• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৯৭ | জানুয়ারি ২০২৫ | কবিতা
    Share
  • তিনটি কবিতা: একদিন পৌঁছে যাবো; নতুন মৃগয়া; সুজাতা তোমার ছবি : সুজিত বসু

    একদিন পৌঁছে যাবো
    জ্যোৎস্নারাতে আর কখনো যাই না আমি তোমার বাড়ি
    আর শুই না মাথা রেখে তোমার কোলে
    সম্পর্কের পূর্ণচ্ছেদ, সেদিন থেকে ছাড়াছাডি
    তুচ্ছ দোষে যেদিন তুমি বিরূপ হলে

    যোগাযোগের সব দরজাই বন্ধ রাগে
    জানতে দাও নি কোথায় আছো কোন বিদেশে
    আলো তো নেই, অন্ধকারই আমার ভাগে
    জ্বালবে নাকি চমকে দিয়ে হঠাৎ এসে !

    হারিয়ে গেছে জীবন থেকে ধ্রুবতারা
    গুগল ম্যাপে পাই না কোনো পথ নির্দেশ
    পথ বিপথে ঘুরেই মরি ছন্নছাড়া
    আর কেন এই অস্তিত্ব, হয় হোক শেষ

    আমার খাঁচায় দেয় না ধরা সুখের পাখি
    বন্দী জালে, মুক্তি পাওয়ার ভ্রান্ত আশা
    বিনোদনের গোলকধাঁধায় ঘুরতে থাকি
    আনন্দরা ঠিক খুঁজে নেয় অন্য বাসা

    তবুও জানি মন কম্পাস একদিন ঠিক তোমার দিশা
    দেবেই, সেদিন ঘোরাবে পথ তোমার দিকে
    পৌঁছে যাবো তোমার কাছে, ঘুচবে সেদিন অমানিশা
    যাবোই, তবে ঠিক জানি না কোন তারিখে।


    নতুন মৃগয়া
    আদিম মানব যেত অরণ্যের নিরালায় আহার্য সন্ধানে
    শুধু ফলে তৃপ্তি নেই, ধীরে ধীরে লক্ষ্যভেদী অস্ত্র এল হাতে
    তারপর মৃগয়াতে, নিয়মিত মত্ততায় শিকারি মানব,
    দীঘল চোখের মায়া ছড়িয়ে পালাতো ছুটে ভীরু হরিণীরা
    আরো বহু জন্তু রোজ বিদ্ধ হতো মানুষের চতুর আঘাতে
    আগুনে ঝলসাতো মাংস মানবীরা জঙ্গলের মৃদু জ্যোছনায়
    মৃগয়া তখন ছিল নিতান্তই প্রয়োজনে, যেমন বাঘেরা
    মেরে ফেলে ছোট জন্তু ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য, মৃগয়াও সেই
    জীবনধারণে সঙ্গী, অলজ্জ সঙ্গম হতো প্রকৃতির কোলে
    সামাজিক নিয়মের নিগড়ে আবদ্ধ নয়, আদিম নারীরা
    স্বেচ্ছায় মিলিত হতো প্রিয় পুরুষের সঙ্গে, এক বা অনেক
    অবশ্য তখন তারা সুসভ্য সমাজে নয়, জীবন তখন
    নিষেধের বেড়া দিয়ে ঘেরা নয়, বয়ে যেত একমুখী স্রোতে
    এসব পুরনো কথা, অবশ্য পরেও হতো শখের মৃগয়া,
    রাজা মহারাজাদের বিনোদন, শিকারির নিছক আমোদ
    এসব অরণ্যে হতো, গ্রামীণ বা নাগরিক সুসভ্য মানুষ
    মৃগয়া সরিয়ে রাখে কাহিনী সিনেমা বা টিভির ছবিতে
    এ নিয়ম অনেকের পছন্দ হলো না, তাই নতুন মৃগয়া
    এখন শহরে গ্রামে নিয়মিত হতে থাকে স্বাভাবিকভাবে
    হরিণীরা আজও ভয়ে ত্রস্ত, শুধু বদল যা দুপায়ে ছোটায়
    ছদ্মবেশী দানবেরা তাদের শরীরে খোঁজে রহস্যের খনি
    সবুজ ঘাসের বুকে রক্তের নদীতে ভাসে ধর্ষিতা রমণী।

    সুজাতা তোমার ছবি
    কাঠফাটা রোদে পুড়েছি অনেক, বৃষ্টিও মমতায়
    পাতে নি স্নেহের আঁচল, বরং জলপ্রপাতের তোড়ে
    ভেঙেছে আমার পর্ণকুটির, একান্ত অসহায়
    ঘুরি পথে পথে নিদ্রাবিহীন অচিন নেশার ঘোরে

    সবই তো জীবনে ছিল একদিন, বৃষ্টির মাইথনে
    সেই যে বাসের সিটে পাশাপাশি, রাতের গভীরে ডুব
    দিয়েছি দুজনে আধো জাগরণে, সে কথা তোমার মনে
    আজও কি রয়েছে, জানি না আমার মোবাইল নিশ্চুপ

    শুনি না তোমার সুরেলা আওয়াজ, নিষ্ঠুর শহরের
    উদাসীনতায় ক্ষতবিক্ষত রয়েছি নির্বাসনে
    টেনে চলি আজও অতীতের সেই টুকরো ভুলের জের
    এসো না সুজাতা, একবার যাই একান্ত নির্জনে

    অহংকারের মিনার আমার ধ্বসেছে ঘূর্ণিঝড়ে
    ধনের গরিমা মুছে গেছে, আর জ্বলে না খ্যাতির শিখা
    সুখের পাখিরা দিশাহীন, ডানা ঝাড়ে না আমার ঘরে
    বুক ফেটে যায় তৃষ্ণায়, চোখে পড়ে শুধু মরীচিকা

    ক্রমশ শরীর শিথিল, ক্রমশ মলিন চোখের জ্যোতি
    তবু আশা বুকে, সুজাতা আমার মন তবু আজও লোভী
    ক্লান্তির বোঝা তলাবে পাতালে, একবার আসো যদি
    মনের গোপনে আজও উজ্জ্বল সুজাতা তোমার ছবি।




    অলংকরণ (Artwork) : অনন্যা দাশ
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments