|| বৃক্ষজন্ম ||
একাকিত্ব ও বিষণ্ণতার কথা বলবে না বলে সে আলতো হাতে ঝরিয়ে দেয় হলুদ হয়ে আসা পাতাদের। তার কেঠো ডালে সবুজের অঙ্কুর আর আসবে না জেনেও হাত বাড়ায় আলোর দিকে, শুষে নিতে চায় উত্তাপ। সেই ভঙ্গিমা দেখে এক যাযাবর পাগলের মনে পড়ে যায় তার একদা প্রেমিকার নৃত্যরত মুহূর্তগুলো…
|| নদীজন্ম ||
যাত্রা শুরু হয়েছিল শুধুই পথ খোঁজার তাড়নায়। শেষ যে বিলোপে তা কে ভেবেছে তখন। অথচ গ্লানি ও ক্লান্তির পাঁক বয়ে বয়ে মোহনায় পৌঁছনো স্থবির নদী আজ আর কিছুই খোঁজে না, কিছুই ভাবে না। – লবণের স্বাদে সে বহুকাল অভ্যস্ত। যে ক্ষণিকের নৌকা বাইল এ নদীতে তার চোখেও কখনো কখনো অকারণে নেমে আসবে সেই স্বাদ এবার থেকে…
|| বৃষ্টিজন্ম ||
কেউ ঝরে পড়ে মুক্তি তাকে টেনেছে বলে। কেউ ঝরে পড়ে তাকে ঠেলে ফেলে দেওয়ার জন্য। কেউ ঝরে পড়ে আর সইতে না পেরে - পুকুর ঝিল নদী থেকে স্বপ্নের বাষ্প ভেসে উঠে মেঘের মায়াটুকু তৈরি করেছিল এককালে, তারপর কখন যেন প্রয়োজন ফুরিয়েছে আর সে মায়া উবে গেছে তীব্র সূর্যরশ্মির তাপে। তারা ঝরে পড়ে, ব্যর্থ কবিটির উদাস ভিজে যাওয়া মিশে যায় তাদের রিমিঝিমি শব্দে…
|| রৌদ্রজন্ম ||
যা ছোঁয় সে তা ই আলো হয়ে ওঠে, সে পাহাড়ের তুষার হোক কি ফুটপাথের জল পড়ে যাওয়া কলে মাজতে আনা অ্যালুমিনিয়ামের বাসন। তার স্পর্শে আঁধার কাটে, সূর্যমুখী মুখ তুলে খুঁজে নেয় তার পথ। এই অসীম ক্ষমতার গর্বে কখনো সে ছুঁতে গেছিল মেয়েটির নির্বাক দৃষ্টি…তারপর থেকে এ গ্রহের সব রৌদ্রে মিশে থাকে কাজলের দাগ…
|| নিদ্রাজন্ম ||
যুগ যুগান্তে বয়ে যায়। গভীর সুষুপ্তির কোনো অন্ত হয় না। কবে জেগে উঠে চোখ চাইবে রূপকথার জীবন – সে অপেক্ষায় এক এক করে কমতে থাকে হিসেব মাপা আয়ুটুকু। তারপর সে জমিনে ঝরে পড়ে আক্ষেপের বৃষ্টি, জন্ম হয় এক নদীর, রোদ সকাতরে জড়িয়ে ধরে তার দুই পার ও সেখানে সবুজ চারাটি পাতা মেলে বৃক্ষ হয়ে উঠবে বলে। বৃত্ত সম্পূর্ণ করে করুণ হাসেন বিধাতা – সে হাসির শোক ধারণ করে আরেকটু বৃদ্ধ হয় পৃথিবী। আসলে তো ফুরিয়ে যাওয়াই একমাত্র ভবিতব্য, সবার…