বাবা-মায়ের অনেক আদরের দেওয়া নাম অসার্থক করে বৃষ্টির একদমই বৃষ্টি ভাল লাগে না । মা বাবা বন্ধুবান্ধব সবার কাছেই এ-নিয়ে মন্তব্য শুনতে হয়েছে নানা সময়ে । বৃষ্টি মানেই সেই প্যাচপ্যাচে ভাব, জলের ছাঁট লেগে পর্দা বিছানা সব স্যাঁতস্যাঁতে, ওর অনেক যত্নে সাজানো একান্ত নিজের ছোট্টঘরটার মধ্যে ভিজে পায়ের ছাপ, রাস্তায় বেরোলে শাড়ি বা সালোয়ারের ভিজে অংশটা পায়ে জড়িয়ে জড়িয়ে যাওয়া - সব মিলিয়ে বৃষ্টি খুব একটা সুখকর অভিজ্ঞতা নয় বৃষ্টির কাছে । ঘোর বর্ষাকালে জন্মেছে বলে এই নাম, তার উপর মা-বাবা দুজনেই বৃষ্টিপাগল । বাবা তো বৃষ্টি নিয়ে মাঝেমাঝে এমন করে যে হাসিই পায় । কলেজ যেতে চায় না, জোরে জোরে গান জুড়ে দেওয়া, ছাতামাথায় ইলিশের খোঁজে বাজারে ছোটা, আর সেই এক বায়না, খিচুড়ি আর ইলিশ ভাজা - কিন্তু আজকাল সেই হাসিখুশি বাবার মুখে সেই প্রশান্তি যেন একটু কম, আর মাও খুব একটা হাসিমুখে থাকে না আজকাল । বৃষ্টি বোঝে এ সবই তার জন্যই । বৃষ্টির বয়স প্রায় আঠাশ ছুঁই ছুঁই হলেও ওর জেদ ও কোনদিনও কোন পাত্রপক্ষের সামনে সং সেজে বসবে না । মা-বাবা বন্ধুবান্ধব আত্মীয়স্বজনের অনেক যুক্তিতর্ক, অনেক রাগ-অভিমান সত্বেও এই চাপের মুখে নতিস্বীকার করতে রাজি হয়নি ও । ফলত একমাত্র আদরের আর গর্বের মেয়ে হঠাৎ করে যেন বাবামায়ের কাছে একটা অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে । বিয়ের চেষ্টার অন্ত নেই কারো - শুভানুধ্যায়ীর সংখ্যা তো কিছু কম নয়, বরং অস্বস্তিকর রকমের বেশি । নানাসময়ে নানাউপায়ে বৃষ্টিকে পাত্রস্থ করার চেষ্টা চলছেই । বৃষ্টির পাত্রস্থ হতে আপত্তি নেই, শুধু সেজেগুজে বসা আর `আচ্ছা, পরে আমাদের মতামত আপনাদের জানিয়ে দেব'-র অসম্মানজনক অনিশ্চয়তায় জীবনের কতগুলো সুসময় অকারণে নষ্ট করার পক্ষপাতী নয় ব্যাঙ্কের উচ্চপদস্থ অফিসার বৃষ্টি রায়চৌধুরী, রিটায়ার্ড প্রফেসর বাবামায়ের একমাত্র সন্তান, সুশ্রী, গৃহকর্মনিপুণা, সঙ্গীতজ্ঞা এবং সাহিত্যানুরাগী ।
এমন ভাবেই বরুণের সাথে সম্পর্কের সূত্রপাত । সম্পর্ক বলাটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে হয়ত, সম্বন্ধ বলাটাই বেশি ব্যাকরণসম্মত । মেজমাসির জায়ের সম্পর্কিত কোন এক ভাগ্নে, আমেরিকায় ভাল কোম্পানির ইঞ্জিনীয়ার, সুপাত্র হিসাবে বাবামায়ের মনোমত, এখন শুধু দুজনের দুজনকে ভাল লাগলেই হয় । জানা গেছে বরুণেরও প্রথাসম্মত কনে দেখা বিয়েতে আপত্তি, এদিকে পছন্দ-অপছন্দ বোধটা প্রখর বলে এখনও অবধি তেমন কাউকে ভাল লাগেনি যাকে বিয়ে করা যায় । বরুণের বাবামায়ের সাথে মানসিকভাবে তাই বৃষ্টির বাবামা নিজেদের মেলাতে পেরেছেন সহজে, আজকালকার ছেলেমেয়েদের নিয়ে মজা করেছেন, তারপর দুপক্ষই মনের মধ্যে একটা চাপা অস্বস্তি নিয়ে বিদায় নিয়েছেন । `এতো ভাল পরিবার, ছেলেটিও নিশ্চয়ই ভালই হবে', `দাঁড়াও, তোমার মেয়েকে তো চেনো, আগে থাকতেই নেচো না' - মা গজগজ করেছেন । `তাও একটা সুখবর, বৃষ্টির ছবি দেখে বরুণের পছন্দ হয়েছে, ওর মা বললেন । আরও বললেন বরুণ আমাদের ফোননম্বর নিয়েছে । হয়তো ফোনে আলাপ করে নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলতে চায়' । `তা আমাদের মেয়ে কি বলে ? বরুণের ছবি দেখে ওর পছন্দ হল কিনা সেটা জেনে নিও আগে, তারপর ফোন আসবে আর বলবে আমি অনর্থক কথা বলে সময় নষ্ট করতে চাই না, সেটা একটা বাজে ব্যাপার হবে'।
মায়ের প্রশ্নে মনে মনে হাসে বৃষ্টি । ওর বরুণকে কেমন লেগেছে ? কি করে উত্তর দেবে এক কথায় ! অনেকদিন ধরেই মেজমাসির মুখে বরুণের নানা গুণকীর্তন শুনে মনে মনে কিছু বিশেষত্বের প্রশংসা না করে পারেনি, বিশেষত যেগুলো নিজের সাথে মেলে । শুধু মাঝে মাঝে সন্দেহ হোত হয়ত মাসি ইচ্ছা করে বাড়িয়ে বলে, ওকে উত্সাহিত করার জন্য । বিয়ের ফটো তুলতে বরুণের আপত্তি, তাই ওদের বাড়ি থেকে আমতা আমতা করে প্রথমে যে ছবিটা দেওয়া হয়েছিল সেটা যে একটা পাসপোর্ট ফটোকে বড় করা তাতে কোন সন্দেহ নেই । বৃষ্টির মা ভয়ে ভয়েই আর একটা ছবি চেয়ে এনেছিলেন, একটা গ্রুপ ফটো, ওর মায়ের অ্যালবাম থেকে নেওয়া । প্রথমটায় চোখে পড়েছিল নজর কাড়ার মতো বুদ্ধিদীপ্ত চোখদুটো, আর গ্রুপ ফটোটাতে লক্ষ করেছিল একটা জ্বলজ্বলে হাসি, একটা সাধারণ চেহারাকে অসাধারণ একটা মাত্রা এনে-দেওয়া হাসি । ভাল লেগেছিল অস্বীকার করে লাভ নেই । জীবনে প্রথমবার এসেছিল সেই না-জানা ভাললাগার স্বাদ । কিন্তু পরমুহূর্তেই বাস্তবে ফিরে এসেছিল । এর আগেও এমন অনেক সম্বন্ধ এসেছে, আধঘন্টা কথা বলার পরেই সব কেমন ফ্যাকাশে লেগেছে । যার সাথে আধঘন্টা কথা বলার পরে মনে মনে বিষয় খুঁজতে হয় তার সাথে সারাজীবন কি করে কাটানো যায় ? তা ছাড়া অনেক মানুষ নিয়ে নিয়মিত কাজ করতে হয় যাকে সে কি আর জানে না যে শুধু দেখায় কিছুই এসে যায় না । দেখতেও বা এমন কি আর ভাল, সাধারণই বলা চলে । অথচ তাও ওই হাসি আর চোখের মধ্যে এমন কিছু একটা ছিল যেটা বৃষ্টিকে নাড়িয়ে দিতে পেরেছিল । মায়ের মুখে বরুণের ফোন আসতে পারে শুনে তাই ভাললাগাটা আবার ফিরে এসেছিল ।
`বরুণ ফোন করেছিল ?' - পরের দিন সকালে খাবার টেবিলে মায়ের নার্ভাস জিজ্ঞাসা অন্যমনস্ক বৃষ্টির কানে পৌঁছল একটু দেরিতে । `হ্যাঁ, করেছিল তো !' আবার কিছুক্ষণ চুপচাপ অস্বস্তিকর নিস্তব্ধতা । `জেনে নাও যতটা তোমার মেয়ে বলতে চায়' - বাবা ইশারা করে টেবিল ছেড়ে উঠে গেলেন । মা ততক্ষনে বুঝে গেছেন যে ফল খুব একটা সুবিধের নয় । `কি রে ? মুখে ওরকম বিরক্তভাব কেন ?' - `আ:, দেখছো না বাইরে বৃষ্টি পড়ছে ? অফিস যাবার মুখে রোজ রোজ - বিরক্ত লাগবে নাই বা কেন ?' বলে বৃষ্টি উঠে পড়ে । মায়ের সামনে বসে থাকতে আরো অস্বস্তি । এক্ষুনি জিজ্ঞেস করবেন সব খুঁটিনাটি ! মায়ের এই একটা দিক বৃষ্টির বিশেষ অপছন্দ, বড্ড বেশি মাথা ঘামান বৃষ্টির ভাল থাকা, খারাপ থাকা নিয়ে । অথচ ওর ভাললাগা, খারাপলাগা-গুলোকে মূল্য দেন না বিশেষ । মাঝে মাঝে দমবন্ধ লাগে । বাবা তাও ওকে কিছুটা বোঝেন; ওর স্বাধীন চিন্তাভাবনাকে মেনে নিতে পারুন বা না পারুন, অন্তত অসম্মান করেন না ।
কাল বরুণের ফোনটা এই অস্বস্তিকর বৃষ্টিটার মতোই ওর অস্তিত্বটাকে একটা স্যাঁতস্যাঁতে অনুভূতি দিয়ে গেছে । জীবনে এমন কখনও হয়নি যে কারোকে এত ভাল লেগে গেছে, না দেখেই, শুধু কথা বলে, যে কথা ফুরোবে বলে মনে হয়নি একবারও । অথচ সেই কথার পদে পদেই জানা গেছে কত আলাদা দুজনে দুজনের থেকে, যেন সবই আলাদা, যেন দুই মেরুর দুই মানুষ । গান, সাহিত্য, রুচি, মানসিকতা - সবেতেই বিস্তর ব্যবধান । অথচ সেই আগাগোড়া বিপরীতমেরুর বাসিন্দাকেও তাও যেন মন থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারছে না । এভাবে হয় না, সব বুঝেও বারবার মনে হচ্ছে চেষ্টা করে দেখতে ক্ষতি কি ? ওর গলার স্বরটা এখনো কানে ভাসছে - যে-স্বর শুনেই প্রথম থেকেই ভাললাগাটা আরো বেড়ে গেছিল -`তোমার বৃষ্টিও ভাল লাগে না ? অদ্ভুত ! তোমাকে ভাল লাগবার প্রথম কারণটাই তো ছিল তোমার নাম !' - ভাল লাগবার ? আমাকে ভাল লেগেছিল ওর ? এটা ভাবতেই ভাল লাগছে কেন ? কিন্তু সব কথা যখন শেষ হল, বরুণের গলায় হতাশার ভাবটা ওর কান এড়ায়নি ! ও বলেছিল `দেখ আমরা দুজনেই সাবালক, একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজেদের জীবন বিষময় করার ভুল আমরা কেউই করব না । আমার মনে হয় আরও একটু ভাবা দরকার আমাদের ।' ও এও জানিয়েছিল যে ওর বাবা-মা ওকে জোরাজোরি করছেন এই বিয়ের ব্যাপারে, কিন্তু ও বলে দিয়েছে এ ব্যাপারে ওর মতামতই চুড়ান্ত । `আমি শুনেছি তুমিও এই একই মতে বিশ্বাসী, তাই আশা করি তুমি বুঝবে আমার বক্তব্যটা' ।
সব বুঝেও আজ নিজেকে বোঝাতে এত কষ্ট হচ্ছে কেন তবে ? বারবার মনে হচ্ছে এই কদিনে এভাবে কাউকে ভাল লেগে যাওয়া কী করে সম্ভব ! বারবার মনে পড়ছিল বরুণের কথা বলার সেই ভীষণ নিজস্ব একটা স্টাইল, কথার ফাঁকে ফাঁকে জোরালো হাসি, জীবনের ছোটখাটো ভুলগুলোকে মজার মজার কথায় হালকা করে দেওয়া, এই অপরিচিতির মধ্যেও ইয়ার্কি মারা - অনেকদিন বাদে বৃষ্টিও যেন প্রাণ খুলে হেসেছিল, কিন্তু তারপর সব গণ্ডগোল হয়ে গেল । আবার মনে হচ্ছে বরুণ না তো আর বলেনি ! ভেবে দেখতে বলেছে ! এখন মনে হচ্ছে পছন্দ-অপছন্দ ভাললাগা খারাপলাগা সবই নির্ভর করে পরিস্থিতির উপর । যদি তেমন কেউ থাকে তার জন্য জীবনের সব কিছুই বোধহয় বদলে নেওয়া যায় । স্ত্রী ছোটবেলায় মুরগী জবাই দেখে জীবনে আর মাংস স্পর্শ করেনি, আর স্বামী সবজি দেখলে সযত্নে এড়িয়ে যায় - তাতে সমস্যা কি ? আলাদা রান্না করা তো সম্ভব । গান বা সাহিত্যের ভাললাগার ক্ষেত্রে বিষয়গত তফাতটা হয়ত জরুরি নয়, জরুরি হল গান বা সাহিত্যে রুচি থাকাটাই । যেটা জরুরি, একান্ত, সেটা পরস্পরের প্রতি ভালবাসা আর সম্ভ্রমবোধ । সেটুকুকে ভরসা করেই পুরো রাস্তাটা চলা যায় । - এগুলো কাল ও বলতে পারেনি কেন ? সেটা কি এই কারণে যে তাতে প্রকাশ হয়ে যেত ও একটু বেশিই উত্সাহী হয়ে পড়েছে এ-ব্যাপারে ? সেটা প্রকাশ পেলে কি আত্মসম্মানে একটু আঘাত লাগত ? সত্যিই হয়ত তাই । এ-নিয়ে এত মাথা ঘামাচ্ছেই বা কেন ও ! ও: এই বৃষ্টি ! মানসিকভাবে যেন আরও ওকে দমিয়ে দিয়ে যাচ্ছিল !
ফোনটা এসেছিল অনেক রাতে । লাইন পেতে সমস্যা হচ্ছিল, তাও বিষয়টা জরুরি বলে, রাত হয়ে যাচ্ছে দেখেও ফোন করতে বাধ্য হতে হয়েছে এমন জানিয়েছিল বরুণ । `তোমার সাথে কাল এত কথা বলার পরে মনে হচ্ছিল যে খালি চোখে দেখলে হয়ত তোমার মত স্ত্রী পাওয়াটা একটা বিরাট ভাগ্য । আমার বাবামায়েরও এতে আনন্দিত হবার কথা, কিন্তু কাল অনেক ভেবে দেখলাম যে তোমার সাথে আমার মানসিকতার অমিল প্রচুর । সাধারণ ব্যাপারগুলো ছেড়ে দিলেও, আমাদের প্রধান তফাৎ প্রকৃতিগত । তুমি হলে বাস্তববাদী, স্মার্ট এবং বিচক্ষণ, ভেবে কাজ করার পক্ষপাতী, আমি সেখানে নিতান্তই এক বোহেমিয়ান আর রোমান্টিক প্রকৃতির মানুষ, আমাদের ফোকাসটাই আলাদা । আমি স্বপ্ন দেখি যে আমার বউ হবে, সেও আমার তালে তাল মিলিয়ে চলবে, বাস্তবের মাটি থেকে একটু উপরে হাঁটবে, একটু ভুলোমনা, হয়ত কোনদিন রাতে রান্না করতে ভুলে যাবে, কিন্তু দুষ্টু হেসে দামি চায়নার সেট বার করে ব্রেড আর জ্যাম দিয়ে ক্যাণ্ডেল-লাইট ডিনার সারবে, মাঝরাতে উঠে শুধু `ইচ্ছে করছে' বলে লং-ড্রাইভে যাবার বায়না করবে, আর পরের দিন ঢুলতে ঢুলতে অফিসে যাবার সময় আমার উপর রাগ করবে ওর বায়নায় সায় দিয়েছি বলে । আর সারা বছর বসে থাকবে বৃষ্টির দিনগুলোর আশায়, যেদিনগুলো কাটবে আমার সাধের টেরেসে, বিশেষ যত্নে বানানো কাঁচের দেওয়াল-ঘেরা ঘরটাতে, বাইরে বৃষ্টির শব্দ ছাপিয়ে যাবে আমাদের এলোমেলো বেসুরো কোরাস গানে, টেরেসে গিয়ে ভিজবো আর মন ভরে ভেজার আগেই বৃষ্টি থেমে গেলে টেরেসের উপর এসে পড়া ভিজে ইউক্যালিপটাসের ডাল জোরে জোরে ঝাঁকিয়ে নকল বৃষ্টি বানাবো - যাকগে এসব কথা, এগুলো হয়ত সত্যিই কখনো নাও পেতে পারি, কিন্তু এত তাড়াতাড়ি আশা ছেড়ে দিতে ইচ্ছে করছে না । বিয়ে মানে তো মানিয়ে নেওয়া জানিই, প্রতি পদেই, কিন্তু কয়েকটা ব্যাপারে আমার মনে হয় মানিয়ে নেওয়ার কোন মানেই হয় না - তোমার কি মত ? অবশ্য তোমারও নিশ্চয়ই কাল মনে হয়েছে যে আমি তোমার একেবারেই যোগ্য নই, তাই না ? আমি মাঝে মাঝেই বেশি শীত পড়লে স্নান না-করেই অফিস চলে যাই শুনে তুমি যেভাবে চমকে উঠলে, আমি তখনই বুঝেছি যে আমার আর কোনও চান্স নেই - হা: হা:--'
অনেক রাতের দিকে ব্যালকনির দরজায় বাতাসের ধাক্কার আওয়াজে মায়ের ঘুম ভেঙে গেল । বাইরে অঝোরে বৃষ্টি হচ্ছে তখন । দরজাটা কি বন্ধ করতে ভুল হয়ে গেছিল শোবার আগে ? অন্ধকারের মধ্যে আধাঘুমন্ত চোখে দরজা বন্ধ করতে এসে বারান্দায় বৃষ্টিকে দেখে ভয়ংকর চমকে উঠলেন । বৃষ্টি দাঁড়িয়ে আছে বারান্দায়, শ্রাবণের অঝোর ধারায় ভিজে সপসপ করছে ওর সারা শরীর । মা প্রায় আঁতকে উঠলেন - `কি রে তুই এভাবে ভিজছিস ? অভ্যাস নেই, ঠাণ্ডা লেগে শরীর খারাপ হয়ে যাবে তো !'
`কিছু হবে না মা, ভালো লাগছে বৃষ্টিটা --'
জীবনে প্রথমবারের মতো সত্যিই বৃষ্টিটা ভাল লাগছিল বৃষ্টির । কারণ সেই জলের ধারায় ধুয়ে যাচ্ছিল ওর চোখের জল, যেটা পাশে দাঁড়িয়েও মায়ের চোখে পড়ছিল না ।
(পরবাস ৩৮, নভেম্বর, ২০০৬)