গাইডবই পড়ে বুঝলাম এতে মেসেজিং করার সুযোগ আছে । অর্থাৎ টেক্সটিং । আমি তো মহাখুশি । বড় ছেলেকে তাক লাগিয়ে দেব সে আশায় গাইড দেখে দেখে তত্ক্ষণাৎ একটা মেসেজ পাঠাবার উদ্যোগ নিলাম । ব্যাপারটির একটা মোটামুটি ধারণা পেতে বেশ খানিক সময় লাগল-------কোনোদিন করিনি তো । একশ'বার টেপাটেপি করে শেষ পর্যন্ত একটা সংক্ষিপ্ত মেসেজ দাঁড় করিয়ে ছেলেকে পাঠিয়ে দিলাম । মেসেজটা সত্যি সত্যি চলে গেছে বুঝতে পেরে গর্বে ফুলে উঠল বুকটা-------দারুণ একটা কাজ করে ফেলেছি । আমার ক্যালিফোর্নিয়াবাসী ছেলে সন্ধ্যার পর বাড়ি ফিরে আমাকে টেলিফোন করে অভিনন্দন জানালো । সাফল্যের সঙ্গে টেক্সটিং করতে পেরেছি বলে নয় শুধু, উনবিংশ শতাব্দী থেকে বিংশ শতাব্দীতে কৃতিত্বের সঙ্গে প্রবেশ করতে পেরেছি বলেও ! কথার ছিরি দেখুন ।
আজকাল আমি পঞ্চাশের নিচে কোনও স্বদেশী ছেলেমেয়ের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি না । করে লাভ নেই । ওরা ফোন ধরে না । আগেকার দিনে লোকে ফোন ধরত না বাড়িতে ফোন ছিল না বলে । এখন ধরে না বাড়ির প্রতিটি ঘরেই একাধিক ফোন আছে বলে । অভোজন আর অতিভোজনের তফাত্টা তো সবারই জানা । মেসেজ রাখলেও ওরা কলব্যাক করার ধার ধারে না । মেসেজ মুছে ফেলে । ধরা পড়ে গেলে বলে, `ভুলবশত' অর্থাৎ `এক্সিডেন্টালি' । আসলে ভুল বা এক্সিডেন্ট কোনোটাই নয় । আসল কথা, আমি `অতীতের মানুষ', আমার সঙ্গে বলার মতো কি থাকতে পারে ওদের ? সত্যি তো, কি থাকতে পারে ! আরো একটা ব্যাপার আছে এখানে । আমরা `অতীতের মানুষ' (ওরা নিজেদের মধ্যে বলে, আরো সঠিকভাবে, ফসিল, রেলিক) বলেই দূরালাপনের জন্যে এখনও `ল্যাণ্ডফোন' ব্যবহার করি, যা ওরা করে না সচরাচর । ওদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে ইমেইল করুন, সেলফোন করুন । সবচেয়ে ভাল টেক্সটিং করা । হ্যাঁ, টেক্সটিং । দারুণ জিনিস এটি । এমনও যন্ত্র নাকি আছে বাজারে যে আপনি অপরপক্ষের চেহারা দেখতে পাবেন কথা বলার সময় । যেন সামনা সামনি বসে কথা বলছেন । বিজ্ঞান আর প্রযুক্তি আমাদের কোথায় নিয়ে গেছে ভেবে অবাক হই । উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েদের আর কি চাই বলুন । তবে আমার বয়সে অবশ্য এ যন্ত্র হাতে না আসাই ভালো, কি বলেন ? এমনিতেই তারা কথা বলতে চায় না আমাদের সঙ্গে, তার ওপর চেহারাখানা দেখতে পেলে তো হাসতে হাসতে ওদের পেটে খিল ধরে যাবে ।
আমার ছেলেরা যখন টিনেজ ছিল তখন `সাইবারস্পেসের' এতটা ব্যস্তবাগীশতা ছিল না । ইমেইল ছিল, কিন্তু সেলফোন, আইফোন এসব তখনও আবিষ্কার হয়নি । ফলে ওরা ডিনারটেবিলে মাঝে মাঝে সশরীরে দেখা দিত । এখনকার টিনেজদের সে সময় নেই । ওদের প্রত্যেকেরই নিজস্ব ঘর আছে, প্রবাসে তো বটেই, আজকাল দেশেও আছে প্রায় প্রতিটি মধ্যবিত্ত পরিবারে, এবং সে ঘরগুলো একেকটি দুর্গের মতো, দিনেরাতে প্রায় প্রতিটি মুহূর্ত সেগুলোর দরজা বন্ধ, ওদের নিজস্ব সাইবারস্ফিয়ার । বাজারে এমন কোনো প্রযুক্তিজাত দ্রব্য নেই যা তারা সংগ্রহ করে না-------দামি সিডি ভিসিডি প্লেয়ার আর স্পীকার থেকে শুরু করে কম্পিউটার সংক্রান্ত যাবতীয় সর্বাধুনিক উপকরণ, ল্যাণ্ডফোন, সেলফোন, হাতের কাছে সবই আছে তাদের । তারা সবসময়ই ব্যস্ত । একটি মুহূর্ত তারা নষ্ট করে না । হয় ইমেইল করছে পরস্পরকে, নয় চ্যাটরুমে চ্যাট করছে, নয় টেক্সটিং, নয় ফেসবুক নিয়ে মহানিমগ্ন । দিনরাত চব্বিশ ঘন্টা তাদের মস্তিষ্ক অদৃশ্য তার দিয়ে বাঁধা সাইবার জগতের সঙ্গে । সুতরাং বাবা-মা ভাইবোনদের সঙ্গে কথা বলে সময় নষ্ট করার মতো সময় কোথায় তাদের ।
কমিউনিটির অনুষ্ঠানাদিতে কালেভদ্রে ওদের কারো কারো সঙ্গে দেখা হয়ে যায় । আগ্রহ করে এগিয়ে যাই কথা বলার জন্যে । ওরা আমার চেয়ে প্রায় দুই প্রজন্ম ছোট । যোজন দূরত্বে আমাদের বাস । তবুও কাছে গিয়ে তাদের মনের কথা শুনবার ইচ্ছে হয় । কিন্তু ওদের দূরত্বের দুর্গ কিছুতেই ভেদ করে উঠতে পারিনা । বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা ভীষণ মিতভাষী-------অন্তত আমাদের প্রজন্মের সঙ্গে । কথাই বলতে চায় না । ঘাড় নেড়ে যা বলার বলে দেয় । কিম্বা ঠোঁট নেড়ে, বা আঙুল নেড়ে, বড়জোর হ্যাঁ হুঁ বা `আইডানো' বলে । এ প্রজন্ম খুবই সংরক্ষণসচেতন । অনর্থক স্বরনালী ব্যবহার করে এনার্জি নষ্ট করার কোনো মানে আছে ? এ প্রজন্ম কথাবার্তার ব্যাপারে দারুণ গ্রীনপন্থী !
দেশ থেকে কোনো তরুণ তরুণীর ইমেইল পেয়েছেন ইদানীং ? লক্ষ করেছেন কি নিখুঁতভাবে তারা ইংরেজি ক্যাপিটেল অক্ষরের ব্যবহার একেবারে ছেড়ে দিয়েছে ? বাক্যের গোড়াতেই হোক আর মাঝখানেই হোক আমি যে i নয়, I সেটা তারা মানতে রাজি নয় । একেই বলে স্বাধীন যুগের মানুষ । আমরা সেটা বুঝব না, কারণ আমরা হাজার হলেও ব্রিটিশের গোলামি করেছি, ওরা করেনি । তাদের সংরক্ষণনীতির চূড়ান্ত উদাহরণস্বরূপ wait কে বলবে 8, for কে লিখবে 4, you কে u , are -কে r । চমত্কৃত না হয়ে পারবেন আপনি ? ভাল কথা, ওদের ইংরেজির দোষ ধরবার চেষ্টা করবেন না । লাভ নেই । ওদের ভাষা যে আপনি বুঝতে পারছেন আদৌ (নাকি পারছেন না ?) এটাই আপনার হাজার ভাগ্য । ওরা স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক ।
গত দু'তিন দশকে বিজ্ঞানের যে ক'টি যুগান্তকারী আবিষ্কার মানুষের জীবনকে অপরিবর্তনীয়ভাবে প্রভাবিত করেছে তার একটি হল ইন্টারনেট । সেলফোন হল আরেকটি । ইন্টারনেট না হলে সমসাময়িক যুগের তথাকথিত বিশ্বায়নের গতি এতটা বেগবান হতে পারত কিনা সন্দেহ । পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ, সজ্ঞানে বা অজ্ঞানে, ইন্টারনেট দ্বারা কোন-না-কোনও ভাবে প্রভাবিত । এ এক আশ্চর্য আবিষ্কার মানুষের । এর কারণে আজকে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষই একে অন্যের প্রতিবেশী, অন্তত যোগাযোগের অর্থে ।
দু:খের বিষয় যে বিজ্ঞান যতই শুচিশুভ্র আর সত্যনিষ্ঠ হোক, যতই মহৎ হোক তার উদ্দেশ্য, বিজ্ঞানের বীজ থেকে উত্পন্ন যে ফসল, যাকে সাধারণ ভাষায় প্রযুক্তি বলা হয় তার দায়িত্বভার কিন্তু বিজ্ঞানীর নয়, রাজনৈতিক নেতাদের, শিল্পপতি আর বড় বড় ব্যবসায়ীদের । তাদের হাতে এসে বিজ্ঞান তার শুভ্রতা হারায়, কৌমার্য হারায়, হয়ে যায় অস্ত্র, পণ্য, উদ্দেশ্যসাধনের হাতিয়ার । আণবিক শক্তি, আধুনিক বিজ্ঞানের এক বিস্ময়কর আবিষ্কার, যা অনায়াসে বিশ্বের প্রতিটি মানুষের প্রতিটি ঘর আলোতে আলোতে ভরে দিতে পারত, কিন্তু সাম্রাজ্যবাদী রাজনীতির রক্তলোলুপ নেতারা তা হতে দেননি । সেই শক্তিকে বরং তাঁরা ব্যবহার করেছেন দু'টি বোমা দিয়ে দু'লক্ষ মানুষের পুরো দু'টি শহর নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে । আণবিক শক্তি এখন বিশ্বের প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রসমূহের রাজনৈতিক শক্তির পরিচায়ক । তাদের জাতীয় অহংকার । কার পেশিতে কত বল তার চূড়ান্ত মানদণ্ড হিসেবে ব্যবহৃত হয় এই শক্তি ।
ইন্টারনেটের কাহিনীও প্রায় একইরকম । এতে কোনও সন্দেহ নেই যে ইন্টারনেট গোটা বিশ্বকে সংযুক্ত করেছে বিনা তারের তারেতে । এক অলক্ষ্য রাখিবন্ধনে আবদ্ধ করেছে বিশ্বমানবতাকে । ইন্টারনেটের কল্যাণে আজকে আমাদের ঘরে ঘরে গুগুল আর ইয়াহুর জ্ঞানকোষ মুহূর্তে চলে আসে চোখের সামনে । পৃথিবীর এমন কোন অঞ্চল নেই, এমন কোন ঘটনা নেই, নেই এমন কোন বিশিষ্ট ব্যক্তি যার সম্বন্ধে অন্তত একটা প্রাথমিক জ্ঞান পাওয়া যাবে না ইন্টারনেটে । ভাষা, ধর্ম, বর্ণ গোত্র জাতি নির্বিশেষে মানুষ হয়েছে একে অন্যের পাশের বাড়ির পরিচিত মুখ, পরস্পরের সুখদু:খের বন্ধু, বিপদের সহায় । আবার উল্টোপিঠে একই ইন্টারনেট সাধারণ মানুষের জীবনে বিপদকে দুয়ারে এনে হাজির করতেও দিয়েছে সহায়তা । ইন্টারনেটের সাহায্যে ছায়াবাসী নিশাচর প্রাণীরা জনপদ ধ্বংস করে দেয় পরম অবলীলায়, শিশু পাচার করে এক দেশ থেকে আরেক দেশে, গরিব ঘরের কিশোরী আর যুবতীদের হরণ করে চালান করে বিশ্বজোড়া ছড়িয়ে পড়া পর্ন বাজারে ।
এবার দেশে বেড়াতে গিয়ে দেখলাম সেলফোন কিভাবে মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে
আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে । পথের মানুষ, দুবেলা ভাল করে খাবার উপায় নেই, তার হাতেও একটি সেলফোন । গ্রামের বৃদ্ধ কৃষক, নিরক্ষর শ্রমিক, মাঝি, জেলে, এমন কোনো মানুষ দেখিনি যে সেলফোন ব্যবহার করে না । সেলফোন আছে বলে আজকে রাস্তায় বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তত্ক্ষণাৎ ডাক্তার পুলিশে খবর পাঠানো যায়, কোথাও আগুন লাগলে দমকল ডাকা যায় মুহূর্তের মধ্যে । কোথাও চুরিডাকাতি বা খুনখারাবি হলে বা হবার উপক্রম হলে চোখের পলকে খবর পাঠিয়ে দেওয়া যায় যথাস্থানে । আবার এই একই যন্ত্র দিয়ে চরম সর্বনাশও করা যায় মানুষের, জনজীবনে সৃষ্টি করা যায় চূড়ান্ত বিপর্যয় । সেলফোন হতে পারে, এবং হয়েছেও বহুবার, কোনো মারণাস্ত্রের টাইমার । মাদ্রিদের ট্রেন হত্যা, বাংলাদেশের যুগপৎ ষাটটি বোমা বিস্ফোরণ সারা দেশব্যাপী, ভারতের মুম্বাইতে একাধিক লক্ষ্যস্থলে যৌগপদিক আক্রমণ, এ সবের পেছনে সেই একই অস্ত্রের ব্যবহার-------সেলফোন । আজকের যুগে এই আশ্চর্য বস্তুটি শত্রুমিত্র, রামরাবণ, মানব, দানব, দস্যু গৃহস্থ, সব পক্ষেরই অপরিহার্য সহায় হয়েছে তাদের সমরপ্রচেষ্টায় ।
ইন্টারনেট আবিষ্কার হবার স্বল্পকালের মধ্যেই তার আনুষঙ্গিক অনেক শাখাপ্রশাখা দ্রুত বের হয়ে গেছে বাজারে । ইউটিউব, ব্লগ, ট্যুইটার, ফেসবুক, আরো কত কি । এগুলোর পেছনে মানবজীবনের কল্যাণকামনা কতখানি কাজ করেছে জানিনা, সম্ভবত ব্যবসায়িক বুদ্ধিটাই খাটানো হয়েছে বেশি । হাজার হলেও স্বল্পতম সময়ে কোটিপতি হবার স্বপ্নকেই তো বলা হয় গ্রেট আমেরিকান ড্রিম, তাই না ? ইন্টারনেট এসে মেধাবি ছেলেমেয়েদের সুযোগ দিয়েছে রাতারাতি কোটিপতি হবার । এবং তারা হচ্ছেও ।
প্রশ্ন হল কিসের মূল্যে ?
আমি নিজে এগুলোর প্রতি খুব আকৃষ্ট বোধ করিনি কখনও, সম্ভবত আমার বয়সের কারণেই । রক্ষণশীলতা, হাজার হলেও, এবয়সের বৈশিষ্ট্য । তার ওপর আমাদের স্বাভাবিক যন্ত্রভীতি তো আছেই । তবুও এগুলোর ত্রক্রমবিস্তারমান প্রভাব থেকে একেবার ছাড়া পাওয়াও পুরোপুরি সম্ভব নয় । যেমন ফেসবুক । আমি যতই এড়াতে চাই একে ততই সে তাড়া করে আমাকে । শুনেছি এ এক দারুণ উপকারি জিনিস । হয়তো বা । কিন্তু এর কিছু অনুপকারি দিকের সঙ্গেও আমার পরিচয় হয়েছে সম্প্রতি, দুর্ভাগ্যক্রমে ।
আমার লেখালেখির সুবাদে বেশ কিছু তরুণ এবং মাঝবয়েসি পাঠকের সঙ্গে একটা হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে গত দুই দশক ধরে । ইদানীং এদের অনেকের কাছ থেকেই ইমেইল পাচ্ছি যার ভাষা হল এরকম : আপনি কি অমুকের বন্ধু, না, বন্ধু নন ? প্রথম দিকে আমি অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে যেতাম ছেলের আপাত বেয়াদবি দেখে-------চ্যাংড়া ছেলের সাহস তো কম হয়নি । একদিন এদের একজনকে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম এধরনের কোন চিঠি সে সত্যি সত্যি লিখেছে কিনা আমাকে । বেচারি তো একেবারে মাটিতে মিশে যাবার অবস্থা । `আঙ্কেল, আমি কল্পনাও করতে পারিনা আপনাকে আমি এরকম চিঠি লিখব । এটা আমার কাছ থেকে যায়নি ।' কার কাছ থেকে গেছে সেটা বুঝতে কষ্ট হল না ।
বছর দেড়েক আগে নাজুজি নামে আঠারো বছরের একটি মেয়ে, অটোয়ার কার্লটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী, এক শীতের সকালে পুল থেকে ঝাঁপ দিয়ে জলে ডুবে আত্মহত্যা করল । এবয়সে প্রেমঘটিত ব্যাপার নিয়েই ছেলেমেয়েরা অনেক সময় চূড়ান্ত কিছু করে ফেলে, সেটা চিরকালই হয়েছে, এবং ভবিষ্যতেও হবে । কিন্তু এক্ষেত্রে তা হয়নি । ঘটনাটি ছিল এরকম ।
মেয়েটির জন্মবৃদ্ধি বাল্য কৈশোর সবই কেটেছে টরন্টোতে, বাবামায়ের স্নেহের আশ্রয়ে । এই প্রথম তার বাড়ি থেকে ভিন্ন শহরে একাকী জীবনের মুখোমুখি হওয়া । সদ্য পাওয়া স্বাধীনতা, সদ্যপ্রাপ্ত নি:সঙ্গতাও । হয়তো হৃদয়সংক্রান্ত বিষয়াদিও কিছু ছিল নেপথ্যে । হতে পারে পড়াশুনাও ভালো এগুচ্ছিলো না । যে কারণেই হোক একটু মানসিক অস্থিরতায় ভুগছিলো বেচারি । ভয়ানক বন্ধুকাতরতা । আদর্শ পরিস্থিতি ফেসবুকের দ্বারস্থ হয়ে মরমী বন্ধু খোঁজা । যে তার দু:খ বুঝবে । যে তাকে সঙ্গ দেবে দূর থেকে, তাকে প্রবোধ দেবে কোমল সুরে, যার কাছে সে মন খুলে কথা বলতে পারবে নির্দ্বিধায়, নির্ভয়ে । যে তাকে বিচার করবে না, শাসন করবে না, ধিক্কার দেবে না । এমনি এক বন্ধু সে পেয়ে গেল অচিরেই ফেসবুকের মাধ্যমে । একটি মেয়ে, সমবয়সী বলে দাবি করল সে । শুধু সমবয়সীই নয়, বলল, সমব্যথাতেও ব্যথী । সখ্যবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গেল তারা । দু'জনই পরস্পরের কাছে নিজেদের জীবনের দু:সহ অবস্থার পূর্ণ বিবরণ প্রকাশ করে চলল । এ জীবন আর বেঁচে থাকার যোগ্য নয়, জানালো তারা পরস্পরকে । একসময় ওপারের সেই অচেনা বন্ধুটি প্রস্তাব করে পাঠালো এসো আমরা দুজন একই দিন একই ভাবে এই ব্যর্থ জীবনের অবসান ঘটাই । প্রথমে খুব মোলায়েম সুরে, তারপর খানিক জোর দিয়ে, যেমন, কি হল তোমার ভয় করছে বুঝি, এত সুন্দর একটা মৃত্যুর সুযোগ তুমি হাতছাড়া করতে চাও ? এভাবে সে চাপ সৃষ্টি করতে থাকে হতভাগ্য মেয়েটির ওপর । সব সেই ফেসবুকের মাধ্যমে, যেখানে কেউ কারো মুখ দেখেনা, কারো পরিচয় জানে না, বা জানার দরকার হয় না । শেষে নাজুজি রাজি হয়ে যায় এবং একটা দিন বাছাই করে ফেলে দুজন মিলে । সেই চুক্তি অনুসারেই নাজুজি ঐ পুল থেকে ঝাঁপ দিয়েছিল । পুলিশের তদন্তে পরে জানা গেল যে তার সেই `মরমী' বন্ধুটি আসলে কোনও সমবয়সী মেয়ে নয়, কোনো দু:খভারাক্রান্ত কিশোরী নয়, সে এক চল্লিশোর্ধ পুরুষ, মিশিগানের কোনো এক হাসপাতালের নার্স, স্পষ্টতই মানসিকভাবে রুগ্ন এক স্খলিত জীব, যে নাজুজির মত অসহায় মেয়েকে লক্ষ করে ফেসবুকের মাধ্যমে তার পশুবৃত্তি চরিতার্থ করার পথ খুঁজে বেড়ায় ।
এইতো গেল একটি ঘটনা । সম্প্রতি আরো দু'চারটে বীভত্স কাহিনী আমার কানে এসেছে, যেখানে প্রায় একইভাবে ধ্বংস হয়েছে কতগুলো স্পর্শকাতর বাঙালি মেয়ের জীবন । যোগাযোগ প্রযুক্তির এই নতুন উপসর্গগুলো পশ্চিমের তরুণ প্রজন্মের জন্যে রীতিমত সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে সেটা জানি, কিন্তু আমাদের দেশের আপাতনিরীহ মেয়েরা, বিশেষ করে পতিব্রতা বিবাহিত মেয়েরাও যে একই ফাঁদে পা দেবার অবস্থায় নিয়ে যাবে নিজেদের সেটা আমি কল্পনা করিনি । ভাবলাম এটা নিয়ে লেখা দরকার ।
ফেসবুকের সব শিকারি অবশ্য এক ছাঁদে গড়া নয়-------একেকজনের একেক রোগ, একেক চিন্তা, এবং একেক পদ্ধতি । মিশিগানের সেই রুগ্ন চরিত্রটির লক্ষ্য ছিল একটি দুর্বল, ভঙ্গুর মেয়েকে বশ করে তার মনোবলের শেষ বিন্দুটুকু নি:শেষ করে ফেলা, এবং সর্বশেষে তাকে আত্মহননের সর্বনাশা পথে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া । এই কর্মটিতে তার একমাত্র তৃপ্তি একটা জলজ্যান্ত মানুষের স্বেচ্ছামৃত্যু ঘটানো কোনরকম বলপ্রয়োগ ছাড়াই । পরে শোনা গেছে যে নাজুজির ঘটনাটিই তার একমাত্র কীর্তি ছিল না, এর আগেও মহাশয় ঠিক একইভাবে আরো বেশ ক'টি মেয়ের মৃত্যু ঘটিয়েছেন দূর থেকে ফেসবুকের কলকাঠি চালিয়ে । ফ্রয়েড সাহেব বেঁচে থাকলে তাকে নিয়ে লম্বা তত্ত্ব লিখে ফেলতে পারতেন ।
আমাদের বাঙালি মেয়েগুলোর ক্ষেত্রে জন্তুগুলোর মতলব ছিল অন্যরকম-------জটিল কোনো মনোরোগের ব্যাপার নয়, নেহাত সেকেলে লোভলালসা । কম্পিউটার যুগের আগে লোভী আর লম্পট মানুষদের অসুবিধা ছিল এই যে বেশিদিন ঘাপটি মেরে থাকা সহজ ছিল না, একদিন না একদিন ধরা সে পড়ে যেতই । কিন্তু কম্পিউটার আর ফেসবুক তাদের সেই ঝুঁকিটা থেকে রেহাই দিয়েছে ।
ওদের কায়দাটি এরকম ।
ফেসবুকের মাধ্যমে খবর পাওয়া যায় যে ক্যানাডার অমুক শহরে অমুক পরিবারের নতুন বউটি স্বামী থাকা সত্ত্বেও মানসিকভাবে সঙ্গীহারা । সবাই যে নতুন বউ তা নয়, কেউ কেউ হয়ত চল্লিশ ছুঁই ছুঁই করছে । বরং বয়সে একটু ভারি হলেই বেশি সচ্ছল হবার সম্ভাবনা, সুতরাং তার কাছ থেকে বেশি মাল খসাবার আশাতে থাকা যায় । মেয়েগুলোর একেকজনের হয়ত একেক সমস্যা, তবে মূল সমস্যা একটাই-------নি:সঙ্গতা, জীবনের প্রতি একটা হতাশার ভাব । স্বামী হয়ত মানুষ হিসেবে খারাপ নয়, কিন্তু কোন রসকষ নেই, সাদামাটা, একটু হাবাগোছেরও মনে হবে মাঝে মাঝে । স্ত্রীর দেহ পেয়েই সে খুশি, আর কোনো চাহিদা নেই, এবং তার স্ত্রীর যে অন্য কোনো চাহিদা থাকতে পারে সেটা কল্পনায় ঢুকবার মত কল্পনাশক্তি তার নেই । ফলে, যুবতী স্ত্রী বৈষয়িকভাবে হয়ত কোন অভাব অনটনভোধ করে না, কিন্তু মানসিকভাবে একেবারে নি:স্ব । এইসব একাকী মেয়ের জন্যে ফেসবুক হল আদর্শ আশ্রয় । তার কাতর আত্মকথন একসময় ফেসবুকের বায়ুতরঙ্গে ভেসে ভেসে দূর স্বদেশের এক দরদী চিত্ত স্পর্শ করে । সাত হাজার মাইল দূরত্বের সেই সহৃদয় কন্ঠটি তাকে মিষ্টি কথার মোলায়েম স্পর্শ দিয়ে শান্ত করে, বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয়, তাকে নৈকট্যের আশ্বাস দেয়, শোনায় তাকে জীবনের গান, আনন্দ আর আশার গান । সে মুগ্ধ হয়, লুব্ধ হয় নিজের হাতদুখানিও একইভাবে বাড়িয়ে দিতে । আস্তে আস্তে তাদের ফেসবুকের আলাপ জমে ওঠে, প্রতিদিনই একবার করে তারা কথা বলে, পরস্পরের সুখদু:খের খবর নেয় । একসময় তারা কি ভাবে একাকী ঘরে বসে থাকে, কি তাদের স্বপ্নে দেখা দেয় এমন সব ব্যক্তিগত আলাপও শুরু হয়ে যায় । অর্থাৎ অজান্তে তাদের মনের আদানপ্রদান আরম্ভ হয় । মেয়ে মনে করে এটা দুপক্ষেই, ছেলে জানে আসল ঘটনাটি কি । ক্যানাডার বউটি ভাবছে এমন কি দোষ এতে-------কেউ তো দেখছে না জানছে না, কারো কোন ক্ষতি হচ্ছে না, চরিত্র নষ্ট হচ্ছে না, একেবারে সাফসুফাই সম্পর্ক । কোনো জটিলতা নেই, কোন চাওয়া পাওয়া নেই, শুধু একটুখানি ভালোলাগা, একটুখানি লুকোচুরি, দূর থেকে, ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে । হলই নাহয় প্রচলিত নীতির কিঞ্চিৎ ব্যতিক্রম, -- বলেই তো এত সুখ, এত উত্তেজনা । জীবনে তো কখনও কোন খেলার সুযোগ হইনি তার, মানে সত্যিকার খেলা, যাকে বলে বড়দের খেলা, নাহয় ফেসবুকের সাহায্যে দূর থেকে একটু খেলাই করা গেল, ক্ষতি কি তাতে ।
ধীরে ধীরে ছাড় দিতে দিতে একদিন মেয়ে নিজেই অবাক হয়ে গেল আয়নায় মুখ দেখে । বুঝতে পারল সে হাবুডুবু খাচ্ছে, সে ডুবছে ডুবছে, অন্তহীন অতলতায় ডুবে যাচ্ছে, অথচ তার শক্তি নেই নিজেকে রোধ করার । তার দুর্গ ভেঙে একটি অচেনা মানুষ প্রবেশ করেছে তার হৃদয়ের গভীরতম প্রকোষ্ঠে । রোজ তার চিঠি পাওয়া চাই, রোজ তার কথা শোনা চাই, তার আদর পাওয়া চাই, ভালোবাসার অভয়বাণী শোনা চাই ।
দূর থেকে ছেলে টের পেল শিকার প্রস্তুত । এখনি তাক করে বাণ ছুঁড়তে হবে । তারপর কি হল, সে হঠাৎ যোগাযোগ বন্ধ করে দিল । একদিন, দুদিন, তিনদিন, ..., পুরো একসপ্তাহ একেবারে চুপ । এদিকে মেয়ের প্রায় পাগল হয়ে যাবার অবস্থা । কি হল, কি হল । কাউকে বলতেও পারছে না । সে যে অসহ্য অবস্থা বেচারির । বারবার লিখছে : তুমি কোথায় ? কিছু লিখছ না কেন । তুমি জাননা তোমার চিঠি না পেলে আমি কিরকম অস্থির হয়ে পড়ি । তুমি কি আর ভালোবাসো না আমাকে ? আমি কি না জেনে না বুঝে তোমাকে কষ্ট দিয়েছি ? বল, প্লীজ, কিছু একটা বল ।
হ্যাঁ, এটাই মোক্ষম সময় ।
একদিন ফেসবুকের পর্দায় সেই প্রিয় পরিচিত মুখ । না না, তোমাকে ভুলিনি । সে কি কখনো সম্ভব ? তার আগে আমার মরে যাওয়া ভালো । কি জানো মণি, ভীষণ একটা বিপদে পড়ে আছি । আমার ছোটবোনের ক্যান্সার চিকিত্সার জন্যে ব্যাঙ্কক গিয়েছিলাম । যথেষ্ট টাকা ছিল না বলে এক দালালের কাছে হাজার বিশেক ধার করেছিলাম । ঢাকায় ফেরার দুসপ্তাহ পর কোম্পানির ব্যবসা পড়ে যাওয়াতে চাকরিটাও হারালাম । ফলে ঋণের টাকাটা দিতে পারছি না । সেই দালাল আমাকে হুমকি দিচ্ছে দশ দিনের মাঝে টাকা ফেরত না দিলে সে গুণ্ডা লাগিয়ে দেবে আমার পেছনে । আমি এখন পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি । তোমার কথা রোজ ভাবি, কিন্তু কি করব সোনা, কোথায় বসে লিখব তোমাকে । এই পলাতক জীবন যে আর সহ্য হচ্ছে না আমার । কি করব বলত ।
সত্যি তো, কি করবে বেচারি । কিন্তু মেয়ের তো সামর্থ্য আছে কিছু করার তার প্রিয় মানুষটির চরম বিপদের মুহূর্তে । বিশ হাজার টাকা কত হয় ক্যানাডিয়ান ডলারে ? ৪০০ ডলার, বা তারও কম । অবিলম্বে সে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলে গোপন পথে পাঠিয়ে দিল ঢাকার সেই লোকটির কাছে-------ঠিক যা ভেবেছিল লোকটি । শুরু হল ডলারের গোপন পথে ঢাকা গমনের পালা । পরের বার তার ছোটভাইকে জেল থেকে ছাড়িয়ে আনতে হয়েছে । না না সে কোনো অপরাধ করেনি, মিথ্যে অভিযোগে শত্রুরা ধরিয়ে দিয়েছিল । এর পর হয়ত মাঠে ফুটবল খেলতে গিয়ে পা ভেঙে গেছে, চিকিত্সার টাকা নেই । ত্রক্রমেই বৃদ্ধি পেতে লাগল টাকার পরিমাণ, অছিলার সংখ্যা । মেয়ের ব্যাঙ্কের টাকা শেষ, স্বামীর কাছ থেকে নানা ছুতোয় টাকা খসানোর সীমাও একেবারে শেষ মাথায় । একসময় বাধ্য হয়ে লিখতে হল তাকে : আমি যে আর পারছি না কিছু পাঠাতে তোমাকে । আমি তো একেবারে ফতুর হয়ে গেলাম-------একেবারেই কপর্দকশূন্য ।
যবনিকা পতনের সময় আসন্ন । মুখোশ খোলার সময় । ছেলে লিখে পাঠালো : বুঝি তোমার অসুবিধা হচ্ছে, কিন্তু আমারও তো কোনো উপায় নেই । শোন, ভালো করে শোন, আগামী সপ্তাহের মধ্যে যদি আরো দু'শ ডলার না পাঠাও তাহলে বাধ্য হয়ে তোমার স্বামীর কাছে লিখতে হবে সবকিছু, দেখাতে হবে তোমার সব চিঠিপত্র । তুমি নিশ্চয়ই তা চাওনা ।
তারপর কি হল সে তো পাঠক বুঝতেই পারছেন । এইভাবে বিদেশের বেশ কিছু দুর্বলমন অসহায় গৃহবধূর জীবন ধ্বংস হয়ে গেছে, বৈবাহিক জীবন গেছে জাহান্নামে । একজন তো উপায়ান্তর না পেয়ে দু:খে, লজ্জায়, ঘৃণায়, নিজের অভিশপ্ত জীবনের অবসাদ ঘটিয়েছে গলায় দড়ি দিয়ে ।
ফেসবুকের এইসব ধূর্ত শেয়ালগুলোর সবাই কিন্তু টাকা আদায় করেই ক্ষান্ত হয়না, আরো কিছু চায় তারা । এমন দুচারটে ঘটনার খবর এসেছে আমার কাছে যে, মেয়েকে বশ মানাবার পর ছেলে হয়ত লিখে পাঠালো : তোমাকে একটা মুহূর্ত যদি নিজের চোখে দেখতে পারতাম আমি । শুধু চোখের দেখা, মুখোমুখি হওয়া একটিবারের জন্যে, আর কবির গানের মত `গভীর দু:খে দু:খী হওয়া', একটিমাত্র গাঢ় নি:শ্বাসভরা মুহূর্তের জন্যে, তাহলে জীবন সার্থক হয়ে যেত আমার । সাত হাজার মাইল দূরত্বের নি:সঙ্গ নারীকে একেবারে অবশ করার আর কি বুদ্ধি থাকতে পারে । ব্যস, মেয়ে তো কাত । স্বামীর মাথায় হাত বুলিয়ে সত্যমিথ্যা একটা কিছু অজুহাত দিয়ে একদিন সে সত্যি সত্যি ঢাকায় গিয়ে উপস্থিত অপেক্ষমান প্রেমিকের কাছে । প্রেমিক যে কেবল `একটি মুহূর্তের গাঢ় নি:শ্বাসের' জন্যেই কাতর হয়ে বসে ছিল না সেটা বুঝেই সে গিয়েছিল ঢাকায় । সে ভালো করেই জানত কি ঘটতে যাচ্ছে এবার । কিন্তু তখন তার সাবধানতার দুর্গ ভেঙে গেছে, ভেঙে গেছে সব নৈতিকতার দেয়াল । সে প্রেমে পড়েছে । গভীর অন্তরঙ্গ প্রেম । বিবাহিত নারী হিসেবে সে ভালো করেই বোঝে সে প্রেমের অর্থ কি । সে জেনেশুনেই স্বেচ্ছায়, সানন্দে দেহদান করে পরম তৃপ্তি নিয়ে ফিরে আসে ক্যানাডায় । ফেরার পর অল্পদিনের মধ্যেই তৃপ্তিটা চরম আত্মগ্লানিতে পরিণত হয়, যখন প্রেমিকের কাছ থেকে টাকার আবদার আসতে শুরু করে । ঠিক আগের মেয়েটির মতো । প্রথমে এই ছুতো, পরে ওই ছুতো । শেষে টাকা পাঠানোর অক্ষমতা প্রকাশ করলে হুমকি আসে গোপন কথা ফাঁস করে দেওয়ার । শুরু হয়ে যায় নিষ্ঠুর নির্মম ব্ল্যাকমেইলের খেলা । আত্মহত্যা ছাড়া মেয়েটির আর কি পথ খোলা থাকে তখন ? সে পথেই যেতে শুরু করেছে আমাদের দেশের কোনো কোনো মেয়ে ।
এইভাবে ফেসবুকে কারো বন্ধু হবার বাসনা আমার নেই । দয়া করে জানতে চাইবেন না আমি আপনার বন্ধু কিনা ।
(এপ্রিল, ২০১০; পরবাস-৪৫)