আবৃত্তিকার নীল পোদ্দার, কবি হরি মালেক, কবি ও আবৃত্তিকার রত্না চক্রবর্তী, আলোচনাকার ও প্রবন্ধলেখক সম্বিৎ সিংহ, এঁরা সবাই লাল গদিআঁটা সোফায় গা এলিয়ে বসেছেন । সবাই কলকাতার ছোটবড় আবৃত্তিকার ও কবি, কেউ তিনটে সিডি, কেউ আটফর্মার গাবদা কাব্যসংগ্রহ নিজের পয়সায় ছেপেছেন, কেউ এক ফর্মার ছটি বইয়ের গ্রন্থমালালেখক (প্রকাশকের পয়সায়) । কবি রভস বসু তো আবার পঞ্চাশোর্ধ হবার পর নানা পত্রিকায় টাকা ডোনেট করেন, তারা সরকারি `আলোবাতাস' মঞ্চ ভাড়া করে ওনাকে সম্বর্ধনা দেন । মানপত্রের সঙ্গে থ্রি-পিস স্যুটের কাপড়, গাঁদার গোড়ে মালা আর শক্তিগড়ের ল্যাংচা মাস্ট ।
কিন্তু পলাশপুরের মত অখ্যাত জায়গায় এঁদের সবাইকে একসঙ্গে করতে পেরে ছোট কবি সাধন বাইরির ছাতি ফুলে এই এতটা হয়ে গেছে । আসব না আসব না করেও, টিকিট কেটে, ক্যুরিয়ার দিয়ে টিকিট পৌঁছে, নিজে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নেমন্তন্ন করার একটা ফল তো ফলেইছে । সাধন ভাবে, সাধে কি কথায় বলে, বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর ?
তবে আসার আগের দিন অব্দি যিনি সবচেয়ে নাকাল করেছেন ওকে, তিনি হলেন প্রগতিশীল বামপন্থী কবি প্রীতিধন্য চট্টোপাধ্যায় ।
আজও, এখনো, স্থানীয় রবীন্দ্র হলের পেছনের গ্রিনরুমে, লাল সোফায় যে বা যাঁরা বসেছেন, তাঁদের মধ্যে প্রীতিধন্য নেই । উনি এখনো গেস্ট হাউজে প্রগতিশীল বামপন্থী দিবানিদ্রার শেষভাগের সাথে একটু ভদকা গুলে পান করছেন । সকালে সবাই এসে পৌঁছনোর পর প্রীতিধন্যদাকে স্টেশনে দেখতে পেয়ে ধড়ে প্রাণ এসেছিল সাধনের । কাল রাত অব্দি ওনার কখনো মালাইচাকিতে মোচড়, কখনো আধকপালে, কখনো হাইপারটেনশন, এমত নানান অসুখের অস্বস্তি চলছিল ।
এইসব অসুখ তো সাধনের প্রায়ই করে থাকে, তাই সে হাড়ে হাড়ে জানে । বড্ড ভোগায় । জেলা স্তরের এক ছোটখাট সংস্কৃতি কর্মী সাধন, অবসর সময়ে একটি সরকারি চাকরি করে থাকে । ছোটখাট সরকারি চাকরি বলেই ট্যুর নেই, উপুরি নেই, কোনরকম ঝুটঝামেলা নেই । বড়বাবুকে ম্যানেজ করে মাসে দুটো ওটি আর তিনটে আর্লি ডিপার্চার । বাকিটা মেডিক্যাল গ্রাউণ্ডে চলে । প্রায়ই হয় ব্যাক-এক, ইউটিআই (ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফেকশন) এবং স্পণ্ডিলাইটিস । পৃথিবীতে যে যে রোগ চোখে দেখে বোঝা যায় না, ও কিছুটা ত্রক্রনিক নেচারের, সে সবই সাধনের বছরে দু তিন বার করে হয়ে যায় । জলপাইগুড়ি বইমেলা, হুগলি পুষ্পপ্রদর্শনী, কলকাতা বইমেলা (এবারের ঝুটঝামেলায় আর টেবিল নিতে পারেনি), শুধু প্রতিবাদীটায় বড় মাঠে প্রীতিধন্যদাদের আকুল প্রগতিশীল বামপন্থী আহ্বানে সাড়া দিয়ে বইয়ের পাশে প্রদীপ জ্বালানোর অনুষ্ঠানে ছিল । বইমেলার সময়ে একটু বেশিদিন ছুটি নিতে হয়, বিশেষ সংখ্যা করে, তাছাড়া একটা আধটা বিজ্ঞাপনের জন্য ঘোরাঘুরি থাকে, ছাপাও হয় কলকাতার প্রেসে । তখন তাই হেপাটাইটিস বা ম্যালেরিয়া হইয়ে নেয় সাধন । পাড়ার ডাক্তারদা অবিনাশ চৌধুরী করে দেন । ভদ্রলোকের এককালে কবিতা লেখার শখ ছিল ।
তবু, প্রীতিধন্য আসছেন কি আসছেন না, এমন এক দ্বিধায় উনি সাধনকে দোদুল করে রাখতে সক্ষম হচ্ছিলেন একটিই কারণে : প্রীতিধন্য আসলে বেজায় নামকরা কবি । কবি না বলে ওনাকে বুদ্ধিজীবী বলাই ভাল । কারণ কবিতা উনি এককালে লিখতেন বটে, কিন্তু বুদ্ধিজীবী হয়ে যাবার পর থেকে আর লেখেন না । এখন উনি সভাটভা করেন । ফুটবল টুর্নামেন্টে থেকে শুরু করে গানের জলসা, বিশেষত টিভিতে নানা অনুষ্ঠানে ওনাকে দেখতে পাওয়া যায় । উনি সবসময় খদ্দরের প্রগতিশীল বামপন্থী রঙের পাঞ্জাবি পরেন । আর খুব চেঁচিয়ে কথা বলেন । যাতে মনে হয় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বলছেন । যেমন, উনি যখন ফুটবল নিয়ে বলেন, মনে হয় সমাজতত্ত্ব নিয়ে বলছেন । যখন সাঁতারের উপকারিতা বলেন, শেক্সপীয়ারের কোটেশন দেন । টিভিতে তো আবার বিষয়ের ঝামেলা নেই, সমসময় নিয়ে যে যা খুশি তাই বলতে পারে । শুধু সেলিব্রিটি হলেই হল । টিভিতে এলেই শুধু সেলিব্রিটি হওয়া যায় । আবার সেলিব্রিটি হলেই শুধু টিভিতে আসা যায় । কোনটা আগে ? কোনটা পরে ? পাত্রাধার তৈল আর তৈলাধার পাত্রের মত, এই প্রশ্নেরও কোনো সমাধান নেই । যাহোক, প্রীতিধন্য আসলে একজন সেলিব্রিটি, এবং চুমু থেকে চামচিকে, যেকোন বিষয়েই আলোচনাকালে তাঁকে টিভিতে দেখা যায় । একজন বুড়ো মার্কিন অভিনেতা আমেরিকায় বাজারহত হয়ে ভারতে এসে বিখ্যাত হলেন শুধু একজন বাজারহত ভারতীয় নায়িকা, যিনি লণ্ডনে গিয়ে বিখ্যাত হয়েছেন, তাঁর জুতোর শুকতলার মত খসখসে হাত জিভ দিয়ে চেটে । এই বিষয়ে আলোচনা চলছিল পরশু, একজন মনস্তাত্বিক (বিদেশি ডিগ্রিটা এখনো হাতে আসেনি) একজন স্যালাইভোলজিস্ট (থুতু--বিশেষজ্ঞ) এবং প্রীতিধন্য : এই তিনজন তুমুল ফাটিয়ে আলোচনা করলেন, হাত চাটলে এইডস হতে পারে কিনা এই বিষয়ে । পরশু টিভিতে দেখেই রাতে সাধন তাঁকে ফোন করে জানতে চায়, প্রীতিদা, সকালে বলেছিলেন মাইগ্রেনটা বেড়েছে, এখন ভালো আছেন তাহলে ?
ওপাশ থেকে একটা মিহি, দুর্বল, অস্পষ্ট ক্ষীণ গলা ভেসে আসে, না তো !
সেকি, এখুনি টিভিতে আপনাকে দেখলাম যে !
ওমা, ওটা আবার রিপিট টেলিকাস্ট হল নাকি ?
রিপিট ? অ্যাঁ... ব্যাঁ .. প্রীতিদা, ওটা তো ফোন ইন ছিল দেখলাম । ফোনও করেছিলাম, পাইনি, লাইন এনগেজড ।
পাবেন কি করে, রিপিট ছিল তো । আমি শয্যাশায়ী ।
সাধনের বুক আবার নৈরাশ্যে ডুবে গেছিল । তবু আজ প্রীতিদাকে পলাশপুরে আসতে দেখে খুব বুকে বল হয় তার । কিন্তু এখন একটু একটু করে টেনশান বাড়ছে । একটু আগেই উঁকি দিয়ে দেখে এসেছে, দর্শক আসনগুলো ভরে উঠেছে । অলরেডি ঘোষিত সময় থেকে দেড়ঘন্টা পেছনে আছে তারা । এবার তো আর স্টেজ ফাঁকা রেখে টেপ বাজিয়ে ব্যাণ্ডের গান রবি ঠাকুর আর বৈদিক মন্ত্রোচ্চারণ পাঞ্চ করে চালানো যাবে না । অথচ টিভিতে চেনামুখ দু একজন কবি না থাকলে কি করেই বা সব কবিদের স্টেজে তোলে সাধন ।
নীল পোদ্দার গুছিয়ে আগের বারের হাওড়া জেলা মহোত্সবের স্টেজে কীভাবে ললিতা পট্টবর্ধনের সঙ্গে যুগলবন্দীতে কবিতাপাঠ করেছিলেন (লাইটিং সহযোগে), বলতে যাবেন, উশখুশিয়ে উঠে সাধন বলল, আমি যাই নীলদা, একটু প্রীতিধন্যদাকে দেখে আসি । তারপর আপনাদের মঞ্চে বরণ করে নেব ।
গেল সাধন । গেস্ট হাউজের এসি ঘরের ভেজানো দরজায় টুক টুক করে টোকা দিল, ভেতর থেকে গেরাম্ভারি গলা এল : আসুন ।
গলে গেল সাধন, হামাগুড়ি দিতে দিতে গেল । প্রীতিদা, এবার যদি একটু স্টেজে, ইয়ে, মানে ..
ভদ্রলোকের চোখ ফুলো ফুলো, গাল লাল । কেমন রাগি চোখে তাকালেন । আগেই মিনমিন করে সাধন বলল :
সকাল আপনার কি খুব অসুবিধে হয়েছিল, প্রীতিদা, ওরা জলখাবারে লুচি তরকারি দিয়েছিল, আপনি নাকি আবার দুধ কর্নফ্লেকস ছাড়া খান না । এনে দিতে পেরেছিল তো ?
তা এনেছিল, কিন্তু সেটা বারোটার পরে । গোটা পলাশপুরের বাজার ঘুরে নাকি ওরা একটাই কর্নফ্লেকস পেয়েছিল, সেটাতে আমি ছুঁচোর নাদির গন্ধ পেয়েছি । খাওয়াই হল না কিছু ।
এখন কী একটু চা টা বলব ?
শোনো এদিকে । প্রায় আদেশের সুরে বললেন প্রীতিধন্য ।
হ্যাঁ হ্যাঁ বলুন । সব্বাই স্টেজে চলে গেছেন তো, মানে এই এক ঘন্টা আগেই আমাদের প্রোগ্রাম শুরু করার কথা ছিল...
আমার অ্যাপিয়ারেন্স মানিটা ? সেটার কি হল ?
ঘামতে শুরু করেছে সাধন । কেলেঙ্কারি ব্যাপার । এসব জোগাড় তো তার নেই । গোটা পলাশপুর ভেঙে পড়েছে রবীন্দ্র হলে । তিন তিনটে কমিটি করে, চারিদিক বেঁধে, এক পা এক পা করে এই বিপুল কর্মযজ্ঞে নেবেছে সাধন । সতেরোজন কলকাতার কবিশিল্পীকে আনার ট্রেনের টিকিট, গেস্ট হাউজ বুকিং (এসি), চারটে ট্যাক্সি বুকিং (তিনটে এসি, প্রতি ট্রিপে তিনজনের বেশি কেউ বসছে না, তাই অগণ্য ট্রিপ) । এছাড়া পলাশপুরের জনা পঞ্চাশেক লোকাল কবিকে অ্যাকোমোডেট করা, ব্রেকফাস্ট প্যাকেট, লাঞ্চ প্যাকেট, চা--বিস্কুট । তার ওপর কমিটি মেম্বারদের মোবাইল টপ আপ কার্ড খরচার দাবিতে ফুড কমিটির ছেলেদের বিক্ষোভ, ট্রান্সপোর্ট কমিটির কর্মবিরতি, এসবও ঘটে গেছে এরই মধ্যে ।
এর পর আছে লোকাল ছুকরি কবিদের দাবিতে `২০০৭ চিরহরিৎ কবিনী তিলোত্তমা প্রতিযোগিতা'র জন্য অর্ধনগ্ন নারীমূর্তির আদলে তৈরি, `চিরহরিত্' লেখা, ব্রাসের স্মারক সম্মান । অতিথিদের জন্য পাতলা ফ্যাড়ফেড়ে গলবস্ত্র আর ফুলের তোড়া এইসব হাবিজাবি তো আছেই । বাজারে বিপুল ধার । স্পনসর তো মোটে তিনটে । বাবুলাল ক্লথ স্টোর্স, চলতে চলতে চিরহরিৎ পাদুকালয় আর পাড়ার গিল্টি গয়না আর সিটিগোল্ড ডিলার হার মানা হার । মন্দ লোকে বলে, সাধনের আরও সোর্স আছে । কমপিউটারের ব্যবসা, বামঘেঁষা খবরের কাগজ `গণমুক্তি'র ডিস্ট্রিবিউশন : এসব ওর নিজের । তাছাড়া পুরপ্রধানের মদত ।
তবু, গোটা অনুষ্ঠানে কতই বা বাজেট ? এটা তো ধর্তব্যের মধ্যেই ছিল না ।
এমতাবস্থায় এই নবীন সমস্যা কী করে সামাল দেবে `জনান্তিকে' সম্পাদক ? তো তো করে সাধন যেটা বলল, সেটা সে নিজেই শুনতে পেল না, কারণ কানের ভেতরে শুরু হয়ে গেছে হাজার ঝিঁঝিঁ পোকার কনসার্ট । মোটমাট সে যা বলল, তার অর্থ দাঁড়ায়, জনান্তিকে একটি ক্ষুদ্র লিটল ম্যাগাজিন, এবং প্রীতিধন্য একজন মহান কবি । উপরন্তু তিনি জনদরদী, আর পলাশপুর জনান্তিকে উত্সব মানুষের কল্যাণের জন্য এবং আঞ্চলিক সাংস্কৃতিক ভাবমূর্তির উন্নয়নের জন্য, মানে সোজা কথায় লোকহিতার্থে হলেও, এমুহূর্তে সাধনের পকেট ফুটো । কৃপা করে যদি এবারের মত প্রীতিধন্য স্টেজে উঠে পড়েন, তাহলে পরের বারে নিশ্চয় সাধন এই ব্যাপারটা কমিটির কাছে প্লেস করবে ।
খেঁকিয়ে উঠলেন প্রীতিধন্য । `ন্যাকা সেজো না সাধন, এসব তুমি করনি ? ওই নীল পোদ্দার, লীলাময় সরখেল, ওরা আবৃত্তি করার জন্য টাকা নিচ্ছে না ? আমাদেরই কবিতাগুলো গলা কাঁপিয়ে কাঁপিয়ে পড়বে, আর আমাদের কাঁচকলা দেখিয়ে হাজার হাজার টাকা নিয়ে চলে যাবে ! ইয়ার্কি নাকি ?
না--না--না--না প্রীতিদা, সত্যি বলছি, কী ছুঁয়ে বলতে হবে বলুন, বলছি, ওঁরা কেউ কিচ্ছু নেননি, পলাশপুরের জনগণের মুখ চেয়ে... আমার মুখ চেয়ে ...
মোবাইল বেজে ওঠে সাধনের । `সাধনদা, পাবলিক খেপে যাচ্ছে । অ্যাংকর দিদির মেক আপ উঠে যাচ্ছে গরমে । কতবার আর এক ঘোষণা করাব ?'
`স্টেজে তুলে দাও বাকিদের, ঘনা । আমি প্রীতিদাকে নিয়ে আসছি ।' টপটপ করে ঘাম গড়াচ্ছে সাধনের কপাল থেকে । কান ঘেমে গেছে । মোবাইল ঝাপসা ।
প্রীতিদা, প্লিজ, এখনকার মত চলুন, আমি দেখছি কী করা যায় । আপনাকে সাতটা আঠেরোর ট্রেনে তুলে দেওয়ার আগেই ব্যবস্থা করে ফেলব ।
হুঁ: ।
প্রীতিধন্য স্টেজে উঠলেন পাক্কা পনেরো মিনিট পরে । অতিথি অভ্যাগতদের সম্বর্ধনা, স্মারকদান, প্রধান অতিথি এম এল এ সায়েবের বক্তৃতা, সব হয়ে গেছে । মঞ্চের বিশাল কাঁসার প্রদীপে (সৌজন্যে বুলটন ডেকরেটার্স ) সলতেগুলো তেল টুসটুস করছিল, জ্বলতে চাইছিল না, সেগুলোও তেল চিপে চিপে মাননীয় সভাপতি পুরবোর্ডের প্রধান আগুনও জ্বেলে ফেলেছেন ততক্ষণে । হাততালি, ফোটো, সব হয়ে গেছে, শেষে রাজকীয় ভঙ্গিতে মঞ্চে প্রবেশ করলেন টিভি খ্যাত, ভারতীয় কবিতার প্রথম সারির প্রতিনিধি কবি, প্রগতিশীল বামপন্থী প্রতিকবি, প্রীতিধন্য চট্টোপাধ্যায় ।
মিস শিউলি, গোলাপি শিফন শাড়িতে, লাল পুঁতির মালা, আর চুলে এলো খোঁপায় লাল কাপড়ের কুঁচি দিয়ে তৈরি গোড়ে মালা জড়ানো ফাটাফাটি অ্যাংকর (লোকাল) তখন মাইকে ঘোষণা করছেন প্রীতিময়ের আগমনবার্তা : `ঐ আসে ঐ অতি ভৈরব রভসে, গুরু গর্জনে ঘন গম্ভীর সুবাসে ... আমাদের সবার প্রিয় কবি, মানুষের কবি, জনগণের কবি প্রীতিধন্য চট্টোপাধ্যায় আসন গ্রহণ করেছেন । তাঁর আগমনে আমরা ধন্য ... "মানুষের পায়ে পড়ি গো / মানুষের পায়ের তলায় থাকি / নিচুর কাছে নিচু হই গো / নয়নজলে ভেসে যে যায় আঁখি / কাগজের বান ডেকেছে / প্রগতির তবুও নেই গতি / লিটম্যাগ মরেই বাঁচুক / বাজারের মার খেয়ে যাই সখি..."
শেষ অংশটা প্রীতিধন্যরই লেখা থেকে আবৃত্তি । এই লেখাটা গত পূজায় গ্রামবাংলার সাতাত্তরটি মফস্বলীয় কাগজের পক্ষ থেকে অর্থাভাবে উত্সব সংখ্যা বন্ধ হয়ে যাওয়া উপলক্ষ্যে শহিদ মিনারে আয়োজিত এক কবিসভায় উনি পাঠ করেছিলেন । যে কোন লিটম্যাগের কাছে এই লাইনগুলি এক অমোঘ বার্তা বহন করে আনে ।
মঞ্চের পেছনে তখন সাধন মোবাইল কানে গুঁজে চেঁচাচ্ছে, সবুজদা, এক্ষুণি আমায় হাজার চারেক টাকা ধার দিতে পারেন, ভীষণ দরকার । ক্যাশ ... হ্যাঁ হ্যাঁ, ক্যাশই দরকার ।
সবুজ বরণ বারুই পলাশপুরের নামকরা জোতদার, কেরোসিন ডিলার এবং লোকাল অপোজিশনের নেতা : সামাজিক উপকার করার জন্য সদা উন্মুখ । দক্ষিণপন্থী প্রতিক্রিয়াশীল পার্টি করেন বলে, প্রগতিশীল বামপন্থী সাহিত্যসভায় ওনাকে স্পনসর করতে ডাকা হয় না বলে ভীষণ দু:খ । ওঁর ছেলেকে বছর দুয়েক হল কমপিউটার শিখিয়ে চলেছে সাধন । তাছাড়া, ওনার ফুটফরমাসও খাটতে হয়, এম এল এ ও পুরপ্রধানের সঙ্গে সঙ্গেই । সবাইকে হাতে না রাখলে কি আর সংস্কৃতিকর্মীর চলে ? সাহিত্যসভায় একটা না একটা চিরস্থায়ী অবদান রাখার ওনার ভীষণ ইচ্ছে । সুযোগটাই পান না ।
সাধন বাইরি ঠিক লোককেই ফোন করেছে ।
(পরবাস-৪২, ডিসেম্বর, ২০০৮)