আজ শিক্ষক দিবস, পাঁচই সেপ্টেম্বর, ২০২৪। আজ থেকে সাতান্ন বছর আগের এই দিনে, আমাদের বাড়িতে এক ঘটনা ঘটেছিল, যা হয়তো অনেকেরই অল্প বিস্তর মনে আছে।
ঠিকঠাক বলতে গেলে সাতান্ন বছর। সালটা ছিল ১৯৬৭। ঘটনার মূল তিনজন কুশীলবরা আজ আমাদের মধ্যে নেই, তবে একজন থাকতেই পারত, আর থাকলে বয়েস হতো ঐ সাতান্নই।
ছোট পিসির বিয়ে হয়েছিল এর থেকে ঠিক বারো বছর আগে। বাইশে শ্রাবণ ১৩৬১ বাংলা সন। ইংরেজি সাত বা আটই আগস্ট ১৯৫৫। বাইশে শ্রাবণ কোনও আগাম দুর্ভাগ্যের আভাস নিয়ে এসেছিল কিনা জানা নেই, আমি অন্তত এরকম কোনও আভাসে বিশ্বাস করি না। এটা নেহাতই কাকতালীয়, কিন্তু এই বিয়ে শেষ অবধি মানসিক সুখ বা শান্তি এনে দিতে পারেনি অন্তত ছোটপিসিকে। ওঁর সন্তান ভাগ্য ছিল না। অথচ কী তীব্র আকাঙ্খা ছিল, যা একজন নারীর চিরন্তন মনোকামনা। এবং তা খুবই স্বাভাবিক। সন্তান না হলেই, নারী জীবন ব্যর্থ, তা আমি মনে করি না, কিন্তু সেটা ছিল পিসির ভাবনা, সেই ভাবনাকে অসম্মান করার অধিকার কারোর থাকতেই পারে না।
ছোটপিসি কিন্তু অন্য পিসিদের থেকে অনেকটাই আলাদা। প্রচণ্ড ব্যক্তিত্বময়ী, আমরা ভীষণ ভয় পেতাম। একবার ঠিক করল, সবাইকে স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য খেতেই হবে। ওরে বাপ রে বাপ! কী বিস্বাদ! কী বিস্বাদ!
ছোটপিসির স্যুপগুলো
কী দিয়ে তৈরি!
কী দিয়ে তৈরি!
বিট গাজর মূলো আর
বিটকেল যা দুনিয়ার
এই দিয়ে ছোটপিসির
স্যুপ গুলো তৈরি!
এটা বোধহয় ছোড়দাই তৈরি করেছিল, সুকুমার রায়ের অনুপ্রেরণায়।
দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছিল বলে বেঁচে গিয়েছিল। কিন্তু বাকি আমাদের সব ভাইবোন , দাদা থেকে শুরু করে আমি পর্যন্ত, সবাইকে জোর করে খাওয়াতো। আমি তো খাটের তলায় পালাতাম, ঠিক খুঁজে বার করে খাওয়াতো। মূল লক্ষ্য ছিল ছোড়দা, যার উপর ছোটপিসি তার অপত্য স্নেহ উজাড় করে দিয়েছিল। ভালবাসার অত্যাচার বললে কিছুই বোঝানো যাবে না, আমরাও কমবেশি ভুক্তভোগী, তবে তা নেহাতই কো-ল্যাটারাল ড্যামেজ। শেষে দাদা একদিন বমি করে সবাইকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল।
এই বিচিত্র খাদ্য ব্যবস্থার পেছনে ছিল ছোটপিসির সেজ দেওর। উনি বিষ্ণু ঘোষের প্রিয় ছাত্র, চমৎকার স্বাস্থ্য, দেখতেও ভাল, কলকাতা শ্রী, গানের গলাটিও বেশ। খুব জনপ্রিয় ছিলেন আমাদের মধ্যে, ছোট বড় সকলের কাছেই প্রিয়। আর উত্তর কলকাতার হরি ঘোষ স্ট্রিটের বাড়িটা ছিল আনন্দের হাট। খোলা মেলা হাওয়া বইতো। গান বাজনা, শরীর চর্চা এসব ছিল খুব। আর কবিরাজ দাদু, মানে ছোটপিসির শ্বশুর মশাই ছিলেন তার প্রাণ পুরুষ। ধবধবে গায়ের রঙ, শ্বেতশুভ্র কদমছাঁট মাথার চুল, খুব মানানসই ছিল। যে কোনও জায়গাতেই শুধু ওঁর উপস্থিতিই এনে দিত আলাদা সম্ভ্রম। তিনি তাঁর মেজাজি বড় বৌমাটিকে স্নেহ করতেন। আর দেওর ননদদের তো কথাই নেই। তারা বৌদি অন্ত প্রাণ।
প্রথম তাল কাটল, কবিরাজ দাদুর প্রয়াণে, সেটা ছিল ১৯৬২ সালের আগস্ট মাসের বারো তারিখে। ঠিক এক বছর পর চলে গেল বাবা। ভিতটা নড়ে গেল। সম্পর্কের গ্রন্থিগুলো আলগা হতে লাগল। কিন্তু ছোটপিসি অদম্য। নতুন উদ্যমে একের পর এক কর্মসূচির ঘনঘটা। যদ্দূর মনে পড়ে মুকুল বীথি নামে একটা নামী মন্টেসরি স্কুলে পড়াতে শুরু করল। শুধু তাই নয়, সুন্দরদি আর ছোড়দিকেও সামিল করল। সবুজ পাড়, সাদা শাড়ি পরে শহরের অন্য প্রান্তে, কাঁকুড়গাছিতে, দুই বোনে, আর সেই হরি ঘোষ স্ট্রিট থেকে যেত ভোর বেলা। রোজ ভোরে, নামমাত্র পারিশ্রমিকে। আসলে নিজেকে নানা কাজে জড়িয়ে রাখার একটা আপ্রাণ প্রচেষ্টা।
একবার হয়েছিল কি, রূপবানী হলে জলসা হচ্ছে। প্রতি শীতকালে হতো। উদ্যোক্তাদের মধ্যে একজন কর্মকর্তা ছিলেন পিসেমশাইয়ের আরেক ভাই। সেই সুবাদে প্রথম সারিতে ছোটপিসি আরেকজন আত্মীয়ার সঙ্গে বসে। আমি ঠিক তার পেছনে। প্রথম দিকে এক প্যারোডি গায়ক গাইতে উঠলেন। অতি নিকৃষ্ট, পাতে দেবার যোগ্য না। তখনকার জনপ্রিয় গান ‘ডম ডম ডিগা ডিগা, মৌসম ভিগা, ভিগা'র একটা কদর্য প্যারডি। “ল্যাংপ্যাং রোগা, রোগা, গোটা কুড়ি বাচ্চা হোগা…. ইত্যাদি, ইত্যাদি।” সবাই হই হই করে ,আওয়াজ দিয়ে নামিয়ে দিল। শুধু ছোটপিসি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেছিল, “আমার যদি একটাও থাকত!”
সবদিক থেকেই আলাদা ছিল ছোটপিসি। সাহস ছিল, আগু পিছু ভাববার মানুষই ছিল না। তখন আমাদের বেহালার বাড়িটা তৈরি হয়ে পড়েছিল। নানা কারণে বাড়িটায় কেউ আসতে চাইছিলাম না। ফাঁকা পড়েছিল। কয়েক মাস মুকুল বীথির অভিজ্ঞতা সম্বল করে, একেবারে স্থির করেই ফেলল, বেহালার বাড়িতে ইস্কুল খুলতে হবে। হবে মানে হবেই। নাম পর্যন্ত ঠিক হয়ে গেল -– “শ্রী শ্রী মোহানানন্দ ব্রহ্মচারী বিদ্যালয়”। বলা বাহুল্য, এই নাম ছোটপিসির গুরুদেবের। প্রবল আশা এবং গুরুদেবের আশীর্বাদ সঙ্গে নিয়ে ছোটপিসি শুরু তো করল। দেখা গেল, গুরুদেবের নাম বা আশীর্বাদ কোনটাই বিশেষ কাজে এলো না। বরং, যেটুকু সম্ভাবনা ছিল, তা সভয়ে, দূর থেকে প্রণাম করে পালাল। কেন তা খুলে বলছি। আমি একদিন গিয়েছিলাম। সারাদিন প্রায় অভুক্ত অবস্থায় তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করাই সার! একদম শেষ বেলায় দেখা গেল– ঐ তো আসছে একজন! আমরা প্রস্তুত! তা এলেন সত্যি সত্যি! অতি দুঃস্থ একটি রোগা বৌ। ওর একটি বছর আটেকের ছেলে আছে। স্বামী দিনমজুর, আর নিজে ঘুঁটে বিক্রি করে।
প্রথম প্রশ্নই ছিল, ‘দিদিমণি, আপনারা কি ছেলেকে সন্ন্যাসী করে দেবেন?’
‘ও আবার কী কথা? সন্ন্যাসী বানাব কেন?’
‘ঐ যে নাম রেখেছেন?’
তখন বোঝা গেল, স্কুলের নাম মাহাত্ম্য। মাইনে ঠিক করা হয়েছিল পাঁচ টাকা। ১৯৬৭ সালে সেটা কম কিছু না। সাউথ পয়েন্টের মাইনে ছিল কুড়ি টাকা। সেই হিসেবে অনেক বেশির দিকে। দেখা গেল পাঁচ টাকা ওর পক্ষে খুব বেশি। শুধু তাই নয়, একটি টাকাও দেওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে কীসের আশায় সে এসেছিল? এটার সদুত্তর অবশ্য একটা পেয়েছিলাম। দুপুর বেলায় ছেলেটা একটা থাকার জায়গা পাবে আর সবচেয়ে জরুরি ও সেই সময় আরও কিছু ঘুঁটে দিতে পারবে। সব শুনে ছোটপিসি তাতেই রাজি, প্রথম ছাত্র বলে কথা! কিন্তু সে আর এলো না, এবং আর কেউই এলো না। একরাশ হতাশা আর হাহাকার নিয়ে ফিরতে হয়েছিল ছোটপিসিকে।
পিসেমশাই ছিলেন কিন্তু বেশ সুপুরুষ। খাঁজকাটা থুতনিতে খুব রাশভারি আর ব্যক্তিত্ববান দেখাত। কিন্তু আসলে ছিলেন ঠিক ততটাই দুর্বল, অসহায়। এই সময় ছোটপিসি জীবনের দুঃসাহসিকতম কাজটি করে ফেলল। গোপাবৌদি, কলকাতার নামকরা গায়নোকোলজিস্টের সঙ্গে আমাদের বাড়ির মেয়ে বউদের সুন্দর যোগাযোগ ছিল। হবে নাই বা কেন, ভারি মিষ্টি স্বভাবের মানুষ, তদুপরি আমাদের আত্মীয়। শুনেছিলাম, উনি ওঁর ব্যবহার দিয়ে, উপস্থিতি দিয়েই অর্ধেক রোগ সারিয়ে দিতেন। তাই দেখে বোধহয়, বাকি অর্ধেকও ঠিক হয়ে যেত। নানা কারণে ছোটপিসির সঙ্গে ওঁর যোগাযোগ হতেই থাকত। উনি পিসির মনোবেদনার কথা জানতেন। আসলে ওঁর চাইতে ভাল বোধহয় কেউই জানত না। যাইহোক, একদিন উনি খবর পাঠালেন, একটি সদ্যোজাত শিশুপুত্রের সন্ধান তিনি পেয়েছেন, তার মাও সন্তানের জন্ম দিয়েই চলে গেছে অনন্তের পথে, বাবা তো সম্পর্ক কবেই ছেড়ে দিয়েছে, সেটাও আজও খুব স্বাভাবিক ব্যাপার, বিশেষ করে দারিদ্র ও স্বার্থপরতা যাদের নিত্যসঙ্গী। শিশুর দাদু পড়েছেন মহা সঙ্কটে, কারণ তাঁর স্ত্রীও নেই। এই অবস্থায় যদি কোনও সহৃদয় পরিবার দায়িত্ব নেন, এবং ইত্যাদি। ছোটপিসি শোনার পর দুবারও বোধহয় ভাবেনি। তবে একেবারেই ভাবেনি, সেরকমটা বোধহয় নয়। কারণ শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে আমাদের বাড়িতে কেন শিশুটিকে নিয়ে আসবে? ততদিনে পরিবেশ অনেক পাল্টে গেছে। বিশেষ করে সেজ ভাইয়ের হাবভাব আর মোটেই আগের মতো নেই। ক্রমশ আরো যেন গোঁড়া, শুচিবাইগ্রস্ত অতীব রক্ষণশীল মানুষে পরিণত হয়ে উঠেছিলেন।
ছোটপিসি তো নিয়ে এলো। ফুটফুটে বাচ্চা, ধবধবে ফর্সা, আর বৈশিষ্ট্য ছিল টিকালো নাক। বাচ্চাদের এরকম নাক, আগে কখনো দেখিনি। দেবশিশু যেন। কিন্তু বড়ই নির্জীব। প্রথম প্রাণ স্পন্দনের সময়টুকু থেকেই অপুষ্টি ঘিরে ধরেছিল। সে যে অবাঞ্ছিত, তা যেন প্রতি মুহূর্তেই ঘোষিত হচ্ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে তার আবির্ভাব ঘটিয়েই ছাড়ল। ছোড়দা নাম রেখেছিল বিলু বা বিলে। সে নামে সাড়া দেওয়ার সুযোগ সে কোনদিন পায়নি।
দুটো সম্পূর্ণ বিপরীত ধর্মী স্রোত বইছিল দুটো বাড়িতে। আশ্চর্যের ব্যাপার, হরি ঘোষ স্ট্রিটের বাড়ি ছিল আপাত দৃষ্টিতে খোলামেলা, উদার, আর আমাদের বাড়ি ছিল সাবেক পন্থী, রক্ষণশীলতায় মোড়া। কিন্তু সংকটের সময় দেখা গেল, সম্পূর্ণ উল্টো প্রতিক্রিয়া। একদিকে এক অশীতিপর, কঠোর নিয়মনিষ্ঠ, বিধবা আমার ঠাকুমা, আর পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই আমার মা, এবং সমানভাবে তিনিও নিয়মনিষ্ঠ। অন্য দিকে আধুনিক, মধ্য তিরিশের এক যুবক পিসেমশাইয়ের সেজ ভাই এবং বছর চল্লিশেক স্বয়ং পিসেমশাই। মা আর ঠাকুরমা, একবারের জন্যও প্রশ্ন তুললেন না, শিশুর বংশ পরিচয় নিয়ে। নিখাদ মানবিকতার পরিচয় দিয়ে তাঁরা পাশে থেকেছিলেন।
পিসেমশাইয়ের অবস্থা আর কী বলব। কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া তো দূরের কথা, আদৌ সিদ্ধান্ত কিছু নেবেন কিনা, সেটাই ঠিক করতে পারছেন না। দেখতে আসছেন ঠিকই, থেকেও যাচ্ছেন মাঝেমাঝে, কিন্তু বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবতেই পারছেন না। এত দুর্বল মানুষ আমি আর দেখিনি জীবনে। নাহলে, ক্লাস সেভেনে পড়া আমাকে জিজ্ঞেস করেন যে ল্যাক্টোজেনটা কিনেই আনি, কী বল তুমি! আর সারাক্ষণই সেই দৃঢ়তাব্যাঞ্জক খাঁজকাটা থুতনিতে হাত রেখে ঈশ্বর জানেন, কী চিন্তা করতেন! অবশেষে একদিন ঠিকই করে ফেললেন, এবার বাড়িতে নিয়েই যাবেন, কেউ ঠেকাতে পারবে না। রাতে সে কী আস্ফালন! সেদিন আমরা সবাই নিশ্চিন্ত। সকালে উঠে দেখি, পিসেমশাই এদিক ওদিক তাকিয়ে বাইরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
সেকি! ওকে নিয়ে যাবেন না? কে যেন প্রশ্ন করোছিল।
‘নাহ্ আজকের দিনটা থাক।’
গত রাতে যে জোর করে সাহস সঞ্চয় করেছিলেন, ভোর হতেই তা উধাও। এখনও মনে পড়ে ছোড়দার সেই ক্ষোভ, তিনতলার বারান্দা থেকে নীচে রাস্তায় অপসৃয়মান পিসেমশাইকে আর্তনাদ করে ছোড়দার বলে ওঠা, “এক স্কোয়ার ফুট জায়গাও নেই আপনাদের ঘরে?” পিসেমশাই একবার উপরে তাকিয়ে, মাথা নীচু করে চলে গিয়েছিলেন বাসস্ট্যান্ডের দিকে।
এসেছিল সে জুলাই মাসের শেষের দিকে। প্রথম ক'দিন পর থেকেই সে ভুগে চলেছিল। মা, ঠাকুমা, ছোটপিসি বা আমরা সবাই তটস্থ ছিলাম গোটা আগস্ট মাসটা। আমাদের পরিবারে আর ছোটপিসির শ্বশুর বাড়িতেও এক একটি মহীরুহ পতনের মাস ছিল এই আগস্ট। সেটা কেটে যাওয়ার পর আমরা বেশ নিশ্চিন্ত হয়ে পড়েছিলাম। যাক বিপদ কেটে গেছে। কিন্তু সে যে কতবড় ভুল ধারণা ছিল! সে বেছে নিয়েছিল শিক্ষক দিবস অর্থাৎ পাঁচই সেপ্টেম্বর। কী সারল্য নিয়েই না ভেবেছিলাম আগস্ট যখন পেরিয়ে গেছে,তখন আর ভয় নেই। মনে আছে স্পষ্ট সেই রাতের কথা। মাঝ রাত থেকেই খুব কাঁদছিল একেবারেই অন্য সুরে। ছোটপিসির কাছ থেকে নিয়ে মা বুকে চেপে ধরল। আমি মায়ের পাশে। কান্না কিছুতেই থামে না। ঘুম আসছে না। ভোর রাতে যখন সবে চোখের পাতাটা একটু বুজে আসছে, ঠিক সেই সময়েই একটা বুকফাটা আর্তনাদ করেই থেমে গেল। মা সমানে আদর করতে করতে ভোলানোর চেষ্টা করে যাচ্ছিল, যেমন করে থাকে জগতের সব মায়েরা। দু এক মুহূর্ত পরেই মা অনুভব করল যে অপরদিকে কোনও সাড়াশব্দ নেই। তখন আলতো করে ছোটপিসিকে ডাকতেই ধড়মড় করে ছোটপিসি উঠে বসতে, মা খুব স্বাভাবিক স্বরেই বলেছিল, “ বিলু আর নাই!” শুনে ছোটপিসি একটুও কাঁদল না, শূন্য দৃষ্টির মধ্যে ছিল তীব্র অভিমান, কার প্রতি - ঈশ্বর, সমাজ, গুরুদেব, না নিজের স্বামীর উপর? এখন বুঝতে পারি, সেই তালিকায় সেজ দেওর অন্তত ছিল না, থাকতে পারে না।
শিক্ষক দিবসে বিলুর চলে যাওয়াটা নেহাতই সমাপতন, কিন্তু সত্যিই সে সেদিন অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়েছিল। যেমন, বাইরের শিক্ষাটা সব নয়, অন্তরের শিক্ষাই আসল। যেমন, মৃত্যুর মাস বলে কিছু থাকতে পারে না, মৃত্যুর তার নিজস্ব সময়েই আসবে।
ছোটপিসি তো চিরন্তন আক্ষেপ নিয়ে কবেই চলে গেছে। আর পিসেমশাই? উনি সেদিন কী শিক্ষা নিয়েছিলেন জানি না। বৃদ্ধাশ্রমে জীবনের দীর্ঘকাল অতিবাহিত হয় ওনার।