‘না, ওভাবে ফিরিয়ে নিও না মুখ,
ভেবো না আমার নেই কালজ্ঞান। বস্তুত আমিও
অনেক উত্তাল দীপ্র মিছিলে শামিল হ’য়ে যাই,
যখন ভিয়েতনামে পড়ে বোমা, আমায় হৃদয়
হয় দগ্ধ গ্রাম মেঘে মেঘে খুনখারাবির চিহ্ন
খুঁজে পাই; উপরন্তু বসন্তের পিঠে ছুরি মেরে
হত্যাকারী সেজে বসে আছি।’ কেন এ প্রহরে
তোমাকে হঠাৎ দূরে বকুলতলায় যেতে বলি?(আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি, ১৯৭৪)।
‘একটি নিটোল স্বপ্ন তাকে কম্পোজ করতে দিয়ে দেখি,
স্বপ্নের জায়গায় দিব্যি দুঃস্বপ্ন দিয়েছে বসিয়ে সে,
সুস্থতার জায়গায় অসুখ আর উন্মত্ততা। তার
হাতের অস্থির স্পর্শে সুবিশাল উন্মুক্ত প্রান্তর
কারাগার হয়ে যায়, শিশুর চিৎকারধন্য মৃদু আলোময়
একটি আঁতুড়ঘর গোরস্থান। পরিপাটি গ্রাম,
মুখর শহর তাকে কম্পোজ করতে দিলেই সে
টাইপে সাজাতো দগ্ধ, বিধ্বস্ত ভিয়েতনাম ...’
ভিয়েতনাম
দিন-দুপুরে ওমা!
ফেললে কারা বোমা?
মেকং নদীর দেশে
হুট করে ভাই এসে
গোল বাধাল কারা?
বর্গি নাকি তারা?
ফসল হল ধুলো,
পুড়ছে শহরগুলো-
কী যে তাদের নাম?
কোথায় ওদের ধাম?
পুড়ছে ভিয়েতনাম।
বাজপাখিদের মতো
উড়ছে বিমান শত
শহর এবং গ্রামে,
উড়ছে ভিয়েতনামে।
বাজপাখিরা জেনো
পণ করেছে যেন
ঝাপটা মেরে জোরে
তেড়ে এসে ওরে
ডানে কিংবা বাঁয়ে
তীক্ষ্ম নখের ঘায়ে
উপড়ে নেবে গ্রাম,
পুড়ছে ভিয়েতনাম।
বর্গি বটে তারা।
দিন-দুপুরে যারা
করছে রাহাজানি,
তাদের কাছে জানি
নেই মানুষের দাম।
পুড়ছে ভিয়েতনাম।
জ্বলছে অবিরত
বারুদ জ্বলার মতো,
জ্বলছে ভিয়েতনাম।(লাল ফুলকির ছড়া, ১৯৯৫)
অনাদি সৃষ্টির সেই আদিকাল থেকে
তুমি ছিলে নীল আকাশের মতো ধ্রুব।
ভিয়েতনাম, তুমি আছ গ্রীষ্মের সূর্যের মতো সত্য।
তুমি থাকবে আসন্ন ভোর রাত্রিশেষে যেমন নিশ্চিত।
পররাজ্যগ্রাসী সাম্রাজ্যবাদের অক্টোপাস-ব্যূহ
চূর্ণ করে তোমার উত্থান চিহ্নিত করেছো তুমি
পৃথিবীর বুকে; রক্তঝরা সূর্যের অক্ষরে
তুমি লিখেছো তোমার নামঃ ভি-য়ে-ত-না-ম।
Where are the helicopters of US Aid?
Smuggling dope in Bangkok's green shade
Where is America's Air Force of Light?
Bombing North Laos all day all night
Where are the President's Armies of Gold
Billionaire Navies merciful Bold?
Bringing us medicine food and relief?
Napalming North Vietnam and causing more grief?
Afterthoughts on a Napalm-Drop on Jungle Villages near Haiphongকবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয় ভেঞ্চার (Venture) নামের এক পত্রিকায়, যা ছিল ফ্লোরিডার এক স্থানীয় গির্জার সাপ্তাহিক পত্রিকা। কবিতার বক্তব্যে মার্কিন সরকার এতটাই অসন্তুষ্ট হয় যে দেশের প্রতিরক্ষা বিভাগ ওই পত্রিকাটিকে কালো তালিকাভুক্ত করে। ফল বিপরীত হয়, মানুষ বেশি করে পড়তে থাকে কবিতাটি।
Barbara Beidler
All was still.
The sun rose through silver pine boughs,
Over sleeping green-straw huts,
Over cool rice ponds,
Through the emerald jungles,
Into the sky.
The men rose and went out to the fields and ponds.
The women set pots on the fire, boiling rice and jungle berries,
and some with baskets went for fish.
The children played in the streams and danced through the weeds.
Then there was the flash -- silver and gold,
Silver and gold,
Silver birds flying,
Golden water raining,
The rice ponds blazed with the new water.
The jungles burst into gold and sent up little birds of fire.
Little animals with fur of flame.
Then the children flamed,
Running -- their clothes flying like fiery kites,
Screaming -- their screams dying as their faces seared,
The women’s baskets burned on their heads.
The men’s boats blazed on the rice waters,
Then the rains came.
A rag, fire-black, fluttered.
A curl of smoke rose from a lone rice stem.
The forest lay singed, seared.
A hut crumbled.
And all was still.
Listen, Americans,
Listen, clear and long.
The children are screaming
In the jungles of Haiphong.
Truth Blazes Even in Little Children’s Hearts
Huy Can
Little Barbara,
Separated from us by the ocean
And by the color of your skin
You have heard and understood.
You have heard the screams
Of the children near Haiphong
Whose clothing turns to flame
From American napalm.
You are twelve years old
And your heart speaks
For the conscience of mankind
Tormented by each rain of bombs.
America, America!
Don't you hear the screams
Of those thousands of children
Consumed by the golden fire?
Golden fire of napalm
Golden fire of dollars
Which eats the flesh
Like a cancer.
A filthy cancer
Devouring the bones
The blood and the soul
Of the United States.
America, don't you feel
The fire burning your flesh
And your conscience
Killed by your bombs?
Little Barbara,
The fire of your poetry
Scorches the demons
And drives them wild.
They can ban poetry
But how can they ban
The truth that blazes
Even in little children's hearts!
বারবারা বিডলারকে
আসাদ চৌধুরী
১
বারবারা
ভিয়েতনামের উপর তোমার অনুভূতির তরজমা আমি পড়েছি --
তোমার হৃদয়ের সুবাতাস
আমার গিলে-করা পাঞ্জাবিকে মিছিলে নামিয়েছিল
প্রাচ্যের নির্যাতিত মানুষগুলোর জন্যে অসীম দরদ ছিল সে লেখায়
আমি তোমার ওই একটি লেখাই পড়েছি
আশীর্বাদ করেছিলাম, তোমার সোনার দোয়াত কলম হোক।
আমার বড়ো জানতে ইচ্ছে করে বারবারা, তুমি এখন কেমন আছ?
নিশ্চয়ই তুমি ডেট করতে শিখে গেছ।
গাউনের রঙ আর হ্যাট নিয়ে কি চায়ের টেবিলে মার সঙ্গে ঝগড়া হয়?
অনভ্যস্ত ব্রেসিয়ারের নিচে তোমার হৃদয়কে কি চিরদিন ঢেকে দিলে?
আমার ভীষণ জানতে ইচ্ছে করে বারবারা।
তোমাদের কাগজে নিশ্চয়ই ইয়াহিয়া খাঁর ছবি ছাপা হয় --
বিবেকের বোতামগুলো খুলে হৃদয় দিয়ে দেখো
ওটা একটা জল্লাদের ছবি
পনেরো লক্ষ নিরস্ত্র লোককে ঠাণ্ডা মাথায় সে হত্যা করেছে
মানুষের কষ্টার্জিত সভ্যতাকে সে গলা টিপে হত্যা করেছে
অদ্ভুত জাদুকরকে দেখ
বিংশ শতাব্দীকে সে কৌশলে টেনে হিঁচড়ে মধ্যযুগে নিয়ে যায়।
দেশলাইয়ের বাক্সর মতো সহজে ভাঙে
গ্রন্থাগার, উপাসনালয়, ছাত্রাবাস,
মানুষের সাধ্যমত ঘরবাড়ি
সাত কোটি মানুষের আকাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের ফুলকে সে বুট জুতোয় থেঁতলে দেয়।
২
টু উইমেন ছবিটা দেখেছ বারবারা?
গির্জায় ধর্ষিতা সোফিয়া লোরেনকে দেখে নিশ্চয়ই কেঁদেছিলে
আমি কাঁদিনি, বুকটা শুধু খাঁ খাঁ করেছিল--
সোফিয়া লোরেনকে পাঠিয়ে দিয়ো বাংলাদেশে
তিরিশ হাজার রমণীর নির্মম অভিজ্ঞতা শুনে
তিনি শিউরে উঠবেন।
অভিধান থেকে নয়
আশি লক্ষ শরণার্থীর কাছে জেনে নাও, নির্বাসনের অর্থ কী?
জর্জ ওয়াশিংটনের ছবিঅলা ডাকটিকেটে খোঁজ থাকবে না স্বাধীনতার
আমাদের মুক্তিযোদ্ধার কাছে এসো --
সাধু অ্যাবের মর্মর মূর্তিকে গণতন্ত্র আর মানবতার জন্য
মালির ঘামে ভেজা ফুলের তোড়া দিয়ো না-
নিহত লোকটি লজ্জায় ঘৃণায় আবার আত্মহত্যা করবে।
বারবারা, এসো,
রবিশঙ্করের সুরে সুরে মুমূর্ষু মানবতাকে গাই
বিবেকের জংধরা দরোজায় প্রবল করাঘাত করি
অন্যায়ের বিপুল হিমালয় দেখে এসো ক্রূদ্ধ হই, সংগঠিত হই
জল্লাদের শাণিত অস্ত্র
সভ্যতার নির্মল পুষ্পকে আহত করার পূর্বে,
দর্শন ও সাহিত্যকে হত্যা করার পূর্বে
এসো বারবারা বজ্র হয়ে বিদ্ধ করি তাকে।