আলোকজাত
বাইরে বেরোনোর জন্য
একটা কথা মাথার মধ্যে
পরশু থেকে
আমাকে বিরক্ত করে মারছে।
কি ভাবে বলব?
এ তো গল্প নয়
যে শুরু থেকে শুরু করে
শেষে গিয়ে শেষ করব।
উচ্চমনা রসিক আর অন্যমনা পাঠকের
মাঝখান দিয়ে
কবিতার গাড়িও আমি
চালাতে শিখিনি।
যদি হত অমলকান্তি,
হাতে থাকত নীরেনের রৌদ্রের ফলা,
সে হত অন্য কথা!
কিন্তু আমিও অক্ষম,
কথাটাও অধুনা অচল।
বলতে চাই আলোকের কথা।
আলোকজাত ছিল আমার বন্ধু।
ও ভাবত
ও নিজেই ওর ঘর।
মানে
চেয়ার টেবিল খাট আলমারি
এমন কি ঘরের মেঝে ছাদ
এই সব কিছু নিয়েই ছিল
আলোকের আমি।
ওকে জিগ্যেস করলাম—
ওই দেয়ালে
ওই যে দরজাটা
কি আছে তার পেছনে?
আলোক বলল—
জানি না রে,
হয়তো কিছুই নেই।
এই পারে আমি আছি।
পরশু রাতে
আমি যখন আলোকের ঘরে গেছি,
ও তখন সাবধানে
আস্তে আস্তে
দরজাটা খুলল।
একটা সূচ্যগ্র মুহূর্তে
বাইরে থেকে এল
বাঁধ-ভাঙা চোখ-ধাঁধানো আলো।
সেই অন্ধ-করা আলোয়
মিশে গেল সব কিছু,
মিশে গেল আলোক।
বন্ধ হল চোখ আমার।
শুনলাম
ফিসফিস করে আলোক বলল—
আসি রে।
তারপর দরজা বন্ধ।
চোখ মেলে দেখি
চেয়ার টেবিল খাট আলমারি
মেঝে ছাদ
সব কিছু যে কে সে-ই।
আলোককে
আর দেখতে পেলাম না।
প্রার্থনার শিক্ষক চাই
একটা মানুষ খুঁজছি
যে আমাকে শেখাবে
কি ক’রে প্রার্থনা করতে হয়।
(নিজের জন্য নয় —
সেটা হবে চরম অবিশ্বাস।)
সেই সব মানুষের জন্য প্রার্থনা
যারা দুঃখে বা অসুখে ভুগছে।
অথবা সুখের ঘন কুয়াশায়
যারা কিচ্ছুটি দেখতে পাচ্ছে না।
কিম্বা যারা বিদ্বেষে নেশাতুর।
যারা গোষ্ঠীর পরিচয়ে বাঁধা।
অথবা যারা অপদার্থ,
দুমুঠো টাকার জন্য বেচে দেয়
অজাতক শিশুদের ভবিষ্যৎ।
সমস্ত প্রাণীর গলায় পা দিয়ে
যারা মানুষের মহিমা দেখায়।
যারা খুনী, ধর্ষক, প্রবঞ্চক।
বা যারা মিথ্যুক, স্বার্থপর, ভিতু।
যারা অসহিষ্ণু ধর্মের দাস,
ছদ্মবেশীর হাতে পুতুল বা
রাজনৈতিক ব্যবসায়িক পণ্য।
কিম্বা যারা বুদ্ধি বন্ধক রেখেছে
একটু উষ্ণ সরলতার জন্য।
সত্য যাদের কাছে অবান্তর বোঝা,
গুজবেই চমৎকার কাটে দিন।
শত্রু-মিত্র নির্বিশেষে
আমি তাদের সবার জন্য
প্রার্থনা করতে চাই।
আমার বাবা মা দাদা দিদি
আমার স্কুল কলেজ শিক্ষক
আমার সমাজ দেশ সভ্যতা
কেউ আমাকে, কেউ আমাকে
প্রার্থনা করতে শেখায়নি।
তাদের শিক্ষা অনুযায়ী
আখের গোছাতে গোছাতে
সময় প্রায় শেষ হয়ে এল।
কে শেখাবে আমাকে
প্রার্থনার সহজ প্রণালী?