• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ১০০ | অক্টোবর ২০২৫ | কবিতা
    Share
  • লুইস গ্লিকের কবিতা : স্বপন ভট্টাচার্য
    translated from English to Bengali by স্বপন ভট্টাচার্য

    ১৯৪৩ সালের ২২ এপ্রিল নিউইয়র্কে লুইস গ্লিকের (Louise Elisabeth Glück) জন্ম। বেড়ে উঠেছেন লং আইল্যান্ডে। বাবা ড্যানিয়েল গ্লিক ছিলেন হাঙ্গেরি থেকে আমেরিকায় আসা অভিবাসী এবং ইংরেজি বানানরীতি মানলে পদবীটির উচ্চারণ গ্লাক বা গ্লুক হওয়াই উচিত, কিন্তু তাঁদের পরিবারের উচ্চারণবিধি অনুসারে তা হল গ্লিক। বাংলা অনুবাদে ওই গ্লুক পদবীতেই সমধিক পরিচিতি তাঁর, অথচ নোবেল ঘোষণাও গ্লিক নামে। নয়টি কবিতার বই এবং একটি প্রবন্ধসংগ্রহ রয়েছে তাঁর। প্রথম কবিতার বই ‘ফার্স্ট বর্ন’ থেকেই আমেরিকায় ক্রিটিকদের নজরে এসেছিলেন তিনি। ন্যাশানাল বুক ক্রিটিক সার্কল পুরস্কার পেয়েছেন ‘দ্য ট্রায়াম্ফ অফ অ্যাকিলিস’-এর জন্য এবং ‘ওয়াইল্ড আইরিস’-এর জন্য পুলিৎজার এবং ২০২০ তে পেয়েছেন সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার। আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ আর্টস এন্ড লেটারস-এর ফেলো ছিলেন তিনি এবং ২০০৩-০৪ সালের ন্যাশানাল পোয়েট। পড়িয়েছেন উইলিয়ামস কলেজে এবং ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডজাংক্ট প্রফেসর হিসেবে। ২০২৩ সালের ১৩ অক্টোবর ৮০ বছর বয়সে মারা যান লুইজ গ্লিক। লুইস গ্লিকের প্রাপ্তির ঝুলিতে আছে ন্যাশনাল হিউম্যানিটিজ মেডেল, পুলিৎজার পুরস্কার, ন্যাশনাল বুক পুরস্কার। ২০০৩-০৪ সালে গ্লিক ছিলেন আমেরিকার রাষ্ট্রীয় কবি। এখানে থাকল ওয়াইল্ড আইরিস-এর নাম কবিতা এবং অন্য দুটি কবিতার অনুবাদ।

    বুনো আইরিস (Wild Iris, 1992) তাঁর পুলিৎজার পুরস্কারে ভূষিত কাব্যগ্রন্থ। ফুলের ভাষায় কথা বলেছেন তিনি এই কাব্যগ্রন্থে। ফুল বলতে হয়ত কাঁটাঝোপের ফুল, হয়ত গ্রীষ্মের সামান্য অবকাশে ফুটে ওঠা বর্ষজীবী বুনো আগাছার ফুল যারা কখনো স্রষ্টার কাছে প্রশ্ন রাখে কখনো বা ব্যঙ্গ করে তাঁকে। এবং অনিত্যতার মধ্য দিয়ে জীবনের এই যে উদযাপন তা বিষণ্ণতা বিবর্জিত নয়, কিন্তু যে পোয়েটিক এনার্জি এই বিষণ্ণতা নির্মাণে তিনি প্রতিটি পঙ্‌ক্তিতে সঞ্চারিত করতে পেরেছেন তা বারবার আমাদের ফিরিয়ে আনে বুনো আইরিস-এর কাছে। গ্লিকের কবিতায় খ্রিষ্টীয় অনুষঙ্গ খুব বেশি করেই থাকে, কিন্তু তার সবটাই প্রায় ওই বিষন্নতা থেকে উৎসারিত এবং সেখানেই তাঁর কবিতার আবেদন ভাষার সীমা অতিক্রম করে যায়।

    বুনো আইরিস

    আমার যন্ত্রণার শেষে
    একটা দরজা ছিল।

    ভালো করে শোনো : যাকে তোমরা মৃত্যু নামে ডাকো
    আমার মনে পড়ে,

    মাথার ওপর, শব্দ, পাইনের শাখারা জায়গা বদলে নিচ্ছে।
    তারপর কিচ্ছু না। দুর্বল সূর্য
    শুকনো জমির ওপর কেঁপে কেঁপে দুলছে।

    বাঁচা কী ভয়ংকর
    চেতনা হিসেবে
    মাটির গভীরে ডুবে থেকে।

    তারপর অবসান: যেটা ভয় পাও তুমি,
    একটা আত্মা হয়ে যেতে এবং অক্ষম
    কোন কথা বলতে, আকস্মিক যবনিকা, দৃঢ় ভূমিস্তর
    একদিকে সামান্য হেলে পড়া। অথচ আমি ধরে নিয়েছিলাম
    পাখিরা তীরের মত ঢুকছে নীচু ঝোপের ভেতর।

    সেই তুমি যার আর মনে নেই
    অন্য জগত থেকে পথটি ফেরার
    বলছি শোনো, আমি আবার কথা বলে উঠতে পারি: যা কিছু ফেরে
    বিস্মৃতি থেকে, ফেরে
    একটা স্বর খুঁজে পেতে:

    আমার জীবনের ঠিক কেন্দ্রস্থল থেকে
    উৎসারিত প্রকাণ্ড ফোয়ারা এক, ঘন নীল
    ছায়া ফেলছে সমুদ্রের নীলাভ জলের গায়ে।

    Wild Iris


    বুনো পেঁয়াজ

    শোনো মুর্খ, আমি নই, একা কেউ নই বরং আমরা, আমরা--তরঙ্গবিক্ষেপ
    আকাশী নীলের যেন
    স্বর্গের বিশ্লেষণ একটা: কেন
    নিজের কথাকে এত দামি ভাবো তুমি
    যখন বিশেষ কিছু হয়ে ওঠা
    আসলে শূন্যও হতে পারা নয়?
    কেন তাকিয়ে রয়েছ তুমি? একটা
    প্রতিধ্বনি শুনবে বলে যেন
    ঈশ্বরের কন্ঠস্বর সেটা? তোমরা সবাই সমান আমাদের চোখে,
    একা, আমাদের ওপর দাঁড়িয়ে ছকে নিচ্ছো
    নিজেদের অকিঞ্চিৎকর জীবন: যাও
    যেখানে পাঠানো হয়েছে তোমাদের, যেমন সবাই যায়,
    যেখানে হাওয়া রোপণ করে তোমাদের,
    তোমাদের মধ্যে কেউ না কেউ নতমুখ
    অবিচ্ছিন্নভাবে তাকিয়ে দেখছে একটাই ছবি
    জলের এবং কী শুনছে? ঢেউ,
    এবং ঢেউয়ের ওপর, পাখিরা ডাকছে।

    Scilla


    শীতের শেষ

    জড় পৃথিবীর ওপর, একটা পাখি ডেকে উঠলো
    কালো কালো গাছের মধ্যে একাকী ঘুম ভেঙে

    তুমি জন্ম নিতে চাইছিলে; আমি তোমায় জন্মাতে দিলাম,
    কবেই বা আমার ব্যথা তোমার তৃপ্তির পথে
    বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল?

    এগিয়ে যাবার জন্য ঝাঁপ দিয়ে
    একাধারে আলোক ও অন্ধকারে
    অনুভূতি মেলার আশায়

    যেন তুমি নতুন কিছু, চাইছো
    নিজেদের প্রকাশ করতে

    পুরোমাত্রায় বিভাদীপ্ত, প্রাণশক্তিকে পূর্ণ

    ভাবতেই পারছো না
    এজন্য যে কোন মূল্যই দিতে হতে পারে,
    কল্পনাও করছো না আমার কন্ঠস্বর
    শুধু তোমার অংশ ব্যতীত অন্য কিছু-

    অপর জগতে তুমি আর তা শুনতে পাবে না,
    স্পষ্টভাবে আর নয়,
    পাখিদের ডাকে অথবা মানুষের কান্নায়,

    স্বচ্ছ ধ্বনি নয়, শুধু
    স্থায়ী প্রতিধ্বনি
    একটাই শব্দের যার অর্থ বিদায়, বিদায়

    এই একটিই ছেদহীন পঙ্‌ক্তি
    আমাদের একে অন্যের সাথে বাঁধে।

    End of Winter

  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments