একটা ইন্টোরেগেশন রুম-এ তুমি বসে আছ। ছাদ থেকে লম্বা তার দিয়ে ঝুলছে একটা নিরাভরণ লাইট বাল্ব। লাইটের ঠিক নিচে একটা ছোট কাঠের টেবিল। তুমি একটা হাতলওয়ালা চেয়ারে বসে আছ। সাধারণ কাঠের চেয়ার, গদিটদি নেই। টেবিলের উলটো দিকে একটা হাতলহীন চেয়ার। তোমার চেয়ারের হাতলে আর সামনের পায়ায় আটকানো আছে চামড়ার স্ট্র্যাপ আর লোহার বাক্লস। তোমার হাত-পা ওই স্ট্র্যাপ দিয়ে বাঁধা নেই, খোলা-ই আছে। তুমি বসে আছ চুপ করে। আর তোমার মাথার মধ্যে অনবরত ঘুরপাক খাচ্ছে পথের পাঁচালী সিনেমায় শোনা বাঁশির সুরটা।
তুমি এই ঘরে পৌঁছলে কী করে? স্বেচ্ছায় এসেছ? না কি তুমি বন্দী? কী ভাবছে তুমি?
গল্পটা গোড়া থেকে শুরু করা যাক্। কিন্তু কোনো গল্পেরই গোড়া কোথায় কেউ কি সঠিক জানে?
তুমি রাস্তা দিয়ে হাঁটছ। রাস্তা ফাঁকা। হাঁটতে হাঁটতে যাচ্ছ তুমি। পথের পাঁচালীর বাঁশির সুরটা তোমার মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। এই সুরটাই আজ সকালে স্কুলে যাবার আগে তোমার তেরো বছরের মেয়েটি বাঁশিতে বাজাচ্ছিল। সেই সকাল আর এই বর্তমান মুহূর্তটার মধ্যে কেটে গেছে একটা লম্বা দিন। কিন্তু সুরটা এখনো বেজে চলেছে। তোমার এখন বাড়িতে থাকার কথা, টিভির সামনে। স্ত্রীর নিয়ন্ত্রণে থাকার কথা রিমোট কন্ট্রোল। মেয়ের ঘুমোনোর কথা, তার নিজের ঘরে। তার বদলে তুমি এখন এইখানে, এই অন্ধকার সরু গলিটাতে। কটা বাজে? সন্ধ্যা সাতটা? নাকি রাত তিনটে?
তুমি ক্লান্ত। মাথার মধ্যে বাঁশির সুর শুনতে শুনতে, আস্তে আস্তে হাঁটতে হাঁটতে তুমি ভাবছ একটা পরিষ্কার বিছানার কথা, একটা উষ্ণ কাঁথার কথা। অবয়বহীন বিরাট শূন্যের মতো পিছনে পড়ে রয়েছে গোটা একটা ক্লান্তিকর দিন। তোমার কোনো অনুভূতি নেই।
ঘুম। ঘুমোনোর একটা প্রবল ইচ্ছা তোমার মাথার মধ্যে দ্রুত জোরালো হয়ে উঠছে।
রাস্তার একটা মোড়ে এসে, তুমি গলি ছেড়ে আরেকটা নতুন গলিতে ঢুকলে। একদম আগের গলিটারই মতো দেখতে। আরো খানিকটা হাঁটার পর একটা দরজার সামনে এসে দাঁড়ালে। একটা টিমটিমে বাল্বের আলো দরজায় এসে পড়েছে। সেই আলোয় দেখা যাচ্ছে একটা নম্বর অযত্নে লেখা আছে দরজার উপর। ৪২ নম্বর। তুমি কড়া নাড়লে। তারপর অপেক্ষা করতে থাকলে।
কোনো সাড়া নেই।
মাথা নিচু করে, দেওয়ালে একটা হাত রেখে, সেই হাতে ভর দিয়ে তুমি দাঁড়িয়ে রইলে। দেওয়ালের ভর ছাড়া দাঁড়িয়ে থাকতে অনেক বেশি শক্তি লাগে। তোমার মনে একটা অস্পষ্ট কল্পনা জাগল যেন তোমার দুই চোখ থেকে জল পড়ে যাচ্ছে। কিন্তু আসলে তোমার চোখদুটো কাঠের বাঁশির মতো শুকনো। তুমি কিছুই চিন্তা করতে পারছ না।
এক মিনিট পরে আবার কড়া নাড়লে।
এইবার অন্য দিক থেকে একটা ছিটকিনির শব্দ হল। দরজাটা খুলে গেল। একটা অভদ্র পুরুষ গলার স্বর পাওয়া গেল – ‘আপনার আইডি দেখান।’
তুমি পকেট থেকে একটা কার্ড বার করে দেখালে। সেই কার্ডটার পর্যবেক্ষণ হল এবং অবিলম্বে ফেরত দেওয়া হল। বিরাগজনক একটা স্বরে সেই পুরুষকন্ঠে শোনা গেল – ‘আসুন।’
ভিতরে অন্ধকার। সেই অন্ধকারে তুমি পা দিলে। পিছনে দরজাটা বন্ধ হ’য়ে গেল।
‘এইদিকে আসুন।’
তুমি অন্ধের মতো সেই কর্কশ পুরুষ কন্ঠস্বরের অনুগামী হলে। তোমার চোখদুটো আস্তে আস্তে সয়ে যেতে শুরু করেছে।
লোকটা একটা করিডর দিয়ে হাঁটছে। সামনে, করিডরের শেষে, একটা আধ-ভেজানো দরজা থেকে আলো আসছে। সেই আলোয় তুমি সামনের লোকটার সিলুয়েট-ছায়া দেখলে। বিশাল চেহারার পুরুষ, লম্বা-চওড়া, হয়তো খানিক মোটাও। আর গায়ে রসুনের গন্ধ।
লোকটা করিডরের শেষে এসে দরজাটা খুলে ভেতরে ঢুকল। তুমিও অনুগতভাবে পিছন পিছন ঘরে প্রবেশ করলে।
‘বসুন।’
লোকটা ওই একই দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল, দড়াম করে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে।
ছোট ঘর। মাঝখানে একটা টেবিল। ছাদ থেকে একটা আবরণহীন ইলেকট্রিক বাল্ব ঝুলছে টেবিলের উপর। টেবিলের দু’পাশে দুটো চেয়ার। সাধারণ নিরাভরণ কাঠের চেয়ার – বসা যাবে ঠিকই, কিন্তু বসে কোনো আরাম হবে না। অনেক সিনেমায় তুমি এই রকম জিজ্ঞাসাবাদের ঘর দেখেছ, যেখানে ইন্টারোগেশন হয়। একটা চেয়ারের দুই হাতলে আর সামনের দুই পায়ায় চামড়ার স্ট্র্যাপ লাগানো, লোহার বাক্লস দেওয়া। তুমি এগিয়ে গিয়ে সেই চেয়ারটাতেই বসলে। হাতলের স্ট্র্যাপদুটো স্পর্শ করলে, বাক্লস ছুঁয়ে দেখলে। তারপর তুমি হাতলের উপর হাত রেখে অপেক্ষারত হলে। মাথার মধ্যে পথের পাঁচালীর সেই বাঁশি বাজতে থাকল অবিরাম।
চেয়ারে বসে বসে তুমি ভাবছ যে যদি এখন তোমার আঠারো বছর বয়স হত, তাহলে মাথার ভিতরকার এই বিরামহীন সুরটাতে কথা বসানোর একটা চেষ্টা করতে। সহজ গানের কথা।
লেখার বাসনা ছিল কোনো একদিন। কিন্তু এখন বড় ক্লান্ত লাগছে। একটা বিস্তৃত শ্রান্তির ভাব যেন তোমার সারা জীবনটাকে সর্বক্ষণ ছেয়ে রেখেছে। এইখানে বসে, এই বিধাতা-পরিত্যক্ত চেয়ারে বসে, তুমি চাইছ সমস্ত চিন্তার যেন অবসান হয়।
আলোটা নিবে গেল।
তোমার দৃষ্টিতে জ্বলন্ত বাল্বটা যে ছাপ ফেলেছিল, সেই প্রতিচ্ছবি মিলিয়ে যেতে সময় লাগছে। এ এক অদ্ভুত দৃষ্টিবিভ্রম। এই ঘুটঘুটে অন্ধকার ঘরে অদৃশ্য আলোর বাল্বের একটা প্রেতচ্ছায়া। দেখতে দেখতে তোমার স্ত্রীর দাঁতের কথা মনে করিয়ে দেয়।
তোমার স্ত্রীর নাম অনসূয়া। আজ সকালেই সে সিঁড়ির নিচের কাছে দাঁড়িয়ে ছিল। মেয়ে বাইরে গাড়িতে বসে স্কুলে যাবার জন্য তোমার অপেক্ষায় ছিল। অনসূয়া রাগে চিৎকার করছিল। কী বলছিল সেই কথাগুলো তোমার সবটা মনে পড়ছে না। শুধু মনে আছে শেষ দোষারোপটা। স্ত্রী চিৎকার করে বলেছিল, ‘তুমি একটা জঘন্য নোংরা ধান্দাবাজ ছোটলোক!’
অনসূয়ার দাঁতগুলো মুক্তোর মতো ঝকমক করছিল। অতিরঞ্জিত মুক্তো। হিংস্র মুক্তো। সেই অকস্মাৎ অবোধ্য বিস্ফোরণে তোমার নিজেকে শক্তিহীন মনে হয়েছিল। তুমি অবাক হয়েছিলে এই ভেবে যে অনসূয়ার অভিযোগটা অনসূয়ার নিজের প্রতিই অনেক বেশি প্রযোজ্য। স্ত্রীর ব্যবহার তোমাকে বিভ্রান্ত করেছিল। এবং সেটাই জীবনে প্রথমবার নয়।
মহিলা যেন একটা দুরূহ ধাঁধা, যার সমাধান করতে তুমি ব্যর্থ হয়েছ। অনসূয়ার অনির্দেশ্য এবং প্রত্যাশা-গোলানো ব্যবহারে তুমি সন্ত্রস্ত। তোমার জীবনের আনাচে-কানাচে যেন ছায়া ফেলেছে অনসূয়ার কথা ও আবেগ। সেই ছায়া কোথাও কোথাও একটা অপরাধবোধের রূপ নিয়েছে, কোথাও কোথাও টুকরো টুকরো কলঙ্কের আকার। সব মিলেমিশে তোমার জীবনটা অস্পষ্ট মেঘাচ্ছন্ন।
সকালে অনসূয়ার সেই উত্তেজনার কারণ অনুমান করতে গিয়ে তুমি বিহ্বল হয়ে গেছ। আরো অবাক হয়েছ এই ভেবে যে তোমাকে বর্ণনা করতে গিয়ে অনসূয়া যে সমস্ত শব্দচয়ন করেছিল, ঠিক যেন সেই শব্দগুলোই তুমি নিজের মনের অচেতন চিন্তায় অনসূয়া সম্বন্ধে ব্যবহার কর। তোমার মনে হচ্ছে এরকম যেন আগেও হয়েছে। তুমি মনে মনে অনসূয়ার প্রতি যে সমস্ত অভিযোগ পোষণ করেছ, সেগুলোই অনসূয়ার মুখ থেকে গুলির মতো উড়ে এসেছে তোমার উদ্দেশে। এটাকেই কি মনস্তত্বে প্রোজেক্শান্ বলে?
এখন, এই নিঃশব্দ অন্ধকার ঘরে সকালের সেই পুরুষত্বহীন নিরাকার দুর্বলতা ফিরে এল। আর হৃৎপিণ্ডের উপর একটা ভার। একটা আঁট-বাঁধা ভাব। তারপর আস্তে আস্তে এই সমস্ত অনুভূতিই মাথার ভিতরকার অবিরাম বাঁশির সুরে মিশে, অন্ধকারে মিলিয়ে গেল।
পনেরো মিনিট পরে যখন আলোটা আবার জ্বলে উঠল, তখন তুমি ঘুমোচ্ছ।
একজন মহিলা ঘরে ঢুকল আর তোমার হাত-পা স্ট্র্যাপ দিয়ে বেঁধে দিল। তারপর সে বেরিয়ে গেল। তুমি ঘুমোতে থাকলে। তোমার মাথাটা সামনের দিকে সামান্য ঝুঁকে রয়েছে। তুমি এখনো জানো না যে তোমাকে বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
আরো এক মিনিট পর বিশাল চেহারার লোকটা ফিরে এল। ঘরে ঢুকে সশব্দে দরজা বন্ধ করল। লোকটা একতাড়া কাগজ-ভর্তি একটা ফাইল দড়াম করে টেবিলের উপর রাখল। সেই সংঘাতে টেবিল থেকে অজস্র ধুলোর কণা উড়ে গিয়ে নগ্ন বাল্বের আলোতে নিবদ্ধ রশ্মির শঙ্কুর মধ্যে নাচতে লাগল। তুমি চমকে ঘুম থেকে জেগে উঠলে।
তুমি বুঝতে পারলে যে তোমার হাত-পা চেয়ারের সাথে বাঁধা। বিশালকায় লোকটা টেবিলের অন্য দিকে তোমার মুখোমুখি বসে ফাইলের পাশে একটা পেন রাখল।
‘আপনি কে এখানে ঘুমোতে এসেছেন?’
’না, সরি। একটু চোখ জুড়িয়ে গেছিল।’
লোকটা ফাইলটা খুলল। কিছু পাতা উল্টিয়ে পাল্টিয়ে, এদিক-ওদিক করে, যে পাতাটা খুঁজছিল সেটা যেন পেয়ে গেল। একটা আবেগহীন কন্ঠস্বরে বলল, ‘শুরু করার আগে আপনাকে মনে করিয়ে দিতে চাই যে আপনি কিন্তু এখনো চলে যেতে পারেন।’
‘না, ঠিক আছে। এক গ্লাস জল পাওয়া যাবে?’
‘সেটা সম্ভব হবে না।’
‘ঠিক আছে।’
‘এটাই আমার শেষ সাবধান মনে করে নিন। আপনি এখনো এগোতে চান তো?’
‘হ্যাঁ।’ তোমার গলায় যৎসামান্য কাঁপুনি।
‘আপনার অ্যাপ্লিকেশনে আপনি যন্ত্রাদি ব্যবহারে সম্মতি দেননি। কেন?’
‘আমি শারীরিক যন্ত্রণাকে ভয় পাই।’
‘কে পায় না?’
লোকটা একটু মৃদু হেসে বলল, ‘এটা একটু শ্লেষাত্মক হয়ে যাচ্ছে না কি? যাকে বলে আয়রনিক? মানে আপনি নিজেই তো এখানে এসেছেন!’
‘আমার ধারণা ছিল যন্ত্রটন্ত্র বাধ্যতামূলক নয়।’
‘না বাধ্যতামূলক নয়।’
একটু থেমে লোকটা জিজ্ঞেস করল, ‘আপনার পরিবার আছে?’
‘তাতে কী আসে যায়?’
‘তা বটে।’ লোকটার গলায় এবার একটা বিরক্তির রেশ লাগল।
ফাইলে কিছু একটা লিখে, লোকটা চোখ তুলে তাকাল।
বলল, ‘আপনাদের আমি বুঝতে পারি না। আপনারা চান টা কী?’
‘কে-ই বা কী চায়?’
‘জানেন আমি কী চাই? মানে সত্যি সত্যি কী চাই?’
‘না।’
তোমার মধ্যে কৌতুহলের সুস্পষ্ট অভাব দেখে লোকটার আরো রাগ হয়ে গেল।
‘আমি চাই একটা সাধারণ চাকরি। আমি চাই সেটাই যেটা সবাই চায়। একটা সাধারণ জীবন যাপন। কিন্তু আপনারা? আপনারা তা চান না।’
‘আপনি আমাকে বুঝবেন এরকম কোনো আশা আমি রাখি না। আমার তাতে কিছু যায় ও আসে না।’
‘আপনি কি মনে করেন যে আপনাকে বুঝবার বুদ্ধি বা শিক্ষা আমার নেই?’
‘আমি সেরকম কোনো কথা বলিনি।’
লোকটা অস্ফুট স্বরে কিছু বিরক্তিসূচক আওয়াজ করল। সেই আওয়াজের মাঝে তুমি শুধু একবার একটা ব্যাঙ্গাত্মক ‘ভদ্দরলোক’ ছাড়া আর কোনো কথাই বুঝলে না।
বেশ কয়েক মিনিট নিঃশব্দে বিশাল চেহারার লোকটা কী সব লিখল।
তারপর লোকটা হঠাৎ উঠে, টেবিলের পাশ দিয়ে ঘুরে তোমার দিকে এগিয়ে এল। তোমার মুখে সজোরে একটা চড় কষালো।
তারপর লোকটা হাত মুঠো করে সোজা তোমার নাকে একটা ঘুষি মারল। চেয়ারটা কেঁপে উঠল। নাক থেকে একটা রক্তের ধারা বইছে।
লোকটা তার নিজের হাতের কাজ সযত্নে নিরীক্ষণ করে আবার মারল তোমায়। তারপর আবার মারল। তারপর আবার।
তুমি মাঝে মাঝে ব্যথায় কেঁদে উঠছ। কিন্তু কোনো অভিযোগ করছ না। বাঁশির সুরটা এখনো তোমার মাথায় বেজে চলেছে। লোকটা রক্তস্রোত আর তোমার ব্যথাবিকৃত মুখ দেখতে পাচ্ছে। কিন্তু লক্ষ্য করছে না যে ওই যন্ত্রণার নিচে তোমার চোখে একটা ঔজ্বল্য, অনন্ত ললিত সংগীত শুনে শুনে তোমার ঠোঁটের কোণে একটা ব্যঞ্জনাময় পুলক।
মারধরটা চলল। আস্তে আস্তে মাত্রায় বাড়ল। ক্রমশ আরো হিংস্র, আরো উগ্র হয়ে উঠল। শেষে একটা চরম আঘাতে চেয়ারটা উল্টে গেল, তুমি সমেত। তুমি জ্ঞান হারালে। লোকটা টেনে চেয়ারটা দাঁড় করিয়ে দিল। বিড়বিড় করে বলল, ‘হতভাগা।’ তারপর মেঝেতে থুতু ফেলল। টেবিল থেকে ফাইল আর পেন তুলে নিয়ে, লোকটা ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল।
আলো নিবে গেল আবার।
খানিক পর তোমার ঘুম ভাঙল। তুমি আহত। মাথায় ব্যথা করছে। মুখে রক্তের আস্বাদন, লবণের স্বাদ। শরীরে ব্যথা যেমন আছে, একটা অসাড়তাও ধীরে ধীরে চারপাশ থেকে গ্রাস করছে। একটা নেশা লাগানো অবশতা। মেয়ের বাঁশি বাজানোর কথা ভাবতে ভাবতে তুমি ঘুমিয়ে পড়লে।
তুমি এখন স্বপ্ন দেখছ।
স্বপ্ন দেখছ যে তুমি একটা অন্ধকার রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছ। মাথার মধ্যে বাজছে পথের পাঁচালী সিনেমার বাঁশির সুর। মনে পড়ছে সকালে স্কুলে যাবার আগে তোমার মেয়ে এই সুরটাই বাজাচ্ছিল। সে অনেকক্ষণ আগে। এখন আর সেই মুহূর্তের মধ্যে একটা অনন্ত দিন কেটে গেছে। এখন ক’টা বাজে তুমি জানো না। বড় ক্লান্ত লাগছে। ঘুম পাচ্ছে। তোমার কোনো অনুভূতি নেই। অন্ধকারে একটা মোড় ঘুরে, তুমি একটা দরজার সামনে এসে দাঁড়ালে। দরজার উপর লেখা আছে ৪২ নম্বর । তুমি কড়া নাড়লে। তারপর অপেক্ষা করতে শুরু করলে। আর মেয়ের বাঁশি বাজানো শুনতে লাগলে।