প্রতি মুহূর্তে লাঞ্ছিত মানবসত্তার রুখে দাঁড়ানোর এক ব্যতিক্রমী গল্প কান্তারভূষণ নন্দীর “গরর্”। আসামে অসমিয়া-বাঙালি সম্পর্কের নানা উত্থান পতন ঘটেছে নানা সময়ে। বিরোধের পর সাধারণ নিয়মেই এসেছে মিলনের পালা। আবার আপাত-মিলিত দ্বিজাতিকে বিচ্ছিন্নতার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে নানা ধরণের সামাজিক রাজনৈতিক সমীকরণের উসকানিতে। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় বসে দুই জাতির সমন্বয়কে আধেয় করে যে গল্পগুলি লেখা হয় সেখানে এই অস্থির টানাপোড়েনের জন্য দেখা যায় আসলে দু'দলই সমদোষে দোষী। বেশিরভাগ গল্পকারদের প্রবণতা যাই হোক না কেন প্রকৃত সত্য অন্য কথা বলে। আর প্রতিস্রোতী সত্যের নির্ভিক উচ্চারণ কান্তারের এই গল্প তাঁকে তাঁর সমসাময়িক বহু গল্পকার থেকে এক স্বতন্ত্র অবস্থানে নিয়ে যায়।
ছোটোবেলায় শোনা 'উঠাই লই যাম'- থেকে মধ্য বয়সের 'বাড়িতে ইয়ং মেয়ে আছে না আপনার...' হুমকির মুখে বেঁচে থাকা জীবনের গ্লানি ঘোচে না ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার বাঙালিদের। অসমিয়াদের বাঙালির উপর বর্ষিত 'কেলা বঙাল' শব্দটিতো আজ প্রায় মিথের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। 'কেলা বঙাল রিফ্যুজিদের কাছে অন্যায় আব্দার অসম্মতিতে বহুমাত্রিক বিপদের হুমকি এ সমস্তই যেন এক গা-সওয়া বাস্তবতায় পর্যবসিত হয়েছে একটা সময়। শুধুমাত্র ভাষিক পরিচয়ে বাঙালি হওয়ার অপরাধে দশদিনের মধ্যে দু'বার 'কেলা বঙাল' অশ্লীল অপমান সহ্য করতে হয় অনিমেষকে, শারীরিক, মানসিক অপমানে ধুঁকতে ধুঁকতে অসহ্য মনে হয় নিজের শামুক জীবন। নামঘরের সাহায্যার্থে থিয়েটারের টিকিট কেনার প্রচ্ছন্ন হুমকিতে আহত অনিমেষের নিজেকে এক দিকচিহ্নহীন, দিশাহীন নিরালম্ব প্যারাসাইট মনে হয়। আসামে অসমিয়া-বাঙালি সম্পর্কে মিলনের আড়ম্বর যে শুধুই চকচকে খোলস-কথা তার অন্ধকার অন্তঃসার শূন্য দিকটি তীক্ষ্ণ স্পষ্ট উচ্চারণে কান্তার দেখিয়ে দেন যখন অনিমেষ বলে-
"আমরা সবাই মিলে এই যে মিলনের ঢোল পেটাচ্ছি সেটা এক তরফা নয়? ওরা মিলন মিলন বলে উদ্বাহু নাচছে আমাদের মতো? আসলে আমরা শুধুই তেল দিয়ে যাচ্ছি সুজনদা।"-এই 'তেল দেওয়া' শব্দটি আমাদের জনবিন্যাস তথা দুই ভাষিক সম্প্রদায়ের জটিল সামাজিক সামাজিক সম্পর্ক-বিন্যাসের ফলেই বহুস্বরিক হয়ে ওঠে। সংখ্যালঘু বাঙালির বিপরীতে সংখ্যাগুরু অসমিয়া তথা উগ্র জাতীয়তাবাদী প্রশাসনের দ্বিমুখী চাপে সমন্বয়ের পন্থা দুটি গোষ্ঠীর কাছে দুধরনের অর্থবহ হয়ে ওঠে। আসামের সাম্প্রতিক অবস্থানে এই মিলনের কথা অসমিয়াদের কাছে এক উদারপন্থার আত্মতৃপ্তি আর সংখ্যালঘু বাঙালির চরম সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে আত্মসমর্পণ ভিন্ন অন্য কোনও মাত্রায় উন্নীত হতে পারে না। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার ভুক্তভোগী বাঙালির অসহায় অসহ্য ক্ষোভজাত উচ্চারণ 'তেল দেওয়া' তাদের জন্য আবার অবিকৃত ভাবে উচ্চারিত হয় বরাক উপত্যকার বাঙালিদের কণ্ঠে তীব্র শ্লেষের মোড়কে। এই হাত বাড়ানোটি 'তেল দেওয়া' বৈ অন্যতর কোনও ভাবনার সামান্যতম অবকাশও রাখে না। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার সেইসব তথাকথিত বুদ্ধিজীবি কবি-সাহিত্যিক যারা আরও একধাপ এগিয়ে গিয়ে মিলনের ক্ষেত্র প্রস্তুতের অভিপ্রায়ে স্বজাতির নানা ভুল ভ্রান্তির প্রবন্ধে বিপরীত অবস্থানের তোষণে মাতেন তাদের মুখোশ সর্বস্ব ভ্রষ্টনীতির যথার্থ রূপ ফুটিয়ে তোলেন কান্তার তাঁর ধারালো বাক্য বিন্যাসে- সত্যের আসল চেহারা আরও একবার তুলে ধরেন স্পষ্ট আলোয়।-
"ইতিহাসের কৃমি খুঁটে খুঁটে বাঙালির ভুল আর কত বের করবে বস? এবার সত্যিটা বুঝতে শেখো। এইসব আলবালছাল মিলনের গান গাইলেও তুমি বাঙালি এবং তুমি বাংলাদেশী। তুমি আসামের জমি বাংলাদেশকে দিয়েছ। তোমার জন্য ডি-ভোটার, ডিটেনশন ক্যাম্প, এন আর সি। তুমি এখনও কেলা বঙাল। 'কেলা' শব্দটি বাঙালি ছাড়া আর অন্য কারও সঙ্গে ম্যাচ করে না। তুমি জানো না?"-এ তো গেল কতিপয় বাঙালি বুদ্ধিজীবির প্রকৃত অবস্থান। তারপর আসে এই উপত্যকার বাঙালি রাজনৈতিক নেতা। মধুসূদন ঘোষ। মনে মনে ভরসা খোঁজে অনিমেষ হাজার হোক বাঙালি, সমস্যাটা বুঝবেন নিশ্চয়ই।এইখানে কান্তার দেখান রাজনীতিবিদদের কোনও আলাদা জাত হয় না, স্বজাতি প্রেম হয় না। তাদের সমস্ত নীতি, প্রেম, ঔদার্য আবর্তিত হয় ভোটের অঙ্ক মাথায় রেখে। মধুসূদন ঘোষ টুসকি মেরে সিগারেট ফেলে রুমালে ঘাম মোছেন। আসলে অনিমেষের সমস্ত অসহায় যন্ত্রণাকে টুসকি মেরে উড়িয়ে দিয়ে নিজের অসহায়তার প্রকাশ লুকান। মধুসূদনের কণ্ঠে উচ্চারিত হয় চিরাচরিত রাজনৈতিক পরিভাষা-
"আমি বাঙালি আপনি বাঙালি। বাঙালির প্রতি বাঙালির টান থাকবে, সহানুভূতিও থাকবে। আপনার সমস্যাটা আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু আমার দিকটাও তো আপনার ভাবতে হবে না কি! এই ওয়ার্ডের পঞ্চাশ শতাংশ ভোটার ওরা, জানেন তো। ওরাই আমাকে ভোটে জিতিয়েছে, আগামী দিনেও জেতাবে। ওদের চটাতে যাব কেন বলুন তো? বাড়িতে ইয়ং মেয়ে আছে না আপনার!"এটাই চূড়ান্ত সত্য চিত্র। আমরা ওরা এই দুইয়ের মধ্যে যারা তথাকথিত সেতু বন্ধনের ঠিকাদার তাদের মধ্যে, সদা সক্রিয় থাকে, 'ভোটার সংখ্যা', 'চটানো যাবে না' সিদ্ধান্তগুলি তথা 'বাড়িতে ইয়ং মেয়ে' থাকা কিংবা আদিবাসী মেয়ের গ্যাং রেপ হওয়ার সমীকরণ। এই সমস্ত জটিল সামাজিক, রাজনৈতিক চক্রব্যূহে ব্রহ্মপুত্রের বাঙালি যুঝে চলে বাঁচার লড়াই- তার মাঝেও স্বপ্ন দেখে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের এক খোলা আকাশের যার আশ্রয়ে একদিন টুসিরা পথ খুঁজে পাবে। হয়ত ঘর বাঁধবে অনির্বাণ ডেকার সঙ্গে। আবারও সমন্বয়ের ইসারা। কিন্তু তারপরও বোধহয় সমঝোতা পিছু ছাড়ে না কারণ এটাই চরম বাস্তব। মাথা তুলে বেঁচে থাকার আত্মিক প্রস্তুতির কালে মাথা গোঁজার নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে মেনে নিয়ে হয় ময়নাদ্বীপ বেঙ্গলে একটা স্থায়ী ঠিকানার আস্তানাকেই। বিশ্বাস অবিশ্বাস ইচ্ছে অনিচ্ছের এই দোলাচলে সমঝোতা করতেই হয়-
"শেষমেষ ওদিকেই তো যেতে হবে।" সাম্প্রতিক কোকড়াঝার দাঙ্গার প্রেক্ষাপট তৈরির থমথমে মুহূর্তে যখন অদ্ভুত নিরাসক্ত কণ্ঠে বিনয়ের কণ্ঠে উচ্চারিত হয়- 'আমাদের ভয় নেই। আমরা সেফ, বনধ হলে মন্দ কী একদিন ছুটি পাওয়া যাবে- তখন আমাদের অন্তঃসারশূন্য মেকি সমন্বয়ী জীবনের ভয়ংকর চেহারায় পাঠক কেঁপে ওঠেন আমূল।
'একটা কাটা হাত' গল্পে হাত-এর প্রসঙ্গ ঘুরে ফিরে এসেছে নানাভাবে নানা ব্যঞ্জনায়। জলে ভেসে আসা একটা কাটা হাত যে হাত ঘিরে উত্তপ্ত হতে থাকে এলাকার পরিস্থিতি। সুযোগ-সন্ধানী প্রতিটি দল, প্রতিটি মানুষ চায় নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার করে কাটাহাতের মালিক নিশ্চিত করতে। এক নিষ্প্রাণ পরিচয়হীন কাটা হাতের বিপ্রতীপে গোটা গল্প জুড়ে উঠে এসেছে অজস্র সচল হাতের প্রসঙ্গ নানা ব্যঞ্জনায়। ভরসার উত্তাপে, তাচ্ছিল্যে, অসহায় সংকটে আশ্রয় অবলম্বনে, নিজের উপস্থিতির সোচ্চার প্রকাশে জীবন্ত হাতের নানা সচলতাকেই হাতিয়ার করেছেন গল্পকার। কিন্তু এত ব্যঞ্জনাধর্মী বহুমুখী হাতের ব্যবহারের পরও আসলে যে শুধুমাত্র আত্মরতি ভিন্ন অন্য কোনও ব্যবহারযোগ্যতা এই হাতের নেই, আমাদের আপাত স্বাভাবিক সভ্য সমাজে সেই তীব্র চাবুকের অসাধারণ প্রয়োগে গদল্পকার সচকিত করেন পাঠকদের এক নির্মম বাস্তব সত্যের প্রতি।
মানুষে মানুষের বিভেদ, জাতিগত দাঙ্গার আপাত শান্ত আগ্নেয়গিরির উপর বসে এক কল্পিত নিরাপদ আশ্রয়ের স্বপ্নে বিনয় খুব সহজেই স্ত্রী অর্পিতাকে ভরসা জোগাতে চায়- আমাদের ভয় নেই, আমরা সেফ। এও আসলে আমাদের নড়বড়ে জীবনে এক প্যারানয়েড অবলম্বন মাত্র। এই অবলম্বনটুকুই যথেষ্ট মেনে নিয়ে তার যথার্থ গভীরতা অনুধাবনে প্রকৃত সত্যের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে বাঁচতে অভ্যস্ত অর্পিতার মতো বেশিরভাগ মানুষেরা। অবলম্বনের অবস্থানই নির্ধারণ করে অর্পিতাদের মতাদর্শগত পরিসরটি। এই নিরালম্ব অবস্থানকে অবলম্বন করেই অর্পিতারা জ্বলন্ত সময়ে রুটিন মাফিক খাওয়া দাওযার পাট চুকিয়ে ইংরেজি সিনেমা এবং সঙ্গম শেষে নিশ্চিন্ত ঘুমে তলিয়ে যেতে পারে। লক্ষ্যণীয়ভাবে এই রুটিনবদ্ধ জীবনের বর্ণনায় বিনয়ের কোনও উল্লেখ নেই-খাওয়া দাওয়ার পাট চুকে গেলে অর্পিতা টিভিতে ইংরেজি সিনেমা দেখল কিছুক্ষণ তারপর অনেকদিন পর অন্ধকারে বিনয়কে কাছে টেনে নিল। সঙ্গম শেষে আশ্চর্য দ্রুততায় ঘুমিয়ে পড়ল অর্পিতা।"
গল্পে অর্পিতার বোধবুদ্ধির জগৎটি যে সম্পূর্ণতই বিনয় নির্ভর তার স্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে বহুবার। অর্পিতার এই বিনয়কে কাছে টেনে নেওয়া এবং সঙ্গম শেষে নিশ্চিন্ত ঘুম এই বর্ণনাতে এক অদ্ভুত বিপরীতমুখী সমর্পণের কথা বলেন গল্পকার যা মধ্যবিত্তের জীবনচর্যার আরেকটি স্বভাবগত দিক। একদিকে মানসিকভাবে বিনয়ের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল অর্পিতা- বিনয়ের নিশ্চিন্ত জীবন ভরসায় ফিরতে চায় রুটিনবদ্ধ জীবনে। তাই নিজে থেকেই কাছে টেনে নেয় বিনয়কে অন্যদিকে যে ভরসায় বিনয় ঘিরে দিতে চায় রাজা তিতলি অর্পিতার জীবন সুরক্ষার মোড়কে সেই ভরসায় আসলে বিনয় ভাঙনের শব্দ শোনে। তবু খুব স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার আত্মপ্রতারণায় মাতে বিনয়। রবীন্দ্রসঙ্গীত গায় মনে মনে, রাজার জন্য ভিডিও গেম, তিতলির খেলনা, অর্পিতার কোল্ডড্রিংস কেনা থেকে শুরু করে অর্পিতার কাছে টেনে নেওয়ার কাছে আত্মসমর্পণ এ সমস্তই আসলে আশ্রয় হয়ে ওঠার আশ্রয়মাত্র। বিনয় অর্পিতা দুজনেই আসলে দুই সম্পূর্ণ ভিন্ন অবস্থানে থেকেও সমর্পণের একটি বিন্দুতে এসে থিতু হতে চায়। ফারাক একটাই অর্পিতার বোধের জগতে সুরক্ষার চরম সত্যটি যেহেতু বিনয় নির্ভর তাই সঙ্গম শেষে সে ঘুমিয়ে পড়তে পারে খুব দ্রুত। এখানে এই 'সঙ্গম' এর উল্লেখে আসলে আশ্রয়ের প্রতি আশ্রিতের প্রবল আকর্ষণে মিলিত হতে চাওয়ার আর্তি নিঃশব্দে গ্রন্থিত করে দেন গল্পকার। অর্পিতার ঘুমের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এই আত্মপ্রতারণার খেলাপর্ব। এবার প্রকৃত অবস্থানে নিজের মুখোমুখি হয় বিনয়। যে অবস্থানে অস্বস্তিবোধ মুহূর্তে গ্রাস করে- ঘেমে ওঠে বিনয়। জউ নয় আশ্রয় হুইস্কি। বড়োদের ঘরে তৈরি নেশা জউ পানে মায়াময় হয়ে ওঠ নদী মাঠ বাতাস যে নেশায় বিনয় গলা ছেড়ে কাঁদতে পারে তিতলির জন্য সর্ষে ফুলের খোলা মাঠে। কিন্তু হুইস্কির আশ্রয় নিশ্চিত করতেও চাই গ্রিল ঘেরা বারান্দা, তালা বন্ধ লোহার গেট।
স্ট্রিট-লাইটের আলোর পথ ধরে বিনয় পৌঁছতে চায় সর্ষে খেতে, বুক ভরে শ্বাস নিতে চায় যেখানে বাণেশ্বরের বাঁশির সুরে নেচে ওঠে এহসান- যে বাণেশ্বর এহসানকে পলায়ন প্রবৃত্ত শিক্ষিত ভণ্ডসমাজ তাদের লোকদেখানো শান্তিবার্তার ধ্বজাধারী করে নির্লজ্জ ব্যবহারে প্রকট করে তোলে তাদের মধ্যকার জাতিগত ফারাকটি। এইসব শান্তি মিছিলের একসাথে পথ চলায় দুই সারির দূরত্ব আসলে কোনও দিনই ঘুচে না। প্রতিটি পদক্ষেপের সঙ্গে সঙ্গে অনুভূত হয়ে চলে ব্যবধান এবং ব্যবধানজনিত নানা অসঙ্গতি বেষ্টনীটি যা কিনা হাত এর ব্যঞ্জনায় উঠে এসেছে গল্পে। এই সুরক্ষা বলয়কে আশ্রয় করেই আমরা মূলত আত্মরতির খেলায় মেতে থাকি- এই সত্যটি মুখের ওপর বলতে পারে সেই হাতহীন মানুষটি যার কাটা হাত ভেসে এসেছে নদীর জলে। অর্থাৎ সুরক্ষা, আত্মরতির পরোয়াহীন এক মুক্ত মানুষ। হাতহীন হাজার লোকের সামনে সেই মুক্ত মানুষ দৃঢ় কণ্ঠে বলে-
"তুমরার তো একটাও হাত নাই, এইবার দেখি হাত মার কী কইরা।"আর বলতে পারে স্বতন্ত্র হাতের অধিকারী তিতলি। সমাজের ক্ষয়িত চোখে যে শিশু স্পেশাল চাইল্ড। হাতের স্বতন্ত্র রেখাই যার এই পরিচয়ের সূচক চিহ্ন সেই অস্বাভাবিক সমাজের চোখের স্পেশাল চাইল্ডই আসলে সমস্ত দ্বিচারিতা, ভণ্ডামি মুক্ত স্বাধীন নিষ্পাপ জীবনের প্রতীক।
হাতকাটা মানুষের মিছিল আসলে জাতিদাঙ্গা, নৈতিক অবক্ষয়, নিশ্চিন্ত জীবনের প্রাত্যহিকতা হারানো কিছু অসহায় ভয়ার্ত মানুষের মিছিল যে মিছিল শ্বাস নেয় ধোঁয়া ছাই আর মাংসপোড়া গন্ধে আর এই পোড়া মাংসের গন্ধ ধরেই আসে শিক্ষিত ভণ্ড সমাজের শান্তি মিছিলের প্রহসন।
কুড়ুলাপথার গ্রামের নারী-পুরুষেরা অনেকদিন ধরেই হঠাত কেঁপে কেঁপে ওঠে কার কখন ডাক আসে। এই কার কখন ডাক আসে কথাটি সাধারণত সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের ডাক অর্থাৎ মৃত্যুর কথা বোঝাতে ব্যবহার হয়। কিন্তু আসামের বাঙালি জীবন আর দশটা সাধারণ জীবন অপেক্ষা সম্পূর্ণ ভিন্ন তাই এই গল্পের ডাক আসা মানে ঈশ্বরের ডাক নয় সরকার বাহাদুরের ডাক। সাধারণ মানুষকে ডি ভোটার তকমায় দাগিয়ে দেবার ডাক। মাটির কুঁড়েঘর থেকে সরকারি দালান কোঠা ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দি করার ডাক। কুড়ুলাপথার গ্রামের মানুষদের এই ডাক থেকে নিজেদের রক্ষা করার একমাত্র উপায় এখন এক টুকরো মাটির মালিকানার কাগজ। মাটিই পারে এই বিষম বিপদ থেকে বাঁচাতে।
“জলপোকা দেখছস না, জলপোকা? আমরা অইলাম গিয়া মাটিপোকা। মাটির গভ্যে আমাগো বাস, আমরার মরণ-বাঁচন। মাটি না অইলে আমরা থাকুম ক্যামনে?’খাদ্য বস্ত্র বাসস্থানের স্থায়ী ব্যবস্থা এখানকার মানুষের জীবন সুনিশ্চিত করে না। মাথার ওপর স্থায়ী ছাদ থেকে বেশি জরুরি পায়ের নিচের সামান্য মাটির মালকানার কাগুজে অবস্থান। কুড়ুলাপথার গ্রামের মানুষ তাই যেভাবেই হোক নিজস্ব একখন্ড মাটির মালিকানা পেতে মরিয়া। মাটি না থাকলে মানুষ শেকড় ছড়াবে কোথায়? দিশেহারার মানুষগুলো উপায় খুঁজে চলে দিনরাত। গরমেন্টের লোক মহাদেব সাহাকে কাকুতি মিনতি করে মালতী দু’নম্বরি পথে কিছু একনম্বরি জমির কাগজ বানিয়ে দিতে। টাকা পয়সা যা লাগে সে দেবে নারী কল্যাণ গোট থেকে ঋণ করে। রাজি হয় মহাদেব কিন্তু তেমন ভরসা পায় না মালতী। বিকল্প রাস্তা খুঁজে খুঁজে মালতী জানতে চায়,
--- সাহাদা, একটা কতা কন তো। কুনোদিন যদি গরজুলির ভিতর থাইক্যা মাটি জাইগ্যা উঠে, চর পড়ে অই মাটি কি গরমেন্টের অইব? আমরা হউ চরো থাকতে পারবাম না?”উত্তরে মহাদেব সাহা যা বলে এবং তার বলার ভঙ্গিটিকে গল্পকার এমন অসাধারণ চিত্রকল্পে উপস্থাপন করেন যে গল্পের মহাদেব সাহা যে কুড়ুলাপথার গ্রামের মানুষের কাছে শুধুমাত্র পঞ্চায়েত সেক্রেটারি ভগীরথ দাসের ভগ্নীপতিই না, রক্ষক সংহারক ঈশ্বর মহাদেবের নররূপ তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মহাদেব সাহা দূর শূন্যে বৃত্তাকারে তর্জনী ঘুরিয়ে জানায় যা কিছু দেখা যাচ্ছে সবই গরমেন্টের। সেই বৃত্ত অনুসরণ করে মালতি রশিদরা দেখে সোনালি সূর্য, তুলো মেঘের আকাশ, শাল-সেগুন-গামারি আর বাঁশঝাড়ের কচি মাথা, ন্যাড়া মাঠ, গরজুলি সমস্তই গরমেন্টের। কুড়ুলাপথার গ্রামের মানুষ নতুন করে আরেকবার জানে, বোঝে, গরমেন্ট মানুষ নয়, ভগবানের মতোই আরেক ভগবান। এই গরমেন্ট ভগমানের রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা হত গেলে যে নথিপত্র প্রয়োজন তার ব্যবস্থা করে দেবার জন্য ভগীরথ সাত হাজার টাকা ঘুষ নেয় মালতী রশিদের কাছ থেকে এবং বিনিময়ে ভগীরথের গুন্ডারা তছনছ করে যায় মালতীদের ছোট্ট ঘুপচি ঘরটা, মালতীর স্বামী রশিদের কপালে জোটে বেদম মার। কিন্তু তার পরেও হাল ছাড়েনা মালতী। যে বেশ্যাদ্বারের মাটির অভাবে আটকে ছিল গ্রামের দুর্গা পূজা, মালতী নিজেকে এবং তার বোবা বোন সুমতিকে বেশ্যা পরিচয় দিয়ে নিজের ভিটের মাটি তুলে দেয় ভগীরথ দাসের হাতে। কাগজপত্র, সার্টিফিকেট এবং নগদ পাঁচশো টাকার বিনিময়ে নিজের শরীরটা বিনি পয়সায় ভগীরথকে যখন ইচ্ছে ভোগ করতে দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফিরে আসে ঘরে ।
যে মালতীকে এক টুকরো জমির কাগজের জন্য নিজেকে বেশ্যা প্রতিপন্ন করতে হয়, সেই মালতীদের কিন্তু জমজমা কাগজ পত্র সবই ছিল। কিছুদিন আগেও ছিল। পঞ্চাষ ষাট বছর ধরে তারা কোকড়াঝাড়ের কাজল গাঁও এর বাসিন্দা ছিল। জমিজমার সঙ্গে রশিদের চাচার একটা ঘড়ির দোকান ছিল। গত রায়টের সময় দুর্বৃত্তরা তাদের ঘর দোকান সব পুড়িয়ে দেয়। চাচার ছেলেকে খুন করে নদীতে ভাসিয়ে দেয়। তাদের পুরো পরিবার আশ্রয় নিয়েছিল রিলিফ ক্যাম্পে। ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে রশিদ আর ফিরে যায়নি অভিশপ্ত ভিটেয়। বাড়ির সঙ্গে পুড়ে ছাই হয়ে যায় জমির সমস্ত কাগজ পত্র । পার্টির লোকজন ধরে, টাকা পয়সা খরচ করে আর পারেনি নতুন কাগজ বানাতে।
এসমস্ত কিছুর পরেও যাদের হয়তো কিছু বা নথি থাকে প্রায় প্রতিবছর নিয়ম করে আসা আসামের ভয়াবহ বন্যা কিংবা উগ্রপন্থা অথবা গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়া দাঙ্গার আগুনের হাত থেকে সেসব রক্ষা করাও বাস্তব ক্ষেত্রে অনেক সময় দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। শুধুমাত্র খেটে খাওয়া মানুষরাই নন, শিক্ষিত মধ্যবিত্ত চাকুরিজীবী, স্বাধীনতা সংগ্রামী, সেনাবাহিনীতে চাকুরিরত, তিন চার প্রজন্ম ধরে আসামামের মাটিতে বসবাসরত মানুষ কেউই এই বিপন্নতার সীমানা বহির্ভূত নন।
শুধুমাত্র ভাষিক পরিচয়ে বাঙালি হওয়ার অপরাধে আসামের প্রতিটি বাঙালির মাথার ওপর সক্রিয় ডি ভোটার, বিদেশি, রিফুজি ইত্যাদি নানা অভিধায় পাহাড় প্রমাণ রাজনীতির জটিল প্যাঁচ। যে কোনও একটির পথ ধরে ‘ডিটেনশন ক্যাম্প বন্দী জীবন শুধুই সময় এবং মর্জির অপেক্ষা মাত্র।
কান্তারভূষণ তাঁর গল্পে বিভিন্ন আঙ্গিকে, বিভিন্ন মোটিফে মূলত জীবন ও সময়ের কথা বলেন। তাঁর গল্পে জীবনের কথা উঠে আসে মনস্তত্বের নানা সূক্ষ্ম পথ ধরে। তাছাড়াও আপাত সময়ের চরিত্রগত বৈশিষ্ট্যে কীভাবে আবর্তিত হয়, নিয়ন্ত্রিত হয় মানুষের যাপনকথা তার কথা বলেন কান্তার তাঁর গল্পে। "কয়েকটি মৃত্যুর অসম্পূর্ণ বিবরণ" তেমনি এক অসাধারণ কথকতা যেখানে ক্ষয়িষ্ণু সমাজের একক প্রতিটি মানুষ হয়ে ওঠ সমাজের প্রতিভু আবার কখনও বা সমাজ হয়ে ব্যক্তি মানুষের জীবনভাষ্য।
এই অভূতপূর্ব আঙ্গিকের প্রকাশ এই গল্পের ভাঁজে ভাঁজে। যেহেতু চিন্তাপ্রবাহ যে রকম কোনও ভাবেই কোনও সুনির্দিষ্ট, যুক্তি পরম্পরায় প্রবাহিত হয় না, নানা আপাত অসংলগ্ন ঘটনা যা কিনা অবস্থানগতভাবে হয়তো সম্পূর্ণ বিপরীত মতকে পুষ্ট করে ঠিক তার পূর্ব ঘটনাক্রমকে, ঠিক তেমনি এক সামগ্রিক অবিন্যস্ততার আঙ্গিকে গল্পকে মূল অভীষ্টলক্ষ্যে বিন্যস্ত করেন কান্তার। শুধু সচেতন মনের ভাষ্যই নয়, চেতনার অন্তরালে প্রচ্ছন্ন অবচেতন মনের অতলান্ত রহস্যকথাও যে গল্পের আধেয় হয়ে উঠতে পারে তার শিল্প সার্থক প্রয়াস কান্তারের এই গল্প।
এই গল্পের প্রথম অধ্যায়ের নাম “১৪ ফেব্রুয়ারি: গরুর লাশ ও সঙ্গমদৃশ্য”। ১৪ ফেব্রুয়ারি গল্পের নায়ক কিশোর ভালোবাসা দিবস উদযাপনের মদ্যপান শেষে সারি সারি ঝুপড়িঘর খাটা পায়খানার পাশে পথচারীর বিবমিষা নির্মিত জটিল মানচিত্র আঁকা পথে বাড়ি ফেরে। চারদিকে মরা কুকুর ছাগল গরুর গলিত লাশের উৎকট গন্ধ। তারই মাঝে একটা ঝুপড়ি ঘরে কিশোর দেখে পারিপার্শ্বিক বিস্মৃত এক জোড়া নারী পুরুষের সঙ্গম দৃশ্য। গরুর লাশের গন্ধ মিশ্রিত বাতাসে মিশে যাচ্ছে শীৎকার। পাশে স্তূপাকার পিরামিডের মতো সেই নারী পুরুষেরা বিবর্ণ ধূসর রং-এর জামাকাপড়। চারিদিকে মৃত্যুর বীভৎস আবহে ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসার দিনে এই সঙ্গম দৃশ্য আসলে আমাদের প্রাণহীন মৃত জীবনের পিরামিডের পাশে ভালোবাসাহীন যৌনতার কথা বলে। যে প্রাণহীনতার স্পর্শে ক্রমশই মরে যাচ্ছে আমাদের ভালোবাসা, নৈতিকতা, বিশ্বাস ভরসার সম্পর্কগুলি এবং সবশেষে শ্বাসপ্রশ্বাসে মাত্র জীবিত থেকে মৃত্যু হয় আমাদের ভেতরের 'আমি'-র। নিজেদের এই আত্মিক মৃত্যুর উপলব্ধি আমাদের তাড়িত করে - নিজের মৃতদেহের গন্ধে অস্থির আমরা উৎস খুঁজে বেড়াই পচনস্থলের। গল্পে কিশোর সেই গন্ধ পায় যে গন্ধ আসলে তার আত্মিক মৃত্যুর শবজাত। কিশোর-এর ভালোবাসার মৃত্যু হয়েছে। বিশ্বাস মূল্যবোধের মৃত্যু হয়েছে। প্রমোশনের জন্য বসের প্রতিটি ট্যুরে নিত্যনতুন মেয়ে যোগান দেয় সে, বসের অনুপস্থিতিতে বসের স্ত্রী গুপ্তা ভাবীর সঙ্গে গড়ে তোলে গোপন যৌন সম্পর্ক। আর এক পাশে পড়ে থাকে সন্দেহপ্রবণ বন্ধ্যা স্ত্রী মানসী। মানসীর সন্দেহপ্রবণতা ভিত্তিহীন ছিল না। গুপ্তা ভাবীকে প্রথমবার গোপনে চুম্বনের সময়ই আসলে সে ধরা পড়ে গেছিল মানসীর কাছে যে সত্য মানসী কোনও দিন প্রকাশ্যে বলেনি কিশোরকে। এক শীতল স্রোতকে নিঃশব্দে দু'জনের মধ্যে প্রবাহিত করে দিয়ে সরে গেছে কিশোরের শারিরীক ও মানসিক সংস্পর্শ থেকে যোজন দূরে। কিশোরও গুপ্তা ভাবীর সঙ্গে মেতে থাকে প্রেমহীন শরীরী খেলায়। তারই মধ্যে কিশোরকে অস্থির করে তোলে আস্তানা 'ভালোবাসায়'। কিশোর মানসীর বাড়ির নাম ভালোবাসা। এই গন্ধ পাওয়ার শুরু হয়েছিল ভালোবাসা দিবসে দেখা সঙ্গম দৃশ্যের চারপাশে ভেসে বেড়ানো গরুর পচা গলা লাশের গন্ধ থেকে। একদিকে এই মৃত্যুর গন্ধ আর দরজার ওপাশে আপাদমস্তক চাদরে ঢাকা মানসী যে চাদরের উপস্তিতিতে কবে যেন হারিয়ে গেছে কিশোরের ভালোবাসার উষ্ণতা জাগানিয়া মানসীর কোমরের ছোট লাল তিলে। গন্ধের ছোঁয়াচ লাগে ক্রমশ মানসীর নাকেও। ঘটনার সুনির্দিষ্ট ক্রম বিন্যাসে অবিন্যস্ততা এই গল্পের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য তবুও বুঝে নিতে অসুবিধে হয় না কিশোরের নাকে লেগে থাকা গন্ধ মানসীকে সংক্রমণের আগে মানসী নিশ্চিত হয়েছে কিশোরের নীতিগতভাবে বিশ্বাসের জায়গা থেকে আত্মিক মৃত্যুর কথা। সে কিশোরের পকেটে পেয়েছে গুপ্তাভাবীর জন্য কেনা গর্ভনিরোধকের প্যাকেট। নীরবে নিজের স্বেচ্ছবন্দি ঘরে ফিরে গেছে মানসী। পরদিন কিশোর দেখে সমস্ত বাড়ি জুড়ে অজস্র লক্ষ্মণরেখা, গন্ধের উৎস ইঁদুরের মৃতদেহকে শনাক্ত করে এই কিশোর তার বাড়িতে ফেরে যে বাড়ির নাম ভালোবাসা, যেখানে শবের মতো আপাদমস্তক সাদা কাপড়ে মুড়ে শুয়ে আছে মানসী। তাকে ঘিরেও সেই নানা মৃত্যুর আয়োজন যার পূর্বাভাস হয়ে কিছু মাছি ঢুকে যাচ্ছে ভালোবাসার খোলা জানালার ফাঁক গলে। কিশোর বুঝে নেয় এই মৃত্যুগন্ধ অস্বীকারের পথ রুদ্ধ। তাকে উৎসে ফিরতে হলে এই গন্ধের শেষ চূড়ান্ত বিন্দু থেকেই আবার নতুন করে শুরু করতে হবে সেই স্ক্র্যাবলের মতো। জগতের যাবতীয় অশুভ ক্ষয়কে চিহ্নায়িত করে দেয় যারা তাদের কাছেই যেন আত্মসমর্পণ। পচাগলা লাল খুটে খাওয়া মাছি তাই হয়ে ওঠে স্বর্গীয় কারণ আত্ম-সংশোধনের পথ ধরে নিজের পচাগলা মৃতদেহের অভ্যন্তরে পৌঁছানোর বাহন তো সেই মাছি।
এভাবেই কান্তার গোটাগল্প জুড়ে মৃত্যুর নানারূপী আনাগোনা শেষেও যেন জীবনে ফেরার সম্ভাবনার একটা ইঙ্গিতময়তা জড়িয়ে রাখেন গল্পে যদিও কোনও পথের হদিশ দেন না। গল্পের শেষে তাই কান্তার আলো আঁধারির আবহ তৈরি করেন তাঁর একাধিক গল্পে। হয়তো বা সব সমাপ্তিই আসলে এক আপাত সমাপ্তি মাত্র যেখানে ছড়িয়ে থাকে নতুন শুরুর অজস্র সম্ভাবনার রহস্য সেই রহস্যের রহস্যময়তা রক্ষায় কান্তার আশ্রয় নেন বারবার অদ্ভুত অন্ধকার, গাঢ় অন্ধকার, নিশ্চুপ রহস্যময় অন্ধকারে। অদ্ভুত এক মায়াময় আলো আঁধারিতে পাঠক দিশা খুঁজে চলেন নিজের মতো করে। এই চলিষ্ণুতার দিকে পাঠককে ঠেলে দিতে পারদর্শী কথাকার কান্তারভূষণ এখানেই অনন্য সার্থক।