১
— বাবা! বাবা!
— কি রে ছোটন, কি হলো? পেয়ে গেছিস?
— পেয়েছি বাবা, শুক্কুর বারের মধ্যে টাকা জমা দিতে বলেছে। তবে, বাবা...
— আবার কি? দু'জনে যাবো।
— তা নয় বাবা। কাউন্টারের ভদ্রলোক আমাকে ভেতরে পাঠালেন, সেখানে আরেকজন ভদ্রলোক বললেন আরো পাঁচ হাজার নিয়ে যেতে। আমাদের সঙ্গে করে নিয়ে গিয়ে উনি সেটা দোতলার অফিসে পৌঁছে দেবেন।
— সে কি রে! আবার সেই ঘুষ! সব্বনেশে কথা! কি হবে এখন? একটু ভেবে দেখি।
২
— সব তো বুঝলাম, তা অসুবিধেটা কোথায়?
— কেন, ওই ঘুষের বাড়তি টাকাটা? মনে হচ্ছে ওটা না দিলে হবে না।
— এবার বুঝেছো কেন গত বছর খোকনের ইঞ্জিনিয়ারিং এর পেছনে বটঠাকুরের দরুণ সেই টাকাটা তোমায় নষ্ট করতে দিইনি? এবার ছোটনের কাজে লাগিয়ে দাও ওটা।
— কি বলছো ছোটবৌ, দাদা আলাদা করে খোকনের কলেজের জন্য ওটা আমার হাতে...
— তা কলেজেই তো দিচ্ছো বাপু, খোকনের না হয় ছোটনের।
— গত বছর যখন বোঝা গেলো বৌদি ব্যাপারটা জানে না, তখনই তুমি খোকনের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ঢোকাটা আটকালে। তাই আমি ঠিক করলাম ওকে ডাক্তারি পড়াবোই। এখন আবার তুমি এ সব কি বলছো ছোটবৌ?
— এই চুপ, খোকন এদিকে আসছে।
৩
— কাকু তোমরা ছোটনের সুখবরটা পেয়েছো তো? দারুণ, তাই না? আর কাকু, মা বলছিলো এক মিনিট আসতে পারবে?
— দিদি কি ছাদে না কি রে খোকন?
— না খুড়ীমা, এই ঘরে নামলো।
— শোন খোকন, তোকে আবার বলছি, ডাক্তার তোকে হতেই হবে, বুঝলি?
৪
— এসো ঠাকুরপো, আয় রে ছোট। বোস।
— ডেকেছো বৌদি? কি ব্যাপার গো?
— ঠাকুরপো তোমার মনে আছে গত বছর খোকনের ইংরিজি কলেজে ভর্তি হওয়ার সময়ে তুমি বলেছিলে উনি নাকি তোমার কাছে কিছু রেখে গেছেন ঐ কলেজেরই ব্যাপারে?
— আঃ বৌদি ইংরিজি কলেজ নয় ওটা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। হ্যাঁ দাদা তো রেখে গেছেই। কিন্ত খোকনের সেই কলেজটা আরো অনেক বেশী চাইছিলো যে! তাই দেওয়া সম্ভব হয়নি। তা তুমি ভেবো না...
— না রে বাপু ভাবছি না কিছুই, ওই ছোটনটার কলেজে চাকরি পাওয়ার সুখবরটা খোকনের মুখে শুনে আমার মনে হলো...
— চাকরি নয় গো বৌদি, পড়বার অ্যাডমিশন।
— বুঝলাম, তা তুমি একটু দেখো না, ওটা দিয়ে যদি আমাদের ছোটনের কাজটা হয়ে যায়? আরো শ' চারেক আমার কাছে জমেছে, যদি দরকার হয়? বাড়ির ছেলেগুলোর তো কিছু একটা হিল্লে হওয়া দরকার? আর ঐ ঘুষ টুষ বলে তুমি রাগারাগি কোরোনা বাপু, গোরাদের আমলে বাপ দাদারা অমন অনেক ঘরে এনেছে, তখন ওকে বলতো উপরি।
৫
৺কিশোরীলাল চট্টখণ্ডীর কনিষ্ঠ বনোয়ারীলালের সহধর্মিণী মুখে কাপড় গুঁজিয়া ঘর হইতে চলিয়া যাইতেছিলেন, চৌকাঠে হোঁচট খাইয়া পড়িয়া গেলেন। কপালের একাংশ কাটিয়া গেলো।