• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৭১ | জুন ২০১৮ | কবিতা
    Share
  • দু'টি কবিতা : নিরুপম চক্রবর্তী



    || অস্‍‌উইৎস-বার্কেনাউ-ক্র্যাকাও ২০১৮ ||

    আমার কবিতা যারা ইতিপূর্বে পড়িয়াছ, তাহারা তো অবশ্য বুঝিবে,
    কবিতার কেন্দ্রস্থলে ক্র্যাকাও নগরে আজ পূষা তার শেষ বিম্ব আঁকে,
    প্রাচীন প্লাজাটি ঘিরি বিদায়ী রৌদ্রের সেই নারেঙ্গী কিরণে
    রূপকথা করিয়া বপন
    কবিতারা জন্ম লয় সহস্র ধারায়।
    ভ্রমিছে অজস্র নরনারী
    এইস্থানে মার্কেট স্কোয়ারে,
    সকলে আনন্দে হাসে, সাবানের বুদ্বুদ আকাশে উড়ায়
    (আহা সে বুদ্বুদে পড়ে বিদায়ী সূর্যের আলো
    রামধনু রং ঠিকরায়!)

    তথাপি কবিরা জানে এইস্থানে একদিন অন্ধকার খসালে নির্মোক
    কে যেন রমণী এক, চক্ষুহীন, একদৃষ্টে মোর পানে মেলিবে নয়ন।
    তার গান শব্দহীন, শ্রবণে পশিবে তবু
    আমি তাহা প্রাণ ভরি লব।
    সে সুরের অবিশ্রাম ধারা
    অস্‍‌উইৎস বার্কেনাউ পার হয়ে মেশে নীলাকাশে:
    আমি তাহা হৃদয়ে জড়াবো,
    দুঃস্বপ্ন করিব পান, হে প্রাচীন ফ্যুয়েরার
    তোমাদের ফেলে যাওয়া গ্লাসে।

    তারপরে কাহার মরণ?
    সেই রমণীর সাথে দ্যাখা হয়, তার সাথে দ্যাখা হলে পরে
    ‘একা দেখি কুলবধূ, কে বট আপনি?’
    যেমতি শুধায়েছিল একদিন ঈশ্বরী পাটনী
    তেমতি শুধাবো আমি, আসিবেনা উত্তর তাহার,
    জানিবোনা এ রমণী ইহুদীই ছিল কিনা,
    ন্যূনপক্ষে কম্যুনিস্ট, জিপসি অথবা সমকামী;
    আসিয়াছে নগ্নপদে ফ্যুয়েরার মন্দিরে তোমার
    পাদুকা নিষিদ্ধ তাই, জুতা পায়ে প্রবেশ নিষেধ,
    ব্যতিক্রম কেহ নও, হও নর, হও নারী, বৃদ্ধ, শিশু অথবা কিশোর
    অস্‍‌উইৎস বার্কেনাউ দুই গ্রামে সুরম্য সবুজে
    গ্যাস চেম্বারের পাশে পরিত্যক্ত জুতাগুলি আমাদের মগ্ন স্বপ্নে
    পুষ্পের মতন ফুটে আছে।


    || যুদ্ধবিরতি ||

    যেন কার দীর্ঘশ্বাস কেঁপে ওঠে ডানার ভেতরে
    প্রসাধনহীন পাখি জানে তাকে উড়ে যেতে হবে।
    যেন কার দীর্ঘ ছায়া ভেসে আছে চরাচর ছুঁয়ে
    নিষিদ্ধ আকাশে তাকে সারারাত শিস দিয়ে দিয়ে
    খুঁজে গেছে স্নাইপার বুলেট।
    তারাও নিঃস্পৃহ হল, স্তব্ধ হল; সমুদ্রে রক্তাভ ঢেউ এঁকে
    বিষণ্ণ কামানগুলো এতক্ষণে সারিবদ্ধ বিশ্রামের আলস্যে মজেছে।

    হাতে খুব সামান্য সময়।

    ভৌতিক শিবিরগুলো থেকে
    রাশি রাশি বিপন্ন কঙ্কাল তাই সীমান্ত পেরিয়ে ছোটে
    চরাচর ঢেকে দিয়ে নির্বিবাদ আশ্রয়ের খোঁজে।
    নীলাভ চাঁদের আলো ডানায় পড়েছে পাখি
    উড়ে যাও কিছুদূর আরও
    আনন্দ ছড়িয়ে যাও, আলোকের গুঁড়োগুলো এখানে ছড়াও যদি পারো।
    রাত শেষ হয়ে এলো, আবার তোমাকে
    খুঁজে খুঁজে শিস দেবে সন্ধানী স্নাইপার বুলেট
    আবার কামানগুলো জেগে উঠে লাল ঢেউ
    এঁকে যাবে সমুদ্রের বুকে।
    কবিতার সৌধগুলো চূর্ণ হবে বিস্ফোরণে;
    তবু মাটির সামান্য নিচে সার সার মৃত মানুষেরা
    শুধু তোমাকে ভরসা করে আলো খুঁটে আজও বেঁচে আছে।

    উড়ে যাও যতদূর পারো।




    অলংকরণ (Artwork) : অলংকরণ - লেখক
  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)