শুদ্ধেন্দু’র এই গ্রন্থের মতো গ্রন্থ বাংলাভাষায় আগে কি লিখিত হয়েছে? মনোবিজ্ঞানের নিরিখে স্রষ্টার ভূমিকাকে বারবার দেখা, কবিতাকে আশ্রয় ও অস্ত্র করে অতিমারির দিনগুলিকে সংকটের হাত থেকে মুক্তির উপায় খোঁজায় অনুপম বর্ণনা, কবিতাকে থেরাপি হিসাবে ব্যবহার করা ইত্যাদি ‘ইউনিক’ বিষয়সমূহ বাংলাভাষার এমন প্রাঞ্জলভাবে লিপিবদ্ধ হয়নি আগে।
গ্রন্থটির ব্লার্বে যে কথা বলা হয়েছে, ‘সেইসব অচেনা মনোবৈজ্ঞানিক সংকেতের অণ্বেষণেই এই প্রবন্ধ সংকলন যেখানে লেখক স্রষ্টা ও তাঁর মনের ভিতর খুঁজে চলেছেন নবমনোসমীক্ষণের গোলকঘর’। এই সংকেত শব্দটি গ্রন্থটির প্রাণভোমরা এবং শিল্প-কুহকের মতো সংকেতের আশ্চর্য অভিঘাত তাড়া করে বেড়িয়েছে এ-গ্রন্থ পাঠ করার সময়। আঠাশ-টি প্রবন্ধে শুদ্ধেন্দু যে সব আশ্চর্য বিষয়ের উপর আলোকপাত করেছেন তার প্রতিটিই গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রায় প্রতিটিই পাঠককে ভবিষ্যৎ-পাঠের জন্য উৎসাহিত করবে। মনোবিজ্ঞানের আশ্চর্য কুহকময় অন্দরমহলে প্রবেশ করার চাবিকাঠি পাঠকের হাতে তুলে দেওয়ার কাজটি শুদ্ধেন্দু করেছেন। এ-গ্রন্থের ভেতর একবার প্রবেশ করলে পাঠকের পক্ষে মনোবিজ্ঞানের জগতটির হাতছানি উপেক্ষা কঠিন হয়ে পড়বে। এখানেই তাঁর সব থেকে বড় সাফল্য।
শুদ্ধেন্দুর ভাষা প্রাঞ্জল, এবং এ-কারণে প্রতিটি বিষয় পাঠ পাঠকের কাছে স্বাদু হয়ে ওঠে।
গ্রন্থটির মধ্যে মিশে রয়েছে হারানো ইতিহাসের সন্ধান, ঐতিহ্যের প্রতি দৃষ্টিপাত, কবিমন ও মননকে ব্যবচ্ছেদ করতে-করতে অগ্রসর হওয়া।
গিরীন্দ্রশেখর বসুর সঙ্গে যে ফ্রয়েডের সংযোগ ছিল তা অনেকেই জানেন না; শুধু তাই নয়, সম-সময়ে তিনি যে কী বিপুল প্রভাব ও গুরুত্ব সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন সে সম্পর্কেও স্বভাবত ইতিহাসের প্রতি উদাসীন বাঙালি বিস্মৃত হয়ে গেছে। শুদ্ধেন্দু কিছুটা দায়বদ্ধতা থেকেই তুলে এনেছেন তাঁর কথা; শুদ্ধেন্দু বাঙালির হয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি সমাধা করেছেন। যে মনোবিজ্ঞান নিয়ে বাঙালির উৎসাহ বেশ কম সেই বাঙালিরই একজন প্রতিনিধি গীতা-য় শ্রীকৃষ্ণের ভূমিকাকে Crisis Intervention হিসাবে গণ্য করছেন ও লিপিবদ্ধ করছেন- এই আধুনিকতম ঘটনাটি যে ১৩৫৫ বঙ্গাব্দেই ঘটে গেছে সেটি সুনিপুণভাবে তুলে এনেছেন শুদ্ধেন্দু। ‘মনোবিজ্ঞানের ভাষা’ নামে গদ্যটি একেবারেই ব্যাবহারিক দৃষ্টিতে বিজ্ঞানের শাখাটিকে দেখার প্রচেষ্টা। আবার ‘কারাগারের কবিতা, একটি অবরুদ্ধ স্বর ও নিকোলাই বুখারিন’ নামে গদ্যটি ইতিহাসের পুননির্মাণ, পৃথক ডিসকোর্স এবং মনোবিজ্ঞানের আলোকে দেখা ক্ষমতার ‘স্বরূপ’। স্ট্যালিন ও বুখারিনের সম্পর্ক নিয়ে অসংখ্য লেখা রয়েছে। বুখারিনের ‘রাইট ডেভিয়েশন’ নিয়ে যে সম্ভাব্য কারণগুলি শুদ্ধেন্দু তুলে ধরেছেন সেগুলি মোটামুটি ইতিহাস-সমর্থিত। কিন্তু তিনি অনুপম দক্ষতায় তুলে এনেছেন ১৯৩২ সালের ৮ নভেম্বর ঘটে যাওয়া একটি ঘটনাকে, যেখানে নাদেজদা আলিলুয়েভের সঙ্গে স্ট্যালিনে কলহ এবং তার পরিণামে নাদেজদা’র আত্মহত্যা- ইতিহাসের অন্যতম রহস্যাবৃত অধ্যায়। শুদ্ধেন্দুর বিরল গুণ, তিনি সরলরৈখিক কোনও সমাধান বা সিদ্ধান্তে পৌছে যেতে চাননি। শুধু আমাদের কাছে তুলে ধরেছিলেন স্ট্যালিনের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন যখন টালমাটাল, বিধ্বস্ত তখন বুখারিন বিবাহ করছেন অ্যনি ল্যারিনা’কে।
স্টালিনের একনায়কতন্ত্রের ভেতর হয়তো অন্য নানাবিধ বিষয় ছিল, কিন্তু বুখারিনকে হত্যা করার পিছনে কি ছিল সেই আদি-অকৃত্রিম যৌন-ঈর্ষা? বুখারিনের স্থির যৌন-জীবন ও তরুণী স্ত্রী’র কারণে কি স্ট্যালিন তাঁকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলন? ক্ষমতা কী অসহায় এক বস্তু; সে পৃথিবী জয় করতে পারে কিন্তু প্রতিপক্ষের সুস্থির যৌন-সঙ্গী ও যৌন-জীবনের কাছে পরাজিত হয়। শুদ্ধেন্দু উল্লেখ্য কবি, ফলে তিনি এক-দু’-বার সংকেতমাত্র দিয়ে চলে গেছে প্রসঙ্গান্তরে। এখান থেকে শুরু হয়েছে পাঠকের উড়ান; স্ট্যালিন ও বুখারিনের মধ্যে সম্পর্কের এ-বিষয়টিকে ক্লাসিক্যাল মার্কসবাদের ধরাবাঁধা পথের বাইরে বের করে এনে প্রায় অসাধ্য সাধন করেছেন শুদ্ধেন্দু।
এ-গ্রন্থের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা, ‘আকস্মিকতা, ক্যাথারসিস ও ঋক্ষ মেষ’-এ শুদ্ধেন্দু তাঁর চিকিৎসক-জীবনের আশ্চর্যজনক বেশ কিছু ঘটনাকে লিপিবদ্ধ করেছেন। তাঁর ভাষায়, ‘কবিতা থেরাপি’ যে কী অদ্ভুতভাবে ‘বিশল্যকরণী’ হয়ে উঠেতে পারে তা রীতিমতো বিস্ময়কর। এক মফসসলের গৃহবধূর ‘ঋক্ষ মেষ কথা’র একটি কবিতা পছন্দ করে নেওয়া এবং তার মাধ্যমে তাঁর মনোজগতের হদিশ পাওয়া ও ক্যাথরসিস- সমগ্র বিষয়টি টানটান ছোটগল্পের কাহিনির মতো। কিন্তু এর থেকে বড় সত্য ও বাস্তব আর কিছু নেই। আবার এক নাবালক ওই একই কাব্যগ্রন্থের ‘চুনের হিসাব’ কবিতাটিকে গ্রহণ করছে এবং তার মাধ্যমে তার পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস কেটে যাচ্ছে- এ-ঘটনাটিও যতই ‘অস্বাভাবিক’ বলে মনে হোক, শুদ্ধেন্দু দেখিয়ে দিয়েছেন, যুক্তিসঙ্গত উপায়ে দেখিয়ে দিয়েছেন, মন নামক আপাত-অন্ধকারতম মহাদেশে এই সবই ঘটমান বাস্তবতা।
বিটহোভেনের শ্রবণশক্তি যে সম্পূর্ণ হারিয়ে গিয়েছিল তা আমাদের জানা; তুমুল প্রতিভার কাছে এসে বোধহয় সব প্রতিবন্ধকতাই আত্মসমর্পণ করে। এ কারণেই তাঁর সৃষ্টি করা সিম্ফনির মধ্যে সে বধিরতার কোনও ছাপ লক্ষ্য করা যায় না। শুদ্ধেন্দু এ-কথা আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন; কিন্তু সব থেকে বেশি করে জানিয়েছেন, শিল্প ও শিল্পীর স্বাধীনতার কথা। গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে, ক্ষমতার আস্ফালনের সামনে আমাদের শিরদাঁড়া শক্ত করে বাঁচার রসদ জোগায় শুদ্ধেন্দু’র উল্লেখ করা একটি ঘটনা। ঘটনাটি হয়তো অনেকের জানা, তবু লেখকের স্বাদু গদ্য ও প্রাঞ্জল উপস্থাপনার কারণে সেটি অমোঘ হয়ে উঠতে চায়, ‘তখন তার অনুগত, হেল্ডিজ তাকে বারণ করল। বলল, ‘প্রভু। এই আংটি বেচবেন না। এ একজন রাজার দেওয়া আংটি।’ উত্তরে বিটহোভেন অগ্নিশর্মা হয়ে বললেন, ‘আমিও একজন রাজা’। আর মৃত্যুশয্যায় ছোট্ট জেরহার্ড ভন ব্রিউনিংকে বিটহোভেন বলেছিলেন, ‘সবসময় জেনো, আমি একজন শিল্পী’। এখানেই একজন শিল্পী অতিক্রম করে যান তার প্রতিকূলতাকে, ক্ষমতাকে এবং মৃত্যুকেও। শিল্পী পারেন। কিন্তু সমাজ পারে না।’
বিদেশে, বিশেষ করে ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সমাজ ও শিল্পের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে বহু গ্রন্থ আছে। রাজনৈতিক অভিঘাত কীভাবে শিল্পকে প্রভাবিত করে তার অনন্য উদাহরণ আমাদের জানিয়ে গেলেন শুদ্ধেন্দু তাঁর এই গ্রন্থে- ‘ফরাসী সেনার বিজয় মিছিল ইউরোপের আনাচে কানাচে অস্থিরতা এনে দিল। বিটহোভেনের সুরে সেই অস্থিরতা লক্ষ্য করা গেল’।
শুদ্ধেন্দুর এই গ্রন্থ নিয়ে বিতর্কের উপাদান’ও কম নেই; তার কারণ শুদ্ধেন্দু কেবলমাত্র মনোবিজ্ঞানকে একমাত্রিক কোনও বিষয় হিসাবে গণ্য করেননি। তিনি ভেঙে দিতে চেয়েছেন সময়ের পৌরাণিক দূরত্ব এবং করতে চেয়েছেন মিথের পুননির্মাণ। ‘শ্রুতি, স্মৃতি, পুরাণাদি-মনস্তাত্ত্বিক অরূপরতন’ এমন একটি গদ্য যা প্রতি পদে-পদে বিতর্কের জন্ম দিতে পারে। কারণ ‘অয়ামেকাং লোহিত-শুক্ল-কৃষ্ণাং’ শ্লোকের মধ্যে ইকোলজিক্যাল ব্যালান্স বা ফুড-চেইন বা সারভাইভাল অফ দ্য ফিটেস্টের ছায়া কতখানি গাঢ় ও নির্ভুল তা নিয়ে বিতর্ক থাকাই স্বাভাবিক। এ ধরণের সংকেত খুঁজে পাওয়া ও তাকে প্রতিষ্ঠা করার পিছনে রেস্টোরেটিভ নস্টালজিয়ার ধারা কাজ করে কি না তা নিয়ে বিতর্ক’ও কোনও দিন শেষ হবার নয়।
শুদ্ধেন্দু আসলে একটি প্রাচীর ভেঙে ফেলতে চেয়েছেন। তাই তিনি ঝুঁকি নিয়েছেন এবং ‘মন, মনোবিজ্ঞান ও স্রষ্টা’র মতো একটি আদ্যপান্ত সিরিয়াস গ্রন্থে তিনি ‘রাবণ-অহীরাবণ’-বধ ও তাকে কেন্দ্র করে ছড়িয়ে থাকা মিথ’কে পুনর্নিমাণ করে বিকল্পের সন্ধান পেতে চেয়েছেন। অহীরাবণের কণ্ঠস্বর আদপে হ্যালুশিনেশনের বহিঃপ্রকাশ কি না তা নিয়ে পাঠকের চিন্তাধারাকে উসকে দিতে চেয়েছেন। সঙ্গে-সঙ্গে এটিও জানিয়ে দিতে কসুর করেননি যে সারা পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে থাকা আর্কেটাইপ উপাদানগুলির মধ্যে ঘনিষ্ঠ সংযোগের কথা। এ-লেখাটির শেষে তিনি ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ জানাতেও দ্বিধা করেননি, ‘মাঝে মাঝে আমার মনে হয় গীতায় বর্ণিত অর্জুন আর শ্রীকৃষ্ণ একই ব্যক্তি। মহাভারতে অর্জুনই যোদ্ধা, অর্জুনই তার সারথী’।
নতুন করে দেখার কথা ও অন্তদর্শনের সেতুবন্ধনের কথা বারবার বলেছেন শুদ্ধেন্দু তাঁর এ-গ্রন্থে। তিনি আবিষ্কার করেছেন রবীন্দ্রনাথ’কে মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে। এখানেও বিস্ময়ের অন্ত নেই; তাঁর মতো একজন প্রতিষ্ঠিত মনোচিকিৎসক রবীন্দ্রনাথের প্রায় কোনও দিকটিকেই ছুঁয়ে দেখতে বাকি রাখছেন না। কীভাবে একজন ব্যক্তিমানুষ ক্রমশ উত্তুঙ্গ দর্শনকে ধারণ করতে থাকেন, কীভাবে ক্রমবিবর্তন ঘটে তাঁর মনোজগতের, কীভাবে তিনি আত্মধ্বংসের খাদ থেকে নিজেকে নিয়ে ফিরে আসেন ভোরের আলোর দিকে- সবটুকুই লিপিবদ্ধ করে রাখতে চেয়েছেন শুদ্ধেন্দু। তাঁর দেখার মধ্যে রয়েছে প্রথাভাঙার ইশার, ফলে তিনি নিঃসংকোচে বলতে পেরেছেন, ‘পরমাত্মিক উপস্থিতির এই উপলব্ধির আত্মবিশ্লেষণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সোপান। সহানুভূতিশীল শিল্পীমন এই সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম পাওয়া না পাওয়াকে আরো বেশিভাবে প্রভাবিত করে।’
এ-গ্রন্থে শুদ্ধেন্দু সত্যিই অনন্য; তিনি যেভাবে সুকুমার রায়ের অমর জগতকে কবিতা-থেরাপি বা বিবলিও-থেরাপির সম্ভাবনা হিসাবে তুলে ধরেছেন তা বাংলাভাষার ক্ষেত্রে পথনিদর্শক হয়ে থাকবে। এ-নিয়ে কাজ যে হয়েছে তা স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি; কিন্তু পাশাপাশি এটিও সত্য- এই বিষয়টিকে ভিন্ন-ভিন্ন স্তর থেকে প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে শুদ্ধেন্দু হয়ে উঠেছেন অগ্রগণ্যদের একজন। তাঁর সব থেকে বড় অর্জন- তিনি প্রথা ভেঙে অগ্রসর হওয়ার দিকে নজর দিয়েছেন। ঝুঁকি নিয়েছেন; স্নায়ু-নন্দনতত্ত্বের সঙ্গে শিল্পের ঘনিষ্ঠ সংযোগ ও তার বহুমাত্রিকতাকে গুরুত্ব দিয়েছেন।
শিল্প কোনও মৌলবাদকে সমর্থন করে না; শুদ্ধেন্দু’র এই গ্রন্থটির মধ্যে রয়েছে ‘মানসিক’ ও ‘বৌদ্ধিক’ মৌলবাদকে অতিক্রম করে যাওয়ার রসদ। গ্রন্থটি শেষ হয়েছে ‘মনরাক্ষসের কিস্সা’ নামে গদ্যটি দিয়ে; এখানে তিনি বলছেন, ‘(হয়তো এটাই, যে) তার কাছে আছে কবিতার মায়াজগতের সোনার কাঠি রুপোর কাঠি। ঠিক ঠিক ব্যবহার তাকে করে তুলতে পারে ‘ইউলিসিস’, আবার বিপরীত ব্যবহার তাকে বিলুপ্তও করতে পারে’। সঙ্গে তিনি এটিও জানান- এই রাক্ষস খানিকটা লালন চায়, চায় খানিকটা বিশ্বাস।
শুদ্ধেন্দুর এই গ্রন্থ শেষ পর্যন্ত মনরাক্ষসের সন্ধানের থেকেও বেশি মন-পাখির সন্ধান। হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ মন’কে পাখি বলে কল্পনা করে গেছে; তার রহস্য বুঝতে চেয়েছে। কার্তেসিয়ান প্যারাডক্সের সামনে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে থেকেছে। অতলের সন্ধানে সে বিমূঢ়; তাই তার হাতে সৃষ্টি হয়েছে একের পর এক শিল্প। তবে মনের রহস্য ও তার চলন-পদ্ধতি এতটাই জটিল যে ২০১৬ সালের গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যের সামনে দাঁড়িয়েও আমরা কোনও স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি না। অনেক ‘যদি ও কিন্তু’র ঘেরাটোপ ঘিরে থাকে তাকে। শুদ্ধেন্দুও কোনও মৌলবাদী সিদ্ধান্তের কাছে পৌঁছাতে চাননি; তিনি সম্ভাবনার ও দেখার কয়েকটি দরজা আমাদের সামনে হাট করে খুলে দিয়েছেন। এ গ্রন্থ অতি-অবশ্যই বিজ্ঞানকে কেন্দ্র করে, কিন্তু বিজ্ঞানের ‘মৌলবাদ’ এখানে ছায়া ফেলতে পারেনি।
সাধারণ পাঠক কি এটি জেনে পুলকিত হবেন না যে মস্তিষ্কের প্রি-ফ্রন্টাল কক্সটেক্স এবং টেম্পোরা প্যারাইটাল অঞ্চলেই লুকিয়ে রয়েছেন মনের শিব ও ব্রহ্মা! মনের শিব ও ব্রহ্মার সন্ধানে, সেই অ্যগ্রেসিভ ও সৃষ্টিশীল সত্তাকে কীভাবে জাগরিত চিহ্নিত করা যায় এবং স্বরূপ জানা যায়... কীভাবে ক্ষতবিক্ষত মনের সঙ্গী হয়ে উঠতে পারে শিল্প... এ সব নিয়ে এই গ্রন্থ এক মহা-আয়োজন।
‘চিন্তা গ্রন্থ সিরিজের’ বেশ কিছু বই পাঠকের কাছে অতি-মূল্যবান। এই গ্রন্থটি প্রকাশ করার জন্য প্রকাশকের কাছে বাঙালি পাঠকের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। ‘কবন্ধ- ফিকশনের’ রাজত্বে এই গ্রন্থ উজ্জ্বল ব্যতিক্রম।