• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৫২ | অক্টোবর ২০১২ | কবিতা
    Share
  • 'লাইন রোড'-এর জল-নাটক : কেতকী কুশারী ডাইসন


    টোল-খাওয়া ফুটপাথটায়,
    তার ধার ঘেঁষে
    প্রসারিত একফালি বৃষ্টির জল
    শুয়ে আছে

    বুকে আঁকড়ে
    কিছু ঝ'রে-যাওয়া পাতার
    বিশীর্ণ বিদীর্ণ
    কালচে কুঞ্চিত কায়িকতা,
    মানুষের পায়ে পায়ে থ্যাঁতলানো,

    আর চোখে নিয়ে কিছু
    এলোমেলো পাতার স্বপ্ন :

    সেই-সব পাতা, যারা—হলদে, নরম, টলোমলো—
    ঝুঁকে পড়েছে, কিন্তু এখনও গাছের ডালে লটকে আছে,
    অস্থির, দুলছে—
    জলের ফালিটার চোখের উপর ঝুলে
    হিজিবিজি নাচছে।

    জলটা তাদের বুকে পেতে ব্যগ্র,
    কিন্তু পাতাগুলো প্রতিক্ষণ বাঁচতে ব্যস্ত,
    স্খলনের লগ্নকে যতক্ষণ পারে
    হটিয়ে দিতে চায়।

    একফালি জল, একচিলতে জল,
    জলের টুকরো, পুকুরের প্রতীক,
    আহা বৃষ্টি-মায়ের
    ছোট-খুকী জল, রোগা মেয়েটা
    বুকে কোমরে আলগোছে ধ'রে আছে
    জীর্ণ পাতার কালচে-বাদামী
    শিথিল ক্লিন্ন কম্বল,

    আর প্রাণ ভ'রে চোখ ভ'রে
    হলদে পাতার স্বপ্ন দেখছে :
    স্বপ্নগুলো তার বুকের আয়নায়
    নেচে যাচ্ছে—ছলনাময়।

    অর্ধবৃত্তাকার 'লাইন রোড'-এ
    হেমন্তের হাঁটা হাঁটতে হাঁটতে
    মধ্যে মধ্যেই দৃশ্যটা আমার চোখে পড়ে।
    দেখি টুকরো জলে দু'রকমের পাতা—
    শরীরী আর প্রতিফলিত।

    কখনও বৃষ্টির পর ফুটপাথ-প্রান্তের
    কয়েক ইঞ্চি নীচে
    গাড়ির রাস্তাটার ঢালু ধার ধ'রে
    এক ফুট প্রস্থের নদীর মতো

    মৃদুমন্দ টলটলে জল
    দীর্ঘ পথ চলে,
    ঝাঁজরিতে কলকল পড়ে,
    নিজেকে নিঃশেষে ঢেলে দেয়।

    সেই অচ্ছোদ ক্ষুদ্রনদীটায় চিত্রিত থাকে
    নীল আকাশ, সাদা মেঘ
    আর কালো ডালপালার অচ্ছিন্ন নকশা—
    ক্রমপ্রবাহিত মঞ্চসজ্জা।
    হাঁটি আর ভাবি, কতক্ষণ এদের মহড়া চলবে।

    উইংসে প্রম্পটার, মন্ত্রণা দেয়
    এক অদৃশ্য পাখী—
    চিয়াপ্‌ চিয়াপ্‌ চিয়াপ্‌।
    ও কি আমাদের চীয়ার আপ্‌ করতে বলছে?
    আরেকজন, সমান অদৃশ্য,
    দেয় ভিন্ন প্রস্তাব—
    কুল্লি কুল্লি কুল্লি।
    ও কি কুলি ডাকছে?

    জোরালো রোদ নামে, অঝোরে ঝ'রে পড়ে জলের গায়ে।
    জলের ফালি, জলের ফিতে—এক ফুট প্রস্থের নির্মল নদী—
    নীল-সাদা-কালোর নকশা-সুদ্ধ
    বাষ্পের অপ্সরী হয়ে ব্যাকুল অভীপ্সায়
    ঊর্ধ্বে উঠে যায়। দৃশ্যান্তর হয়।

    ছেদহীন নাট্যকলায়
    আছি ছোট ছোট ভূমিকায়।
    পুরোনো জল হয়ে
    ছেঁড়া কম্বল আঁকড়ে শুয়ে থাকি,
    তন্দ্রার ফাঁকে ফাঁকে
    জিজীবিষু দোলায়িত সুন্দরের
    নাচন দেখি, স্বপ্নে মজি,
    তার পর কখন
    বাষ্পকন্যা হয়ে ঊর্ধ্বে উঠে যাই।
    যা ছিলাম তা থাকি না।

    পরে আবার নামি নতুন জল হয়ে।
    এই তো নাটক।
    চিয়াপ্‌ চিয়াপ্‌ চিয়াপ্‌ ।
    কুল্লি কুল্লি কুল্লি।


    অলংকরণ (Artwork) : অলংকরণ - সঞ্চারী মুখার্জী
  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments