• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৪৬ | সেপ্টেম্বর ২০১০ | কবিতা
    Share
  • তিনটি কবিতা : তিলোত্তমা মজুমদার


    ॥ আজকাল চাঁদকে ॥


    আজকাল চাঁদকে লাগে কটকটে সার্চলাইট, আর বৃষ্টিকে বিপুল বন্যার ষড়যন্ত্র । ভোরবেলা পাখির ডাকে ঘুম ভাঙলে মনে হয় ------- এদের কি আর কাজ নেই সংসারে, চেঁচিয়ে অন্যের ঘুম ভাঙানো ছাড়া ? ফুলের বাজারে পা রাখলেই ভ্যাপসা গন্ধে গা গুলিয়ে ওঠে । ফুল সাজাবার ন্যাকামি ছ.ংআড়াই দিব্যি কেটে যাচ্ছে দিন ! তবু দেখো, কিছু অকর্মণ্য রোজ গান বাঁধছে আর গাইছে । কিছু অলস নিষ্কম্মা তাল ঠুকে তা শুনছে !

    পুরনো বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ হলেই উচ্ছ্বাস দেখাতে হবে কেন ------- তারও কোনও অর্থ পাই না । শিশু আর বৃদ্ধরা তো সবচেয়ে স্বার্থপর !

    এই তো সেদিন স্কুলে যেতাম । এই তো । কবে ? কতদিন ? হিসেব করলে মনে হয় খুব শিগগির মরে যাব ।

    একটা ছোট্ট টুসকির মতো জন্ম আর মৃত্যু...
    ও চাঁদ বৃষ্টি ফুল পাখি শিশু গান এবং বৃদ্ধরা
    আমার প্রাণের বন্ধুরা
    তোমরা এভাবে আমাকে ডেকো না


    ॥ পাখিটা ॥


    তোকে রোজ রুটি দেব ------- আয়
    বলে, পাখিটিকে ঘরে নিয়ে যায়
    দেয় রুটি । বিনিময়ে সারাদিন
    গান গায় পাখি
    কানেও তোলে না
    বাহির আকাশে যত আছে ডাকাডাকি

    ধীরে ধীরে পোষ মেনে যায়

    পোষ মানা পাখি
    কখনও কখনও
    ভালবাসে চুপ করে থাকা
    সুযোগ মেলে না
    সুর না ফুটলে পিঠে চাবুক চালায়

    এ পাখি খাঁচার নয়, যে
    বনের পাখির ডাকে সাড়া দেবে
    ঝাপটাবে পাখা
    রবিঠাকুরের লেখা গানের মতন
    দাঁড়েও শিকলি বাঁধা নয় সে
    এমনিতে দেখে লাগে সকল স্বাধীন

    আর কেউ না জানুক
    পাখি জানে

    রোজের রুটির জন্য কীরকম বিকিয়েছে দিন


    ॥ শাঁখের সন্ধ্যা ভেসে যায় ॥


    গেরস্তবাড়িতে আজও শাঁখ বাজে রোজ সন্ধ্যাবেলা । আমিও তো গেরস্ত । তবে কিনা একালে প্রগতিশীল ------- শাঁখ-টাখ বাজাতে পারি না । দিদিদের মতো ইতু পুজো-টুজো আমি কখনও করিনি । দিদিরাও একালের । বই দেখে কী দারুণ রাঁধে ! গাড়িও চালায় । ছেলেমেয়ে ইসকুলে দিতে যায় রোজ । জামাইবাবুরা পেয়ে গেছে দিব্য দশভুজা । আমার আটটি হাত অসাড় অবশ । বাকি দুটি প্রায়শই উড়ে যায় ফিরোজা আকাশে । স্টিয়ারিঙে বসে চকোলেট একলা চিবোই । ন'টা থেকে সাতটা আপিসে, কাজের ভিতর এক অন্য জগৎ । শনি-রবি দুটি দিন ছাড়া শাঁখের সন্ধ্যা ভেসে যায় ।

    খাওয়া-দাওয়া ? হরিমতি বস্তির কমলা এসে রাঁধে । আমার চেয়েও ঠিক সাড়ে তিন বছরের ছোট । নারায়ণ গাড়ি ধোয় । সাফসুতরো রাখে বাড়িঘর । কমলার চার মেয়ে রোগা ডিগডিগে । নারায়ণ ? আটটি পেটের ভার মাথার ওপর । অতএব, সংসার আমার, কে জানে কার মুখপানে চেয়ে রয় !

    কমলা শুধোয়, সংসারে ঠাকুরের ছবি একটা নেই ? নারায়ণ মুখ ফুটে বলতে পারে না । নীরব সমর্থনে দাঁড়ায় কাছেই । যেন, জোট বেঁধে আসা দুই অধিকার সচেতন যুবা ------- সরাসরি ঈশ্বরের পক্ষ নিয়ে নেয় ।

    রথের মেলার থেকে নারায়ণ এনে দিল নারায়ণী আঁকা ছবি পট । প্যাঁচার সাথেই তাঁর শ্রীমুখের মিল পাই বেশি । কীসের ঢিপিতে যেন বসে আছে প্যাঁচামুখো দেবী এলোকেশী ।

    কমলা বলল, দিদি, শাঁখ তবে এনে দিও কিনে । সাঁঝবেলা আমিই বাজাব । নারায়ণ নিয়ে এল টবমঞ্চে তুলসীর চারা । গাছে রোজ জল দেয় বেচারা নিজেই । ওদেরই নিষেধ । মেয়েদের তুলসীকে জল দিতে নেই ।

    সেই থেকে আমার কর্ডুরয় ট্রাউজারে পকেটে পকেটে ------- পটের অচলা লক্ষ্মী করেন বসত । পুণ্য হয় কার ? যে শাঁখ বাজায় ? নাকি যার শাঁখ বাজে, তার ?

    (পরবাস-৪৬, সেপ্টেম্বর, ২০১০)

  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)