• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৯৭ | জানুয়ারি ২০২৫ | প্রবন্ধ
    Share
  • রোগব্যাধি ও শারীরিক বিবর্তন : ছন্দা চট্টোপাধ্যায় বিউট্রা

    আমরা সাধারণত বিবর্তনবাদ (Theory of Evolution) শুনলেই মনে করি শিম্পাঞ্জি থেকে মানুষের উদ্ভব বা ছোট্ট জলজ প্রাণী থেকে ক্রমশ বড়ো মাছ, সরীসৃপ, স্তন্যপায়ী প্রাণী ও সবশেষে মানুষের সৃষ্টি। এমনভাবে দেখলে মনে হয় যেন মানুষই সবার উপরে, বিবর্তনের শেষ ধাপে। কিন্তু সেটা ভুল ধারণা। ত্রিকোণ পাহাড়ের বদলে বিবর্তন একটা এলোমেলো ঝাঁকড়া ঝোপ, অন্যান্য অনেক প্রাণী প্রতিটি শাখাপ্রশাখায়, তারই মাঝে একটি ডগায় মানুষ। আমরা সবাই একসঙ্গে বিবর্তিত হচ্ছি, একে অন্যকে প্রভাবিত করে চলছি।

    এই বিবর্তন কিন্তু আমরা বিনামূল্যে পাইনি। চারপেয়ে জন্তু থেকে সোজা হয়ে দুপায়ে দাঁড়াতে আমাদের প্রচুর খেসারত দিতে হয়েছে। চারপেয়ে প্রাণীদের ধড়টা পাশাপাশি চ্যাপটা, দুপায়ে উঠে দাঁড়াতে গিয়ে ব্যালান্স রাখার জন্য সামনে -পেছনে চ্যাপটা হতে হল। তাই শিরদাঁড়া হল বাঁকা। হাত দুটো হল লম্বা ও চারদিকে ঘোরাবার জন্য কাঁধ হলো নমনীয়। মুখ হল চ্যাপটা, ছুঁচলো নয়। চোয়াল ছোট হবার জন্য দাঁতগুলো বেশি হয়ে গেল। কান ও মাথার সাইনাসগুলি আগে মাধ্যাকর্ষণের কারণে নর্দমা বা ড্রেন-এর কাজ করত, এখন সেগুলো এঁকেবেঁকে গেল।

    এইসব অদলবদল করতে গিয়ে দেখা দিল নানা ব্যাধি ও উপসর্গ। বাঁকা শিরদাঁড়া দিল পিঠে ও কোমরে ব্যথা, সোজা দাঁড়ানোর ভার দিল হাঁটুর ব্যথা, গোড়ালি ও পায়ের পাতায় ব্যথা। পায়ের কড়া, ভ্যারিকোস শিরা, এমনকি অর্শ পর্যন্ত সবই ওই পিঠ বেঁকিয়ে উঠে দাঁড়ানোর ফল। ছোট চোয়ালে গাদাগাদি দাঁতগুলো নানা রকম সমস্যার সৃষ্টি করে। আক্কেল দাঁত বেরোবার জায়গা পায় না, তাই তুলে ফেলতে হয়। সাইনাস ও কানে জল জমে ইনফেকশন, মাথাব্যথা, নাক-ভর্তি সর্দি, কান কনকন। বিবর্তনের ঝামেলার কি শেষ আছে?

    শারীরিক বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আধুনিক জীবনযাত্রাও অনেক সময় শরীরে সয় না। আমরা বিবর্তিত হয়েছি ছোটাছুটি করে, পশুপাখি ধরে, আধপেটা কাঁচা মাংস খেয়ে, গুহা- জঙ্গলে থাকার জন্য। হাই-রাইজ ফ্ল্যাটে থাকা, গাড়ি করে যাওয়াআসা করা, বা রোজ ভরপেট ভাত-মাংস খাওয়ার জন্য নয়। আরও কয়েক হাজার বছরে হয়তো আমাদের শরীর এই আধুনিক জীবনের সঙ্গে বিবর্তনের দরুন খাপ খেয়ে যাবে কিন্তু তার আগে আমাদের নানা রোগে ভুগতে হচ্ছে। আমাদের খাবারে চিনি ও ফ্যাট না স্নেহ-এর পরিমাণ বেশি হয়ে যাওয়ায় আমরা সবাই মেদ বৃদ্ধির রোগে ভুগছি—ডায়াবিটিস, হার্টের অসুখ ইত্যাদি বেড়েই চলেছে।

    আজকালকার ছেলেমেয়েদের দাঁতের ক্ষয়রোগ বা caries খুবই ব্যাপক। এটা খাবারে মিষ্টির পরিমাণ বাড়ার ফল। আদিম কালে পাকা ফল ছাড়া কোনরকম মিষ্টি ছিল না। আমাদের ছোটবেলাতেও কদাচিৎ চকোলেট লজেন্সের স্বাদ পেতাম, তাই কখনো দাঁতের অসুখ হয়নি। সেটাও প্রথম টের পেলাম এদেশে এসে।

    ঠিক তেমনি, চোখের রোগ মায়োপিয়া (myopia) বা দূরের জিনিশ না দেখতে পাওয়া একটি আধুনিক কালের রোগ। আদ্যিকালে পশুপাখি শিকারের জন্য দূরের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ রাখার দরকার ছিল। নইলে না খেয়ে মরতে হত। তখন এত লেখাপড়ার বালাই ছিল না। এখন বই পড়া, লেখালেখি, হাতের কাজ, সেলাই-ফোঁড়াই, কম্পিউটার ইত্যাদির জন্য নিকট দৃষ্টির বেশি দরকার, তাই আমাদের চোখও বিবর্তিত হচ্ছে, আর আমাদের ছোট বয়েস থেকেই পরতে হচ্ছে চশমা বা কনট্যাক্ট লেন্স।

    অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে আদিবাসী মেয়েদের তুলনায় আধুনিক মেয়েদের রক্তে ফিমেল হরমোন (estrogen) ইস্ট্রোজেন-এর পরিমাণ বেশি। এটা হয়তো জেনেটিক্স ও অন্যান্য পারিপার্শ্বিকতার ফল, কিন্তু এর প্রভাবে আধুনিক মেয়েদের স্তন, জরায়ু ও ডিম্বকোষের ক্যান্সার রোগ বেড়েছে। এ-ও আমাদের শরীরে আধুনিকতার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর প্রচেষ্টার ফল।

    চামড়ার ক্যান্সার আরেকটি উদাহরণ। আফ্রিকায় প্রথম সৃষ্ট আদিম মানুষের রং কালো ছিল। কালো রঞ্জক (pigment) মেলানিন নির্লোম চামড়াকে কড়া রোদ ও ক্যান্সার থেকে রক্ষা করে। সেই কালো লোকেরাই পরে আফ্রিকা ছেড়ে উত্তর ইয়োরোপে বাসা বাঁধল। সেখানে রোদ অনেক হালকা। কালো রঙের দরকার নেই, উপরন্তু বেশি মেলানিন রোদ থেকে দরকারি ভিটামিন-ডি আহরণে বাধা সৃষ্টি করে। তাই বিবর্তন ও প্রাকৃতিক নির্বাচনের (natural selection) ফলে কালো রং মিলিয়ে গিয়ে সাদা হল। যথেষ্ট ভিটামিনও পাওয়া যায় আর চামড়ার ক্যান্সারও হয় না। এ পর্যন্ত সব ভালো, কিন্তু সেই সাদা লোকেরাই যখন রাজত্ব বাড়াতে আবার গ্রীষ্মপ্রধান দেশে এসে পৌঁছল, কড়া রোদ সাদা চামড়ায় নানা রকম ক্যান্সারের সৃষ্টি শুরু করল। তাই এখন অস্ট্রেলিয়াতে সাদা চামড়ার লোকেদের মধ্যে মেলানোমা নামক এক চামড়ার ক্যান্সারের হার সবথেকে বেশি। আরও কয়েক হাজার বছরে আবার এদের চামড়া কালো হয়ে যাবে কিন্তু আপাতত বেচারা বিবর্তন মানুষের ঘন ঘন পারিপার্শ্বিক বদলের সঙ্গে তাল রাখতে হিমসিম খেয়ে যাচ্ছে।

    ধাত্রীবিদ্যার (obstetrics) ক্ষেত্রেও আমরা দেখি বহু বিবর্তনজনিত বিপত্তি। ‘গ্রেট এপ' থেকে মানুষের বিবর্তনের সঙ্গে আনুপাতিকভাবে মগজের সাইজ বেড়েছে, সেই সঙ্গে ভ্রূণের মাথার সাইজও। কিন্তু সেই অনুপাতে কিন্তু মায়ের পেলভিক গহ্বরের সাইজটা বাড়েনি। ফলে মানুষের প্রসব হতে অনেক সময় লাগে এবং পশুদের তুলনায় অনেক বেশি কষ্ট ও অন্যান্য জটিলতার সৃষ্টি হয়। এইজন্য বিচক্ষণ ডাক্তার বা ধাত্রীর সাহায্য লাগে। অনেক সময় সিজেরিয়ান সেকশনের দরকার হয়। পশুদের এসবের বালাই নেই। প্রসবের পরেও মানবশিশুর মগজ বেশ কয়েক মাস বাড়তে থাকে— যেটা মায়ের পেটে সম্ভব ছিল না। এর পরেও মানবশিশু অনেক বছর পরিবার ও বৃহত্তর সমাজের ওপর নির্ভরশীল থাকে। এটা আমাদের বড়ো ও বুদ্ধিমান মস্তিষ্কের মূল্য। অন্য কোনও পশুসমাজে এরকম নির্ভরতা দেখা যায় না। বাচ্চা পরিপালনের জন্য বুড়ো ঠাকুরমা, দিদিমাদের সাহায্য অপরিহার্য। এইসব বয়স্ক মহিলারা মেনোপজের পরেও অনেক বছর বেঁচে থাকেন। একমাত্র মানুষ (এবং কিছু তিমি মাছ) ছাড়া আর কোনও প্রাণীদের মধ্যে মেনোপজ দেখা যায় না। প্রাকৃতিক নিয়মে তো প্রজনন ক্ষমতা শেষ হওয়ার পরেও বেঁচে থাকার কোন অর্থই হয় না।

    মানুষের রোগ-প্রতিরোধক ব্যবস্থা (immune system) একটা দুদিকে ধারালো করাতের মতো। আসতেও কাটে, যেতেও কাটে। এর সাহায্যে আমরা বাইরের বিজাতীয় জীবাণু ও পরজীবীদের আক্রমণ ঠেকিয়ে রাখি। কিন্তু হাতের কাছে কোন শত্রু না পেলে আমাদের ইম্যুন সিস্টেম আমাদের নিজেদের শরীরের উপরই আক্রমণ চালায়। একে আমরা বলি auto-immune রোগ। আধুনিক কালে অ্যালার্জি ও এই অটো-ইম্যুন রোগের হার খুব বেড়েছে, বিশেষ করে ধনী দেশগুলিতে। অনেকে মনে করেন এটা অতিরিক্ত পরিষ্কার বাতাবরণের জন্য। প্রাচীন সাহিত্যে এসব রোগের উল্লেখ পাওয়া যায় না। Hygiene Hypothesis-এর কথা আমরা সবাই জানি। অনেকে একে 'Worm Theory’-ও বলে থাকেন। খুব সহজভাবে বলতে গেলে আমাদের আধুনিক জীবনে পরিচ্ছন্নতার জন্য ও বেশি বেশি অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে আমাদের শরীরে কৃমি ও অন্যান্য পরজীবী (parasite) আর জীবাণুদের সংখ্যা একেবারে কমে গেছে। এরা প্রাচীন কাল থেকেই আমাদের শরীরে ছিল ও আমরা সবাই এই পরজীবীদের সঙ্গেই বিবর্তিত হয়েছি। আমাদের ইম্যুন সিস্টেম তৈরি হয়েছে এদের মোকাবিলা করার জন্যই। হঠাৎ এদের সরিয়ে দেওয়ায় আমাদের অলস ইম্যুন সিস্টেম আমাদের শরীরটাকেই শত্রু মনে করছে। আধুনিক শহুরে বাচ্চাদের কৃমির অসুখ হয় না। তারা ধুলোমাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে খেলে না, গরুছাগল ঘাঁটাঘাঁটি করে না। ফলে তাদের অ্যালার্জি হয় ফুলের পরাগ, খাবার বা ধুলোয়, যা আগেকার দিনে গ্রামীণ ছেলেমেয়েদের কখনোই হত না। IgE নামক একটি অ্যান্টিবডি আমাদের শরীরে তৈরিই হয়েছিল কৃমিনাশের জন্য। শরীরে এই অ্যান্টিবডি থাকলে, বা পেটে কৃমি, কৃমির ডিম বা দেহপদার্থ থাকলে অনেক সিরিয়াস অটো-ইম্যুন রোগের —যেমন আলসারেটিভ কোলাইটিস— উপশম হয়। ইদানীং এই রোগের প্রকোপ বেড়ে চলেছে, বিশেষ করে আমাদের অনেকের মতো ভারতীয় ছেলেমেয়েদের মধ্যে, যারা অপেক্ষাকৃত পরিচ্ছন্ন ইংল্যান্ড বা আমেরিকায় বসবাস করছি। গ্রামের ছেলেমেয়েদের মধ্যে এইরকম রোগ অনেক কম। তাই বলি, বাচ্চাদের একটু নোংরা থাকতে দিন। ধুলোবালি, পশুপাখি ঘেঁটে বড়ো হওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী।

    এবার আসি আসল অপরাধীর প্রসঙ্গে। আমাদের শরীরে লক্ষ কোটি জীবাণুর বাস। চামড়ার খাঁজে, মুখে, দাঁতে, পেটের ভেতরে, যৌনাঙ্গে, সর্বত্র, মাথার চুলের উকুন থেকে পায়ের নখের ফাঙ্গাস পর্যন্ত আমাদের শরীর ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাঙ্গাস ও অন্যান্য কীটাণুতে ভর্তি। এরা বেশিরভাগই নিরীহ প্রাণী, শরীরের কোনও ক্ষতি করে না। কিন্তু ওষুধ দিয়ে মারতে গেলে অনেক সময় বিপরীত প্রভাবের সৃষ্টি হয়। কড়া অ্যান্টিবায়োটিক খেলে পেটের নিরীহ জীবাণুরা মারা যায় আর তার জায়গায় রাতারাতি বেড়ে ওঠে কয়েকটি ক্ষতিকারক জীবাণু। শুরু হয় পেটের গোলমাল, উদরাময় ইত্যাদি।

    এছাড়াও আছে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধক (resistant) জীবাণুর দল। এরা সম্প্রতি খুব বেড়ে উঠেছে। কোনও অ্যান্টিবায়োটিককে এরা তোয়াক্কা করে না। বার বার, বেশি পরিমাণে, বিনা প্রয়োজনে (যেমন ভাইরাস রোগে) বা অসম্পূর্ণ ডোজ অ্যান্টিবায়োটিক খেলে ব্যাকটেরিয়াদের প্রতিরোধক্ষমতা বেড়ে যায়। প্রথম প্রথম বেশিরভাগ জীবাণু মারা যায় কিন্তু পরবর্তী প্রজন্মে (যা একদিনেই সম্পন্ন হতে পারে) মিউটেশনের সাহায্যে ওষুধ সহ্য করতে পেরে যায়। এই জীবাণুরা দুদিনের মধ্যেই প্রবলভাবে বেড়ে সারা শরীর দখল করে বসে আর আমাদের হাতে এদের মারবার কোনো ওষুধ থাকে না। এইভাবে প্রতি বছর হাজার হাজার রোগী মারা যান। এটা জীবাণুদের বিবর্তনের এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ। এভাবেই যক্ষ্মা রোগের জীবাণু সব ওষুধের প্রতিরোধক হয়ে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে। সিফিলিসের জীবাণু পেনিসিলিনের প্রতিরোধক হয়ে গেছে। এমনকি, নিরীহ চামড়ার জীবাণু staphylococcus মেথিসিলিন নামক ওষুধকে নস্যাৎ করে হাসপাতালে, নার্সিং হোমে হাজার হাজার রোগীর মৃত্যুর কারণ হয়ে উঠেছে। আমরাও নতুন ওষুধ আবিষ্কারের চেষ্টা করে যাচ্ছি কিন্তু জীবাণুদের প্রজনন ও বিবর্তন ক্ষমতা আমাদের থেকে হাজারগুণ বেশি হওয়ার দরুন আমরা ক্রমশই হেরে যাচ্ছি। তাই খুব দরকার না হলে অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না আর খেতে হলে সব সময় পুরো ডোজ শেষ করবেন। সাধারণ হাঁচি, কাশি, ফ্লু ইত্যাদি ভাইরাস রোগ, এর জন্য কখনো অ্যান্টিবায়োটিক নেবেন না।

    প্রতিরোধের ক্ষেত্রে আমরা হয়তো হেরে যাচ্ছি কিন্তু আরও একটা জায়গায় আমরা বিবর্তনকে কাজে লাগাতে পারি। বিবর্তনীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে সব জীবাণুরই সংক্রমণ উগ্রতা (virulence) বাড়তে পারে কিন্তু বেশি উগ্র জীবাণু—যেমন কলেরা— তাড়াতাড়ি রোগীকে মেরে ফেলে আর বেশি ছড়াতে পারে না (রোগীর মৃত্যুর সঙ্গে জীবাণুরাও মারা যায়।) জীবাণুদের লক্ষ্য জীবন্ত অবস্থায় যত বেশি সম্ভব লোকের মধ্যে ছড়ানো। তার জন্য চাই একটু সুস্থ রোগী যারা চলাফেরা করে জীবাণু ছড়াতে পারে। যেমন হাঁচি-কাশি, যৌন রোগ ইত্যদি খুব সংক্রমক কিন্তু রোগীকে তাড়াতাড়ি মেরে ফেলে না। এটাও দেখা গেছে যে ছড়ানোটা আটকাতে পারলে জীবাণুর উগ্রতাও কমে যায়। বেশি কিছুর দরকার নেই, সাধারণ পরিষ্কার জলের ব্যবহার কলেরার জীবাণুর virulence কমিয়ে দেয়, El Tor নামক কম উগ্র কলেরার জীবাণুটি এইভাবেই সম্প্রতি ছড়িয়েছে, এই জীবাণুটি vibrio টাইপ থেকে অনেক নিরীহ। মহামারীর সংক্রমণ হয়েছে ঠিকই কিন্তু অনেক কম লোক মারা গেছে। তেমনি, হাসপাতালে নিয়মিত হাত ধোয়া অনেক উগ্র, প্রতিরোধকারী জীবাণুদের কমিয়ে আনে। এইভাবে একেবারে নির্মূল না করেও জীবাণুদের সঙ্গে মোটামুটি সহাবস্থান করা যায়। এবং কয়েক প্রজন্মের পর জীবাণু অনেক নিরীহ হয়ে যায়। (অবশ্য এ নিয়ম সব ক্ষেত্রে খাটে না—যেমন স্মলপক্স বা যক্ষ্মা।)

    কথায় আছে, যা একেবারে মেরে ফেলে না তা আমাদের আরও শক্তিশালী করে তোলে। ভ্যাকসিন ও অ্যান্টিবায়োটিকের সঙ্গে এইরকম বিবর্তনীয় পদ্ধতি যোগ করে আমরা এই জীবাণুগুলিকে বাগে আনতে পারি। আমরা তো আর চার-পেয়ে হয়ে গুহা জঙ্গলে পোকামাকড়ের মধ্যে ফিরে যেতে পারি না, কিন্তু এইসব অসুখবিসুখের মূল কারণগুলি জানা থাকলে অন্য অনেক নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার করা যায়।


    তথ্যসূত্র :

    1. Medicine Needs Evolution. Nesse RW et al. Editorial. Science. vol 311, 2006.

    2. Origin of Major Human Infectious Diseases. Wolfe ND et al. Nature. Vol 447. 2007.

    3. Diseases and Human Evolution. Ethne Barnes. Univ of N.Mex Press. 2005.



    অলংকরণ (Artwork) : অনন্যা দাশ
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments