দেশে তখনকার দিনে শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গেই বিভিন্ন জায়গা থেকে কুমোররা আসতো পাতকুয়োর পাট বা চাক তৈরি করতে। বিনিময়ে তাদের রোজগার হত। গ্রামের কোন এক বাড়ির কর্তার সঙ্গে কথাবার্তায় টাকাপয়সার হিসেব রফা করে নিয়ে পতিত জমিতে অস্থায়ী ঘর তৈরি করে বাস করত। গ্রামের বসতবাড়ি থেকে দুরত্বে হত তাদের অস্থায়ী আস্তানা। সেখানেই তারা তৈরি করত কুয়োর পাট বা চাক। তারপর ফাঁকা ফসলের ক্ষেতে শুকোতে দিত সেইসব কাঁচা চাক। সেগুলো রোদে শুকিয়ে নেবার পর সব চাক একত্রিত করে সাজিয়ে গোলাকার একটি স্তূপ করে তার ওপর কাদামাটির প্রলেপ দিয়ে কাচা চাকগুলিকে ঢাকা দেওয়া হত। নীচের দিকে গর্ত করে আর সাজানো চাকের মাঝে মাঝে রাখা ফাঁকা জায়গায় কাঠ দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হত। দীর্ঘদিন লাগত ভিটভিটে আগুনে চাক পোড়ানোর কাজে। এখনকার দিনে যাকে বলে ভাটায় আগুন দেওয়া, দেশে আমরা একে বলতাম ‘পুইনে’ আগুন দেওয়া। তিন,চার সপ্তাহ পরে শেষ হত একদফা চাক পোড়ানোর কাজ। বর্ষা আসার সঙ্গে সঙ্গেই মাটির কাজ বন্ধ হয়ে যেত,কুমোররা কিছু রোজগার করে ফিরে যেত নিজেদের গাঁয়ে।
চাক পোড়ানোর জন্য যখন চাক সাজানো হত তখন একটা চাকের সঙ্গে আরেকটা যাতে জুড়ে না যায় তার জন্য মাঝে মাঝে সামান্য ফাঁক রাখতে হত। সেই ফাঁকে ছোট ছোট তক্তির মত গোল কাদামাটির তৈরি রোদে শুকনো চাকা গোঁজ দেওয়া হত। ভাটায় আগুন নিভলে পোড়া চাকের স্তূপ থেকে চাক বের করার পর সেই গোল গুটিগুলো আর কোন কাজে লাগতোনা। আমরা ছোটরা ‘পুইনে’র কাছে জড়ো হতাম সেগুলি সংগ্রহ করার জন্য। সেগুলি আমাদের গুটিখেলার কাজে লাগত। খেলায় দুজন খেলোয়াড়ের কাছে পাঁচটি করে গুটি থাকতে হত। তাই সেগুলো জোগাড় করতে ছোটদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যেত।
মনে পড়ে গেল একবার দেশের ভোটের কথা। ভোট কথার অর্থ তখন কিছুই বুঝতাম না। এখনকার বাচ্চারা যেমন ভোটের প্রতীকচিহ্ন দেখেই বুঝতে পারে কোন দলের লোক, কোন দলের কী চিহ্ন, আমরা সে’সব বিষয়ে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ ছিলাম। কারণ এত সমারোহে প্রচার তখন ছিল না।
অনেক পরের একদিনের কথা মনে পড়ে গেল এ প্রসঙ্গে। তখন আমার বাস এদেশে। একবার ভোটের মরসুমে আমার চার বছরের ছোট্ট ছেলেটি ভোট উৎসব মুখরিত পাড়ায় প্রতীক চিহ্নের একটি কাগজ কুড়িয়ে এনে তার রাজনৈতিক বিরোধী পক্ষের সমর্থক পিতাকে সেই চিহ্ন দেখিয়ে বলেছিল এই চিহ্নে ভোট দেবে, বুঝলে। পরিবেশ আর সময় পরিবর্তনের এই তো ফল। যাক, আবার আসি পুরোনো দিনের কথায়।
তখন ব্রিটিশ শাসনের অন্তিম অবস্থা আসন্ন। পূর্ববঙ্গে ভোট। যদিও তখন দেশভাগ হয়নি। সবটাই ছিল বঙ্গদেশ। দেশের ভোটে প্রাপ্তবয়স্ক গিন্নিরা পাল্কি চড়ে ভোট দিতে যাবেন ক্রোশ দুই দূরে একটি হাইস্কুলে। দিদি আর আমি ব্যস্ত, কখন কার বাড়িতে পাল্কি ঢোকে। আমরাও সাথে যেতে পারি কিনা তাও ভাবছি। তবে সেসব কিছুই হয়নি। আমরা তখন খুবই ছোট। বড়দের মধ্যে ভোট নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। লাল পাগড়িওয়ালা বরকন্দাজের সঙ্গে একজন লোক এসে বাড়ি বাড়ি ভোটপ্রার্থীর নামাঙ্কিত ভোটের কাগজ বিলি করে গেল। আমি আর দিদি বাড়ি বাড়ি ঘুরছি আর ভোটের কাগজ জোগাড় করছি। ভোট হলেও গ্রামগঞ্জে সেটা আমাদের কাছে ছিল তখন একটা উৎসব। যাই হোক নির্দিষ্ট দিনে বাড়ির মহিলারা স্নান সেরে, খাওয়া দাওয়া সেরে তৈরি। এক এক বাড়িতে পালকি ঢুকছে মহিলাদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাবার জন্য। আগে পিছে দুজন লোক আর দুজন বেহারা পালকি নিয়ে ভোটকেন্দ্রের দিকে ছুটছে। এক এক পালকিতে দুজন করে যাত্রিণী। ছোটরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছে আর তামাশা দেখছে। গ্রামের নিস্তরঙ্গ জীবনে এ যেন আরেক উৎসব লেগেছে তাই ছোটদের মনে আনন্দ। এবার পাল্কি এল আমাদের বাড়ি। ঠানদি আর বড় বৌঠান এক পালকিতে চেপে চললেন ভোট দিতে। দিদি আর আমি পিছে পিছে ঘুরছি আর ভাবছি আমাদের সঙ্গে নেবে কিনা? পালকিতে চাপার সময় ঠানদির হাতে দেখলাম একটা ন্যাকড়ার পুঁটুলি। সন্দেহ হল পুঁটুলিতে কী আছে? দিদিকে জিজ্ঞেস করলাম ‘দিদি ঠানদি পুঁটুলিতে করে কী নিয়ে যাচ্ছেরে?’ দিদি সোজা আমায় বলে দিল পুঁটুলিতে ভোট নিয়ে যাচ্ছে, ওদের দেবে বলে।
আমার কিন্তু সন্দেহ গেল না। দুপুরের খাওয়াদাওয়া সেরে সাথীদের নিয়ে গিয়ে জড়ো হলাম গ্রাম ছাড়িয়ে, ক্ষেত পেরিয়ে, সরকারি সড়কের কাছাকাছি এক প্রকাণ্ড বুড়ো বটগাছের তলায়। ভোটদাতাদের ফেরার প্রতীক্ষায় অপেক্ষা করছি।
ক্রমে বেলা পড়ে এল। দেখতে দেখতে দুএকটি করে পাল্কি ফিরতে লাগল গ্রামে। আমরাও প্রবল উৎসাহ নিয়ে ছুটছি পাল্কির পিছুপিছু। আমাদের বাড়ি পাল্কি এসে নামার পরে দেখলাম ঠানদি হাতে পোঁট্লা নিয়ে নামলেন। জানতে পারলাম ঠানদির পুঁটুলিতে ছিল পানসুপুরি।
ছোটবেলায় মামাবাড়ি যাওয়াটা ছিল খুব আনন্দের ব্যাপার। শুকনোর সময় যেতাম পাল্কিতে বা ছাউনি ঢাকা গরুর গাড়িতে। বর্ষার সময় যাওয়া হত ছইঢাকা নৌকোয়। মনে পড়ে একবার মামার বিয়ে উপলক্ষ্যে মা, আমি, দিদি আর আমার ছোড়দা নৌকোপথে চলেছি মামার বাড়ি। পটেশ্বরী আর ফুলেশ্বরী নামে দুটি নদী দিয়ে ঘেরা ছিল মামাদের গ্রাম। শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি সময়। নদীনালা, খালবিল জলে পরিপূর্ণ। বিশাল বিস্তৃত ফাঁকা নীচু এলাকা বর্ষার জলে থইথই করছে। নদীর দুপাশের দৃশ্য দেখতে দেখতে চলেছি। নৌকা এগিয়ে চলেছে। ক্রমে আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে গেল আর নামল বৃষ্টি। মাঝিদের সাবধানবাণী শুনে আমরা ছইয়ের ভিতরে ঢুকে কাঁথা গায় দিয়ে শুয়ে পড়লাম। ক্রমে নৌকা এসে পড়ল একটি ‘হাওড়’-এ। ‘হাওড়-এ’ নৌকা ঢোকার মুখে মাঝিরা একবার বদর বদর বলে চীৎকার করে কপালে জোড় হাত ঠেকিয়ে অতি সন্তর্পণে হাওড়ের কিনারা ঘেঁষে নৌকা চালিয়ে দিত। আমাদের মাঝিও তাই করলো আর হাওড় পার হতে এগোল।
হাওড়ের কাছে সমস্ত পাটক্ষেত ছিল জলমগ্ন। নৌকা চলেছে পাটক্ষেতের পাশ দিয়ে। গাছের গায়ে নৌকা লেগে ঘস ঘস্ শব্দে জেগে উঠে নৌকার ছইয়ের ফাঁক দিয়ে চেয়ে দেখি হাওড়ের কী বীভৎস রূপ? সমুদ্র কেমন সে বিষয়ে আমাদের তখন কোন ধারণা ছিল না। কিন্তু হাওড়ের দুরন্ত জলরাশি দেখে মনে হল এই বুঝি সমুদ্র। জলের কাছেই কোথাও কোথাও দূরন্ত বেগে ছুটে আসা নদীনালার জলের ধাক্কায় বিশাল আকৃতির ঘূর্ণিপাক সৃষ্টি হচ্ছে। অসতর্ক হলেই নৌকা চলে যেতে পারে হাওড়ের ঘূর্ণির প্যাঁচের মধ্যে। তাহলে আর নৌকার হদিশ চিহ্ন মিলবে না, কোথায় তলিয়ে যাবে তার ঠিক নেই। গ্রামেগঞ্জে নদীপথে যাত্রীসহ কত নৌকা যে এভাবে হাওড়ের ঘূর্ণিপাকে পড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে তার ইয়ত্তা নেই।
দিকশূন্য বিশাল বিস্তীর্ণ জলরাশিতে উদ্দাম আলোড়ন উঠছে এলোমেলো মাতাল হাওয়ায়। হাওড়ের জলের ঘূর্ণির প্যাঁচে পড়ে কত নৌকাই ভেঙে খান খান হয়ে যেত, কাঠগুলি ভেসে যেত দিক্দিগন্তে। তবুও সাহসে বুক বেঁধে হাওড়ের আলোড়িত প্যাঁচালো জলরাশির সঙ্গে দুরত্ব বজায় রেখে অতি সন্তর্পণে পার করে নিয়ে যেত যেত বাংলার সুদক্ষ সাহসী মাঝিরা। সেইরকম এক সুদক্ষ মাঝিই আমাদের নৌকা বাঁচিয়ে নিয়ে গেল, পৌঁছে দিল মামার বাড়িতে।
মামার বাড়ি যাওয়ার পথের এই হাওড়ের নাম ছিল ‘জালিয়ার হাওড়’। পুর্ববঙ্গে নানা নদীতে এরকম নানা নামের হাওড় ছিল যার মধ্যে একটির নাম ছিল ‘গণেশের হাওড়’। শোনা যায় ‘গণেশের হাওড়’ নাকি ছিল ভয়ানক বিপজ্জনক।
জলেজঙ্গলে ভরা নদীনালার দেশে মানুষ আর মাঝিরা এভাবেই নিত্যদিন ভয়ঙ্কর প্রকৃতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেঁচে থেকেছে, কিন্তু মানুষের ভয়ঙ্করতার সামনে দাঁড়াতে পারেনি। ভিটেছাড়া হয়েছে একসময়, বিদেশীদের চক্রান্তে। প্রাণ হাতে করে পালিয়ে গেছে যে যেদিকে পেরেছে।
শুক্নোর দিনে যখন গো-যানে বা পালকিতে যাতায়াত করা হত তখন শুকনো মাঠের মাঝে মাঝে দেখা যেত বর্ষার জলের তোড়ে ভেসে যাওয়া জীবজন্তুর আর মানুষের মৃত কঙ্কাল, ভাঙা নৌকার কাঠ। হেমন্তে কচি উদ্ভিদে ছেয়ে থাকা বিলের জমি হত অগুণতি গৃহপালিত তৃণভোজী পশুর চারণভূমি। হেমন্তের রূপ মানুষের মন থেকে মুছে দিত বর্ষার প্রলয়ঙ্করী রূপকে। মজার, আর উপভোগ্য হত হেমন্তের দিনগুলি।
বিপদ পাড়ি দিয়ে নৌকায় মামার বাড়িতে পৌঁছলাম যথাসময়ে। মামাদের বারবাড়ির এলাকা ছাড়িয়ে ছিল জনসাধারণের পায়ে হাঁটা পথ। পথের লাগোয়া ছিল এক বিশাল দিঘি। দিঘির ধার ঘেঁসে ছিল একটি বিরাট আমগাছ। এই আমগাছের আমগুলো হত এক সের ওজনের(এখনকার দিনের এক কিলোর থেকে কিছুটা কম ওজনের)। তাই গাছটির নাম ছিল ‘একসেরি’ আম গাছ। গ্রামের সামনে দিয়ে বইত পটেশ্বরী নদী। বর্ষার জলে ফুলেফেঁপে ওই দিঘি নদীর সাথে একাকার হয়ে যেত। তখন নৌকাপথের যাত্রীদের নৌকা বাঁধা হত সেই একসেরি আমগাছের মোটা কাণ্ডের সাথে।
নির্দিষ্ট দিনে মহা ধূমধামে মামার বিয়ে হয়ে গেল। তখনকার দিনে বিয়েবাড়িতে বাজনা আনা হত। তাতে থাকত জয়ঢাক,বাঁশি। বাঁশির সুর ছিল শোনার মত। এখনকার দিনের ব্যান্ডপার্টির মত গগনবিদারী আওয়াজ ছিল না সেসব বাজনায়। সঙ্গতি অনুসারে কোন কোন বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠানে নহবৎ বসানো হত। রৌশন-চৌকি, জলতরঙ্গ এসব বাজনার ব্যবস্থার কথা শুনেছি বটে, তবে তা চোখে দেখার বা শোনার সৌভাগ্য আমার হয়নি।
বাজনা ছাড়াও বিয়ে বাড়িতে বসত গানের মজলিশ। আমার মামার বাড়ি ছিল গানের বাড়ি। মামাদের রক্তের সম্পর্ক যেদিকেই গেছে সেদিকেই প্রত্যেকেরই সুন্দর গানের গলা ছিল। মামাবাড়ির বিয়েতে গানের মজলিশ অবশ্যই বসত। মামার বাড়িতে একটি কলের গানও ছিল। সেটিতে রেকর্ডে গান বাজত।
মামার বিয়েতে একটি নূতন জিনিস দেখেছিলাম--হাউই বাজি। বারুদ ভর্তি লোহার চুঙ্গির মোটা দিকটা মাটিতে বসিয়ে ছুঁচলো দিকটা ওপর দিকে রাখা হত। একটি টিকে জ্বালিয়ে সেই চুঙ্গির তলার দিকে রাখা হত,আর টিকের আগুন থেকে বারুদঠাসা চুঙ্গির নীচে আগুন লেগে যেত। বারুদে আগুন লাগতেই সশব্দে আওয়াজ তুলে আগুনের গোলার মত হাউইটি আকাশপানে ছুটে যেত। আর ওপরে উঠে আলোর স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে ছিটকে পড়ত।
মামার বাড়ির দেশে আরেকটি মজার দৃশ্য দেখেছিলাম মামার বিয়েতে গিয়ে। মামাদের দেশের শেয়ালের খুব নামডাক ছিল। দিনেদুপুরে এরা লোকালয়ে পোষা কুকুরের মতই নির্ভয়ে চলাফেরা করত। প্রতি মাটির বাড়িতেই এরা ঘরে ঢোকার জন্য সিঁধ কাটত। তা বন্ধ করার উপায় ছিল না। সিঁধের গর্ত বন্ধ করলেই রাতে আবার সিঁধ কেটে ঘরে ঢুকত। সিঁধ কাটা বন্ধ করার জন্য আর এদের উৎপাত বন্ধ করার জন্য গৃহস্থ রাত্রে খাওয়া দাওয়ার পর পরিমাণমত ভাত-তরকারি-মাছ কলাপাতায় করে রান্নাবাড়ির পিছনে রেখে আসত শিবাভোগ হিসাবে।
মামার বিয়ে মিটে গেছে, কুটুম্বরা বাড়ি ফেরার জন্য তৈরি হচ্ছে। বিয়েবাড়ি পরিষ্কার করা হচ্ছে। তখনকার দিনে যজ্ঞিবাড়িতে বড় বড় দু-তিনখানা পাটি(চাটাই) পেতে তার ওপর কলা পাতা বিছিয়ে ভাত ঢালা হত। যজ্ঞি (যেকোন বৃহৎ সামাজিক অনুষ্ঠানের প্রচলিত ডাকনাম ছিল যজ্ঞি--সম্পাঃ) শেষে এই পাটিগুলো পুকুরে ধুয়ে পুকুরের একপাশে ফাঁকা জমিতে শুকোতে দেওয়া হত। মামার বাড়িতেও সেরকমই রাখা হয়েছিল।
মামাদের ভিতর বাড়িতে ছিল মস্ত উঠোন আবার বাহির বাড়িতেও ছিল বিরাট উঠোন। বাহির বাড়ির উঠোনের মাঝখান দিয়ে ছিল পুকুরে যাওয়ার রাস্তা। দুপাশে ছিল দুটি ফুলবাগান। একপাশের বাগান ছাড়িয়ে বাঁশবনের ধারে পাটিগুলি রোদে দেওয়া ছিল। বিয়েবাড়ির কাজকর্মের অবসানে ক্লান্ত চাকরবাকর থেকে বাড়ির সবাই দিবানিদ্রায় বিভোর। আমরা ছোটরা গিয়েছি বাড়ির বাইরের উঠোনের দিকে।
কিছুক্ষণ পরে একে একে বাঁশবন থেকে বের হয়ে এসে বাড়ির দিকে তাকিয়ে লাইন দিয়ে বসে রইল তারা বিজয়ীর ভঙ্গিতে। এতদিন বিয়েবাড়ির কোলাহলে শেয়ালরা একটু কোনঠাসা হয়ে মনমরা ছিল। সেদিন সুযোগ পেয়ে মনের আক্রোশেই হোক বা খেলার ছলেই হোক দরকারি পাটিগুলি নিয়ে চলে যাচ্ছিল বনের মধ্যে। শেয়াল আমাদের দেশেও অনেক দেখেছি,কিন্তু মামাদের দেশের মত দুঃসাহসী শেয়াল কোনদিন দেখিনি, তাই এদের কথা ভুলতে পারিনি।
এরপরে আর কখনো মামার বাড়িতে গিয়েছি বলে মনে পড়ে না। বারোমাসে তেরো পার্বণ আর পারিবারিক নানা উৎসব অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে গ্রামবাংলার মানুষ যুগ যুগ ধরে একতাবদ্ধ হয়ে, নির্মল শান্তি,সমঝোতায় জাতিধর্মনির্বিশেষে নিশ্চিন্তে দিন কাটাত। শহরাঞ্চলে স্বদেশী আন্দোলনের তোড়জোড় যতটা প্রবল ছিল গ্রাম বাংলায় ততটা ছিলনা।
আমরা তখন একটু একটু করে বড় হচ্ছি। আমার বড়দা ছিলেন স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে যুক্ত। তাঁর কাজ ছিল বিপ্লবাত্মক নানা লেখা লিখে কাগজে পাঠানো। মানুষের মধ্যে স্বাধীনতার চেতনার উন্মেষ ঘটানোতে সে কাজ মূল্যবান আর অপরিহার্য ছিল। নানারকম রাজনৈতিক অসুবিধার সম্মুখীন হয়ে তাঁকে দেশ ছেড়ে কোলকাতায় পালিয়ে যেতে হয়। তাঁর দেশ ছাড়বার ঘটনাটা বলি।
দিন দুই তিন আগে এক সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মচারী (যিনি ছিলেন বাবার ছাত্র)বাবাকে গোপনে সতর্কবার্তা পাঠালেন আর দাদাকে কলকাতায় চলে যাওয়ার নির্দেশ পাঠালেন। তাঁরই নির্দেশে বাড়িতে রাখা স্বদেশী বইপত্র, চিঠি, কাগজপত্র সব সরিয়ে ফেললেন বাবা। বিরাট বড় বাঁধানো লেনিনের একটি ছবিকেও লুকিয়ে ফেলতে হল। নির্দিষ্ট দিনে দিবালোকে বাবার ছাত্র সেই সরকারী কর্মচারীটি এসে তল্লাশির কর্তব্য নির্বাহ করে চলে গেলেন। (বামপন্থী আন্দোলনের আদিযুগের রাজনৈতিক সাহিত্যের একজন উল্লেখযোগ্য কলমচি পরেশচন্দ্র ভট্টাচার্যের কথা বলা হয়েছে এখানে। এঁর রচিত “বিপ্লবের ধারা” পুস্তিকাটি, শিপ্রা সরকার ও অনমিত্র দাশ সম্পাদিত “বাঙালির সাম্যবাদি চিন্তা” নামের বইটিতে সাম্প্রতিক অতীতে পুনঃপ্রকাশিত হয়েছে। -সম্পাঃ)
আমাদের বাড়িতে মস্তবড়ো একখানি রবি ঠাকুরের ছবি ছিল। সেই ঋষিদর্শন মানুষটির ছবি আমার খুব প্রিয় ছিল আর ছিল গান্ধীজির একখানি ছবিযুক্ত ক্যালেন্ডার। সেই ছবিটি আমি পছন্দ করতাম না,তাই সেটি উল্টিয়ে রেখেছিলাম। যদিও এইসব মহাপুরুষদের বিষয়ে আমি তখনও কিছুই জানতাম না।
সে ছিল বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকের সময়। নবীন আর প্রবীণদের মধ্যে দেশের অবস্থা নিয়ে ক্রমাগত আলোচনা চলত কাছারিঘরে। কখনো শুনতাম আলোচনা চলছে নেতাজির অন্তর্ধান নিয়ে। সকলেই খুব ভীত,সন্ত্রস্ত্র। দেশের অবস্থা আরো খারাপ হয়ে চলেছে সে চিন্তায় সকলেই উদ্বিগ্ন। আকাশপথে নাকি উড়োজাহাজ যাবে। উড়োজাহাজ সম্বন্ধে আমাদের কোন ধারণাই ছিল না। আমরা বাল্যশিক্ষা বইতে ছবি দেখেছি আর পড়েছি ‘জাহাজ ভাসে সাগর জলে’। তাই উড়োজাহাজ কবে দেখব বলে দিন গুনে চলেছি তখন আমি।
এত শান্তির দেশে খারাপ লোকেরও অভাব ছিল না। যারা চোদ্দপুরুষের জমানো বৈভব ভোগ করত আর সুদে টাকা খাটাত। এদের হাতে সময় আর পয়সা ছিল অঢেল। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এরা সুবিধাবাদী,গুপ্তচরের ভূমিকা নিয়েছিল। কোথাও রাজনীতির গন্ধ পেলেই এরা শাসকশ্রেণীর হয়ে কাজে লেগে পড়ত। সেই অস্থির সময়ে এসব মানুষের ক্ষমতা বেড়ে গিয়েছিল। কত মানুষের ক্ষতি যে এরা সেসময়ে করেছে তা ভাবলেই রাগ হয় এদের ওপর। ইতিমধ্যে স্বাধীনতা আন্দোলন তীব্রতর হয়েছে। পুলিশী অত্যাচারও বাড়তে লাগল। দেশে যুদ্ধের আবহাওয়ায় খাদ্যদ্রব্যের আকাল শুরু হল।
তবুও তারই মধ্যে খেলার মাঠে ফুটবল খেলে ছেলের দল। চারপাশ দর্শকে ঠাসাঠাসি। একদিন এমন সময়ে আকাশে খানিকটা নীচু দিয়ে প্রবল আওয়াজ তুলে মাটি কাঁপিয়ে উড়ে গেল দুটি উড়োজাহাজ। সে এক ভীষণ কাণ্ড ঘটে গেল গ্রামগঞ্জের সরল মানুষদের জীবনে। খেলার মাঠ ছেড়ে খেলোয়াড়ের দল আর দর্শকেরা মুহূর্তে উবে গেল। আমদের গ্রামে খেলার মাঠের পাশেই ছিল বিরাট এক বাঁশবন। অনেকে ঢুকে গেলাম বাঁশবনে। গাছের ফাঁকে ফাঁকে দাঁড়ালাম। বাড়িতে বাড়িতে ছোট বাচ্চারা প্রচণ্ড চীৎকার আর ছুটোছুটি শুরু করে দিল। বৃদ্ধা মহিলাদের অবস্থা আরও সঙ্গীন। কেউ বা অজ্ঞান হয়ে পড়লেন, কারোর বা মাথা ঘুরতে লাগল। কারও মাথায় জল দেওয়া হচ্ছে,বাতাস করা হচ্ছে। কারও আবার নাকেমুখে বমি শুরু হয়েছে। উড়োজাহাজ দেখে সবাই ভীত,ব্যতিব্যস্ত।
এরমধ্যে ব্যতিক্রম ছিলেন আমার মা। তিনি সে যুগের মানুষ ছিলেন বটে,কিন্তু খানিকটা ব্যতিক্রমী ছিলেন। মা ঘাবড়ালেন না। শুনেছি আমার মা জন্মেছিলেন বাংলা ১২৯৮ সনে,ইংরেজি ডিসেম্বর মাসে। তারিখটা কেউ জানেনা। তবে বুদ্ধিমত্তায় তিনি সময়ের থেকে অনেকটাই এগিয়ে ছিলেন। ছেলেদের মুখে শুনে শুনে দেশের যুদ্ধকালীন অবস্থার কিছু কিছু খবর তিনি জানতেন।
আসলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিবেশে অনেকদিন থেকেই দূর আকাশে মাঝেমাঝেই ছোটছোট উড়োজাহাজ দেখা যেত। আওয়াজও ততটা জোরে শোনা যেত না। তাই এতদিন ভয়ের কারণ ঘটেনি।
কিন্তু সেদিনের সেই উড়োজাহাজগুলি আক্রমণের প্রাক্কালে এদেশে ঢুকে টহল দিয়ে দেখার জাপানী প্লেন। গ্রামের আকাশের উপরে খুব নীচু দিয়ে প্রবল আওয়াজ তুলে চলে গেল,তাই প্রথম বিরাট প্লেন দর্শন আর সেগুলির প্রচণ্ড আওয়াজ ছোট বড় সকলের মনেই তীব্র আতঙ্কের সৃষ্টি করেছিল।
যাই হোক এখানে আমি কিছু বলে রাখা আবশ্যক মনে করি। যদি কোনদিন কোন পড়ুয়ার চোখে পড়ে আমার এই খেয়ালী লেখা,তারা সে সময়ের অবস্থার কিছু কথা এক প্রত্যক্ষদর্শীর লেখা থেকে জানতে পারবে। তবে অবশ্যই এই ঘটনাগুলি আমার সুদীর্ঘকালের অস্পষ্ট স্মৃতির ভাঁড়ার থেকে তুলে আনা। কিছু ভুলভ্রান্তি থাকতেই পারে,সে জন্য আমি অগ্রিম মার্জনা চেয়ে নিচ্ছি। তাছাড়া রাজনীতি বা বৈপ্লবিক বিষয় আমার আলোচ্য নয়। আমি এ বিষয়ে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। ছোট থেকে বড় হতে হতে দেশ গাঁয়ের আর্থিক,সামাজিক আর রাজনৈতিক যে পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে কাটিয়েছি তাই লিখেছি। কেমন আনন্দময় ছিল আমাদের ছেলেবেলার দিনগুলি,তারপর,কৈশোর যৌবনের দিনগুলি কেমন ছিল,আর এখন কেমন আছি, সেসব কথাই লেখার মাধ্যমে নিজের কাছেই নিজেকে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। বারবার সেই লেখাগুলি পড়ে পুরনো স্মৃতির সান্নিধ্য উপভোগ করাই আমার উদ্দেশ্য,তাই এই লেখার প্রয়াস।
যাই হোক আমার কৈশোর থেকেই দেশের আভ্যন্তরীণ অবস্থার আমূল পরিবর্তনের সূত্রপাত হয়েছিল। ক্রমে নিত্যব্যবহার্য জিনিসের আকাল দেখা দিতে লাগল। পয়সা দিলেও জিনিস অমিল হতে লাগল। প্রথমে এই খবর রটে গেল যে কাঠ,যা তখন দেশের আবশ্যিক ও একমাত্র জ্বালানি ছিল সেই কাঠ আর সহজে মিলবেনা,কারণ রেলগাড়ি তখন চলত কাঠের আগুনে। আর যুদ্ধের বাজারে অনেক বেশি রেলগাড়ি চলবে,তাতে অনেক বেশি কাঠ লাগবে। তাই বাজারে কাঠের অভাব দেখা দেবে। বদলে বাজারে আসবে কয়লা নামক এক বিদেশি জ্বালানি। রাঁধুনিদের আর কাঠের আগুনের ধোঁয়ায় চোখ জ্বালা করে রান্না করতে হবে না। দাউ দাউ করে জ্বলা কাঠের আগুনের গরম থেকেও বাঁচা যাবে আর আঁচও হবে গন্গনে।
শোনা গেল এই কয়লার রান্নার আখা বা উনুন হতে হবে অন্যরকম। তাতে সাত আটখানা লোহার শিক লাগবে,যার ওপর ঘুঁটে সাজিয়ে নিয়ে তার ওপর দিতে হবে টুকরো কয়লা। উনুনের নীচ থেকে কাঠ,শুকনো পাতা বা বিচালি জ্বালিয়ে আগুন দিয়ে ঘুঁটেতে আগুন ধরাতে হবে,তারপর সেই আগুনে কয়লা জ্বলে উঠবে,গন্গনে আঁচ হবে। এই নিয়ে প্রতি বাড়িতে গিন্নিদের জল্পনার শেষ নেই,দু-বেলা সকলের মুখের খাবার তো তাদেরই জোগাতে হবে। বাড়িতে বাড়িতে শুরু হয়ে গেল কয়লার উনুন ধরাবার প্রস্তুতি।
এতকাল গোবর তো জমির সারের কাজে লাগত, আর টুকরো টুকরো শুকনো গোবর কাঠের উনুনেও দেওয়া হত সময়ে অসময়ে। এখন সেই গোবর হয়ে পড়ল খুবই দরকারি। কয়লার উনুনের জন্য ঘুঁটে বানাতে হবে। ঘুঁটে শিল্পটি তখনও দেশে গ্রামে অজানা। যাই হোক প্রথম ঘুঁটে তৈরি শুরু হল গ্রামে। দু-আড়াই হাত প্যাঁকাটির গায়ে মুঠো মুঠো করে গোবর জড়িয়ে তা শুকোতে দেওয়া হল। যাদের বাড়িতে গরু ছিল তাদের তো নিজেদের গোবর,যাদের গরু ছিলনা তারা অন্যদের বাড়ির গোয়াল থেকে ঝুড়ি ভরে গোবর এনে প্যাঁকাটির ঘুঁটে বানাতে লাগল। ঘুঁটেশিল্পের সূচনা হল দেশে কয়লার আগমনে,কয়লার উনুনের জন্য। এভাবেই তৈরি হল কয়লার উনুনে আঁচ দেওয়ার প্রাথমিক সরঞ্জাম।
আমাদের গ্রামে এক পরিবারে একজন নিঃসন্তান বালবিধবা মহিলা ছিলেন। স্বামীর মৃত্যুর পর পিত্রালয়ই ছিল তাঁর আজীবনের আশ্রয়স্থল। পিতামাতার দেহান্তে তিনিই ছিলেন দাদার সংসারের কর্ত্রী। তাঁর ভয়ে বাড়ির চাকর–বাকর থেকেআশ্রিত বিড়াল কুকুর পর্যন্ত সন্ত্রস্ত থাকত। তিনি কথা বলতেন উচ্চৈঃস্বরে,খবরদারিতে তাঁর জুড়ি ছিল না। কোন এক আত্মীয়ের সূত্রে তিনি দু-একবার কলকাতায় গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি কয়লার উনুনের ব্যবহার শিখেছিলেন। অতএব গ্রামে তিনিই হলেন এব্যাপারে সকলের ত্রাতা। প্রতিদিন বিকালে পাড়ায় পাড়ায়, বাড়ি বাড়ি ঘুরে তিনি শেখাতেন কয়লার উনুন তৈরি করা। তাঁর নির্দেশনায় গ্রামের মেয়েরা উনুন তৈরি শিখেছিল। উনুনের উপযুক্ত মাটি তৈরি করা, বালতি বা টিনের ছোট ড্রামের মধ্যে নির্দিষ্ট উচ্চতায় শিক বিছিয়ে তার ওপর পরতে পরতে মাটি লেপে, একেবারে ওপরে উনুনের ঝিক তৈরি করা থেকে,উনানে আঁচ সাজানো পর্যন্ত তিনিই শিখিয়েছিলেন সবাইকে। তাঁরই নির্দেশনামত শুকনো উনুনে শনি,মঙ্গলবার বাদে শুভ সময় দেখে প্রথম আগুন দিতে হত। যেদিন যে বাড়িতে উনুন তৈরি হত সেদিন সে বাড়িতে সেই নতুন শিল্পকর্ম দেখতে মেয়েদের আর ছেলেপুলেদের ভিড় জমে যেত। সেদিন দর্শকদের কলরবে সে বাড়িটি গৃহস্থ বাড়ি না মেছোহাটা বোঝা দায় হত। দর্শনার্থী মহিলারা মোটামুটি উচ্চৈঃস্বরে যে যার এককালে প্রত্যক্ষ করা বক্তব্য প্রকাশে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। কার কোন আত্মীয় কবে কোন শহরের বাসিন্দা ছিলেন, তার বাড়িতে কেমন ছিল আঁচের উনুন,সেটা এভাবে নয় অন্যভাবে তৈরি করা হয়েছিল, এইসব নানা আলোচনায় ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। স্বভাবতই কোলাহল মুখরিত হয়ে উঠত বাড়িটি।
দেশের বাড়িতে তখনকার দিনে কেউ বেড়াতে এলে তাঁকে অভ্যর্থনার রীতি ছিল পিঁড়িতে বসতে দেওয়া। যতজনই হোক না কেন সবাইকেই বসার জন্য পিঁড়ি দিতে হত। তারপর ঘরের বৌমাটি একগলা ঘোমটা দিয়ে, মুখটি আড়াল করে পড়শি অতিথিদের মাঝখানে পানের বাটা এনে রাখত,তারপর প্রত্যেকের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করত। পানের বাটা সাজানোর দায়িত্ব থাকত বউদের হাতে। যার বাটা যত পরিষ্কার, চকচকে হত, যার চুন খয়েরের বাটি যত পরিষ্কার আর চকচকে হত,যার কাটা সুপারি যত সরু হত সেই বউটি খুব কাজের বলে বিবেচিত হত। আজকাল যেমন অতিথি আপ্যায়নের প্রথম ধাপটি হল চা-বিস্কুট দেওয়া, তখনকার দিনে ছিল পান খেতে দেওয়া।
আমাদের ছোটবেলায় দেশে চায়ের কোন পাট ছিল না। আমাদের বাড়িতে প্রথম চা খাওয়ার শুরু হয়েছিল আমার আসামবাসিনী দিদির বিয়ের পর। দিদি যখনই বাপের বাড়িতে আসত তখন চা নিয়ে আসত,সেই থেকে আমাদের চায়ের সাথে পরিচয়। যাই হোক গ্রামে অতিথিদের বসার পিঁড়ি আর পানের বাটা দিয়ে অভ্যর্থনা না করলে তা খুবই নিন্দনীয় ব্যাপার হত।