি না করেছেন। হেলায় প্রত্যাখান করেছেন সরকারি কম্পেনশেসনও। দিদিশাশুড়ির সংবেদনশীলতার কথা বলতে গিয়ে চোখ ভিজে আসে পূরণের নাতবউ রমা কাপুরের, আজ এত বছর পরেও। কোনো লাইট এণ্ড সাউন্ডে ফুটে উঠবে না পূরণের ছবি। উচ্চারিত হবে না তার নাম কোনো ব্যারিটোনে। পূরণ বেঁচে থাকবেন কেবল পরিবারের স্মৃতিতে, নীরবে। ইতিহাসবিদ অশীন দাশগুপ্ত যেমন বলেছিলেন, একলা মানুষের কোনো ইতিহাস হয় না, তার আনন্দ বিষাদ নিয়ে সে হয়তো সাহিত্যের উপাদান হয়ে থেকে যাবে, পূরণরাও হয়তো তাই থাকবেন। কৃষণ চন্দরের 'অমৃতসর, আজাদি সে পহলে'-র মতো গল্প হয়তো সেই আধার যেখানে জালিয়াঁওয়ালা বাগের কাল্পনিক মেয়েরা সাহিত্যের আশ্রয় পান, ইতিহাসের নয়। সাদাত হাসান মান্টোর অনুভবেও ফিরে আসে অমৃতসরে তার বালক বয়সে দেখা সরকারি হুকুমনামার ইস্তেহার ছড়ানোর স্মৃতি, তাকে ঘিরে উৎকন্ঠা। ইতিহাসে নয়, সেই উৎকন্ঠা ভাষা পায় তাঁর প্রথম ছোটগল্প 'তামাশা'য়।
জার্নাল এর বড় অংশ জুড়ে আছেন রবীন্দ্রনাথ এবং গান্ধীজি। রোজনামচার আদলে লেখা হলেও, তা মূলত আর্কাইভের থেকে সংগৃহীত তথ্য নির্ভর। বিস্তর তার ব্যাপ্তি। জালিয়াঁওয়ালা বাগ হত্যাকান্ডের পরের বছরেই গান্ধীজি, কিচলু এবং কংগ্রেসের অন্যান্য নেতার আহ্বানে জালিয়াঁওয়ালা বাগ মেমোরিয়াল ফান্ডে দেশবাসীর থেকে অনুদান সংগ্রহ করা শুরু হয়। শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধাস্বরূপ এক স্মৃতিস্তম্ভ বানানোর পরিকল্পনা হয়। স্বজনহারানো পরিবারগুলো টাকা দিয়ে, গয়না দিয়ে সে পরিকল্পনার বাস্তবায়নের দিন গোনে। বাস্তবায়ন হতে লেগে যায় আরো চার দশক। ১৯৬১ সালে স্মারকস্তম্ভ তৈরি হয়। গান্ধীজির কল্পনায় সেই স্মারকস্তম্ভ ছিল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতীক। সেদিনের বধ্যভূমিতে তো জড়ো হয়েছিলেন হিন্দু, মুসলমান, শিখ সবাই। কিন্তু মাঝে ঘটে গেছে দেশভাগের বিভীষিকা। তাই না স্মৃতিসৌধ, না জালিয়াঁওয়ালা বাগ ন্যাশানাল মেমোরিয়াল অ্যাক্ট, কোথাওই সেই সম্প্রীতি ভাবনার উল্লেখ থাকল না। জাতীয় নেতৃবর্গের উৎসাহ থাকলেও, স্মারকস্তম্ভের মতো ঔপনিবেশিক কালচারে রবীন্দ্রনাথের সায় ছিল না। বরং রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের বিরুদ্ধে দেশবাসীর শান্তিপূর্ণ ও সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলাকেই তিনি শহিদস্মরণের পথ মনে করতেন। ঔপনিবেশিক ঔদ্ধত্বের উজ্জ্বল বিজ্ঞাপনী সৌধে তাঁর আপত্তি ছিল। জালিয়াঁওয়ালা বাগ হত্যাকান্ডের খবর পেয়ে বিচলিত রবীন্দ্রনাথ রানুকে লিখছেন "তোমরা তো পাঞ্জাবেই আছো, পাঞ্জাবের দুঃখের খবর বোধ হয় পাও। এই দুঃখের তাপ আমার বুকের পাঁজর পুড়িয়ে দিলে"। রবীন্দ্রনাথের নাইট উপাধি ত্যাগের বিষয়টিও সেদিন সমালোচনার ঊর্ধ্বে ছিলনা। গান্ধীজি মনে করতেন এটি রবীন্দ্রনাথের 'প্রিম্যাচিওর' সিদ্ধান্ত। ১৩ই এপ্রিলের ঘটনার পর রবীন্দ্রনাথ গান্ধীজিকে জানান যে তিনি বড়লাটের সঙ্গে দেখা করতে চান। গান্ধীজি তাতে সম্মত হন না। প্রতিবাদ সভা ডাকতে চেয়ে চিত্তরঞ্জন দাশের সঙ্গেও দেখা করেন। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের ডাকে সাড়া দেননি চিত্তরঞ্জন দাশ। দুজনের অম্লমধুর সম্পর্কে আরো একটু অম্লতা যোগ হয়। 'ন্যাশানালিজম' নামের 'ভৌগোলিক অপদেবতা'-র বিরুদ্ধে গিয়েছিলেন বলেই দেশের অনেকের সঙ্গে তাঁর সুর মেলেনি। ইতিহাস রবীন্দ্রনাথের নাইটহুড ত্যাগটুকুই মনে রেখেছে। ত্যাগপত্রে রবীন্দ্রনাথ যে ধনতান্ত্রিক যুদ্ধকামী নেশনতত্ত্বের বিরুদ্ধে ধিক্কার জানিয়েছিলেন তা আমরা বেমালুম ভুলে গেছি। আজ সে চিঠি বড় বেশি প্রাসঙ্গিক। জার্নালের পরিশিষ্টে এমন আরো কিছু চিঠিপত্র গেঁথে দিয়েছেন লেখক।
জালিয়াঁওয়ালা বাগ শুধু ঔপনিবেশিক না, সাধারণভাবে ক্ষমতার ঔদ্ধত্বের প্রতীক। স্বাধীনতার পর সে দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে রাষ্ট্র। ১৩ই এপ্রিলের ঘটনার পরপরই অমৃতসরে জারি হয় 'ক্রলিং অর্ডার'। গোরা সৈন্যরা মানুষকে রাস্তায় বুকে হেঁটে চলতে বাধ্য করে। এর সঙ্গে শর্মিষ্ঠা মিল খুঁজে পান কোভিড কালে লকডাউনের সময় পুলিশের অমানবিক অতিসক্রিয়তার। মধ্যপ্রদেশ থেকে হেঁটে আসা বিদ্ধস্ত পরিযায়ী শ্রমিকদের পথে বেরনোর অপরাধে কান ধরে নিল ডাউন করে রাখে উত্তরপ্রদেশের বদায়ুঁর পুলিশ। এই ছবি সোশাল মিডিয়ার দৌলতে অনেকেরই দেখা। সেদিনের গোরা পল্টনের সঙ্গে তবে আর তফাৎ কোথায়! জালিয়াঁওয়ালা বাগ আজও ঘটে!
জালিয়াঁওয়ালা বাগ যদি রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের প্রতীক হয়, তবে রাষ্ট্রক্ষমতার বিরুদ্ধে গলা তোলার স্পর্ধারও প্রতীক। উধম সিং এর ছবি হাতে কৃষক আন্দোলনে হার না-মানা মানুষগুলোর মনোবলের মধ্যেও জালিয়াঁওয়ালাবাগের ছায়া পড়ে। শাহিন বাগে সি এ এ বিরোধী অবস্থানে অনড় মেয়েদের মধ্যেও কি জালিয়াঁওয়ালা বাগের প্রতিবাদী সত্তা ফিরে আসেনা? স্ট্যান স্বামীও কি স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রনির্মিত জালিয়াঁওয়ালা বাগের শহিদ নন? ভিন্ন মতের অধিকার এখন রাষ্ট্রদ্রোহীতার সমান। তবে কি দেশটাই জালিয়াঁওয়ালা বাগ হয়ে গেল!
জালিয়াঁওয়ালা বাগের শতবর্ষে ঔপনিবেশিক ক্ষমতা ও সন্ত্রাসের নানা রূপ নিয়ে এক পাবলিক হিসট্রি প্রজেক্টের পরিকল্পনা নিয়েছিলেন শর্মিষ্ঠা। যার নিজের বাবার জ্যেঠু স্বাধীনতা সংগ্রামের শহিদ, যার মা'র দিদিমা অমলাবালা থেকে শুরু করে মামাবাড়ির দাদুরা সবাই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন, তার কাছে এই প্রজেক্ট কতটা আবেগের তা অনুমান করা যায়। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের পোর্ট্রেট গ্যালারিতে দীর্ঘ পরিশ্রমে তিনি ও তাঁর দলবল গড়ে তুলেছিলেন এক ইনস্টলেশন, জালিয়াঁওয়ালা বাগের আদলে। রক্ত রাঙা কার্পেটের ওপর ছড়ানো নেশন, টেরর, ফ্লগিং, ক্রলিং, ফায়ার এসব শব্দগুলো মহারানীর প্রাসাদের অলিন্দে সাম্রাজ্যবাদী ঔদ্ধত্যের প্রতিস্পর্ধী হয়ে উঠুক এমনটাই ওরা চেয়েছিলেন। প্রতীকী কুয়ো থেকে শান্তিনিকেতনী আড্ডাতলা, চিঠিপত্র, ছবি, মৌখিক স্মৃতিচারনের রেকর্ডিং, কি না ছিল সেই ইনস্টলেশনে! কিন্তু কোভিড লকডাউন সব পন্ড করে দেয়। শুরুর অল্প কয়েকদিন পরেই বন্ধ হয়ে যায় প্রদর্শনী। সেই মন খারাপকে সঙ্গী করেই লিখতে বসেন জার্নাল। পাঠক অবশ্য দেখতে পাবেন সেই ইনস্টলেশন, শর্মিষ্ঠার আবেগ মাখা অনুপূর্ব বর্ননায় আর ছবির ভিতর দিয়ে। বইতে ইনস্টলেশনের সাদা কালো ছবি গুলো আর একটু স্পষ্ট হলে ভাল হত, রঙিন হলে তো কথাই নেই। প্রদর্শনী দেখতে না পাওয়ার আক্ষেপ কিছুটা কম হত।
জার্নাল সেই জালিয়াঁওয়ালা বাগকে খুঁজে পেতে চেয়েছে, যা তখনো স্বর্নমন্দির লাগোয়া এক ট্যুরিস্ট স্পট হয়ে ওঠেনি, যেখানে ছিল না কোনো কেয়ারি করা বাগান কিংবা দেয়াল জোড়া ম্যুরাল, ছিল না লাইট এন্ড সাউন্ডের নাটকীয় বিনোদন। স্বজন হারা অমৃতসরবাসীরা যেখানে প্রতি বছর 'খুনী বৈশাখী' তে যেতেন দেয়ালের গায়ে বুলেটের দাগে মাথা ঠেকাতে। আজও হয়তো যান। এই জার্নাল পাঠককে আরো একবার টেনে নিয়ে যাবে সেই বধ্যভূমিতে। তখন বাগে ঢোকা বেরনোর পথ ছিল একটাই। তবে একশো বছরের উদযাপনে বর্তমান সরকার বাহাদুর আমাদের খাসা এক তৌফা দিয়েছেন বটে। জালিয়াঁওয়ালা বাগ থেকে বেরনোর জন্য আলাদা এক প্রশস্ত পথ বানিয়ে দিয়েছেন। আহা! এমন পর্যটন-বান্ধব সরকার যদি সেদিন থাকত তাহলে কি ডায়ারের হাতে অতগুলো তাজা প্রান যেত! হায় রে ইতিহাস! আজকাল তুমি বড় নতুন পথে হাঁটছো! মনে রাখতে হবে, বাগে ঢোকার একমাত্র সরু গলি-পথখানি স্মৃতির, আর আজকের প্রশস্ত প্রস্থান পথটি বিস্মৃতির। বেছে নিন পাঠক, কোন পথ ধরে আপনি হাঁটবেন।