• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৯৭ | জানুয়ারি ২০২৫ | কবিতা
    Share
  • চারটি কবিতা: পালক; সামুদ্রিক; অনাসৃষ্টি; কবিতার বই : সুমন জানা

    পালক

    যত অপদস্থ হই, তত আমি পাখি হতে থাকি
    ডুমুরের ডালে বসা স্তব্ধ ঘুঘু পাখি।
    বৈশাখের রোদ যত বাঁকা হাসি হাসে,
    অপমান বোধ যেন প্রিয় ক্ষত-মুখ,
    তীব্র এক আলস্যের জন্ম দিতে থাকে, আর আমি
    নিজের ডানার নীচে মুখ গুঁজে
    কণ্ডূয়ন করে চলি নিজের বিবেক।
    ওড়ার কারণগুলি কখনও বা মাত্রা ছাড়ালে
    বাতাসে ভাসিয়ে দিই ডানার দুর্বলতম একটি পালক...


    সামুদ্রিক

    সমুদ্র লিখিনি বলে
    বালি ঝড়ে অন্ধ হল চোখ।
    যদিও সে বালিয়াড়ি বহুদিন মিশে গেছে পাড়ে।
    চেনা ঝাউগাছটিও
    ডাল ভেঙে পড়ে আছে জটায়ুর মতো।
    অন্ধের যষ্টি কে হবে? কে দেখাবে
    সৈকতের কোথায় পড়েছে
    হারানো কবিতা থেকে ঝরে পড়া অর্থহীন কথা?
    রিসর্টের বুড়ো দারোয়ান যত পুরোনো দিনের গল্প বলে,
    পাঠক তো জানে, সেই গল্পে
    আমার ভূমিকা শুধু সেতুবন্ধে কাঠবেড়ালির।
    যে পাঠক সমুদ্র পড়েছে,
    সে কি আজ আমাকেও হাত ধরে পার করে দেবে
    উপসমুদ্রের জলে ভেসে যাওয়া সোঁতা?


    অনাসৃষ্টি

    মেঘ উঠছে। ভেস্তে যাচ্ছে।
    কিছুতেই বৃষ্টি আসছে না।
    রান্নাঘরে তেলচিটে কাপড়ের মতো
    সিঁড়ির তলার বহু-ব্যবহৃত পাপোষের মতো
    ছেঁড়া ছেঁড়া নোংরা মেঘে ভরে যাচ্ছে সন্ধ্যার আকাশ।
    সূর্যের অন্তিম আলো তার ফাঁকে এঁটো বাসনের
    হলুদ দাগের মতো লেগে আছে।
    বৃষ্টি হচ্ছে না বলে আপাতত কাজকর্ম নেই,
    শহর ছাড়িয়ে দূরে রোডের দুপাশে
    হাওয়া খেতে বেরিয়েছে ধানজমিগুলি।
    সব হাওয়া ধানজমি খায় যদি, মানুষ কী খাবে,
    বৃষ্টি হচ্ছে না? ভেবে শহর বাজার
    গুদামে আলুর মতো গরমে পচেছে।
    নষ্ট শশা, পচা টম্যাটোর মতো নোংরা সব
    কাটাকুটিতে ভরে যাচ্ছে আমারও ডায়েরির পাতা।
    শব্দ লিখছি। কেটে ফেলছি।
    কিছুতেই কবিতা আসছে না !


    কবিতার বই

    শুরুতে নারকেল থাকবে, ঠিক যেন বিভাব কবিতা।
    চানাচুর, ভেজা ছোলা, ছাড়ানো বাদাম।
    কাঁসাই নদীর বালি দিয়ে ভাজা মুড়ি সব শেষে,
    তেল যেন প্রতিটি দানার গায়ে লেগে থাকে।
    আগে কিছু শশা কুচি, গাজর, টম্যাটো, ধনেপাতা।
    কালকের বেঁচে যাওয়া সেদ্ধ আলু ফেলে দেব নাকি?
    অত লস পোষাবে না, কাউকে বলিনি,
    নতুন সেদ্ধর সঙ্গে সূক্ষ্মভাবে মিশিয়ে দিয়েছি।
    পাঠকেরও রুচিভেদ আছে। কেউ – ‘আচার দেবে না’,
    কারও বা পেঁয়াজ বাদ, কাঁচা লঙ্কা বেশি।



    অলংকরণ (Artwork) : অনন্যা দাশ
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments