'মায় জিগাই ছিল। কইছিলেন, পোলা মাইয়া আছিল নাতো, হেই আক্ষেপে ঝোঁকের মাথায় কামটা কইরা ফালাইয়া, হুঁশ অইলে পর আর সামলাইতে পারে নায়। কিন্তু তহনতো আর ফেরারও উপায় নাই। পয়সাকড়ি যা আছিল, শ্যাষ অইয়া গেল গা। আহার জোটে না। একদিন দেখি এক বিয়া বাড়ির আবোজ্জনার মইদ্যে ফেইলা দেওয়া খাবার খাইতে আছে। জোর কইরা লইয়া আইলাম। সেই রাত্তিরেই ভ্যাদ্বমি। পরদিন দুপইরের মইদ্যেই শ্যাষ। দ্যাইটা সেই রাত্তিরে রাস্তা ঘাট ফাঁকা অইলে গঙ্গা তামাইত নিয়া ভাসাইয়া দিলাম। সৎকারের উপায় আছিল না।'
আশুদার যেন পুরো ঘটনাটার বিতাং শোনার ঝোঁক চেপে গিয়েছিল। অন্তত তার প্রশ্নগুলো শুনে তাই মনে হচ্ছিল। আমরা বিশেষত আমি ভাবছিলাম, এই কাহিনী কতক্ষণে শেষ হবে। সহ্য করতে পারছিলাম না। আশুদা আবার জিজ্ঞেস করল, 'বাবার কথা শুইনা, মায় কী কইল?'
'মায় কইল, আহারে কত সুখে আছিলেন রাজরাণীর লাখান। ভগবানের কী যে বিচার। কোলে এউকা পোলাপান দিলে তো এই দশা অইত না।' পুরোনো কথা মনে করে মা নাকি এমন কান্না কেঁদেছিলেন যেন নিজের বোন মারা গেছে। বাবা বলেছিলেন, 'বুজলানি বৌ, ভগবান নাই, তয়, শয়তান সয়ত্যই আছে। নাইলে - যাউকগা, ও কথা আর কইয়া লাভ কী?'
আচায্যি বলেছিল, এর দিন পাঁচেক পর ওর বাবা মারা গিয়েছিলেন। মারা যাবার আগের দিন সকালে কোনোমতে মাকে বলেছিলেন, 'ভিক্ষা কইরো না। কাশীতে অনেক অনাথ আশ্রম আছে, কেউ না কেউ আশ্রয় দিবে। কিছু কাজকাম কইরা খাইও।' আশুদা জিজ্ঞেস করল, 'কিভাবে শ্যাষ তামাইত দাঁড়াইলি, সংক্ষেপে ক'।
'বার হাত, চৈদ্দ জায়গা ঘুইরা শ্যাষম্যাষ মায় ঠিক করল, রামকৃষ্ণ মিশনে গিয়া হত্যা দেবে। সেও সহজে হয় নাই, বুজজস্। কারণ, শ্যাষে তো কাঙ্গালের অভাব নাই। এখানের মিশনের বড়ো মহারাজ আম্গো কপাল গুণে আছিলেন মাল্খা নগরের মানুষ। মা সব ঘটনা তাইনেরে কইয়া, তেনার পাও দুইখান জড়াইয়া ধইরা কইলেন, আমার কপালে যা আছে অইব। পোলা দুইটারে আপনে কোনো অনাথ আশ্রমে দিয়া দেন। কাজ অইছিল। সেই ভাবেই মানুষ অইছি। অবশ্যই মায়রেও বড়ো মহারাজ একটা আশ্রয়ের বন্দোবস্তো কইরা দিছিলেন। এক বাঙালি ভদ্র পরিবারে থাকা খাওয়ার বদলে রাঁধুনীর কাম।' মায়ের কথা বলতে বলতে আচায্যি এবার আর সামলাতে পারল না, হাউহাউ করে কান্না জুড়ে দিল।
অথচ এতক্ষণের তাবৎ কথাগুলো সে অসামান্য নিরাসক্ত এবং বস্তুনিষ্ঠভাবে বলে যাচ্ছিল। শুনে মনে হচ্ছিল, সে নিজেদের পরিবারের নয়, অন্য কোনো পরিবারের কথা বলছিল। আশুদা তার পিঠে হাত রেখে বলল, 'ওর অবস্থাটা বুজতে পারতে আছিরে ভাই। ব্যাক-কথা এমনে কওন যায়, মায়ের কথা কইতে গেলেই ক্যান্ যে কান্দন পায় হালায় বুজিনা। ওর মত শক্ত পোলাও তো পারলি না।'
আচায্যি বলল, 'না, খালি মা বইলা কথাটা না। তরগো একটা বিষয় কওয়া অয়নাই। ওই মা কিন্তু আমার গর্ভধারিণী মা না। সৎ মা। নিজের মা আমার জন্মের পরই সূতিকা রোগে মারা যায়। বছর না ঘুরতে বাবায় এই মায়রে বিয়া করেন। ওই ভাইটা আসলে আমার বৈমাত্রেয় ভাই। সৎমা লইয়া গেরাইম্যা ক্যাচাল তো হক্কলেই জানস্। আমি কিন্তু কোনোদিন জানতেই পারই নাই সৎমায়ের লগে আসল মায়ের তফাৎটা কি। যহন চাকরি পাইলাম তহন একদিন মা কথাটা আমারে জানাইল। কইল, 'কথাটা কওনের দরকার আছিল না। তয়, এতবড়ো সয়ত্যটা অইন্যের কাছ থিকা শোনার চাইতে আমার কাছ থিকা শোনাটাই ভাল। দ্যাশে থাকলে, হয়ত এ্যাদ্দিনে এর অর কাছ থিকা উলটাপালটা শুনতিস। আমার সমস্যা অইত। তয়, আমি কিন্তু তয় মা অইয়াই এই সংসারে ঢুকছিলাম।'
আশুদা বলল, 'তর মা বোধহয় খুব শিক্ষিতা আছিলেন, না? এতটা বড়ো মনের মানুষ আম্গো সোমাজে? ভাবাই যায় না, বিশেষ কইরা গেরাম গাঁয়ে। দেখছিতো অনেক।'
'মায়ের অক্ষরজ্ঞেয়ানও আছিল না। আর শুনছি স্যায় নাকি বাওনের ঘরের মাইয়াও আছিল না। তার জাত জন্ম নিয়া পাড়ার মাইনসেগো আলোচনার কথা দুই একটা অহনও মনে আছে।' আশুদা বলল, 'থাউক্গা মায়গো জাতজন্ম, সতীত্ব, বৈধব্য লইয়া আলোচনা করে বলছে। সেই অধিকারও কেউ আম্গো দেয় নাই। নরেইন্যারে কই, রাইতে শুইয়া শুইয়া আচায্যির মায়ের বিষয়টা লইয়া একটু তলাইয়া ভাবিস। খালি মা বা বাপ বইলা কথা না। কোনো মাইনসেরেই ত্যাগ দেওনের আগে ভাইব্যা দেহিস্, তার বিচার করার অধিকারটা আম্গো কাউর আছে কিনা। অনেক যুগের সংস্কার, এড়ানো সহজ না। আচায্যির মায়ের বিচারটাও কইলম একটা বিচার, সহজ সরল বিচার। সেই বিচারে যুক্তিডা একটু ভিন্ন। তাইনে অর বাপের কথাটার মাইন্যতা দিছিলেন, শয়তানের লগে যুইঝা ভগবানই কায়দা করতে পারেনারে ভাই, মানুষতো কোন্ ছার। তয় তর জাগায় আমি অইলে, অভিমান করতাম, রাগ করতাম ঠিকোই, তারপর এক সময় মা কইয়া বড়ো গলায় ডাক দেওয়ার তপস্যাও করতাম। আমার মায়রে যখন বলাৎকার কইরাও কাইট্যাই ফ্যালাইলো —'। আশুদা কথাটা আর শেষ করতে পারলো না। নরেন তার মুখ চাপা দিয়ে অবরুদ্ধ স্বরে বললো, 'আমি কালই কোলকাতার পথে রওনা দেব। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পাসপোর্ট ক'রে দেশে যাব। তার আগে মাকে একটা চিঠি লিখতে হবে।'
এই স্মৃতিটার বৃত্তান্তটা এখানেই ইতি টানা ভাল। পাঠক নিশ্চয় বাকিটা অনুমান করে নেবেন। তথাপি আমি একটু অতিরিক্ত বাচালতা করতে চাই। প্রধান কথাটা হল, এই আলেখ্যটি আদৌ কথাসাহিত্য সম্মত গল্পকথা যে নয়, তা দাগিয়ে বলে দেওয়ার দরকার হয়না। তবে এ নিয়ে গল্প নির্মাণ সম্ভব, অর্থাৎ যাঁরা প্রতিভাশালী লেখক, তাঁদের পক্ষে। সে ক্ষেত্রে একেকজন লেখক তাঁর পদ্ধতি অনুযায়ী একেক রকমে এর উপস্থাপন ঘটাবেন। একটা কথা বলতে পারি, যদি বিভূতিভূষণ বিষয়টিকে নিয়ে লিখতেন, সম্ভবত তিনি এর বিশেষ রদবদল না ঘটিয়ে প্রায় আনুপূর্ব আড্ডাটা এরকমই রেখে দিতেন। তারই মধ্য থেকে উঁকি দিত একটা সরল মেদুর গল্প এবং স্থান পেত তাঁর কাহিনীমূলক গল্পের সংসারে। সমরেশ বসু লিখলে হয়ত, নরেনের বাবা এবং সুতপার প্রেমকেই অবলম্বন করতেন। ব্যাপারটা লেখক ভেদে দৃষ্টিভঙ্গীর।
সম্প্রতি, কপাল ক্রমে আমরা সেই 'পাঁচ ইয়ার' আজও বেঁচে আছি। এখন আর সেকালের সেদিনের মতো, বছর বছর 'পচ্চিমে' ভ্রমণ হয়না। কালেভদ্রে একত্রিত হলে পুরনো দিনের জাবরকাটা চলে। বিষয় হিসাবে এসব কথা তার দক হারিয়ে ফেলেছে। সেদিনের মণি-কর্ণিকার ঘাটের গালগল্প কান্নাকাটি এবং নেশা ভাঙের কথা এখন 'সেকালের কথা'। এ নিয়ে আজকে নবীন-নবীনা লেখকেরা সৃজনশীল সাহিত্য রচনায় আদৌ উৎসাহী হবেন কিনা সন্দেহ। মাঝে একদিন পাঁচইয়ারি বৈঠকে মূল আলেখ্যটি পাঠ করলে আচায্যি বলেছিল, 'খারাপ লাগল না। তুই হালায় তো মনে অইল একটা গল্পই শুনাইলি'। কিন্তু আমি তো জানি এটা সাহিত্যের বিচারে আদৌ গল্প নয়।
আমরা সবাই এখন প্রৌঢ়াণ্ড বয়সী। একমাত্র আশুদাই বৃদ্ধ যাকে বলে তাই। আশুদা বলল, 'হালার কাণ্ডটা বোজ। এই সেদিনের কথা। সেইটা আইজ কেমন একটা পরনকথার গল্পের লাখান হইয়া গেল গা। তয়, নরেইন্যার শ্যাষম্যাষ কি হইল সেসব কথা তো লিখলি না? অবইশ্য তা ও কয়ও নায়।' বললাম, 'ওই যে একটু কায়দা করে পাঠকের অনুমানের উপর ছেড়ে দিলাম। সেটা ওই কারণেই। আসলে, যখন লিখছিলাম কিছুই তো জানা ছিল না তাই।' নরেন বলল, 'তাহলে সেটুকু এখন শোন্। পরে হয়ত এনিয়ে আরেকটা স্মৃতি-মঙ্গল লিখবি'। 'স্মৃতিমঙ্গল! কথাটা ভাল বলেছিস তো। কিন্তু আমি সত্যিই তার পরবর্তী ঘটনা ঠিক জানিনা। এ নিয়ে তো আমাদের আর কোনো আড্ডাতো হয়নি। তাছাড়া বয়স বাড়লে, ছুট্কো ছাট্কা দৈনন্দিন ঘটনাগুলোতো স্মৃতি হয়না। বরং তুই একটু গুছিয়ে বল, শুনতে ভাল লাগবে।' নরেন সুন্দর বলেছিল। এ বয়সে যেমন হয়, বহুদিন পরে কজনে আবার একত্রে আড্ডায় বসেছিলাম।
বেনারস থেকে ফিরে, যেমন বলেছিল, তার সবটাই নরেন করেছিল। মামাকে সবই জানিয়েছিল ও। মামা বলেছিলেন, 'আমি সবই জানি। বস্তুত, আমাদের সবার সঙ্গে পরামর্শ করেই তোমার বাবা বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আমরা ভাইয়েরা খুশি মনেই মত দিয়েছিলাম। মানে কুমিল্লার ওরাও।' কুমিল্লাতে ওর নিজের মামার থাকতেন।
'বলোনি তো আমাকে?' নরেন অবাক হয়ে বলেছিল।
'বলিনি। কারণ ঘটনার সময় তোমার বয়সটা এমন ছিল যে একটা বড়সড় অঘটন তুমি ঘটিয়ে ফেলতে পারতে তখন। ছোট দুটো, তখন তোমার মত স্পর্শকাতর বয়সের নয়। নিতান্তই ছোট। কিন্তু পরে যখন তুমি আমার কাছে চলে এলে, তোমার ভাব দেখে আর বলার ভরসা হয়নি। এখন যখন ব্যাপারটা তুমি ঠিক ভাবে বুঝতে পারছ, তখন যা সিদ্ধান্ত নিয়েছ, সেটা করাই সঠিক। তবে এ ব্যাপারে তোমার বন্ধুদের ভূমিকার কথা যা শুনলাম, সেটা সত্যই অনবদ্য। নাহলে ব্যাপারটা এখনো সহজ হতনা। বাপ ছেলে এবং 'মা' বড় আনন্দেই মিলিত হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা এদেশে আসেন নি। বাবা জামালপুরেই নতুন বাসস্থান করে থেকে গিয়েছিলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, যতদিন না নরেন সংসারী হয়, তাঁরা আসবেন না। নরেন বিয়ে থা করে থিতু হলে, যদি তার স্ত্রী সব শোনার পর আগ্রহী হয়, তবে আসার কথা চিন্তা করা যাবে।
পানু বলল, 'কিন্তু তিনিতো আসেন নি এ দেশে? নাকি এসেছিলেন?'
'না। তবে আমি বিয়ে করার পর, বৌকে নিয়ে বছর পাঁচছয় জামালপুরে নিয়মিত গিয়েছি। বাবাও মাকে নিয়ে আসবেন কথা ছিল। ছোট দুই ভাই তখন তাঁদের কাছে। এর মধ্যেই একাত্তর সালের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। কিন্তু সেতো আরো একটা লম্বা বৃত্তান্তে দাঁড়িয়ে যাবে।'
আচায্যি বলল, 'ভাঙের সরবত কিন্তু এখানে পাওন যাইব না। তয় অন্য কিছু যদি কও, ভাইব্যা দ্যাখতে পারি।'
'অহন কইলোম বৌগুলা আছে। বুইঝ্যা দ্যাহ।' আশুদার সাবধানবাণী। বৌয়েরা সকলেই ড্রিংক জাতীয় ব্যাপারটাকে সতীন মনে করে। তবে আচায্যি বৌ পটাতে ওস্তাদ। সে নিজের হোক কি বন্ধুদের। বলল, 'সমস্যা দুইটা, এক খরচাটা দিয়া কে মোড়ের দোকান থিকা অহন আনব। দুই বৌ পটানো। আমি যে কোনো একটার দায়িত্ব নিমু।' পানু বলল, 'আমি গিয়ে আনতে পারব। অনেকদিন পর তো, খরচাও আমার। ব্র্যাণ্ড বল।'
আশুদা বলল, 'স্কচ তো খাওয়াইতে পারবিনা, পাবিও না এখানে। একটা রয়ালস্ট্যাগ বা সিগনেচারের বোতল লইয়ায়। বড়োটাই আনিছ্। লাইগ্যা যাইব খন্।'
বাড়িটা আচায্যির, ওর বৌ'টা ভাল। তবে ড্রিংকের ব্যাপারে নয়। আমাদের শ্রীমতীরা সবাই সেদিন আচায্যির বাড়িতে আড্ডায় হাজির। আচায্যি তার বৌকে ডেকে বলল, 'অহনতো বাজে ছটা। কই কি, এ্যাদ্দিন পরে সবাই একোত্তর অইলাম, খাওন দাওনটা এখানে হইলে কেমন হয়?' ওর স্ত্রী বললেন, 'হয়তো ভালই। কিন্তু খাওয়াবে কী? ঘরে তো অতিথি আপ্যায়নের মত সামগ্রী কিছু নেই।'
'আরে ছাড়ান্ দেও। আমি কি তোমারে তোমাগোর পরনিন্দা পরচর্চার আসর থিকা উঠাইয়া রানতে পাঠামু ভাবছ নিকি? অতবড়ো পাষণ্ড আমি না।'
'তাহলে খাবে কি?'
'ওই তোমার হইলগা তোমার মাংস, আর নান্ বা রুমালি রুটি। মানে তোমার মাংস না, রেস্টুরেন্ট থিকা সব আইনা দিমু, ঠিক আছে?'
'ঠিক আছে।'
'তাইলে গিন্নিগো হক্কলরে, এইখানে ডাকো, আর একখান গুরুতর আলোচনা আছে।'
'বুঝেছি'। বলে আচায্যির বৌ একটু ভ্রু কোঁচকালো। আচায্যি বলল, 'খালি তুমি বুঝলেই তো অইব না, হক্কলরে বুঝাইয়া, সমঝাইয়া চলাটাই ভাল।'
গিন্নিরা সবাই এলে, আচায্যি বলল, 'আমাগো আইজ একটা গুরুতর আলোচনা আছে। সেই আলোচনা সাদা মাথায় হয় না। আপনেগো কাছে আবেদন এই যে আইজ আমরা একটু ছাই পাশ খামু। আপনেগো লাইগা ঠাণ্ডা পানীয় থাকবো। ইচ্ছা হইলে আম্গোটাও খাইতে পারেন। পারমিশনটা দিয়া দেন।'
বলা বাহুল্য, মত খুশি হয়ে কেউই দিলেন না। তবে আচায্যির অসামান্য কৃৎকর্মে নিমরাজি গোছের ভাব দেখিয়ে, ঘর থেকে যাওয়ার আগে শুধু জানালেন যে সবারই বয়স হয়েছে খেয়াল থাকে যেন। আশুদা বলল, 'এই কথাখান কওয়ার থিকা দুইটা লাথি বা পিছার বাড়ি মারলেও এত দুঃখ পাইতাম না।'
'কোন্ কথা খান?' আশুদার গিন্নি জিজ্ঞেস করলেন।
'ওই যে কইলানা, বয়স অইছে। যাউকগা, কথা বাড়াইয়া সময় নষ্ট কইরা লাভ নাই। পাউন্যা বস্তু লইয়া অহনই আইয়া পড়বো। অর কিন্তু বয়সটা তেমন না।'
'না। এই সবে হসপিটাল থেকে মায়ের কোলে চেপে বাড়ি এসেছে আর কি।' বলে মহিলা হাসতে হাসতে পাশের ঘরে চলে গেলেন। পানু প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ঢুকল। এরপর যথাকর্তব্য শুরু হতে এবং নরেনের মা-বাপ বৃত্তান্ত আরম্ভ হতে সময় লাগল না।
মুক্তিযুদ্ধের সময় ওদেশের হিন্দুদের, যারা ভারতে আসেনি তাদের রকমারি অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। নরেনের ছোট দুভাইকে ওর বাবা কুমিল্লায় মামাবাড়িতে রেখেই পড়াশোনা করাচ্ছিলেন। গোলযোগ শুরু হওয়ার প্রথমপর্বেই তারা তাদের মামাদের পরিবারের সঙ্গে ভারতে ত্রিপুরায় আশ্রয় নিয়েছিল। কিন্তু মা বাবা প্রথমে জামালপুরের বাড়িতে এবং যে মুসলমান ভদ্রলোকের মাধ্যমে তাঁদের বিয়েটা হয়েছিল, তাঁর পরামর্শে টাঙ্গাইল শহরটাতে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ ছিল। ভদ্রলোকের বাড়িও ছিল ওখানেই। তখন এপ্রিল মাস। গোলমাল ক্রমশ ভয়ঙ্কর দিকে মোড় নিচ্ছিল। কিন্তু যেহেতু নতুন মা সুতপা এবং বাবা দুজনেই চাকরি করছেন তখনো, তাঁরা দেশ ছাড়ার কথা ভাবতে পারছিলেন না। নতুন মা নার্সিং পাশ করে রেডক্রসে কাজ করতেন। রেডক্রসের একটা ইউনিটে তখন তিনি আজ এখানে কাল সেখানে কাজে ব্যস্ত। নরেনের বাবার বন্ধুর নাম ছিল হায়দর সাহেব। তিনি প্রকৃতই নরেনের বাবার অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিলেন। তখন তিনি রিটায়ার্ড। জামালপুরে একই সঙ্গে নরেনের বাবার সঙ্গে রেল বিভাগের কর্মী ছিলেন তিনি।
এইসব কাহিনী নরেন শুনেছিল তার নতুন মার কাছে। সেটা ও যখন দ্বিতীয়বার তাঁদের কাছে ওদেশে যায় তখনকার কথা। সেটা সম্ভবত ১৯৪৭ সালের ঘটনা। নতুন মায়ের সঙ্গে নরেন এবং তার সদ্য বিয়ে করা বৌ এর সম্পর্ক খুব গাঢ় হয়েছিল। সুতপা তাঁর জীবনের দুর্ভোগের কথা কিছুই ওদের কাছ থেকে গোপন করেননি। তিনি বলেছিলেন, 'সর্বশেষ লাঞ্ছনা ঘটেছিল ৭১এর অক্টোবরে প্রথম সপ্তাহে এবং ডিসেম্বর মাসের শেষাশেষি। সেটা হল প্রথমে হিন্দু থেকে মুসলমান হওয়া এবং পরে আবার মুসলমান থেকে হিন্দু হওয়ার দুটো হাস্যকর তথা নির্বোধ কাণ্ডের জন্য।' তাঁরা শুনেছিলেন যে রাজাকার নেতা এবং শান্তি কমিটির সেক্রেটারি টাঙ্গাইলের বিন্দুবাসিনী ইস্কুল মাঠে নাকি এক সভায় ঘোষণা করেছেন যে পাকিস্তানে একমাত্র মুসলমানেরাই থাকবে। কোনো বিধর্মীর সেখানে স্থান হবে না। একমাত্র নীচ জাতের হিন্দু যারা, মুচি, মেথর, ধোপা, নাপিত তারা থাকতে পারবে। কারণ, ওইসব ছোট নোংরা কাজ মুসলমানেরা করেনা। এছাড়া যারা স্বেচ্ছায় যারা মুসলমান হবে তারাই শুধু পাকিস্তানে থাকতে পারবে। তবে কোনো মতলববাজির জন্যে যদি কোনো হিন্দু মুসলমান হয়, তবে তাকে কোরবানী দেওয়া হবে। গোটা টাঙ্গাইল শহরে এ নিয়ে আতঙ্ক। ইতিমধ্যে রাজাকারেরা অসংখ্য হিন্দু নরনারীকে নির্মম ভাবে হত্যা করে যাচ্ছিল।
হায়দর সাহেব নিজে অবস্থা বিপাকে শান্তি কমিটির মেম্বার হয়েছিলেন, যদিও প্রকৃতপক্ষে, মানসিকতার দিক থেকে, তিনি এদের বিরোধী ছিলেন। জল্লাদ তিনি ছিলেন না। তিনিও একদিন নরেনের বাবার কাছে এসে বললেন, 'ভাই, সুতপার জন্য চিন্তা করিনা। রেডক্রসের উপর হামলাবাজি এরা করতে সাহস পাবে বলে মনে হয়না। কিন্তু তোমার নাম লিস্টে দেখলাম। 'খালেক' রাজাকার তোমাকে রেয়াৎ করবে বলে মনে হয়না। তুমি এবার ইণ্ডিয়া যাও।' নরেনের বাবা বলেছিলেন, 'সুতপাকে ছেড়ে আমি যেতে পারব না। রেডক্রসের কর্মী হলেও যে সে রেহাই পাবে, এ ভরসাও আমার নেই। আমি থেকেই যাব। যাওয়ার কথা ছাড়া, অন্য উপায়ের কথা যদি আপনার জানা থাকে, বলুন। আপনি যা বলবেন, আমি তাতেই সম্মত।'
'অন্য উপায় যেটা আছে তাহল ধর্মত্যাগ করে মুসলমান হওয়া। কিন্তু সেক্ষেত্রেও যে ওরা তোমাকে বিশ্বাস করবে, তা মনে হয়না। কারণ তুমি চক্রবর্তী বামুন। ওরা তোমাদের মত উচ্চ জাতকে বিশ্বাস করে না।'
'চান্স নিয়ে দেখব।'
নরেন বলল, 'নতুন মা বলেছিলেন সে এক অদ্ভুত কাণ্ড ঘটেছিল। কয়েক হাজার হিন্দু কয়েকদিন ধরে, মেয়েপুরুষ নির্বিশেষে পবিত্র ইসলাম ধর্মে রূপান্তরিত হল প্রায় এক প্রহসনের পদ্ধতিতে। আমরাও হলাম। তখন এই এলাকার মসজিদে আসল অর্থাৎ পুরুষানুক্রমে যারা মুসলমান ছিল, তাদের চাইতে নব্য মুসলমান সংখ্যায় বেশি। কিন্তু এই কোনো রকমে কলেমা পড়ে মুসলমানদের আবার দেখা গেল, দল বেঁধে হিন্দু হতে সময় লাগল না। ডিসেম্বরের শুরু থেকে তাদের আবার দেখা গেল হিন্দু হতে।'
আচায্যি প্রশ্ন করল, 'মোট কতজন মুসলমান হইল, সেইটা জানা গেছিল?'
নরেন বলল, 'নতুন মা বলেছিলেন, সপ্তাহখানেকের মধ্যে প্রায় নাকি সাড়ে তিন হাজার মানুষ মুসলমান হয়ে গেল।'
আশুদা বলল, 'সাড়ে তিন হা জা র! কম্ কী? ছুন্নত হইছিল? মানে অতগুলা কাফেররে ছুন্নত করণে তো সোমায় লাগব মেলা। ওদিকে আবার মুক্তিবাহিনী তহন তেজী, তাই জিগাই।'
আচায্যি বলল, 'তোমার মাথায় আর কিছু আইল না?'
'না, তরা তো জানস্ না। এইসব ব্যাপারের তো খুঁটিনাটি অনেক। তখন তোমার হইলগা একটা বৃহৎ বিশৃঙ্খলার অবস্থা। ছুন্নতের মত একটা ক্রিটিক্যাল রিচ্যুয়াল হওন, বোঝলা না?'
নরেন বলল, 'সে কথাটা নতুন মাকে জিজ্ঞেস করতে পারিনি। তবে বাবা বলেছিলেন, কলেমা পাঠ করানো হয়েছিল। বাকি নিয়মকানুন, ওজু, নমাজ ইত্যাদি শেখানো কিছুই যথাযথ নিয়মে হয়নি। শুধু প্রচারটা হয়েছে ব্যাপক। বোধহয় ভেবে নেওয়া হয়েছিল, গোলমাল একটু শান্ত হলে, সবকিছু ধীরে সুস্থে করা যাবে।'
কিন্তু তা আর করা যায়নি। সময় ঘনিয়ে এসেছিল। অক্টোবরে ধর্মান্তরণ, আবার ডিসেম্বরের মধ্যেই নতুন অনুষ্ঠান করে হিন্দু হওন। পুনঃ হিন্দু হওয়ার ব্যাপারটাও আগে মুসলমান হওয়ার মতই হাস্যকর হয়েছিল। নতুন মা বলেছিলেন, '২২শে অথবা ২৩শে ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক ভাবে সাড়ে তিন হাজার নবদীক্ষিত মুসলমানেরা টাঙ্গাইল কালীবাড়িতে অনুষ্ঠান করে আবার সনাতন হিন্দুধর্মাবলম্বী হলেন। এ অনুষ্ঠানও বিচিত্র।।' পানু জিজ্ঞেস করল, 'নরেন, হিন্দু নাকি হওয়া যায় না, ওটা জন্মসূত্রেই শুধু হওয়া যায়। তাহলে ব্যাপারটা ঘটল কিভাবে?'
নরেন বলল, 'আরে ধুরও। একটা এলাকার সাড়ে তিন হাজার মানুষ একসঙ্গে হিন্দু হবে। বাধা দেবে কে? আর নিয়ম বানাতে হিন্দু বামুনদের তুল্য ওস্তাদ কি কেউ আর আছে নাকি? এত আর সেকালের মত কাশী, নবদ্বীপের পণ্ডিতদের বিধান নিয়ে বা আর্যসমাজি পদ্ধতিতে হিন্দু হওয়া নয়।'
'যা হোক বল শুনি।' পানু বোধহয় বিষয়টার পদ্ধতিগত আচার অনুষ্ঠান বিষয়ে কৌতুহলী ছিল। ও আবার আমাদের মধ্যে বেশ খানিকটা কট্টর হিন্দুবাদী। যাহোক, নরেন বলে চলল, 'আমি তো অতশত জানিনা। নতুন মা এবং বাবাও ব্যাপারটা যেমন বলেছিলেন তেমনই বলছি। নতুন মা বলেছিলেন, অনুষ্ঠানটা হয়েছিল একজন পুরোহিত কিছু জপতপ করলেন। গোবর, সামান্য গোরুর চোনা ও অন্যান্য জিনিস দিয়ে প্রসাদ বানিয়ে সকলের হাতে একফোঁটা, দুই ফোঁটা করে তুলে দিলেন। সকলে তৃপ্তি সহকারে তা খেলেন। দুএকজন আবার তা খেতে গিয়ে বমিও করে ফেললেন। তোমার বাবা খেয়েছিলেন বলে মনে হয়নি। উনিতো আবার এসব ধর্মটর্ম বিশেষ মানেন না।' - নতুন মাও বোধহয় খাননি, বুঝলি?'
আশুদা বললেন যে, খেলে খেয়েছেন, না খেলে খান্নি। মুসলমান হয়ে থাকলে হয়েছেন, না হলে হননি। বেঁচে তো ছিলেন। গোঁড়ামি করে প্রাণটা তো খোয়াননি। সবচেয়ে বড় কথা তাঁরা শেষপর্যন্ত দেশটাতো ছাড়েননি। আচায্যি ফিচ্লেমি করে বলল, 'একটা কাম করলে অবইশ্য শুদ্ধিকরণটা পুরা হইয়া যাইত গা। সেইটা হইল একটু গঙ্গাজলের ছিটা।' নরেন বলল, 'তাও হয়েছে। সেটা আরও মজার। ভারতীয় সেনাবাহিনীর কয়েকজন জওয়ান নাকি পুরুতের হাতে কয়েক ঘটি জল দিয়ে জানিয়েছিল যে সেটা গঙ্গাজল, তারা খোদ গঙ্গা থেকে নিয়ে এসেছে। নতুন মা বলেছিলেন, 'পুরোহিত সেই জল সবার গায় মাথায় ছিটিয়ে দিয়ে বললেন - সর্বশুদ্ধি হল। আমরা আবার পবিত্র হলাম। আসল গঙ্গাজল, সে কী কম কথা!' তবে আমার মনে হয়, নতুন মা ব্যাপারটা নিয়ে মশকরাই করেছিলেন। তবে এ ব্যাপারটায়ই নাকি সমবেত জন সব চাইতে বেশি তৃপ্তি লাভ করেছিল।
নরেনের বৃত্তান্তের এই পর্বটা শেষ হল। খানিক বিরতি এবং আর এক পাত্তর করে পান চলল খানিকক্ষণ। আশুদা বলল, 'তাইনেরা কি শেষতক্ এ দ্যাশে আইলেনই না?' নরেন বলল, 'বাবা আসতে পারেন নি। পঁচাত্তর সালে মুজিব হত্যার পর ওদেশে যে অরাজকতা হয়, তখন তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, আর ওখানে থাকবেন না। নতুন মা তখনো চাকরিতে। তাঁর আরও বছর তিনেক বাকি ছিল রিটায়ারমেন্টের। বাবা অবসরপ্রাপ্ত। তখন তাঁদের সাতান্ন বছরে রিটায়ারমেন্ট হত। বছর দুয়েক হয়েছে তিনি অবসর পেয়েছেন। যেহেতু তখন আমি প্রায়ই যেতাম ওখানে, তাঁদের আসার দরকার হত না। ভাইয়েরা তখনো সেটেল্ড নয়। তবে মেজ কুমিল্লাতেই একটা চাকরিতে আছে। ছোটর গ্র্যাজুয়েশন তখনো হয়নি।'
বাবা বরাবরই খানিকটা বাম ঘেঁষা রাজনীতির লোক। খুব একটা অ্যাক্টিভ না হলেও পরিচিতি আছে। শত্রুও। অবসরের পর রাজনীতিটাতে একটু জড়িয়ে পড়েছিলেন। এই রকমই একটা সময় সপরিবারে মুজিবর নিহত হলেন, এক সামরিক অভ্যুত্থানে। পরবর্তী পর্যায়ে, দলীয় রাজনীতিতে যেমন হয়, ওখানে সাময়িক অস্থিরতা বেশ ব্যাপক আকার ধারণ করে। বাম মনস্করা ওখানে আওয়ামি লীগের ছত্রছায়ায় তখন। এইসময় হঠাৎ একদিন নতুন মা ভাই দুটোকে নিয়ে কোলকাতায় হাজির। ভাইয়েরা গুরুদশার ধড়াচুড়া, কাচা-কোচা পরা। মা বিধবার বেশে। বাবা নাকি কোনো এক গোপন মিটিং থেকে বাসায় আসার পথে অজ্ঞাত আততায়ীর গুলিতে নিহত হয়েছেন। পাসপোর্ট, মাইগ্রেশন ছিলনা কারুরই। চোরা পথে পালিয়ে এসেছেন। মাকে আর নরেন যেতে দেয়নি তখন, ভাইয়েরা শ্রাদ্ধশান্তির পরে চলে গিয়েছিল কুমিল্লা।
'মা আর যান নি?' আমি জিজ্ঞেস করলাম।
'মাস আট দশেক বাদে একটা ভারতীয় পাসপোর্ট করিয়ে দিয়েছিলাম মাকে, অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে। বাবার সেই মুসলমান বন্ধু হায়দর সাহেবও তখন বেঁচে নেই। মা গিয়ে চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে, অফিসের দেনা পাওনা মিটিয়ে চলে এলেন। বাড়িটা বেচেন নি। বাবার বড় সখের ছিল বাড়িটা। ভাইদের বলে এসেছিলেন, তারা যেন কাজে লাগায়।'
আশুদা বলল, 'একটা কথা জিগাই, এই মায়ের কোনো পোলাপান?' নরেন বলল, 'না। বলতেন, তিনটে অতবড় ছেলে আছে। আর দরকার কি?'
'বলতেন মানে? তিনি কি নেই না কী?' আমি জানতে চাইলাম।
'জানিনা। এদেশে এসে তাঁর মন বসেনি। কথাবার্তা প্রায় বলতেনই না। সাধারণ ধর্ম-কর্মও করতেন না। একদিন ভোরে উঠে দেখলাম, সদর দরজা খোলা, শুধু ভেজানো। মা নেই। ঘরে টেবিলের উপর একটি চিরকুট। তাতে লিখে গেছেন - 'আমাকে খোঁজ কোরোনা। কোনো সংসারে চুপচাপ এরকম ভাবে থাকলে, সংসারে সবারই অস্বস্তি এবং স্বাভাবিক ভাবে বেঁচে থাকা কষ্টকর হয়। তোমাদের বাবার অনুপস্থিতির শূন্যতা আমার যাবার নয়। তীর্থ ধর্মের লোভ বা তাতে বিশ্বাস নেই। ইচ্ছা বাকি দিনগুলো ঘুরে ঘুরেই বেড়াবো। চলমানতায় একটা ভিন্ন স্বস্তি আছে। তোমরা সদ্ভাবে, সুস্থ জীবন কাটাও, কামনা করি।' তারপর থেকে অনেক চেষ্টা করেছি, নানাভাবে। কোনো সন্ধান পাইনি।' কথা শেষ করে নরেন বেশ খানিকটা 'কাচা হুইস্কি' এক চুমুকে শেষ করে, একটা বাচ্চা ছেলের মত হাউহাউ করে কাঁদতে লাগল।
কথার পালা শেষ হলে, আশুদা বলল, 'কান্দিস্ না। তবু তর মনে অন্তত এই বিশ্বাসটা আছে যে মায় বাইচা আছেন যেখানেই হউক। আমারতো' — আশুদাও কাঁদতে শুরু করে দিয়েছিলেন।
পরিশেষে, এই স্মৃতি কথকতার কথাকার হিসাবে বলি, এটা 'স্মৃতি মঙ্গলই' যেমন নরেন বলেছিল। গল্প কাহিনীর শেষ হয়, তার একটা পরিণতি হয়। গ্রাম গাঁয়ের সেকালের পরনকথার মত এই কথার শেষ হয় না। এটা চলতেই থাকে।
(শেষ)