• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৯৭ | জানুয়ারি ২০২৫ | বিবিধ
    Share
  • সংগীত তীর্থে : অচিন্ত্য পাল


    উস্তাদ আলাদিয়া খাঁয়ের পরিবারের দুষ্প্রাপ্য ছবি যা তাঁর বর্তমান প্রজন্ম আগে দেখেননি

    কলকাতা থেকে পুণা শহরের ফ্লাইটে আমার পাশের সহযাত্রী হিন্দীতে প্রশ্ন করলেন “আপনি পুণায় কেন যাচ্ছেন?” উত্তরের অপেক্ষা না করেই বললেন, “কোই বিজনেস কে লিয়ে?”

    আজকাল ট্রেনে, বিশেষ করে প্লেনে সহযাত্রীরা খুব একটা গায়ে পড়ে আলাপ করেন না, গম্ভীর মুখে নিজের মত থাকেন, বেশিরভাগ লোক তো মোবাইল ফোনেই নিমজ্জিত থাকেন। ভদ্রলোকের প্রশ্নের উত্তরে কী আর বলব – শুধু “না” বললে বোধহয় একটু অভদ্রতা হয়, তাকে বলার মত তক্ষু্নি কিছু খুঁজে না পেয়ে বললাম, “এই একটু ঘুরতে যাচ্ছি।” তিনি আর কোন কথা না বলে চোখ বন্ধ করলেন। পরে জেনেছিলাম তাঁকে প্রায়ই ব্যবসা সংক্রান্ত কাজে পুণা যেতে হয়। যে কেউ যে পেশায় নিজে থাকেন তারই রঙ কিছুটা পড়ে তাঁর কথাবার্তা এবং জিজ্ঞাসায়।

    আপনাদের একটু খোলসা করে বলি কী জন্য আমি পুণা যাচ্ছিলাম। আমার গন্তব্য ছিল মহারাষ্ট্রের সীমান্তবর্তী উত্তর কর্ণাটকের কিছু জায়গা। উত্তর কর্ণাটকে পর্যটনের উপযোগী অনেক মন্দির, গুহা-মন্দির আছে। কিন্তু আমার লক্ষ্য ছিল অন্য – সাঙ্গীতিক তীর্থ করা। হয়ত ভাবছেন সে আবার কী? হ্যাঁ, ঠিকই বলছি – সাঙ্গীতিক তীর্থ। তীর্থ করতে তো অনেকেই যায় – উত্তরে গয়া, কাশী, মথুরা, বৃন্দাবন; দক্ষিণে তিরুপতি, সবরিমালা – এরকম আরও কত কি! আমি গিয়েছিলাম একটু অন্যধরণের যাত্রায় – সাঙ্গীতিক তীর্থযাত্রায়। আমি মনে করি সাহিত্য সংস্কৃতিতে ভারতবর্ষের যে অপার ঐতিহ্য আছে তার মধ্যে শাস্ত্রীয় বা মার্গ সংগীত এবং নৃত্য অন্যতম। বিশেষত শাস্ত্রীয় সংগীত – হিন্দুস্থানী এবং কর্ণাটকী – এই দুইয়ের মধ্যেই যে অন্তর্নিহিত আধ্যাত্মিক চেতনা ও ভাবধারা আছে তা যিনি গভীরে গিয়ে অনুভব করতে পেরেছেন তিনি জানেন এর মধ্যে দিয়েই ঈশ্বরলাভ অসম্ভব নয়। বিখ্যাত সেতারবাদক উস্তাদ বিলায়েৎ খান আর-এক দিকপাল গায়ক উস্তাদ আমীর খাঁ সাহেবের সম্বন্ধে বলেছিলেন “Amir Khan (singing) is only about ibadat, prayer--” আমীর খানের গানে শুধু ভক্তি, পূজা আর প্রার্থনা আছে।

    সাধারণত, ভক্তরা তীর্থযাত্রায় যান বিভিন্ন দেবতা দর্শনে, তাঁদের উদ্দেশে পুজো দিতে এবং শ্রদ্ধা জানাতে। এই ভক্তির প্রকৃত উৎস ঠিক কী তা আমার জানা নেই; অনুমান করা যেতে পারে পারিবারিক প্রতিপালন আর বহু শতাব্দী ধরে চলে আসা ধ্যান-ধারণা ও বিশ্বাসই এর কারণ। অন্যদিকে আমার কাছে সেইসব পণ্ডিত এবং ওস্তাদেরা সমানভাবে পূজনীয়, যাঁরা কয়েক শতাব্দী ধরে এই অমূল্য সাঙ্গীতিক এবং আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকার আমাদের জন্য রেখে গেছেন। এর উৎস কিন্তু সম্পূর্ণভাবে নিজস্ব অনুভূতি, অন্য কারও দ্বারা প্রভাবিত নয়। আর এই ভাব বা চালিকাশক্তির দ্বারা পরিচালিত হয়েই আমার সাঙ্গীতিক তীর্থযাত্রার পরিকল্পনা।

    এই পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল একটু অদ্ভুত ভাবে। করোনা কালের একটি ফলস্রুতি ছিল ‘অনলাইন’ অনুষ্ঠানের প্রচলন যা আগে কখনও দেখা যায়নি। সে অনুষ্ঠানের মধ্যে ক্লাসরুম শিক্ষা, কোম্পানির মিটিং বা নৃত্য-সংগীত সবকিছুই ছিল। ২০২২-এর গোড়ার দিকে BluePlanet.com নামের একটি সংস্থা এক অনন্যসাধারণ অনলাইন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে যেখানে ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তের শিল্পীরা হিন্দুস্থানী এবং কর্ণাটকী – এই দুই শৈলীতেই নৃত্য ও সংগীত পরিবেশন করেন, কিন্তু সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশে। এটি ছিল একটি অভিনব ব্যাপার।


    BluePlanet.com আয়োজিত প্রাকৃতিক পরিবেশে গায়নরত পণ্ডিত ভেঙ্কটেশ কুমার

    সেখানে এখনকার দিনের প্রথিতযশা কন্ঠসংগীতশিল্পী পণ্ডিত ভেঙ্কটেশ কুমার ওই পরিবেশেই একটি সাক্ষাৎকারে দাবি করছিলেন যে তাঁর বাসস্থান উত্তর কর্ণাটকের ধারওয়াড় এলাকার আকাশে-বাতাসেই যেন সংগীত ছড়িয়ে আছে; তাই সেখানে সংগীত এবং অন্য সংস্কৃতির প্রভাব এড়ানোই শক্ত। এর পরে দেখা যায় যে উনি এবং ওনার তবলা সহযোগী রঘুনাথ নকোড় ধারওয়াড়েই পণ্ডিত মল্লিকার্জুন মনসুরের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন আর মল্লিকার্জুন-কন্যার সাথে তাঁর স্মৃতিচারণ করছেন। পণ্ডিত মল্লিকার্জুন মনসুরের জন্ম ধারওয়াড়ের নিকটবর্তী মনসুর গ্রামে। এই নিতান্ত সাধাসিধে নিরভিমান গায়ককে আমার প্রথম দেখা এবং শোনার সৌভাগ্য হয়েছিল ১৯৮০ সাল নাগাদ মুম্বইয়ের অভিজাত NCPA (National Centre for Performing Arts) প্রেক্ষাগৃহে। এখনও মনে আছে পরিচয় ঘোষণার পর উনি সোজা মঞ্চে এসে বসলেন, কোন বাগাড়ম্বর ছাড়াই গান ধরলেন, শ্রোতাদের দিকে প্রায় তাকালেনই না এবং সংগীত পরিবেশনের শেষে উঠে চলে গেলেন। তখনই এই বিরল অভিজ্ঞতা আমার মনে দাগ কেটেছিল – এর সঙ্গে পণ্ডিত ভেঙ্কটেশ কুমার এবং তাঁর তবলা সহযোগীর এই ঋষিতুল্য শিল্পীর স্মৃ্তিচারণা শুনে আমি মনে মনে স্থির করে ফেলি যে ঐ এলাকায় আমাকে যেতেই হবে। এর সঙ্গে এও জানতাম যে এই দুই শিল্পী, অর্থাৎ প্রয়াত পণ্ডিত মল্লিকার্জুন মনসুর আর এখনকার পণ্ডিত ভেঙ্কটেশ কুমার ছাড়া উত্তর কর্ণাটকের এই এলাকার আশপাশে আরও কয়েক বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পীর জন্ম – তাঁদের মধ্যে অন্যতম পণ্ডিত ভীমসেন যোশী, বিদূষী গঙ্গুবাঈ হঙ্গল, পণ্ডিত সওয়াই গন্ধর্ব (পণ্ডিত ভীমসেন-এর গুরু) ইত্যাদি। পরে জেনেছিলাম পণ্ডিত ভীমসেন এর জন্মস্থান গডগ (Gadag)-এ পণ্ডিত ভেঙ্কটেশ কুমারের গুরু পণ্ডিত পুট্টুরাজা গবই-এর আশ্রমও অবস্থিত যেখানে পণ্ডিত কুমার এগারো বছর সংগীতশিক্ষা করেছিলেন। আমার মনে হয় সাঙ্গীতিক শ্রেষ্ঠত্বের পাশাপাশি এঁদের সকলের চারিত্রিক অনাড়ম্বরতা হল এই এলাকার স্থানমাহাত্ম্য, যেখানে ধার্মিক ভাব-চেতনারও একটি বিশেষ ভূমিকা আছে।

    এইসব মহান সংগীতজ্ঞ, যাঁদের সংগীতমাধুরী শুনে এতদিন মোহিত হয়েছি, তাঁরা আমার কাছে দেবতা-সম। এঁদের বাসস্থান এবং গড়ে ওঠার জায়গা যেখানে যেখানে সেগুলিই আমার ইপ্সিত তীর্থ। বলা বাহুল্য, তীর্থ বা অন্য যে কোন যাত্রা করতে গেলে বেশ কার্যকরী একটি পরিকল্পনার প্রয়োজন। এক্ষেত্রে তো পূর্বনির্দ্ধারিত কোন যাত্রাপথ নেই – যা করার নিজেকেই করতে হবে যাতে পূর্বজ শিল্পীদের শ্রদ্ধা জানানোর সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান গায়কদেরও একান্ত দর্শনলাভ হয়।

    কে আমার এই ব্যতিক্রমী যাত্রাকে সফল করতে পারেন ভাবতে ভাবতে মনে পড়ল মুম্বাইতে গবেষণার সময় এক সিনিয়র সতীর্থের (অজিত কেম্ভাবি) কথা যিনি ওই উত্তর কর্ণাটকের হুবলি-ধারওয়াড় এলাকার ছিলেন। সৌভাগ্যক্রমে, এতদিন পরেও তাঁকে যোগাযোগ করা সম্ভব হল; কিন্তু তিনি জানালেন যে তিনি নিজে নন, বরং তাঁর ভ্রাতৃজায়া এ ব্যাপারে আমাকে প্রকৃতভাবে সাহায্য করতে পারেন। তাঁর কাছে এও জানতে পারলাম যে একসময় কলকাতায় সুপরিচিত গায়িকা বিদুষী গঙ্গুবাঈ হঙ্গল তাঁদের পরিবারের খুবই কাছের ব্যক্তি ছিলেন। শুধু তাই নয়, যেহেতু পণ্ডিত ভীমসেন যোশী কাছাকাছি গডগ-এ থাকতেন এবং গঙ্গুবাঈয়ের সতীর্থ – সেই সুবাদে গঙ্গুবাঈয়ের বাড়িতেও তাঁর খুবই যাতায়াত ছিল। কিন্তু কেম্ভাবি পরিবারের সঙ্গে এই দুই প্রবাদপ্রতিম সংগীতজ্ঞের ঘনিষ্ঠ পরিচয়ের কথা তখন কিছুই জানতাম না। অজিত কেম্ভাবির কথা অনুযায়ী তাঁর ভ্রাতৃজায়া নলিনী কেম্ভাবি-কে যোগাযোগ করতেই তিনি অভাবনীয় ভাবে আমার পরিকল্পনায় প্রচণ্ডভাবে উৎসাহিত হয়ে পড়লেন। বললেন “উত্তরের পর্যটকরা কর্ণাটকে এসে সাধারণত হুবলি-ধারওয়াড়-এর পূর্বে হাম্পি ইত্যাদির মতো পুরাতাত্ত্বিক মন্দির অথবা দক্ষিণে সোজা ব্যাঙ্গালোর মাইসোর (মহীশূর)-এ চলে যান। আপনি যে আমাদের হুবলি-ধারওয়াড় এলাকায় এরকম একটি বিরল এবং বিশেষ উদ্দেশ্যে আসার কথা ভেবেছেন তাতেই আমি বিশেষ উৎসাহিত বোধ করছি।”


    পণ্ডিত ভীমসেন যোশী ও বিদূষী গঙ্গুবাই হঙ্গল

    এটাই ছিল যাত্রাপথ পরিকল্পনার বিশেষ মোড় – প্রবাদগত টার্নিং পয়েন্ট। এরপর থেকে কলকাতা থেকে হুবলি পৌঁছনো ছাড়া আর কোন প্ল্যান আমাকে করতে হয়নি, সবকিছুর দায়িত্বভার উনি নিজের কাঁধেই তুলে নিয়েছিলেন। একেই বোধহয় বলে ‘মেঘ না চাইতেই জল’। পরে বুঝতে পেরেছিলাম সম্পূর্ণ ঘটনাচক্রে ওনার সঙ্গে এই পরিচয় না ঘটলে আমার কল্পনার এক চতুর্থাংশও সত্যি হত কিনা সন্দেহ। যাত্রার বেশ কিছুদিন আগে কলকাতার সুবিখ্যাত হারমোনিয়াম শিল্পী পণ্ডিত জ্যোতি গোহ-র থেকে পাওয়া ফোন নম্বরে পণ্ডিত ভেঙ্কটেশ কুমারকে যোগাযোগ করেছিলাম; কিন্তু তাঁর জীবনযাত্রা এতটাই সহজ সরল যে তিনি আধুনিক সমাজ মাধ্যমের কিছুই ব্যবহার করেন না, এমনকি তাঁর কোন সেক্রেটারিও নাকি নেই। সুতরাং যখনই যাওয়া হোক, কীভাবে ওনার সঙ্গে দেখা হবে সে ব্যাপারে খুবই সন্দিহান ছিলাম। এছাড়া, যে কোন অতীতের শিল্পীদের বাসস্থান বা কীর্তির জায়গা যেখানেই যাই না কেন কে সেখানে প্রবেশাধিকার দেবে – এসব নিয়ে বেশ চিন্তা ছিল। কিন্তু শ্রীমতী নলিনী কেম্ভাবি এক ধাক্কায় আমার সব সমস্যার সমাধান করে দিলেন।


    শ্রীমতী নলিনী কেম্ভাবি, শ্রীমতী বৈষ্ণবী হঙ্গল এবং আমার বন্ধুবর রাজেন্দ্র বাপাট

    এই ভিন্নধর্মী তীর্থ যাত্রায় আমার সঙ্গী হিসাবে বেছে নিয়েছিলাম মুম্বাইবাসী আমার পঞ্চাশ বছর যাবৎ মারাঠী বন্ধু রাজেন্দ্র বাপাটকে। সে ছিল আমার এম এস সি ক্লাসের সহপাঠী – ছোটবেলা থেকে হাওড়াতে বড় হওয়ার জন্য বাংলা পড়া এবং লেখাতেও সড়গড়। ওর যে এই বিষয়ে উৎসাহ থাকবে তাতে আমি সুনিশ্চিত ছিলাম, এছাড়া ওর মাতৃভাষাও এই যাত্রায় বিশেষভাবে উপযোগী হবে সে ব্যাপারেও আমার কোন সন্দেহ ছিল না। ঠিক হল হুবলিগামী একই ট্রেনে ও আসবে মুম্বাই থেকে আর আমি উঠব পুণা থেকে। রাত বারোটার কিছু পরে ট্রেন ঢুকতে দেখা গেল ও আমার অপেক্ষায় কামরার দরজায় দাঁড়িয়ে আছে – আমাদের যৌথযাত্রার এই হল শুরু!

    সকালে দেখা গেল যথারীতি ট্রেন একটু লেট। উত্তর কর্ণাটকের কিছুটা রুক্ষ কিছুটা সবুজ পরিপার্শ্বের মধ্যে দিয়ে আমরা যাচ্ছি। শ্রীমতী কেম্ভাবি বলে দিয়েছিলেন মহারাষ্ট্র-কর্ণাটকের সীমানাবর্তী বেলগাঁও পৌঁছলে ওনাকে যোগাযোগ করতে। এই বেলগাঁওয়ে স্ব-শৈলীর গায়ক পণ্ডিত কুমার গন্ধর্বের জন্ম – তাই বলা যেতে পারে এটাই ছিল আমাদের তীর্থ যাত্রার প্রথম স্থান, যদিও আমরা নেমে কোথাও যেতে পারিনি। স্টেশন পরিসর থেকেই মনে মনে ওনাকে শ্রদ্ধা জানালাম। এর একঘন্টা পরে এল ধারওয়াড়, আমাদের গন্তব্য হুবলি থেকে চোদ্দ কিলোমিটার দূরে। হুবলি-ধারওয়াড়-কে তাই twin city বলা হয়।

    পরের দিন থেকে শুরু হল আমাদের অভিপ্রেত যাত্রা। নলিনী-জি ছাড়াও আমাদের সঙ্গী হলেন বৈষ্ণবী হঙ্গল - বিদূষী গঙ্গুবাঈ হঙ্গলের দৌহিত্রী। এঁদের থেকে ভাল গাইড আর কারা হতে পারতেন? হুবলি থেকে বেরিয়ে আমাদের প্রথম গন্তব্য ৫৫ কিমি পূর্বে গডগ - পণ্ডিত ভীমসেন যোশীর জন্মস্থান। আমার মন তো উত্তেজনায় ভরপূর, কিন্তু জানা গেল কোন এক অনিবার্য কারণে সেখানে প্রবেশ পাওয়া যাবে না। তবে যাওয়া হল পণ্ডিত ভেঙ্কটেশ কুমারের গুরু পুট্টুরাজা গবই-এর বীরেশ্বরা পুণ্যাশ্রমে যেখানে পণ্ডিত কুমার নিজে এগারো বছর কাটিয়েছিলেন। পণ্ডিত ভীমসেন-এর জন্মস্থান দেখতে না পাওয়ার হতাশা অনেকাংশে চলে গেল ঐ আশ্রমে গিয়ে। সামনে খুব সাধারণ ছোট একটি মন্দির যেখানে পুট্টুরাজা গবই-এর কয়েকটি ছবি, ভিতরে দুটি ঘর – একটিতে ওনার ব্যবহার্য জিনিস রাখা আর অন্যটিতে আরও ছবি-সহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র সাজানো। আমাদের কাছে সবচেয়ে চমকপ্রদ ছিল এই যে – ধুতি-শার্ট পরিহিত একজন যুবক শুধুমাত্র একটি হারমোনিয়াম সহযোগে কোন শ্রোতা ছাড়াই নিজের মনে গেয়ে চলেছে বিলাসখানী টোড়ীতে বহু-পরিচিত বন্দিশ ‘যা যারে যা রে কাগয়া’। আমরা সবাই মিলে প্রবেশ করাতেও তার কোন ভাব-বৈলক্ষণ দেখা গেল না। গান শেষে সে জানালো গুরুর সামনে এই সংগীত সাধনা বহু দিন ধরে চলে আসছে; আমি কল্পনা করলাম অনেক বছর আগে পণ্ডিত ভেঙ্কটেশ কুমারও হয়তো ঐ একই জায়গায় বসে গুরুর পুজো শেষ না হওয়া পর্যন্ত গেয়ে যেতেন।

    এরই পাশে আশ্রমের প্রধান মন্দিরচত্বর। বিভিন্ন বয়সের দরিদ্র ও সাধারণ ঘরের ছেলেরা এই আশ্রমের আবাসিক, তারা এখানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সংগীতের চর্চা-অনুশীলন এবং সহজ সরল ধর্মনিষ্ঠ জীবন যাপন করে। প্রকৃতপক্ষে, এখানকার সর্বাত্মক সরলতা আমাকে মুগ্ধ করছিল। এখনকার দিনের, বিশেষত শহুরে জীবনের বাণিজ্যিক, আড়ম্বরপূর্ণ আর প্রদর্শনমূলক জীবনে হাঁপিয়ে ওঠা হৃদয় এরকমই একটি নিরভিমান পরিবেশ যেন মনে মনে খুঁজে বেড়াচ্ছিল! কেউ বিগ্রহের সামনে নীরবে প্রার্থনারত, কেউ সাষ্টাঙ্গ প্রণিপাত করছে আর তারই মাঝে অল্পবয়সী ছেলেরা নিজেদের আনন্দেই একজোট হয়ে গানবাজনা করে চলেছে – সে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। এখনকার যুগে ভারতবর্ষের অন্য জায়গায় এই মডেল কতখানি কার্যকরী বা ফলপ্রসূ হবে জানি না, তবে আবারও মনে হল এখানকার স্থানমাহাত্ম্যে বোধহয় তা সম্ভব হতেও পারে। কে জানে এই ছেলেদের মধ্যে থেকেই হয়তো এই সংগীত-উর্বর জমিতে কোন ভবিষ্যৎ ভেঙ্কটেশ কুমারের জন্ম হবে।

    ওখান থেকে বেরিয়ে কোথায় যাওয়া হচ্ছে সেটা ঠিক বুঝতে পারিনি – এমনও হতে পারে আমার বন্ধু আর মহিলাদ্বয়ের মধ্যে মারাঠীতে কথোপকথনের জন্য। তা হয়তো একদিক থেকে ভালই হয়েছিল, কারণ যে বিস্ময় আমার জন্য অপেক্ষা করেছিল সেটা কম রোমাঞ্চকর নয়। গ্রামের সরু রাস্তা দিয়ে এসে প্রাচীর দেওয়া একটি বাড়ি, তার গেট খুলতেই দেখা গেল বেশ বড় পরিসর। গাড়ি থেকে নেমে জানলাম এটি পণ্ডিত ভীমসেন যোশীর গুরু পণ্ডিত সওয়াই গন্ধর্বের বাড়ি এবং জায়গার নাম কুণ্ডগোল - পণ্ডিত সওয়াই গন্ধর্ব হওয়ার আগে ঐ এলাকার রীতি মেনে ওনার নাম ছিল রামভাউ কুণ্ডগোলকর। (প্রসঙ্গত, অনেকেই হয়তো জানেন যে পণ্ডিত ভীমসেন মাত্র এগারো বছর বয়সে গুরুর খোঁজে গৃহত্যাগ করে কলকাতা-সহ উত্তর ভারতের বিভিন্ন স্থান ঘুরে, অনেক গুণীসঙ্গ করে শেষ পর্যন্ত ঘরের একদম কাছে সঠিক গুরুর সন্ধান পান।) বাইরের মন্দির দেখে বাড়ির ভিতরে ঢুকতেই একটা শিহরণ খেলে গেল – একজন জাতিস্মরের মত মনে হল এ বাড়ি যেন আমার অনেক দিনের চেনা। কাঠের তৈরি তিন তলার গঠন, মাঝের বড় চত্বরে উপরের দুই তলায় চারিদিক ঘিরে লোহার রেলিং আর একদম উপরে টালির ঢাকা, তার মধ্যে আবার স্বাভাবিক আলো আসার জন্য কাঁচ লাগানো। এই ধরণের চত্বর সমেত সুবৃহৎ অট্টালিকাকে মহারাষ্ট্র আর উত্তর কর্ণাটকের স্থানীয় ভাষায় বলে ‘ওয়াড়া’ (wada)। আসলে মনে পড়ে গেল বেশ কয়েক বছর আগে এই বাড়ি আমি দেখেছিলাম বিদূষী গঙ্গুবাঈ হঙ্গলের উপর ফিল্ম ডিভিসনের একটি তথ্যচিত্রে। সে এক অপূর্ব সুখানুভূতি! এই ‘তীর্থস্থান’ যে চোখের সামনে দেখতে পাব ভাবতেই পারিনি। প্রবেশদ্বার দিয়ে ঢুকতেই সামনে দেখা গেল পণ্ডিত সওয়াই গন্ধর্ব ও তাঁর গুরু এবং কিরানা ঘরানার প্রতিষ্ঠাতা উস্তাদ আবদুল করিম খাঁ-এর বড় তৈলচিত্র। চারদিক ঘুরে দেখতে দেখতে পণ্ডিত গন্ধর্বের দৌহিত্রের দেখা পেলাম একজন বৃদ্ধ পুরোহিতের বেশে। গোটা বাসগৃহে ধার্মিক পরিবেশ, বিগ্রহ ও মন্দির সুচারুভাবে সংরক্ষিত। আগেই বলেছি এই এলাকার অন্তর্নিহিত ধর্মীয় প্রভাব স্বাভাবিকভাবেই এখানকার শিল্পীদের নিরভিমান স্বভাবের করে তুলেছিল। শুধু তাই নয়, শুদ্ধ শাস্ত্রীয় গায়নের পাশাপাশি অনেকেই, বিশেষ করে পণ্ডিত ভীমসেন যোশী, পণ্ডিত মল্লিকার্জুন মনসুর ‘অভঙ’ বাণী, ভজন সহ বহু ধর্মীয় সংগীত গাইতেন।


    কুণ্ডগোলে পণ্ডিত সওয়াই গন্ধর্ব (বাঁ দিকের ছবি)-এর বাড়ি এবং ডান দিকের ছবিতে উস্তাদ আবদুল করিম খাঁ

    উপরের দিকে চারদিকের রেলিং ঘেরা খালি বারন্দাগুলি মনে করিয়ে দিল ওই তথ্যচিত্রের একটি অংশের কথা – যেন দেখতে পাচ্ছি শুধু নীচের গোটা চত্বরে নয়, উপরের বারন্দাগুলিও লোকে লোকারণ্য – কোথাও তিল ধারণের জায়গা নেই, তার মধ্যে কানে ভেসে আসছে গঙ্গুবাঈয়ের ঈষৎ পুরুষালী কন্ঠের পুকার যা গোটা মেহফিলে অনুরণিত হচ্ছে। চলচ্চিত্রে দেখানোর মত বর্তমান আর অতীতের দৃশ্যের সংমিশ্রণ – fade-in, fade-out. শুনলাম এই পুণ্যস্থানে কে না গেয়েছেন – কিরানা ঘরানার গায়ক-গায়িকা ছাড়াও আরও অনেকে – তার মধ্যে তখনকার যুবা উদীয়মান শিল্পী মেওয়াতি ঘরানার পণ্ডিত যশরাজ অন্যতম। শ্রীমতী বৈষ্ণবী হঙ্গল স্মৃতিচারণ করছিলেন যে তিনি তখন নিতান্ত ছোট কিন্তু তাঁর পিতামহী সহ অন্যান্য শিল্পীদের কথা তাঁর মনে আছে। বাড়ির পিছন দিকে নিয়ে গিয়ে জানালেন পণ্ডিত ভীমসেন যোশী আসতেন অন্যদের অনুষ্ঠানের পর গভীর রাতে এবং দেখালেন কোথায় তিনি তাঁর প্রিয় খাদ্যের পদ খেয়ে তবে গাইতে বসতেন। ভাবতেই রোমাঞ্চকর অনুভূতি হল যে শ্রীমতী বৈষ্ণবী হঙ্গল এইসব মহান শিল্পীদের সেই সময় এমন একটি পরিবেশে সামনাসামনি দেখেছেন – আমরাও এঁদের কয়েকজনকে দেখেছি, কিন্তু অনেক পরিণত বয়সে এবং শহরে শুধুমাত্র প্রেক্ষাগৃহের মঞ্চে।


    উপরে বাঁদিকে ‘স্বরগঙ্গা’ তথ্যচিত্রের অতীতের সঙ্গে পণ্ডিত সওয়াই গন্ধর্বের বাড়ির বর্তমান ছবির সমাপতন

    এখান থেকে বিদায় নেওয়ার আগে আমাদের সঙ্গী দুই মহিলার সাথে ঐ বাড়ির কর্ত্রীর পান-সুপারী জাতীয় কিছুর বিনিময় হল, যা ওখানকার সহজ-সরল পরম্পরাগত রীতি এবং যা এখন আর সচরাচর দেখা যায় না। যাতায়াতের পথে দেখলাম এই এলাকার রাস্তাঘাট বেশ মসৃণ, যদিও আশপাশের জায়গার প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য তেমন কিছু নেই। এবার আমাদের হুবলি ফিরে গঙ্গুবাঈয়ের বাসভবনে তাঁর সময়কার ছবির অমূল্য প্রদর্শনী দেখার পালা। সে এক অসাধারণ সংগ্রহ এবং সম্পদ। বিগত দিনের সংগীত ও অন্য জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ত্বের সঙ্গে বিরল সব ছবি – কে নেই সেখানে! তার মধ্যে দু-তিনটি ছবি আমার কাছে বিশেষভাবে আকর্ষণীয় লাগল। প্রথমতঃ, একটি যাতে লেখা আছে Calcutta Music Festival 1940 যেখানে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে আছেন উস্তাদ নিসার হুসেন খাঁ আর গঙ্গুবাঈয়ের নাম আছে Gangabai Gandhari of Bombay হিসাবে। এই প্রসঙ্গে আগে উল্লেখ করা ‘স্বরগঙ্গা’ তথ্যচিত্রে আরও একটি অনুষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দেখেছি যাতে লেখা ALL BENGAL MUSIC CONFERENCE, FIFTH SESSION 1938-39 যা অনুষ্ঠিত হচ্ছে কলকাতার ALFRED THEATRE-এ (যা পরে ১৯৫৩ সালে কলেজ স্ট্রীটের কাছে গ্রেস সিনেমা হল-এ পরিণত হয়) – সেখানেও অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে গঙ্গুবাঈ। তিনি কলকাতায় এসেছেন বহুবার এবং এখানকার সংগীতমহলে বিশেষ পরিচিত ছিলেন। দ্বিতীয় ছবিটি ১৯৫৬ সালে উস্তাদ বিলায়েৎ খাঁ সাহেবের অন্যতম শিষ্য পণ্ডিত অরভিন্দ্‌ পারেখের ‘গাণ্ডা-বন্ধন’ অনুষ্ঠানের। তৃতীয়টি বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ত্ব শ্রী গিরিশ কারনাড-এর সঙ্গে গঙ্গুবাঈয়ের ছবি।

    বিংশ শতাব্দীর শুরুতে, সমাজের অন্যান্য স্তরের সঙ্গে সংগীত জগতেও, বলা বাহুল্য, পুরুষ-প্রাধান্য ছিল। কিন্তু সেই সময়ও, তাঁর পিতার উৎসাহ-আনুকুল্যে কিশোরী গঙ্গুবাঈ প্রতি সপ্তাহে রেলগাড়িতে হুবলি থেকে কুণ্ডগোল যেতেন পণ্ডিত সওয়াই গন্ধর্বের কাছে তালিম নিতে। প্রায় তখন থেকে কিরানা ঘরানার অন্য দিকপাল পণ্ডিত ফিরোজ দস্তুর এবং পণ্ডিত ভীমসেন যোশী তাঁর সতীর্থ। ১৯৮৪-তে এইচ-এম-ভির প্রকাশিত Festival of India Presents - The Great Tradition - Masters of Music রেকর্ড সিরিজে প্রথমবার গঙ্গুবাঈয়ের ভরাট গলায় আশাবরীর পুকার ও মেজাজ শুনে পুলকিত হই।

    ঐ দিন বিকেলে ‘গুরুকুল’ দেখতে যাওয়া হল। শোনা গেল এখন কয়েক বছরের সরকারী নিয়ন্ত্রণে আসার আগে এই সংস্থা নাকি বেশ প্রাণবন্ত ছিল, যেমনটি ছিল পণ্ডিত বিজয় কিচলুর তত্ত্বাবধানে আর পণ্ডিত কুমার প্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মত সংগীতবিদদের অবদানে কলকাতার সংগীত রিসার্চ আকাডেমীর স্বর্ণযুগের দিন। পরের দিন, অর্থাৎ তৃতীয় দিন, হুবলি-ধারওয়াড় এলাকার বর্তমান শিল্পীদের সাথে পরিচয়ের পালা। আমার সঠিক ধারণা ছিল না পণ্ডিত ভেঙ্কটেশ কুমার ছাড়া আর কাদের সঙ্গে দেখা হওয়ার কথা, সবটাই নলিনী-জির ব্যবস্থাপনা – তাই সেসব নিয়ে ভাবিনি। পণ্ডিত কুমারের সাথে দেখা করার জন্য বিশেষ আগ্রহ ছিল – তাই সাক্ষাতের নির্দ্ধারিত সময় দুপুর বারোটা থেকে দু’টোতে পিছিয়ে যাওয়ার জন্য আশঙ্কা হয়েছিল সাক্ষাতের দৈর্ঘ্য কমে যাবে কিনা। হুবলি থেকে ধারওয়াড় মাত্র আঠারো কিলোমিটার, তাই পৌঁছতে বেশিক্ষণ লাগল না। নলিনী-জি ফোনে যোগাযোগ রাখছিলেন – প্রথম চমক, যখন দেখলাম অত বড় একজন শিল্পী আমাদের আমাদের জন্য গেটে অপেক্ষা করছেন। আগে তৈরি হওয়া ধারণার সঙ্গে একদম মিলে গেল। সাদর অভ্যর্থনার পরেই প্রথম প্রশ্ন করলেন গডগে ওনার গুরুর আশ্রমে আমরা গিয়েছিলাম কিনা। নিখুঁত পরিকল্পনা অনুযায়ী তা করে আসা হয়েছিল বলে আমরা সমস্বরে ‘হ্যাঁ’ করতেই উনি বললেন তাহলেই তো সব করা হয়ে গেছে, তিনি তো কিছুই নন – এইরকম গুরুভক্তি আর সারল্য! কথায় কথায় জানালেন গুরুর আশ্রমে কীভাবে এগারো বছর কাটিয়েছেন, কীভাবে এখনও বিভিন্ন ঘরানার শিল্পীদের গান শোনেন। নিজে বিধিবদ্ধ ভাবে কিরানা ঘরানার না হয়েও তাঁর গায়নে গোয়ালিয়র, কিরানা সহ অন্য ঘরানার মিশ্রণ আছে – তানকারীর সময় উস্তাদ বড়ে গুলাম, নজাকত-সালামত আলী খাঁর প্রভাবও। সর্বোপরি তাঁর ঈশ্বরদত্ত কন্ঠের সম্মোহনী আবেদন একদিকে সংগীত-বোদ্ধা আর অন্যদিকে সাধারণ শ্রোতাদের কাছে একইরকম। তাই তো তিনি নামী উস্তাদ-গুরুর উত্তরাধিকারী না হয়েও এই এলাকার তথা সারা ভারতবর্ষের বিখ্যাত গায়কদের একজন হতে পেরেছেন।


    সস্ত্রীক পণ্ডিত ভেঙ্কটেশ কুমার


    নিরহঙ্কারতার নিদর্শন – অত বড় একজন গুণী নিজে এসে আমাদের অভ্যর্থনা করছেন

    আমাদের এই যাত্রা পরিকল্পনার খুঁটিনাটির দিকে নলিনী-জির নজর আগেই দেখেছি – এখানেও দেখলাম পণ্ডিত কুমারের সকাশে এসে তাঁকে সম্বর্ধনা জানানোর ছোটখাটো ব্যবস্থাও সঙ্গে করে এনেছিলেন। কিন্তু এতটাই মহানুভবতা যে সেটা করালেন আমাকে আর আমার বন্ধুকে দিয়ে। আমি তো আমার পরম শ্রদ্ধার মানুষকে উত্তরীয় পরিয়ে আর চরণ ছুঁয়ে অভিভূত। বিদায় নেবার আগে নলিনী-জি আমাকে বললেন “আপনার আরও কিছু জানবার থাকলে ওনাকে বলুন।” একটা জিজ্ঞাসা আমার মনে আগে থেকেই ঘোরাফেরা করছিল, কিন্তু তা করা নিয়ে বেশ দ্বিধাগ্রস্ত ছিলাম – ভাবলাম এই সুযোগ তো আর আসবে না, তাই বলেই ফেলি। বললাম “পণ্ডিতজী, ভীমসেনজী তো উস্তাদ রশিদ খাঁ আর আপনাকে তাঁর যোগ্য উত্তরাধিকারী বলে ইঙ্গিত দিয়ে গিয়েছিলেন। দুর্ভাগ্যক্রমে রশিদ খাঁ সাহেব গত হয়েছেন; তাহলে ওনার অবর্তমানে আপনি এখন কাকে আপনার মত বিশুদ্ধতাবাদী (purist) এবং সমকক্ষ মনে করেন?” আমি ভেবেছিলাম এই ধরণের প্রশ্ন উনি হয়তো এড়িয়ে যাবেন। কিন্তু প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই উত্তর দিয়ে বললেন গোয়ালিয়র ঘরানার পণ্ডিত উলহাস কাশালকর এর কথা। উলহাসজী বহুদিন সংগীত রিসার্চ আকাডেমীতে ছিলেন – নিজের সংগীতানুষ্ঠান ছাড়াও বহু ছাত্র তৈরি করে গেছেন।

    এরপর যাওয়া হল একজন সেতার শিল্পীর কাছে যাঁর নাম ছোটে রহমত খাঁ। মনে পড়ল আগের দিনই গঙ্গুবাঈয়ের বাড়িতে সেতার হাতে এক রহমত খাঁয়ের ছবি দেখেছিলাম – জানলাম ইনি তাঁরই বংশধর। এঁর নাম বা বাজনার কথা আগে শুনিনি, এদিকের শিল্পী বলে হয়তো শোনবার কথাও নয়। কিন্তু তাঁর উষ্ণ অভ্যর্থনা ও মনোজ্ঞ ব্যক্তিত্ব এক লহমায় আমাদের আকৃষ্ট করে দিল। শুধু তাই নয়, আরও হৃদয়গ্রাহী ছিল ধারওয়াড়ের বিখ্যাত পেড়া সহ প্রভূত জলযোগের আয়জন। নলিনী-জি আমাদের যাত্রার বিশেষ উদ্দেশ্যের কথা জানাতে উনি এতই খুশি এবং উৎসাহিত হলেন যে আমাকে বললেন বছরের কোন একটি সময়ে মিরাজে উস্তাদ আবদুল করিম খাঁয়ের স্মৃতিতে একটি অনুষ্ঠান হয় এবং সেটিতে যেন আমি অবশ্যই যাই। বিদায়ের আগে উনি স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে নিজের রেওয়াজ-ঘর আর বাড়ির ছাতে একটি মঞ্চ সহ ছোটখাটো মেহফিলের জায়গাও দেখালেন।

    সব মিলিয়ে একটি আনন্দদায়ক অনুভূতি নিয়ে আমরা দিনের শেষ গন্তব্য যুবা গায়ক জয়তীর্থ্‌ মেভুণ্ডি-র বাড়িতে উপস্থিত হলাম। এর আগে এনাকে আমি কলকাতায় বার দুয়েক শুনেছি। এখানেও নলিনী-জির কল্যাণে উষ্ণ স্বাগত-সম্ভাষণ পেলাম। কথায় কথায় ওনার সঙ্গে উস্তাদ রশিদ খাঁয়ের ঘনিষ্ঠতার কথা স্মরণ করলেন আর বললেন অনেকবার খাঁ সাহেবকে স্বাস্থ্যের অবনতির ব্যাপারে সাবধানও করেছিলেন। মেভুণ্ডিজীর এখানেই আমাদের যাত্রার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ অভাবনীয় ভাবে পাওয়া গেল। পরের দিন আমাদের দু’জনের গন্তব্য ছিল কোলহাপুর – বাঙালিদের কাছে একসময় খুব জনপ্রিয় কোলাপুরী চপ্পলের কোলাপুর! আমাদের লক্ষ্য অবশ্য ছিল আত্রৌলি-জয়পুর ঘরানার প্রবর্তক ও প্রবাদপুরুষ উস্তাদ আলাদিয়া খাঁয়ের বাসস্থান খুঁজে বের করা। মেভুণ্ডিজী নিজেই হঠাৎ আমাদের পরবর্তী গন্তব্যের কথা জিজ্ঞাসা করাতে আমরা জানালাম সেখানে যাওয়ার কোনরকম খোঁজ বা সূত্র আমাদের কাছে নেই। সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ভাবে উনি কোলহাপুরের একজন তবলাবাদকের ফোন নম্বর দিলেন যিনি আমাদের ইপ্সিত জায়গায় যেতে গাইড করতে পারবেন। বিস্ময়কর সব যোগাযোগ!

    পরদিন সকালে হুবলি থেকে ২০০ কিমি দূরে কোলহাপুর যাওয়ার পথে আমরা ধারওয়াড়ে বিরতি নিলাম। মেভুণ্ডিজী বলে দিয়েছিলেন ধারওয়াড় অল ইন্ডিয়া রেডিও-র উলটো দিকে পণ্ডিত মল্লিকার্জুন মনসুরের বাড়ি। BluePlanet.com এর প্রোগ্রাম থেকে আমার ধারণা হয়েছিল যেন পণ্ডিত ভেঙ্কটেশ কুমার মনসুর নামক গ্রামে পণ্ডিত মল্লিকার্জুনের জন্মস্থানে গিয়েছিলেন, কিন্তু মেভুণ্ডিজী আমাদের সঠিক জায়গার সন্ধান দিলেন। একটু খোঁজ করে গিয়ে দেখা গেল এটাই সেই বাড়ি যা প্রোগ্রামে দেখছিলাম। আবার একটি অনির্বচনীয় অনুভূতি, মনে হল একটি বৃত্ত যেন সম্পূর্ণ হল – যে ‘তীর্থস্থানে’র ছবি দেখে এই যাত্রার অনুপ্রেরণা, ঠিক সেইখানেই দাঁড়িয়ে আছি। প্রথমে মনে হয়েছিল এত সকালে হয়তো কারও দেখা পাওয়া যাবে না, বাইরে থেকে দেখেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। কিন্তু ভাগ্য আবারও সুপ্রসন্ন – একজন সাদাসিধে মাঝবয়সী মহিলাকে দেখতে পাওয়া গেল। তিনি যে আমাদের সাদরে ভিতরে আসতে বললেন তাই নয়, আমাদের দু’জনকে অবাক করে দিয়ে নেপথ্যে পণ্ডিত মল্লিকার্জুনের গানও চালিয়ে দিলেন। মোটামুটি পরিষ্কার হিন্দীতে জানালেন অনেক বছর ধরে উনি এখানকার পরিচারিকা এবং তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে আছেন। গোটা বাড়ি এবং পরিসরকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রেখেছেন। বিদূষী গঙ্গুবাইয়ের বাসস্থানের মত এখানেও বিভিন্ন সময়ের আর বিভিন্ন ব্যক্তিত্ত্বের সঙ্গে প্রচুর ছবি সযত্নে প্রদর্শন করে রাখা আছে। সব ছবিতেই তাঁর নিরভিমান সরলতার চিহ্ন। একটি ছবি দেখে বুঝলাম তাঁর পুত্র রাজশেখর মনসুর দু’বছর আগে প্রয়াত হয়েছেন। রাজশেখর মনসুরকে চিরকাল মঞ্চে পিতাকে অনুসরণ এবং কন্ঠদানে সহযোগিতা করতে দেখা গেছে, নিজে কখনও লাইমলাইটে আসেননি। উনি পণ্ডিত মল্লিকার্জুনের আত্মজীবনীর ইংরেজি অনুবাদও (Rasa Yatra) করেছেন। অন্য সুত্রে খবর পেয়েছিলাম মল্লিকার্জুন-কন্যা নাকি এখন এখানে নেই, কিন্তু ভাগ্যক্রমে তাঁর সঙ্গেও দেখা হয়ে গেল। সুতরাং দু’বছর আগে ভিডিওতে পণ্ডিত ভেঙ্কটেশ কুমারকে যাঁর সাথে স্মৃতিচারণ করতে দেখা গিয়েছিল সেই মল্লিকার্জুন-কন্যার সঙ্গেই কিছু সময় অতিবাহিত করে আমরা ধন্য হলাম এবং তিনিও আমাদের উদ্দেশ্যের কথা শুনে তাঁর বিস্ময় ও আনন্দের কথা বললেন।


    ধারওয়াড় এ পণ্ডিত মল্লিকার্জুন মনসুরের বাড়ি এবং স্মৃতিফলক

    ধারওয়াড় থেকে কোলহাপুর যাওয়ার রাস্তা প্রথম দিকে উপভোগ্য হলেও পরে ট্রাফিক জ্যামে আটকাতে হল ফ্লাই-ওভার তৈরির জন্য, যা এখন অনেক হাইওয়েতেই হয়। তাই পৌঁছতে একটু দেরি হল, কিন্তু আমার বন্ধুর পরিচিত এক পরিবারের আতিথেয়তার কল্যাণে দ্বিপ্রাহরিক ভোজন, বিশ্রাম আর তার সঙ্গে কোলহাপুরের বিখ্যাত মহালক্ষ্মী মন্দির পর্যন্ত যাওয়া সবই খুব সুষ্ঠভাবে হল। একেও একটি অভাবনীয় সৌভাগ্যক্রম বলা যেতে পারে। এবার বাকি রইল আত্রৌলি-জয়পুর ঘরানার প্রবর্তক উস্তাদ আলাদিয়া খাঁয়ের বাসস্থান খুঁজে বের করা।

    উস্তাদ আলাদিয়া খাঁ উত্তর ভারত থেকে এসে ১৮৯৫ নাগাদ কোলহাপুরে বসবাস শুরু করেন। সেই সময় তিনি রাজা ছত্রপতি শাহু মহারাজের সভাগায়ক ছিলেন এবং ভাবতে ভাল লাগে যে খাঁ সাহেব প্রতিদিন সকালে কোলহাপুরের বিখ্যাত মহালক্ষ্মী মন্দিরে গান গেয়ে ভজনা করতেন। শাহু মহারাজের সময় (১৮৯৪-১৯২২) এই রাজ্য বিভিন্ন দিকে, বিশেষ করে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে, এত উন্নতি করেছিল যে কোলহাপুরের বিকল্প নাম হয়েছিল ‘কলা-পুর’। রাজা শাহু মহারাজ উস্তাদ আলাদিয়া খাঁয়ের উপর এতটাই সন্তুষ্ট ছিলেন যে মহালক্ষ্মী মন্দিরের অনতিদূরে তাঁকে স্থায়ী বসবাসের জন্য জমি প্রদান করেন – সেখানেই গড়ে ওঠে ‘আলাদিয়া মঞ্জিল’। এই বাড়িই ছিল আমাদের ‘মঞ্জিল’ – উর্দুতে যার অর্থ গন্তব্য, চূড়ান্ত লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য আবার বড় ইমারতও বটে! মহালক্ষ্মী মন্দির দর্শনের পর কোলহাপুরের ঐ তবলাবাদকের প্রায় নিখুঁত দিক-দর্শানোর জন্য আমরা অল্প সময়ের মধ্যে মাত্র একজনকে জিজ্ঞাসা করেই আমাদের গন্তব্যে পৌঁছে গেলাম। তিন তলা বাসগৃহের নাম সহজেই চোখে পড়ল – এই অচেনা শহরে আমাদের গন্তব্য খুঁজে বার করতে পেরে আমাদের মনে হল যেন একটা বিরাট সাফল্য অর্জন করেছি। বিরাট সাফল্য তো বটেই কারণ আমরা এমন একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে যেখানে একজন বিরাট মাপের সংগীতগুণী একসময় বিরাজ করতেন। এনার কাছে সংগীতশিক্ষা করেছেন কিংবদন্তি শিল্পী শ্রীমতী কেসরবাঈ কেরকর (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যাঁকে ‘সুরশ্রী’ উপাধিতে ভূষিত করেন), শ্রীমতী মগুবাঈ কুরদিকর (প্রখ্যাত গায়িকা কিশোরী আমোনকারের মা) প্রমুখ। আবার এঁর দুই সুপুত্র মন্‌জি খাঁ এবং ভুর্জি খাঁয়ের কাছে শিক্ষালাভ করেন পণ্ডিত মল্লিকার্জুন মনসুর। এইরকম একটি পরম্পরাগত ঐতিহ্য বহন করছে এই আলাদিয়া মঞ্জিল।

    <
    আলাদিয়া মঞ্জিল এর বর্তমান উত্তরাধিকারী উস্তাদ আলাদিয়া খাঁয়ের পঞ্চম প্রজন্মের সঙ্গে

    আমরা এদিক-ওদিক দেখছি দেখে উপর থেকে কৌতূহলী প্রশ্ন ভেসে এল “কাকে খুঁজছেন?” আলাদিয়া খাঁ সাহেবের নাম নিতেই বাড়ির ভিতরে যাওয়ার সাদর আমন্ত্রণ পাওয়া গেল। ঢুকে বোঝা গেল বর্তমান করুণ হতগৌরব অবস্থা। বাসগৃহের আয়তন তো একই আছে কিন্তু এত পুরুষ প্রজন্মের পর জনসংখ্যা বেড়েছে অনেক, তার উপরে সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভিতরের অবস্থা সহজেই অনুমেয়। তখন প্রায় তাঁদের রোজার সময়, সকলেই ব্যস্ত তবু আমাদের সসম্ভ্রমে আহ্বান করা হল বসতে। পক্ককেশ শুভ্রশ্মশ্রু যিনি বয়োজ্যেষ্ঠ, তিনি খুবই উৎসাহের সঙ্গে আমাদের – বিশেষ করে আমার বন্ধুর সাথে – মারাঠীতে বাক্যালাপ করছিলেন। শরীরী ভাষায়ও বোঝা গেল তিনি খুবই আনন্দিত যে কেউ ওনাদের খোঁজে এসেছেন। একসময় তো এই পরিবার যথেষ্ট মর্যাদা এবং সম্মান পেতেন, তবে এখন স্থানীয় বাসিন্দারা এঁদের ঐতিহ্য সম্বন্ধে কতটা জানেন সে বিষয়ে সন্দেহ আছে। আমি উস্তাদ আলাদিয়া খাঁয়ের বংশপরম্পরা মোটামুটি জানতাম, তাই আন্দাজ করলাম এই ভদ্রলোক পঞ্চম প্রজন্মের হবেন। কথায় কথায় কানে এল যে ইনি আজিজুদ্দিন খাঁয়ের নাতি। পরে জন্মপঞ্জী মিলিয়ে দেখেছিলাম এই আজিজুদ্দিন খাঁ হলেন উস্তাদ ভুর্জি খাঁয়ের পুত্র।

    বাড়ির একজন মাঝবয়সী মহিলা বেশ সপ্রতিভ ভাবে কথাবার্তা বলছিলেন আর ঐ বৃদ্ধ এবং আমাদের মধ্যে মধ্যস্থতা করছিলেন; দেখলাম তিনি মোবাইল ফোন ব্যবহার ইত্যাদিতেও বেশ অভ্যস্ত। এর মধ্যে একটি মজার ঘটনা ঘটল। ২০১৮ সালে গোয়ালিয়রে উস্তাদ আমজাদ আলী খাঁয়ের বাসভবন ‘সরোদ ঘর’-এ উস্তাদ আলাদিয়া খাঁ সহ এই পরিবারের একটি দুষ্প্রাপ্য ফটোগ্রাফ থেকে ছবি তুলে রেখেছিলাম। সেটি এঁদের দেখাতেই স্পষ্টতঃ একটি উত্তেজনার ঢেউ বয়ে গেল। সকলেই একযোগে বিস্ময়ের সঙ্গে জিজ্ঞাসা করলেন এই ছবি আমি কোথা থেকে পেয়েছি! ওই মহিলা আমার ছবি থেকে ওনার ফোনে ছবিও তুলে রাখলেন – বোঝা গেল এঁদের কেউই এটা আগে দেখেননি। এমনকি বাড়ির ক্ষুদেরাও উৎসাহভরে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বুঝিয়ে দিল যে তারা পূর্ব প্রজন্মের কয়েকজনকে চিনতে পেরেছে। আমার কাছে এর থেকে পরিতৃপ্তিকর আর কী হতে পারে! দেখা গেল বাইরে এসেও ঐ বৃদ্ধ আমার বন্ধুর সাথে কথা বলে চলেছেন। বাড়ির ছোট-বড় সকলের কাছ থেকে বিদায় ও একরাশ ভালো লাগা নিয়ে ফেরার পথ ধরলাম।

    কোলহাপুর থেকে মুম্বাই দশ ঘন্টার পথ। কিছুক্ষণ পরে প্রায় মধ্যরাত্রে ট্রেন থামল মিরাজ-এ। এই মিরাজের জন্য আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম। কিরানা ঘরানার প্রতিষ্ঠাতা উস্তাদ আবদুল করিম খাঁ উত্তর প্রদেশের কৈরানা থেকে দক্ষিণে এসে বরোদার মহারাজের সভাগায়ক হয়ে পরে আরও দক্ষিণে শেষ পর্যন্ত মিরাজে স্থিতু হন। এর স্বাভাবিক পরিণতি হিসাবে তাঁর গায়নশৈলীতে কর্ণাটকী প্রভাব কিছুটা দেখতে পাওয়া যায়। তাঁর গলা এতই সুরেলা ছিল যে বলা হয় তাঁর কন্ঠ-নিঃসৃত সুরের নিরিখে নাকি তানপুরা বাঁধা যেত। এই মিরাজে তিনি এক সময় বিরাজ করতেন এটা ভেবে এবং সেখানে অন্তত পা রাখতে পেরে একটি অনির্বচনীয় অনুভূতি হচ্ছিল। আমার এক সংগীতানুরাগী বন্ধু পরামর্শ দিয়েছিল যে “স্টেশনের বাইরে যেতে না পারলেও প্লাটফর্ম থেকে একটু মাটি তুলে আনতে পারিস।” কিন্তু দেখা গেল প্লাটফর্ম এত নিখুঁতভাবে বাঁধানো যে তা করার কোন সম্ভাবনাই ছিল না!

    এই ভিন্ন ধরণের তীর্থযাত্রায় আমাদের বিভিন্ন অজানা গন্তব্য বা ‘মঞ্জিল’ এর সন্ধান যে সত্যি সত্যিই পাব ভাবতে পারিনি। ভারতবর্ষের এইদিকের ভূখণ্ডের মধ্যে যে যে তীর্থ বাকি রয়ে গেল তাদের মধ্যে আছে – উস্তাদ আবদুল করিম খাঁয়ের স্মৃতি-বিজড়িত মিরাজ, সুরশ্রী কেসরবাঈ কেরকরের জন্মস্থান গোয়ার কেরী, ধারওয়াড়ের কাছাকাছি স্ব-শৈলীর গায়ক পণ্ডিত কুমার গন্ধর্বের স্থান বেলগাঁও ইত্যাদি। ভবিষ্যতে কখনও তা সম্ভব হবে আশা রাখি।

  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments