বছর ছয়েক আগে বুদ্ধদেব বসুর কনিষ্ঠা কন্যাকে লেখা চিঠির সংকলন বেরিয়ে ছিল "বিকল্প" প্রকাশনালয় থেকে, আর গতমাসে নামী হাউজ "দে'জ" থেকে বেরোলো কবি সমর সেনের কনিষ্ঠাকন্যা (জুজু)কে লেখা চিঠির সংকলন, সঙ্গে সমরবাবুর 'দিনলিপি' -- ইং ও বাংলায় (এতাবৎ অপ্রকাশিত) ।
নামী ব্যক্তির 'অপ্রকাশিত' রচনার একটি 'বাজার' আছে, এবং তা যদি সমর সেন-হেন 'বিতর্কিত' ব্যক্তির হয় তো কথাই নেই (সম্পাদক মুখবন্ধে বড় মুখ করে তা বলেওছেন) । তাই হঠাৎ পাওয়া প্রায়-না-লেখাতুল্য ডায়েরি হলেও তা আড়াইশ' টাকা দামের বই করে বাজারে ছেড়ে দেওয়ার মধ্যে নামী হাউজটির ব্যবসায়িক বুদ্ধি প্রকাশ পেলেও সেই আদ্যোপান্ত নির্লোভ আপোষহীন-সংগ্রামী মানুষটির প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয় না ।
কেমন সংকলন এই প্রায়-পৌনে তিনশ' পাতার অপ্রকাশিত সমর সেন : দিনলিপি ও জুজুকে ?
এ'সংকলনের শেষদিকে সমর-জায়া সুলেখা দেবীর টুকরো টুকরো পত্রাংশটুকু ছাড়া নতুন প্রাপ্তি কিছুই নেই । এবং সে-প্রাপ্তিটুকুও বড় বেদনার, বড় একান্ত । এতে তাঁদের বার্ধক্য, আর্থিক অসচ্ছলতা, জ্যেষ্ঠাকন্যার বিয়োগব্যথা ছত্রে ছত্রে ছড়িয়ে আছে । যে সততা ও ঋজুতা নিয়ে রামু-শ্যামু সাংবাদিকের ভিড়ে সমর সেন তাঁর শির উন্নত রেখে গেছেন চিরকাল, সে-মাথা কোনো ভাবেই ঝোঁকা দেখতে মন চায় না যে ! তাই এ' অতি-পারিবারিক চিঠির বারোয়ারি প্রকাশ সমর্থনযোগ্য নয় ।
১৯৭১ । 'ফ্রন্টিয়ার' পত্রিকার ভাঁড়ার তলানিতে এসে ঠেকেছে । সমরবাবু নিজের যত্সামান্য মাসোহারাও কমিয়ে দিয়েছেন । এই সময় বম্বের এক নামী দৈনিক থেকে তাঁর কাছে আমন্ত্রণ আসে নিয়মিত কলাম লেখার --- মোটা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে । মুহূর্তে সে-আমন্ত্রণপত্র ছিঁড়ে টুকরো করে ফেলে দিয়েছিলেন সমর সেন । বলেছিলেন, "কিছু না প্রথমেই করে দিতে হয়, নৈলে পরে আর না করা যায় না । বাজার-চলতি পত্রিকায় কলাম লিখে টাকা কামাব আবার বামপন্থী সাপ্তাহিক চালাবো --- এ'দুটো একসঙ্গে হয় না ।" হঁযা, এঁনারই নাম সমর সেন । এই নির্লোভ, নির্ভীক মানুষটিকে তো পুলক চন্দমশায় ইতোপুর্বেই অগাধ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন । তাঁর অনুষ্টুপ সমর সেন বিশেষ সংখ্যা তো যে-কোনো সমর সেন-ভক্তের কাছে পরম প্রিয় আসন গ্রহণ করেই আছে । তাহলে বর্তমান সংকলনটির প্রয়োজন কী ছিল ? কপিরাইটটা 'ফ্রন্টিয়ার'-এর হলে তবু না হয় কিছুটা দোষস্খালন হত ।
Saturday, February 28, 1976 :
আর সম্পাদক পুলকবাবু তার টীকা লিখছেন :
বা
ব্যাস ।
তার টীকা পুলকবাবু লিখছেন :
একই ব্যক্তি বা বিষয়ের অবতারণা বিশবার এলে বিশবারেবারে একই টীকা ও পরিচিতি দিয়ে দিয়ে বইয়ের কলেবর বাড়ানো হয়েছে, সে-তিনি বাঙালির কাছে যতই পরিচিত ব্যক্তি হোন্ না কেন --- যেমন, অশোক মিত্র(দ্বয়), মহাশ্বেতা দেবী, নীরদ সি চৌধুরী,
আর যে পরিচয় সাধারণত: জানা নেই, তার কোনো টীকাও নেই । যেমন, বাঙলা দিনলিপির ১৮ জানুয়ারি ১৯৭৯-র ভুক্তিটিতে পরিচিত এম জে আকবর, নিহাল সিং, অভীক সরকারের পরিচয় ফের ঘটা করে করিয়ে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু যে 'মাপাসাভা'-র পরিচয় জানা নেই, সেটা সম্পাদক মশায়েরও দেখলাম জানা নেই । তাহলে আর টীকার প্রয়োজন কী থাকছে ?
কিছু কিছু টীকা তো এতো অপ্রয়োজনীয়, যে বিরক্তির পর্যায়ে পড়ে, যেমন, ইংরেজি ডায়েরি
বা
বাঙলা ডায়েরিতে ১১ জানুয়ারি ১৯৭৯ লেখা হল, "……এ বছর এখন পর্যন্ত লিভারকে বেশ বিশ্রাম দেওয়া হচ্ছে ।" এই এন্ট্রিরও টীকার দরকার পড়েছে, সম্পাদক মশায় বুঝিয়ে দিয়েছেন : "অর্থাৎ আগের তুলনায় সুরাপানে কিছু ভাটা পড়েছে ।" এতেও বইটি যে ২৭০ পাতায় থেমেছে, এটাই বাঁচোয়া ।
এবং, এরপরেও আছে অজস্র মুদ্রণ ও তথ্য প্রমাদ :
উদা : সংস্কৃত দপ্তর, পৃ: ৬৭ ; সেজ ভাই গাবু, পৃ: ৮৩ ;
এ'হেন মন্তব্য পুলক চন্দের মত দায়িত্ববান সম্পাদকের মান ঘাটাবে ।
হঁযা, এক স্থানে তো সম্পাদকের ভাষ্য পুরো উল্টোই হয়েছে । উদা পৃ: ৪৪ ও ১০৪ : সমর সেন
জংত্রধষ্ ষ্ণচ্ধযচ্ --- কচি পাঁঠার মাংস
Evening at Amitabha's : P J. still . No clear picture |
হয়ে গেল ওই দিনের ডায়েরি লেখা (এক্কেবারে সমর সেনোচিত !)
P.J. - প্রেসিডেন্ংইস জেল-এর ঘটনা ।
চংরুঠৃণ্ণয ওংন্ ছঞ শৈছবচ্ঠ
শ্টংত্রঠত্রভ : ংঐ ঁ যঞঠত্ত্. ত্ধঞয ধী ংঋংধৃত্ং. জত্ণ্ণশশংরু স্ংস্ধশষ্
বইয়ের লে-আউট, বাঁধাই প্রসঙ্গেও হতাশ হতে হয় । অজয় গুপ্ত-কৃত প্রচ্ছদখানি 'অনবদ্য' হয়েছে বলে নিজেই জানিয়ে দিয়েছেন সম্পাদক মশায় । আমাদের তো অতি কল্পনাহীন অনান্দনিক লেগেছে । আর বাঁধাই ? গতমাসে প্রকাশিত আর পরশু কেনা বইয়ের পাতা এখনই খুলে আসছে । বইয়ের নামখানিও দিশাহীন নয় ? বইটির সর্বাঙ্গে তাড়াহুড়োর ছাপ । আর এতেই সাত বছর সময় লেগে গেল ?
সবশেষে এই "অপ্রকাশিত রচনা"- ব্যবসায়ের প্রতি ফের বিরাগ জানাই । এ'ধারা এখনই বন্ধ না হলে ভবিষ্যতে হয়ত বুদ্ধদেব বসুর অপ্রকাশিত চিরকুট, সুধীন দত্তের অপ্রকাশিত ধোপার খাতা ও বিষ্ণু দে'র অপ্রকাশিত মুদির হিসেবে র সংকলন আমাদের দেখে যেতে হবে ।
ভারতে পরিসংখ্যানশাস্ত্রের জনক কে ?
প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ ।
আর পরমাণুবিজ্ঞানের উদগাতা ?
হোমি জাহাঙ্গির ভাবা ।
মহাকাশবিজ্ঞানের ?
বিক্রম সারাভাই ।
আর আধুনিক ভারতে মনোশ্চিকিত্সার আদিপুরুষ কে ?
গিরীন্দ্রশেখর বসু !
কিন্তু তন্নিষ্ঠ পাঠক মাত্রই মানবেন মহলানবীশ বা ভাবা বা সারাভাইকে নিয়ে সারাদেশে যা মাতামাতি ও চর্চা চলে তার সিকিও গিরীন্দ্রশেখরকে নিয়ে হয়নি । তার কারণ কি অধ্যবিষয় হিসেবে মনোশ্চিকিত্সার ব্রাত্যতা, না গিরীন্দ্রশেখরের স্বভাব-অর্ন্তমুখীনতা ? বাঙলা বা ইংরেজি ভাষায় এমন এক যুগান্তকারী বিজ্ঞানির পূর্ণাঙ্গ জীবনীগ্রন্থ মেলে না -- এ' বড়ই মনোপীড়ার বিষয় ।
আলোচ্য গ্রন্থখানি গিরীন্দ্রশেখরের জীবনীগ্রন্থ নয় । এ'গ্রন্থের সম্পাদক অধ্যাপক অমিতরঞ্জন বসু-মহাশয়ের কাছে সে এক অনুরোধ রাখাই রইল ভবিষ্যতের জন্য । আলোচ্য গ্রন্থখানি হল প্রবাসী, ভারতবর্ষ প্রভৃতি নামী বাঙলা সাময়িকীতে গিরীন্দ্রশেখর সহজ বাঙলায় যে-সব প্রবন্ধাবলী লিখেছিলেন তারই এক মনোজ্ঞ সংকলন । সংকলনটির মান বাড়িয়েছে আশিস নন্দী-কৃত 'কথামুখ'-খানি (পড়ে মনে হয় আরও একটু বড় হলে হত !) । এবং অবশ্যই সম্পাদক মহাশয়ের 'অবতরণিকা' ।
মধ্যমাগ্রজ রাজশেখর (পরশুরাম) পেশায় রসায়নবিদ হয়েও বাঙলা রসসাহিত্যের জনক ও অভিধানকার । তদগ্রজ শশিশেখরও রসসাহিত্যে তাঁর চেয়ে কম ছিলেন না
(Marriage of Elephants -র রচয়িতা) । এই পরিবারের সদস্য হয়ে গিরীন্দ্রশেখরও বাঙলা সাহিত্যের সেবায় কলম তুলে নেবেন তাতে আর আশ্চর্য কী ? তাই তাঁর ভয়, স্বপ্ন, শিশুর মন প্রভৃতি মনোবিজ্ঞানভিত্তিক রচনাগুলিকেও সাহিত্যমানে অনেক উঁচুতে স্থান দিতে হবে । এ'ছাড়া শুদ্ধ সাহিত্যকৃতি হিসেবেও কি নাম রাখা যায় বা পৌরাণিক গাথা বা প্রাচীন ভারতে সভ্যতার উদ্ভব প্রভৃতি রচনাগুলির সাহিত্য-মান কত উচ্চে, সুধী পাঠক মাত্রই তার রসগ্রহণ করবেন ।"--শেখর" ভ্রাতৃ চতুষ্টয় প্রকৃতিতে অসম্ভব গম্ভীর ছিলেন । কিন্তু এই গাম্ভীর্যের পিছনে যে রসস্নিগ্ধ মানুষ লুকিয়ে ছিলেন, তার পরিচয় বাঙালি পাঠক মাত্রই পেয়েছেন । গিরীন্দ্রশেখরের ক্ষেত্রেও তার ব্যত্যয় হয়নি । ফ্রয়েডের সঙ্গে সমান টক্কর দিয়ে চলা বিজ্ঞানী যিনি শ্রীমদ্ভাগবতের মনোসমীক্ষার ভিত্তি নিয়ে গবেষণা করেছেন, পৌত্র গৌতমকে ছড়ায় চিঠি লেখেন :
"আমের বোল যঁংউইয়ের গন্ধ, / মশার গানে ভরপুর ছন্দ / চাঁদের সাদা ধব্ধব্ আলো / আমার লাগে দেওঘর ভালো " !
আর তেলধুতি পরে গিরীন্দ্রশেখরের গাত্রমর্দনের ফোটোখানি তো এ' সংকলনের সম্পদ, "বাঙলার বাঘ"-কে মনে পড়ায় !
বস্তুত:, গিরীন্দ্রশেখরের রচনার "সমালোচনা" করার উদ্দেশ্যে এ' লিখনের অবতারণা নয় । সে ক্ষমতা বা উদ্দেশ্য এই সামান্য লেখকের নেই । তাই "সমালোচনা" নয়, পরবাস-এর যে-সকল পাঠকের এ' মহান বিজ্ঞানীর বাঙলা রচনার সঙ্গে এখনও পরিচয় ঘটেনি, তাঁদের দৃষ্টি এক স্নিগ্ধ সৃষ্টির দিকে ফেরাতেই এই লিখনের অবতারণা । কী বিরল প্রতিভা ছিলেন গিরীন্দ্রশেখর ! এম বি ডাক্তার, আবার মনোবিজ্ঞানের এম এস সি, আবার প্রাকটিসিং মনোশ্চিকিত্সক --- সেকালে বিধান রায়ের সঙ্গে সমান টক্কর দিয়ে চৌষট্টি টাকা ভিজিট নিতেন ! আবার চমত্কার শিশু-সাহিত্যিক ও রসরচনাকার ! তাই এ' আশ্চর্য নয় যে রাজশেখরের জীবনীকার লিখবেন, "রাজশেখরের আবির্ভাব না হলেও শুধু গিরীন্দ্রশেখরের জন্যই বসু পরিবারের নাম থেকে যেত ।"
এ' সংকলনগ্রন্থখানির একটিই ছোট ত্রুটি নজরে আসে --- সে-তার প্রচ্ছদ চিত্রটি । বহু পুরনো ফোটোগ্রাফ থেকে এনলার্জ করা গিরীন্দ্রশেখরের মুখচিত্রখানি অতি অস্পষ্ট এসেছে । স্কেচ এঁকে বা অন্যভাবে প্রচ্ছদখানির উপস্থাপন করলে ভালো হত ।
সে য়ুরোপে আলো জ্বলার কাল !
অষ্টাদশ শতাব্দী ! একদিকে এডাম্স স্মিথ-জেমস ওয়াট তো আরেক দিকে দিদেরো-স্কট-হিউম । ঘাড় পেতে শুধু আর অন্ধ ঈশ্বরবিশ্বাস নয়, মানুষ প্রশ্ন করতে শুরু করেছে । এম্পিরিসিজম ! স্কেপটিসিজম !
আমরা জানি, য়ুরোপে এই নিরীক্ষাবাদের এক পীঠস্থান হয়ে উঠেছিল স্কটল্যাণ্ড । জন লকের ভাবশিষ্য ডেভিড হিউমের নেতৃত্বে উদারশিক্ষার উদগান গেয়েছিল স্কটল্যাণ্ড । ভারতের সৌভাগ্য, ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়াতেই ভারত, অন্তত:, দুইজন প্রধান স্কটম্যানকে পেয়েছিল তার শিক্ষা-আঙিনায় । একজন মহামতি ডেভিড হেয়ার, অন্যজন তাঁরই সমসাময়িক ডেভিড ড্রামণ্ড (১৭৮৫/৮৭ -- ১৮৪৩)--- ইয়ং বেঙ্গলের শিক্ষাগুরু হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিওর গুরু ।
শুরুর ও শুরু আছে, প্রদীপেরও আছে সলতে পাকানো পর্ব । তাই ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনকে বুঝতে যেমন ডিরোজিওকে বুঝতে হবে, তেমনি ডিরোজিওকে বুঝতে তাঁর শিক্ষাগুরু ডেভিড ড্রামণ্ডকে ।
এক স্কটিশ নওজওয়ান ! পারিবারিক মনোমালিন্যে দেশ ছেড়ে ভারতে পাড়ি --- উত্তমাশা অন্তরীপ ঘুরে পাঁচ মাসের দীর্ঘ পথ বেয়ে । তখন কি জানতেন ড্রামণ্ড, কী বীজ তিনি বহন করে নিয়ে চলেছেন ভারতবর্ষে ? ইতিহাস জানত, কারণ এই সুপ্ত বীজবহনই তো ইতিহাসের কাজ !
হিন্দু কালেজ তখনও ভবিষ্যতের গর্ভে । কলকাতায় তখন কয়েকটি প্রাথমিক ইংরেজি বিদ্যালয় চালাতেন কিছু খ্রীষ্টান মানুষ । ২৪ ধর্মতলা স্ট্রিটস্থ "ধর্মতলা একাডেমি" তার মধ্যে একটি । এই ধর্মতলা একাডেমি- তেই শিক্ষকের চাকুরি হয় ড্রামণ্ডের এবং এরপরেই জুটে যায় এই বিদ্যালয়ের স্বত্ত্বাধিকারি বনবার সুযোগ ! ধার-কর্জ করেও এ' সুযোগ হাত ছাড়া করতে দেননি ড্রামণ্ড । তাঁর সময়েই "ধর্মতলা একাডেমি" কলকাতার শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয়ের শিরোপা পায়, যার প্রমাণ ডিরোজিওর মত ছাত্রের জন্ম !
কী পরিশ্রম, উত্সাহ ও পরিকল্পনা নিয়ে তাঁর সাধের "ধর্মতলা একাডেমি"-কে গড়ে তুলেছিলেন দূরদ্রষ্টা-সাধক ড্রামণ্ড, তার পর্ব-পর্বের খতিয়ান বিধৃত হয়ে রয়েছে এই বইয়ের পাতায় পাতায় । সেকালে গার্জেনস মিট করানো, লিখন প্রতিযোগিতার পুরস্কার প্রদান, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা গ্রহণ --- এ' সবের প্রবর্তন করেছিলেন ড্রামণ্ড-সাহেব, যার ফসল তাঁর ডিরোজিও-হেন শিষ্য : যাঁর শিক্ষামন্ত্রে ত্রক্রমে ভেঙে পড়বে শতাব্দীপচা কুসংস্কার, আনবে উদারশিক্ষার আলোক --- যার থেকেই ত্রক্রমে স্বাধীনভারতের স্বপ্ন ও তার সাকারপ্রাপ্তি ।
তবে এ'সব তথ্য শক্তিবাবু-অধীরবাবুদের হাতে অনায়াস এসে পড়েনি, বহু পরিশ্রম জড়িয়ে আছে এর সঙ্গে --- সেটা এ'হেন গবেষণার সামান্য অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পাঠকও বুঝবেন । তাঁরা ধন্যবাদার্হ, এ'রকম এক অলক্ষের ইতিহাস দু'মলাটের মধ্যে পাঠকের হাতে তুলে দেবার জন্যে । নইলে কোথায় আর দেখতে পেতাম সেই ১৮২৩-এর কলকাতার এক নামি স্কুলের পাঠক্রম, স্কুলের প্রসপেক্টাস বা বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফলের খতিয়ান ? এ'সবই ড্রামণ্ড-সাহেবের সাকার-স্বপ্ন, কারণ তখনও তো কোনো স্কুল বোর্ড গড়ে ওঠেনি যার পাঠক্রম স্কুলে স্কুলে পড়ানো হবে । ড্রামণ্ড-সাহেবদের মত ভবিষ্যত্দ্রষ্টাদের হাতেই আজকের স্কুল বোর্ডের ধারণা গড়ে উঠেছিল । ভাবা যায়, ১৮২০-র দশকে কলকাতার এক স্কুলে শেখানো হচ্ছে বাংলা (!)-পারশি-ভূগোলের পাশাপাশি বুক-কিপিং, নেভিগেশন সার্ভে ও ফেনসিং ? ছাত্রদের নিয়ে পূর্ণাঙ্গ নাট্যাভিনয় হচ্ছে যা দেখে তারিফ করছেন কলকাতার অভিজাত দর্শককুল ? ডিরোজিওর প্রতিভায় তো পঞ্চমুখ শিক্ষক ড্রামণ্ড --- যেমন তার হাত কবিতায়, তেমনই নাট্যাভিনয়ে তেমনই বক্তৃতায় ! তাই, শুধু নিরেস পাঠ-পড়া নয়, তার পাশাপাশি ত্রক্রীড়া ও নাটকের মত বিনোদনেরও যে দরকার আছে তা অনুভব করেছিলেন ড্রামণ্ড সেই কবে ! তাঁর অনুভূতি : "রিক্রিয়েশন দিয়ে মনের মধ্যে ঘুমিয়ে থাকা সুকুমার অনুভূতিগুলেকে জাগিয়ে তোলো । মানুষ আসলে ওলটানো সেতার । সংবেদনশীলতার মেজরাপ পরা আঙুল দিয়ে স্পর্শ করতে পারলেই সে বেজে উঠবে । কোনো সাহেবি অহমিকা রেখো না ।"
অসাধারণ ! তাঁর স্কুলের ছাত্রতালিকায় যেমন য়ুরোপীয় জর্জ আর্চার বা চালর্স জোন্স ছিলেন, তেমনই ছিলেন হরি বসাক, কেষ্ট দত্ত, রামধন ঘোষ ! এই না হলে লিবারাল স্কটিশ শিক্ষা ?
এটি বাংলা বই হলেও শেষের ইংরেজি অংশটিও কলেবরে কম নয়, কেতাবটির প্রায় অর্ধেক । বাংলা বিভাগে যেমন "হিন্দু চরিত্রের প্রশংসা" বা "ড্রামণ্ডের শেষবক্তৃতা"-র মত মনোজ্ঞ নিবন্ধ রয়েছে, ইঙ্গ-বিভাগেও তেমনই ড্রামণ্ডের পত্রাবলী, পরীক্ষা-সংক্রান্ত তালিকাগুলি আগ্রহ জাগায়, সেই মানুষ সেই প্রতিষ্ঠান ও সেই সময়কে আরও ভালভাবে চেনাতে সাহায্য করে । কয়েকটি প্রাসঙ্গিক চিত্র দেখতে আশা করেছিলাম, ড্রামণ্ডের সমাধি ভিন্ন আর নেই । কোনো ছবি-ছাবা নেই, শুধু হরফ-টাইপের এই বইখানির দামটা বেশ বেশি রাখা হয়েছে । কিন্তু কপিরাইট "ডিরোজিও স্মরণ সমিতি"-র রয়েছে দেখে মেনে নেওয়া গেল । প্রচ্ছদখানি বড্ড সাদামাটা হয়ে গেল, কোনো নান্দনিক সৌকর্যের পরিচয় নেই । বাংলা ও ইংরেজি দুই বিভাগের শেষের গ্রন্থপঞ্জীই তথ্যবহ ও প্রয়োজনীয়, সম্পাদকের পরিশ্রমের সাক্ষর বহন করে । যদিও ড্রামণ্ডের 'এলিজি'র কাব্য-অনুবাদটি মন ভরালো না ।
যাক্, পাওয়া-না-পাওয়ার এই তূল্যমূল্য বিচার ছেড়ে পূর্ণত: বিচারে এ'হেন এক বিস্মৃত নায়কের তথ্যানুগ জীবনীগ্রন্থ উপস্থাপনার জন্য ডিরোজিও স্মারক কমিটি ও সম্পাদক শক্তিসাধন মুখোপাধ্যায় সাবাসি দাবি করতে পারেন । শেষে সম্পাদকের এই লাইনটা মনে করতে করতে বইখানি মুড়ে রাখলাম, "ড্রামণ্ড মনে করতেন প্রতিভা বলে আলাদা কিছু নেই । উপযুক্ত পরিবেশ ও নিবিড় কর্ষণের দ্বারা উত্কৃষ্ট মানুষ রচনা করা যায় বা কল্যাণকারী মানবিক ঔত্কর্ষ সৃষ্টি করা যায় । তাঁর এই তত্ত্ব তিনি ডিরোজিওর মধ্যে পুষ্পিত করে তুলেছিলেন ।"
জয়পুর-আত্রৌলি ঘরানার প্রাণপুরুষ ওস্তাদ আল্লাদিয়া খান সাহেব । তাঁর শ্রেষ্ঠশিষ্য ভাস্কর বুয়া বাখলে, জীবত্কালেই কিংবদন্তী । কিন্তু গুরুর সঙ্গে কোনো এক কারণে বুয়ার মনোমালিন্য ঘটে । এই সুযোগে কয়েকজন কুচুটে ছাত্র গিয়ে গুরুর কান ভাঙাল, "গুরুজী, সেই ডালখোর হিঁদু আপনারই চীজ চুরি করে মারাঠি গানে লাগিয়ে পয়সা কামাচ্ছে !"
কী ! এতো বড়ো সাহস ? গুরুধন চুরি ? গুরু খেপে লাল ! চল্ তো শুনে আসি ব্যাটা কী গাইছে ?
ভাস্করের সে-সুর শুনে গুরু তো মজে মৌ ! স্তাবকের দল গেল ঘাবড়ে । কী হল ? নেয়নি ভাস্কর আপনার সুর ? লাগায়নি মারাঠি ক'রে ?
গুরু আল্লাদিয়া বলেন, "হঁযা বেটা, নিয়েছে, নিয়েছে । মগর কীস্ ঢঙ সে লিয়া ওহ্ তো দেখো !"
আর এই পারস্পারিক নেওয়া-নেওয়ি নিয়েই চলছে হিন্দি ফিল্মি গানের জগত আজ আট দশক ধরে, সেহ্গল-রাইচাঁদ বড়ালদের আদিপুরুষ ধরলে । হঁযা, সেকালে বম্বে ছাড়াও কলকাতা ও লাহৌরও হিন্দি ফিল্মি গানার বড় কেন্দ্র ছিল । কিন্তু শুধুই কি দেওয়া-নেওয়া ? আর কিছু নেই ? আছে, "পকান" --- ঠিক মশলাটি ঠিক পরিমাণ বাসমতী আর গোস্তের সঙ্গে মিলেই তো বনে পক্কা বিরিয়ানি ! কোন্ অজ্ঞাত পঞ্জাবী যুবক নকসাব লিখলেন গীত, তাতে সুর লাগালেন রাজস্থানী ক্ষেমচাঁদ প্রকাশ, গাইলেন মারাঠি তরুণী লতা মঙ্গেশকর আর পর্দায় ? পেশাওয়ারি মধুবালা ! তৈরি হল কালজয়ী "আয়েগা, আনেবালা !" ১৯৪৯-এর হিট ছবি "মহল" ! আজ ষাট বছর পরেও যে সুর আজকের এফ এমের বকবকানির ফাঁকে কানে এলে পথে দাঁড়িয়ে পড়তে হয় । তাই না বলেছে, "রাগ-রসোঈ-পাগড়ি, কভী কভী বন যায়" !
তবে বনেওছে কম না । গত আশি বছরে কত কত সুরের ধারা এসে মিশেছে এই বম্বের হিন্দিফিল্মি গানার জগতে ! কত সুরকার, কত গীতিকার, কত গায়ক-গায়িকা, কত সঙ্গতকার ! এঁদের নিয়েই মানেক প্রেমচন্দের এই কোষগ্রন্থ । তা কম নয়, নয় নয় করে সেঞ্চুরি পার : সঙ্গীতের সঙ্গে জড়িত ১০১ জন ব্যক্তিত্বের পরিচয় রয়েছে এই সংকলনে । কে নেই এই সংকলনে ? স্বাধীনতা পূর্ব কালের নূরজহাঁ, কানন দেবী, কেদার শর্মা, পঙ্কজ মল্লিক যেমন আছেন তেমনি স্বাধীনতা-উত্তর কালের হেমন্তকুমার থেকে মুকেশ থেকে গীতা দত্ত থেকে মজরুহ্ সুলতানপুরী । এবং প্রত্যেকের গড়ে চার-পাঁচ পৃষ্ঠার পরিচিতির সঙ্গে সঙ্গে তাঁর উল্লেখযোগ্য গানগুলিরও এক তালিকা রয়েছে । এইটি কাজের । কারণ আজকের দিনে ওয়েবসাইট ঘাঁটলে হিন্দি ফিল্মের ডেটাবেস কম মেলে না, কিন্তু তাতে গুচ্ছের তথ্যের মধ্যে কাজেরটি, প্রিয়টি ক্লেশে খঁংউজে নিতে হয় । মানেক এই কাজখানি বেশ মুন্সীয়ানায় করেছেন : ঝড়তি-পড়তি ফেলে যত্নে গাঁথা রতনহার ! সাড়ে ছ'শ পৃষ্ঠার বাঁধনে এ' মন্দ প্রাপ্তি নয় ।
দ্বিতীয় ভাগটি পাতা-সত্তরের, নিবেদিত দেশভাগপূর্বের পর্বে । আর তৃতীয় পর্বটিই এ'গ্রন্থের মূল কলেবর জুড়ে আছে, প্রায় পাঁচ শত পৃষ্ঠা । কে নেই এ'অংশে ? হিন্দী ফিল্মিগানের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন এমন যে-কারোর নাম মনে করুন, মানেক অন্তত: পাতা তিনেক রেখেছেন তাঁর জন্য । বেশ । বেশ তথ্যবহও । যেমন,
১। 'নাগিন'-ছবির সেই কিংবদন্তী সাপুড়ে-বাঁশির সুর "মন ডোলে মেরা তন ডোলে"-র সুরকার হেমন্ত্কুমার হলেও সুরটি ক্লাভয়লিনে বাজিয়েছিলেন পরবর্তী কালের প্রখ্যাত সুরকার কল্যাণজী ।এই প্রকার আরও কত !২। মার্গীয়সঙ্গীতে ও পি নাইয়ারের বিন্দুমাত্র ট্রেনিং না থাকলেও ওস্তাদ আমীর খান, পণ্ডিত রাম নারায়ণ ও ওস্তাদ রঈস খানের মত শিল্পী তাঁর সুরে কাজ করেছেন নামী নামী ছবিতে । এবং ও পি নাইয়ারই একমাত্র সুরকার যিনি সেকালে লতা মঙ্গেশকরকে দিয়ে একখানি গানও কদাচ গাওয়ান নি (এ'খানি অবশ্য বহুল-প্রচারিত তথ্য) ।
৩। ভারত-কাঁপানো সুন্দরী সুরাইয়া স্কুলে এমন টমবয় ছিলেন যে (তখনই) ছেলেদের মেরে পাট করতেন ।
৪। হেমন্তকুমার বয়সে মান্না দের চেয়ে দেড় মাসের ছোট ছিলেন (মান্না দের জন্ম ১৯২০-তে' । এখন বয়স ৮৯ !) ।
৫। "দর্দ" ছবির (১৯৪৭) হিট গান "আফসানা লিখ্ রহী হুঁ"-র নামী শিল্পী উমা দেবীই পরবর্তী কালের হিন্দি ছবির পৃথুলা কমেডিয়ান টুন্টুন্ !
৬। গুলজার কিন্তু ধর্মবিশ্বাসে মুসলিম নন, শিখ । আসল নাম সম্পূরণ সিংহ্ (বম্বে এসে কিছুদিন বিমল রায়ের গ্যারেজে কাজ করতেন) ।
৭। আর চল্লিশের দশকে নৌশাদ সাহেব লক্ষ্মৌ থেকে বম্বে এসে আক্ষরিক অর্থেই ফুটপাথে পড়ে থাকতেন ।
৮। কিংবদন্তী মাতাল-গান "সুহানি রাত ঢল চুকির"-র গায়ক রফিসাহেব জন্মে সুরা স্পর্শ করেননি ও সুরকার নৌশাদ সাহেবকে চ্যালেঞ্জ করে ওই গান গেয়েছিলেন (কারণ, নৌশাদসাহেব তাঁকে একটু পিয়ে নিতে পরামর্শ দিয়েছিলেন, নইলে নাকি গলা দিয়ে ওই গান বেরোবে না !) ।
৯। "বৈজু বাওরা"-ছবির প্রবাদ-প্রতিম হরিভজন "মন তড়পত হরি দরশন কো আজ"-- লিখেছিলেন শকীল বদায়ুনি, সুর নৌশাদ, গায়ক মহম্মদ রফি ! আর এ' গান গাইতে গাইতে রফিসাহেব শ্রদ্ধায় উঠে দাঁড়িয়ে পড়তেন--- জাতীয় সঙ্গীতের মত !
এই বিভাগের শেষেই একটি ছোট উপবিভাগ রয়েছে সেই-সকল সঙ্গীতব্যক্তিত্বদের নিয়ে যাঁদের জন্য পূর্ণ অধ্যায় ব্যয় করতে হয়তো কুন্ঠিত লেখক, কিন্তু তাঁদের কাজের এক এক ঝলক শ্রোতারা যে আজও ভুলতে পারেনি । যেমন যোগেশ । নাম করলে চিনতে পারলেন না তো ? আরে, ইনিই "আনন্দ" ছবির অনুপম "জিন্দগী কৈসি হ্যায় পহেলি হায়ে" (মান্না) ও "কাঁহি দূর জব দিন ঢল জায়ে" (মুকেশ)-গানের গীতকার । কিন্তু "আনন্দ" ছাড়া যোগেশ গৌড়ের আর উল্লেখযোগ্য কাজ কই ?
চতুর্থ ও শেষ অধ্যায়টি চমত্কার লেগেছে নতুনত্বের জন্য । আমিন সাহ্নী বা রাজু ভরতন --- যাঁরা গীতকার-সঙ্গীতকার-গায়ক কেউই নন কিন্তু পরোক্ষ অবদানের জন্য হিন্দি গানের জগতে ভাস্বর হয়ে আছেন --- এ' অধ্যায়খানি নিবেদিত তাঁদের জন্য । "বিনাকা গীতমালা"-র আমিন সাহ্নী সাহেব বা "রেডিও সিলোন"-এর গোপাল শর্মাজীকে কে ভুলতে পারে ? বা "ফিল্ম ফেয়ার এওয়ার্ড" ? যে চৌকাঠ না ডিঙিয়ে কোনো সঙ্গীত ব্যক্তিত্বই বম্বের ফিল্মিগানার জগতে কুলীন পরিচিতি পেতে পারত না ? ভাল লাগে দেখে, এ' ইতিহাসে তাঁরাও বাদ পড়েননি, সসম্মান ঠাঁই পেয়েছেন ।
আসলে, মানেকচন্দ তো আর "হামরাজ" নন । তিনি তো হিন্দি গানের সম্পূর্ণ ইতিহাস লিখতে বসেননি । তবু আগ্রহী পাঠকের হাতে উপযোগী একখানি কেতাব তুলে দিয়েছেন হিন্দি গানের স্বর্ণযুগের (মধ্য ৩০ থেকে মধ্য ৭০-র দশকের ) -- এটাই বড় প্রাপ্তি ।
কোনো কোনো ব্যক্তিত্ব অনুপস্থিত (যেমন, প্রবাদপ্রতিম "বরসাত" ছবির গীতকার রমেশ শাস্ত্রী), কিছু তথ্য অনুপস্থিত (যেমন, দ্বীপান্তরের স্বাধীনতা-শহীদ ফজলে হক খয়রাবাদীর প্রপ্রপৌত্র হলেন আজকের জেদ আখতর) বা আর কোনো অধ্যায় থাকলে বেশ হত (যেমন, ভানু গুপ্তের মত সঙ্গতকার বা সিবস্টিয়ান ডি'সুজার মত এযারেঞ্জারদের নিয়ে একখানি)--- এ'সকল পুঙ্খানু আলোচনায় না গিয়ে মানেক প্রেমচন্দজীকে ধন্যবাদ দেওয়া যাক, এ' ছোট্ট বইখানি আমাদের হাতে তুলে দেবার জন্য । মানেকজী, পরের সংস্করণে কয়েকটি তথ্য ঠিক করে নেবেন, যেমন : ক্ষেমচন্দ প্রকাশের জন্মস্থান সুরজগড় পোখরনের পাশে নয়, রাজস্থানের অপর প্রান্তে ; বা সিন্থেসাইজারটির নাম ক্লেভায়োলিন নয়, "ক্লাভয়লিন", ইত্যাদি ।
তবে এ'সব গৌণ ।
শেষে সসঙ্কোচ একখানি কথা অবশ্য না বললেই নয় : সারা বইখানি জুড়ে ইংরেজি ভাষার এত বালখিল্য ব্যবহার ও ভুল, দুর্বল বাক্যগঠন মন:পীড়া দেয় । বইটির ভাষা সম্পূর্ণ সম্পাদনা করে তবে প্রকাশ করা উচিত ছিল ।
পুন: -- 'উন্নাসিক' বাঙলা পত্রিকা "পরবাস"-এ বাজার-চলতি হিন্দি-গানার রিভিউ ? --- পাশে বসা এক ততোধিক উন্নাসিক অধ্যাপক-বন্ধু বললেন । পরক্ষণেই দেখি তিনি আনমনা হয়ে পড়েছেন । কারণ পাশের বাড়ির এফ এম-এ ভেসে আসছে মুকেশ : "সারঙ্গা তেরি য়াদ মেঁ..." ।
ভাল হিন্দিফিল্মি গানা শুনে আনন্দ পাননি বলেন যে বাঙালি তিনি মুখোশধারী !
(পরবাস-৪৪, ডিসেম্বর, ২০০৯)