• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৯৬ | অক্টোবর ২০২৪ | গল্প
    Share
  • ওমর আলির আন্দালুসিয়ান ঘোড়া : ফয়সাল রাব্বি

    ওমর আলির আন্দালুসিয়ান ঘোড়াটা ক’দিন ধরে বাড়ির আঙ্গিনায় বেঁধে রাখা। মাথায় কাউবয় টুপি পরে এই ঘোড়া নিয়ে ওমর আলি প্রায়ই বেরুতেন। বাড়ি থেকে কাছারি বাজার, কাছারি বাজার থেকে তিস্তা-ক্যানেল, সেখান থেকে সোজা কালিতলার থৌল। কালিতলার থৌল তার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা। কী এক রোমাঞ্চকর দিন ছিল! ঘোড়ার খুরের টগবগ ধ্বনিগুলো মানুষের হাততালির সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে এক উচ্ছ্বসিত আবহ তৈরি করত। তার সাথে যোগ হত ‘ওমর’ ‘ওমর’ স্লোগান। কালিতলার এই থৌলের আশপাশে এলে ওমর আলি শুনতে পান সেই স্লোগান। রেসের দিনগুলোর কথা মনে আসে। পারিবারিক ঐতিহ্যে পাওয়া ঘোড়াটাই ছিল তার অন্যতম সঙ্গী। আর ছিল এই ঘোড়দৌড়ের নেশা। কালিতলায় জড়ো হওয়া অনেকেই - হারলে প্রতিপক্ষকে প্রায় দ্বিগুণ অর্থ পরিশোধের শর্তেও ওমর আলির পক্ষে হাজার হাজার টাকার বাজি ধরত অনায়াসে। আশপাশের জেলাগুলো থেকেও ঘোড়দৌড়ে অংশ নেওয়ার প্রস্তাব আসতো। কখনো কখনো যেতেনও। ঘোড়া নিয়ে যতরকম বাউণ্ডুলেপনা করা যায় তার সবই তিনি করতেন। আজকের দিনে বখাটে ছেলেরা যেভাবে মোটরবাইকের সাইলেন্সার খুলে বিদঘুটে শব্দ করে বালখিল্যতা করে, তখনকার দিনে তার এই ঘোড়া নিয়ে ঘোরাফেরাকে মুরুব্বি লোকেরা এমন বালখিল্যতা বলেই গণ্য করতেন। আর বয়স হওয়ার পর তার এইসব কর্মকাণ্ড কারো কারো ভাষায় – ‘বয়সকালের ভীমরতি’, ‘আদিখ্যেতা’ ইত্যাদি… বয়সে কুলোয় না অথচ শখের শেষ নেই! সারা শরীরে বাতের ব্যথা, দৃষ্টি ক্ষীণ হতে হতে প্রায়-অন্ধ; কুয়াশার মত দেখেন সব, হাত-পা কম্পমান, মুখের চামড়া ঝুলে করোটির কাঠামো স্পষ্ট দৃশ্যমান। কঙ্কাল-শরীর ঢাকেন লম্বা কোটে। আর সুবিশাল টাক কাউবয় টুপিতে ঢেকে যায়। এমনকি তার আন্দালুসিয়ান ঘোড়ার পিঠে চেপে বসলেই সেই প্রাগৈতিহাসিক কালের যুবক ওমর ফিরে আসেন। শুনতে পান ‘ওমর’ ‘ওমর’ স্লোগান আর অনেকগুলো খুরের টগবগ শব্দের ঐকতান। বল্গা টেনে ধরতেই সামনের পা দু’টো উপরে তুলে চিঁহিহিহি ডাক তুলে ঘোড়া ছুটতে শুরু করে। ঘোড়ার প্রতাপ তার মধ্যেও চলে আসে। সেই প্রতাপ নিয়ে তিনি কালিতলার থৌলে যান। ঘোড়দৌড় দেখে উত্তেজনায় কেঁপে-কেঁপে ওঠেন। ঘোড়াটিও তার সাথে সাথে চিহিহি করে ওঠে। যেদিন ওমর আলি অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়লেন, কাউকে চিনতে পারছিলেন না, এমনকি নিজের নাম-পরিচয়ও ভুলে গেলেন সেদিন থেকেই এই ঘোড়াটা আঙ্গিনায় খুঁটির সাথে বাঁধা; আঙ্গিনায় অবহেলায় গড়ে তোলা একটা দো’চালা ঘরে। ঝড় এলেই ঘর ভেঙ্গে যাবে মনে হতে পারে কারো কারো। ওমর আলি বিছানা নেয়ার পর অনেকের চোখই হয়ত সেই লাখ টাকা দামের বলিষ্ঠ আন্দালুসিয়ান ঘোড়ার দিকে গিয়ে থাকবে। তাই বাড়ির সকলেই প্রতিদিন ঘুমাতে যাবার আগে সতর্কতাবশত দ্বিতীয়বার মূল ফটক দেখে আসেন – তালা ঠিকঠাকমতো লাগানো আছে কিনা।

    ঘোড়ার চিন্তায় কাশেম আলির রাতে ঘুম হয় না, কাশেম আলি প্রায় রাতেই ঘুমের ঘোরে ‘চোর’ ‘চোর’ বলে চিৎকার করে ওঠেন, হোসেন আলির ঘুম হলেও ঘুম ভাঙ্গা মাত্র ধড়ফড় করে ছুটে যান ঘোড়া দেখতে। সন্ধ্যা হলেই – যখন ঐ দূরের ইটাখোলা হাটের পাশে যে ডোবা আছে তার পাশের ঝোপঝাড়ের ঝিঁঝিঁপোকার একঘেয়ে আওয়াজ স্পষ্ট শোনা যায়, আর মাঝেমধ্যে শোনা যায় অনেক দূরের একটা দু’টো পা ফেলার শব্দ - এ বাড়ির সবাই ঘোড়ার খুরের স্পষ্ট শব্দ শোনে। যেন টগবগ টগবগ ধ্বনি তুলে কোনো দস্যু-ডাকাত কিংবা কোনো কাউবয় টুপি পরা নায়ক এক্ষুনি বাড়ির সামনে অবতরণ করবেন। বাড়ির কেউ কেউ ওমর আলি বাড়ি ফিরেছেন ভেবে দরজাও খুলে দিতে যান। সৈয়দ মুন্সির বৌ বলেছিল এটা জিনের আঁচড়, আসলে টগবগ টগবগ ধ্বনি তুলে লম্বা কোট আর কাউবয় হ্যাট পরা ওমর নায়কোচিতভাবেই বাড়ি ফিরতেন প্রতিদিন সন্ধ্যায়। বাড়ির সবাই সন্ধ্যা হলেই ঘোড়ার খুরের শব্দ শুনে অভ্যস্ত। অভ্যস্ত মস্তিষ্কে তাই ভ্রম তৈরি হয়। তারপর সেই ভ্রমটাই স্বাভাবিক অভ্যাস হয়ে যায়। মাইকের শব্দে ভয় পাওয়া কুকুরের বিদঘুটে কান্না আজান শেষ হওয়ার পরও যেমন তারা শুনে অভ্যস্ত, শান্ত-স্নিগ্ধ রাতের ছেদ ঘটানো গায়েবি ঘোড়ার খুরের শব্দেও তারা একইভাবে অভ্যস্ত এখন। আজান দিলে শয়তান জিনেরা ভয়ে ছোটাছুটি করে। আর কুকুর অদৃশ্য অনেক শক্তিই দেখতে পায়। তাই আজান দেওয়ার সময় জিনের ছোটাছুটি দেখে কুকুর ভয় পেয়ে কাঁদে। সৈয়দ মুন্সির বৌয়ের থেকে এই কথা এখন সবাই জানে। ঘোড়ার খুরের টগবগ শব্দের রহস্যও তার কাছ থেকে জানা যায়। তিনি এর জন্যও দায়ি করেন জিনকে। সবাই মেনে নেয়। সবাই আয়াতুল কুরসি পড়ে ঘুমাতে যায়। অজানা-অচেনা কোনো বাদ্যযন্ত্রের মৃদু সুর যেন কোনো কিংবদন্তিকে অভিবাদন জানায়, কিংবদন্তি এসে এক মুহূর্ত দাঁড়ায়- বিষণ্ন - মাথায় কাউবয় টুপি, লম্বা কোট, কিছু না বলে ঘোড়ায় চেপে টান দেন বল্গায়, ঘোড়া এগোয় তিস্তার দিকে। তারপর চিঁহিহি হাঁক তুলে শেষবারের মত জীবনের শ্রেষ্ঠ হার্ডল জাম্পিং দেয় আন্দালুসিয়ান ঘোড়াটা। ঢেউয়ের সাদা ফেনার মাঝে কালো কাউবয়-টুপিটা অল্পক্ষণ ভাসতে দেখা যায়, তারপর স্রোতের তোড়ে তলিয়ে যায়। তারপর আবার তার পুনরাবৃত্তি। ঘোড়ার টগবগ শব্দ, কিংবদন্তি আসছে। ঘোড়ার টগবগ শব্দ এবার ইটাখোলা হাট থেকে। প্রখর থেকে প্রখরতর হচ্ছে। বাড়ির ফটকের সামনে এসে পৌঁছালে বাড়ির সবার ঘুম ভাঙ্গে। তারপর আবার আয়াতুল কুরসি পাঠ। সৈয়দ মুন্সি সবার প্রায় মিলে যাওয়া স্বপ্নের বর্ণনা শুনে ঘোষণা দেন, ‘ওনার হাতে আর বেশি সময় নাই।’

    কাশেম আলি বৌয়ের মুখে কথাটা শুনেই রাগে ছ্যাঁৎ করে ওঠেন, ‘আব্বার ঘোড়া আমরা বেচবো না।’ তাছাড়া ঘোড়া এই বাড়ির ঐতিহ্য। কাশেম-হাশেম-হোসেনের পিতামহ, প্রপিতামহ সবারই ঘোড়া-প্রীতি ছিল। ড্রয়িংরুমে সাজিয়ে রাখা পাঁচ পুরুষের ছবি অন্তত তার-ই প্রমাণ দেয়। প্রত্যেকের মাথাতেই কাউবয় টুপি, লম্বা কালো কোট, আর চকচকে চামড়ার দামি ঘোড়ার পিঠে বসা সবাই। ছবির সারি বাম দিক থেকে শুরু হয়েছে। এভাবে দেওয়ালের প্রায় অর্ধেক জায়গা জুড়ে ছবিগুলো। ওমর আলির ছবি থাকলে দেওয়ালের একদম মাঝ বরাবর থাকতো। কেউ খেয়াল না করলেও হোসেন আলি ঠিকই স্মরণ করেছেন। আসলে বাবা এতো বয়সেও এমন বলিষ্ঠ যুবকের মত বেড়াতেন যে, তার যে বয়স হয়েছে, স্মৃতি ধরে রাখার জন্য ছবি যে তুলে রাখা দরকার, মৃত্যুশয্যায় যে তাকেও পড়তে হবে – এমন কথা কারো মাথাতেই আসেনি। এমনকি চিরাচরিত নিয়ম অনুসারে নানান রোগ-শোক এসেও স্মরণ করিয়ে দিতে পারতো তার বার্ধক্যের কথা। অথচ, তিনি কখনো অসুস্থই হন নি। এই প্রথম তিনি শয্যাশায়ী। মেজো ভাই হাশেম আলি অবশ্য মনে মনে চান ঘোড়াটা বিক্রি করতে। বড় ভাই কিংবা পরিবারের অন্যদের ভয় নয় বরং পারিবারিক সংস্কারের কথা ভেবেই মনের কথাটা মুখে আনতে পারেন না। তাদের পাঁচ পুরুষ ধরে কেউ কখনো নিজেদের ঘোড়া বিক্রি করেনি। বার্ধক্যে মরেছে প্রতিটা ঘোড়া। এমনকি পারিবারিক কবরস্থানের মত মৃত ঘোড়াগুলোর কবরের স্থানও চিহ্নিত করা আছে যত্নে। হোসেন আলি কোনো রাখঢাক না রেখে ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে প্রস্তাবটা করেই বসলেন, ‘আমরা তো কেউ ঘোড়ায় চড়ি না।’ ওমর আলিই শেষ প্রজন্ম যিনি ঘোড়ায় চড়ে বেড়াতেন। তিন ভাই কখনো ঘোড়ার পিঠে অবধি বসেননি। সুতরাং, ঘোড়াটা বিক্রির পক্ষে যথেষ্ট যুক্তি আছে। আর বাড়ির বৌয়েরা সব ঝগড়া চুকিয়ে অনেক দিন পর এক হয়েছে। যে ঘোড়ার জন্য বাড়ির সবার রাতের ঘুম হারাম, জিনের নজর, চোরের ভয়, উপরন্তু, সেই ঘোড়ার যত্নে মাসে হাজার খানেক খরচ! সত্যিকার অর্থেই সে আদিখ্যেতা করার জমিদারি এখন আর তাদের নেই। ওমর আলির পরে পরিবারের সবচেয়ে প্রভাবশালী কাশেম আলির গলার স্বরও ক্ষীণ হয়ে আসে। সুতরাং, সিদ্ধান্ত হল – ঘোড়াটা বিক্রি করা হবে। টাকাটা তিন ভাই তিন ভাগ করে নেবে। কাশেম আলির মন সায় না দিলেও, মনে মনে ঠিক করে ফেলেন টাকাটা দিয়ে মোটরবাইক কিনবেন। হাশেম-হোসেন কী করবেন টাকাটা দিয়ে তার ঠিক নেই। বিক্ষিপ্ত সব পরিকল্পনা। তবে বৌয়েরা নিখুঁত হিসাব করে ফেলেছে – কীসে কত টাকা খরচ করা যেতে পারে। শখের একটা লিপস্টিক, অনেক দামি, তাই – এতোদিন ইচ্ছা থাকলেও কিনতে চাওয়ার সাহস করেনি হোসেনের বউ, এই সুযোগে সেই লিপস্টিকও খরচের তালিকায় জায়গা পেয়েছে।

    একদিন সন্ধ্যায়, সবার সব পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। আবার ইটাখোলা হাট থেকে ঘোড়ার খুরের শব্দ, প্রখর থেকে প্রখরতর। মূল ফটকের সামনে এসে থেমে যায়। বুটের শব্দ; কেউ একজন লাফিয়ে নামলো ঘোড়ার পিঠ থেকে। বাড়ির সবার মুখে আয়াতুল কুরসি। অন্যদিন হলে বুটের শব্দ মূল ফটকে আসার অনেক আগেই থেমে যেত। কিন্তু আজ বাড়ির উঠানে চলে এসেছে। অথচ মূল ফটকে তালা মারা ছিল। এমনকি অভ্যাসবশত বাড়ির সবাই দুইবার করে দেখে নিশ্চিত হয়েছিল তালা মারা ছিল। বাড়ির কেউ কেউ উঠোনের দো’চালা ঘরটার দিকে তাকায়। কেউ ঘোড়াটিকে দেখে, কেউ দেখে শূন্য ঘর। তবে কি চোর? কেউ আর কোনো যুক্তি খুঁজে পায় না। লম্বা কোট পরা মূর্তিটা বারান্দার আলোর বিপরীতে দাঁড়াতেই সবাই দেখতে পায় ওমর আলিকে। হাস্যোজ্জ্বল ওমর আলি! কেউ কেউ জিন সন্দেহে দৌড়ে চলে যান সৈয়দ মুন্সিকে ডাকতে। সৈয়দ মুন্সি এসে ঘোষণা দেন, জিন নয়। আল্লাহর অসীম কুদরতে ওমর আলি সহসা সুস্থ হয়েছেন। একটু সুস্থ হওয়া মাত্র কাউকে কিচ্ছু না বলে বেরিয়ে পড়েছেন ঘোড়া নিয়ে। ঘোড়া বিক্রির টাকা নিয়ে পরিকল্পনা করা সবাই আশাহত হল কিনা বলা যায় না; সবাই এক ঝটকায় আগের স্বাভাবিক জীবনযাপনে ব্যস্ত হল – যেন আগে-পরে কিছুই হয়নি। বাড়ির সবাই এখন ব্যস্ত নিজেদের নিয়ে আর ওমর আলি ঘোড়া নিয়ে। অনেকদিন হয়েছে নাল খুলে খুরের অতিরিক্ত অংশ কেটে পরিষ্কার করা হয় না। নালে জংও ধরেছে। ছেলেরা কেউ যত্ন নেয়নি তার ছাপ স্পষ্ট। অসুস্থতার সময় বিছানায় শুয়েই শুনেছেন নানাবিধ আলাপ-আলোচনা; তার কবরের স্থান নির্ধারণ, ঘোড়ার দাম, কে কী কিনবে, এ ঘরের কোন জিনিসটি কার ভাগে যাবে ইত্যাদি ইত্যাদি।

    ওমর আলি সুস্থ হয়ে আবারও আগের মতই প্রতাপ নিয়ে ঘুরে বেড়ান। কাছারি বাজার, তিস্তা-ক্যানেল, কালিতলার থৌল, এরপর সূর্য ডুবলে বাড়ি। কোনো কোনো দিন সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হুয়। রাত হলেও সমস্যা নেই। মূল ফটক খোলা রাখা হয়। আর ঘোড়ার খুরের শব্দ শুনেই – বুড়ো বাড়ি ফিরেছে – নিশ্চিত হয়ে সবাই ঘুমাতে যায়। ওমর আলি আন্দালুসিয়ান ঘোড়াটাকে স্প্যানিশ রাজাদের যুদ্ধের ঘোড়ার মতই যত্ন নিতেন। যেন এই মুহূর্তেই কোনো রেস কিংবা সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য সে প্রস্তুত। ওমর আলিও বয়স ঢাকতে যা করা দরকার তার সবই করেন। শুধু ঘোড়দৌড়ে অংশ নিতে দ্বিধায় পড়েন। ঘোড়ার পিঠে বসলেই সাহস এমনিই চলে আসে, দ্বিধা হল – দুর্বল শরীর তো সায় দেবে না। তাই বয়স হওয়ার পর দিনের পর দিন শুধু থৌলের রেস দেখেছেন। ঘোড়াটিও রেস দেখে উত্তেজনায় চিঁহিহি করে উঠেছে। ঘোড়াটির প্রতাপ যেমন বৃদ্ধের শরীরে চলে আসতো, বৃদ্ধের বার্ধক্য বিপরীতক্রমে ঘোড়ার মধ্যে আসতো না বরং বৃদ্ধের ফিরে পাওয়া প্রতাপে ঘোড়া আরোও তেজি হয়ে উঠতো। বাড়ির সবাই বরাবরের মতই মূল ফটক খুলে রাখেন, আর ঘোড়ার খুরের শব্দ শুনে নিশ্চিত হয়ে ঘুমাতে যান।

    ওমর আলি হঠাৎ একদিন ক্লিন শেভ করে মাঝবয়সী হয়ে কালিতলার থৌলে যান। বৃদ্ধ দর্শকেরাও মাঝবয়সী হয়ে যান, আর মাঝবয়সীরা হয়ে যান যুবক। আবারও যৌবনের সেই উত্তাল ধ্বনি – ওমর, ওমর। ওমর মুচকি হেসে হাত নাড়েন। তারপর পিস্তলের ঠাস শব্দের সাথে সাথে বল্গা জোরে টেনে ধরেন। আন্দালুসিয়ান ঘোড়াটা দীর্ঘদিন পর রেস করতে পেরে উত্তেজনায় জোরে চিঁহিহি ডাক তুলে আকাশের দিকে এমনভাবে পা তুলে ধরে কারো কারো মনে হবে এখনি আকাশে উড়ে যাবে। ক্ষীপ্রতায় সবার আগে শেষ সীমায় পৌঁছেও থামলো না ঘোড়াটা। সবাই শুধু কিছু একটার চলে যাওয়া দেখল, দেখতে দেখতে উধাও হয়ে গেলো। শুধু ঘোড়ার খুরের টগবগ টগবগ আর চিঁহিহি বিকট শব্দ থেকে গেল। শব্দটা নয়াবাজার পেরিয়ে, আনন্দবাবুর ব্রিজ পেরিয়ে, ইটাখোলার হাট পেরিয়ে বাড়ির সামনে, মাঝরাতে। সবাই প্রায় একই স্বপ্ন দেখে জেগে উঠল। দেখল, বাড়ির মূল ফটক খোলা! কেউ একজন ওমর আলির ঘরে যায়। কেউ নেই! দো’চালা ঘরটিও ফাঁকা। কবে থেকে ঘর ফাঁকা তা-ও আন্দাজ করা যায় না।



    অলংকরণ (Artwork) : রাহুল মজুমদার
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments