• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৯৭ | জানুয়ারি ২০২৫ | গ্রন্থ-সমালোচনা
    Share
  • অভিজিৎ সেনের উপন্যাস 'মৌসুমী সমুদ্রের উপকূল' : বিশ্বজিৎ দাস

    মৌসুমী সমুদ্রের উপকূল — অভিজিৎ সেন ; প্রচ্ছদ- হিরণ মিত্র; প্রকাশক- গাঙচিল, কলকাতা; প্রথম প্রকাশ- ডিসেম্বর ২০০৬; ISBN: 81-89834-14-2

    কিছুদিন আগে পড়েছি মৌসুমী সমুদ্রের উপকূল, অভিজিৎ সেনের নাতিদীর্ঘ উপন্যাস। সর্বমোট ১৯৭ পাতার। এর আগে পড়েছি ওঁর পঞ্চাশটি গল্প। ওঁর বিখ্যাত উপন্যাস রহু চন্ডালের হাড় অবশ্য পড়া হয়ে ওঠেনি।

    পঞ্চাশটি গল্প পড়ে অভিজিৎ সেনের একটি স্থায়ী প্রকোষ্ঠ গড়ে উঠেছে আমার মনে। যেকোনো মহৎ সাহিত্যের যে বিরোধাভাস, তার অন্তর্নিহিত subversion প্রচলিত সমস্ত জগদ্দল প্রতিষ্ঠানের প্রতি, তা ওঁর প্রতিটি গল্পে ছায়া রেখে গেছে। আমরা আমাদের চারপাশে যে শেওলাধরা ইমারতগুলো গড়ে তুলেছি, তার আনাচে কানাচে যে অন্ধকার, আমাদের অপরিসীম লোভের নিঃশব্দ পদচারণা, অভিজিৎ সেন ওঁর ছোট গল্পে উলঙ্গ করে দিয়েছেন। দেখিয়ে দিয়েছেন মুখোশ খুলে গেলে আমাদের আত্মিক, সামাজিক অবস্থান ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে থাকে, ঠিক কতটা আমরা উলঙ্গ হয়ে যাই, ফলত নির্লজ্জ ও হিংস্র!

    ওঁর মৌসুমী সমুদ্রের উপকূল পড়ি pdf download করে। ১৬/১৭ শতকে বাংলায় মগ-হার্মাদ দৌরাত্ম্যে নিম্ন বঙ্গের জনজীবনের যে অভিঘাত, বৃহত্তর ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রের যে নির্লজ্জ আত্মঘাতী ভন্ডামি, জনজীবনের বিন্যাসের পরিবর্তন এই সমস্ত কিছুই এই অপরিসর উপন্যাসে অত্যন্ত দক্ষতায় পরিষ্কার করে দিয়েছেন। এক অর্থে এই উপন্যাস একটি politico anthropological treatise.

    ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে বখতিয়ার নদীয়া বিজয় করেন এবং ক্রমশ এগিয়ে এসে দিনাজপুরের দেবকোট-এ (বর্তমান ভারতের, পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুরে) ঘাঁটি গাড়েন কামরূপ অভিযানের জন্য, কামরূপ অভিযানে উপর্যপুরি ব্যর্থ হলে তারই অনুচর আলী মর্দান এর হাতে তার মৃত্যু ঘটে।

    এই গোটা পর্বে বখতিয়ার একটা ভালো অংশের (পড়ুন সম্পন্ন গ্রামীণ সমাজ) বঙ্গীয় সমাজকে তলোয়ারের ডগাতে কলমা পরিয়ে মুসলমান করিয়ে ছিলেন। একথা আজ যখন চাচল, গাজোল, বুনিয়াদপুর, হেমতাবাদ বা ইসলামপুরের মুসলমান প্রজাদের কারও কারও আবহমান কালের বসত বাটি সংলগ্ন পুকুর বা চাষের জমি থেকে উদ্ধার হওয়া হাজার বছরেরও পুরোনো হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি থেকে প্রতিভাত হয়। কারণ ওই মুসলিম লোকেরা কেউ অন্য জায়গা থেকে পরিযায়ী হয়ে আসেনি। ফলত ওই উদ্ধার হওয়া মূর্তিগুলোর সাথে তাদের পূর্বজদের যোগ থাকা ধ্রুব সত্যি। শুধু কিছু প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার, যা বখতিয়ার ধ্বংস করেছিল, তার বেশ কিছু শ্রমণ মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে ধর্ম পরিবর্তন করে। বখতিয়ার বা তার পরবর্তী কালের মুসলিম হানাদারদের রাস্তায় হলেও আজও পশ্চিমবঙ্গ বা বলা ভালো স্বেচ্ছায় সেইসব পূর্বজরা ইসলাম কবুল করলে একটিও আস্ত মূর্তি পাওয়া যেত না।

    বখতিয়ারের মৃত্যুর পর অন্তত শত বৎসর লেগেছিল নিম্ন বঙ্গে ইসলামের অনুপ্রবেশ ঘটাতে। বখতিয়ারের চলন পথের বাইরে বা আক্রমণের লক্ষ্যের বাইরে বাংলার, পশ্চিম ও পূর্ব বঙ্গের এক বৃহৎ অংশ হিন্দুপ্রধান ছিল। বিশেষত আগমনের দ্বার প্রান্তে হলেও রাঢ় বঙ্গে তার সেরকম বিস্তার ঘটেনি।

    বাংলার ইসলামীকরণের উপর প্রচুর কাজ হয়েছে। রিয়াদ ইউনিভার্সিটি থেকে দু খণ্ডের গবেষণা গ্রন্থ আছে, যা খানিকটা একপেশে। তুরস্কের আর্তুগুলু ইউনিভার্সিটিতেও গবেষণা হয়েছে, যা নৈর্ব্যক্তিক নয়। এ ব্যাপারে সবথেকে উল্লেখ্য ও বহুল আলোচিত বই রিচার্ড ম্যাক্সওয়েল ইটন সাহেবের The Rise of Islam and the Bengal Frontiers 1204 to 1760 (1993). ইটন-এর মূল প্রতিপাদ্য হল নিম্ন বঙ্গে ইসলামের বিজয় মূলত শান্তি পথে। সুফি সাধক, যারা মূলত মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন আরব দেশ থেকে আগত, তাদের হাত ধরে। ইটন বলছেন সুফিরা মূলত ছিলেন entrepreneurs, নিম্ন বঙ্গের বিপুল জঙ্গল তাদের নেতৃত্বে হাসিল হয়। এই জমির আকর্ষণে নিম্ন বঙ্গের লোকেরা দলে দলে সুফিদের বয়ে আনা ধর্মের ছাতার নীচে যান। ইটন আরও বলেছেন হিন্দু অভিজাত শ্রেণী জমি ও ক্ষমতা ধরে রাখার লক্ষ্যে নতুন রাজার ধর্ম ইসলামের ছায়াতলে এসেছে। এর প্রভূত উদাহরণ মধ্য যুগের ইতিহাসে ছড়িয়ে আছে। বাংলার বর্ধিষ্ণু ব্যবসায়ী শ্রেণীও এই দৌড়ে থেকেছে। উদাহরণ ছড়িয়ে আছে কাশীরাম দাসের মহাভারত- (১৬ শ শতাব্দী), মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর চন্ডী মঙ্গল-(১৬শ শতক) এবং নারায়ণ দেবের মনসামঙ্গল-এ (১৭ শতক)।

    চতুর্দশ শতক পরবর্তী কালের বৃহত্তর চট্টগ্রাম এলাকার ১২০০ পুঁথি উদ্ধার করেন আব্দুল করিম সাহেব (নবীন সেনের রিক্রুট); তার ৮০০ পুঁথি মুসলিম লেখকদের আর ৪০০ পুঁথি হিন্দু লেখকদের। ঢাকার জাহাঙ্গীর নগর ইউনিভার্সিটির পন্ডিত সলিমুল্লাহ সাহেব এই খবর দিয়ে বলছেন এর ৮০০ পুঁথি যা মুসলিম লেখকদের তা রক্ষিত আছে ঢাকা ইউনিভার্সিটির মিউজিয়াম-এ আর ৪০০ পুঁথি, যা হিন্দু লেখকদের তা আছে রাজশাহীর বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়াম-এ। এই সম্পদের ভিত্তিতে মধ্য যুগের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধার্মিক পরিবর্তনের একটি মেগা রিসার্চ প্রজেক্ট হতেই পারত, যা আমাদের অনেক ধাঁধার উত্তর হয়তো দিতে পারত। কিন্তু এরকম কোনো কাজের খবর জানা নেই। হয়নি, তা আমাদের দুর্ভাগ্য!

    ‘প্রমা’ সাহিত্য পত্রিকায় একসময় ‘মধ্য যুগের বাংলা সাহিত্যে কাফের যবন স্বাক্ষ্য’ নামে একটি গবেষণা ধারাবাহিক নিবন্ধ শুরু হয়েছিল। তার ভবিষ্যৎ অজানা। আসলে মনে হয়, ইতিহাসের এই আলোচনা আমাদের কাছে একটি taboo; আমাদের আত্মিক পশ্চাদপদতা এইখানে ধরা আছে।

    বাংলাদেশ-এ আরব ব্যবসায়ীরা আসত অষ্টম শতকে, যখন পালরা আমাদের শাসন করতেন। ধরে নেওয়া যায় এই মুসলিম আরব ব্যবসায়ীরা একটি ক্ষুদ্র কৌমী সমাজের জন্ম দিয়েছিল স্থানীয় মেয়েদের বিয়ে করে। হাজার বছর আগে বাংলার জনজীবন অনেকটাই ট্রাইবাল ধরনের ছিল এবং ইসলামের পার্সপেক্টিভ আজকের হিন্দু মুসলিম বা অন্য ধর্মের সঙ্গে ইসলামের বর্তমান পার্সপেক্টিভ থেকে অনেক ভিন্ন ছিল। গৌড়ীয় বা আদি বাংলার সমাজ অনেক বেশি ইনক্লুসিভ ছিল।

    সেই আদি পর্বে, যখন ইসলামের পতাকাতলে বিভিন্ন আরব শক্তি ভারত তথা বাংলায় প্রবেশ করছে সামরিক সক্ষমতা নিয়ে, তখন এই নুতন কৌমী সমাজে প্রাণ সঞ্চারের ভূমিকায় নেমে পড়েছিলেন নুতন শাসকদের পক্ষপুটে নানা সুফি সাধকরা। এই evangelical সুফিরা নানা উপায় নিয়ে ছিলেন কনভার্সন-এর। নানা ব্ল্যাক ম্যাজিক, নানা fables তৈরি আল্লাহকে নিয়ে, বিষ্ণুর অবতার বানিয়ে কখনো বা হিন্দু দেবদেবীর সঙ্গে ইসলামের mythical চরিত্রদের লড়াই এবং সর্বক্ষেত্রে হিন্দু দেবদেবীর হেরে যাবার গল্প-গাথা প্রচার করে।

    প্রায় আদিবাসী মন গড়নের সেই proto বাঙালি সমাজ ইসলামে খুব বেশি বৈরিতার উপাদান খুঁজে পায়নি। এখন প্রশ্ন হল উপন্যাসের কথা বলতে গিয়ে ইসলামীকরণের গল্প বলছি কেন? কেন ধান ভানতে এই শিবের গান? কারণ আছে বৈকি!

    অভিজিৎ সেন তাঁর এই উপন্যাসে দেখিয়েছেন হিন্দু সমাজের ভণ্ড সমাজপতিরা ছোঁয়া-ছেনি, যবন-দোষ এই সব বিচার আচারের আড়ালে দুর্বৃত্তের হাতে নিগৃহীত মানুষকে কি করে সমাজের দরজার বাইরে বের করে দিয়ে, তাদের বাধ্য করেছে নবীন ধর্ম ইসলামের পতাকাতলে যেতে। এইভাবে সেই ১৬শ শতকেই নিম্ন বঙ্গে কনভার্টেড জনসংখ্যা লক্ষাধিক হয়ে গেছিল।

    অভিজিৎ সেন তাঁর বইয়ের প্রারম্ভিক বয়ানে এই কাহিনী লেখার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করেছেন। বলেছেন এই বই লেখার ১৭/১৮ বছর আগে তাঁর হাতে যামিনীরঞ্জন ঘোষের লেখা Magh raiders in Bengal নামে একটি চটি বই আসে। তার পাঠ, তাতে বিধৃত মগদের দ্বারা লুণ্ঠিত, ধর্ষিত কর্পূরি-মঞ্জুরিদের বিষাদ গাথা তাঁকে প্ররোচিত করেছে এই নাতিদীর্ঘ উপন্যাসটি লিখতে।

    মধ্যযুগে, বিশেষত ১৬-শ থেকে অষ্টাদশ শতক অবধি বাংলার জনজীবন নরক করে তুলেছিল মারাঠা বর্গীরা, সন্ন্যাসী ফকিররা, সর্বোপরি মগ পর্তুগিজ দস্যুরা। এর মধ্যে মগ, পর্তুগিজ দাস ব্যবসায়ীদের অত্যাচার আমাদের সামাজিক গড়নে বিপুল পরিবর্তন এনে দিয়েছিল, যাতে অনুঘটকের কাজ করেছেন আমাদের ব্রাহ্মণ সমাজ গুরুরা। এদের আচরণ, লোভ ও ভন্ডামির অভিঘাত দস্যুদের অত্যাচারের থেকে কম ছিল না।

    অভিজিৎ তাঁর এই অপরিসর উপন্যাসে অত্যন্ত দক্ষতায় প্রাপ্ত ঐতিহাসিক উপাদানগুলোকে তার মিসিং লিংক জুড়ে এক অনবদ্য কালখন্ডের সামাজিক ইতিহাস আমাদের উপহার দিয়েছেন।

    গাঙ্গেয় বঙ্গের এক গ্রামে ব্রাহ্মণ বিদ্যানন্দের স্ত্রী সত্যবতী ও তার দুই কন্যা, জ্ঞাতিদের বাড়িতে কালী পূজার খুনচা দিয়ে ফেরত আসার পথে গ্রামে মগ দস্যুদের আক্রমণ ঘটে এবং পালাতে গিয়ে ওদের হাতেই পড়ে। বিদ্যানন্দের ছোটবেলাকার বন্ধু ক্ষেমনকর সেন। মুক্ত মনা। নামী বৈদ্য। ক্ষেমনকর বন্ধুর এই দুই কন্যা সন্তানকে ছোট থেকেই স্নেহের চোখে দেখে। তখনকার সেই রাজনৈতিক অরাজকতার কালে, সমাজে ঘুণপোকার প্রবল বিস্তার হয়েছিল। মগ দস্যুদের দালাল ছড়িয়ে থাকত সমাজে। তারাই খবর দিত কার ঘরে উপযুক্ত কন্যা সন্তান আছে। আবার লুণ্ঠিত হলে, মগেদের হয়ে দালালি করত, পয়সাকড়ি দিয়ে ছাড়িয়ে আনার ব্যাপারে।

    ক্ষেমনকর বিধ্বস্ত বিদ্যানন্দের কাছে প্রস্তাব নিয়ে যায় পয়সাকড়ি দিয়ে ওদের ছাড়িয়ে আনার জন্য কিন্তু সমাজগুরুদের ভয়ে, বিদ্যানন্দ রাজি হতে পারে না। ক্ষেমনকর নিজের ব্যক্তিগত যোগাযোগ কাজে লাগিয়ে দুই কন্যাকে তাদের মা-সহ উদ্ধার করে আনে। কিন্তু সমাজগুরুদের প্রবল বিরোধিতায় ক্ষেমনকর বাধ্য হয় ইসলাম কবুল করতে এবং শেষ পর্যন্ত বিদ্যানন্দের বড় কন্যা মঞ্জুরিকেও ইসলাম কবুল করিয়ে বিয়ে করে। লেখক এইখানে মন্তব্য করেছেন সেই আমলে মগেদের হাতে নির্যাতিত, ফেরত আসা লোকেদের মেয়েদের ইসলাম কবুল করা ছাড়া বেঁচে থাকার কোন উপায় ছিল না। সেই সময়ে নিম্ন বঙ্গে নুতন কনভার্ট-এর সংখ্যা লক্ষ ছাড়িয়ে গেছিল, তাতে সমাজ গুরুদের কোন ভ্রুক্ষেপ ছিল না।

    অনেক anecdotes জোড়া দিয়ে এই কাহিনির বুনোট অগ্রসর হয়েছে। কোথাও কাহিনির তার ছিঁড়ে গেছে মনে হয়নি। লেখক তাঁর এই বয়ান গেঁথে হিন্দু সমাজের তৎকালীন সমাজপতিদের ভণ্ডামি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন যারা নিজেদের সমাজের বৃহত্তর স্বার্থ অত্যন্ত কদাকার, বিকৃত শাস্ত্রাচার দিয়ে নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থে জলাঞ্জলি দিয়েছেন।

    এই নিবন্ধের শুরুতে নিম্ন বঙ্গে ইসলামীকরণের আলোচনায় ঢুকেছিলাম। পণ্ডিতরা নানা কারণ তুলে ধরেছেন। মগ দস্যুদের এই কয়েক শতাব্দী ব্যাপী হানাদারী সম্ভবত নিম্ন বঙ্গের হিন্দু সমাজের দ্রুত ক্ষয়কে ত্বরান্বিত করেছিল। তাতে অনুঘটকের ভূমিকায় ছিল হিন্দু সমাজপতিরা।

    এই উপন্যাস ওই বিশেষ কালখণ্ডের রাজনৈতিক দলিল। একেবারে নিম্ন স্তরে অসহায় মানুষের সমাজজীবন, যুগল দাসের মতো সমাজের মধ্যে থাকা হিংস্র শ্বাপদের আনাগোনা, সাধারণ মানুষের অসহায়তা নিপুণভাবে এঁকে দিয়েছেন লেখক। ভরার মেয়েদের নিয়ে বঙ্গীয় কুল সমাজের ভন্ডামি, সমাজ কর্তাদের ভন্ডামি, আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখায় কেন বৃহত্তর হিন্দু সমাজ এক ভয়ঙ্কর ক্ষয়ের মুখে দাঁড়িয়ে গেছিল। সেই ক্ষয় আমরা এখনও ডিঙোতে পারিনি।

    ঘরের ছেলে, ঘরের মেয়েকে চৌকাঠের বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখে, সমাজের সীমার বাইরে বার করে রেখে সেদিনের হিন্দু সমাজ যে পাপ করেছে তাই আজ DNA বাহিত হয়ে ঘরে ফিরতে না পারার সেই রাগ ক্ষোভ হিন্দু মুসলিম ঐক্যের দুর্লঙ্ঘ বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই উপন্যাস সেই দিক নির্দেশ করে বাংলা সাহিত্যের এক কালচারাল অনথ্রোপোলজির annal হয়ে চিরদিন আমাদের চোখ খুলে রাখবে। আমরা নুতন করে ভাবব। ইতিহাসের আলোতে হয়তো কোনোদিন দুই বৃহৎ জনগোষ্ঠীর সম্পর্কের দোদুল্যমানতা কাটবে। একেবারে সাম্প্রতিক বাংলাদেশের প্রেক্ষিত এই উপন্যাসটির সামাজিক পাঠের গুরুত্ব অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। বাংলার হিন্দু-মুসলিম পাঠকের এই উপন্যাসের কাছে যাওয়া একটি অবশ্য কর্তব্য, যদি তারা এই দুই জনগোষ্ঠীর ঐক্যের সম্ভাবনার কথা ভাবেন।

  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments