মাতাদোর
কতোবার ভেবেছি একটা লাল স্কার্ফ গলায় জড়িয়ে আমি
পাগলা ষাঁড়ের পথে একাকী দাঁড়াব। হেঁটমুন্ড দেহটাকে
মাতাদোর আমি একাই টেনে তুলব যাতে সে নিশানা
চূড়ান্ত করে নিতে পারে এই শেষবার। কতোবার ভেবেছি
আমাকে অকিঞ্চিৎকর ভেবে যেসব শিয়াল ও হায়নার দল
শয়নকক্ষে ঢুকে পড়ে সকাল সন্ধ্যে নেই দিনে পাঁচবার
সদরে সটান একা এক ব্যাধ হব, তারা হবে আমার শিকার।
কতোবার ভেবেছি কিছু লোভী আর পিশাচের হাতে
আর যারা দেবে দিক আমি তুলে দেব না এ দেশ। রাস্তায় দাঁড়াব
দশ দিক ছিঁড়ে ফেলা চিৎকারে একা এক বানাব ব্রিগেড।
মা আর মেয়ের সম্ভ্রম আমি পাঁজরের নীচে হৃৎপিন্ডের মত
অচঞ্চল রেখে দেব ভেবেছি কতো কতো বার। একটি লাঞ্ছনা থেকে
অন্য লাঞ্ছনার বাড়ি আমি প্রহরীসংকেত হেঁকে বলে যাব
--জেগে থাকো, জাগো রে সবাই। কতোবার ভেবেছি ধর্মতলার মোড়ে
বলিভিয়া, চিলি এসে মিশে যাবে আমি যদি ডাক দিই ঢাকা শাহবাগ
আমি জানি আমার মতোই আরো ভাবে অনেকেই। বিদ্রোহ পুষে রাখে
স্থায়ী আমানতে, ভল্টে বা লকারে কোথাও। আমাদের বিপন্ন প্রাণে
'একা' -- এই শব্দখানা বিশল্যকরণী হয়ে আপৎকালীন স্থিতি এনে দিলে
মুঠোটা শিথিল হয় এবং প্রথম উন্মাদের জন্য আমরা সকলেই বসে থাকি
রাজপথে মাঝরাত একাকী প্রহর গোনে ঠান্ডা প্রিজন ভ্যান, নিউজ চ্যানেল।
নেশা
একটা নীতিবাগীশ সন্ধ্যাকে পাপে আসক্ত করতে যতোটুকু দরকার
ঠিক ততোটুকু মদই আমি খাব। একটা বিছানায় যাবার পথকে
বসার ঘরের সোফা বা ছাদে পাতা ইজিচেয়ারে পৌঁছে দিতে যতোটুকু দরকার
ঠিক ততোটুকু মদই আমি খাব। একটা চিরহরিৎ অরণ্যকে বাজি রেখে
পাতাহীন করে তোলার জন্য যতোটুকু দরকার ঠিক ততোটুকু মদই আমি খাব।
একটা রক্তপাতহীন এবং স্মৃতিশূন্য সন্ধ্যাকাল থেকে সমস্ত শ্বেতপতাকাকে
নো ম্যানস ল্যান্ডে পাঠানোর জন্য যতোটুকু দরকার ততোটুকু মদই আমি খাব।
দেশপ্রেমিক কবিদের নাচঘরে যতোখানি দরকার-- ঠিক ততোটুকু।
মানুষ বরং
মানুষ বরং উদ্ভিদের প্রতিযোগী হয়ে উঠুক
আকাশে দু’হাত মেলে স্থাণুবৎ পাঁচশো বছর
ফুল দিক, ফল দিক, আকর্ষে জড়িয়ে নিক মরা ডাল
মানুষ হয়ে উঠুক গোধূলির গৃহধূম, পাষাণের জল
মানুষ বরং মাটিতে নোয়ানো বুক নামহীন লতা হোক
চাপা পড়া গুল্ম থেকে মানুষ প্রস্ফুট হোক বনজমুকুল
শিকড়ে জড়িয়ে নিক অহঙ্কারী ইমারত, পরিখাপ্রাকার
পাখিরা কথা বলুক, মানুষে মৌন হোক নগরজীবন
কর্তিত ডালের গায়ে আকর্ষ হলে হোক বরং মানুষ
মাথাটি আকাশ ছুঁলে অন্ধকার প্রিয়তর হোক
মানুষের ছায়া হোক জলের দানার মত গহিনশীতল
মানুষ বরং সওয়ারিবিহীন উটদের মরুদ্যান হোক
মানুষ প্রত্ন হোক, সংহত জীবন, ফসিল যেমন হয়ে থাকে
নতুবা অঙ্কুর হোক, ঘুম ভাঙা বীজ হোক মানুষ এবার।