অবশ্য সব গাছের পাতা ঝরে না। এভারগ্রীন জাতীয় গাছগুলি-- পাইন, সিডার, ফার, গিংকো ইত্যাদি সারা বছর সবুজ থাকে। এসব গাছে ফুল হয় না, এদের সরু ছুঁচের মতো পাতায় একরকম রাসায়নিক রেজিন বা wax লাগানো থাকে যাতে প্রচণ্ড ঠান্ডাতেও ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, ভারী বরফ সহজেই ঝরে পড়ে যায়। কিন্তু পত্রমোচী বা deciduous জাতীয় গাছগুলির পাতা চ্যাপটা--সূর্যের আলো থেকে ক্লোরোফিলের সাহায্যে এনার্জি আহরণের জন্য। বেশির ভাগ ফলফুলের গাছগুলি এই জাতীয়। সব ঘাস আর শস্যও এই দলে পড়ে। এরা বছরে একবার জন্মেই মরে যায় কিংবা আমেরিকা-ইউরোপের মতো নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ায় পাতা ঝরিয়ে দিব্যি অনেক বছর বেঁচে থাকে। এদের পাতাগুলো ঠান্ডায় জমে মরে যায়। মরা পাতা মাটিতে ঝরে গাছেদের খাবার রসদ জোগায়, অন্যান্য পশুপাখি, কীটপতঙ্গদেরও বাঁচিয়ে রাখে।
আমেরিকার উত্তর-পূর্ব নিউ-ইংল্যান্ড অঞ্চলে যেরকম রঙের ছটা দেখা যায় তা বোধহয় পৃথিবীর অন্য কোথাও দেখা যায় না। এদেশে অন্যান্য জায়গাতেও এরকম রং দেখা যায়--উত্তর মিশিগান অঞ্চলে, উত্তর মিসিসিপি নদীর আশেপাশে, কলোরাডোর রকি পাহাড়ে অ্যাস্পেন গাছের মাথায়, অ্যাপালাচিয়ান পাহাড়ের কোণে কানাচে। রংদার পাতার জন্য চাই সঠিক তাপমাত্রা, উচ্চতা ও বৃষ্টির পরিমাণ। এরই সম্পূর্ণ সমন্বয় হয়েছে নিউ-ইংল্যান্ড অঞ্চলে। অকটোবর-নভেম্বরে সেখানে খবরের কাগজে দৈনিক আবহাওয়ার সঙ্গেই পাতার রঙের খবরও দেওয়া হয়। কোনখানে, কোন জায়গায় আসছে সপ্তাহে কোন গাছের রং সবচেয়ে জোরদার হবে তার পূর্বাভাস। দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে বাস বোঝাই টুরিস্টরা আসেন নিউ-ইংল্যান্ডের এই বার্ষিক শোভা দেখতে।
হলুদ রঙটা তো বোঝা গেল, কিন্তু লাল রং? তার জন্য দায়ী anthocyanin নামক একটি পদার্থ যা carotene জাতীয় লাল রঙের সমগোত্র। গাছের পাতায় এই বস্তুটির উৎপাদনে লাল, কমলা, গোলাপি ইত্যাদি রঙের বাহার খোলে। উজ্জ্বল দিন ও ঠান্ডা রাত্রের সমন্বয়ে এইসব রংগুলি আরও ভালো দেখায়। কেন হলুদের জায়গায় লাল, তার সঠিক উত্তর জানা নেই। অনেকে মনে করেন, লাল রং একধরনের কীট প্রতিরোধক। এফিড জাতীয় পোকারা নাকি লালের চেয়ে হলদে রং বেশি পছন্দ করে। আরেকটা লক্ষণীয় ব্যাপার-- লাল রংটা আমেরিকা আর পূর্ব এশিয়ার দেশেই বেশি দেখা যায়। ইউরোপের গাছগুলো বেশির ভাগই হলুদ রঙের। এর ব্যাখ্যাও সঠিক জানা নেই। হয়তো স্থানীয় পোকামাকড়ের প্রভাব, বা আবহাওয়ার ভিন্নতা এর জন্য দায়ি। অনেকে মনে করেন ইউরোপের পর্বতমালা (পূর্ব-পশ্চিম) আর আমেরিকার পাহাড়গুলো (উত্তর-দক্ষিণ) হওয়াটাও কোনো ভাবে প্রভাবিত করেছে। আসল উত্তরটা অজানা।
বাড়ি ফিরে দেখি, আহা! আমার বাগানে সত্তর বছরের পুরনো গাছটা সোনার বর্ণ ধরেছে আর তার পাশেই আমার সদ্য পোঁতা বাচ্চা সুগার মেপল গাছটাও দুদিনেই টুকটুকে লাল হয়ে উঠেছে। যেন বলল, 'আমরাই বা কম কিসে? আমাদের ছেড়ে কোথায় গেছিলে পাতার রং দেখতে?'