• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ১০০ | অক্টোবর ২০২৫ | নাটক
    Share
  • হট্টমালার ওপারে : কাহিনী: প্রেমেন্দ্র মিত্র, লীলা মজুমদার নাট্যরূপ: চিরন্তন কুন্ডু

    [পুরোনো ‘রঙমশাল’ পত্রিকায় প্রেমেন্দ্র মিত্র ‘হট্টমালার দেশে’ গল্পটি লিখতে শুরু করেন। পরে লীলা মজুমদারের সহযোগিতায় এটি সম্পূর্ণ হয়। কিংবদন্তী নাট্যকার বাদল সরকার এই গল্পের একটি অসম্পূর্ণ রূপ অবলম্বন করে ‘হট্টমালার ওপারে’ নাটকটি রচনা করেন। বাদল সরকারের নাটকটির কাছে ঋণ স্বীকার করে সম্পূর্ণ ‘হট্টমালার দেশে’ গল্পটির এই নাট্যরূপ দেওয়া হল। সম্পূর্ণ গল্পটির নাট্যরূপ এর আগে কেউ দিয়েছেন কিনা বর্তমান লেখকের জানা নেই। ]

    চরিত্রঃ

    রাখাল, ভূতো, হারু, হরি, মধু, পাতু, দাদু, নিতাই (ভোজমহলের পরিচালক), তিনু (কুমোর), দিদিমা, দিকদার, দিগম্বর, ছিদাম (মালী), সুবল, গোপাল, মুকুন্দ, মথুর, ললিতা (জাদুঘরের কর্মী), ডাক্তার, দিকদারের দলের লোক

    প্রথম দৃশ্য

    [ রাখাল আর ভূতোকে গ্রামের লোকেরা টানতে টানতে নিয়ে আসে, ফেলে মারতে থাকে।]

    মধু। আচ্ছাসে দু ঘা – (মার চলছে)

    পাতু। এবার ক্ষান্ত দাও নাহয় -

    (আরেকপ্রস্থ মারধোর চলে)

    হারু। (হাঁপাতে হাঁপাতে) উঃ - মেরে পাট করে দিতে হয় -

    পাতু। তার আর বাকি কী?

    হারু। না না - কতবড় সাহস - আমি ভুঁইতরাসির মোড়ল, আমার বাড়িতে সিঁধ দেওয়া -

    হরি। তা মোড়ল, সিঁধ দেবার মত বাড়ি আর কখানা -

    মধু। হ্যাঃ, ঐ পাতু কুমোরের বাড়ি চোর ঢুকে নেবেটা কী? তিন খাবলা মাটি?

    হরি। চোর বলে কি তাদের একটা মর্যাদা নেই?

    হারু। তা অস্বীকার করব না, তোমাদের পাঁচজনের আশীর্বাদে ঘরে দুটো খুদকুঁড়ো রয়েছে -

    পাতু। তা তোমার গিন্নির হাতে গলায় ভালোই খুদকুঁড়ো দেখি -

    হারু। ঘুমটা ধরে এসেছিল, আর ছোঁড়াদুটোর হাতও ভারি সাফ, কিন্তু ধর্মের কল - বুঝলে না -

    (দাদু ঢোকে)

    মধু। দাদু এসে গেছে, দাদু এসে গেছে -

    দাদু। কই, কোথায়?

    (সবাই পড়ে থাকা রাখাল আর ভূতোকে দেখিয়ে দেয়। রাখাল তখনও নড়ছিল, দাদু গিয়ে হাত বুলোয়।)

    দাদু। কে বাবা - রাখাল নাকি? ( রাখাল নড়েচড়ে ওঠে। দাদু লাঠির বাড়ি বসাতেই অসাড় হয়ে যায়। দাদু গর্বিত মুখে ফিরে আসে।)

    মধু। দুটো ছিল যে - রাখাল আর ভূতো -

    দাদু। অ্যাঁ - দুটো নাকি? রাত্রে ভালো দেখি না তো বাবা - (আবার ওদিকে যেতে গিয়ে হরির কথায় থামে)

    হরি। দাদুর এক ঘাই যথেষ্ট - দুটোই ঠাণ্ডা হয়ে গেছে।

    পাতু। আর গরম হলে হয় -

    হারু। বলে কী! (দুজনকে দেখে) মরেটরে গেল নাকি?

    হরি। সব্বোনাশ! শেষটায় ফাঁসি যেতে হবে?

    মধু। ছাড়ো দিকি - এদের কইমাছের জান - অমনি গেলেই হল! এখন তালা মেরে চলো, রাতটা কাটুক-

    হারু। সকালে দারোগাকে ডেকে পাঠাব - কী অনাসৃষ্টি -

    (সবাই বেরিয়ে যায়। রাখাল এদিক ওদিক দেখে আস্তে আস্তে উঠে বসে। চারদিকে তাকায়। ভূতোকে খোঁচা মারে।)

    রাখাল। ভূতো - এই ভূতো - ভূতেশ্বর -

    ভূতো। (ধড়মড় করে উঠে চারদিকে তাকায়। তারপর বোকার মত হাসে।) এই - চোখটা একটু লেগে গিয়েছিল।

    রাখাল। ধন্যি! আমি মটকা মেরে অজ্ঞান হয়ে গেলাম, আর তুই কিনা -

    ভূতো। তোর দাদা কত গুণ - আমরা কি তোর মত অভিনয় করতে পারি -

    রাখাল। ওঠ এবার - পালাতে হবে -

    ভূতো। কিন্তু তালা যে -

    রাখাল। তুই আবার কবে দরজা দিয়ে যাতায়াত ধরলি বাপ যুধিষ্ঠির - (সিঁধকাঠি বের করে) চুরির মাল গেছে যাক, সিঁধকাঠি তো আর যায়নি - আয় -

    ভূতো। (উঠতে গিয়ে) উঃ - ব্যথা -

    রাখাল। তবে আর কি - থাক -

    ভূতো। এই না -

    (ভূতো উঠে পড়ে। দুজনে সিঁধকাঠি হাতে এগোয়।)

    দ্বিতীয় দৃশ্য

    [রাখাল আর ভূতো ছুটতে ছুটতে চলেছে]

    ভূতো। কোনদিকে?

    রাখাল। আর গাঁয়ে নয় -

    ভূতো। তবে -

    রাখাল। নদীর ঘাটে -

    (এসে পৌঁছয়। হাঁপিয়ে দম নেয়।)

    রাখাল। দেখেছিস? কপালে থাকলে কে খণ্ডাবে?

    ভূতো। নৌকো -

    রাখাল। হারু মোড়লের নৌকো - মোড়লের নাম করে বেরিয়েছিলাম, ঠাকুর খালি হাতে ফেরাননি। চল -

    (নৌকো ভাসিয়ে উঠে পড়ে। বাইতে থাকে। গুনগুন করে গাইতে থাকে।)

    ভূতো। রাখালদা - জল -

    রাখাল। নদীতে জল থাকবে না তো কালো গরুর দুধ থাকবে?

    ভূতো। নদীতে না, নৌকোয় -

    রাখাল। অ্যাঁ! (চমকে দেখে) এ যে ফুটো রে -

    ভূতো। সর্বনাশ -

    রাখাল। মোড়লের পো এবারও দাগা দিল – (জলের ঘূর্ণি শুরু হয়।)

    ভূতো। ওরে, ঘূর্ণি -

    রাখাল। ডাইনে চেপে -

    (নৌকো ঘুরপাক খেতে থাকে। এক একবার একেক দিক কাত হয়। ক্রমে ডুবতে থাকে।)

    ভূতো। ডুবছি যে -

    রাখাল। তুই একা নোস -

    ভূতো। দাদা, বাঁচা -

    রাখাল। আমাকে না, ঠাকুরকে ডাক -

    ভূতো। গেলাম - গ্‌ গ্‌ গ্‌

    রাখাল। আমিও - গ্‌ গ্‌ গ্‌

    তৃতীয় দৃশ্য

    [গ্রামের লোকেরা তালা খুলে ঢোকে।]

    মধু। চলো তো বাছারা - এ কী!

    পাতু। উবে গেল যে -

    হারু। ব্যাটারা আবার মন্ত্রতন্ত্রও জানে নাকি?

    মধু। এই যে -পেয়েছি - ফুটো।

    পাতু। ও বাবা - দেওয়াল ফাঁক করে দিয়েছে!

    হারু। আরে ছি ছি - তোমাদের আক্কেলটা কেমন? সিঁধকাঠি কেড়ে নাওনি?

    পাতু। তা তোমারই যদি খেয়াল না থাকে -

    হারু। এ হে - কী কাণ্ড! কিন্তু পালিয়ে যাবে কোথায়?

    (হরি ঢোকে। )

    হরি। মোড়ল, তোমার নৌকোখানা হাওয়া -

    হারু। অ্যাঁ - সে কি!

    হরি। ঘাটের ধারে ছিল, এখন আর নেই।

    মধু। ঐ দু ব্যাটাই নিয়েছে তবে -

    হারু। চলো চলো -

    (ঘাটে আসে। চারদিক দেখে। কারোর চিহ্ন নেই।)

    হারু। কিন্তু - ইয়ে - নৌকো তো ফুটো ছিল হে -

    হরি। বলো কী!

    পাতু। ডুবেই মরল নাকি?

    মধু। কাজটা উচিত হল না মোড়ল, নৌকো সারাওনি কেন?

    হারু। কী বিপদ! আমি কোথথেকে জানব ওরা চুরি করে নৌকো চেপে পালাবে?

    পাতু। (জলের দিকে তাকিয়ে থাকে) বড় ভালো হাত ছিল দুটোর।

    হরি। হ্যাঁ, এ তল্লাটের সেরা।

    মধু। শ্রাদ্ধশান্তির আয়োজন করতে হয়।

    হারু। পুরুতের সঙ্গে কথা বলো - অপঘাতে মৃত্যু - কদিনে কাজ হবে?

    মধু। খরচাপাতিও আছে - তুমি মোড়লমানুষ -

    হারু। সে ভেবো না - (দীর্ঘশ্বাস) কাদের পাপ আর কে প্রায়শ্চিত্ত করে!

    চতুর্থ দৃশ্য

    [রাখাল আর ভূতো পড়ে আছে। আস্তে আস্তে রাখালের জ্ঞান ফিরে আসে। রাখাল উঠে বসে চারদিক দেখে।]

    রাখাল। ভূতো - ভূতো - অ্যাই ভূতো - (ভূতো উঠে পড়ে) -

    ভূতো। (চারদিকে তাকায়) কোথায় এলাম রে? (রাখাল মাথা নাড়ে) বোধহয় সগগো -

    (রাখাল চিমটি কাটে)

    ভূতো। উঃ - কী হল?

    রাখাল। দেখলি তো - মরিসনি - সিঁধ কেটে সশরীরে স্বর্গে এলি? অ্যাঁ?

    ভূতো। তাহলে তুইই বল কোথায়?

    রাখাল। এ তল্লাটে সব গাঁই তো চিনি - কিন্তু এটা তো -

    (হাঁটতে থাকে)

    ভূতো। কোঠাগুলো দেখেছিস? গাঁয়ে অমন কোঠা হয়?

    রাখাল। তাই তো ভাবছি - ভুঁইতরাসিই বা কোনদিকে -

    ভূতো। এটা মনে হয় কলকেতা।

    রাখাল। তোর মাথা! ভুঁইতরাসি থেকে কলকেতা অমনি গেলেই হল! মহকুমা থেকে সদর, সদর থেকে কলকেতা। আর কলকেতা হলে টেরামগাড়ি কই? হ্যাঁ?

    ভূতো। কেমন সুন্দর কেয়ারি করা ফুলের বাগান -

    রাখাল। রাস্তাটাই দ্যাখ না - সিঁদুর পড়লে তুলে নেওয়া যায় -

    ভূতো। (ভেবে) হয়েছে, কোঠাগুলো কিসের বুঝেছি।

    রাখাল। কী বুঝেছিস?

    ভূতো। ওগুলো জেলখানা।

    রাখাল। জেলখানা! জেলখানা তো একটাই হয় বাপ - রাজ্যসুদ্ধ জেলখানা বানিয়ে রেখেছে? তুই আসবি বলে? এই ছিল সগগো, হয়ে গেল জেলখানা ! হুঁঃ!

    ভূতো। তাই তো - দরজাগুলোও তো দেখছি হাট করে খোলা -

    ভূতো। খাসা শহর কিন্তু -

    রাখাল। কটা শহর দেখেছিস তুই? বড় শহর মানে গাড়িঘোড়া ঠেলাঠেলি গুঁতোগুঁতি -

    ভূতো। সেরকমই নিয়ম নাকি?

    রাখাল। নইলে চলবে কেন? ভিড়ের মধ্যে ধাক্কা খেতে খেতে চলেছে - তখন টুক করে পকেটটি ফাঁকা করে দিতে সুবিধে না? সেজন্য আবার মোড়ে মোড়ে পুলিস-পাহারাওলা -

    ভূতো। এদের বোধহয় সেসব পাট নেই - এতক্ষণেও একটা পুলিস দেখলি?

    রাখাল। তাহলে নির্ঘাত টিকটিকি - আড়ে আড়ে নজর রাখছে - বেচাল দেখলেই ক্যাঁক! দাঁড়িয়ে পড়লি কেন? আয়।

    ভূতো। ভাবছি -

    রাখাল। ভাবছিস! তুই! কী?

    ভূতো। ভাবছি চোখে এমন অন্ধকার দেখছি কেন। মনে হয় খিদে পেয়েছে।

    রাখাল। হুঁ, কাল সন্ধ্যাকালে দুটো পান্তা খেয়েছি, আর তো পেটে কিছু পড়েনি -

    (লোকজন - সুবল, গোপাল, মুকুন্দ, তিনু, মথুর - মঞ্চের এপাশ থেকে ওপাশে যেতে থাকে। রাখাল আর ভূতো অবাক হয়ে তাদের সাজপোশাক দেখে।)

    ভূতো। গাজনের সং বেরিয়েছে মনে হয় -

    রাখাল। আশ্বিন মাসে গাজন? আহাম্মুক! (লোকজন ওদের দিকে আসে।) দাঁড়া, দেখি।

    রাখাল। তোমাদের সাজগোজ কিসের গো?

    সুবল। সাজগোজ? তোমার পছন্দ হয়েছে?

    মুকুন্দ। নেবে?

    ভূতো। না, এসব কি আর সস্তা জিনিস -

    মুকুন্দ। সস্তা?

    ভূতো। আমাদের সঙ্গে তেমন কিছু নেই - (রাখাল টেনে ধরে)

    মুকুন্দ। সঙ্গে আবার কী থাকবে?

    রাখাল। (সাজগোজ দেখে) মন্দ নয় - এখানে বাজারটা কোন দিকে?

    গোপাল। বাজার?

    (সবাই মুখ চাওয়াচাওয়ি করে)

    তিনু। বুঝেছি - তোমরা হট্টমালা থেকে আসছ?

    সুবল। হ্যাঁ হ্যাঁ তাই হবে।

    রাখাল। হট্টমালা? সে আবার কোথাকার দেশ?

    তিনু। তা কি আর জানি! তবে সেখানেই তো শুনি সব উল্টোপাল্টা কাণ্ড!

    ভূতো। কিন্তু আমরা তো ভুঁইত – (রাখাল টেনে সরিয়ে নেয়)

    রাখাল। (কটমট করে তাকায়) ভুঁইতরাসি! হাজতে যেতে চাস? (দলের দিকে তাকিয়ে) আচ্ছা ভাই, তোমরা এগোও এখন -

    (দল চলে যায়)

    ভূতো। খাবারদাবারের একটা খবর নিলি না?

    রাখাল। ইঁঃ - খাবারদাবার! শুনলি তো কথাবার্তা। এক্ষুণি বলবে - খাওয়া! (ভেঙিয়ে) তোমরা কি হট্টমালা থেকে আসছ?

    ভূতো। তবে?

    রাখাল। তবে আর কি - হেঁটে দেখি চল -

    (হাঁটতে থাকে)

    ভূতো। মানুষজন কেমন হাসিখুশি দেখলি -

    রাখাল। হুঁঃ! ঐ তো দেখলি ক্যাবলাকান্তগুলোকে। কিছুই বোঝে না। হাসিখুশি! এই দ্যাখ - (দাঁত বের করে) - খুশি তো? যত্তসব!

    ভূতো। আচ্ছা - খাব যে, দাম দেব কী করে?

    রাখাল। সে আমার ভাবা হয়ে আছে, যা বলব তাই করবি শুধু - (ফিসফিস করে বলে)

    ভূতো। সত্যি, তোর মাথায় আসেও। কখন ভাবলি এসব?

    রাখাল। কখন মানে? চলতে চলতেই ভাবছি, যেমন দেখছি শুনছি, চোখকান খোলা রাখতে বলি কেন?

    ভূতো। চোখকানের সঙ্গে নাকও খোলা রেখেছি -

    রাখাল। নাক?

    ভূতো। পাচ্ছিস না? গন্ধ?

    রাখাল। তাই তো, রান্নাবান্নার বেশ গন্ধ ছেড়েছে রে -

    ভূতো। এসে পড়েছি তাহলে, ঐ দ্যাখ -

    পঞ্চম দৃশ্য

    [ভোজমহল। নিতাই সবকিছু চালাচ্ছে। সুবল, গোপাল পরিবেশন করছে। মুকুন্দ আর ডাক্তার বসে খাচ্ছে। রাখাল আর ভূতো কোণের দিকে বসতে যায়, কর্মীরা হাঁ হাঁ করে ওঠে।]

    সুবল। এই যে এদিকে -

    গোপাল। এখানটায় বসুন -

    নিতাই। আপনারা নতুন তো, ভোজমহলটা ভালো করে দেখতে পাবেন -

    (দুজন মাঝখানে বসে) এবার বলুন কী ইচ্ছে করেন -

    রাখাল। তোমার মুখ দেখতে ইচ্ছে করি।

    নিতাই। আপনাদের কি ব্যবস্থা পছন্দ হয়নি?

    রাখাল। আগে ডানহাতের ব্যবস্থা না হলে কোনো ব্যবস্থাই পছন্দ হবে না।

    নিতাই। আহা - তাই তো জিজ্ঞেস করছিলাম - কোনো পছন্দ অপছন্দ যদি -

    ভূতো। এই সস্তার মধ্যে কিছু -

    নিতাই। সস্তা?

    রাখাল। যাও যাও, তোমাদের কী ব্যবস্থা আছে নিয়ে এসো - পছন্দ হয় কিনা দেখি -

    (নিতাই ইশারা করতেই পরপর থালাবাটি আসতে থাকে বেশ কিছুক্ষণ ধরে। দুজনে মুখ চাওয়াচাওয়ি করে তাড়াতাড়ি খাওয়া শুরু করে। বাজনা বেজে ওঠে।)

    রাখাল। ভূতো -

    ভূতো। এখন কথা না -

    রাখাল। এরা আমাদের কী ঠাউরেছে বল তো?

    ভূতো। কে জানে, কিন্তু জন্মে এরকম খাইনি - (বাজনার তালে তালে মাথা নেড়ে খায়)

    রাখাল। (থমকে গিয়ে) ভূতো - (ভূতো তাকায়) - থালাবাটিগুলো দেখেছিস? শুয়োরের মত গিলছিস যে -

    ভূতো। গিলব না? কী রেঁধেছে বল - অমৃত। এটা সগগোই রে।

    রাখাল। গাড়ল!

    ভূতো। হ্যাঁ, থালাবাটির কথা কী বলছিলি?

    রাখাল। চুপ চুপ, সবাই শুনতে পাবে যে!

    ভূতো। শুনল তো কী হল? কারুর থালাবাটি চুরি করছি নাকি?

    রাখাল। থাম থাম। থালার কথা আমি কিছু বলিনি -

    ভূতো। আলবাত বলেছিস। তাতে দোষের কী? এখানকার মানুষ ভালো, দোকান ভালো, খাবার ভালো, খাবারের থালাবাটি ভালো।

    নিতাই। থালাবাটির কথা কী বলছিলে ভাই?

    রাখাল। না, মানে এগুলো যেন সোনা-চাঁদির মনে হচ্ছে।

    নিতাই। বাঃ - সোনা-চাঁদির ছাড়া থালাবাটি আবার হয় নাকি!

    ভূতো। অ্যাঁ! আসল সোনা-রূপো! সেই জিনিস দিয়েছ আমাদের?

    নিতাই। তোমাদের কেন, সবাইকেই তো দিয়েছি। কিন্তু খাবার কেমন লাগল বললে না তো।

    রাখাল। বলব, বলব, সবে তো দুটো মুখে দিয়েছি - (নিতাই চলে যায়) (ভূতোকে) সব মাটি করে দিয়েছিলি। আমাদের টাঁক আছে একবার বুঝলে আর এখানে এসব রাখবে? মাটির তলায় লোহার সিন্দুকে চালান করে দেবে, গণেশঠাকুরের ইঁদুরও পাত্তা পাবে না। যা -

    ভূতো। যা খেলাম আর নড়তে পারলে হয় -

    রাখাল। এঃ - নড়তে পারলে হয় - বিনেপয়সায় খাওয়া বেরিয়ে যাবে, সোজা ফাটকে পুরবে - যা -

    (ভূতো উঠে দৌড় লাগায়।) ধর ধর -

    নিতাই। কী হল ভাই, ব্যাপার কী? হঠাৎ ছোটাছুটি?

    রাখাল। আরে টাকার থলেটা নিয়ে পালিয়ে গেল -

    সুবল। টাকা?

    নিতাই। থলে? ও, বোধহয় তামাশা করছে, এখুনি ফিরে আসবে -

    রাখাল। হুঁ; ফিরে আসবে! টাকার থলে নিয়ে কেউ ফেরে? আমি এখন দোকানির দেনা শুধব কিসে?

    নিতাই। দেনা?

    রাখাল। এই যে খেলামদেলাম, দাম দেব কী করে?

    (বাকিরা মুখ চাওয়াচাওয়ি করে)

    সুবল। জাম বলল?

    গোপাল। না - কিসের নাম?

    মুকুন্দ। ধুর - নামের আবার থলে কী?

    রাখাল। দাম দাম দাম -

    নিতাই। সে আবার কী?

    মুকুন্দ। খাওয়ার পর দিতে হয় বুঝি?

    সুবল। বাব্বাঃ - এ আবার কোনদেশি নিয়ম?

    নিতাই। আচ্ছা - তোমরা বুঝি হট্টমালার দেশ থেকে আসছ?

    রাখাল। হ্যাঁ আসছি, জাহান্নাম থেকে আসছি। হয়েছে?

    নিতাই। আহা বোসো বোসো! একটু দই খাবে? শরীর ঠাণ্ডা হবে -

    রাখাল। হুঁঃ! (বেরিয়ে যায়)

    ষষ্ঠ দৃশ্য

    [রাস্তা]

    ভূতো। যাক - ধরতে পারেনি -

    রাখাল। হুঁঃ - আমি পাঁচু ওস্তাদের চেলা - আমাকে ধরবে?

    ভূতো। কালকেই তো ধরল -

    রাখাল। আরে দুদ্দুর - এরা সব আকাট - তাড়াই করে না তো ধরবে কী?

    ভূতো। সে কী! তাহলে খামোখা দৌড়লি কেন?

    রাখাল। অভ্যেসটা রাখতে হয় -

    ভূতো। দৌড়ে দৌড়ে তেষ্টা পেয়ে গেল -

    রাখাল। তেষ্টা? আবার? নদীতে যাবি?

    ভূতো। ডাব - ঐ যে -

    রাখাল। ডাব কত গো দিদিমা?

    দিদিমা। যত খাবে তত - নষ্ট করবে না কিন্তু -

    (রাখাল আর ভূতো মুখ চাওয়াচাওয়ি করে - বুড়ির কী তেজ!)

    রাখাল। কত দাম?

    দিদিমা। আম তো এখন নেই বাবা -

    রাখাল। আরে দুর, দাম, দাম - সস্তা না হলে নেব না -

    দিদিমা। বস্তা কী হবে, হাতে হাতেই নাও - (বাড়িয়ে ধরে)

    ভূতো। দাদা -

    রাখাল। বকিস না - তেষ্টা পেয়েছে, খা - (খেয়েদেয়ে) আচ্ছা দিদিমা, বেশ ডাব - ঐ যাঃ - টাকা কোথায় গেল -

    দিদিমা। এসো বাবা - চাকা লাগলে কামারশালায় যেও, গড়িয়ে দেবে -

    ভূতো। ব্যাপার কী রে? সব কি মাগনা নাকি?

    রাখাল। তোকে বলেছে? তাই কখনো হয়?

    ভূতো। দেখলি তো দাম নিল না -

    রাখাল। কানে কম শোনে - বোধবুদ্ধি নেই -

    ভূতো। আর দুপুরের খ্যাঁটটা?

    রাখাল। হয়তো কোনো বড়মানুষের ব্যবস্থা -

    (ছিদাম ঢোকে। ডাব খায়। দিদিমা বেরিয়ে যায়।)

    ভূতো। এসব কার গো?

    ছিদাম। ডাব আবার কার হবে? গাছের -

    ভূতো। সে তো বটেই - গাছের মালিক কে?

    ছিদাম। মালিক?

    ভূতো। মানে ধরো - কে ইজারা নিয়েছে গাছগুলো?

    ছিদাম। ইজারা?

    ভূতো। মানে - ঐ বুড়িকে তো কিছু দিতে হবে - ওকেও তো খেতে হবে। ঘর চাই তো একটা?

    ছিদাম। আছে তো। বাগানবাড়ির সবচেয়ে ভাল ঘরেই ও থাকে। কী আবার দিতে হবে?

    রাখাল। ছাড়ো ছাড়ো - যত আবোলতাবোল প্রশ্ন। দেখছিস কাজে যাচ্ছে, তার মধ্যে দেরি করিয়ে দেওয়া -

    ছিদাম। না না - তাড়া কিসের? আলাপ করা তো ভালো। আমার নাম ছিদাম।

    রাখাল। আচ্ছা - খুব ভালো। আমাদেরই একটু তাড়া আছে তো -

    ছিদাম। আচ্ছা আচ্ছা। চলো দেখা হবে। দিকদারের বাগানে আমাকে পেয়ে যাবে।

    (ছিদাম বেরিয়ে যায়)

    ভূতো। আবোলতাবোল প্রশ্ন?

    রাখাল। দেখছিস তো কিছু বোঝে না - এক্ষুণি আবার হট্টমালা শুরু করত।

    ভূতো। এসব মনে হয় কোনো বড়মানুষের ব্যবস্থা - একবার যদি তাকে গিয়ে ধরতে পারি তো হিল্লে হয়ে যাবে রে।

    রাখাল। হিল্লে এমনিই হবে -

    ভূতো। কী ভাবছিস?

    রাখাল। (সিঁধকাঠি তুলে) সোনার থালা, রূপোর বাটি, লোহার কাঠি -

    সপ্তম দৃশ্য

    [রাখাল সিঁধ কাটছে। ভূতো চারপাশে নজর রাখছে।]

    রাখাল। ভালো করে নজর রাখ, এই হয়ে এল -

    ভূতো। আচ্ছা রাখালদা - (রাখাল তাকায়) - এত সোনার থালাবাটি নিয়ে আমরা কী করব?

    রাখাল। (হাঁ করে তাকায়) শুক্তুনি দিয়ে ভাত মেখে খাব। হুঁঃ! সোনা দিয়ে লোকে কী করে? রাজার মত খাবদাব যা ইচ্ছে তাই করব।

    ভূতো। মানে সকালে যেমন খেলাম? তাতেও যদি সোনার কাঁড়ি না ফুরোয়?

    রাখাল। তাল তাল করে জমাব। দিঘির তলায় যখ দিয়ে পুঁতে রাখব।

    ভূতো। পুঁতে রাখার জন্য এত খাটাখাটনি -

    রাখাল। আপত্তি থাকলে তোকেও সঙ্গে পুঁতে দিতে পারি - হুঁঃ - কী করব? এর দাম কত কোনো আন্দাজ আছে?

    ভূতো। কিন্তু দামটা দিচ্ছে কে?

    রাখাল। মানে?

    ভূতো। এরা তো দামই বোঝে না -

    রাখাল। এখানে থাকছে কে? সব গুছিয়ে নিয়ে সটকান - ভুঁইতরাসি -

    ভূতো। জায়গাটা কিন্তু বেশ রে -

    রাখাল। (কটমট করে তাকিয়ে) হয়ে এসেছে, একটু নজর করে আয় আশপাশ -

    (ভূতো ঘুরেফিরে খোলা দরজার সামনে পৌঁছয়, দৌড়তে দৌড়তে রাখালের দিকে আসে। এর মধ্যে তিনু কুমোর রাখালের পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে।)

    তিনু। বাঃ বাঃ -

    রাখাল। (ঘাড় না ঘুরিয়ে) তবে? একে বলে হাতের কাজ -

    তিনু। সে আর বলতে - শক্তপোক্ত দেওয়ালে এমন নিটোল গর্ত -

    রাখাল। (স্তম্ভিত) গ-গ-গর্ত - (তাড়াতাড়ি ঢেকে) কোথায়?

    তিনু। ব্যাপার কী ভাই? এটা কী?

    রাখাল। ও এটা? এই দেখছি তোমাদের দেওয়াল কেমন মজবুত -

    তিনু। ও - তোমরা বুঝি স্থাপত্য বিশারদ?

    রাখাল। কী?

    তিনু। তোমরা বুঝি সব বাড়িঘরের তদারক করে বেড়াও?

    রাখাল। মস্করা! হ্যাঁ, আমরা চোর, সিঁধেল চোর, হয়েছে?

    তিনু। সিঁধে -(হাসতে হাসতে) বুঝেছি, তোমরা নির্ঘাত হট্ট -

    রাখাল। খবরদার! ফের হট্টমালা হট্টমালা করেছ তো -

    তিনু। আচ্ছা আচ্ছা, এখন ভেতরে চলো তো -

    রাখাল। ভেতরে? (ভূতো ইশারায় বোঝায় দরজা খোলা ) যদি না যাই?

    তিনু। না গেলে আর কী করি বলো - তবে গেলে ভালো হত। আমাদের দিকদারেরও একই রোগ, একসঙ্গেই চিকিচ্ছের ব্যবস্থা হত।

    রাখাল। রোগ? কী রোগ?

    তিনু। আহা চলোই না - (সবাই ভেতরে যায়)

    অষ্টম দৃশ্য

    [ভোজমহলের ভেতর। নিতাই তদারকি করছে। মুকুন্দ, ডাক্তার খাচ্ছে।]

    নিতাই। আরে, এ যে দেখছি চেনামুখ - সকালেই তো - (তিনু কানে কানে কিছু বলে)

    রাখাল। হ্যাঁ হ্যাঁ - তো? দাম বুঝি আর কেউ বাকি রাখে না?

    নিতাই। ঠিক তো - তা বৈকি। কিন্তু এবেলা তো ভাই সদর দিয়ে এলেই পারতে। দেওয়াল ফুটো করার দরকার কী ছিল?

    রাখাল। ছিল - দরকার ছিল। তোমার ঐ সোনার থালাগুলো চুরি করার দরকার ছিল। সদর দিয়ে এলে সেগুলো দিতে তুমি?

    নিতাই। বাঃ - দেব না কেন? কিন্তু কী করতে নিয়ে?

    তিনু। হ্যাঁঃ - মিছিমিছি বোঝা বওয়া -

    (রাখাল চুল ছেঁড়ার ভঙ্গি করে)।

    নিতাই। অসুবিধেটা কী বলো তো?

    রাখাল। অসুবিধে? আচ্ছা - তুমি যে এই দোকান খুলে বসেছ - কেন?

    নিতাই। কেন? লোকে খাবে বলে।

    রাখাল। বাঃ বাঃ- লোকে খাবে বলে তুমি ভূতের বেগার খাটছ- যে-সে হট করে ঢুকছে, যা খুশি খেয়ে চলে যাচ্ছে- তোমার লাভটা কোথায়? দিনকাল অত সস্তা নয় বাবু, নিজের গণ্ডাটি তুলতে না পারলে লোকে মাথায় হাত বুলিয়ে চলে যাবে –

    এতে হাসির কী আছে? হুঁঃ - দাঁত বের করে হ্যাহ্যাহ্যাহ্যা। এই যে রাতদুপুরে আমরা চুরি করতে এলাম - একটা পাহারাওলারও টিকির দেখা নেই - হত আমাদের ওখানে - দারোগা-পুলিশ এতক্ষণ বেঁধে থানায় নিয়ে তুলত -

    তিনু। থানা?

    নিতাই। দারোগা-পুলিশ? সে আবার কী? কী করে?

    রাখাল। তাও জানো না! ডাণ্ডা দিয়ে সবাইকে ঠাণ্ডা রাখে।

    ভূতো। মানে ধরো - তোমার দোকানটা কেউ লুঠ করতে চায় -

    নিতাই। কে আবার লুঠ করতে চাইবে?

    রাখাল। কে না চাইবে - এমন দামি দামি সব মাল - তোমার নাম কী হে বাপু?

    নিতাই। ও তো আমাদের তিনু কুমোর - ওর হাতের কাজ যদি -

    রাখাল। থাক থাক - এই তিনু কুমোরেরই যদি লোভ হয় তোমার দোকানের ওপর -

    নিতাই। তা হবে কেন? ও তো কুমোর -

    রাখাল। কুমোর বলে তো ধম্মোপুত্তুর যুধিষ্ঠির নয় বাপু। ধরো ওর যদি সে কাজে অরুচি ধরে -

    তিনু। তা কেন ধরবে?

    রাখাল। ধরবে না? (তিনুকে) এ খাবারের দোকানে মজা করবে, আর তুমি চিরকাল কাদা ঘেঁটে মরবে?

    তিনু। কী যে বলো - চাকা ঘুরিয়ে নতুন নতুন সব জিনিস তৈরি করা - এতেই তো মজা -

    নিতাই। আর অরুচি ধরলে খাবারের দোকানে বসতে কতক্ষণ?

    (দিকদারের প্রবেশ, সঙ্গে দিগম্বর)

    দিকদার। কে আছিস, জলদি -

    দিগম্বর। জলদি -

    তিনু। ঐ তোমাদের এক জুড়িদার এসেছে -

    রাখাল। কে?

    তিনু। ও দিকদার - আমাদের ফলবাগানের সেরা গুণী। বেশ ছিল, কিন্তু নতুন ফলের চারা খুঁজতে গিয়ে নদীপারের জঙ্গলে গিয়ে পালাজ্বর ধরিয়ে আনল, সেই থেকে মাথাটা বিগড়েছে। আবোল-তাবোল বকে - তোমাদের মত। কিছু বলতে গেলেই মারমুখো।

    (রাখাল এগিয়ে যায়)

    রাখাল। শুনছেন?

    দিকদার। শুনছেন! কী শুনব শুনি - যত সব ষাঁড়মার্কা উজবুক। আগে বল - হেই দিকদার।

    রাখাল। হেই -

    দিকদার। হেই দিকদার।

    রাখাল। হেই দিকদার।

    দিকদার। কে তোরা? কোত্থেকে এসেছিস?

    ভূতো। আজ্ঞে ভুঁইতরাসি -

    দিকদার। কী করিস? কী করতিস?

    রাখাল। চুরি করতাম। সিঁধেল চোর।

    নিতাই। চুরি আবার কী?

    তিনু। সিঁধেল চোর না কি বলছে।

    মুকুন্দ। মানুষের মতই দেখতে তো।

    দিকদার। হুঁঃ - এখানে ওসবের সুবিধে নেই বলে রাখলাম।

    ভূতো। হেঃ - নেই আবার কী? হোটেলখানা থেকে গোছা গোছা তুলে নিয়ে গেলেই হল -

    মুকুন্দ। ও - তাই বল।

    নিতাই। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে যাওয়াকে চুরি করা বলে?

    ভূতো। অনেকটা। তবে না জানিয়ে নিয়ে যেতে হয়।

    মুকুন্দ। কেন? কেন?

    ভূতো। কেন? নইলে সে দেবে কেন?

    তিনু। কেন দেবে না? তোমার দরকার হলেও দেবে না?

    ভূতো। দরকার বলে তো নিচ্ছি না, ইচ্ছে হচ্ছে তাই নিচ্ছি।

    নিতাই। কেন? দরকার নেই তো কী করবে নিয়ে?

    রাখাল। কী আবার করব - বেচে টাকা করব -

    নিতাই। বেচে মানে?

    মুকুন্দ। টাকা?

    তিনু। হ্যাঁ হ্যাঁ জাদুঘরে আছে - রঙচঙে কাগজ -

    নিতাই। ও - আমিও দেখেছি - চাকতির মতও হয় -

    মুকুন্দ। সুন্দর দেখতে বুঝি?

    নিতাই। কী করবে তা নিয়ে? খেলবে?

    রাখাল। খেলব মানে? টাকা কি খোলামকুচি? খাব-দাব বেড়াব, ঘড়ি-আংটি পরব, ঘোড়ায় চেপে জরির পোশাক পরে ঘুরব -

    তিনু। সে তো এমনিই করতে পারো -

    মুকুন্দ। ঘোড়া লাগবে? আনব?

    নিতাই। পোশাক ভাণ্ডারে পেয়ে যাবে -

    তিনু। ঘড়ি মনিহারিতে পাবে -

    দিকদার। আঃ - চোপ। এরা হট্টমালার দেশ থেকে এসেছে। তোমরা বুঝবে না। আমার সঙ্গে চলুক। বাগানে লোক লাগবে। কিন্তু খাটতে হবে বলে রাখলাম।

    রাখাল। খাটতে হবে? ক ঘণ্টা? মাইনে কত?

    দিকদার। এখানে মাইনে-টাইনে কিছু নেই। ক ঘণ্টা আবার কী! যতক্ষণ পারবে খাটবে। পেট ভরে খেতে পাবে। বালিশ বিছানা পাবে। কাপড়চোপড় যা লাগবে পাবে।

    ভূতো। তা - আরো তো দরকার আছে মানুষের। খরচাপাতি -

    মুকুন্দ। কী দরকার?

    ভূতো। কেন - অসুখবিসুখ - ডাক্তার, ওষুধ -

    নিতাই। এই তো ডাক্তার - যাবে, ওষুধ লাগলে নেবে - সমস্যা কী?

    ভূতো। তাপ্পর - এই ধরো একদিন বাইস্কোপ দেখতে মন গেল -

    তিনু। দেখবে। বাগানেই তো বাইস্কোপ আছে। গিয়ে বসে পড়লেই হল।

    রাখাল। (ভূতোকে) আমাকে একটা চিমটি কাট তো- (ভূতো হাত বাড়াতে সরে যায়)-

    দিকদার। দিগম্বর -

    দিগম্বর। চলো হে-

    রাখাল। কোথায়?

    দিগম্বর। গেলেই দেখতে পাবে। ঘরদুয়োর দেখে নেবে- যেখানে খুশি শুয়ে পড়বে- তাপ্পর সক্কাল সক্কাল জলখাবার খেয়ে বাগানে চলে যেও।

    নবম দৃশ্য

    [বাগান। ছিদাম, মথুর কাজ করছে। রাখাল, ভূতো ঢোকে।]

    ভূতো। দাদা - কী বলেছিলাম? সগগো -

    রাখাল। নন্দনকানন -

    ভূতো। ফলের গাছগুলো দ্যাখ - ওদিকে বাছুর ছাগল -

    রাখাল। তুলে নিলেই হল -

    ভূতো। নিয়ে কী করবি? দ্যাখ ফুলটা কী সুন্দর - চেনো?

    (ভূতো একটা ফুল ছিঁড়ে নেয়। মালী ছুটে আসে )

    ছিদাম। ও কী করলে? মিছিমিছি ফুল ছিঁড়লে কেন?

    ভূতো। ও - ছিঁড়তে নেই?

    ছিদাম। গাছে থাকলে তো সবাই দেখতে পায়, গন্ধ পায় -

    ভূতো। এটা কী ফল?

    ছিদাম। এটা কমলাম - দিকদারের কেরামতি - কমলালেবুর ডালে আমের কলম লাগিয়ে - নেবে?

    ভূতো। নেওয়া যায়?

    ছিদাম। হ্যাঁ হ্যাঁ - খাও না - ফল তো খাবার জন্যেই - মানুষ খাবে, পাখপক্ষী খাবে - (ভূতো খায়, রাখালকে দেয়) - কেমন? দিকদারের হাতের জুড়ি নেই, লোকটা অবশ্য ডাহা পাগল।

    রাখাল। তোমাদের জিনিসপত্রের কোনো গোছ নেই কেন হে?

    ছিদাম। কেন? কেন? অগোছালো দেখলে নাকি কোথাও?

    রাখাল। না - এই - ঘরদোর খোলা - ভেতরে কত জিনিসপত্র - হা হা করছে - কেউ যদি নিয়ে নেয়?

    ছিদাম। তা নিক না। নেওয়ার জন্যেই তো রাখা।

    রাখাল। না না, ধরো লোভে পড়ে - আচ্ছা ধরো যদি রেগেমেগে আগুন লাগিয়ে দিল, বা কেটেকুটে নষ্ট করল -

    ছিদাম। না না, সেরকম করবে কেন? সে তো খুব খারাপ কাজ।

    রাখাল। আরে, সবাই কি আর ভালো লোক? ধরো যদি ওরকম করে, কী করো তোমরা? ধরে-বেঁধে হাকিমের কাছে নিয়ে যাও?

    ছিদাম। হাকিম আবার কী?

    রাখাল। কী নয়, কে। আদালতে থাকে না? হাকিম, উকিল -

    ছিদাম। উকিল?

    ভূতো। কালো কোট পরে - ধরো দুজনের ঝগড়া হল - তাদের হয়ে দুজন উকিল ঝগড়া করে দেবে - পয়সা দিতে হবে তার জন্য -

    ছিদাম। ও - তোমরা নির্ঘাত হট্টমালার -

    রাখাল। এখানে ওরকম করলে কী করবে তোমরা?

    ছিদাম। তাহলে সবাই তার ভারি নিন্দা করবে।

    রাখাল। নিন্দে করবে? ধরে ফাটকে দেবে না? তার কিচ্ছু হবে না?

    ছিদাম। হবে না কেন? চিকিচ্ছে হবে।

    ভূতো। চিকিচ্ছে? এ কি ব্যামো হয়েছে নাকি?

    ছিদাম। ব্যামো নয়?

    (দিকদার আর দিগম্বর ঢোকে)

    দিকদার। হেই - কাজে লেগে যাও -

    দিগম্বর। কাজে - জলদি -

    রাখাল। কী কাজ?

    দিকদার। এত লোকে কাজ করছে - দেখেশুনে ঠিক করতে পারবে না? যাও - গাছ পাতলা করো।

    রাখাল। আমি কাজটাজ জানিনা। শিখিনি।

    দিকদার। শেখোনি, শিখবে। ফাঁকিবাজির জায়গা নয় এটা। (বেরিয়ে যায়, দিগম্বর আর মথুরও বেরিয়ে যায়।)

    রাখাল। এঃ - কাজে না গেলে তবে ব্যাটা জব্দ হয়।

    ছিদাম। কেন? তুমি কাজ না শিখলে ও কী করে জব্দ হবে?

    রাখাল। কাজটাজ আমার আসে না। (অন্যদিকে যায়)

    ছিদাম। সে কী! কাজ না করে থাকা যায় নাকি? হাত আছে, পা আছে, জোয়ান লোক -

    ভূতো। কাজ না করলে ওকে শাস্তি দেবে না?

    ছিদাম। না, শাস্তি কিসের - ওর চিকিচ্ছে লাগবে - সে ব্যবস্থা হবে -

    ভূতো। তোর চিকিচ্ছে করবে বলছে -

    রাখাল। অ্যাঁ! চিকিচ্ছে! হাসপাতালে নিয়ে সুই দেবে নাকি?

    ভূতো। তাই হবে হয়তো - কিংবা সাঁড়াশি দিয়ে দাঁত তুলে দেবে -

    রাখাল। (ফিরে আসে) আমি গাছ পাতলা করতে জানি না -

    ছিদাম। সোজা কাজ, গাছের ডালগুলো ছেঁটে ছেঁটে দিতে হয়, বাকশালের দিকটায় চলো -

    ভূতো। পাঠশাল?

    ছিদাম। না না - বাকশাল জানো না?

    রাখাল। পাকশাল বুঝি - রান্নাঘর -

    ছিদাম। বাকশাল মানে কথাবার্তা হয় যেখানে। মাসে দুবার বসি সবাই মিলে। আজ পূর্ণিমা তো - রাত্রে বসবে সবাই -

    ভূতো। আমাদের ঢুকতে দেবে?

    ছিদাম। দেওয়াদেওয়ির কী? চলে এলেই হল। আচ্ছা আমি নিয়ে আসব। এখন চলো - (দা কাঁচি দেয়) নিচের দিকের ডাল কেটে পাতলা করে দিতে হবে - তবে তো রোদ ঢুকবে -

    (ছিদাম দেখিয়ে দিয়ে বেরিয়ে যায়। ভূতো কাজ শুরু করে। হাঁ করে চারপাশ দেখে।)

    রাখাল। যা বলছে করে যা। এই দা-কাঁচির ওজন দেখেছিস? চার টাকা দর হবে - খবরদার হাতছাড়া করিস না - (ভূতোর কানে কথা ঢুকছে না) - এই - দাঁড়া ওদিকটা দেখি -

    (বেরোতে যায়। দিকদার ঢোকে।)

    দিকদার। এই যে - নাম কী?

    রাখাল। আজ্ঞে রাখাল আর ভূতো।

    দিকদার। হট্টমালার হট্টমালী - তাই তো?

    রাখাল। আজ্ঞে না তো, আমরা ভুঁইতরাসির মানুষ।

    দিকদার। ঐ একই হল। সিঁধেল চোর - না? (দুজন চুপ) ঘাড় একেবারে নেমে গেল যে।

    ভূতো। এটা কি আর লোকের সামনে ঘাড় উঁচু করে বলার কথা?

    দিকদার। ঐখানেই তোমাদের ভুল। চুরির কথা ভুলে যাও, চুরি বড়ো ছোটো জিনিস। শুধু মনে রেখো জোর থাকলে হাটের মাঝেও যেমন ইচ্ছে কাজ করা যায়। এ পৃথিবীতে দুর্বল আর অকেজোদের জায়গা নেই - বুঝলে? ভয় নেই, আমার কথামতো চললে তোমাদের কোনো ভাবনা থাকবে না। কাজকম্মের পর রাত্রে দেখা কোরো। (বেরিয়ে যায়)

    ভূতো। কিছু ঠাওর পাচ্ছিস? এদের ভাবগতিক সব কেমন! আঃ কী সুন্দর দালানখানা রে - জন্মে এমন ঘরে ঘুমোইনি।

    রাখাল। হুঁ।

    ভূতো। একটা ফুল তুলতে কেমন হাঁইমাই করে উঠল -

    রাখাল। হুঁ।

    ভূতো। এদিকে সোনার থালা নিয়ে কারো হুঁশ নেই।

    রাখাল। হুঁ।

    ভূতো। কী ভাবছিস?

    রাখাল। ঘরগুলো দেখলি?

    ভূতো। কোন ঘর?

    রাখাল। কোথাও তালাচাবি নেই। লেপ কম্বল বালিশ ডাঁই করা আছে। ঘটি গামছা তেল সাবান। একবার যদি ভুইঁতরাসির বাজারে নিয়ে ফেলতে পারি -

    ভূতো। কী করে নিবি?

    রাখাল। সেটাই তো ভাবছি।

    ভূতো। হারু মোড়ল ছেড়ে দেবে?

    রাখাল। আমাদের তখন টাকা হবে, টাকা হলে কেউ কিছু বলবে না -

    ভূতো। টাকা?

    রাখাল। টাকা, টাকা। ঐ হারু মোড়লই কত খোশামুদি করে দেখবি। টাকা হলে এবার কাঠি তুলে রাখব, একটু জমিজমা কিনে চাষবাস করে - (বোঝাতে থাকে)

    দশম দৃশ্য

    [বাকশাল।]

    ভূতো। এটাই বুঝি?

    ছিদাম। হ্যাঁ, এই আমাদের বাকশাল।

    ললিতা। আমাদের উত্তরের জমিতে তারাঘরের কাজ শুরু হচ্ছে। ওখান থেকে আকাশ দেখার, তারা দেখার সুন্দর ব্যবস্থা হবে।

    তিনু, সুবল, ছিদাম। বাঃ বাঃ।

    তিনু। আমি সপ্তর্ষি আর কালপুরুষ চিনি।

    ললিতা। ভারি একখান বললে - ও আর কে না চেনে?

    ছিদাম। চারপাশে গাছ লাগানো হবে। কেয়ারি করা মাঠ থাকবে। ছেলেপুলের খেলার সুন্দর জায়গা হবে। আমরাও গিয়ে বসতে পারব।

    ভূতো। এসব কে করবে গো? সরকার?

    তিনু। সরকার আবার কে? তাকে তো চিনি না - খাইদাই, নিজের মনে থাকি -

    দিদিমা। খেলার জায়গা যদি হয়, তাহলে গাছে গাছে দোলনাও লাগিও।

    তিনু। দিদিমা দুলবে নাকি?

    দিদিমা। কেন রে, পারি না ভেবেছিস? তোদের বাবাদের জিজ্ঞেস করিস আমি কেমন দৌড়ঝাঁপ দড়িলাফ - উঃ

    তিনু। কী হল? কী হল? ডাক্তার -

    ডাক্তার। সরো সরো দেখছি -

    রাখাল। আচ্ছা - (দিদিমাকে দেখিয়ে) এসব গয়না কি সত্যি সত্যি সোনার?

    ললিতা। সত্যি সোনার নয়তো আবার কিসের হবে?

    রাখাল। দিদিমা এত গয়না পেল কোথায়?

    ললিতা। কেন - জাদুঘরে নাম লিখিয়ে নিলেই হল - কে হে বাপু - কিছুই জানো না -

    তিনু। হট্টমালার লোক -

    রাখাল। শহরে জাদুঘর আছে শুনেছি - টিকিট কেটে ঢুকতে হয় -

    ছিদাম। টিকিট?

    রাখাল। পয়সা দিয়ে কাটে - ও - পয়সাও তো জানো না -

    ললিতা। পয়সা জানব না কেন?

    রাখাল। জানো? ভূতো -

    ললিতা। ঐ যে গোল গোল চাকতি - জাদুঘরেই দেখেছি। না বাপু, ওসব লাগে না - দেশবিদেশের ভাল ভাল জিনিস রাখা থাকে। যে যা পায় জমা দিয়ে যায়। অনেক বইপত্র থাকে। যার খুশি নাম লিখিয়ে নাও।

    তিনু। হ্যাঁ - ও জাদুঘরে কাজ করে তো -

    ললিতা। তবে এসব সোনাটোনা দিদিমাই পরে - আমরা কেউ আজকাল ফুলের গয়না ছেড়ে ওসব ছুঁই না।

    দিদিমা। ঠিক আছে ঠিক আছে। তোমাদের ওষুধ কদ্দূর?

    ডাক্তার। হয়ে এল -

    নিতাই। দিকদারের রোগ সেরে যাবে তো?

    ডাক্তার। হ্যাঁ, না সারলে আর কেমন ওষুধ? হ্যাঁঃ - এবার চাপো গে দোলনায় -

    দিদিমা। আমার জন্য বলছি নাকি রে? এই যে সব আছে - আরো কত আসবে - তাদের লাগবে না?

    ললিতা। ঠিক কথা।

    তিনু। ঠিক বলেছ দিদিমা।

    দিদিমা। আজকেই একটি এসেছে তো - হ্যাঁ - ঐ ছিদামের বোনের কোলে -

    তিনু। আরে তাই নাকি? (নিতাইকে) বাঃ - তাহলে কাল একটু ভালো মিষ্টির ব্যবস্থা করো -

    ডাক্তার। বাঃ বাঃ - খুব ভালো খবর –

    ছিদাম। আরো ভালো খবর আছে। এই যে দুই নতুন বন্ধু এসেছে আমাদের – (রাখাল আর ভূতোকে দেখায়)

    ডাক্তার। বেশ বেশ। বন্ধুরা কিছু বলবে নাকি বাকশালে? কেমন লাগছে এখানে?

    ভূতো। ভালো লাগছে, ভালো।

    ডাক্তার। আর তুমি?

    রাখাল। বলাবলি আমার আসে না। (হাই তোলে)

    ডাক্তার। আচ্ছা? ঘুম পেয়ে গেছে নাকি? তাহলে সভা শেষ করা যাক, জাতীয় সঙ্গীত – ধরো হে -

    তিনু/ছিদাম/ললিতা। (গান)

      আয় তুলে নিই গলায় গান
      সাত সুরে ভাসাই সাম্পান
      এই মাটি জল রূপকথার
      ভালবাসায় করব স্নান
    (সবাই)

      আয় তুলে নিই গলায় গান
      সাত সুরে ভাসাই সাম্পান
      এই মাটি জল রূপকথার
      ভালবাসায় করব স্নান

      আয়রে বন্ধু আয়রে ভাই
      হাতে ধরে হাত চল সবাই
      মাঠ জুড়ে আয় বীজ বুনি
      ভালবাসার সোনার ধান

      চল নৌকোর নোঙর খুলে
      ভেসে যাই পাল হাওয়ায় তুলে
      দেখি নিয়ে যায় কোন ঠিকানায়
      ভালবাসার জোয়ারটান

      আয়রে বন্ধু আয়রে ভাই
      হাতে ধরে হাত চল সবাই
      মাঠ জুড়ে আয় বীজ বুনি
      ভালবাসার সোনার ধান

    একাদশ দৃশ্য

    [একদিকে দিকদারের ঘর। দিকদার আর দিগম্বর বসে। রাখাল ভূতো ঢোকে। ]

    দিকদার। বাকশাল থেকে আসছ?

    রাখাল। আজ্ঞে হ্যাঁ।

    দিকদার। হট্টমালার হট্টমালী। কেমন লাগছে?

    ভূতো। আজ্ঞে ভালো, খুব ভালো।

    দিকদার। ভালো?

    রাখাল। আমাদের আর ভালোমন্দ কী কত্তা - মুখ্যু মানুষ - সেখানেও খেটে খেতাম, এখানেও খেটে খাব।

    দিকদার। খেটে খাবে -হুঁ? ক ঘণ্টা খাটবে, কত মাইনে - এসব আর ভাবছ না তো? এদেশের জল পেটে পড়েছে কিনা।

    ভূতো। নাঃ - খাবার চিন্তা কী এখানে? অঢেল খাবার -

    দিকদার। তাই বুঝি ভালো? হুঁঃ - এটা গাধাদের দেশ। মূর্খের দল সবকিছু ভাগ করে নিতে চায়। কেন? আমার বুদ্ধি আমার খাটনি - তার ফল সবার সঙ্গে ভাগ করে নিতে যাব কেন হে? পৃথিবীটা দুর্বলদের জন্যে নয়। যারা নিজেরা ভাবতে পারে না, তাদের চলতে হবে বুদ্ধিমানের কথামতো, তাদের হাত কোনদিকে চলবে কতক্ষণ চলবে সে ঠিক করে দেবে। তোমাদের হট্টমালায় এরকমই না?

    ভূতো। আপনি ভুঁইতরাসি যাবেন?

    দিকদার। আমি? আমি কেন যাব? এখানেই এই ব্যবস্থা হবে। যাদের বলার কথাই নয়, শুধু শোনার কথা - তারাও বাকশাল খুলে বকবক করছে। এসব বন্ধ করতে হবে। কিন্তু করার জোর থাকতে হবে। একা একা তো কিছু হবে না। একটা দল বানাতে হবে, বুঝলে হে?

    দিগম্বর। হেই দিকদার, বাইরের লোকের কাছে মুখটা বড্ড বেশি খুলে ফেলছ মনে হচ্ছে।

    দিকদার। বাইরের লোক আবার কে? দলের কথা হচ্ছে দেখছ না?

    রাখাল। আমাদের সিঁধেলদেরও দল ছিল। কিন্তু বখরা নিয়ে ঝামেলা - এ ওর নামে লাগাচ্ছে, ও এর নামে লাগাচ্ছে, এই করেই সব ধরা পড়ল। ন্যায্য পাওনাটা পাব তো কত্তা?

    দিকদার। তোমার স্যাঙাত কী বলে?

    রাখাল। ও আবার কী বলবে? কিন্তু কাজটা কী? টিপসই দিতে পারব না কিন্তু।

    দিকদার। দিগম্বর -

    দিগম্বর। জাদুঘরে যেতে হবে তোমাদের।

    রাখাল। (চমকে) জাদুঘর?

    দিকদার। কী হল? তোমাদের বুঝি পুঁথিপাটাতে নজর?

    রাখাল। ছি ছি - আমরা মুখ্যু মানুষ - পুঁথিপাটা কী করব? আচ্ছা, ওখানে কি অনেক গয়নাগাটি আছে? ডাবওয়ালি পরেছিল।

    দিকদার। গয়না? আশ্চর্য - এত জিনিস থাকতে ঐগুলোর ওপর তোমাদের লোভ? আচ্ছা বেশ, নিও - ওসব আমাদের চাই না। আমরা দেশটাকে আমাদের মত করে চালাতে চাই। তোমরা যদি সাহায্য করো যা চাও নিতে পারো।

    দিগম্বর। এই কাগজগুলো নিয়ে জাদুঘরে যাবে। ভিড় কমে গেলে এখানে-ওখানে একটা করে এমনভাবে সাজিয়ে রাখবে যাতে যে সেখানে বসবে তারই চোখে পড়ে। আর বাইরেও যেখানে ফাঁকা পাবে গাছের ডালে নৌকোর ঘাটে বাড়ির দেওয়ালে - এই নাও - আঠা, পিন - এই দিয়ে আটকে দেবে।

    রাখাল। কাগজ? এমন সব বললেন - ভাবলাম ডাকাতি কি ছেনতাই - কাগজে কী আছে?

    দিগম্বর। ছেনতাইয়ের বাবা আছে। সবাইকে বোঝানো আছে। এই যে এখানে সবাই কত কষ্টে আছে -

    ভূতো। কষ্ট আবার কোথায়? সবাই তো দিব্বি আছে।

    দিগম্বর। আছে, কষ্টে আছে। বুঝছে না। তাই সহজ করে বোঝানো আছে। ধরো এই বাড়িঘর আমজাম খাবার বাসন - এ সব কার?

    ভূতো। কেন - সবার।

    দিকদার। সবকিছুই সবার! হুঁঃ! তার মানেটা কী? কোনোকিছুই কারো নয়। ঢুকল এবার ঘটে?

    ভূতো। কিন্তু -

    রাখাল। আচ্ছা আচ্ছা - সে আপনারা যা খুশি করুন। আমাদেরও দেশ চালানোর ভাগ চাই না। আমাদের ভালোয় ভালোয় ঘরে ফেরার একটা ব্যবস্থা করে দেন।

    দিকদার। সে কী! সেখানে খেতে পাও না, পুলিশে জেলে দেয়?

    রাখাল। না, নিজেদের দেশ তো -

    দিকদার। বটে? আচ্ছা, তোমরা চাইলে ফিরে যেতে পারো। রাত্রে ঘাটে নৌকো রাখা থাকবে। কাজ শেষ হলে চেপে পড়ো। কিন্তু যদি এদিক ওদিক হয়েছে, জ্যান্ত ফিরতে পাবে না। কোনো চালাকি নয়। আমার লোক সব জায়গায় আছে। এর একটা কথা যদি ঘরের বাইরে যায় -

    দিগম্বর। দিকদারের কাজ সব পাকা- এই নাও- (ম্যাপ খোলে) এই হল এখানকার রাস্তাঘাট, এইখানে জাদুঘর - (রাখাল ঝুঁকে পড়ে দেখে, ঘাড় নাড়ে, দিগম্বর চাদর নিয়ে আসে) - আর এর মধ্যে লুকিয়ে বান্ডিল নিয়ে যাবে - (দুজনের গায়ে চাদর জড়িয়ে দেয়)

    (বাজনা চলে। চাদর জড়ানো আরো জনাদুই লোক ঢুকে আসে। দিকদার আর দিগম্বরের সঙ্গে যোগ দেয়। ভূতো চাদর খুলে অন্যদিকে যায়। সেদিকে ছিদাম, তিনু ও অন্যরা ঢোকে। মঞ্চের একদিকে ভূতো ছিদামের সঙ্গে কাজ করছে, কথা বলছে। তিনুর সঙ্গে হাঁটছে। বাকশালের আসরে বলছে।

    অন্যদিকে রাখাল দিকদার আর দিগম্বর আর অন্যরা পরামর্শ করছে, ম্যাপ দেখছে। একসময় রাখাল ভূতোকে আস্তে আস্তে টেনে নিয়ে আসে, ভূতোর অনিচ্ছাসত্ত্বেও। দিগম্বর ভূতোর গায়ে চাদর জড়িয়ে দেয়।)

    দ্বাদশ দৃশ্য

    [দিনের বেলা। জাদুঘর। লোকজন এদিক থেকে ওদিকে যাচ্ছে। চাদর জড়িয়ে রাখাল ভূতো ঢোকে, হাতে কাগজের বান্ডিল।]

    ভূতো। কাজটা ভাল করছিস না।

    রাখাল। তুই থামবি?

    ভূতো। দিকদার লোকটা সুবিধের না। এমন খাসা জায়গা, আর ও কিনা ঘোঁট পাকাতে চায়।

    রাখাল। ঘোঁট কিসের? কী অন্যায়টা বলল শুনি? সবাই মিলে চারবেলা সমান খাবে সমান পরবে কেন? দিকদারের মত লোকও যা খাবে, তিনু ছিদাম - ঘটে একদানা বিদ্যে নেই - এরাও তাই খাবে? সে বুদ্ধি করে নিজের সুবিধে করে নিচ্ছে - তাতে দোষের কী? আর ভয় পাচ্ছিস কেন? এরা আমাদের জেলে দেবে, না ফাঁসি দেবে?

    ভূতো। না, কিন্তু ভারি নিন্দে করবে।

    রাখাল। কী! শোন, তুই আমি না জানি লেখাপড়া, না আছে পয়সাকড়ি - এখন দিকদারের কাছা ধরে ঝুলে পড়ে একটু গুছিয়ে নেব - তাতে আপত্তি কিসের? এই মুখ্যুগুলো সোনাদানার মূল্য বোঝে না - একবার ভুঁইতরাসিতে নিয়ে ফেলি - দেখবি সবার চোখ কপালে উঠে যাবে। গোটা বাজার কিনে ফেলব, সব চাল নুন গোলায় তুলব, ইচ্ছেমত দাম চড়াব -

    ভূতো। আমি যাব না।

    রাখাল। কী! কী বলছিস কী?

    ভূতো। আমি এখানেই থাকব, তুই যা।

    রাখাল। ঝামেলা করিস না। উল্টোপাল্টা কিছু করলে দিকদারের লোক ছেড়ে দেবে ভেবেছিস? আর তুই ভাবছিসই কেন দিকদার যা চায় তাই হবে? ঢাল নেই তরোয়াল নেই, কয়েকটা কাগজ ছড়িয়ে রাজত্ব করা যায়? আচ্ছা - তোর আর কাগজ ছড়িয়ে কাজ নেই, আমাকে দে - তুই যা, যা করার আমিই করছি –

    (ভূতো রাখালকে কাগজগুলো দেয়)

    ভূতো। তুইও ওসব ঘেন্নার জিনিসে হাত দিস না। দেখলি তো ডাবওয়ালি ছাড়া কেউ ওসব ছোঁয় না।

    রাখাল। তবে কি ফিরে গিয়ে ফের ঘানি টানব?

    ভূতো । আজই সরাবি নাকি?

    রাখাল। যদি সুবিধে পাই - (থেমে) তুই যা, গিয়ে বরং নৌকোর ব্যবস্থা দ্যাখ – কাজ সেরে এখানকার পাট চুকিয়ে লম্বা -

    (ভূতো বেরিয়ে যায়। ললিতা ঢোকে।)

    ললিতা। আরে হট্টমালী যে। (কাজে বসে পড়ে)

    রাখাল। দিকদার আমাকে গাছ ছাঁটার কাজে লাগিয়েছে, কিন্তু ও আমার একদম আসে না। তাই জাদুঘরে কাজ করতে এসেছি।

    ললিতা। বেশ তো, কাজ শেখো। কিন্তু এখানে অনেক দুর্লভ জিনিসপত্র।

    রাখাল। ঐ গয়নাগাটি তো? সেগুলো তালাটালা দেয় না?

    ললিতা। সাবধানে নাড়াচাড়া করবে। টানাটানি করে আবার কোণা ছিঁড়ে দিও না।

    রাখাল। কোণা? কিসের কোণা?

    ললিতা। এক হাজার দু হাজার বছরের পুরোনো ছবি নকশা পুঁথিপত্র - ক্ষতি হলে বেদম সাজা -

    রাখাল। সাজা? কী সাজা?

    ললিতা। নিজের কাজ সেরে রাত দশটা অবধি জাদুঘরের কাজ করতে হয়।

    রাখাল। রাত দশটা অবধি খোলা থাকে?

    ললিতা। তা থাকবে না? কত পড়ুয়া আছে - রাত জেগে না পড়লে যে তাদের ঘুম হয় না। তবে দশটার সময় সবাইকে বের করে ঘর বন্ধ করে দেওয়া হয়।

    রাখাল। রাত্রে পাহারা থাকে নিশ্চয়?

    ললিতা। থাকে বৈকি। নইলে পাগলগুলো আবার ঢুকে বই নিয়ে বসবে না ভেবেছ!

    রাখাল। কজন পাহারাওলা থাকে?

    ললিতা। কেন বলো তো? বইটই লিখছ নাকি?

    রাখাল। না - সব জেনে রাখা ভালো।

    ললিতা। দিকদারের সঙ্গে তোমাদের কোনো কথা হয়েছে নাকি?

    রাখাল। কিসের কথা? ও - একবার ডেকে আমাদের দেশের খবরটবর নিচ্ছিল বটে।

    (রাখাল একটা পুরোনো চিনেমাটির বাসন ভেঙে ফেলে)

    ললিতা। এহে - দেখো কী করলে। বললাম সাবধান। এটা পাঁচশো বছরের পুরোনো।

    রাখাল। ও - আমি ভাবলাম নতুন বাসন ভাঙলাম নাকি।

    ললিতা। সাজার কথা খেয়াল আছে তো?

    রাখাল। হ্যাঁ, নিয়ম তো মানতেই হবে।

    (ললিতা বেরিয়ে যায়। কাজ চলছে। আলো কমে। রাত হয়। দশটা বাজে। সবাই বেরিয়ে যাচ্ছে। রাখাল এক কোণায় লুকিয়ে পড়ে। দরজা বন্ধের শব্দ হয়। রাখাল বেরিয়ে এসে গয়নাগাটি নেয়। চাদরে ফেলে বাঁধে। তারপর একটা জানলা খুলে লাফিয়ে বেরোয়। একটা পুঁটলি পড়ে যায়।)

    সুবল। ও ভাই, তোমার জিনিস পড়ে রইল -

    মথুর। ও ভাই -

    (ছুটতে শুরু করে। সোরগোল।)

    ত্রয়োদশ দৃশ্য

    [নৌকার ঘাট। দিকদার, দিগম্বর, ডাক্তার।]

    ডাক্তার। কী? এখন কেমন লাগছে?

    দিকদার। শরীর মন সব ঝরঝরে হয়ে গেছে। খাসা ওষুধ আপনার ডাক্তারবাবু। উঃ - কী সব উল্টোপাল্টা চিন্তা রাতদিন -

    (রাখাল ছুটে এসে ঢোকে।)

    রাখাল। ভূতো, ভূতো -

    দিগম্বর। ঐ যে, ঐ যে - আরেকটি এসেছে - দাও ঠুসে।

    (পেছনে অন্য পুঁটলি নিয়ে সুবল, মথুর ঢোকে। দিকদার রাখালকে ধরে ফেলে।)

    রাখাল। আমার নৌকো -

    দিকদার। হচ্ছে হচ্ছে। আসুন আসুন, লাগান একে আমার চেয়েও কড়া ডোজ।

    (ডাক্তার ইঞ্জেকশন নিয়ে এগোয়। রাখাল হাত পা ছোঁড়ে।)

    রাখাল। সুই দিও না, সুই দিও না - ভূতো -

    দিকদার। দেখছেন কী ডাক্তারবাবু? এর শাকরেদের রোগ এখানকার জলহাওয়া লেগেই সেরে গেছে। কিন্তু এ হতভাগার ব্যামো আমার চেয়েও কড়া।

    দিগম্বর। হ্যাঁ হ্যাঁ- দিকদারের ব্যামোই যখন সেরে গেল, আমাদেরও সারল- তিনগুণো ওষুধ দিলে এ ব্যাটারও সেরে যাবে।

    (ভূতো ঢুকে দেখে।)

    ভূতো। দাদা, নৌকো -

    রাখাল। আমি বাড়ি যাব -

    ডাক্তার। চেপে ধরো, চেপে ধরো -

    (ডাক্তার ইঞ্জেকশন দেয়। রাখাল ছিটকে যায়। ভূতো রাখালকে ধরে নিয়ে বেরিয়ে যায়। সবাই হাসে, অন্যদিকে বেরিয়ে যায়।)

    (রাখাল আর ভূতো নৌকো করে ঢোকে। নৌকো বাইতে থাকে।)

    ভূতো। কোনদিকে দাদা?

    রাখাল। সামনে – স্রেফ সামনে।

    ভূতো। সুইয়ের ব্যথা নাকি দাদা?

    রাখাল। না, ব্যথা নয়। কেমন হালকা হালকা লাগছে।

    (জল বাড়ছে)

    ভূতো। সামলে -

    রাখাল। ঘূর্ণি -

    ভূতো। দাদা রে -

    রাখাল। আবার -

    চতুর্দশ দৃশ্য

    [রাখাল ভূতো শুয়ে আছে। গ্রামের লোক দল বেঁধে দাঁড়িয়ে। ]

    পাতু। (নাড়ি দেখে) নাও মোড়ল - তোমার মরা মানুষ জ্যান্ত ফিরে এল।

    হারু। যাক বাবা - ঘাড় থেকে পাপের বোঝা নামল। হরি হরি।

    (দুজন চোখ খোলে। উঠে বসে।)

    রাখাল। দোহাই মোড়ল - আমাদের ফাটকে দিও না।

    হারু। কেন? ফাটকে কেন?

    রাখাল। ছি ছি কী দুর্মতি বলো - তোমার ঘরে কিনা সিঁধ দিয়েছিলাম -

    হারু। তার জন্যে পেটনাইও তো কম খাওনি।

    রাখাল। ঐ ব্যবসা ছেড়ে দিলাম মোড়ল - একটা বারোমেসে কাজ দাও না -

    ভূতো। আমিও আর ও কাজ করব না -

    (মধু মোড়লের কানে কানে কিছু বলে)

    হারু। রাত জাগতে পারবে?

    রাখাল। কী যে বলো - এতদিনের অভ্যেস - বরং দিনে জাগতে বললে মুশকিলে পড়ব -

    হারু। তুমি তাহলে চৌকিদারিই করো।

    রাখাল। চৌকিদারি? আমি?

    হরি। হ্যাঁ - এটা ভাল বুদ্ধি করেছ মোড়ল। ঘাঁতঘোঁত সব তোমার মত কে জানবে বলো?

    (দাদু ঢোকে।)

    মধু। দাদু এসে গেছে, দাদু এসে গেছে।

    দাদু। কই কই কোথায়? এই যে - রাখাল না? সোনা ছেলে - কোথায় ছিলি বাপ?

    পাতু। রাখাল চৌকিদার।

    দাদু। অ্যাঁ - তাই নাকি তাই নাকি? বেশ বাবা বেশ। চাকরি হল, এবার সংসার করো, সুখে থাকো।

    মধু। আরেকজন বাদ যাচ্ছে দাদু -

    দাদু। ও - তাই তো। ভূতো? ভূতো চৌকিদার?

    ভূতো। না না - আমি চৌকিদার না।

    দাদু। তবে?

    ভূতো। আমাকে তোমার বাগানে কাজ দেবে? এই গাছ পাতলা করা, গাছ লাগানো, সার দেওয়া, জল দেওয়া?

    দাদু। বেশ তো, বেশ। আমি তো আর পারি না। দিন দিন জঙ্গল হয়ে যাচ্ছে। লেগে পড়ো।

    পাতু। যাক - সব ভাল যার শেষ ভাল। এবার তাহলে মরসুমে আমজামটা পাওয়া যাবে।

    পঞ্চদশ দৃশ্য

    [রাত। ভূতো একটা লণ্ঠন নিয়ে ঘুরে ঘুরে গাছ দেখছে। বাইরে থেকে রাখালের চৌকিদারি হাঁক শোনা যায়। রাখাল ঢোকে।]

    রাখাল। হেই - কে? (লণ্ঠন তুলে ধরে। ভূতোকে দেখে) তুই?

    ভূতো। এই যে - বীজ থেকে আগলে আগলে বড়ো করা - রাত্রেও নিশ্চিন্তি নেই - মাঝে মাঝে আসি, দেখি ওরা ঠিকঠাক ঘুমোল কি না -

    রাখাল। হুঁ -

    ভূতো। ঐ গাছটার গায়ে কাঠঠোকরার গর্ত - আর ঐ আমগাছের ডালে একটা টুনটুনির বাসা আছে - ডিম থেকে বাচ্চা হবে দু-একদিনে -

    রাখাল। ভূতো - আমরা কি স্বপ্ন দেখলাম?

    ভূতো। অমন লম্বা স্বপ্ন? দুজন মিলে স্বপ্ন?

    রাখাল। কিন্তু দ্যাখ - তন্নতন্ন করে তো তল্লাটটা খুঁজলাম, নৌকো নিয়ে কোথায় কোথায় গেলাম না - কিন্তু সেই জায়গাটা - কমলামও তো দেখি না কোনো বাজারে -

    ভূতো। বাজার?

    রাখাল। কোথায় যে গেল -

    ভূতো। কে জানে - আরো খুঁজতে হবে মনে হয় -

    (বাজনা শুরু হয়। দুজন লণ্ঠন তুলে ধরে। পেছনে আলোয় একে একে সেই দেশের মানুষজন হেঁটে যায়, একদিক দিয়ে পাটাতনে ওঠে, আবার নেমে যায়। রাখাল আর ভূতো এ ওর দিকে তাকিয়ে হাসে।)



    অলংকরণ (Artwork) : পরবাস ডিজিটাল আর্ট
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments