১
কী কুক্ষণে মুখ ফসকে বলে ফেলেছিলুম কবিতা লিখি, বঙ্কুদা ফস করে কবিতার খাতাটা টেনে নিয়ে নাক সিঁটকিয়ে বলল, “কিস্যু হয়নি।”
আমি আহত মুখে বললাম, “কেন?”
বঙ্কুদা বলল, “এসব কী লিখেছ? পড়ে একবার মনে হচ্ছে খরগোস দৌড়চ্ছে, একবার কচ্ছপ। শোনো বাপা, ছন্দ ছাড়া কবিতা হয় না। তোমার কবিতায় ছন্দ কই?” তারপর সুর করে ছড়া কেটে বলল,
“ছন্দবিহীন কবিতা
ধাপার মাঠের গোবি তা।
মাত্রাবৃত্ত লিখিতে বসিয়া সুমাত্রা বোধ হারালে
জাভা নাকি সোজা বোর্নিও যাবে, বর্ণিও তুমি আড়ালে।”
পচা পাশ থেকে জিজ্ঞেস করল, “বঙ্কুদা এই ছন্দের নাম কি মাত্রাবৃত্ত?”
বঙ্কুদা পচার দিকে এমন ভাবে তাকাল যেন সে অত্যন্ত গর্হিত প্রশ্ন করেছে।
ছোটবেলায় ধাপার মাঠের কথা শুনতাম বটে। সেখানে উৎপাদিত ফুলকপির ফুলের বাহার থাকলেও খেতে নাকি অতি বিস্বাদ। বঙ্কুদা কপি না বলে হিন্দিতে গোবি বলল কেন তাও মাথায় ঢুকল না। আমার চিরকাল মাত্রা-জ্ঞান কম। বললাম, “মাত্রাবৃত্ত না জানলে কি কবিতা লেখার আর কোনও উপায় নেই?”
বঙ্কুদা টেবিলে তবলা বাজাতে বাজাতে বলল, “না হলে আর কী? তোমায় স্বরবৃত্ত শিখতে হবে। মন দিয়ে শোনো,
ছন্দ ছাড়া কাব্য যেন গন্ধ ছাড়া কপি
অবশ্য নয় কর্মধারয় মধ্যপদলোপী।”
দ্বিতীয় লাইনটা শুনে মনে হল জোর করে মেলানো, নিতান্ত ছন্দ আর অন্ত্যমিলের খাতিরে। ছন্দর কড়াই থেকে ব্যাকরণের উনুনে পড়ে গা জ্বালা করে উঠল। কিন্তু প্রতিবাদ করতে পারলাম না। বললাম, “বঙ্কুদা, স্বরবৃত্তের স্বর্গবাস মনে হচ্ছে আমার জন্য নয়।”
বঙ্কুদা বলল, “স্বরবৃত্তও চলবে না? আচ্ছা, অক্ষর জ্ঞান তো আছে? একেবারে নিরক্ষর তো নও। তাতেও হবে। ভাল করে শুনলে নিজে নিজেই অক্ষরবৃত্তর চালচলন বুঝতে পারবে।
ছন্দবোধ যদি তব নাহি থাকে বাপা
অতীব অখাদ্য লাগে ফুলকপি ভাপা।”
মনে মনে ভাবলাম, কবিতা লেখার অনেক হাপা... মানে হ্যাপা।
২
এর পর ক'দিন বঙ্কুদার দেখা নেই। হরিদার চায়ের ঠেকে পচাকে দেখে জিজ্ঞেস করলাম, “হ্যাঁ রে, বঙ্কুদার খবর জানিস?”
পচা বলল, “কালকে তাকে দেখেছিলুম শালকেতে।”
আমি ভুরু তুলে জিজ্ঞেস করলাম,
“তুই যেখানে যাস রেগুলার মাল খেতে?
কী যেন নাম রেস্তোরাঁটার - পাগল বার?”
পচা আগের কথার জের টেনে বলল,
“দেখেই আমি উল্টো পায়ে ভাগল বা
কে আর ডাকে কুমীরকে বল খাল কেটে?”
আমাদের চা পান সহ চাপান-উতোরের মাঝখানেই একমুখ হাসি ঝুলিয়ে কুমীর থুড়ি বঙ্কুদা উপস্থিত। বলল, “যাক দলবৃত্তের আদলটা ধরতে পেরেছ তা হলে?”
আমি বললাম, “এই তো সেদিন বললে, স্বরবৃত্ত। আজ বলছ দলবৃত্ত… ব্যাপারটা কী?”
বঙ্কুদা বলল, “নাম বদলালেই কি আর দল বদলে যায় বাপা? সে সব ছাড়ো, ছন্দের চলনটা ধরতে পারলে কি না?”
পচা মুখ ব্যাজার করে বলল, “কই আর পারছি? ধরতে গেলেই ফস্কে যাচ্ছে।”
বঙ্কুদা বলল,
“ফস্কালে রস পাবে কী করে?
কবিতার ছন্দটি শিকড়ে
ছুঁয়ে থাকে দীঘিটির কিনারা
ঠিক যেন জিলিপি ও সিঙাড়া।”
পচা সন্দিগ্ধ ভাবে বলল, “আবার ছন্দ বদলে দিলে মনে হল।”
বঙ্কুদা খুশি হয়ে বলল, “ঠিক ধরেছ বাপা, তুমি একজন যথার্থ কলাকার।”
পচা লজ্জা পেল, বলল, “না, না, এ আর কী?”
বঙ্কুদা বলল, এয়ার্কি কে দিচ্ছে? কলাবৃত্ত সঠিক ধরতে পারলে বলে তোমায় কলাকার বললুম।”
আমি বললাম, “ধ্যুর বাবা, আবার নতুন করে ছন্দনাম শেখো।
দল ছেড়ে কলা
ফুল ছেড়ে ফলার!”
বঙ্কুদা ধরা ধরা গলায় বলল, “চরৈবেতি, থেমো না, এগিয়ে চল…"
লক্ষ করে দেখি, বঙ্কুদার চোখে জল। বললাম, “দাদা, কাঁদছ কেন?”
বঙ্কুদা তাড়াতাড়ি চোখ মুছে বলল, “কিছু না, কিছু না, তোমাদের মতো শিষ্য পেলে কার না আনন্দ হয়, এ হল আনন্দাশ্রু।”
পচা চাপা গলায় বলল, “কুম্ভীরাশ্রু…”
৩
বঙ্কুদা বলল, “সিলেব্ল বুঝ?”
আমি বললাম, “সী লেভেল? হ্যাঁ খবরে কাগজে তো প্রায়ই দেখি, উষ্ণায়নের জন্যে সমুদ্র ফুলছে... শেষের সে দিন সমাগত।”
বঙ্কুদা ঠোঁট বেঁকাল, “বাঙালিদের নিয়ে এটাই সমস্যা, ‘ভ’ উচ্চারণ করতে গিয়ে কেঁদে ভাসায়।”
আমি বিজ্ঞের মতো ঘাড় নেড়ে বললাম, “এটা আমিও লক্ষ করেছি। দামড়া লোকেরাও ভ্যাকসিন নিতে গিয়ে ভ্যাঁক করে কেঁদে সীন ক্রিয়েট করে। এই পচাকেই দেখো না…”
বঙ্কুদা আমার কথা ধর্তব্যের মধ্যে না ধরে বলল, “আরে বাপা, সিলেব্ল মানে হল দল…”
আমি বললাম, “বঙ্কুদা, তুমিও শেষে দলবাজি শুরু করলে!”
বঙ্কুদা অধৈর্য হয়ে মাথা নেড়ে বলল, “এ দল সে দল নয় বাপা। এই দল মানে পাপড়ি। হেমন্তবাবুর ওই গানটা শোনোনি –
ওই কপোলে দেখেছি লাল পদ্ম
যেন দল মেলে ফুটেছে সে সদ্য…”
আমি বললাম, “আচ্ছা, আচ্ছা, বুঝেছি, তুমিও দলে পড়ে লিখতে চাও পদ্য?”
বঙ্কুদা বলল, “ঠিক ধরেছ। দল মিলিয়ে লিখলেই দলবৃত্ত।”
হারুদার চায়ের দোকানের সামনে বেঞ্চে বসে সকাল-সকাল আড্ডা হচ্ছিল। গতরাতে জলপান একটু বেশিই হয়ে গিয়েছিল। আমি আর পচা হারুদার বিখ্যাত পাঁচন গিলে খোঁয়াড়ি ভাঙছিলাম। পচা ফিসফিস করে বলল, “সিধু পালিয়ে আয়, বঙ্কুদা আবার বৃত্ত শেখাচ্ছে।”
আমি বললাম, “শেখালেই শিখছে কে?”
বঙ্কুদা বলল, “চারটি করে দল মেলে এক একটি পূর্ণ পর্ব ফুটে ওঠে... যেন আশ্রম কন্যা শকুন্তলার পালিত হরিণের ক্ষুর-ধাক্কায় এক একটি ঘাসফুল ফুটে উঠছে। এই দু’-লাইন মন দিয়ে শোনো,
বাদল দিনে মাদল বাজে, মেঘ গুড়গুড় ঝুঁকে
হাবলা পচা বেজায় ওঁচা, পাশ করেছে টুকে।”
বুঝলাম পচার মন্তব্য বঙ্কুদার কানে গেছে। বঙ্কুদার দলবৃত্ত শুনে পচা তেড়িয়া হয়ে বলল, “আমি টুকে পাশ করেছি? তুমি উল্টোপাল্টা শেখাবে, আর আমায় ঘাড় হেঁট করে মেনে নিতে হবে?”
বঙ্কুদা বলল, “উল্টোপাল্টা কোথায় দেখলে?”
পচা বলল, “মেঘ গুড় গুড় তো তিনটে সিলেব্ল, তুমি যে একটু আগেই বললে, এক পর্বে চারটে সিলেব্ল থাকবে?”
বঙ্কুদা মিচকে হেসে বলল, “ওই ‘মেঘ গুড় গুড়’ পর্বটাতে আর একটু বেশি ‘গুড়’ ঢাললেই কি মিষ্টি হত?”
পচা মাথা চুলকে বলল, “নাহ, ‘মেঘ গুড় গুড় গুড়’ বললে চারটে সিলেব্ল হচ্ছে বটে কিন্তু তাল কাটছে।”
বঙ্কুদা বলল, “হুম, তুমি দেখছি জাতে মাতাল, কিন্তু তালে ঠিক…”
পচা বলল, “গুড় গুড় গুড় গুড়িয়ে হামা খাপ পেতেছেন গোষ্ঠ মামা... বঙ্কুদা তুমি কি আমাদের ছেঁদো না বানিয়ে ছাড়বে না?”
বঙ্কুদা স্বর্গীয় হাসি হেসে বলল, “নাহ…”
৫
আমি হতাশ গলায় বললাম, “বঙ্কুদা, বৃত্তের বাইরে যাবার কোনও উপায়ই কি নেই?”
বঙ্কুদা চোখে এক রাশ সন্দেহ নিয়ে বলল,
“আছে। কিন্তু
তুমি কি খোকা পারবে?
ফাঁস খুলতে কার্ভের?”
আমি সন্ত্রস্ত হয়ে বললাম, “খুব বেশি কি চাপ পড়বে নার্ভে?”
বঙ্কুদা এক গাল হেসে বলল,
“আবার দেখো, অসাবধানে এসে পড়ল বৃত্ত
বেশ খেলছ বৃত্ত নিয়ে চু-কিত-কিত-কিত তো!”
আমি গোঁয়ারের মতো ঘাড় নেড়ে বললাম,
“বৃত্ত ছেড়ে যাবই আমি, চুষব কচি আমড়া
নইলে লোকে বলবে ছি, ছি, ছড়া লেখেন দামড়া।”
বঙ্কুদা আশ্চর্য হয়ে বলল, “ও আবার কেমন ধারা কথা? বৃত্ত ছন্দে অন্ত্যমিল দিয়ে কবিতা মানেই ছড়া?”
লেখকের নাম জানি না, আমাদের কলেজে পড়ার সময় তৎকালীন আধুনিক কবিতাকে কটাক্ষ করে একটা মিলনান্তক কবিতা প্রচলিত ছিল। তার দু’-লাইন বঙ্কুদাকে শোনাবার লোভ সামলাতে পারলাম না, জিজ্ঞেস করলাম, “আচ্ছা বঙ্কুদা, এই কবিতাটার ব্যাপারে তোমার মতামত কী?
আহা কী জ্যোৎস্না-বিধৌত এই রাতি!
আকাশেতে উড়িতেছে একপাল হাতি।”
বঙ্কুদা বলল, “বেশ কবিতা। চোখের সামনে দেখতে পেলুম পূর্ণিমার রাতে হাতির পালের মত একগুচ্ছ মেঘ আকাশে ভেসে যাচ্ছে। জানো তো, কালিদাস স্বয়ং মেঘের সঙ্গে হাতির তুলনা করেছেন...
আষাঢস্য প্রথমদিবসে মেঘমাশ্লিষ্টসানুং
বপ্রক্রীড়াপরিণতগজপ্রেক্ষণীয়ং দদর্শ।”
বঙ্কুদাকে কাব্যরস চাখানো আমার কর্ম নয়। আমি বিরস গলায় বললুম, “কালিদাস রাখো। মরছি নিজের জ্বালায়।”
বঙ্কুদা বলল, “তুমি তো ভারি বিপদে ফেললে হে! তারপর কিছুক্ষণ গম্ভীর মুখে কী সব চিন্তা-টিন্তা করে টাকে তিনটে টোকা দিয়ে উপায় বাৎলাল, “শোনো,
ছড়া লেখায় এতই যদি ঘেন্না তবে শেষটায়
আইন মেনে মিল না দিয়ে করতে পারো চেষ্টা।”
আমি বললাম, “ধ্যুস...
গ্যারান্টি কী মিল না দিয়ে বৃত্ত লিখে রাজ্য
ফেরত পাব? সেই তো লোকে বলবে – এহ বাহ্য।”
বঙ্কুদা শঙ্কিত গলায় বলল, “আরে, তাই বলে…
বৃত্ত ছেড়ে পালাও যদি ভয়ের চোটে বর্গীর
বৃত্ত ফিরে করবে তাড়া ভূতের মতো হরগিজ।”
বর্গীর সঙ্গে হরগিজ – মিলটা যেন কেমন কেমন লাগল। কথায় কথা বাড়ে। কিছু বললেই বঙ্কুদা আবার জ্ঞান দিতে শুরু করে দেবে। আমি ঘাড় গোঁজ করে বসে রইলাম। বঙ্কুদা নিজের মনেই বলল, “বৃত্তের বাইরে গেলেই কি নিষ্কৃতি মিলবে বাপা?”
আমি বললাম, “কী জানি!”
৬
পচা বলল, “আচ্ছা বঙ্কুদা, কবিতা লিখতে গেলে কি লাইন ভাঙতেই হবে?”
বঙ্কুদা বলল, “ওটা বাঙালির স্বভাব। রেশন দোকান, রেলের টিকিট কাউন্টার যেখানেই লাইন পড়ুক না কেন, দেখলেই তাদের ভাঙতে ইচ্ছা করে।”
আমি বললাম, “অনেক বাঙালি কবিই লাইন না ভেঙে কবিতা লিখেছেন। সেগুলো কি কবিতা পদবাচ্য নয়?”
বঙ্কুদা বলল, “বৃত্তের বাইরে যেতে চাইছিলে না? ওই কবিতাগুলো বৃত্তের বাইরে। কিন্তু ভাল করে যদি নজর করো, দেখবে তাদেরও চলার একটা নির্দিষ্ট চাল আছে।”
আমি বললাম, “বৃত্ত ভাঙা কি এক রকমের চালবাজি নয়?”
বঙ্কুদা বলল, “ভাঙাভাঙির ব্যাপারটা বেশ জটিল। কী ভাঙছ না জেনেই যদি ভাঙতে যাও তাহলে নির্ঘাত ছড়াবে। ভেবে দেখো পালক দিয়ে কি আর কয়লা ভাঙা যায়?”
পচা ঠোঁট উলটে বলল,
“বাংলা কাব্য নিয়ে কী আর নতুন করে ভাবব?
প্রায় সবই তো লেখা হয়েছে সলিড এবং দ্রাব্য।”
বঙ্কুদা বলল, “বাংলা কবিতাকে হ্যাটা কোরো না বাপা। এই সোশ্যাল মিডিয়ার জমানাতেও এমন সব কবিতা লেখা হচ্ছে, পড়লে চমকে যাবে।”
পচা বলল, “রাখো তোমার সোশ্যাল মিডিয়ার বাংলা কবিতা। অন্ত্যমিলের কবিতা লিখতে হলে যে বৃত্তছন্দ জানতে হয়, সেই ধারণাই নেই জনগণের।”
বঙ্কুদা পচার দিকে প্রশংসার দৃষ্টিতে তাকাল। বলল, “ঠিক বলেছ। তাই অনেক মিলনান্তক কবিতাই আখেরে বিয়োগান্তক হয়ে যায়। তারপর একই কবিতায় ভুল করে দুটো আলাদা বৃত্তছন্দ ব্যবহার তো আখছার করে বসে নব্য কবিরা।”
পচা বলল, “একই কবিতায় দুটো আলাদা বৃত্তছন্দের ব্যবহার অনেক প্রতিষ্ঠিত কবিও করেছেন।”
বঙ্কুদা বলল, “জানি সে কথা। তবে কিনা সেসব হল ধুরন্ধর প্রয়োগ। ভুল করার ছাড়পত্র নয়। ছন্দবৃত্তের বাইরে গিয়ে দাঁড়ানো সহজ নয় বাপা। তার জন্য অনুশীলন প্রয়োজন।”
আমি বললাম, “বুঝলুম…”
বঙ্কুদা বলল, “কী বুঝলে?”
আমি বললাম, “শিল নোড়ায় ছন্দ আর অনুভব একসঙ্গে বেটে খেলে তবেই কবিতা লেখা সম্ভব।”
পচা বলল, “ধ্যুস…"
৭
বঙ্কুদাকে ইদানীং হারুর চায়ের ঠেকে দেখছিলাম না। টেলিফোন করতে বিমর্ষ গলায় বলল, “তোর বৌদি আজকাল সকালবেলা লেকের ধারে হাঁটতে নিয়ে যাচ্ছে। সেখান থেকে অট্টহাসি ক্লাব, যোগাসন কেন্দ্র… কিছুতেই বোঝাতে পারছি না সকালে হারুর দোকানের চা না খেলে পেট খোলসা হয় না।”
আমি বললাম, “কেন বৌদি চা দিচ্ছে না?”
বঙ্কুদা বলল, “আর বলিস না, রোজ ফিরে এসে গ্রীন টি বলে কী একটা ট্যালটেলে ক্বাথ গেলাচ্ছে, তার না আছে স্বাদ, না গন্ধ।”
আমি ফুট কাটলাম, “একদম আধুনিক কবিতার মতো, না আছে ভাব, না ছন্দ।”
বঙ্কুদা শুনে খুশি হল কিনা বুঝলুম না। বলল, “পচাটারও পাত্তা নেই অনেকদিন। সোশ্যাল মিডিয়াতেও দেখি না।”
আমি বললাম, “দাঁড়াও তোমাদের দুজনকে একসঙ্গে কনফারেন্স কলে নিচ্ছি।”
পচা ফোন ধরে বলল, “কবিপক্ষে কবির সঙ্গে আড্ডা দিতে ব্যস্ত ছিলাম। তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিয়ে উঠতে পারিনি।”
আমি বললাম, “তা সেই দ্বিপাক্ষিক আড্ডার বৃত্তান্তটাই পোস্ট করতে পারতি।”
পচা বলল, “কবিপক্ষ বলেই তো আর কবির পক্ষে কিছু বলা সম্ভব নয়। যা বলার আমিই বলছিলাম। কবি শুনছিলেন। তা সেসব কথা পোস্ট করলে বন্ধুবিচ্ছেদ অনিবার্য।”
কৌতূহলী হয়ে বললাম, “স্যাম্পেল দে।”
পচা বলল, “শুনবি? শোন তাহলে।
তোমার যেমন দক্ষিণের বারান্দা ছিল, আমার তেমন উত্তরের
সময় বেবাক বদলে গেছে হে গুরুদেব, বিশেষ কিছু লাভ হবে না খুঁত ধরে।
যদিও এখন কবিপক্ষ, প্রায় সকলেই পরোক্ষে
ঢাক পেটাচ্ছে নিজের, কিন্তু সেই তোমাকেই হারাচ্ছে রোজ দু’-চক্ষে।
আমার তেমন সামর্থ্য নেই, ছাদেই বাগান, ফুল ফোটে
বিকেলবেলা চেয়ার পেতে বসি সেখানে, দু-চার লাইন কাব্যকথা চুলকোতে।
তবে সেসব খেউর গাথা তোমার থেকে যোজন দূর
জানি, এসব বললে পরম শত্রু হবে যে বন্ধু।”
আমি বললাম, “থাক, থাক, আর বলতে হবে না। এ সব পোস্ট না করাই ভাল। যে যেমন ভাবে পারছে, তাঁকে স্মরণ করছে, এই তো অনেক।”
বঙ্কুদা বলল, “আরে দাঁড়াও, দাঁড়াও, পচা, এটা তুমি কোন ছন্দে লিখেছ?”
ফোনের অন্য দিক থেকে পচার ফাজিল হাসির শব্দ শুনতে পেলাম।
ওদিকে খারাপ কানেক্টিভিটির জন্য বঙ্কুদার কথা কেটে কেটে যাচ্ছিল, মনে হল বলছে, “ছন্দটা কিন্তু বেশ ছন্দেহজনক…”